পার্বত্য চট্টগ্রামে আইভরি শিল্প
1482
অন্যান্য সবকিছুর মত পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী শিল্প প্রতিভা সভ্যজগতে এখনও অপরিচিত কিন্তু বিষয়টি ফেলনা নয় বিশেষভাবে গবেষণা-যোগ্য।
আমি বিশ্বাস করি, পার্বত্য চট্টগ্রামের দশ ভাষা-ভাষী তেরটা জুম্ম জনগোষ্ঠীর পৃথক পৃথক সত্ত্বার মধ্যে যেমন রয়েছে কঠিন জীবন সংগ্রাম তেমনি গুণী শিল্পী এবং শিল্প-প্রতিভা।
তাদের সহজ-সরল জীবন অথচ কঠিন জীবন-সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত জীবন-যাপনের শিল্প-কৌশল।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের হস্তী-দন্ত শিল্প’ বিষয়টি এখনও একটি অনালোচিত অধ্যায়। হাতীর দাঁতের শিল্প সভ্য জগতে আইভরি শিল্প নামে পরিচিত।
অতি প্রাচীন কাল হতে এ শিল্পে, শিল্পীদের নিপুণ শিল্প-প্রতিভার বিকাশ ঘটেছিল। সে কালের যোদ্ধাদের তলোয়ার, ছুড়ি ইত্যাদির বাঁট; রাজা মহারাজাদের ব্যবহার্য লাঠি, চেয়ার, পাটি, এমন কি পায়ের খড়ম পর্যন্ত হাতীর দাঁতের শিল্পীকে বানাতে হয়েছিল। এছাড়া পালঙ্ক, টেবিল, ফটোফ্রেম, নারীর সৌন্দর্য চর্চার জন্য অলঙ্কার।
সামগ্রী, প্রসাধনী রাখার পাত্র ইত্যাদিতে হাতী দাঁত-শিল্প উন্নতি লাভ করে। ইতিহাসের কোন কোন অধ্যায়ে এই সব শিল্পীগণ সৃষ্টি করেছিলেন রাজা এবং পরাক্রমশালী বীরগণের মূর্তি।
আবার কখনও বা মনের আনন্দে সৃষ্টি করেছেন মানুষের আরাধনার জন্য দেব-দেবী মূর্তি। প্রাচীনকালে মিশরীয়গণ, পরবর্তীতে ফিনিশিয়গণ এবং এরপর গ্রীক, রোমান ও কনস্টান্টিনোপল খ্রীস্টপূর্ব দশম শতকে আইভরি শিল্পের কেন্দ্ররূপে বিকশিত হয়েছিল।
পারস্যে মুসলিম শিল্পীগন সিন্ধু-ঘোটকের দাঁতকে এই শিল্পের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন।
ভারতবর্ষ এবং প্রাচ্যের দেশসমূহে খ্রীস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে আইভরি শিল্পের উৎকর্ষ সাধিত তক্ষশীলা থেকে প্রাপ্ত হাতীর দাতের অলঙ্কার, প্রসাধনী রাখার পাত্র আয়না, চিরনি এবং ১৯৩৭-৩৯ খ্রীস্টাব্দে খননের পর আফগানিস্তানে প্রাপ্ত কুষাণ রাজাদের ব্যবহার্য জিনিস পত্রের দ্বারা সেই সময়ের উন্নত আইভরি শিল্পের সঙ্গে কাহিনী অন্যান্য দেশের আইভরি শিল্পের সাদৃশ্য ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরোপ করে।
বাংলাদেশ আইভরি শিল্পের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের আইভরি শিল্পের ঐতিহাসিক বন্ধন সূত্র ছিল কি না গবেষণার বিষয়।
আমি নিশ্চিত যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের হাতী দাঁত শিল্প শুধু বাংলাদেশে নয় বিদেশেও প্রচুর সুনাম অর্জন করেছে।
অন্যান্য দেশের উন্নত এই শিল্প সামগ্রীর সঙ্গে এখানকার হস্তীদন্ত শিল্পের নৈপুণ্যের দূরত্ব এত বেশি নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এই শিল্পের বিগত প্রায় দেড়শত বছরের ইতিহাস সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা যায়। যদিও এই শিল্প প্রতিভার উপর এর আগে কোন উল্লেখযোগ্য লেখা বা তেমন কোন গবেষণা হয় নি।
কোন প্রচার মাধ্যমও অতি নগন্য কিছু প্রচার ব্যতীত তেমন উল্লেখযোগ্য কাজ এ যাবৎ করে নি।
আবুল হাফিজ সম্পাদিত ’লৌকিক বাংলা’ জানুয়ারি ১৯৭৮-এর সংখ্যায় ‘আইভরি শিল্প’ প্রবন্ধেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আইভরি শিল্প সম্বন্ধে কিছুই উল্লেখ করেননি।
উনবিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে ‘ধলচান চাঙমা’কেই পার্বত্য চট্টগ্রামে এই শিল্পের জনক বা আদি-পুরুষ বলা যায়। তিনি ১৮৩২ খ্রীস্টাব্দে বার্মার হাতী-দাঁত শিল্পের সংস্পর্শে এই শিল্পে প্রভূত উন্নতি সাধন করেন।
