আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি
1291
আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি আজ হুমকীর মুখে। সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও পৃষ্ঠপােষকতার অভাব, নিপীড়ন, সারা দেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ও আগ্রাসন, রাষ্ট্রের উদাসীন্য ইত্যাদি কারণে আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।
সমতলের বর্মণ, কোচ ইত্যাদি জাতি তাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। পাহাড়ের খ্যাং জাতির ভাষা হারাতে বসেছে। চাঁদপুরের ত্রিপুরা জনগােষ্ঠীর বর্তমান প্রজন্মের লােকেরা নিজের ভাষায় আর কথা বলতে পারে না।
বহু আদিবাসী জাতি তাদের ঐতিহ্যবাহী পােষাক পরিচ্ছদ হারিয়ে ফেলেছে। এদেশের আদিবাসীদের রয়েছে বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি, নাচ, গান ইত্যাদি। রয়েছে সমদ্ধ সাহিত্য।
সেসব সাদ সাহিত্য ও বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি আজ নিঃশেষ হতে চলেছে পৃষ্ঠপােষকতা ও সুস্থ পরিবেশের অভাবে।
আদিবাসীদের এসব সাহিত্য ও সংস্কৃতি এদেশেরই অমূল্য সম্পদ। শুধুমাত্র সংস্কৃতি নয়, আদিবাসী মানুষের জীবনের মূল্যও আজ আর নেই।
পাহাড়ের এক আদিবাসী বৃদ্ধ বলেছিলেনজীবন আমাদের নয়, লাইফ ইজ নট আওয়ার্স। সত্যিই তাই। আদিবাসীদের জীবন যখন তখন যে কেউ কেড়ে নিতে পারে। তাদের জন্য কোন আইন নেই, বিচার নেই, আদালত নেই।
কল্পনা চাকমা হারিয়ে গেছে, পাহাড়ের পণেমালা ত্রিপুরা ও সমতলের চলেশ রিছিল ও গীতিকা রেমা’কে ভূমির জন্য জীবন দিতে হয়েছে।
অল্প কিছুদিন আগে পাহাড়ে একই পরিবারের শিশুসহ ৩ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এসবের কোন বিচার হয়নি। বিচার হবে না।
সরল, অবলা আদিবাসী নারীদের উপর শ্লীলতাহানি, নিপীড়ন-নির্যাতন নিত্যদিনকার ঘটনা। তবে এদেশে শুধু আদিবাসী নয়, মূল স্রোতধারার জনগােষ্ঠীর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরাও আজ নানাভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার।
কথা ছিল এদেশে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সেলক্ষ্যে একটি মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করা হয়েছিল। এ মুক্তিযুদ্ধে সকল শ্রেণীর, সকল ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। এদেশের আদিবাসীরাও সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।
তারাও এ যুদ্ধে জীবন দিয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাঙালী ও আদিবাসীর রক্তে গড়া এ স্বাধীন।
বাংলাদেশে আদিবাসীরা এখনাে পরাধীন রয়ে গেছে। তারা এখনাে নিজ দেশে পরবাসী। ‘আদিবাসী হিসেবে তারা এখনাে এদেশের সংবিধানে সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করেনি।
সংবিধানে তাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার স্বীকৃত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীদের অবদানের কথা সংবিধানে স্বীকার করা হয়নি।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানী শাসকগােষ্ঠী থেকে বাংলাদেশ নামক একটি ভূখন্ডকে মুক্ত করেছে বটে; তবে, আদিবাসী, নারীসমাজ ও সাধারণ মানুষের মুক্তি অর্জিত হয়নি।
এ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি। এদেশে আদিবাসী, নারীসমাজ ও সাধারণ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একযুগে ‘জনমুক্তি সংগ্রাম’ এর প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।
এটিই হবে সত্যিকারের মুক্তি সংগ্রাম। বৃটিশ বিতাড়ণের সংগ্রামে আদিবাসীদের রয়েছে ঐতিহাসিক অবদান। সাওতাল বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ, বৃটিশের বিরুদ্ধে চাকমা রাজা ও ত্রিপুরা মহারাজার মধ্যেকার যুদ্ধ ভারতের জনগণকে বৃটিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণে সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
এসব বিদ্রোহ ও যুদ্ধ বৃটিশ বিতাড়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বর্তমানেও আদিবাসীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই যুগের অধিক সময় ধরে সশস্ত্র সংগ্রাম হয়েছিল।
