মায়ানমারে চম্পকনগরের পথে

Jumjournal
Last updated May 9th, 2021

4230

featured image

[বংশানুক্রমে জানা যায় যে চাকমারা চম্পকনগর নামক স্থান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে এসেছে। কোন চম্পকনগর থেকে এসেছে তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও নৃবিজ্ঞান, বিখ্যাত গবেষকদের মন্তব্য, প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য এবং মায়ানমারের ইতিহাস বিশ্লেষণে আমি নিশ্চিত ছিলাম যে চাকমারা মায়ানমারের চম্পকনগর থেকে এসেছে। মায়ানমা উচ্চারণে চম্পকনগরকে বলা হয় চাম্পানাগো/সাবেনাগো। আমার লেখা চাকমা ভাষা, জাতি ও অভিবাসন গ্রন্থে এই সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছি। গ্রন্থটি অতি সম্প্রতি গত অক্টোবর ২০১৩ সনে প্রকাশিত হয়েছে। ইতোপূর্বে লিখিত চম্পকনগর সন্ধানেঃ বিবর্তনের ধারায় চাকমা জাতি (উসাই, ১৯৯৯) ও  The Chakma Race (TCI, 2006)  গ্রন্থ দু’টিতেও একই মন্তব্য করেছি।]

মায়ানমারে চাকমারা Thet/Thek এবং তঞ্চ্যারা Doingnak/Daingnet/Dainet নামে পরিচিত। মায়ানমারের ইতিহাস দৃষ্টে জানা যায় যে মেঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত ভোট-বর্মি (Tibeto-Burman) জনগোষ্ঠীভূক্ত পিউ (Pyu), কান্যান (Kanyan) ও থেতরা (Thet) মায়ানমারের প্রাচীন জনগোষ্ঠী।

সে-দেশে সরকারিভাবে স্বীকৃত (Recognized) বিভিন্ন ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর (Ethnic groups) মধ্যে চাকমা (Thet) ও তঞ্চঙ্গ্যারাও (Doingnak) অন্তর্ভূক্ত (তালিকা সংযুক্ত)।

বার্মার (মায়ানমার) জাতির পিতা Bogyoke Aung San এর কন্যা Aung San Suu Kyi  যিনি National League for Democracy এর প্রধান এবং বর্তমান সরকারের বিরোধী দলীয় নেত্রী। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত। তাঁর লিখিত Freedom from Fear গ্রন্থ হতে উদ্বৃতি দেয়া হলো,

On the way to Champaknagar Sabenago or Champanago in Myanmar
মায়ানমারে সুপ্রিয় তালুকদার, ছবি: লেখক

It is generally accepted that the Mons were predominantly Buddhist from early times. These appear to have been a period when the Mons in Burma came under strong Hindu influence and Buddhism declined. However, by the eleventh century, the Mons kingdom in Pegu and Thaton are known to have been Buddhist.

The second wave of peoples to come into Burma after the Mons was the Tibeto-Burmans from the north. The Burmese, who today form the largest racial group in the country, believe that their early Tibeto-Burman ancestors were the Pyus, the Kanyans and the Thets. Little is known about the Kanyans and the Thets beyond their names. Much more can be said of the Pyus who have left traces of a well developed civilization. In central Burma the site of an ancient Pyu city has been discovered. This city probably dates back to the beginning of the Christian era. Its name, Beikthano, is a Burmese version of the name of the Hind god, Vishnu, No Buddhist statues or relics have been found here, but there is reason to believe that a type of Buddhism may have existed side by side with the worship of Vishnu” (p.45).

উল্লিখিত তথ্য অনুসারে পিউ (Pyu), কান্যান (Kanyan) এবং থেতরা (Thet) মায়ানমারের বৃহত্তম জাতি মায়ানমাদের (বামা) পূর্বপুরুষ। অতএব চাকমারা মায়ানমারের একটি প্রাচীন জাতিজনগোষ্ঠী তা সঠিক, যা অধিকাংশ গবেষক বিভিন্ন গ্রন্থে এইরূপ মন্তব্য করেছেন। কাজেই এই বিষয়ে কোনরূপ সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই।

মায়ানমার ভ্রমণ আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, যেহেতু আমি চাকমাদের উৎপত্তি, আদিনিবাস ও অভিবাসন বিষয়ে গবেষণাকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি।

এবার মায়ানমারে চম্পকনগরের (চাম্পানাগো/সাবেনাগো) সঠিক অবস্থান নির্নয় করার এবং থেতদের (Thet) সম্পর্কে জানার লক্ষে মায়ানমার ভ্রমণে যাই।

