চাকমাদের পরিমাপ পদ্ধতি

Jumjournal
Last updated Sep 21st, 2021

762

featured image

বিভিন্ন জিনিসের দৈর্ঘ্য, উচ্চতা, ওজন ও আয়তন পরিমাপের জন্য অতীতে চাকমা সমাজে বিভিন্ন পদ্ধতি চালু ছিল। কিন্তু কালের গতির সাথে সাথে সেই সব পরিমাপ পদ্ধতি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আসুন জেনে নিই সেই সব পদ্ধতিগুলি।

যদি আমার কোনো ভুল হয়,দয়াকরে সঠিকটা জানাবেন। আর কারও মাপজোকের অন্য কোনো পদ্ধতি জানা থাকলে তা জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।


ক) দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা পরিমাপের এককঃ

আঙুল, মুহ্ত্, থ, বিগোত্, মুধুং,আহ্ত্,বিওং, মানুজ, বাশ ইত্যাদি।

আঙুলঃ হাতের আঙুলের পার্শ্ব পরিমাণ দৈর্ঘ্যকে বলা হয় এক আঙুল। সাধারণত হাতের আঙুল পাশাপাশি রেখে স্বল্পদৈর্ঘ্যের জিনিস মাপা হয়। যেমন—মহিলাদের চুলের কাঁটা মাপতে,বাঁশির ছিদ্রের দূরত্ব মাপতে ও হেংগ্রং মাপতে আঙুল ব্যবহার করা হতো। বলা হতো এক আঙুল,দুই আঙুল ইত্যাদি।

তরলজাতীয় পদার্থও নির্দিষ্ট কোনো শিশি বা বোতলে ঢুকিয়ে যেমন—তেল ও মদ ইত্যাদি আঙুল মেপে হিসাব করা হয়।

মুহ্ত্ঃ হাতের মুষ্টিকে মুহ্ত্ বলে। শুকর মাপতে মুহ্ত্ ব্যবহার করা হয়। যেমন, প্রথমে রশি বা লতা দিয়ে শুকরের দেহের ঘের/বেড় মাপা হয়, তারপর সেই মাপ বরাবর রশিটি সমান করে ভাঁজ করে ভাঁজ করা রশিটি মুষ্টি দিয়ে মাপা হয়।

প্রাপ্ত মাপ অনুসারে বলা হয় শুকরটি তিন মুহ্ত্ হয়েছে, বা চার মুহ্ত্ হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রতি মুষ্টিতে দশ সের মাংস পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়।

অন্যান্য স্বল্পদৈর্ঘ্যের জিনিস মাপতেও মুষ্টি ব্যবহার করা হয়। আবার অনেক সময় শষ্যাদিও মুষ্টিতে পোড়ে মাপের কাজে ব্যবহার করা হয়।

থঃ হাতের চেটো বা করতল প্রসারিত করে বুড়ো আঙুলের মাথা হতে তর্জনীর মাথা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যকে বলা হয় এক থ। মহিলারা বেইন বোনার পরিমাণ মাপতে এই থ ব্যবহার করেন।

বিগোতঃ বাংলায় বিঘত। হাতের চেটো প্রসারিত করে বুড়ো আঙুলের মাথা হতে মধ্যমার (মধ্যের আঙুল) মাথা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যকে এক বিগোত বলে। এটাও স্বল্পদৈর্ঘ্যের জিনিস মাপতে ব্যবহার করা হয়।

মুধুংঃ হাতের কনুই হতে মুষ্টিবদ্ধ হাতের মাথা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যকে বলা হয় এক মুধুং।
আহ্তঃ বাংলায় হাত। হাতের কনুই হতে মধ্যমার মাথা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যকে এক হাত বলে।


বিওংঃ দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে এক হাতের মধ্যমার মাথা থেকে অন্য হাতের মধ্যমার মাথা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যকে বলা হয় বিয়োং। নৌকার দৈর্ঘ্য মাপতে বিয়োং ব্যবহার করা হয়। যেমন বলা হয়ে থাকে, পাঁচ বিয়োঙ্যা ন(নৌকা),ছয় বিয়োঙ্যা ন(নৌকা) ইত্যাদি।

মানুজঃ মানুষের উচ্চতার সমান দৈর্ঘ্যকে বলা হয় এক মানুজ। পানির গভীরতা মাপতে মানুষের উচ্চতার দৈর্ঘ্যতে হিসাব করা হয়। যেমন বলা হয়, পুকুরে এক মানুজ পানি,দুই মানুজ পানি ইত্যাদি। অথবা পানি কম হলে বলা হয়,হাঁটু পরিমাণ পানি,কোমর পরিমাণ পানি, গলা পরিমাণ পানি ইত্যাদি।

অন্যান্য উচ্চতা মাপতেও মানুষের দৈর্ঘ্যের হিসাবে হিসাব করা হয়া থাকে।

বাশঃ দশ হাত দৈর্ঘ্য লম্বা বাঁশকে বলা হয় এক বাশ। জমি পরিমাপ করতে এই বাশ দিয়ে মাপা হয়।

চাকমা পরিমাপ যন্ত্র
ছবিঃ বাপ্পী চাকমা


খ) শস্যাদি পরিমাপের এককঃ

ধ, সেরি, আরিহ্।


ধঃ শস্যাদি মাপার বাঁশের তৈরি পাত্র বিশেষ— বাংলায় বল হয় কুনিকা। ‘ধ’ সাধারণত এক পোয়া বা আধা সের পরিমাণ ওজনের চাল ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। এই ‘ধ’ দিয়ে চাল মেপে ভাত রান্না করা হয়।

সেরিঃ এক সের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন শস্যাদি মাপার খাঁচা বিশেষ।

আরিহ্ঃ দশ সের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন শস্যাদি মাপার খাঁচা বিশেষ।

গ) গোলাকার বা ঘেরজাতীয় বস্তুর মাপের এককঃ আজা।

আজাঃ দুই হাত বেষ্টন করে বুকের সাথে লাগিয়ে যে পরিমাণ জিনিসপত্র নেওয়া যায়,তাকে বলে এক আজা। যেমন জঙ্গল থেকে লাকড়ি নিয়ে আসলে বলা হয়ে থাকে, এক আজা বা দুই আজা লাকড়ি সংগ্রহ করেছি। বড় গাছের বিশালত্ব বুঝাতে বলা হয়,আজা বেড় ন-পায়( হাতে বেষ্টন করা যায় না)।

ঘ) গরুর বয়স নির্ণয়ে দাতঃ বয়স নির্ণয় করার সময় গরুর দাঁত দেখা হয়। বলা হয়ে থাকে যে,গরুর বয়স যত বছর হয় ঠিক ততটি দাঁত গজায়।

উপরিউক্ত মাপের একক ছাড়াও কুরুম, পেরবো ও বিভিন্ন ধরণের খাঁচা এবং কাঠি মাপের একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তথ্যসুত্রঃ ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা