পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের সংগ্রাম
2507
এ লেখায় বর্ণিত রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘ সংগ্রাম এবং তার বিপরীতে রাষ্ট্র কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের ইতিহাস।
১৯৭২ সালে আদিবাসীদের একটি প্রতিনিধিদল প্রয়াত এমপি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৯০০ সালের স্বায়ত্ত্বশাসন আইন বজায় রাখা এবং বাঙালিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার জন্য অনুরোধ জানান৷
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বাঙালিদের বাঙালি জাতিস্বত্ত্বা এবং সংস্কৃতি রক্ষার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, অথচ তিনিই আদিবাসীদের কাছ থেকে অনুরূপ দাবির বৈধতার স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হন।
তিনি আদিবাসীদের জাতিগত পরিচয় ভুলে, “বাঙালি” হতে বলেছিলেন। তিনি ধমকের সুরে এটিও বলেছিলেন যে, যদি পাহাড়িরা তাদের দাবিতে অটুট থাকে, তাহলে পাহাড়ে বাঙালি এবং সেনা নিয়ে ভরিয়ে দেবেন।
মুজিবের অস্বীকৃতির পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে আদিবাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং তার এক বছর পর এর সামরিক শাখা শান্তিবাহিনী গঠন করে।
পাহাড়ে প্রচলিত জুম চাষের কথা উল্লেখ করে – পিসিজেএসএস “জুম্ম” শব্দটিকে বারোটি ভিন্ন জাতি গোষ্ঠীগুলোর সম্মিলিত নাম হিসেবে উপস্থাপন করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিকীকরণ ও বড় আকারে বাঙালি বসতি স্থাপনের যে হুমকি মুজিব দিয়েছিলেন তা ১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থানে তিনি এবং তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যদের নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘটেনি।
জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর আদিবাসীদের এবং বাঙালি সরকারের মধ্যকার দ্বন্দ্ব একটি গনতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়। জিয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণ সামরিকীকরণ এবং সেই সঙ্গে “অনগ্রসর আদিবাসী” এলাকাগুলোর উন্নয়নের নির্দেশ দেন।
পরবর্তীতে সড়ক নির্মাণ এবং টেলিযোগাযোগ, মডেল গ্রামগুলোতে আদিবাসীদের বন্দোবস্ত করার প্রক্রিয়া (ভিয়েতনাম যুদ্ধের অনুরূপ “কৌশলগত ক্ষুদ্র গ্রাম” স্থাপন) সম্পন্ন করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে, জিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পাবর্ত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নেতৃত্বে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামের সামরিক নেতাদের নেতৃত্বে এই উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো বিদ্রোহ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। অনেক সামরিক কর্মকর্তা আমেরিকা এবং ব্রিটেন থেকে প্রশিক্ষন নিয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনী প্রশাসন, পাশাপাশি সব উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতো।
ভারতীয় সরকার, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে সামরিক সরকারের ক্ষমতায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ায় (বাংলাদেশ সরকারের উপর পূর্বের মত প্রভাব হারানো এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়তো ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোর বিদ্রোহীদের গুপ্ত আশ্রয়ে পরিণত হওয়ার শঙ্কা করছিলো) উত্তরপূর্ব ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরায় পিসিজেএসএসকে প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে ।
১৯৭৬ সালের শেষের দিকে শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি সামরিক চৌকিতে সর্বপ্রথম তাদের সশস্ত্র আক্রমণ সম্পন্ন করে।
শান্তিবাহিনীর বিদ্রোহ দমনের নামে, বাংলাদেশ নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন – গণহত্যা, হত্যাকান্ড, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক স্থানচ্যুত, বাঙালিদের সাথে জোরপূর্বক বিয়ে এবং আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়ভাবে নিপীড়ন চালায়।
১৯৭৯ সালের এপ্রিলে গণহত্যাগুলোর প্রথমটি কানুনগো পাড়ায় সংঘটিত হয়, প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানে, সেনাবাহিনী ২৫ জন আদিবাসীকে হত্যা করে এবং ৮০টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
১৯৮০ সালের ২৫শে মার্চের দ্বিতীয় গণহত্যায় কলমপতিতে আদিবাসীদের জোরপূর্বক ভাবে সারিতে দাঁড় করিয়ে সেনাবাহিনী গুলিবর্ষণ চালায়। প্রতিবেদনে কাউখালীতে নিহত আদিবাসীদের সংখ্যা ৫০ থেকে ৩০০ জনের মধ্যে দেখানো হয়।
সেনাবাহিনী কর্তৃক যুবতীদের বন্দি এবং ধর্ষণ করা হয়। ১৯৮০ সালে আদিবাসী জনসংখ্যার ১০ শতাংশ প্রতিবেশী ভারতে এবং বাকিরা জঙ্গল এলাকায় পালিয়ে যায়।
১৯৭৯ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে ১০টিরও বেশি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল যার মধ্যে আনুমানিক ১২০০ থেকে ২০০০ জন আদিবাসী নিহত হয় । এসব গণহত্যা আদিবাসীদের তাড়াতে এবং বাঙালিদের তাদের জায়গায় বসতি করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