ইয়ংগুন-নেপিড-বাগান-মান্ডালের দীর্ঘপথ অতিক্রম করে অবশেষে চম্পকনগর পৌঁছে আমি আনন্দে অভিভূত। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আমিই প্রথম চাকমা চাকমাদের ঐতিহাসিক রাজ্যপট চম্পকনগরে পা ফেলি।


ইয়াংগুন

১৬ ডিসেম্বর ২০১৩সোমবার

সন্ধ্যা ৭-১৫ মিনিটে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিমানে ইয়াংগুনের উদ্দেশ্যে ঢাকা হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করি। সফরসঙ্গী ছিল আমার ছোট ভগ্নিপতি মং থোয়াই।

বাংলাদেশ বিমানের ৪টি বিমান বিকল হওয়ায় বিমানের স্বল্পতার কারণে ঢাকা থেকে সরাসরি ইয়াংগুন যাবার কথা থাকলেও ব্যাংকক হয়ে রাত ১২-৩০ মিনিটে ইয়াংগুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করি।

বিমানবন্দরে আমাদের আপক্ষায় ছিল প্রুমা ও তার ছোট বোন নিনিন। তারা আমাদের স্টার স্কাই তিন তারকাযুক্ত হোটেলে পৌঁছে দিলো। এই হোটেলে আমাদের ৩ দিনের বুকিং রয়েছে। ইয়াংগুন মায়ানমারের বৃহত্তর শহর এবং একসময় দেশের রাজধানী ছিল। বর্তমান রাজধানী নেপিড (Naypyitaw)।

১৭ ডিসেম্বর ২০১৩মঙ্গলবার

সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে লবিতে বসি। কথামত ১০টায় নিনিন এলে আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে যাই ইয়াংগুনের বিখ্যাত শোয়েডাগন প্যাগোডা দেখতে। এটি ২০৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছিল।

পাহাড়ে অবিস্থিত এই প্যাগোডা এবং চতুর্দিক ঘেরা বৌদ্ধমন্দিরগুলোর কারুকার্য ব্যাঙ্ককের গ্রান্ড প্যালেস এর মতোই বিষ্ময়কর যে চোখ ফেরানো যায় না। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে।

মায়ানমা পূন্যার্থীরা পালি ভাষার মন্ত্র অনেকটা জোর করে মায়ানমা উচ্চারণে জপছে তা লক্ষ্য করি। অতঃপর ইয়াংগুন শহরটি ঘুরে দেখি। ইঞা লেকটি খুবই সুন্দর । সুলে প্যাগোডা ও অন্যান্য স্থাপনাগুলো নিজেদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যে নির্মিত যা দেখতে অপূর্ব।

শহরের রাস্তাগুলো সোজা, প্রশস্ত এবং চার লাইন বিশিষ্ট। গাড়িগুলো চলছে রাস্তার ডান পাশে । কোন মোটরবাইক চোখে পড়লো না।

সন্ধ্যায় মায়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিজ একসিলেন্সি মেজর জেনারেল (অব:) অনুপ কুমার চাকমা আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য হোটেলে গাড়ি পাঠালেন। তাঁর বাসভবনে আমাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা ও ডিনার করি।

সুপ্রিয় তালুকদার তৎকালীন মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব:) অনুপ কুমার চাকমা
সুপ্রিয় তালুকদার তৎকালীন মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব:) অনুপ কুমার চাকমা, ছবি: সংগৃহীত

বেগু

১৮ ডিসেম্বর ২০১৩বুধবার

সকালে জিপযোগে নিনিনসহ আমরা মায়ানমারের প্রাচীন রাজধানী পেগুর উদ্দেশ্যে রওনা দিই, বর্তমানে এই শহরটির নাম বেগু বা বাগো । মাত্র দু’ঘন্টার পথ, ১০টায় পৌঁছি। শহরটি ঘুরে প্যাগোডা, বৌদ্ধমন্দির ও অন্যান্য স্থাপনাগুলো দেখি।

পুরানো রাজবাড়ি যাবার পথ খুঁজে পাচ্ছিনা, ঘুরতে ঘুরতে শহরের কাছাকাছি একটা গ্রামে ঢুকে পড়ি। দেখি একটি কাঠের খোলা ঘরে বসে কয়েকজন ছেলে তাড়ি গিলছে, ঘরের পাশে তাড়িগাছ ।

সেখান থেকে এক বোতল তাড়ি কিনে আমি আর মং থোয়াই গিলতে শুরু করি। অতঃপর রাজবাড়ি যাবার পথ খুঁজে পেলে পেগুর হংসবতী রাজবংশের (Hansawaddy Dynasty) রাজাদের পুরানো রাজাড়ি, দরবার, বৌদ্ধমন্দির ইত্যাদি দেখি যা খুবই মনোরম।

