icon

ফেলিক্স প্যাডেল: আদিবাসী অর্থনীতিই হতে পারে ভবিষ্যত ভারতের একমাত্র ভরসা

Jumjournal

Last updated Apr 1st, 2020 icon 1735

ভারতের জনজাতি সম্প্রদায়গুলো কঠিন চাপের মুখে রয়েছে। বড় বাঁধ, মাইন স্থাপন থেকে শুরু করে সহিংস আন্দোলন, সামরিক শাসন, ভূমি দখল – সবমিলিয়ে তারা বেশ বেকায়দায় পড়েছে।

মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আছে “কালচারাল জেনোসাইড”, যা এই গোষ্ঠীগুলোর জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এর বিস্তারের জন্য আবাসিক স্কুল গুলো অনেকাংশে দায়ী। এসব স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করে থাকে তাদের মূল লক্ষ্য শিক্ষা ও সাক্ষরতার প্রসার।

কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই স্কুলগুলো নির্যাতন আর ব্রেইনওয়াশিং এর কেন্দ্রস্থল, যার ফলশ্রুতিতে শিশুরা তাদের ভবিষ্যতে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাচীন জ্ঞান আর মূল্যবোধ অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আর ২৫ বছর পর এই সম্প্রদায়গুলোর কি আদৌ কোন অস্তিত্ব থাকবে? নাকি তারা পুনরুজ্জীবিত সহনশীল ইগ্যালিট্যারিয়ান/সমানাধিকারবাদী মডেলসমূহের প্রতিনিধিত্ব করবে যাদের সম্পর্কে বহির্বিশ্ব নতুন করে জানছে আর অনেক কিছু শিখছে?

এমন অসংখ্য সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য আমাদের প্রথমে এই গোষ্ঠীভিত্তিক সম্প্রদায়গুলোর জটিল পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হতে হবে। জানতে হবে কিভাবে এই জটিলতার সৃষ্টি হলো তার ইতিহাস।

অনেক সম্প্রদায়, যেগুলো ২৫ বছর আগেও ঐক্যবদ্ধ ছিল, দল রাজনীতি, ধর্ম আর ইনভেইসিভ প্রকল্পের কারণে সেগুলোর মধ্যে ভাঙন ধরেছে।

মাইনিং আর কনস্ট্রাকশন কোম্পানীগুলোর প্রধান কৌশলই হল “ডিভাইড এন্ড রুল” নীতি।

তারা আদিম অধিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রকল্প স্থাপনের জন্য সে এলাকার ভূস্বামীদের টাকার বিনিময়ে বাগিয়ে নেয় এবং বাকিদের মধ্যে কোন্দল বাধিয়ে তাদের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করে।

আদিম অদিবাসী সমাজের এই অনন্য বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করতে পেরেই মার্কস এবং এঙ্গেলস একে “প্রিমিটিভ কমিউনিজম” বলে অভিহিত করেছিলেন।

“অরিজিনাল” বা “এবরিজিনাল” কমিউনিজম আখ্যা দিলে হয়তো ব্যাপার টা আরো স্পষ্ট হতো। তারপরও কিভাবে এই সমাজগুলি “আধুনিক সমাজ” থেকে পৃথক তা এই শব্দবন্ধ থেকে বেশ ভালোই বোঝা যায়।

এ সম্প্রদায়গুলো ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিবর্তে দলগত মালিকানার উপর জোর দেয়- তাদের এই ধারণা থেকেই মূলত পরবর্তীতে “কমিউনিজম” শব্দটির জন্ম হয়। এই মৌলিক ধারণাগুলো ভারতের আদিবাসী সমাজগুলোতে আজও বিদ্যমান।

এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে নিয়মগিরির কথা, যেখানে ১২ টি গ্রাম সভা শুধুমাত্র বেদান্তের খনির প্রকল্পকে প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত হয় নি, সাথে বন অধিকার আইন (এফআরএ) – এর অধীনে তাদেরকে প্রদত্ত বনভূমির পার্সেল নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়ে এর পরিবর্তে তারা সমগ্র এলাকার উপর গণমালিকানা দাবি করে।

এটা ঠিক যে গণমালিকানার এই সংস্কৃতিটি ঔপনিবেশিক যুগ থেকে নানা কারণে হারিয়ে গেছে। বিশেষ করে যখন থেকে বন আইনগুলির মাধ্যমে বনের প্রতি আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত অধিকার এবং প্রকৃতির সাথে বনবাসীদের শত বছরের মেলবন্ধনকে উপেক্ষা করা শুরু হয় তখন থেকে।

