জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জাতীয় সংসদের বক্তব্য
1670
জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জাতীয় সংসদের বক্তব্য -১
খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২, ২৫ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন:
মাননীয় স্পীকার সাহেব, আমাদের দেশের জন্য যে সংবিধান রচনা করতে যাচ্ছি, আপনার মাধ্যমে আজকে এই মহান গণপরিষদে দাঁড়িয়ে সেই সংবিধানের উপর আমি কিছু আলোচনা করবো।
কিন্তু তার আগে আমি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে।
আমি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ শাসকের বিরুদ্ধে যারা কারকাগে তিল তিল করে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল, যারা সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ শাসককে এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য হাসি মুখে হাতকড়া পরেছিলেন, হাঁসিমুখে ফাঁসি কাষ্ঠকে বরণ করেছিলেন, তাদেরকে।
১৯৪৭ সালের পর সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ এই দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্য যে কৃত্রিম স্বাধীনতা হয়েছিল, সেই কৃত্রিম স্বাধীনতার পর থেকে যে সব বীর, যে সব দেশপ্রেমিক নিজের জীবন তিলে তিলে চারদেওয়ালের অন্ধাকার প্রকোষ্ঠে উৎসর্গ করেছিলেন স্বাধীকার আদায়ের জন্য, যাঁরা নিজেদের জীবন উপেক্ষা করে স্বাধীকার আদায়ের পথে গিয়েছিলেন, তাঁদের কথা আজকে আমি স্মরণ করছি তাঁদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আজকে এখানে যাঁরা সমবেত হায়েছেন, যে মাননী সংসদ সদস্য-সদস্যাবুন্দ রয়েছেন, তাঁদেরকে আমি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
তারপর আমি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করছি গত এপ্রিল মাসে যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেই কমিটির সদস্য বন্ধুদের। সর্বশেষ আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করছি আমাদের শ্রদ্ধেয় জননেতা, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
আজকে আমার এই গণপরিষদ ভবনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছি।
এই ইতিহাসের পেছনে রয়েচে কত করুণ কাহিনী, কত মানুষের অঝোর ধারায় কান্নার কাহিনী, বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের করুণ আর্তনাদ।
তাই আজকে আমরা সে সব মানুষের কথা স্মরণ করে যদি বিবেকের প্রতি এতটুকু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এগিয়ে যাই, তাহলে এই কথাই আমরা বলবো, আজকে এখানে দাঁড়িয়ে যে পবিত্র শপথ আমরা নিয়েছি সেই পবিত্র শপথ নিয়ে বাংলাদেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য যে পবিত্র দলিল আমরা দিতে যাচ্ছি, সেই পবিত্র দলিলে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা ব্যক্ত হয়েছে কিনা, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা অর্থাৎ তারা যে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে চায়, সে কথা এই সংবিধানে ব্যক্ত হয়েছে কিনা।
তাই মাননীয় স্পীকার সাহেব, আমি আমার বক্তব্যের মধ্যে যে কথা তুলতে যাচ্চি, তাতে যদি কোন ভুলত্রুটি থাকে, তাহলে আমি তা শুধরে নিতে চাই কিন্তু আমি মনে করি, আমি আমার বিবেক থেকে ই এসব কথা বলছি।
আমি কোন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বা কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে কিছুই বলতে যাচ্ছি না। যেহেতু আমি এই বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষেরই একজন হয়ে আজকে গণপরিষদ ভবনে আমার মতামত প্রকাশ করতে যাচ্ছি, সাড়ে সাত কোটি মানুষের নিকট প্রকাশ করতে যাচ্ছি, তাই সংবিধানের উপর আমার কোন চুলচেরা ব্যাখ্যা নেই।