বলা বাহুল্য, আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বান্দরবানের বোহ্মাং রাজারা পেগুর এই হংসবতী রাজবংশের রাজা Nadabareng (১৫৮১-৯৯) এর উত্তরসূরী। বর্তমান বোহমাং রাজা উ চ প্রু ১৭তম রাজা।

বেগু থেকে ফিরে এসে সন্ধ্যায় Actionaid-এ কর্মরত Country Director বাংলাদেশি শিহাব ভাই এর বাসায় ডিনারের আমন্ত্রনে যাই।

বাগানসাগাইংমান্ডালে

১৯ ডিসেম্বর ২০১৩বৃহস্পতিবার

হোটেল থেকে চেক আউট হয়ে সকাল ৯ টায় রাজধানী নেপিড হয়ে বাগানের উদ্দেশ্যে ইয়াংগুন ত্যাগ করি । এবার আমাদের সফরসঙ্গী আরও একজন যোগ হয়েছে মাসো, আর নিনিন তো আছেই। বাগান হলো পুরানো পাগান বা পঁগা রাজ্য।

নিপিড যাবার রাস্তাটি খুবই চমৎকার, ৬ লাইন বিশিষ্ট সোজা পথ। রাস্তার দু’পাশে সমতল ভূমির শেষ নেই। আসলে মায়ানমার বিশাল একটি দেশ । বাংলাদেশের চাইতে ৫/৬ গুণ বড়। জনসংখ্যা মাত্র ৬ কোটির উর্ধ্বে।

বাগান যাবার উদ্দেশ্য হলো চাকমাদের আদিরাজ্যপট চম্পকনগর যাওয়া। ইয়াংগুনে জেনেছি যে চম্পকনগর বাগান হয়ে যেতে হবে। যাহোক, নেপিড ফেলে এসে মিথিলা (Meiktila) থেকে একটি পথ বাগান এবং অপর একটি পথ মান্ডালের দিকে চলে গেছে। আমরা বাগানের পথ ধরি।

পথে চ্যকপানডং (Kyaungpandaung) মালভূমিটি দেখি। ইতিহাস দৃষ্টে জানা যায় এখানে একদা চাকমাদের বসতি ছিল । The Marma Bohmongree সন্বধ্যে লিখিত বিবরনীর একস্থানে লেখেন, “…The Chakma say, the plateau was once their home and Phayree visiting it in 1866, found traces of former occupation.”

আরাকানের এই মালভূমিটি বাগান যাবার পথে পড়ে যেহেতু এটি নতুন বাগানের নিকটে দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত । যাহোক, সন্ধ্যা ৬টায় বাগান পৌঁছি। ইয়াংগুনে শীত নেই কিন্তু এখানে বেশ শীত পড়েছে। রাতে Yar Kinn Tha হোটেলে অবস্থান করি।

২০ ডিসেম্বর ২০১৩শুক্রবার

হোটেলের ছাদে খোলা রেস্টুরেন্টে বেকফাস্ট সেরে চম্পকনগরের অবস্থান, পথ, দূরত্ব ইত্যাদি জানার জন্য একজন ট্যুরিস্ট গাইডকে হোটেলে আসতে বলা হলো কিন্তু সে চম্পকনগর সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারলোনা।

এতে আমি অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ি কিন্তু হাল ছাড়লাম না। চম্পকনগর সম্পর্কে জানে এমন একজন বৃদ্ধলোকের সাথে যোগাযোগ করে মাসো ও নিনিন আমাদের তার কাছে নিয়ে গেলো। লোকটি ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারায় আমার সুবিধা হলো।

আমার পরিচয় দিয়ে চম্পকনগর সম্পর্কে জানতে চাই । তিনি বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলেন যে হ্যাঁ চাম্পানাগো নামে একটি জায়গা আছে তবে তার অবস্থান সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না, অতঃপর তিনি মায়ানমা ভাষার একটি ম্যাপ দেখে চম্পকনগরের অবস্থান বের করেন, লেখা আছে চাম্পানাগো অথাৎ এটিই চম্পকনগর।

আমি মায়ানমা লেখা পড়তে পারার সুবাদে নিশ্চিত হলাম যে লেখাটি সত্যিই চাম্পানাগো, খুশিতে মন ভরে গেল। তবে বাগান থেকে যাবার কোন পথ নেই, মান্ডালে থেকে যেতে হবে। তাঁর কাছ থেকে ম্যাপটি চাইলে তিনি খুশিমনে আমাকে দিলেন। আমি তাকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

