আমাকে আমার নামে ডাকো
1625
লাতিন আমেরিকার দেশ পেরু জনসাধারণের নামের রেকর্ডে আদিবাসী নাম ব্যবহারের উৎসাহ প্রদান করছে
জুলিও কুসুরিচি (Julio Cusurichi) আমাজনের জনজাতিসমূহের স্বার্থে জলাধার তৈরিতে সহায়তা করার জন্য মর্যাদাপূর্ণ Goldman Environmental পুরস্কার অর্জন করেন,কিন্তু তার নিজ গ্রামে তিনি এখনও তার শৈশব কালে প্রদত্ত নাম শিপিবো-কোনিবো (Shipibo-Konibo) নামে পরিচিত, যার অর্থ পিনো (Pino) বা হামিংবার্ড (Humming Bird)।
ইনকা সভ্যতার বাহক পেরুর অন্যান্য অনেক হাজারো আদিবাসীদের ন্যায়, কুসুরিচিরও বাড়িতে একটি নাম এবং সরকারি রেকর্ডে ভিন্ন আরেকটি নাম রয়েছেঃ তাঁর পরিচয় পত্র এবং অন্য সকল নথিতে শুধুমাত্র তাঁর “খ্রিস্টান” নামটিই বহন করে।
যুগের পর যুগ ধরে পেরুর রেজিস্ট্রাররা প্রায়শই আদিবাসী নামগুলোকে স্বীকৃতি দিতে আস্বীকার করতেন, হিস্পানিক (Hispanic) নামগুলো কিংবা ইংরেজি ধাঁচের নাম যেমন রুজভেল্ট (Roosevelt) বা জন (John) এরুপ নাম গুলোকে বেশি প্রাধান্য দিতেন।
কিন্তু এই প্রথাটির পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে জাতীয় রেজিস্ট্রার প্রতিষ্ঠান রেনেইকের (Reniec) একটি উদ্যাগের মাধ্যমে, যা হল দেশের ৪৮টি আদিবাসী ভাষার তালিকাভুক্ত নাম রেজিস্ট্রারদের সাহায্যে পুনরুদ্ধার করা।
রেনেইকের একাডেমিক গবেষণা সহকারী সান্তা মারিয়া (Santa Maria) বলেন,
“অনেক রেজিস্ট্রার আদিবাসীদের নাম নিবন্ধন করতে অনুৎসাহী, তাই অভিভাবকেরা ভাবেন যে তারা যে নামটি বেছে নিয়েছেন তা মূল্যহীন। এজন্যই আমরা আদিবাসী নামগুলোর ব্যবহার উৎসাহিত করতে চাই এবং তা জন্ম সনদ ও পরিচয় সংক্রান্ত নথিতে অন্তর্ভুক্তিতে যথাযথ উপায়ের স্বীকৃ্তি প্রদান করতে চাই।”
২০১২ সাল থেকে পেরুর ট্রেজার অফ নেমস প্রকল্পটি সেখানকার ৫৫টি আদিবাসী জাতির নামের অভিধান সংকলন করেছে।
অনোশকা ইরেয় (৩৭), একজন আদিবাসী হারাকম্বুট (Harakmbut), সিদ্ধান্ত নিলেন আদিবাসী ও প্রচলিত ধারার নামের সেরাটা ধারণ করবেন যখন তিনি তার পুত্র যার বর্তমান বয়স চার, তাকে টেয় আদ্রিয়ানো (Tey Adriano) নামে ডাকেন।
মাদ্রি দে দিওসের আমারাকেরি (Amarakaeri) জনজাতি জলাধার সংরক্ষণাগার থেকে আয়রি (Irey) বলেন,
“টেয় মানে শক্তিশালী এবং পৌরুষপূর্ণ (হারাকম্বুট ভাষায়), কিন্তু তার নামে স্প্যানিশ শব্দ আদ্রিয়ানোও রয়েছে। আমি চাই সে শক্তিশালী হোক ও সেই সাথে নিজ সংস্কৃতি সম্পর্কেও যেন অবগত হয় এবং কোথা থেকে আমাদের পথচলা শুরু সে সম্পর্কে লজ্জিত না হয়ে, বরং গর্বের সাথে যেন বলতে পারে আমরা আদিবাসী।”
পেরুর এই প্রচেষ্টাটি “United Nations Internatinal Year of Indigenious Languages”- এর জন্য নাম নিবন্ধিত করার একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ, যেটি সারা বিশ্বের ২৬৮০টি ঝুঁকিপূর্ণ আদিবাসী ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টার অংশ- যার মধ্যে ২১টি ভাষাই পেরুর আদিবাসীদের।
দেশটির প্রায় অপ্রচলিত, জাকারু ভাষার বর্তমানে মাত্র ৫০০ জন লোক আছেন, যারা (South of Lima) পেরুর রাজধানী লিমার দক্ষিণে একটি প্রত্যন্ত পর্বতমালা প্রদেশে বাস করছেন।
তবে পেরু হলো এই মহাদেশের সর্বাধিক ব্যবহৃত নেটিভ ভাষাগুলোরও আবাসভূমি, কোয়েচা, যেটি ইনকা ও ৪০ লক্ষ পেরুভিয়ানের মাতৃভাষা- এবং অন্যান্য ৪ মিলিয়ন অধিবাসী যারা দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দেশগুলোর নাগরিক তারাও এই ভাষাতে কথা বলেন।
কুযকোর স্যাক্রেড ভ্যালির (Cuzco’s Sacred Valley) চিনচেরোর (Chinchero ) ৪৭ বছর বয়সী শিক্ষিকা ন্যান্সি কাল্লানাউপা( Nancy Callañaupa) তাঁর পিতামহ প্রদত্ত নাম ফাল্লকা উইলকানিনা (Phallca Wilkanina) নামটি ব্যবহার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “ফাল্লাচা(Phallcha) নামের অর্থ -একটি পবিত্র ফুল যা আমাদের পাহাড়ে জন্মায় এবং উইলকানিনা (Wilkanina) মানে পবিত্র আগুনের ধারক।”
তিনি বলেন, “এমন একটি নাম আপনাকে শক্তি দেয়,জীবনের দিকে তাকানোর একটি দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।”
কিন্ত অন্যদিকে যখন কেউ আপনাকে ভিন্ন কোনো নাম দেয়,আপনি জানেন না এটি কি, এটি আপনার কাছে অজানা, আপনার শিকড়ের অনুপস্থিতি আপনাকে পীড়া দিবে। আমার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিজের অাদি শিকড়ের সাথে পরিচয় হওয়ার মধ্যেই একজনের বেড়ে উঠার গর্ব নিহিত।”
অনুবাদকঃ জওয়াং রাখাইন
মূললেখাঃ https://www.theguardian.com/world/2019/apr/04/peru-indigenous-names-public-records
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।