১৯৯৭ সালে সেনাবাহিনীর জেনারেলদের একজন বলেছিলেন:- ” আমরা ভূমি চাই, মানুষ না।”
বিদ্রোহ দমনের আরেকটি অন্যতম কৌশল হিসেবে ১৯৭৯ এবং ১৯৮৫ সালের মধ্যে সরকারের একটি গোপনীয় স্থানান্তর কার্যক্রমের আওতায় সমতলের ৪০০০০০ ভূমিহীন বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এটাই নাটকীয় ভৱে জনসংখ্যার আয়তনকে পরিবর্তন করে ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের সংখ্যা ১৯৭৪ সালে ২৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯৮১ সালে ৪১ শতাংশে পৌঁছায় । অপরদিকে বাঙালিরা অবৈধভাবে আদিবাসীদের বিশাল পরিমাণ জায়গা দখল করে নেয়। এতে বেশি করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
জমি হয়ে উঠে আদিবাসী, বাঙালি সেটেলার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের অন্যতম কারণ। পিসিজেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামের সামরিকীকরণ এবং বাঙালিকরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের সামরিক কর্মকান্ড বাড়ায়।
১৯৮৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আদিবাসী ও উপজাতীয় জনসংখ্যা সম্পর্কিত ILO কনভেনশন ১০৭-এ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অপর্যাপ্ত প্রতিবেদনের জন্য বারবার বাংলাদেশ সরকারকে সমালোচনা করে।
জাতিসংঘে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কার্যদলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটি বারবার উপস্থাপন করা হয় এবং জাতিসংঘ মানবধিকার কমিশনে ও বৈষম্য প্রতিরোধ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিষয়ক জাতিসংঘের সাব কমিশনে বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
১৯৮৭ সালে পিসিজেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শান্তিরক্ষীবাহিনী মোতায়েন এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার ও সেটেলার বাঙালিদের পুনর্বাসন করার দাবি জানায়।
কিন্তু সরকার এই দাবি গুলোকে উপেক্ষিত রাখে। পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো বিদেশির প্রবেশ অনুমতি ছিল না এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আসা খবরগুলো প্রচন্ডভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হতো।
১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুথানে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসেন, ১৯৮৩ সালে পিসিজেএসএস এর মধ্যে বিভক্তি এবং পিসিজেএসএস এর নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বিরোধী পক্ষ দ্বারা নিহত হওয়ার পর শান্তিবাহিনীর জন্য সাধারণ ক্ষমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঁচ বছর মেয়াদী বিশেষ এক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
মানবেন্দ্রের ছোট ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু ) লারমা পিসিজেএসএস এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । বিরোধীপক্ষের একটি বৃহৎ অংশ ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে আত্মসমর্পণ করে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা দমন পীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন আগের মতোই চলতে থাকে। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যাগুলো সংঘটিত হয়েছিল।
নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, চলাফেরার স্বাধীনতা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্রয় বিক্রয় ও সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে করে শান্তিবাহিনীর কাছে কোন সাহায্য না পৌঁছায়।
আদিবাসীদের জোর পূর্বকভাবে “মডেলগ্রামে” স্থানান্তর করা হয় (তথাকথিত পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকর জুমচাষ বন্ধ করতে পুনর্বাসনের নামে প্রকৃতপক্ষে তাদের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হাওয়ার জন্য )।
পালানো এবং স্থানচ্যুত আদিবাসীদের রেখে যাওয়া জায়গায় যেসব বাঙালিদের স্থান দেওয়া সম্ভব হয়নি তাদের ” গুচ্ছ গ্রামগুলোতে ” জায়গা দেওয়া হয়। সাধারনত সেনাক্যাম্পের পাশে হওয়ায় তা সেনাবাহিনীর জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হিসেবে কাজ করছিল।
বাঙালি সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বের করে দিতে ও আরো বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের আসতে বাধা দেওয়া এবং নিজেদের অধিকার এবং ভূমি রক্ষার্থে , শান্তিবাহিনী সেটেলার বাঙালিদের উপর হামলা চালাতে শুরু করে ।
এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক এসব পুনর্বাসন পরিকল্পনার পাশাপাশি সড়ক নির্মাণ এবং বনায়নের কার্যক্রমে অর্থায়ন করেছিল। কয়েকটি অন্যান্য দাতা সংস্থা যেমন ইউনিসেফ এবং ইউএনডিপিও পার্বত্য চট্টগ্রামের ” উন্নয়নমূলক ” কার্যক্রমগুলোতে অর্থায়নে যুক্ত ছিলো।
১৯৮০ দশকের গোড়ার দিকে দমনমূলক সরকারি নীতিগুলো বহির্বিশ্বে ছড়ানোর ফলে সুইডেন এবং অস্ট্রেলিয়া সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে রাস্তা নির্মাণ এবং বনায়নের কার্যক্রম থেকে সড়ে আসে এবং এটা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, গৃহীত কার্যক্রমগুলো আদিবাসীদের স্বার্থের পরিপন্থী ছিলো।
আংশিকভাবে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সংশ্লিষ্ট সরকার এবং পিসিজেএসএস এর মধ্যকার আলোচনাগুলো ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু হয় যদিও আলোচনাগুলো ফলপ্রসূ হয়নি। জেএসএস-এর মূল দাবি ছিলো আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন এবং “জুম্ম” পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং বাঙালি সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন করা ।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বর-এ, একটি গণআন্দোলনের মাধ্যমে জেনারেল এরশাদের পতন হয়। ১৯৯২ সালের অগাস্ট মাসে, পিসিজেএসস অনেকটা একতরফাভাবে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে, ১৯৯২ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচিত বিএনপি সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকৃত ফলাফল ছাড়াই বেশ কয়েকটি আলোচনা সংঘটিত হয়।
১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভের পর ১৯৯৭ সালে পিসিজেএসএস এবং শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটার অন্যতম একটি কারণ ছিলো ভারতে সরকাররের পরিবর্তন।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্টিত হয় এবং ভারত পিসিজেএসএসকে চাপ প্রয়োগ করে একটি চুক্তিতে আসার জন্য। বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো ও সেটেলার বাঙালিরা চুক্তিটির বিরোধিতা করে এবং এর বিরুদ্ধে ভীষণরকম প্রচার শুরু করে দেয় ।
সূম্পর্ণ ভিন্ন ভিত্তিতে ,আদিবাসীদের একটি অংশ যারা পূর্বে পিসিজেএসএসকে সমর্থন দিচ্ছিলো তারা চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে এই বলে যে, চুক্তিটিতে জুম্মদের প্রধান প্রধান দাবিগুলো প্রতিফলিত হয়নি এবং তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য সংগ্রাম অব্যহত রাখার ঘোষণা দেয়।
তারা ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ )গঠন করে।
১৯৯৬ সালে, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য একটি সংশোধনী এনেছিল “পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি সেটেলারদের সমতলে পুনর্বাসনের জন্য”।
তহবিল সরবরাহ করার শর্তে বাংলাদেশ সরকার যদিও বাঙালি সেটেলারদের পুনর্বাসনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মতে, সরকার এখনও পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে আনতে পারেনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন দাতা দেশগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের শর্ত সাপেক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে তহবিল পদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
শান্তি চুক্তির মূল অংশগুলো এখনও বাস্তবায়িত হয়নি এবং ২০০১ সালে নির্বাচিত সরকার এই চুক্তি লঙ্ঘিত হয় এমন কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
উদাহরণস্বরূপ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিজেকে নিযুক্ত করেন এবং কেবল মাত্র একজন জুম্ম প্রতিনিধিকে সহকারী মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন যদিও শান্তি চুক্তির শর্তানুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়য়ের দায়িত্বে একজন আদিবাসী প্রতিনিধিকে দেওয়ার কথা ছিলো।
একইভাবে সরকার একতরফাভাবে চুক্তিকে উপেক্ষা করে আদিবাসী এমপিকে পাশ কাটিয়ে একজন সেটেলার বাঙালি এবং বিএনপির এমপিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপির সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
যে দেশ প্রায় রাজনৈতিক ভিত্তিতে বিভক্ত হয়, সেখানে ধ্যর্যের বাণীই হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসগুলোর মধ্যে একটি এবং অনেকে একমত হবেন যে, দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণের অধিকার স্বীকৃতির জন্য এম এন লারমার সংযত আহ্ববানে সাড়া না দেওয়ার ব্যর্থতা অতীত দশককে রক্ত পাতের দিকে ধাবিত করে। যদি দ্বন্দ্বের মূল সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না হয় তবে যে কোনো সময় দ্বন্দ্ব পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
এই চুক্তি দ্বন্ধ নিরসনে সমঝোতা এবং শান্তিপূৰ্ণভাবে সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। চুক্তিটি এটিও প্রতীয়মান করেছে যে পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য সুযোগ দিতে হবে।
সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে “Searching for Peace in Central and South Asia: An Overview of Conflict Prevention and Peacebuilding Activities”-র একটি অধ্যায় থেকে, সম্পাদনা করেছেন Monique Makenkamp, Paul Van Tongeren, and Hans Van De Veen; European Centre for Conflict Prevention, the Hague, 2002।
মূল লেখাটি প্রকাশিত হয়েছেঃ Between Ashes and Hope– বইয়ে, Indigenous Struggle In CHT– শিরোনামে।
মূল লেখাটি লিখেছেনঃ য়েনেকে এরেন্স এবং কীর্তি নিশান চাকমা ( Jenneke Arens and Kirti Nishan Chakma)।
লেখাটির বাংলায় অনুবাদকারীঃ সাম্য কেতন চাকমা।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।