প্রাচীন বাগানের রাজা অনিরূদ্ধ (১০৪৪-৭৭) এর রাজবাড়ি, আনন্দ প্যাগোডা, শোয়েডং প্যাগোডা ও শহরটি ঘুরে দেখি।

শোয়েডং প্যাগোডা কমপ্লেক্স্র থেকে History of Myanmar since ancient times Ges Mandalay and other cities of the past in Burma দু’টি বই কিনি। ইংরেজি ভাষায় লেখা মায়ানমারের একটি বড় ম্যাপ চোখে পড়লে ম্যাপটি দেখি, ম্যাপে চম্পকনগরের অবস্থান দেখানো আছে ।

তাই ম্যাপটি চাইলে দোকানি বিনামূল্যে আমাকে দিলেন। দুপুর ১.১৫ মিনিটে মান্ডালের উদ্দেশ্যে বাগান ত্যাগ করি । পথে ইরাবতী (Ayeyawaddy) নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত সাগাইং শহরটি দেখি।

সোনালি ও সাদা রঙের প্যাগোডায় ভরপুর শহরটি খুবই সুন্দর। মায়ানমা ভাষায় সাগাইং অর্থ হলো চাকমা শহর বা অঞ্চল।

এতে বোঝা যায় যে অতীতে এটা চাকমা অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল। নদীর পশ্চিম পারে মান্ডালে শহর । বিকাল ৫-৩০ মিনিটে মান্ডালে পৌঁছি।  Pacific Hotel এ রাত্রি যাপন করি।


মান্ডালে
  চাম্পানাগো

২১ ডিসেম্বর ২০১৩শনিবার

সকাল ৯-৩০ মিনিটে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ি। শহরে অবস্থিত পুরানো রাজবাড়ি দেখতে যাই।

উল্লেখ্য যে ইয়াংগুন শহরে শোয়েডাগন প্যাগোডা, বেগু, বাগান ও এখানে মান্ডালের পুরানো রাজবাড়ি দেখতে গিয়ে কোথাও প্রবেশপথে আমার ও মং থোয়াই এর বিদেশি হিসাবে বাড়তি টাকা (Gate money) দিতে হয়নি কারণ সবখানেই আমাদেরকে মায়ানমা মনে করেছে।

যাহোক, কারুকার্যখচিত নয়নাভিরাম বিশাল রাজবাড়ি । বেগু ও বাগানের রাজবাড়ির চেয়ে অনেক বড়। এই রাজবাড়িতে King Thibaw I Chief Queen Supalayat এর মূর্তি সিংহাসনে বসিয়ে রাখা হয়েছে।

ইতিহাস দৃষ্টে জানা যায় যে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বার্মাকে(মায়ানমার) তাদের অধীনে ভারতের Native State এর ন্যায় থাকার জন্য রাজা থিবকে শেষ প্রস্তাব দিলে রাজা তা অস্বীকার করলে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশ বার্মা দখল করে নেয় এবং রাজা থিব ও মুখ্যরানি সুপায়ালাতকে ভারতের Native State নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়।

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ৪ জানুয়ারি বার্মা (মায়ানমার) স্বাধীনতা লাভ করে । যাহোক, ১০টায় চমম্পকনগরের উদ্দেশ্যে মান্ডালে ত্যাগ করি। শহর এলাকা পেরিয়ে গেলে কিছুদূর এগুলে গাড়ি থামিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে চম্পকনগরের (চাম্পানাগো) অবস্থান ও দূরত্ব জেনে এগুতে থাকি কিন্তু পথ চলার শেষ নেই।

পথ চলতে চলতে নিনিন কখনো বাংলা কখনো মায়ানমা গান গেতে শুরু করে। গান শুনতে শুনতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিই। গান থেমে গেলে কথা বলা শুরু।

কিন্তু পরস্পরের ভাষা জানা না থাকায় আমরা কথা শেয়ার করতে পারিনি। অনেকদূর এগিয়ে রাস্তার পাশে একটি চা-এর দোকান পেলাম।

দোকানির কাছ থেকে জানা গেল যে রাস্তার বাম পাশের কাচা রাস্তা ধরে গেলে ইরাবতী নদীর পারে চাম্পানাগো পৌঁছা যাবে। পরে রাস্তার ধারে চাম্পানাগো যাবার পথনির্দেশক বোর্ডটি চোখে পড়ে।

এই পথ ধরে চলতে চলতে অবশেষে চাম্পানাগো পৌঁছালাম। ইরাবতী নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত এটি একটি পার্বত্য অঞ্চল। নদীর পশ্চিম পারে মালে বা মালি। চাকমাদের আদিরাজ্যপট চম্পকনগর সম্পর্কে বিখ্যাত গবেষক Pierre Bessaignet লিখেছেন,