এফ.আর.এ একইসাথে আদিবাসীদের জন্য দলগত মালিকানার আবেদনের কাজটি কঠিন করে দেয় এবং “ছোটনাগপুর টেন্যান্সি এক্ট”, যা আনুষ্ঠানিকভাবে আদিবাসী ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দেয়, সেই অ্যাক্ট রদ করার চেষ্টা করে এবং ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

নানা বিভাজন সত্ত্বেও ভারতের আদিবাসী সংস্কৃতিগুলো পুঁজিবাদ ও শিল্পোন্নয়নের যোগ্য বিপক্ষশক্তি।

তাদের বহু বছরের প্রাচীন জ্ঞান এবং মূল্যবোধ প্রথা তাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে প্রকৃতি থেকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সুবিধা গ্রহণ করে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।

সমতা ও ভাগাভাগির মানসিকতা আর ভূমিদখলের বিরুদ্ধে ডজনখানেক প্রতিরোধ এর মাধ্যমে তারা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে আদিবাসী সমাজ পুঁজিবাদী, শিল্পোন্নত সমাজ থেকে পৃথক।

এই মুহূর্তে সবথেকে বড় ঝুঁকি হলো সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিভাজন এবং সেইসাথে পরিচয় রাজনীতি, যেটার কারণে মতানৈক্য বাড়ে। তফসিলী জাতি, উপজাতি, আদিবাসী-এ ধরণের শ্রেণিভেদ এর কারণে প্রায়ই এসব সম্প্রদায়ের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

এসব বিবাদের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু চাপা পড়ে যায়। তফসিলি জাতির কিছু সদস্য, বিশেষত শহুরে এলাকায যারা বাস করে়, তাদের “উপজাতীয়” বা “আদিবাসী” পরিচয় থেকে মুক্তি চায়।

এর প্রধান কারণ এই শব্দবন্ধসমূহ বেশিরভাগ সময় খুবই তাচ্ছিল্যের সাথে সাংস্কৃতিক বর্ণবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে, “আদিবাসী” শব্দটি ১৯৩০-৪০এ-র দশকে জয়পাল সিং মুন্ডার কারণে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিক্ত বিরোধিতা সত্ত্বেও এটি একটি “বিভেদমূলক” শব্দ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, পরবর্তীতে ইতিবাচক, ঐক্যবদ্ধতার পরিচায়ক হিসাবে জনপ্রিয় হয়েছে।

উল্লেখ্য, মুন্ডা একজন আদিবাসী হকি খেলোয়াড় যিনি ১৯২৮ সালের অলিম্পিকে প্রথম হকি স্বর্ণ জয়ের জন্য ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তিনি সক্রিয়ভাবে আদিবাসীদের অধিকারের জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন।

এই শব্দগুলোর মাধ্যমে মূলত যা ফুটে উঠে তা হলো মাটির সাথে আদিবাসীদের আত্মার টান। উড়িষ্যা অধিবাসীরা যেমনটা বলে-“আমে মাতিরো পোকো আছু”(আমরা মেটে পোকা)।

আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো যে প্রকৃতির সাথে সখ্যতার মাধ্যমে মিলেমিশে জীবনযাপন করে এই ধারণাটি আসলে কোন ব্যক্তিগত ধারণা নয়।

“আদিবাসী অর্থনীতি” আসলেই এমন এক ধরণের জীবনযাপনের দিকনির্দেশনা দেয়, যা অমুদ্রাভিত্তিক বিনিময় শ্রম ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারকে উৎসাহিত করে।

নোয়াম চমস্কি জোর দিয়ে বলেছেন, আধুনিক, নব্য-উদার পুঁজিবাদের এই যুগে পুঁজিপতিদের করাল থাবার মুখে আদিম জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিই আমাদের মানব প্রজাতির ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র আশা হতে পারে।

ভারতের ভবিষ্যত সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও একমাত্র আশা এই আদিবাসী  সংস্কৃতি।

একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নির্ভর করছে সর্বোপরি- সংহতির উপর। পরিবেশ ও সামাজিক কর্মীদের মধ্যে সংহতি এবং ভিন্ন স্বার্থ ও মতবাদধারীদের মধ্যে সংহতি খুবই প্রয়োজন।

“আত্ম-স্বার্থ” হল প্রলোভনসঙ্কুল আধুনিকতার বিশাল চাবিকাঠি – এটি একটি অর্থনৈতিক “দর্শন” যার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা বিস্তৃতি লাভ করে।

রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন, খেলাধুলা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে আদিবাসী সমাজগুলো স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে় যে অন্য পদ্ধতিও অবলম্বন করা সম্ভব। যেমন- পশ্চিমা মডেলের উদার গণতন্ত্র দুর্নীতি ও বিভেদের জন্ম দেয়; এর পরিবর্তে ঐক্যমত্যের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