এই সংগ্রামের ফসল হল ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণ এ চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্য বাংলাদেশে প্রথম বারের মত পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলা পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এটি সারা দেশে জেলা পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হতে পারে। বংলাদেশের সংবিদানে স্থানীয় সরকার ব্যকস্থাকে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে।
তথাপি পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত দেশের অপরাপর জেলায় জেলা পর্যায়ে অদ্যাবধি জনপ্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রথম, সংগ্রমের ফসল হিসেবে তিন জেলায় জনপ্রতিনিধিত্বশীল তিনটি ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উত্তর বঙ্গে ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’ সে অঞ্চলের আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
সারাদেশের আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করছে ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’।
এই সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের আন্দোলনে মূলস্রোতধারার জনগােষ্ঠীর মানুষকে সম্পৃক্ত করা এবং আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজে সচেষ্ট রয়েছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আদিবাসীদের ভূমি রক্ষা আন্দোলনে বিশেষতঃ আদিবাসীদের জমিতে ইকোপার্ক করার বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম হয়েছিল সে সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দিয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ও আদিবাসী ভাষায় শিক্ষা
বর্তমান সরকারের আমলে একটি সুন্দর শিক্ষানীতি হয়েছে। এদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ অনেক পরিশ্রম করে এ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে।
এই শিক্ষানীতিতে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের কথা বলা হয়েছে। এ সরকারের বয়স তিন বছর হতে চললাে তথাপি আদিবাসীদের ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়নি।
শত শত বছর ধরে বঞ্চনার কারণে পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগােষ্ঠীর শিক্ষা উন্নয়নের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে-এসব কোন কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
শত শত আদিবাসী গ্রামে এখনাে কোন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। অথচ সরকার বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, সবার জন্য শিক্ষা ইত্যাদি কর্মসূচী ঘােষণা করেছে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসী শিশুরা এ কর্মসূচীর বাইরে থেকে যাচ্ছে। শিক্ষানীতিতে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও, আদিবাসী শিশুরা সরকারের সাধারণ কর্মসূচীর সুবিধা পর্যন্ত ভােগ করছে না।
শিক্ষার অধিকার থেকে আদিবাসী শিশুরা বরাবরই বঞ্চিত অবস্থায় রয়ে যাচ্ছে।
সংবিধান বলছে আইনের চোখে সবাই সমান এবং দেশের সব নাগরিকের সমান সুযােগ লাভের সমান অধিকার রয়েছে। সংবিধান ও আইনের চোখে সবাই সমান হলেও রাষ্ট্রের চোখে সবাই সমান নয়।
দেশের মল সােতধারার জনগােষ্ঠীর (বাঙালী) শিশুরা নিজের ভাষায় পড়াশুনা করছে; কিন্তু আদিবাসী শিশুরা মাতৃভাষায় পড়াশুনা করার সুযােগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আদিবাসী শিশুদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের চোখ অন্ধ। শেখ হাসিনা সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চক্তিতেও মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু সরকার তথা রাষ্ট্রের চোখ চুক্তি, শিক্ষানীতি, সংবিধানের নির্দেশনা বাস্তবায়ন সবক্ষেত্রে অন্ধ। সেকারণে সেসব আজ অবধি আলাের মুখ দেখতে পায়নি।
জাতীয় পাঠ্যপুক ও আদিবাসী
জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসীদের জীবন, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযােগ নেই। বাংলাদেশে ৫০টির অধিক আদিবাসী জাতি বাস করে। পাঠ্যপুস্তকে অল্প কয়েকটি আদিবাসী জাতি বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলােচনা করা আছে। আদিবাসী বিষয়ে যতটুকু আলােচনা করা হয়েছে তাও নৈতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