“He had a son named Champakali. He founded a new city on the eastern bank of Irawadi and named Champaknagar after him. He built a temple on the Irawadi and installed an image of God in it.” (Tribesmen of the Chittagong Hill Tracts. p.69) Padmeswar Gogoi

বার্মার প্রথম তগং রাজ্য পতনের বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন,

“………………captured Tagaung, destroyed it and compelled the Raja to quit the country. The Raja and his family, with other followers, entered Mali stream and took refuge at Mali (Male) on the right bank of Irawady almost opposite to present ruins of lower Sabenago (Champanago).” (The Tai and the Tai Kingdom.p.104)

উল্লিখিত দু’টি উদ্বৃতিতে চম্পকনগরের অবস্থানের বর্ণনা যেভাবে দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবে হুবহু মিল, কোন ব্যতিক্রম নেই। আমরা একটি ঘরে গিয়ে বসি।

সেখানে পাশের বাড়ি থেকে একজন বৃদ্ধলোককে নিয়ে আসা হয়। তার সাথে মাসো ও নিনিন কথা বলে আমাকে জানায় যে চাম্পানাগো বা সাবেনাগো অতীতে শহর ছিল। বর্তমানে এটি একটি গ্রাম, গ্রামে ৪০০-৫০০ পরিবার আছে।

তারা মায়ানমা (বামা) ও থেত (Thet) । উভয় জনগোষ্ঠী মায়ানমা (বামা) ভাষায় কথা বলে, কোন পার্থক্যও দেখা গেলনা। বৃদ্ধলোকটি আরও জানান যে তিনি তাঁর দাদার কাছে শুনেছেন যে অতীতে এখানে থেত (Thet) রাজা বাস করতেন।

ইরাবতী নদীর পূর্ব পাড়ে এই চম্পকনগর বা চাম্পানাগো নামক গ্রামটি অতীতের বৃহত্তর চাম্পানাগোর নিম্নাংশ (Lower Sabengo) হতে পারে যা Padmeswar Gogoi লিখেছেন (মানচিত্র সংযুক্ত)। জানা গেল যে কোন একসময় প্রবল ভূমিকম্পের ফলে শহরের ধ্বংসাবশেষগুলিও নিঃচিহ্ন হয়ে গেছে।


মোগো
পিউলি

বিকাল ৩টায় মান্ডালের উদ্দেশ্যে চাম্পানাগো ছেড়ে যাই কিন্তু মান্ডালে পৌঁছাতে অনেক রাত হবে বিধায় মোগো (Mogok) শহরে প্রবেশ করি। নিনিন ও মাসো কক্ষ বরাদ্দের জন্য হোটেলে গেলে আমার ও মং থোয়াই এর পাসপোর্ট দেখে ম্যানেজার কক্ষ বরাদ্দ দিতে আপত্তি করে যেহেতু আমরা বিদেশি।

তখন আমি প্রচন্ড শীতে কাঁপছি, নিনিন তাড়াতাড়ি হোটেল থেকে একটি কম্বল এনে আমাকে দেয়। গায়ে কম্বল জড়িয়ে গাড়িতে উঠে হিট নিলে স্বাভাবিক হই। এখানে নীলা, রম্নবি, পান্না ইত্যাদি মূল্যবান পাথরের খনি থাকায় এই শহরে (Land of rubies) বিদেশিদের প্রবেশ নিষেধ যা আমাদের জানা ছিলনা।

যাহোক, হোটেল থেকে তড়িঘড়ি করে চলে যাবার সময় হোটেলের কম্বলটি ফেরৎ দিতে আর মনে নেই। মাসো একজনের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে। ঐ বাসায় গিয়ে জানতে পারি বাসার মালিক Thet (চাকমা), বাড়ি চাম্পানাগো।

তার নাম U Thin Win তার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলি (নিনিনের মাধ্যমে)। তিনি বলেন যে বাগানের রাজা অনিরূদ্ধ (১০৪৪-৭৭) এর শাসনামলে তাঁর নির্দেশে Upper মায়ানমারে বসবাসকারী ১০ লক্ষেরও অধিক Thet মায়ানমাদের সাথে মিশে গেছে।

তথাপি বংশানুক্রমে তারা নিজেদের এখনো Thet বলে। তিনি আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন এবং এক বোতল হুয়িস্কিও দিলেন। তার বাসায় কক্ষের সংখ্যা কম হওয়ায় আমি, মং থোয়াই, নিনিন ও মাসো নির্দ্ধিধায় একটি  কক্ষে রাত্রি যাপন করি।