নিষ্ঠুর, জীবনধংসী বাজার ব্যবস্থার পরিবর্তে শ্রম বিনিময় এর প্রচলন করা যেতে পারে। আইনকে বিভাজনভিত্তিক ফি সর্বস্ব ব্যবস্থার পরিবর্তে মতপার্থক্য নিষ্পত্তির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার, নাচকে শারীরিক নৈপুণ্যের অভিব্যক্তি হিসেবে গ্রহণ, পেশাদারি ক্রীড়ার অভ্যন্তরে প্রোথিত প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা লালনের পরিবর্তে সম্প্রদায়সমূহের মধ্যে গণতান্ত্রিক মেলবন্ধনের ব্যাবস্থা করা; জ্ঞান অর্জনকে প্রতিযোগিতার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা না করে ভাগাভাগি করে নেয়ার মত মানসিকতা অর্জন-এসব আমরা আদিবাসী সংস্কৃতিগুলো থেকে শিখে নিতে পারি।

আদিবাসী সমাজগুলি বর্তমানে শ্রেণিভুক্তি প্রক্রিয়ার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত অভিজাতদের দুর্নীতিগ্রস্ত আচরণের মাধ্যমে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ বিভক্তি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে আরো ত্বরান্বিত হয়েছে।

মাওবাদীরা আদিবাসীদেরকে “স্বাধীনকৃত অঞ্চল” সমূহের আপেক্ষিক স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যখন তা সামরিক কায়দার পাল্টা আক্রমণকে আকৃষ্ট করে, বিভেদগুলো আরও বেড়ে যায় মিথ্যা সাক্ষাতযুদ্ধ ও ভুয়া আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।

একটি ইতিবাচক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার জন্য আমাদের কলম্বিয়ার মতো একটি বাস্তব শান্তি প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয়া উচিত।

মাওবাদীদের যেসব ভাল দিক আছে, যেমন- সমাবেশে সত্য ভাষণ এবং মদ ব্যবসায়ী মাফিয়া ও অন্যান্যদের শোষণ বন্ধ করার জন্য ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ -এগুলোর সাথে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও কর্পোরেট এলিট রা সমতা মেনে নেবে। একটি সৎ, সফল মীমাংসা প্রক্রিয়া খুবই প্রয়োজন।

আমরা আদিবাসীদের উপর জোরপূর্বক শান্তি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা না করে তাদের কাছ থেকেই কি এ ব্যাপারে উপদেশ চাইতে পারি না?

পুঁজিবাদ এবং অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিকতার এ যুগে পরিবেশ কর্মীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে যদি দলিতদের এবং আদিবাসীদের মধ্যে, প্রতিবেশী এবং দূরবর্তী এলাকার আদিবাসী বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে যদি সংহতি ও একাত্মতা বজায় রাখা এবং বর্ধিত করা সম্ভব হয়, তাহলে ভারতে আদিবাসী সংস্কৃতি সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে পুনরুজ্জীবনী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।

বর্তমানে আমাদের চলার পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা হল মূলত চরমপন্থী মৌলবাদের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি”র ধারণা। ক্রমাগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব – এই বিভ্রমের কারণে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

অথচ এই বাস্তুতন্ত্রের উপরই পৃথিবীর জীবজগত পুরোপুরি নির্ভরশীল। গুজরাটের এক মুসলমান জেলের ভাষ্যমতে, খনির কোম্পানিগুলি মাতৃমৃত্যুর গোড়াপত্তর খনন করছে।

কারখানা এবং কয়লা-চালিত (এবং পারমাণবিক) বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি আমাদের জল, মাটি এবং বায়ুকে বিষাক্ত করে তুলছে।

এখন যেটা সবথেকে বেশি দরকার সেটা হল বোর্ডিং স্কুলসমূহ কর্তৃক উপেক্ষিত জ্ঞান এবং মূল্যবোধ কাঠামোগুলোকে পুনরায় চাঙ্গা করে তোলা।

ভারতের এসিমিলেশন-ইন-অল-বাট-নেইম- নামে একটি নীতিমালাতে “আদিবাসী শিক্ষার আশ্রমীকরণ” এর কথা বলা হয় (নীরবে সেন্সরকৃত ভার্জিনিয়াস xaxa কমিটি রিপোর্ট ২০১৪ এ যা ব্যক্ত করা হয়েছে) যা উপজাতীয় শিশুদের পরিবার এবং নিজস্ব সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে, যেসব দক্ষতা ও মূল্যবোধ হাজার বছর আগে থেকে এই সমাজগুলি টিকিয়ে রেখেছে সেগুলো থেকে তাদের পৃথক করে দেয়ার মাধ্যমে।