অতীতে আমরা দেখেছি পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখ রয়েছে- উপজাতিরা সাপ খায়, ব্যাঙ খায় ইত্যাদি। এভাবে আদিবাসী সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আদিবাসী সম্পর্কে এধরনের উপস্থাপন একজন কোমলমতি অআদিবাসী শিশুর মনে আদিবাসী সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হবে- এটি নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া যায়।
পাশাপাশি শিশুর মনে আর একটি ধারণা সৃষ্টি হবে তা হল- এই জনগােষ্ঠীর মানুষেরা উপজাতি অর্থাৎ কোন জাতির অংশ, আদিম, অসভ্য ইত্যাদি।
এভাবে আদিবাসী বিষয়ে মূলস্রোতধারার জনগােষ্ঠীর শিশুর মন ও মননকে তৈরী করা হচ্ছে। দেশের একই নাগরিকের মধ্যে শিশুকাল থেকে একটি জনগােষ্ঠী সম্পর্কে নেতিবাচক মনােজগত তৈরী করে দেয়া দেশের জন্য সুদূরপ্রসারীগতভাবে ক্ষতিকর।
জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসীদের জীবন, সংস্কৃতি ও ইতিহাস ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার জন্য আদিবাসীরা দাবী জানিয়ে আসছে।
দাবীর প্রেক্ষিতে কিছু কিছু পরিবর্তন করা হলেও মৌলিক কোন কিছু পরিবর্তন করা হয়নি। যদি পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসীদের ব্যাপারে লেখা হতাে- আদিবাসীরা সরল, অতিথি পরায়ণ, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান ছিলাে, বৃটিশদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য আদিবাসীরাই প্রথম লড়াই শুরু করেছিলাে এবং প্রকৃতির সাথে লড়াই করে তারাই প্রথম এদেশকে বাসযােগ্য চাষযােগ্য করে তুলেছিলাে।
পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য বন দরকার। আদিবাসীরা বন রক্ষা করতে জানে ইত্যাদি।
কোমলমতি অ-আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী আদিবাসীদের এসব বিষয় জানতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই সেসব ছাত্র বা ছাত্রীর মনে আদিবাসী জনগােষ্ঠী সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে। আদিবাসী জাতির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা জন্মাবে।
আমাদের শিক্ষানীতির লক্ষ্য যদি হয় একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, তা’হলে আমাদের পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুকে সেভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকে এমন কোন বিষয় থাকা উচিত হবে না, যা একজন শিশুর মনে সাম্প্রদায়িক বা সংকীর্ণ চিন্তাধারার বিকাশ ঘটাবে।
বরং পরিবারে বা সমাজে শিশু যদি কোন সাম্প্রদায়িক বা সংকীর্ণ চিন্তা-চেতনার শিক্ষা পেয়ে থাকে, সে নেতিবাচক শিক্ষা যাতে শিশুর মন ও চিন্তা থেকে দূরীভূত হয় বরং সেই শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুকে পেতে হবে। তাই পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুও সেভাবে তৈরী করতে হবে।
আদিবাসীদের ব্যাপারে মূলস্রোতধারার জনগােষ্ঠীর শিশুরা যাতে ইতিবাচক ও শ্রদ্ধাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করতে পারে পাঠ্যপুস্তকে সে ধরনের বিষয়বস্তু সন্নিবেশ করার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।
শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নয়, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরও আদিবাসী জাতিসমূহের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও তাদের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে জানার সুযােগ নেই।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এসব বিষয় মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ-পুস্তকে নেই। সেকারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র-ছাত্রীরা এসব বিষয়ে জানার কোন সুযােগ নেই।
একজন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেশের ভেতরের জনগােষ্ঠী বা দেশের কোন অঞ্চলের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে জানবে না- এর চেয়ে লজ্জাজনক বিষয় কি আর হতে পারে।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনব্যবস্থা ও ভূমি ব্যবস্থাপনা সমতল এলাকা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রথাগত প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রথাগত প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি অংশ।
এই প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হলেন রাজা, হেডম্যান ও কার্বারী। রাষ্ট্র ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এই প্রথাগত প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত দেশের কোথাও আর নেই।
এই প্রথাগত প্রতিষ্ঠান বন, ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। আদিবাসীদের ভূমির মালিকানার ব্যবস্থা সামাজিক।
কেবল বৃটিশ আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যক্তি মালিকানার প্রবর্তন হয়। বৃটিশ কর্তপক্ষ মূলতঃ খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে ভূমিতে ব্যক্তি মালিকানার পত্তন ঘটায়।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে ১৯৯৭ সালে। এই বিশেষ শাসনব্যবস্থার অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই।
নির্বাচনী ইশতেহার ও আদিবাসী
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এখনাে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রাবল্যতা পরিলক্ষিত হয়। গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কখনাে সখনাে উঁকি মারে, তবে তা স্থায়ী রূপ লাভ করতে পারছে না বিধায় গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারছে না।
মহাজোট সরকারের নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের জন্য বহু সুন্দর সুন্দর কথা বলা হয়েছে।
১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন, সমতল এলাকার আদিবাসীদের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ভূমি কমিশন গঠন, আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রদান এবং আদিবাসীদের উপর মানবাধিকার লংঘনের চির অবসান ইত্যাদি বলা হয়েছে।
কিন্তু এসব কথার কথা রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে এদেশের আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
২০১০ সালে মহাজোট সরকার যে নৃতাত্ত্বিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন প্রণয়ন করেছে, সে আইনেও ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করা করেছে। সে আইনে বলা হয়েছে- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারাে, সাঁওতাল, খাসিয়া ইত্যাদি ‘আদিবাসী’ বলে পরিচিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তাঁর বাণীতে এদেশের আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তথাপি মহাজোট সরকারের কোন কোন মন্ত্রী ও আমলা নির্লজ্জভাবে বলছেন, বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই, এদেশে কিছু উপজাতি আছে। এ সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।
এদেশের আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে অস্বীকৃতি সাম্প্রদায়িক ও সংকীর্ণ চিন্তা-চেতনা প্রসূত। আদিবাসীদের অধিকার প্রদানে অনীহা এবং সাংস্কৃতিক দৈন্যতার কারণে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন প্রকৃত অর্থে বাঙালীরাই এদেশের ‘আদিবাসী’।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চেতনা ধারণ করে এদেশের আদিবাসীদের আপন ভেবে সংবিধানে, রাষ্ট্রে, প্রশাসনে সম্পৃক্ত করার দায়িত্ব কখনােই পালন করেনি।
বরঞ্চ এসব ব্যবস্থা থেকে আদিবাসীদের বিচ্ছিন্ন ও প্রান্তিক করে রাখা হয়েছে। তাদেরকে মূল স্রোতধারায় এনে সম অধিকার ও সম মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা কখনাে প্রতিপালন করা হয়নি। বিপরীতে বারে বারে আদিবাসীদের অপমান ও অমর্যাদা করা হয়েছে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে যেমনি আদিবাসীদের ‘বাঙালী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তেমনি মহাজোট সরকারের পঞ্চদশ সংশােধনীতেও নূতন করে আদিবাসীদের ‘বাঙালী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বর্তমানে আদিবাসী শব্দটি ‘আদি-বাসিন্দা’ অর্থে ব্যবহৃত হয় না। আদিবাসী বলতে বর্তমানে প্রান্তিক জনগােষ্ঠীকে বুঝানাে হয়ে থাকে। শত শত বছর ধরে বঞ্চনার কারণে এসব জনগােষ্ঠী প্রান্তিক অবস্থানে নিপতিত।
তাই বর্তমানে আদিবাসী শব্দের সাথে মানবাধিকার বিষয়টি ওতােপ্রােতভাবে বিজড়িত।
শত শত বছর ধরে বঞ্চিত, নিপীড়িত এসব জনগােষ্ঠীর প্রান্তিকতা থেকে উত্তরণের নিমিত্তে বিশেষ অধিকার প্রদানের কথা বলা হয়েছে। সারা পৃথিবীব্যাপী এ দাবী উচ্চারিত হচ্ছে।
পৃথিবীর বহু দেশ আদিবাসীদের বঞ্চনার ইতিহাস স্মরণ রেখে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
পাশ্ববর্তী দেশ ভারত এবং নেপালও আদিবাসীদের অধিকার বিশেষতঃ ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এজন্য ভারত ও নেপাল সরকার প্রয়ােজনীয় আইনও প্রণয়ন করেছে। নেপাল সরকার আইএলও কনভেনশন- ১৬৯ ও ১০৭ অনুস্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের আদিবাসীরা সব দিক দিয়ে প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে।
অর্থনীতি, ভূমির মালিকানা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদারিত্ব, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, শিক্ষা, ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি-সর্বক্ষেত্রে এদেশের আদিবাসীরা প্রান্তিক অবস্থানে স্থিত।
এদেশের আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে, প্রতিনিয়ত তারা তাদের ভাষা হারাচ্ছে, তাদের লােকজ সাহিত্য হারিয়ে যাচ্ছে, সার্বিকভাবে তাদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন।
বিপন্নতা ও প্রান্তিকতা থেকে উত্তরণের জন্য এবং সকল ক্ষেত্রে মূল স্রোতধারার জনগােষ্ঠীর সম পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য, সম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের জন্য রাষ্ট্রকে বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তাদের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক্ষেত্রে ভারতের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে।
আদিবাসীরা যাতে তাদের অস্তিত্ব বিপন্নতা কাটিয়ে উঠতে পারে তজ্জন্য রাষ্ট্রকে তাদের জন্য বিশেষ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে আদিবাসীরা তাদের ভূমি রক্ষা করতে পারে, তারা যাতে তাদের ভাষা ও সাহিত্য রক্ষা করতে পারে, যাতে তারা নিজের মত করে তাদের উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
এ জন্য দরকার রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাম্প্রদায়িক ও সংকীর্ণ চিন্তা চেতনার বিপরীতে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা। গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পাশাপাশি চলে।
আদিবাসীদের, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না।
দেশের সকল জাতির, সকল ধর্মের, সকল শ্রেণীর মানুষ যাতে তাদের মৌলিক মানবাধিকার ভােগ করতে পারে রাষ্ট্রকে সেই গণতান্ত্রিক চেতনা ধারণ করতে হবে, রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে।
তবেই দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারবে, রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের ভিত্তিভূমি সুদৃঢ় হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না পেলে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারে না। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আমাদের সে শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার।
বন ও ভূমি ও আদিবাসী সংস্কৃতি
বন ও ভূমির সাথে আদিবাসীদের রয়েছে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক। আদিবাসীরা চিরাচরিতভাবে বন ও ভূমিকে বেচা-কেনার সম্পত্তি মনে করে না, বরং মাতৃতুল্য মনে করে।
সেকারণে আদিবাসীরা বন ও ভূমির উদ্দেশ্যে পূজা দেয়। কারণ তাদের জীবন-জীবিকা বন ও ভমির উপর নির্ভরশীল। জুমচাষ, পানচাষ করে আদিবাসীরা জীবিকা নির্বাহ করে। বন ছাড়া জুমচাষ, পানচাষ হয় না।
বনজ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে বহু আদিবাসী পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাছাড়া বনজ তর-তরকারী, চিকিৎসার জন্য ঔষধ, পানীয় জল, আসবাব পত্র, লাকড়ি, গৃহ নির্মাণের গাছ, বাঁশ ইত্যাদির জন্য আদিবাসীরা বনের উপর নির্ভরশীল। এক কথায় আদিবাসীদের জীবন জীবিকা বন ছাড়া অচল।
আদিবাসীদের সংস্কৃতিকে ‘জুমসংস্কৃতি বলা হয়ে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় উৎসব ‘বৈসুক-সাংগ্রাই-বিঝু-বিষু’ এবং সমতলের গারাে আদিবাসীর ‘ওয়ানগালা উৎসব’ জুমচাষ ও জুমের ফসলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত।
আদিবাসীদের নাচ-গান, বাদ্য যন্ত্র ইত্যাদি জুম ও বনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ত্রিপুরাদের বিখ্যাত নাচ ‘গরয়া নৃত্য’ এবং চাকমাদের ‘জুম নৃত্য’ ইত্যাদি জুমচাষকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।
আদিবাসীদের বেশীরভাগ সাহিত্যও জুম ও বন কেন্দ্রিক। পাহাড় কিংবা সমতলের বন ধ্বংস করে ফেলার কারণে তা আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা ও তাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিমাণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আদিবাসীরা তাদের চিরায়ত অঞ্চলে কতৃত্ব হারাবার পর তাদের অঞ্চলের বন উজাড় হতে থাকে। অর্থলােভী স্বার্থন্বেষী ব্যবসায়ীরা দেশের ও জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বনের বৃক্ষ ও অন্যান্য মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে ফেলে। বন ধ্বংস হয়ে যাবার কারণে তা পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
একটি দেশে কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা বাঞ্চনীয়। আমাদের দেশে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ ১০ ভাগের নীচে বলে ধারণা করা হয়। অনেকে দাবী করেন এর পরিমাণ ৭ ভাগের বেশী হবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের বন ধ্বংস করে সরকার কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখনাে চা বাগান, রাবার বাগান ও সেগুনের বাগান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে যা পরিবেশগত ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে।
সরকার একদিকে বাঘ রক্ষার কথা বলছে অপরদিকে বাঘসহ অপরাপর পশু পাখি ইত্যাদি প্রাণীর অভয়াশ্রম ‘প্রাকৃতিক বন’ ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।
সংবিধানে উপজাতি ইত্যাদি শব্দ ও সাংস্কৃতিক দৈন্যতা
বাংলাদেশের আদিবাসীরা সংবিধানে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবী জানিয়ে আসছে। বিপরীতে মহাজোট সরকার পঞ্চদশ সংশােধনীতে আদিবাসীদের ‘উপজাতি’, ‘নৃ-গােষ্ঠী’, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ হিসাবে আখ্যায়িত করে সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদে বলেছে বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী এবং নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশী হিসেবে পরিচিত হবে।
সংবিধানে আদিবাসীদেরকে এ ধরনের পরিচিতি প্রদানের মধ্য দিয়ে সরকারের সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ও সাংস্কৃতিক দৈন্যতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আধুনিক নৃতাত্ত্বিক ও সমাজ বিজ্ঞানীরা বর্তমানে আর ‘উপজাতি’ শব্দ ব্যবহার করে না।
এ শব্দ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কোন জনগােষ্ঠীকে অবজ্ঞা ও হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। কারণ ‘উপজাতি’ শব্দের মধ্য দিয়ে অসভ্য, আদিম ইত্যাদি বুঝায়।
আর নৃ-গােষ্ঠী শব্দটি কোন জাতির পরিচয় বহন করে না। কারণ ‘নৃ’ অর্থ হল ‘মানুষ’। সুতরাং নৃ-গােষ্ঠী মানে হল মানুষের গােষ্ঠী। সব জাতিই মানুষের গােষ্ঠী।
সতরাং নৃ-গােষ্ঠী শব্দ কোন জাতি বা জাতিসমূহের পরিচয় বহন করে না। এসব মহাজোট সরকারের সাংস্কৃতিক দৈন্যতারই পরিচয় বহন করে। এক্ষেত্রে মহাজোট সরকারের চারিত্রিক দ্বৈততাও লক্ষ্যণীয়।
এ সরকার সংবিধানে এদেশের আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দানে অস্বীকার জানিয়ে বলছে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই।
অথচ দেশের বহু আইনে এদেশের আদিবাসীরা ‘আদিবাসী’ হিসাবে স্বীকৃত হয়ে আছে। তাছাড়া আত্ম-পরিচয়ের অধিকার মানবাধিকার।
আমার বা আমার জাতির পরিচয়কে অস্বীকৃতি বা বিকৃত করার অধিকার কারাে নেই। কোন জনগােষ্ঠীর পরিচয় চাপিয়ে দেওয়ার অধিকারও কারাে নেই।
রাষ্ট্রেরও এ অধিকার থাকতে পারে না। আদিবাসীদের পরিচয় বিকৃত করে এ সরকার মানবাধিকার লংঘন করেছে।
পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলির সংস্কৃতি দেখে মনে হয় মক্তিযুদ্ধের চেতনার আলােকে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তা বেশ সুদূর পরাহত।
পরিস্কারভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশ ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
সাথে রয়েছে তথাকথিত গণতান্ত্রিক লেবাসে সামরিকতন্ত্র। দেশের এ অবস্থার গুণগত পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। একটি প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধ বা জনযুদ্ধ ব্যতীত এদেশের জনগণের প্রকৃত মুক্তি অসম্ভব।
দেশে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব না হলে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাও কঠিন হবে।
লেখক : শক্তিপদ ত্রিপুরা ।
তথ্যসূত্র : কেদাকতুক বৈসুক-সংগ্রাই-বিঝু-বিষু-বিহু সংকলন।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।