২২ ডিসেম্বর ২০১৩রবিবার

সকালে একটি ভারতীয় রেস্টুরেন্টে আলু-পুরি দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি মোগো ত্যাগ করি। কারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক আমাদের উপস্থিতি ও অবস্থান জানতে পারলে ভীষণ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।

মোগো শহরটি একেবারে পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত। ফেরার পথে পাহাড় নামার পালা । রাস্তার দু’পাশে সুউচ্ছ পাহাড় আর পাহাড় এবং গহীন বনাঞ্চলের শেষ নেই। অবশেষে মোগোর সীমানা সংলগ্ন সমান রাস্তায় নামি।

সেখানে ৪ জন পুলিশ পাহারারত ছিল। তারা গাড়ি থামার সংকেট দিলে আমাদের গাড়ি থামে।আমাদের গন্তব্য জানতে চাইলে মাসো তাদের সাথে কথা বলে । মায়ানমা ভাষা কিছুটা বুঝার সুবাদে বুঝতে পেরেছি যে মাসো বলেছে পিউলি যাবো।

উল্লেখ্য যে আমার ও মং থোয়াই  এর পরনে ছিল মায়ানমা পোশাক। আমাদের চেহারা ও পোশাক দেখে পুলিশ আমাদেরকে বিদেশি ভাবতেই পারলোনা। গাড়ি ছাড়ার অনুমতি দেয়। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।

মং থোয়াইকে বলি ভাগ্য ভালো যে জেলের ভাত আর খেতে হলো না। পথে পিউলি (Pyin Oo Lwin) শহরে ঢুকি। শহরটি খুবই মনোরম যা অনেকটা উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী বিখ্যাত শিলং শহরের মতো।

শহরের এক পাশে পাহাড়ের উপর অবস্থিত বৌদ্ধমন্দিরটি দেখতে অপূর্ব। ব্রিটিশ-বার্মার গভর্নর ও উচ্চপদস্থ সাহেব কর্মকর্তারা এই শহরে অবস্থান করতো। বিকাল ৪ টায় মান্ডালে এসে পৌঁছি।

সন্ধ্যায় ইয়াংগুন শহরের অধিবাসী Dr.Hla Min Sein এর সাথে মোবাইলে ইংরেজিতে কথা বলি। তিনি আগামী ২৪ তারিখ তাঁর বাসায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রন জানান।

তিনি জন্মসূত্রে মায়ানমারের নাগরিক। তার পিতা ডাঃ রাহুল দেওয়ান বহুপূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মায়ানমার গিয়ে বসতি স্থাপন করেন।


মান্ডালে
  ইয়াংগুন

২৩ ডিসেম্বর ২০১৩সোমবার

সকাল ৯টায় ইয়াংগুনের উদ্দেশ্যে মান্ডালে ত্যাগ করি এবং বিকাল ৫টায় ইয়াংগুন পৌঁছি । ইয়াংগুনে এবার Hotel Royal White Elephant এ উঠি। রাত্রে প্রুমা একটি নামীদামী হোটেলে আমাদের ডিনার আপ্যায়ন করে।

২৪ ডিসেম্বর ২০১৩মঙ্গলবার

সকাল ১০ টায় নিনিনকে সাথে নিয়ে আমরা Dr. Hla Min Sein এর বাসায় যাই । তিনি আমাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানান। অতঃপর তাঁর সাথে মায়নমার ও চাকমাদের ইতিহাস সম্পর্কে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করি ।

তিনি জানান যে মায়ানমা (বামা) ও চাকমাদের (Thet) ইতিহাস পরস্পর সম্পৃক্ত যেহেতু পিউ, কান্যাণ ও থেতরা মায়ানমারের প্রাচীন জাতি এবং এই তিনটি জনগোষ্ঠীর মিশ্রণে-মিলনে মায়ানমারের বৃহত্তর জাতি (The largest racial group) মায়ানমারা (বামা) গড়ে উঠেছে।

অতএব বর্তমানে  চাকমারা (Thet) তাদেরই একটি অংশ এবং একই ভাষাভাষী। অতীতে আরাকান, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসরত চাকমাদের ভাষাও বামা ভাষা (Bama saga) ছিল । এবং বার্মা (মায়ানমার) থেকেই তাদের অভিবাসন ঘটে যা নৃবিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব ও ইতিহাস সমর্থিত।

মায়ানমারে চাকমাদের (Thet) আদিরাজ্যপট চম্পকনগর বর্তমান মান্ডালে অঞ্চলে (Mandalay Region) ইরাবতী (Ayeyawaddy) নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত।

চাম্পানাগো বা সাবেনাগো শহরটি অতীতে কোন একসময় ধ্বংস হলে চাকমারা সেখান থেকে মাইচাগিরি নামক স্থানে পুনরায় রাজ্য স্থাপন করে। ইতিহাস দৃষ্টে জানা যায় আরাকান রাজা মেঙ্গাঁদি ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে মাইচাগিরি দখল করেন।

বর্তমান মাগোয়ে অঞ্চলে (Magway Region) ইরাবতী নদীর পশ্চিম পারে অবস্থিত এই স্থানটির বর্তমান নাম সারাক, মায়ানমা (বামা) উচ্চারণে Thayet যেটি মানচিত্রে দেখানো হয়েছে (সংযুক্ত) এবং যার অর্থ হলো চাকমা স্থান।

এতে বোঝা যায় যে অতীতে এটাও চাকমা অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল। Dr. Hla Min Sein বলেন সমগ্র  Upper মায়ানমারে অধিকাংশ চাকমা (Thet) মায়ানমাদের (বামা) সাথে মিশে গেলেও ২০ লক্ষের অধিক Thet রয়েছে।

ইয়াংগুন শহরে তাদের সংখ্যা এক লক্ষেরও বেশি। মায়ানমারের National Registration Card (NRC) এ তারা জাতিগত পরিচয় কেউ লেখে মায়ানমা বা বামা আবার কেউ লেখে Thet ।

আবার রাখাইন স্টেটে বসবাসকারী চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা লেখে দৈংনাক (Doingnak) । যাহোক, তিনি আমাকে একটি ক্যালেন্ডার The Memory of Chakma Myanmar-2014 উপহার দেন।

আরাকানে (রাখাইন স্টেট) Maungdaw, Buthidaung, Myauk U, Kyauttaw, Minpyo, Punn Na Kyuing, Patat Wo ইত্যাদি Township এর বিভিন্ন গ্রামে চাকমা (Thet) ও তঞ্চঙ্গ্যারা (Doingnak) বসবাস করে।

জনসংখ্যার দিক থেকে তারা দু’লক্ষের কাছাকাছি। তাদের ভাষা চাকমা ভাষার মতোই তবে উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি মায়ানমাদের মতো যা Dr. Hla Min Sein এর কাছ থেকে জানতে পারি ।

উল্লেখ্য যে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমরা রাখাইন স্টেট যেতে পারিনি, স্থানীয় সমস্যার কারণে বর্তমানে সেখানে বিদেশিদের প্রবেশ নিষেধ;

তবে ক্ষেত্র বিশেষে সরকারের বিশেষ অনুমতি পেলে যাওয়া যায়। ১৯৭১ সনে আমি এই স্টেটে অবস্থিত মংড ও বুচিডং এলাকা সফর করেছি। সেখানে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।

Aung San Suu Kyi এর লেখা উল্লিখিত গ্রন্থ থেকে আরাকানের (রাখাইন স্টেট) অধিবাসীদের সম্পর্কে একটি উদ্বৃতি দেয়া হলো,

The early peoples of Arakan are something of a mystery. It is thought that they were a mixture of Mongolian and Aryan peoples who had come over from India. Certainly the early kings of Arakan were of Indian stock. There are now several groups of peoples in the Arakan State: Arakanese, Thet, Dainet, Myo, Myanmagyi and Kaman. The Arakanese are Tibeto-Burmans and their language is very close to Burmese. In fact some regard it as archaic Burmese. The language of some of the other groups show the influence of Bengali. Because of its geographical position, Bengal has played a major part in the history and civilization of Arakan. In the fifteenth century, Bengal helped the Arakanese to resist the power of the kings of Ava. From then on, the Kings of Arakan used Islamic titles, although they and the majority of their subjects remained Buddhist, However, there are more people of the Islamic faith to be found in Arakan than anywhere else in Burma.” (p.63)

উল্লিখিত তথ্যের কারণে ইহা সঠিক হয় যে আরাকানে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের আদিভাষা (বামা) বাংলা ভাষা দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছিল।

Dr. Hla Min Sein এর সাথে আলোচনা শেষ করে U Aye Maung (সুবীর) এর বাসায় যাই । তার সাথে দেখা হলো ৪০ বছর পর । সে ১৯৭১ সনে রাঙ্গামাটি থেকে বার্মায় (মায়ানমার) চলে যায়।

তারা উভয়ে হোটেলে আমাদের আপ্যায়ন করেন। আপ্যায়ন শেষে ইয়াংগুনে অবস্থিত দৈংনাক-চাকমা বৌদ্ধমন্দির দেখতে যাই।