আমার যে মত, আমার যে বক্তব্য, তার সবই দেশের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। যেভাবে আমার দেশকে ভালবেসেছি, আমার জন্মভ’মিকে ভালোবেসেছি, যে দৃষ্টিকোণ থেকে আমি আমার দেশকে, আমার জন্মভ’মিকে, এদেশের কোটি কোটি মানুষকে দেখেছি, সেই দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই আমি খসড়া সংবিধানকে দেখতে যাচ্ছি।
তাই আমি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য বন্দুদের বলছি যে, খসড়া সংবিধান তারা গত জুন মাসে দিতে পারেননি যদিও গত জুন মাসের ১০ তারিখে দেওয়ার কথা ছিল।
আজকে এই অক্টোবর মাসে আমাদের এই খসড়া সংবিদান তারা দিয়েছেন। এই খসড়া সংবিধান আমরা জুন মাসে পাইনি, সেজন্য দুঃখিত নই।
অক্টোবর আর জুন মাসের মধ্যে ব্যবধান মাত্র কয়েটি মাসের। সেজন্য আমার ব্যক্তিগত অভিমত, আমার কোন আপত্তি নাই, কিন্তু এখানে আমার আপত্তি হচ্ছে এই যে, যে কমিটি আমরা এ দেশেরে কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের ভার দিয়েছিলাম, সেই কমিটি-প্রদত্ত সংবিধান আজকে আমাদের হুবহু গ্রহণ করতে হচ্ছে।
এই পরিষদের সামনে আমার বক্তব্য হল, আজকে খসড়া সংবিধান যদি এই এই গণপরিষদ-এ এই ভাবে গৃহীত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আমার যে আপত্তি আছে সে আপত্তি হল, আমার বিবেক , আমার মনের অভিব্যক্তি বলছে, বাংলাদেশেরসাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা এই সংবিধানে নাই।
যদি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা পুরোপুরি এই খসড়া সংবিধানে থাকত, তাহলে আমার আপত্তির কোন কারণ থাকত না।
কিন্তু আজ আমি দেকতে পাচ্ছি, পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ^রী, বুড়িগঙ্গা, মাথাভাঙ্গাঁ, শঙ্খ, মাতামহুরী, কর্ণফুলী, যমুনা, কুশিয়ারা প্রভৃতি নদীতে রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে যাঁরা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বৎসের পর বৎসর ধরে নিজের জীবন তিলে তিলে ক্ষয় করে নৌকা বেয়ে, দাঁড় টেনে চলেছেন, রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে, মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে যাঁরা শক্ত মাটি চষে সোনার ফসল ফলিয়ে চলেছেন, তাঁদেরই মনের কথা এ সংবিধানে লেখা হয়নি।
আমি বলছি আজকে যাঁরা রাস্তায় রাস্তায় রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন, তাদের মনের কথা এই সংবিধানে লেখা হয়নি।
আজকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে আপনারা বাংলাদেশের মেহনতী মানুষের কথা সমাজতন্ত্রের নামে, গণতন্ত্রের নামে বলে চলেছেন।
আমি ক্ষুদ্র মানুষ সংসদীয় অভিজ্ঞতা আমার সেরকম নাই। তবু আমার বিবেক বলছে এই সংবিধানের কোথায় যেন গলদ রয়েছে।
মাননীয় স্পীকার সাহেব সাহেব, আজকে যারা কল-খানায় চাকা, রেলের চাকা ঘুরাচ্ছেন, যাঁদের রক্ত চুইয়ে আজকে আমাদের কাপড়, কাগজ প্রতিটি জিনিষ তৈরী হচ্ছে, সে লক্ষ লক্ষ মেহনতী মানুষের মনের কথা এখানে নাই।
তারপর আমি বলব, সবচেয়ে দুঃখজনক কথা হচ্ছে এই যে, আমাদের মা-বোনদের কথা এখানে নাই। নারীর যে অধীকার সেটা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত।
নারীকে যদি অধিকার দিতে হয়, তাহলে পুরুষ যে অধিকার ভোগ করে, সে অধিকার নারীকেও দিতে হবে। কারণ, তারাও সমাজের অর্ধেক অংশ।
আজ পল্লীর আনাচে কানাচে আমাদের যে সমস্ত মা-বোনকে তাদের দেহ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে, তাদের কথা এই সংবিধানে লেখা হয়নি।
এই সংবিধানে সেই মা-বেনদের জীবনে কোন গ্যারান্টি দেওয়া হয়নি। যদি এটা আদর্শ সংবিধান হতো, যদি এাঁ গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক সংবিধান হতো, তাহলে আজকে যারা নিষিদ্ধ পল্লীতে নিজেদের দেহ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে, তাদের কথা লেখা হত, তাদেরকে এই নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্ত করে আনার কথা থাকত, কিন্তু তাদের মনের অভিব্যাক্তি প্রকাশের কথা, খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার কথা এই সংবিধানে নাই।
এই সংবিধানের মানুষের অধিকার যদি খর্ব হয়ে থাকে, তাহলে আজকে ৩০ লক্ষ শহীদের কথা স্মরণ করে অতীতের ইতিহাস স্মরন আমি বলব যে, ইহিাস কাউকে কোনদিন ক্ষমা করেনি, করবেও না-ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর।
আমরা দেখেছি, ১৯৫৬ সালের সংবিধান যে সংবিধানকে আয়ুব খানের মত একজন সৈনিক লাতি মেরে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে পাকিস্তানের বুকে স্বৈরাচারী সরকার গঠণ করেছিল।
তারপর ১৯৬২ সালে তার মনের মত একটি সংবিধান রচনা করে সেটাকে দেশের বুকে চাপিয়ে দিয়ে ভেবেছিল যে, তার এই সংবিধান এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে। কিন্তু এ দেশের মানুষ সেটা গ্রহণ করেনি।
এই সংবিধানও যদি সে ধরণে হয়ে যায়, তাহলে ইতিহাস কি আমাদের ক্ষমা করবে? তাই ১৯৫৬ সালের সংবিধানের মত. ১৯৬২ সালের সংবিধানের মত এই সংবিধানকেও কি আমরা হতে দিব, আমার বিবেক বলছে, আমরা এমন সংবিধান চাই না।
আমরা এমন সংবিধান চাই, যে সংবিধানে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য একটা পবিত্র দলিল হয়ে থাকবে। সেরকম সংবিধানই আমরা চাই। আমার যা মনের কথা তা আমি ব্যক্ত করলাম
জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জাতীয় সংসদের বক্তব্য -২
খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২, ২৫ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন:
মাননীয় স্পীকার সাহেব, আজকে যে পবিত্র দলিল আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছি, সেটা যেন ১৯৫৬ সালের এবং ১৯৬২ সালের দলিলের মত না হয় এবং সেদিনের মতো করুণ অবস্থা যেন আমাদের জীবদ্দশায় দেখে যেতে না হয়।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, আজকে মানুষের মনে যে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে, আমরা যদি সেই সন্দেহের অবসারন না করি, পরিষদে আমরা যদি তার নিরসন না করি, তাহলে আর কে করবে?
আমাদের পর যাঁরা আসবেন , তাদের সেই একই করুণ অবস্থা হবে- যেমন হয়েছে পূর্ববর্তীদের। সেই করুণ কাহিনীর পুনরাবৃতিত্ত ঘটুক, আমরা তা চাই না।
সংবিধানে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা যদি সত্যিকারভাবে লিপিবদ্ধ হত, তাহলে আজকে নিদর্লীয় সদস্য হিসাবে এই সংবিধানকে অভিননন্দন জ্ঞাপন করতে করতে পারতাম।
আভিনন্দন জ্ঞাপন করতে না পারার অনেক কারণের মধ্যে এক কারণ হল, এখানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি।
মাননীয় স্পীকার, এই দলিলের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ থেকে প্রমাণ পাওয়া যাবে যে, এক হাতে অধিকার দেওয়া হয়েছে এবং অন্য হাতে সেটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, সংবিধানের ১০ নং অনুচ্ছেদ এবং ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:
১০। মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়নুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেম্যে সমাজতান্ত্রিক অর্তনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।
এবং ২০। কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং প্রত্যেক নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে ও পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।
মাননীয় স্পীকার, আজকে এখানে বলতে বাদ্য হচ্ছি, একদিকে হিংসাদ্বেষ বিহীন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে আর অন্যদিকে উৎপাদন যন্ত্র ও উৎপাদন ব্যবস্থাসমূহের মালিকানা, রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায়ূ মালিকানা ও ব্যক্তিগত মালিকানা অইনের দ্বারা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যের আবব্দ করে শোষণেরপথ প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছে।
আমরা এমন একটা ক্ষমতা দেখতে পাচ্ছি, যে ক্ষমতা বলে সরকার একটা লোককে এক পয়সার অধিকারী হতে দেবেন এবং অন্য একটা লোকের জন্য এক কোটি টাকার মালিকানার অধিকার রেখে দেবেন।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, তাই এই দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা, প্রাণের কথা এখানে প্রতিফলন হয়নি বলে আমি মনে করি।
কৃষকের কথা প্রতিফলিত হয়নি, রিক্সাওয়ালার কথা প্রতিফলিত হয়নি, মেথরের কথা প্রতিফলিত হয়নি। আজ এদর সবার জীবন, মেথরের জীবন, খেটে খাওয়া মানুষের জীবন অভিশপ্ত।
তাদের কথা, তাদের দাবী এখানে স্থান পায়নি। এই যে অভিশপ্ত জীবন তাদের কথা সংবিধানে নাই।
তারা যদি আজ জিজ্ঞেসা করে, “তোমরা দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছ- তোমরা তাতে আমাদের কথা কি কিচু লিখেছ?” এই প্রশ্নের আমরা কি উত্তর দেব? যে মেথররা দেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে, আজ আমরা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে তাদেরকে কি আশ্বাসের বাণী শোনাচ্ছি? তাদের অভিশপ্ত জীবনকে সুখী করে তোলার মতো কতটুকু আমরা দিয়েছি, এই সংবিধানে কি প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি? কিছুই না।
আমাকে আজ বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশের যারা সত্যিকারের শোষিত, নিপীড়িত, তাদের কথা এই সংবিধানে নাই। হ্যাঁ, তাঁদের কথা এই সংবিধানে আছে, যারা শোষিত নয়, নির্যাতিত নয়, নিপীড়িত নয়।
মাননীয় স্পীকার, তাই আজকে এখানে দাঁড়িয়ে বলতে হচ্ছে, প্রশ্ন করতে হচ্ছে যে, এটা কাদের সংবিধান? যদি জনগণের সংবিধান না হয়, তাহলে আমরা দেশকে কেমন করে গড়ে তুলব, দেশের মানুষকে কেমন করে ভবিষ্যৎ সুখী জীবনের নির্ভরতা দান করব?
এরপর, বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার কথা বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার অস্তিত্বে কথা আমি খুলে বলছি।
বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার কথা যে এখানে স্বীকৃত হয়নি, সে কথা আমি না বলে পারছি না। আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী।
আমি সেখানকার আদিবাসীর এলাকার লোক। সেখানকার কোন কথাই এই সংবিধানে নাই। যুগে যুগে বৃটিশ শাসন থেকে আরম্ভ করে সবসময় এই এলাকা স্বীকৃত হয়েছিল, অথচ আজকে এই সংবিধানে সেই কথা নাই।
খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি কিভাবে ভুলে গেলেন আমার দেশের কথা-পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা। এটা আমার কাছে বিস্ময়। পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি আদিবাসীর এলাকা। এই এলাকার সেই সব ইতিহাসের কথা, আইনে কথা এই সংবিধানে কোথাও কিছু নাই।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, এই মহান পরিষদে দাঁড়িয়ে আজকে আমি আপনার মাধ্যমে একজন সরল মানুষের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করছি। আমাদের এলাকাটা একটা আদিবাসী এলাকা।
এখানে বিভিন্ন জাতি বাম করে। এখানে চাঙমা, মগ, ত্রিপুরা, লুসাই, বোম, পাংখো, খুমি, মুরুং এবং চাক এইরূপ ছোট ছোট এগারটি আদিবাসী বাস করে। এই মানুষের কথা আমি বলতে চাই।
এই আদিবাসী মানুষের কথা বৃটিশ পর্যন্ত স্বীকার করে নিয়েছিল। পাকিস্তানের মত স্বৈরাচারী গভর্ণমেন্ট আমাদের অধিকার ১৯৫৬ সালের এবং ১৯৬২ সালের সংবিধানে স্বীকার করে নিয়েছিল।
জানি না আজকে যেখানে গণতন্ত্র হতে যাচ্ছে, সমাজতন্ত্র হতে যাচ্ছে, সেখানে কেন আপনারা আমাদের কথা ভুলে যাচ্ছেন?
পৃথিবীর অনেক দেশেই সমাজতন্ত্র হয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নেও আদিবাসীদের আধিকার আছে।
পৃথিবীর আর একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত- আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র – আমরা সেখানে দেখি, তাদের সংবিধানে বিভিন্ন জাতিকে অধিকার দেওয়া হয়েছে জানি না, আমরা কি অপরাধ করেছি?
আমি যতদূর বুঝতে পারি, আপনার মাধ্যমে আমি মাননীয় সদস্যদের জানাচ্ছি, আমি একজন মানুষ। এমন একজন মানুষ, যারা যুগ যুগ ধরে অধিকার থেকে বঞ্চিত।
সেই জাতির প্রতিনিধি আমি। আমার বুকের ভিতর কি জ্বালা, তা আমি বুঝাতে পারবো না। সেই জ্বালা আর কারোর ভিতর নাই। সেই জ্বালার কথা কেউই চিন্তা করেননি।
অস্বীকার করা উচিৎ নয়। কিন্তু সেই সব জাতির কথা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের এই খসড়া সংবিধানে নাই।
জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জাতীয় সংসদের বক্তব্য -৩
খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২, ২৫ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন:
মাননী স্পীকার সাহেব, ১৯৪৭ সালে কেউ কি চিন্তা করেছিলেন যে, পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে যাবে? জনাব মোঃ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, ÒPakistan has come to stay” নিয়তি অদৃষ্ট থেকে সেদিন নিশ্চয় উপহাস ভরে হেসেছিলেন।
সেই পাকিস্তান অধিকার হারা বঞ্চিত মানুষের বুকের জ্বালায়, উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। আমি আমার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করছি।
আমি একজন নির্যাতিত অধিকার হারা মানুষ। পাকিস্তানের সময় দীর্ঘ ২৪ বছর পর্যন্ত একটি কথাও বলতে পারিনি। আমাদের অধিকারকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া হয়েছিল।
সেই অধিকার আমরা পেতে চাই এই চাওয়া অন্যায় নয়। সেই অধিকার এই সংবিধানের মাধ্যমে দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মত যাতে সেই অধিকার আমরাও পেতে পারি, সেই কথাই আজকে আপনার মাদ্যমে পরিষদের নিকট নিবেদন করতে চাচ্ছি।
সেই অধিকারের কথাই আমি বলতে চাচ্ছি। মানুষের মত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আমাদের হয়নি- যেমন দেওয়া হয়নি বায়লাদেশের লক্ষ লক্ষ নিপীড়িত মানুষকে।
তাই আমি আমার কথা যদি আপনার মাদ্যমে মাননীয় সদস্য – সদস্যাদের ভাই-বোনদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে পারি, তাহলে আমি মনে করব, আমার অভিব্যাক্তি সার্থক হয়েছে।
কারণ, আমার যে দাবী সেই দাবী আজকে নয়। এই দাবী করেছি স্বৈরাচারি আয়ূব ও স্বৈরাচারী ইয়াহিয়ার সময়ও। আমরা রাজনৈতিক দিক দিয়ে পেছনে পড়ে রয়েছি। অগ্রসর জাতির মত শক্তিশালী দল গঠণ করে দাবী আদায় করতে পারছি না।
কারণ এতে যতটা রাজনৈতিক সচেনতার দরকার, ততটা রাজনৈতিক সচেনতার অভাব রয়েছে আদিবাসীদের মধ্যে, আমাদের মধ্যে।
মাননী স্পীকার সাহেব, আজকে তাই কথা প্রসঙ্গে এই কথা বলতে চাচ্ছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বদৌলতেই আজকে বৈদ্যুতিকবাতি জ্বলছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জল বিদ্যুতের বদৌলতে কলখানা চলছে।
অথচ সেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে শোষণ করা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে, যারা দেশকে গড়েছে, পাকিস্তানের শাসকরা তাদের মানুষের মতো বাঁচার অধিকার দেয়নি।
আমার বক্তব্য হল, আজকে আমরা এই সংবিধানে কিছুই পাইনি। আমি আমার বক্তব্য হয়তো সঠিকভাবে বলতে পারছি না, কিন্তু আমার বক্তব্যের মধ্যে কোন অপ্রাসাঙ্গিক কিছুই নাই।
আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নিয়ে আমাদের জাতির পিতা শ্রদ্ধেয় বঙ্গবন্ধুর কাছে যুক্তি স্মারকলিপি দিয়েছিলাম।
এই স্মারকলিপিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জন্য গণতান্ত্রিক শাসনের কথা বলেছিলাম, আমাদের আদিবাসীদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক স্বায়ত্ব-শাসনের কথা বলেছিলাম।
এই সংবিধানে আমরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা বঞ্চিত মানব। আমাদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এই সংবিধানের বাইরে কথা আমি বলতে চাচ্ছি না।
আমার পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা সংবিধানে বলা হয়নি। এই জন্য এই কথা বলছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটা ইতিহাস। এই ইতিহাসকে অস্বীকার করা হয়েছে।
আমি জানিনা, আমাদের কথা তারা কেমন করে ভুলে গেলেন? আমরাও যে বাংলাদেশের সংগে এক হয়ে গণবাংলার সংগে জড়িয়ে থাকতে চাই, সে কথা তারা কি ভুলে গেছেন?
আমাদের এই সংবিধানের খসড়া তৈরী করার সময় তারা অন্যান্য দেশের সংবিধান দেখেছে। তাঁরা দেখেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস। তাঁরা দেখেছেন বাংলাদেশের এক কোণায় রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। কিন্তু কিসের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসকে এখানে স্থান দেওয়া হয়নি?
আমরা জানি, ইতিহাসকে বিকৃত করা যায় না। কিন্তু আমরা কি দোষ করেছি? কেন আমরা অভিশপ্ত জীবন যাপন করবো? পাকিস্তানের সময়ে ছিল আমাদের অভিশপ্ত জীবন। আজকে দেশ স্বাধীন হয়েছে।
এখানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র হতে চলেছে। আমাদের অধিকার তুলে ধরতে হবে এই সংবিধানে। কিন্তু তুলে ধরা হয়নি। যদি আমাদের কথা ভুলে যেতে চান, যদি ইতিহাসের কথা ভুলে যেতে চান, তাহলে তা আপনারা পারেন। কিন্তু আমি পারি না। আদিবাসীরা কি চায়? তারা চায় স্বাধীন অধিবেশনে তাদের সত্যিকারের নিশ্চয়তা।
মাননীয় ডেপুটি স্পীকার সাহেব, তাই আজকে বঞ্চিত মানুষের মনের কথা আমি আপনার মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই। সেই বঞ্চিত মানুষের একজন হয়ে আমি বলতে চাচ্ছি, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের যারা নির্যাতিত সেই বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে, সেই পাকিস্তান আমলের যে নির্যাতিন ভোগ করেছি সেই নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে চাই। আমরা চাই মানুষের মত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে।
এই খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি আমাদেরকে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। এই খসড়া সংবিধানে আমাদের অবহেলিত অঞ্চলের কোন কথা নাই।
তাই আজকে আমি বলতে চাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কাছে কি অপরাধ করেছে, তা আমি জানি না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম হল বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার ইতিহাস। কেমন করে সেই ইতিহাস আমাদের সংবিধানের পাতায় স্থান পেলনা, তা আমি ভাবতে পারি না।
সংবিধান হচ্ছে এমন একটা ব্যবস্থা, যা অনগ্রসর জাতিকে, পিছিয়ে পড়া নির্যাতিত জাতিকে, অগ্রসর জাতির সংগে সমান তালে এগিয়ে নিয়ে আসার পথ নির্দেশ করবে। কিন্তু বস্তুতঃ পক্ষে এই পেশকৃত সংবিধানে আমরা সেই রাস্তার সন্ধান পাচ্ছি না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা ইতিহাস আছে এবং সেই ইতিহাসকে কেন এই সংবিধানে সংযোজিত করা হল না? যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার স্বীকৃত না হয়, তাহলে এই সংবিধান তাদের কি কাজে লাগবে।
আমি একজন মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করেছি, যে জন্মভূমিতে আজন্ম লালিত পালিত হয়েছি, সেই জন্মভূমির জন্য আমার যে কথা বলার রয়েছে, সে কথা যদি প্রকাশ করতে না পারি, যদি এই সংবিধানে তার কোন ব্যবস্থাই দেখতে পাই না, তাহলে আমাকে বলতে হবে যে, বঞ্চিত মানুষের জন্য সংবিধানে কিছুই রাখা হয়নি।
বঞ্চিত মানুষের সংবিধান এাঁ কিছুতেই হবে না এবং মানুষ এটাকে গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করবে।
তাই আমার কথা শেষ করার আগে আমার কথাগুলি সংক্ষিপ্ত আকারে বলতে চাই, এই সংবিধানে মানুষের মনের কথা লেখা হয়নি। কৃষক, শ্রমিক, মেথর, কামার, কুমার, মাঝিমাল্লার জন্য কোন অধিকার রাখা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণের অধিকারের কথাও সংবিধানে লেখা হয়নি।
জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জাতীয় সংসদের বক্তব্য -৪
খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২, ২৫ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন:
গণপরিষদে খসড়া সংবিধানকে দফাওয়ারী বিবেচনা কালে ৩১ অক্টোবর, ১৯৭২ ইং আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল রাজ্জাক ভূঁইয়া সংবিধান বিলের ৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে সংশোধনী প্রস্তাব আনেন।
সংশোধনী প্রস্তাবটি হলো- ৬। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে, “বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙ্গালী বলিয়াপরিচিত হইবে।” উক্ত সংশোধনী প্রস্তাবের বিরুদ্বে প্রতিবাদ জানান এভাবে-
মাননীয় স্পীকার সাহেব, জনাব আবদুল রাজ্জাক ভূইয়া সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন যে, বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালী বলে পরিচিত হবেন।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হল, সংবিধান বিলে আছে, “বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে” এর সংগে সুস্পষ্ট করে বাংলাদেশের নাগরিকগণকে ‘বাঙালী’ বলে পরিচিত করবার জন্য জনাব আবদুল রাজ্জাক ভূঁইয়ার প্রস্তাবে আমার একটু আপত্তি আছে যে, বাংলাদেশের নাগরিকত্বের যে সংজ্ঞা, তাতে করে ভালভাবে বিবেচনা করে তা যথোপযুক্তভাবে গ্রহণ করা উচিৎ বলে মনে করি।
“আমি যে অঞ্চল থেকে এসেছি, সেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা যুক যুগ ধরে বাংলাদেশে বাস করে আসছে। বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় বাঙালীদের সঙ্গে আমরা লেখাপড়া শেখে আসছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা ওতঃপ্রতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের কোটি কোটি জনগণের সঙ্গে আমরা আমরা ওতঃপ্রতভাবে জড়িত। সবদিক দিয়েই আমরা একসঙ্গে এক যোগে বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমি একজন চাঙমা। আমার বাপ দাদা, চৌদ্দ পুরুষ- কেই বলেন নাই, আমি বাঙালী।”
আমার সদস্য-সদস্যা ভাই-বোনদের কাছে আমার আবেদন, আমি জানি না, আজ আমাদের এই সংবিধানে কেন বাঙালী বলে পরিচিত করতে চায়।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, আমদিগকে বাঙালি জাতি বলে কখনো বলা হয় নাই। আমরা কোনদিনই নিজেদের বাঙালি বলে মনে করি নাই। আজ যদি এই সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধানের জন্য এই সংশোধনী পাশ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের এই চাঙমা জাতির অস্তিত্ব লোপ পেয়ে যাবে।
আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা আমাদেরকে বাংলাদেশী বলে মনে করি এবং বিশ্বাস করি। কিন্তু বাঙালী বলে নয়।
মাননীয় স্পকিার, আমাদের অধিকার সম্পর্ণরূপে খর্ব করে ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধিত আকারে গৃহীত হল। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রতিবাদ স্বরূপ আমি অনির্দ্দিষ্ট সময়ের জন্য গণপরিষদ বৈঠক বর্জন করছি।”
জুম্ম সংবাদ বুলেটিন (১০ই নভেম্বর ৮৩ স্মরণে বিশেষ সংখ্যা) বুলেটিন নং- ২৩, ৫ম বর্ষ, ১০ই নভেম্বর ৯৫, শুক্রবার
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।