পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী নারীর অংশগ্রহণ
1565
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পুর্বাংশে অবস্থিত পার্বত্য অঞ্চলে বাংলাদেশের অধিকাংশ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস।
রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় যথাক্রমে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বম, লুসাই, পাংখোয়া, খিয়াং, চাক ও খুমী- এই এগারোটি ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিগোষ্ঠীর আদি আবাসভূমি।
এ ছাড়াও, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিসহ কিছু সংখ্যক অহমিয়া, গুর্খা ও সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। অন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করছে।
পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত এই আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীসমূহের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি, প্রথা, রীতিনীতিসহ স্বতন্ত্র জীবনযাপন পদ্ধতি এবং আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশ, যা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
স্বতন্ত্র ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, অনন্য ভূ-প্রাকৃতিক গঠন, পৃথক নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, পৃথক রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিচার ও শাসনব্যবস্থা বরাবর এ দেশের অপরাপর অঞ্চলের প্রশাসনিক কাঠামো থেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
প্রাক-ঔপনিবেশিক আমল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীরা নিজেদের সমাজ কাঠামোর ঐতিহ্য ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সামাজিক রীতিনীতি ও প্রথার ভিত্তিতে নিজস্ব আইনি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনাধীনে ১৯০০ সালের রেগুলেশনের আওতায় সৃষ্ট সার্কেল চিফ, হেডম্যান, কারবারী এই তিন স্তরের প্রশাসনিক কাঠামো বিধিবদ্ধ আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়, যা কিছু সংশোধন, পরিমার্জনের পর বর্তমানেও তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যমান রয়েছে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য অঞ্চলকে পাহাড়ি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এর বৈশিষ্ট্য রক্ষার্থে বিশেষ শাসন কাঠামোর আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রবর্তিত হয়।
সমগ্র বাংলাদেশে প্রচলিত সাধারণ প্রশাসন অর্থাৎ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রশাসনিক কাঠামোর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সমন্বয়ে বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।
এই পরিষদগুলোর ওপর আদিবাসী সমাজের সামাজিক বিচার ও প্রথাগত আইন সংক্রান্ত বিষয়াদি ন্যস্ত করা হয়েছে।
আদিবাসীদের প্রথাগত বিচার ব্যবস্থা
১৯০০ সালের রেগুলেশনের বিধিমতে আদিবাসীদের মধ্যে উদ্ভূত যাবতীয় সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধ প্রথাগত আইন অনুযায়ী নিষ্পতি করায় কারবারী, হেডম্যান ও সার্কেল চিফগণ ক্ষমতাপ্রাপ্ত।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি (সংশোধন) ২০০৩ অনুযায়ী যুগ্ম জেলা জজ সংশ্লিষ্ট জেলার দেওয়ানি মোকদ্দমা সংক্রান্ত ব্যাপারে আদি অধিক্ষেত্র হিসেবে প্রচলিত আইন, প্রথা ও রীতিনীতি অনুসারে এবং আদিবাসীদের মধ্যে উদ্ভূত পারিবারিক ও প্রথাগত আইনের বিষয়ে যুগ্ম জেলা জজের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান ও সার্কেল চিফের বিচারালয়ের মাধ্যমে নিষ্পন্ন করার বিধান রাখা হয়েছে।
অধিকন্তু, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে ৬৬ ধারা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট সার্কেলে বসবাসকারী আদিবাসীগণের মধ্যে কোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা পারিবারিক বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে বিরোধটি নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় কারকারী ও হেডম্যানের নিকট উপস্থাপন পূর্বক সংশ্লিষ্ট আদিবাসী সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে বিচার পদ্ধতি ও বিচারপ্রার্থী এবং আপিলকারীদের কর্তৃক প্রদেয় ফিস ইত্যাদি সম্পর্কিত প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদসমূহের রয়েছে।
২. হেডম্যান আদালত
মৌজার হেডম্যানগণ সংশ্লিষ্ট মৌজার অধিবাসীগণ কর্তৃক আনীত সকল বিরোধীয় বিষয়ে বিচার করতে ও সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। হেডম্যানগণ সংশ্লিষ্ট আদিবাসীদের প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী বিরোধের নিষ্পত্তি করেন। এ ধরনের বিচারে বিধি অনুযায়ী হেডম্যান সর্বোচ্চ ২৫ টাকা জরিমানা করতে পারেন। হেডম্যানের সিদ্ধান্ত বিষয়ে আপত্তি থাকলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ সার্কেল চিফের কাছে আপিল করতে পারেন।
৩. রাজা বা সার্কেল চিফের আদালত