ভুবনেশ্বরের কালিংগা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস রাজ্যের ২৫০০০ এরও বেশি শিশুর জন্য তহবিল সংগ্রহ করছে সেসব ভূমি দখলকারী মাইনিং কোম্পানিগুলির কাছ থেকেই।

অনেক বছরের পুরনো আশ্রম স্কুলসমূহ কর্তৃক প্রবর্তিত এই কাঠামো অনেকটা উত্তর আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার “স্টোলেন জেনারেশন” বোর্ডিং স্কুলগুলোর মত। কানাডা এবং অন্যান্য দেশগুলোতে এধরণের স্কুলকে “জাতীয় লজ্জা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ভারতেও এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলিতে যৌন নিপীড়ন এর হার অনেক বেশি়; কিন্তু শারীরিক সহিংসতার চেয়েও ভয়ংকর দিক যেটা সেটা হল জোর করে তাদের মূলধারার সাথে একীভূত করার প্রচেষ্টা, যাতে সস্তায় তাদের কাজে লাগানো যায় আর নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হতে না পারে।

আদিবাসীরা প্রায়শ যা বলে থাকেন তার মধ্যে প্রতিফলিত হয় তাদের নিজস্ব মূল্যবোধ, যা তাদের পুজিবাদ এর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার আর আন্দোলন করার অনুপ্রেরণা যোগায়- “অর্থ আমাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে” ; “আমরা তো টাকা খেয়ে বাচতে পারবোনা”; ” এখানে নিয়মগিরির ক্ষেত্রে টাকা মুখ্য নয়, নিয়মগিরি আমাদের মা-বাপ। আমাদের একে রক্ষা করতে হবে”

মার্কিন যুক্তরাস্ট্র যেখানে এমন একটি দেশ যা তার অধিবাসীদের গনহত্যার মাধ্যমে গঠিত হয়েছে, সেখানে ডাকোটা পাইপলাইন এর প্রতি অধিবাসীদের এই প্রতিরোধ ভারত এবং ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে আন্দোলনকে প্রতিফলিত করে।

মায়োরী এবং কানাডিয়ান ফার্স্ট নেশন্স থেকে পাওয়া শিক্ষা মডেলগুলি থেকে স্পষ্ট হয় যে ভিন্ন উপায়ও অবলম্বন করা যেতে পারে। জয়পাল সিং মুন্দা একবার জওহরলাল নেহরুকে বলেছিলেন যে, আদিবাসী এলাকায় কখনোই গনতন্ত্র আনা সম্ভব হবেনা- “আদিবাসী মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক মানুষ। আপনাকে তাদের কাছ থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি শিখতে হবে।”

কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠদের এখনো কি সেই শেখার ক্ষমতা আছে? যারা সারাদিন মাঠে ঘাটে পরিশ্রম করে, যাদের অস্তিত্ব মাটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ভারতের সেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কি ক্ষমতা আছে একটি একত্রিত সত্তা হিসেবে টিকে থাকার?

সময় থাকতে কি আমরা তাদের জ্ঞান এবং মূল্যবোধকে আমাদের কাজে লাগাতে পারব?

মাওরি, অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী আর আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের ব্যাপারে যে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল তা সঠিক হয়নি।

ভারতেও একইভাবে একটি পুনরুত্থান আসতে বাধ্য। বনভুমি এলাকায় যারা বাস করে তাদের অন্যতম গুণ হল তারা মাটির উপর স্থায়ীভাবে এর বিভিন্ন দান ব্যবহার করে বেচে থাকতে পারে।

আন্দামান ও নিকোবর এর পিভিটিজি (পার্টিকুলারলি ভালনারেবল ট্রাইবাল গ্রুপ/বিশেষভাবে দুর্বল উপজাতি গোষ্ঠী) প্রকৃতির ধরণ বুঝে সুনামির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

যদি আমরা অ্যানথ্রোপোসিন এবং মানব সৃষ্ট বিশ্ব উষ্ণায়ন আর সম্পদ শেষ হয়ে যাওয়ার হুমকি থেকে বাঁচতে চাই, তাহলে আদিবাসী অর্থনীতিই আমাদের ভবিষ্যতের উন্নতির জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।


অনুবাদঃ মম চাকমা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মূল লেখাঃ – Felix Padel: Adivasi economics may be the only hope for India’s future

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।
RSS
Follow by Email
Facebook
Twitter

আরও কিছু লেখা

Leave a Reply