ত্রিপুরা লোককাহিনী: অবিরাম বৃষ্টি

Jumjournal
Last updated Jan 20th, 2020

879

featured image

এক গ্রামে এক বৃদ্ধা বাস করত। সে ছিল খুবই বয়স্ক। বয়সের কারণে সে জুমখেতে কাজ করতে পারত না। ফলে তার ঘরে তেমন কোনো খাবার ছিল না।

তার থাকার জায়গাটাও ভালো ছিল না। ভাঙা একটা টংঘরে সে বাস করত। এক কথায় সে ছিল খুবই দরিদ্র।

একদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন ঐ বৃদ্ধার টংঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল রাজা। এর আশেপাশে আশ্রয় নেওয়ার মতো আর কোনো ঘর ছিল না।

টংঘরের কাছাকাছি আসতেই এত বেশি অন্ধকার হয়ে এলো যে রাজা বৃদ্ধার টংঘরে আশ্রয় নিল। রাজা তার ঘোড়াটা টংঘরের নিচে বেঁধে রেখে ভিতরে গেল।

রাতে একটা বাঘ এলো বৃদ্ধার টংঘরের কাছে। বাঘের ইচ্ছা ছিল সে বৃদ্ধাকে খাবে। কিন্তু বাঘ নিচে এসে ঘোড়াটাকে পেয়ে গেল।

তাই সে বৃদ্ধাকে না খুঁজে ঘোড়াটাকেই খেয়ে ফেলল। আর যেখানে ঘোড়াটা বাঁধা ছিল সেখানেই বাঘটা ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘরে বসে বৃদ্ধা রাজার সৈন্য-সামন্তদেরকে তার দুঃখের কাহিনী শোনাল। সে জানত না যে বাঘ ঘোড়াকে খেয়ে ফেলেছে, ক্লান্ত হয়ে বাঘটা সেখানেই শুয়ে পড়েছে। বৃদ্ধা বলল, বাঘকে তো নয়-ই, কোনো বন্যপ্রাণীকেই আমি ভয় পাই না। আমি শুধু ভয় পাই চচুরাটকে।

সৈন্যরা জানতে চাইল, কেন? বৃদ্ধা বলল, চচুরাট হল সেই ধরনের অবিরাম বৃষ্টি, ঠিক আজ যে রকম বৃষ্টি হচ্ছে। যদি এ বৃষ্টিতে আমার টংঘর ফুটো হয়ে যায়, আমি সেই ভয়ে থাকি।

কেননা, তখন ঠাণ্ডা বাতাস আমার ঘরে ঢুকবে। আমি শীতে কাঁপব, আর ঠাণ্ডায় একেবারে জমে যাব। বাঘটি শুয়ে ছিল টংঘরের ঠিক নিচেই।

সেখান থেকে বাঘটি বৃদ্ধা আর সৈন্যদের কিছু কথা শুনতে পেল। তার কানে গেল শুধু বৃদ্ধার চচুরাটকে ভয় পাওয়ার কথা।

বাঘ ভাবল, আমি বনের রাজা বাঘ। আমাকে বনের সবাই ভয় পায়। আর এই বুড়ি আমাকে ভয় পায় না। সে ভয় পায় চচুরাটকে! কী রকম প্রাণী এই চচুরাট! নিশ্চয় চচুরাট আমার চেয়েও শক্তিশালী আর হিংস্র কোনো প্রাণী।

খুব ভোরে সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে গেল রাজার সৈন্য-সামন্ত। তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। চারদিক ছিল অন্ধকার।

তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। তারা সবাই নিচে নেমে এলো। ঘোড়া ভেবে বাঘের পিঠে জিন পরাল, লাগাম পরাল। তারপর রাজা বাঘের পিঠে চেপে এগিয়ে চলল।

বাঘের মুখে লাগাম বাঁধা ছিল বলে বাঘ হুঙ্কার দিতে পারছিল না, কামড়াতেও পারছিল না। বাঘ ভাবল, আমার পিঠে যে চড়েছে সেই হবে চচুরাট। আমি বনের রাজা হলেও চচুরাট আমার চেয়েও বেশি শক্তিশালী।

এ কথা ভাবতে ভাবতে ভীত বাঘ বনের দিকে চলল। রাজ বাঘটাকে নিয়ে শহরের দিকে যেতে চাইল। আর বাঘটাকে চাবকাতে লাগল। চাবুকের আঘাতে বাঘ খুব ব্যাথা পেল। হঠাৎ সে একটা সরু গুহার দিকে ছুটল। গুহাটি ছিল খুবই সরু।

বাঘটি এর ভিতর ঢুকে গেল, শুধু তার লেজটি বাইরে রইল। গুহায় ঢোকার মুখে রাজা ছিটকে পড়ে গেল। এতে রাজা খুব বিরক্ত আর রাগ হল।

সে বাঘের লেজ ধরে টানতে শুরু করল। টানাটানির এক পর্যায়ে বাঘের লেজ গেল ছিড়ে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় রাজা লেজ নিয়ে প্রাসাদে ফিরে গেল।

কিছুক্ষণ পর বাঘ অনেক কষ্টে গুহা থেকে বের হয়ে এলো। বাঘটি তখনও চচুরাটের ভয়ে ভীত ছিল। লেজের হেঁড়া অংশে সে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করল।

সে দৌড়ে চলে গেল ঝরনার কাছে। ঝরনার পানিতে লেজের ছেড়া অংশ ডুবিয়ে বসে রইল, যেন ব্যথা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যায়।

একটা কাঁকড়া তখন গর্ত থেকে বেরিয়ে এলো। বাঘের লেজের কাটা অংশের গন্ধ পেল সে। কাঁকড়ার লম্বা তীক্ষ দাঁত বসিয়ে দিল বাঘের লেজের ক্ষতস্থানে।

বাঘ তীব্র আর্তনাদ করে উঠল, আর দৌঁড়ে পালাল। কিন্তু বাঘের লেজের ক্ষতস্থানে কাঁকড়ার বিষদাত আটকে রইল। ব্যথায় ব্যথায় কয়েক দিন পর বাঘটা মরে গেল।

এভাবেই বৃদ্ধা বাঘের হাত থেকে বেঁচে গেল। অথচ এই বাঘটিই তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা