তুমি পৃথিবীকে যেভাবে দেখো তা পরিবর্তনে আদিবাসীদের ১০টি উদ্ভাবন
692
এ গ্রহের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জপূর্ণ পরিবেশে টেকসইভাবে বাঁচতে আদিবাসীরা অনন্য দক্ষতা ও বিশেষায়িত প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়েছে। এখানে ১০টি অসাধারণ উদ্ভাবন সম্পর্কে তুলে ধরা হলোঃ
১। প্রমাণ আছে যে পশ্চিম পাপুয়ার ডানি জাতির লোকেরা প্রায় খ্রিঃপূর্ব ৯০০০ বছর আগে কৃষি ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়েছিল, যা ইউরোপেরও অনেক পূর্বে। যেখানে গ্রেট বৃটেনের লোকজন এই কৃষিব্যবস্থাটি শুরু করেছিল মাত্র খ্রিঃপূর্ব ৬০০০ বছর আগে।
২। পেরুভিয়ান আমাজনের শিপিবো জাতির লোকেরা এমন এক জটিল জ্যামিতিক শিল্প তৈরি করেন যেটি সংগীত হিসেবে পড়া যায়। প্যাটার্নগুলো দেখে লোকেরা গানটি শুনতে পারে ঠিক শীট সংগীতের (sheet music) মত। এই প্যাটার্নগুলো আয়াহুয়াস্কা নিরাময় অনুষ্ঠানের (ayahuasca healing ceremony) সাথে সংযুক্ত ভজন-গীত এবং গানগুলোকে উপস্থাপন করে থাকে।
৩। সারাওয়াকের পেনান জাতির লোকদের মতো বিশ্বজুড়ে অনেক বুদ্ধিমান আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী রয়েছে যাঁরা মাছ ধরার জন্য পরিবেশবান্ধব রসায়নের ব্যবহার করে। তাঁরা গাছ থেকে সংগ্রহীত অধিবিষ (toxin) ব্যবহার করে মাছগুলোকে অচেতন করে ফলে মাছগুলো পানিতে ভেসে উঠে। তাঁরা শুধু যতটুকু চাহিদা সেই পরিমাণই নিতো এবং ছোটমাছগুলোকে সুস্থ হওয়ার জন্য ছেড়ে দিতো যাতে করে সেগুলো সাঁতরে চলে যেতে পারে এবং মাছের মজুদ শেষ হয়ে না যায়।
৪। দক্ষিণ-পূর্ব ভারতের চেনচু জাতির লোকেরা এক বিশেষ মৌচাক দিয়ে ভাঙ্গা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য কাস্ট (ভাঙ্গা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিরাময়ে ব্যবহৃত কাঠামো বিশেষ) বানাতো। তাঁরা বলে যে তাঁরা বৃষ্টির সময় কখনও মধু সংগ্রহ করে না কারণ বৃষ্টির দিনে যখন পাথর পিচ্ছিল থাকে তখন মৌমাছিদের নতুন বাসা বাঁধতে অনেক কষ্ট হয়।
৫। পশ্চিম পাপুয়ার কিছু জনজাতির লোকজন গর্ভনিরোধক হিসেবে গেন্দারুসা (Gendarussa) নামক এক উদ্ভিদ থেকে প্রস্তুতকৃত ঐতিহ্যবাহী একধরণের চা পান করতো। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখছে যে এই উদ্ভিদটি গর্ভনিরোধক বড়ির মূল উপাদান হিসেবে কাজে দিতে পারে কিনা।
৬। নামিবিয়া এবং অ্যাঙ্গোলার হিম্বা জনজাতি এমন এক অঞ্চলে বসবাস করে যেখানে পানির বড্ড অভাব। সেখানকার মহিলারা তাঁদের ত্বক এবং চুলকে পানি ছাড়া পরিষ্কার করার জন্য নিজেদেরকে অতজিয পেস্ট (otjize paste) দ্বারা ঢেকে রাখেন, যেটি একধরণের চর্বি এবং গিরিমাটির (ochre) মিশ্রণ। অতজিয সূর্য এবং মশার কামড় থেকেও সুরক্ষা দেয় তবে হিম্বা মহিরালা বলেন যে সুন্দর দেখতেই তাঁরা এটি মাখে।
৭। অনেক জনজাতি মানসিক এবং শারিরীকভাবে তাঁদের দক্ষতাকে শান দেওয়ার জন্য প্রাকৃতিকভাবে তৈরি চিত্তপ্রভাবকারী পদার্থ (psychoactive substance) ব্যবহার করে থাকে । ম্যাটসেস জাতির পুরুষ এবং মহিলারা শিকারের আগে প্রায় ব্যাঙের বিষ ব্যবহার করেন, যা স্পষ্টতা, দৃষ্টিশক্তি এবং শক্তিমত্তার এমন এক অনুভূতি তৈরি করে যা বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হয়।
৮। খুব সম্প্রতি সংযোগ স্থাপন করা কলম্বিয়ার নুনাক জনজাতি তাঁদের চুল কাঁটতে ঐতিহ্যগতভাবে পিরানহা দাঁত ব্যবহার করে আসছে। এই জনজাতি ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সবার কাছ থেকে নিজেদের আলাদা করে রেখেছিল, যখন নুনাকদের অঞ্চলে নতুন এক শহর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অপ্রত্যাশিতভাবে তাঁরা সেখানে উপস্থিত হয় তখন থেকে তাঁদের সাথে সংযোগ স্থাপন শুরু হয়েছিল।
৯। ম্যালেরিয়া পুরো বিশ্বে ভয়ানক এক রোগ। সিনচোনার গাছের বাকল থেকে তৈরি ঔষধ কুইনাইন ম্যালেরিয়া দমনের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং পেরু, বলিভিয়া ও ইকুয়েডরের কেচুয়া আদিবাসীরা সর্বপ্রথম এটিকে পেশির শিথিলকরণ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
১০। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে নতুন বিশ্বে (new world) আগমনের অনেক আগে থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীরা জানতো রাবার গাছের আঠা কিভাবে ব্যবহার করা যায়। তাঁরা আঠা ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁদের জামাকাপড়গুলোকে জলনিরোধী বানিয়েছিল এবং রাবারের সিরিঞ্জের বিকাশ ঘটিয়েছিল। মায়ানদের চিচেন ইটজা শহর (Mayan city of Chichen Itza) খননের মাধ্যমে রাবারের বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া গিয়েছিল।
অনুবাদকারীঃ অ্যান্টন চাকমা
Link: https://www.survivalinternational.org/articles/10-indigenous-inventions
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।