ধলচানের ছেলে কল্পতরু চাঙমা এই শিল্পে অনেক শিষ্য গড়েছিলেন। এই শিল্প প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তার মৃত্যুর তিপ্পান্ন বছর পরে ২০১১ খ্রীস্টাব্দে ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে তাকে মরণোত্তর পুরস্কারের সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বর্তমান অবধি কেহ কেহ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের বংশধরেরা অনেকেই এ কাজ করে যাচ্ছেন। কল্পতরুর পুত্র মোহনবাঁশী চাকমা এই শিল্পের দিগন্ত উন্মোচন করেন।
১৯৪৬ সনে বৃটিশ আমলে করাচীতে অনুষ্ঠিত এক প্রদর্শনী মেলায় সর্বপ্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম আইভরি শিল্পকে তিনি জনসমক্ষে তুলে ধরেন।
তখন হাতীর দাঁতের তৈরি তাজমহলের মডেল, বুদ্ধের প্রতিমূর্তি, ফুলের টব, লাঠি, বিভিন্ন রকমের অলংকার সামগ্রী, এমন কি সিগারেটের পাইপ ও সিগারেট রাখার বাক্স তৈরি করে সেখানে প্রদর্শন করেন।
তখন তিনি সরকারিভাবে পুরস্কার লাভ করেন এবং দেশ-বিদেশের গুণীজন হতে প্রশংসা অর্জন করেন। এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রদর্শনী মেলায় অংশগ্রহণ করে তিনি আরও অনেক পুরস্কার এবং প্রশংসাপত্র লাভ করেন।
অত্যন্ত গৌরবের বিষয় যে, ১৯৭৫ সনের ১২, ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউজে মোহন বাঁশী চাকমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন: ‘বাবা! তুমি কি চাও?’
পঁচাত্তর বৎসরের বৃদ্ধ শিল্পীর ছোট্ট উত্তর : ‘আমি শান্তিতে থাকতে চাই।
এটা ছিল অপূর্ব মুহূর্তের এক অভাবনীয় ঘটনা। বলা বাহুল্য এর মাত্র ছ’মাস পর, ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।
পাঁচ বৎসর পর শিল্পীও পরলোকে চলে যান। পরবর্তী দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলল শান্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র আন্দোলন।
মানবতার আদর্শ সৌন্দর্য সাধক শান্তিকামী সেই বৃদ্ধ শিল্পী তাঁর জীবনে কাম্য শান্তি পাননি। কারণ তাঁকে মিথ্যা মামলার আসামী করে অনেক দিন হাজতে বন্দী রাখা হয়।
তাঁর চোখের সামনেই তাঁর ছেলেরা এবং অনেকেই কারণ ছাড়া তকালীন সেনা শাসনের নির্যাতনের শিকার হন। তাঁর বড় ছেলেকে দীর্ঘ ঊনিশ মাস মিথ্যা মামলায় ঝুলিয়ে জেল হাজতে অন্তরীণ রাখা হয়।
স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তিনি যে ক’দিন বেচে ছিলেন, দেখেছেন শুধু রক্তক্ষয়ী অরাজকতা। হয়ত মরণের পরও তিনি শান্তি পান নি।
কারণ সামরিক জান্তার পতনের পর ১৯৯১-এ গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ও সেই বিশেষ বাহিনী আমাকে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ধরে নিয়ে কারাগারে অন্তরীণ করে রাখে।
আমার অত্যন্ত সৌভাগ্য যে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার আইনী লরাইয়ের মাধ্যমে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে চার মাস বার দিনের মাথায় আমাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
জন্মসূত্রে পৈতৃক শিল্প-প্রতিভার উজ্জ্বল অধিকারী আমার বাবা মোহন বাশী চাকমা ১৯৮০ খ্রীস্টাব্দে ৩০, ডিসেম্বর তার জীবনকাশ হতে খসে পড়েন।
অথচ তার দ্যুতি এখনও ঢাকা বঙ্গবন্ধু যাদুঘরে, চাকমা রাজপরিবারে, পার্বত্য চট্টগ্রামে।
রাঙ্গামাটি উপজাতীয় যাদুঘরে, পবিত্র চিৎমরম কিয়াংসহ অন্যান্য অনেক বৌদ্ধ বিহারে জ্বলছে।
তার প্রজ্জ্বলিত দীপশিখায় আলোকিত আমরা এবং পরবর্তীতে আমার প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গামাটি হস্তী-দন্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান ’কল্পতরু’ এখনও দেশ-বিদেশে, সরকারি-বেসরকারি গুণীজনের নিকট অম্লান রয়েছে।
এই প্রতিষ্ঠানে ১৯৭৭ সনের ফেব্রুয়ারিতে Common Wealth Secretariat, ৭ মার্চ ১৯৭৮ খ্রী: London Sunday Times Editor , এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে রেডিও, টেলিভিশনে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথিকা ও ফিচার প্রচার এবং রাঙ্গামাটিতে আগত অনেক বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পী, নির্বাচিত জন প্রতিনিধি, সরকারের অনেক মন্ত্রী, আমলাসহ বিদেশি কূটনৈতিক বা রাষ্ট্রদূতগণ এবং দেশী-বিদেশী পর্যটকগণ এখনও এখানে পদার্পন করে শিল্পসামগ্রী সংগ্রহসহ স্মৃতি স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ বিজয় কেতন চাকমার (লেখক) তৈরি হাতীর দাঁতের শিল্পসামগ্রী ১৯৮৮ খ্রী: বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে, ১৯৯৮ খ্রীস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হাতীর দাতের একটি নৌকা (সোনা দিয়ে বাঁধানো), এছাড়া বনমন্ত্রী সাজেদা চৌধুরীকে (নৌকা ও ফুলের টব) এবং বাংলাদেশ সরকারের পুলিশ প্রধানকেও উপহার প্রদান করেন।
অত্যন্ত খুশীর কথা যে, আমাকে বাংলাদেশ সরকার এই শিল্পের জন্য হাতীর দাত ক্রয় এবং তার উৎপাদন বিক্রয়ের অনুমতি, রেজিস্ট্রেশন প্রদানসহ স্বর্ণশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
তবে আন্তর্জাতিকভাবে বন্যপশু রক্ষণাবেক্ষণের আইনে হাতীর দাত নিষিদ্ধপণ্য।
তাই গৃহপালিত হাতীর স্বাভাবিক মৃত্যুর পর, পূর্বকালের জমিদার শ্রেণীর লোকদের সরকারের কোন কোন বিভাগের সংগৃহীত অথবা কারও বাপ-দাদা আমলের ফেলে রাখা অকেজো হাতীর দাঁত নিয়ে বর্তমানে কোন রকমে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারের সহায়তা পেলে এই শিল্পকে আরও উন্নত করা সম্ভব।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগণের মধ্যে বহুকাল পূর্ব হতে হাতীর দাতের অলঙ্কার ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
চাকমা রাজার হাতীর দাঁতের চেয়ার, রাজার তলোয়ারের বাঁট, কালিন্দি রাণীর ব্যবহৃত খড়ম, মং রাজার সংগ্রহে প্রকাণ্ড এক জোড়া হাতীর দাঁত, শিল্পীর নিপুণ সংযোজন।
রাণীর সেই প্রসাধনী রাখার হাতীর দাঁতের পাত্র, বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে বুদ্ধের আসনসহ বুদ্ধমূর্তি, বিভিন্ন বিহারে দান করা হাতীর দাঁতের ফুলের টব, রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের যাদুঘরে রক্ষিত হাতীর দাঁতের অলঙ্কার সামগ্রীর মধ্যে আদিবাসী জুম্ম মহিলাগণের বয়ন কাজে ব্যবহৃত সুই জাতীয় চিবুং, চুলের কাঁটা, লকেট, ফুলের টব ইত্যাদি এই জেলার আদিবাসী শিল্পীদের তৈরি হাতী-দাঁত শিল্পের নিদর্শন।
চাকমা সমাজে অতি প্রাচীন কাল হতেই বিবাহের সময় অনেকে হাতীর দাঁতের তৈরি বালা, চুলের কাঁটা, চিরুনি, অংগুরি প্রভৃতি উপহার হিসেবে দিত।
বর্তমান আধুনিক সমাজেও হাতীর দাতের অলঙ্কারের উপর সোনা, রূপা, মূল্যবান পাথর ইত্যাদি মুড়িয়ে বিবাহের অলংকার দিয়ে নববধূকে সাজানো হয়।
বর্তমানে মোহন বাঁশী চাকমার পুত্র আমি, শ্রী বিজয় কেতন চাকমা রাঙ্গামাটিতে ’কল্পতরু’ নামক হস্তীদন্ত শিল্প-প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে বংশানুক্রমিক এই শিল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
খুব গৌরবের কথা, ১৯৭৬-৭৭ খ্রীস্টাব্দে Bangladesh Documentary Film Corporation এই শিল্প নিদর্শন জনসমক্ষে তুলে ধরে।
সেই বছর Asian Development Bank Annual Report-এ ’কল্পতরু’ হাতীদাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে উল্লেখ করে। একই বছর বিচিত্রা’ বার্ষিক সংখ্যার সংকলনেও এর অস্তিত্বকে প্রশংসার সাথে পরিবেশন করে।
Conception নামক এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পূর্ব জার্মানির বার্লিনে ১৪তম আমদানি মেলায় কল্পতরুর শিল্প নৈপুণ্য প্রদর্শন করে।
বর্তমানে হাতীর দাঁতের দুষ্প্রাপ্যতা এবং দুর্মূল্যের কারণে ফরমায়েশ ছাড়া তেমন কোন জিনিস রাঙ্গামাটির হস্তীদন্ত শিল্প-প্রতিষ্ঠান কল্পতরু বানিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছে না বা অন্য কোনখানে সাপ্লাই করতে পারছে না।
এই শিল্প-প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড়শত বৎসরের পুরাতন ধলচানের তৈরি পাশা খেলার ঘুটিসমূহ, একশ’ বৎসরের পুরাতন কল্পতরুর হাতে তৈরি একটি অলংকার রাখার বাক্স, কল্পতরুর পুত্র মোহন বাঁশী চাকমার তৈরি হস্তীদন্তের বিরাট ফুলের টব এবং আমার সুদীর্ঘ নয় মাস কঠোর পরিশ্রমে তৈরি হাতীর দাঁতের একখানা পাখা এবং আকর্ষণীয় ফুলের টব, প্রতিমূর্তি, বিভিন্ন রকমের অলংকার সামগ্রী, সে সবে সোনা, রূপা এবং মূল্যবান পাথরের সংযোজনা অপূর্ব ঐতিহাসিক শিল্প নিদর্শনের বিষয় বলে পরিগণিত হয়।
আমার ছেলে ঋত্বিক চাকমা, আমি নিজে এবং আমার নাতি (আরেক ছেলে ঘনেশ্বর চাকমার পুত্র) নিদ্ৰাজয় ও তার ছেলে অজয় এই চার পুরুষের হাতের ছোঁয়ায় একটি হাতির দাঁতের উপর পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন-যাত্রা, সংস্কৃতি, ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এবং বৌদ্ধধর্মের সাধনায় রাজপুত্র সিদ্ধার্থ গৌতমের বুদ্ধত্ব লাভের উপর খোদাই করা ভাস্কর্য সম্বলিত একসাথে প্রায় পঁচিশটি অতি ক্ষুদ্রাকৃতির চিত্রসমূহ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
শিল্পকর্মটি এই কল্পতরু প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। আমি বিশ্বাস রাখি পার্বত্য চট্টগ্রামের এই শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়। উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে আইভরি শিল্প ভবিষ্যতে আরও প্রভূত উন্নতি লাভ করতে পারবে।
ভবিষ্যতে হাতীর দাঁতের অভাব হলেও স্বাভাবিক মৃত্যুর পর হাতী বা অন্যান্য পশুর হাড়, দাঁত, শিং, বিলুক, মাছের কানকো, নারিকেলের মালা ইত্যাদি ব্যবহার করে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে।
আর এই শিল্পের মাধ্যমে অনেক লোকের আয়ের পথ উনাক্ত হতে পারে বা অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই শিল্প সাধনা মানসিক শান্তি লাভেরও অন্যতম পথ। এই শিল্পের উন্নতি হলে, শিল্প সাধনার উল্কর্ষতা বৃদ্ধি হবে। সৌন্দর্য সাধক শিল্পী জন্ম নেবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তথা দেশ-বিদেশের শিল্পকলা এবং শিল্পীকূল বেঁচে থাকুক এই কামনা করি। সৌন্দর্য সৃষ্টিতে শিল্পীর সাধনা স্বার্থক হোক। সৌন্দর্য সাধক শিল্পীর সাধনায় অর্জিত শিল্প হোক সুন্দর মানব মনের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।
লেখক: বিজয় কেতন চাকমা, হস্তীদন্তের কারুশিল্পী, রাঙ্গামাটি।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।
আরও কিছু লেখা
Leave a Reply
দারাশিকো
বাংলাদেশের আইভরি শিল্প নিয়ে চমৎকার এই লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানলাম। এই দেশে যে আইভরি শিল্প বলে কিছু আছে সেটাও জানা ছিল না। যেহেতু হাতীর সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান, তাই হাতির স্বাভাবিক মৃত্যুর পরে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা উচিত।