১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির ৪০ নম্বর বিধি অনুযায়ী সার্কেল চিফগণ খাস মৌজার হেডম্যান হিসেবে তাঁদের কাছে নিষ্পত্তির জন্য আনীত বিরোধীয় সকল বিষয়ের ওপর বিচারপূর্বক সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। হেডম্যানদের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রেরিত বিরোধসমূহ বা হেডম্যানগণ কর্তৃক দাখিলকৃত সেই বিরোধসমূহও সার্কেল চিফগণ একইভাবে নিষ্পত্তি করবেন।
সার্কেল চিফ এ ধরনের বিচারে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন। সার্কেল চিফের রায়ে রিভিশনাল অধিক্ষেত্র হিসেবে ডেপুটি কমিশনারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
অন্যদিকে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৬৬ (খ) ধারায় সার্কেল চিফের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করা যাবে এবং কমিশনারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।
কোনো আপিল নিষ্পত্তির পূর্বে সার্কেল চিফ বা কমিশনার কর্তৃক সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী থেকে তৎকর্তৃক মনোনীত অন্যূন ৩ জন ব্যক্তির সাথে পরামর্শের বিধান রয়েছে।
১৯০০ সালের শাসন বিধির ৪০ নম্বর বিধি অনুযায়ী সার্কেল চিফ বা হেডম্যান কর্তৃক প্রদত্ত কোনো রায়ে আরোপিত শাস্তি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা যাবে।
প্রথাগত আইনের আওতায় সাধারণত আদিবাসীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে উদ্ভূত বিরোধসমূহের নিষ্পত্তি হয়ে থাকে; যথা ১. বিবাহ, ২. বিবাহ বিচ্ছেদ, ৩. ভরণপোষণ, ৪. নাবালকের অভিভাবকত্ব/পিতৃত্ব, ৫. উত্তরাধিকার, ৬. নারী সংক্রান্ত অপরাধ (পরকীয়া, ব্যাভিচার ইত্যাদি) এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়াদি।
প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী পাহাড়ি নারী
আদিবাসী প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে পাহাড়ি নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সীমিত। রাজা বা সার্কেল চিফ পদটি বংশপরম্পরায় একটি উত্তরাধিকারী পদ।
অপরদিকে হেডম্যান নিয়োগ বংশাক্রমিক নয়, তবে নিযুক্তির ক্ষেত্রে হেডম্যানের পুত্র অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। হেডম্যান পদের ক্ষেত্রেও আদিবাসী পাহাড়ি নারীরা অবহেলিত ও উপেক্ষিত।
২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩৬৯ জন হেডম্যানের মধ্যে নারী হেডম্যান ছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র।
অনুরূপভাবে গ্রামপ্রধান ‘কারবারী’ পদেও পাহাড়ি নারীর অংশীদারিত্ব ছিল একেবারেই হতাশাব্যঞ্জক। নারী সংগঠনগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে তিন পার্বত্য রাজার উদ্যোগে বর্তমানে এ চিত্রটির কিছুটা উন্নতি ঘটলেও তা আশানুরূপ নয়।
প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ কম থাকার ফলে আদিবাসী নারীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ছে।
এক নজরে প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী নারী
সার্কেল সার্কেল চিফ হেডম্যান কারবারী
নারী পুরুষ মোট নারী পুরুষ মোট নারী পুরুষ মোট
চাকমা х ১ ১ ৭ ১৭৮ ১৮৫ ২৯৫ ১৫৬১ ১৮৫৬
বোমাং х ১ ১ ৩ ১০৬ ১০৯ ৪ ১১০২ ১১০৬
মং х ১ ১ ৩ ৮৮ ৯১ ১১৬ ১৬০০ ১৭৬০
মোট х ৩ ৩ ১৩ ৩৭২ ৩৮৫ ৪১৫ ৪২৬৩ ৪৭২২
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে রাজা-হেডম্যান-কারবারী সম্বলিত প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী পাহাড়ি নারীর অংশগ্রহণ বিষয়ে সরাসরি কোনো কিছু উল্লেখ নেই।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট দাখিল সাপেক্ষে সার্কেল চিফ বা রাজাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের সনদপত্র প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে [চুক্তির ‘খ’ খ-ের ৪(ঘ) ধারা]।
এ ছাড়া, সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের সভায় সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ বা রাজার যোগদানের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে (চুক্তির ‘খ’ খ-ের ১২ ধারা)।
অধিকন্তু, ‘উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার’ বিষয়টিকে আঞ্চলিক পরিষদ [চুক্তির ‘গ’ খ-ের ৯(ঙ) ধারা] এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে [চুক্তির ‘খ’ খ-ের ৩৪(গ) ধারা]।
সর্বোপরি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে পাহাড়ি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে এবং এই বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের বিধান করা হয়েছে (‘ক’ খ-ের ১ নম্বর ধারা)।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির উল্লিখিত ধারা বলে আদিবাসী পাহাড়িদের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী নারীদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব ও দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ভূমিকা পালন করতে পারে। অপরদিকে আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে যেভাবে পাহাড়ি নারীর জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে, সেটাকে নৈতিক ভিত্তি ও উৎস হিসেবে বিবেচনা করে প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে পাহাড়ি নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারী হেডম্যান ও কারবারীদের চ্যালেঞ্জসমূহ
অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নারীসমাজের মতো আদিবাসী সমাজেও নারীদের অধস্তন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ অধস্তনতার বেড়াজাল ছিন্ন করে এ সময়ে যেসব নারী হেডম্যান ও কারবারী পদে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছেন, পুরুষতান্ত্রিক বলয়ে তাদের প্রতিনিয়ত নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে; যেমন, পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দ্বারা তাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিচারের রায়কে অবজ্ঞা বা হেয় করার প্রবণতা বা গুরুত্ব না দেওয়া, কথা বলতে না দেবার প্রবণতা, দক্ষতা বা যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, যৌন নিপীড়ন করা বা যৌন নিপীড়নের হুমকি প্রদর্শন, নারীর হাতে যথেষ্ট অর্থ না থাকায় দূরবর্তী স্থানে পৌঁছুতে না পারা, রাজনৈতিক দলের প্রভাব, প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ ইত্যাদি।
প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারী হেডম্যান ও কারবারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে করণীয়
১। প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে সার্কেল চিফদের দ্বারা বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ;
২। প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীকে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া;
৩। নারী হেডম্যান এবং কারবারীদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া;
৪। আদিবাসী নারীদের সমঅধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রথাগত আইন বিশ্লেষণের মাধ্যমে বৈষম্যমূলক উপাদান চিহ্নিত ও অপসারণ করে যুগোপযোগী করা;
৫। সামাজিক বিচারের শুনানিতে নারীদের ৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা;
৬। যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রথাগত সামাজিক আদালতের রায়ের রেকর্ড সংরক্ষণ করা। রায় লেখা ও রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;
৭। ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ও পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে আদিবাসী নারী সদস্য বৃদ্ধিকরণ;
৮। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক ও অমর্যাদাকর প্রথা ও রীতিনীতিগুলো বর্জন করা;
৯। সম্পত্তিতে আদিবাসী পাহাড়ি নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা;
১০। সম্পত্তির ওপর আদিবাসী পাহাড়ি নারীর উত্তরাধিকার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
১১। আদিবাসী পাহাড়ি সমাজে বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা;
সর্বোপরি,
জাতীয় পর্যায়ের সেক্টরাল পলিসিগুলোতে পাহাড়ি নারীসহ আদিবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে তা সংশোধনপূর্বক সন্নিবেশ করা;
অথবা আদিবাসী নারীসহ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, ভূমি, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ইত্যাদিসহ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করা;
আদিবাসী নারীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১-তে উল্লিখিত ধারা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আদিবাসী নারী সংগঠনসমূহের সঙ্গে পরামর্শসাপেক্ষে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা;
# পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ শাসনকাঠানোর অধীনে বিদ্যমান স্থানীয় সংস্থাসমূহকে আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে শক্তিশালীকরণ;
# আদিবাসী নারীদের ওপর সহিংসতা বন্ধের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
# শিক্ষাক্ষেত্রে আদিবাসী নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
# আদিবাসী নারীদের বিশেষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা;
# আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সংগঠনের মধ্যে লিঙ্গ-সংবেদনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করা; এবং
# পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে আদিবাসী নারীর অংশগ্রহণ: বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শসভার আলোচনাপত্র ।
আয়োজনে: বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, কাপেং ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, ওমেন হেডম্যান-কারবারী নেটওয়ার্ক সিএইচটি ওমেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম, প্রগেসিভ, অনন্যা কল্যাণ সংগঠন, খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতি।
২২ জুন, ২০১৮, সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা।
লেখকঃ অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা
তথ্যসূত্রঃ IPNEWSBD
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।