অতঃপর তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে ফিরে আসি। ফেরার পথে প্রয়াত বোহ্মুাং রাজা মং শোয়ে প্রু চৌধুরীর জামাতা মংশোয়ে  প্রুমার বাসায় যাই।

২৫ ডিসেম্বর ২০১৩বুধবার

প্রুমার বাসায় দুপুরের ভোজে আমন্ত্রণ ছিল। প্রুমা ও নিনিন বিভিন্ন পদের তরকারি দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করে। তন্মধ্যে ঙাপ্পি দিয়ে বেগুন তরকারি ছিল যা আমি রান্না করার জন্য নিনিনকে বলেছি।

কিন্তু খেয়ে কোন স্বাদ পেলাম না। তার কারণ হলো ছেলেবেলা থেকে এখানকার নিম্নমানের ঙাপ্পি খেতে খেতে অমন অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি যে ইয়াংগুনে কারখানায় তৈরি উন্নতমানের ঙাপ্পির স্বাদ পাওয়া গেলনা।

বিকালে নিনিনকে নিয়ে ইয়াংগুন শহরটি আবার ঘুরি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন শহর। মেয়েরা কাজ করছে সর্বত্র, হোটেলে, দোকানে এমনকি গাড়ি মেরামতের কারখানায়। সন্ধ্যায় আমাদেরকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে নিনিন চলে গেলো।

রাতে নিনিন মোবাইলে জানায় যে প্রুমার পেটে ব্যাথা উঠেছে। তাই সে আগামীকালের প্রোগগ্রাম নিয়ে খুবই চিন্ত্মিত। আগামীকাল আমাদের দেশে ফেরার দিন, ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭-৩০ মিনিটে।

তাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে দুপুরে আমাদের লাঞ্চের নিমন্ত্রণ ছিল। আমাদের সাথে প্রুমা এবং নিনিনও আমন্ত্রিত। কথা ছিল রাষ্ট্রদূতের বাসভবন থেকে বিমানবন্দরে গিয়ে তারা আমাদের বিদায় জানাবে।

২৬ ডিসেম্বর ২০১৩বৃহস্পতিবার

নিনিন সকালে মোবাইলে জানায় যে গতরাতে প্রুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। Appendicitis অপারেশন করতে হবে। এতে নির্ধারিত প্রোগগ্রাম ভন্ডুল হয়ে গেলো। অবশেষে নিনিনকে নিয়ে আমরা রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে যাই ।

খাওয়া শেষে নিনিন আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। যথাসময়ে রাষ্ট্রদূত ও তাঁর স্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাঁদের গাড়িতে করে বিমানবন্দরে যাই।

সময় হলে চম্পকনগর (চাম্পানাগো) খুঁজে পাওয়া এবং Thet-দের (চাকমা) সাথে সাক্ষাতের আনন্দ, প্রুমার অসুস্থতায় বেদনা, তার ও নিনিনের আন্তরিকতা, বন্ধুত্বের ভালবাসা, রাষ্ট্রদূত ও তাঁর স্ত্রীর উষ্ণ আতিথেয়তা,

Dr. Hla Min Sein ও U Aye Maung এর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও প্রাণবন্ত কথা, সফরসঙ্গী নিনিন ও মাসোর প্রতি কৃতজ্ঞা ইত্যাদি মিলে টানা ১১দিন মায়ানমার ভ্রমণের আনন্দঘন উচ্ছল দিনগুলোর সুখস্মৃতি বুকে নিয়ে বিমানে ওঠে সুন্দর স্বর্ণালী  ইয়াংগুন ত্যাগ করি।


লেখক : সুপ্রিয় তালুকদার

[পরিচিতি : সুপ্রিয় তালুকদার

অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্ভেন্ট, সংস্থাপন মন্ত্রনালয় (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) এবং সাবেক পরিচালক, উপজাতীয় সাংষ্কৃতিক ইনস্টিটিউট (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট) রাঙ্গামাটি।   জন্ম ১৬ জানুয়ারি ১৯৪৯ রাঙ্গামাটি জেলা নান্যাচরে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস , নৃ-বিজ্ঞান এবং চাকমা জাতির উৎপত্তি, ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষনা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাঁর প্রতাশিত গ্রন্থ চাকমা সংস্কৃতির আদিরূপ(১৯৮৭), চম্পকনগর সন্ধানে: বির্বতনের ধারায় চাকমা জাতি, (উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইসস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি কর্তৃক প্রকাশিত-১৯৯৯), নীলিমায় নীল (২০০৫) (উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইসস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি কর্তৃক প্রকাশিত-২০০৬)  এবং নানা রঙের দিনগুলি (২০১০) উল্লেখযোগ্য।]

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা