ক্যাপ্টেন লুইন ও ঔপনিবেশিক জাদু বাস্তবতা
2634
[১]
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইতিহাস সম্পর্কে একটু হলেও খোঁজখবর রাখেন, এমন বহুজনের কাছেই টি. এইচ. লুইন একটি সুপরিচিত নাম। তিনি ছিলেন ১৮৬০ সালে সৃষ্ট সীমান্ত জেলাটির প্রথম ডেপুটি কমিশনার, যে পদে তিনি নিয়োগ পান সেখানে পুলিশ প্রধান হিসাবে যোগ দেওয়ার পরেই।
তাঁর আগেও অবশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসক হিসাবে আরো দু’জন দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তবে তাঁদের পদবী ছিল ‘সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ হিল ট্রাইবস’। লুইনের বরাতে আমরা জানতে পারি, তাঁর এই দুই পূর্বসূরীর প্রথম জন (যাঁকে তিনি শুধু ‘ক্যাপ্টেন এম’ নামে অভিহিত করেছেন) নাকি পরিচিত ছিলেন ‘পাগলা সাহেব’ নামে, যে নামডাকের সাথে জড়িয়ে ছিল লুসাই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দেখানো তাঁর দুঃসাহসিক কীর্তিকলাপসহ বিভিন্ন চমকপ্রদ কর্মকান্ডের কাহিনী।
তবে সেই পাগলা সাহেবকে ছাড়িয়ে আরো অনেক বড় জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন লুইন নিজেই, পার্বত্য চট্টগ্রামে তাঁর নয় বছর দায়িত্ব পালনকালে।
উল্লেখ্য, এই এলাকার নবনিযুক্ত পুলিশ প্রধান হিসাবে কাজে যোগদানের জন্য তিনি তখনকার জেলা সদর চন্দ্রঘোনায় এসে পা রেখেছিলেন এখন থেকে ঠিক দেড়শত বছর আগে, ১৮৬৬ সালের ১৫ই এপ্রিল।
আবার ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পূর্ণ হয়েছে তাঁর মৃত্যুর একশত বছর। কাজেই উভয় বিচারেই আমাদের সামনে একটা ভালো উপলক্ষ হাজির হয়েছে লুইনের জীবন ও কর্মের দিকে ফিরে তাকানোর জন্য, সেই সাথে তাঁর সমসাময়িক যেসব ঔপনিবেশিক বাস্তবতা এখনো আমাদের মাঝে বহাল তবিয়তে আছে, সেগুলিও খতিয়ে দেখার জন্য।
রাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত ছিল, সেই বিশাল প্রেক্ষাপটে দেখলে আলাদা করে নজরে পড়ার মত কোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হয়ত লুইন ছিলেন না।
কিন্তু আমরা যদি ছোট পরিসরে, পার্বত্য চট্টগ্রামের মত জায়গার অধিবাসীদের দৃষ্টিকোণ থেকে, তাঁর ও তাঁর সময়কালের দিকে তাকাই, তাহলে ভালো করে জানার বোঝার অনেক কিছুই রয়েছে।
তাছাড়া আঠার বছর বয়সে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন শিক্ষানবিশ সামরিক কর্মকর্তা হিসাবে ব্রিটিশ ভারতে পা রাখা টমাস হার্বার্ট লুইন (জন্ম এপ্রিল ১, ১৮৩৯ – মৃত্যু ফেব্রুয়ারি ১১, ১৯১৬) কিভাবে দুই দশক না যেতেই একজন জীবন্ত কিংবদন্তী হয়ে ওঠেন, সেটা এমনিতেও এক চমকপ্রদ কাহিনী বটে।
উল্লেখ্য, মাত্র সাতাশ বছর বয়সে পার্বত্য চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর বেশ দাপট ও চতুরতার সাথে স্থানীয় সামন্ত শাসকদের অধিপতি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন সদ্য ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত লুইন।
একই সাথে তখনো সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের আওতায় আসেনি, এমন কিছু জনগোষ্ঠীকে বশ বা দমন করার কাজেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এসব কাজে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা প্রদর্শনের পাশাপাশি স্থানীয়দের ভাষা ও রীতিনীতি শিখে তাদের মন জয় করার চেষ্টাসহ অন্যান্য কৌশলও তিনি অবলম্বন করেছিলেন।
এগুলির মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ছিল জাদুর ব্যবহার, অর্থাৎ গুপ্ত কলাকৌশল-নির্ভর ভেল্কিবাজি, যেসবের কিছু চমকপ্রদ বিবরণ তিনি নিজেই লিখে গেছেন (Lewin 1870)।
কিছু ক্ষেত্রে সম্ভবত ভাগ্যও তাঁর সহায় ছিল, যার ফলে একাধিকবার রক্ষা পেয়েছিলেন সম্ভাব্য মৃত্যুসহ বিভিন্ন বিপদের হাত থেকে। সব মিলিয়ে কালক্রমে তিনি পরিণত হন একজন জীবন্ত কিংবদন্তীতে (Tripura 2014), এবং লুসাইদের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন থাংলিয়ানা হিসাবে (Whitehead 1993), যে নামে তাঁকে এখনো মনে রেখেছেন মিজোরামের অধিবাসীরা।
[২]
এই পটভূমিতে ক্যাপ্টেন লুইনের ‘জাদুকরি’ শাসনামলের বিবিধ কাহিনীসহ তাঁর সময়কাল থেকে চলে আসা নানান ধ্যান-ধারণা, আইন-কানুন, আচার-প্রথা প্রভৃতি – যেগুলি ‘ঔপনিবেশিকতার ভূত’ হয়ে এখনো আমাদের মাঝেই আছে – সব কিছুকে একত্রে বোঝানোর জন্য আমরা ব্যবহার করছি ‘ঔপনিবেশিক জাদু বাস্তবতা’ কথাটি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে উল্লিখিত ঔপনিবেশিক জাদু বাস্তবতা রচনার ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন লুইনের ভূমিকা কি ছিল, তা জানার জন্য গবেষণার বহু উপাদান বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে, যেগুলির মধ্যে রয়েছে তাঁর নিজের লেখা একাধিক প্রকাশিত গ্রন্থ (বিশেষ করে Lewin 1869, 1870, 1885, 1912) এবং আর্কাইভে সংরক্ষিত তাঁর অপ্রকাশিত চিঠিপত্র ও অন্যান্য পারিবারিক দলিল।
এছাড়া এখনো অনেকটাই গবেষকদের নজরের বাইরে রয়ে গেছে, লোকমুখে প্রচলিত এমন বেশ কিছু কাহিনী থাকতে পারে যেগুলিতে হয়তবা লুইনের কথা বা তাঁর সময়কালের ছাপ রয়েছে। আর ব্রিটিশ শাসনামলে প্রচলিত বা প্রবর্তিত যেসব আইন, প্রথা ও ধ্যান ধারণা কোনো না কোনো আকারে এখনো বহাল রয়েছে, সেগুলিতো আছেই।
এগুলির মধ্যে যেসব বিষয় নিয়ে আমি নিজে আগে কিছুটা লেখালেখি করেছি, সেগুলির মধ্যে রয়েছে ‘পার্বত্য উপজাতি’ বর্গ তথা পাহাড়ী-বাঙালি বিভাজনের সৃষ্টি (Tripura 1992), জুমচাষ সংক্রান্ত ধ্যান-ধারণা ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালার ইতিহাস (প্রশান্ত ত্রিপুরা ও অবন্তী হারুন ২০০৩; প্রশান্ত ত্রিপুরা ২০১৫ক), এবং জুমিয়া পটভূমি থেকে সমসাময়িক জুম্ম পরিচয়ের উৎপত্তি (প্রশান্ত ত্রিপুরা ২০০০; Tripura 2013) প্রভৃতি।
এই প্রেক্ষাপটে আগের বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক আলোচনার পুনরাবৃত্তির বদলে এ নিবন্ধে আমি জোর দিয়েছি নূতন তথ্য ও বিশ্লেষণ যোগ করার উপর। এ প্রসঙ্গে বিশেষ করে উল্লেখ করব ত্রিপুরা ও বাঙালিদের সম্পর্কে ক্যাপ্টেন লুইনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর কথা, যা তিনি ঢালাওভাবে একাধিক জায়গায় নিজেই উল্লেখ করেছিলেন সুনির্দিষ্ট কোনো যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই।
কেন তিনি এমনটি করেছিলেন? এটিই প্রথম টীকায় দেওয়া আমার নিবন্ধের মূল শিরোনামে উল্লিখিত আমার ‘পুরাতন প্রশ্ন’। … লুইনের স্বঘোষিত বাঙালি-বিদ্বেষ সম্পর্কে আগে যে ব্যাখ্যা আমি দাঁড় করিয়েছিলাম (Tripura 1992)[৩], তা ভুল না হলেও পূর্ণাঙ্গ ছিল না বলে এখন আমার মনে হচ্ছে, কারণ নাকের ডগায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্য-কারণের সম্ভাবনা আগে আমার নজর এড়িয়ে গিয়েছিল, যা বিবেচনায় নিয়ে প্রশ্নটির একটি নূতন উত্তর আমি এ নিবন্ধে পেশ করব।
টম লুইনের থাংলিয়ানা হয়ে ওঠার সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করে মাত্র আঠার বছর বয়সে ‘বেঙ্গল আর্মি’তে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতে আসা টমাস হার্বার্ট লুইন কিভাবে পরবর্তী দুই দশকের মধ্যে কিংবদন্তীর থাংলিয়ানাতে পরিণত হন, সেই বৃত্তান্ত আমরা সংক্ষেপে পর্যালোচনা করব নিবন্ধের এই অংশে।
এক্ষেত্রে আমরা মূলত নির্ভর করব লুইনের নিজের বয়ানের উপর, যার উৎস হচ্ছে ১৮৮৫ সালে প্রথম প্রকাশিত তাঁর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ A Fly on the Wheel or How I Helped to Govern India (Lewin 1885)।
এই গ্রন্থে লেখক মূলত ১৮৫৭ থেকে ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতে তাঁর কর্মজীবনের বর্ণনা তুলে ধরেছেন দিনপঞ্জী-নির্ভর স্মৃতিচারণের ভিত্তিতে।
এতে তিনি ব্রিটিশ ভারতে তাঁর কর্মজীবনের প্রথম ষোল বছরের যে বিবরণ তুলে ধরেছেন, সেটিকে আমরা মোটা দাগে দুই পর্বে ভাগ করে দেখতে পারি, প্রথমটি হল সিপাহী বিদ্রোহ চলাকালে ভারতে আগমনের পর কালক্রমে তাঁর পুরোদস্তুর একজন ‘সাহেব’ হয়ে ওঠা, এবং দ্বিতীয়টি হল ১৮৬৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসক পদে কাজ শুরু করার পর ‘থাংলিয়ানা’ নামের এক জীবন্ত কিংবদন্তীতে তাঁর রূপান্তর, যে প্রক্রিয়ার পেছনে অবদান ছিল তাঁর বাকচাতুর্য, জাদু এবং অন্যান্য ঔপনিবেশিক ছলাকলার।
- বিদ্রোহের পটভূমিতে সাহেবিয়ানার অনুশীলন, ১৮৫৭-১৮৬৪
- বাকচাতুর্য, জাদু ও অন্যান্য ঔপনিবেশিক ছলাকলা, ১৮৬৫-১৮৭৩
- [এই অংশগুলির জন্য প্রকাশিতব্য প্রবন্ধ দেখুন; প্রাসঙ্গিক সূত্রের জন্য প্রথম টীকা দেখুন]
প্রসঙ্গ: ঔপনিবেশিক ভূত
‘ভূত’ শব্দটির একটি অর্থ হল ‘প্রেতাত্মা’, এবং এই অর্থে, প্রতীকী ভাবে, ঔপনিবেশিক যুগের অনেক ‘প্রেতাত্মা’ আমাদের মাঝে বিচরণ করছে।
অন্যদিকে, ‘ভূত’ শব্দটির আরেকটি অর্থ হল ‘অতীত’, এবং এই অর্থে ঔপনিবেশিক ভূত যে নানাভাবে বর্তমানে ক্রিয়াশীল রয়েছে, তা ইতিহাসমনস্ক কোনো পাঠককে নূতন করে বোঝানোর দরকার পড়ে না।
প্রতীকী প্রেতাত্মার সাথে তুলনীয় ঔপনিবেশিক ভূতের উদাহরণ হিসাবে প্রথমেই আমরা উল্লেখ করব দুটি জাতিবাচক নাম – সেন্দুজ ও কুকি – যাদের কথা পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক বিভিন্ন লেখালেখিতে এখনো পাওয়া যায়।
বাস্তবে যে এ দুটি নামের কোনো জাতি কখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে ছিল না, এখনো নেই, এ তথ্য অনেকে হয়ত জানেন, কিন্তু অনেকের আবার এসব নিয়ে কোনো ধারণা নেই, ফলে নামগুলি এখনো এক ধরণের প্রেতাত্মাসুলভ অস্তিত্ব ধরে রেখেছে লিখিত সাহিত্যে। বাংলায় ‘সেন্দুজ’ নামটা চালু হয়েছে ইংরেজিতে Shendu (বা ক্ষেত্রবিশেষে Shendoo) হিসাবে লুইনসহ উনবিংশ শতকের ব্রিটিশ প্রশাসকদের উল্লেখ করা একটি জাতির জন্য (যারা লুসাইদের কাছে ‘লাখের’ নামে পরিচিত ছিল)।
খুব সম্ভবত ইংরেজিতে বহুবচনবাচক Shendus/Shendoos শব্দটিকে পুরো নাম ধরে নিয়ে বাংলাভাষী কোনো লেখক প্রথমে ভুলে ‘সেন্দুজ’ নামটির প্রবর্তন করেন। এক্ষেত্রে আমার সন্দেহের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে আবদুস সাত্তারের নাম, যাঁর আরণ্য জনপদে গ্রন্থে সেন্দুজ নামটি রয়েছে (আবদুস সাত্তার ২০১২)।
পাকিস্তান আমলে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৬ সালে, ক্যাপ্টেন লুইন পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসক হিসাবে চন্দ্রঘোনায় পা রাখার ঠিক একশত বছর পর।
উল্লেখ্য, এই নূতন পদে নিয়োগ পাওয়ার কয়েক মাস আগে লুইন নিজে ‘শেন্দু’দের রাজ্যে ঘুরে এসেছিলেন বেশ ঝুঁকি নিয়ে এবং এই সূত্রে তাঁর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একাধিক গ্রন্থে শেন্দুদের কথা আছে।
তিনি নিজে অবশ্য কোথাও বলেননি যে শেন্দুরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতি। বরং তিনি এটুকুই বলেছিলেন যে, লুসাইদের মত শেন্দুরাও ব্রিটিশ শাসিত পার্বত্য চট্টগ্রামে হামলা চালাত।
কিন্তু সেটি ভালো করে না জেনেই আবদুস সাত্তার দিব্যি ‘সেন্দুজ’দের ঢুকিয়ে দিলেন আরণ্য জনপদে গ্রন্থে, এবং নিজের অজ্ঞতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ অবস্থায় বিজ্ঞের মত লিখে দিয়েছিলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতির মধ্যে সেন্দুজরাই সম্ভবত সবচাইতে বেশি আদিম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
[শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে আধুনিক সভ্যতার আওতায় আসার পরিবর্তে] তারা গহীন অরণ্যে আদিম অবস্থায় আটকে থাকতেই অধিকতর ভালবাসে” (আবদুস সাত্তার ২০১২: ১৮৯)। সেই যে শুরু, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের সাহিত্য থেকে ভুল করে বাংলায় আমদানি করা ‘সেন্দুজ’ নামক প্রেতাত্মা আরো ব্যাপকভাবে বিচরণ করতে শুরু করল, এবং পেল নূতন জীবন।
যেমন, আবদুস সাত্তারের চালু করা ভুলের সাথে নিজের কিছু কল্পনা মিশিয়ে আরেকজন লেখক যোগ করেছেন নিচের কথাগুলি, বাংলা একাডেমি থেকে শিশুদের জন্য প্রকাশিত একটি গ্রন্থে, “সেন্দুজরা বান্দরবন, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলার গভীর জঙ্গলে বসবাস করে” (খাজা কামরুল হক ১৯৯৫:২২)।
এভাবেই সংশ্লিষ্ট লেখকদের অজ্ঞতার গহীন অন্ধকারে সাক্ষাত পাওয়া ঔপনিবেশিক ভূতগুলি এখন বাংলাদেশের কয়জন মানুষের মনোজগতে বিচরণ করছে, কে জানে!
সেন্দুজদের মতই ‘কুকি’ হল আরেকটি ‘ঔপনিবেশিক ভূত’, যেটির সাক্ষাত আমরা পাই অনেকের লেখালেখিতে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে এই নামে একক কোনো জাতি ছিল না, বরং এটি দিয়ে যে লুসাইসহ ব্রিটিশ শাসনের আওতাবহির্ভূত বিভিন্ন স্বাধীন গোষ্ঠীকে একত্রে বোঝানো হত, এটি লুইনদের কাছে স্পষ্ট ছিল। তাঁরা সেটি বিভিন্ন জায়গায় অনেকবার উল্লেখও করেছেন।
কিন্তু আবারো আবদুস সাত্তারের মত লেখকেরা বিষয়টি ভালো করে না জেনেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদিবাসী জাতির তালিকায় ঢোকালেন কুকি নামটি।
উল্লেখ্য, কুকিদের সম্পর্কে তথ্যের একটি উৎস হিসাবে আবদুস সাত্তার উল্লেখ করেছেন লুইনকে (আবদুস সাত্তার ২০১২:৯৯), আবার বাহ্যত আবদুস সাত্তারকে উৎস হিসাবে ব্যবহার করে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত একটি গ্রন্থে কুকিদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা নাকি বান্দরবানে বাস করে, এবং জঙ্গলে চলাফেরার সময় তারা যখন কেউ ‘কু’ শব্দ করে ডাক দেয়, অন্যরা নাকি ‘কি’ শব্দ করে উত্তর দেয়, যার কারণে তাদের নাম হয়েছে কুকি (খাজা কামরুল হক ১৯৯৫:১৬)!
এ ধরনের উদ্ভট ও ভৌতিক ধারণার দৌড় কতদূর হতে পারে, তা জানা যাবে বর্তমানে তথ্য কমিশনার হিসাবে দায়িত্বে নিয়োজিত অধ্যাপক খুরশীদা বেগমের একটি লেখার নিম্নরূপ উদ্ধৃতিতে: ‘বর্তমান ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীতে’ চলছে এমন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করার পর এক জায়গায় তিনি লিখছেন, “এক কথায় উলঙ্গ-অর্ধ উলঙ্গ থাকার অভ্যাসে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। মনের ভাব প্রকাশে বন-জঙ্গলে ভাষার ঘাটতিতে [তাঁরা আর] “কু-কু/কি-কি” করে শব্দ উচ্চারণ করেন না।”[৪]
লুইনের বাঙালি-বিদ্বেষের নূতন ব্যাখ্যা
[এই অংশটি এখানে উহ্য রাখা হল। আগ্রহী পাঠক পূর্ণ নিবন্ধ দেখে নিতে পারেন সেটি প্রকাশিত হলে। বিস্তারিত তথ্য প্রথম টীকাতে রয়েছে]
উপসংহার: কিংবদন্তীর মহারথী বনাম রথের চাকায় বসা মাছি
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিজোরামের মত জায়গার প্রেক্ষাপটে ক্যাপ্টেন লুইন ছিলেন – এখনো অনেকটা আছেন – একজন কিংবদন্তীর নায়ক, মহারথী।
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠতে পারে, আজ থেকে দেড়শত বছর আগে টমাস হার্বার্ট লুইনের বদলে অন্য কেউ যদি চন্দ্রঘোনায় গিয়ে উপস্থিত হতেন পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়া ব্রিটিশ প্রশাসক হিসাবে, সেখানকার ইতিহাস কি খুব একটা ভিন্ন হত?
লুইনের অনুপস্থিতিতে লুসাই তথা মিজোদের মধ্যে হয়ত ‘থাংলিয়ানা’ নামের কারো কাহিনী চালু থাকত না, কিন্তু তাতে কি তাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস অন্য কোনোদিকে মোড় নিত? পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্নে ক্ষমতা নেওয়া একজন প্রশাসক ত্রিপুরা-বিদ্বেষী না হলে কি সেখানে তাদের রাজনৈতিক অবস্থানে খুব একটা হেরফের হত? লুইনের বদলে অন্য কেউ ডিসি হলে কি বোমাং রাজপরিবার বা চাকমা রাজপরিবারের ইতিহাস ভিন্ন হত? এসব প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া যায় না, কিন্তু একভাবে দেখলে এগুলি হচ্ছে আরো সাধারণ একটি প্রশ্নেরই বিভিন্ন রূপ।
সেটা হল, ইতিহাসে একজন ব্যক্তির ভূমিকা কতটুকু? মোটা দাগে আমরা বলতে পারি, ১৮৬৬ সালে লুইনের বদলে অন্য কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসক হয়ে চন্দ্রঘোনায় হাজির হলেও সে অঞ্চলের ইতিহাস হয়ত খুব একটা ভিন্ন হত না।
এক অর্থে লুইন নিজেও এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন, যাঁর ইঙ্গিত মেলে তিনি যেভাবে নিজের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থের শিরোনাম ঠিক করেছেন তাতে। ইংরেজি A Fly On the Wheel কথাটি একটি বাগ্ধারা বিশেষ, যেটির মূলে রয়েছে ঈশপের একটি গল্প।
সেটি সংক্ষেপে এরকম: স্টেডিয়ামে রথের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। অনেক রথের চাকা ও ততোধিক ঘোড়ার খুরের ধাক্কায় চারিদিকে শুধু ধূলা উড়ছে। কিন্তু কোনো এক রথের চাকায় বসা একটি মাছি তার কারণে এসব হয়েছে ধরে নিয়ে মনে মনে নিজেকে বাহবা দিচ্ছে, ‘আমি কেমন একটা ধূলিঝড় তৈরি করলাম!’
লুইনের বইতে যেসব প্রসঙ্গ খুব একটা আলোচিত হয় নি, সেগুলি বিবেচনায় নিলে তাঁর অনেক বক্তব্য ও পদক্ষেপ ভিন্ন আলোয় আমাদের সামনে হাজির হয়। যেমন, যে অঞ্চলে তিনি তাঁর নামডাক কুড়িয়েছিলেন, সেটা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চল, যার পাশেই ছিল বার্মা, যা একদা ছিল একসময় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সবচাইতে শক্তিশালী সাম্রাজ্য।
এই বার্মার সাথে ব্রিটিশদের তিন দফা যুদ্ধ হয়েছিল, প্রথমবার ১৮২৪-২৬ সালে, যার পর বার্মা অধিকৃত মণিপুর, আসাম ও আরাকান (যেগুলি আগে ছিল স্বাধীন রাজ্য) চলে আসে ব্রিটিশদের দখলে।
এরপর দ্বিতীয় দফা যুদ্ধ হয় ১৮৫২-৫৩ সালে, লুইনের ভারত আগমনের মাত্র চার বছর আগে, যখন ব্রিটিশরা বার্মার একটা বড় অংশ দখলে নেয়। বাকি যেটুকু ছিল, সেটি ব্রিটিশরা দখল করে নেয় ১৮৮৫ সালের তৃতীয় যুদ্ধে, A Fly on the Wheel প্রথম প্রকাশের বছর।
এসব বৃহত্তর ঘটনাবলীর আলোকে দেখলে বিভিন্ন পার্বত্য জাতির প্রতি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করা, তাদের অনেকের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, চাকমা রাণী ও বোমাং রাজাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা ইত্যাদি বিষয়কে লুইনের একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তাধারার ফসল হিসাবে আর ব্যাখ্যা করা যায় না।
এসব বিষয় তিনি সরাসরি তাঁর বইতে উল্লেখ না করলেও, নিজের বলা গল্পকে যে তিনি রথের চাকায় বসা একজন মাছির চোখে দেখা ঘটনাবলী হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ।
তাঁর মনোজগতের ‘আদিম পাহাড়ি’দেরকে তিনি ‘নিজের লোক’ হিসাবে চিন্তা করতেন, নিজেকে ভাবতে শুরু করেছিলেন তাদের চিফ হিসাবে, কিন্তু শেষ বিচারে তিনি যে একজন ব্রিটিশ ছিলেন, তা তিনি ভোলেন নি।
তাই বইটিও তিনি শেষ করেছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জয়গান গেয়ে। কে জানে, A Fly in the Wheel বইটি যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন লুইন হয়তবা স্বপ্ন দেখতেন আবার ভারতে ফিরে যাওয়ার, গভর্নরের মত কোনো লোভনীয় পদে, তখনো সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়ানো ‘সভ্যতার আলো ছড়ানো’ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ধ্বজা উড়িয়ে।
টীকা
[১] এই লেখাটি ‘ক্যাপ্টেন লুইন, ঔপনিবেশিক জাদু বাস্তবতা এবং একটি পুরাতন প্রশ্নের নূতন উত্তর’ শিরোনামে লেখা একটি দীর্ঘতর নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত ভাষ্য। মূল প্রবন্ধটি ৬০০০ শব্দের উপর, যা জুম ইস্থেটিক কাউন্সিল (জাক), রাঙামাটি কর্তৃক প্রকাশিতব্য ‘বৈসাবি সংকলন’ (২০১৬)খয়-সা-তে ছাপা হওয়ার কথা।
জাক-এর পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন অম্লান চাকমা, যাঁকে ধন্যবাদ নিয়মিত মৃদু তাগাদার মাধ্যমে লেখাটি যথাসময়ে তৈরিতে অবদান রাখায়। কেউ ম্যাগাজিনটি পেতে চাইলে তাঁর সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, ফেসবুকের মাধ্যমে, অথবা তাঁদেরকে ইমেইল করতে পারেন এই ঠিকানায়: jac_cht@yahoo.com
[২] লুইনের নিজের লেখা থেকে জানা যায়, তাঁর ‘টম লুইন’ নামটাই লুসাই উচ্চারণে ‘থাংলিয়ানা’ হয়ে উঠেছিল, যেটির বানান তাঁর নিজের বইসহ বিভিন্ন ইংরেজি প্রকাশনায় Thangliena দেখানো আছে, তবে মিজো ভাষায় প্রকাশিত একটি গ্রন্থে একই নাম লেখা আছে Thangliana হিসাবে (Ralte 2013; এই গ্রন্থটির সন্ধান দিয়েছেন রাঙামাটির কং চাই, যিনি ২০১৬ সালের মার্চে মিজোরাম ভ্রমণের সময় এটি আবিস্কার করেন)।
[৩] দুই যুগ আগে লেখা আমার ইংরেজি নিবন্ধ (Tripura 1992) বা এর বাংলা অনুবাদ (প্রশান্ত ত্রিপুরা ১৯৯৮) কোনোটিই সহজলভ্য নয়, এবং আমি নিজে ইন্টারনেটে কোথাও দেই নি, তবে মূল লেখাটি নাঈম মোহায়মেনের সম্পাদনায় প্রকাশিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একটি সংকলনে পুনঃমুদ্রিত হয়েছে। আমার জানামতে পুরো সংকলনটি ইন্টারনেটে পাওয়া যায় (সংকলনের নাম তথ্যসূত্রে Tripura 1992-এর সাথে আছে)।
[৪] লেখকের নাম ‘অধ্যাপিকা ড. খুরশীদা বেগম সাঈদ, তথ্য কমিশনার’ হিসাবে দেখানো “‘আদিবাসী’ পদ ভ্রান্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চক্রান্ত: মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ এর আলোকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ” শিরোনামের একটি প্রবন্ধের পিডিএফ কপি থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে।
ইমেইলে পাওয়া প্রবন্ধটি কোথাও প্রকাশিত হয়েছে কিনা, সেটি এই লেখকের জানা নেই, তবে খুরশীদা বেগমের অন্যান্য প্রকাশিত লেখার সাথে এটি সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে এই লেখকের লোমহর্ষক শিক্ষকতা ও অপতথ্যের কারবার শিরোনামের লেখাটি দেখা যেতে পারে (প্রশান্ত ত্রিপুরা ২০১৫খ)।
তথ্যসূত্র :
আবদুস সাত্তার
- (২০১২) আরণ্য জনপদে [ষষ্ঠ রাজ সংস্করণ; প্রথম প্রকাশ ১৯৬৬ এবং দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৭৫], নওরোজ সাহিত্য সম্ভার, ঢাকা।
খাজা কামরুল হক
- (১৯৯৫) বাংলাদেশের উপজাতি, বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
প্রশান্ত ত্রিপুরা
- (১৯৯৮) পাহাড়ি গোষ্ঠীপরিচয়ের ঔপনিবেশিক ভিত্তি। বাংলার বহুজাতি: বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতির প্রসঙ্গ, সম্পা. ভেলাম ভান সেন্দেল ও এলেন বল, দিল্লি: ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ।
- (২০০০) জুমিয়া থেকে জুম্ম: পার্বত্য চট্টগ্রামের জুমচাষ-নির্ভর জনগোষ্ঠীদের ঔপনিবেশিক রূপান্তরের ইতিহাস। নৃবিজ্ঞান পত্রিকা, সংখ্যা ৫, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
- (২০১৫ক) বাংলাদেশে জুমচাষ বিরোধী প্রচারণার ইতিহাস ও রাজনৈতিক অর্থনীতি, বহুজাতির বাংলাদেশ স্বরূপ অন্বেষণ ও অস্বীকৃতির ইতিহাস, সংবেদ, ঢাকা।
- (২০১৫খ) লোমহর্ষক শিক্ষকতা ও অপতথ্যের কারবার, আলুটিলা ছাড়িয়ে [ব্লগ]
প্রশান্ত ত্রিপুরা ও অবন্তী হারুন
- (২০০৩) পার্বত্য চট্টগ্রামে জুমচাষ, সেড (SEHD), ঢাকা।
Lewin, Thomas Herbert
- (1869) The Hill Tracts of Chittagong and the Dwellers Therein. Calcutta: Bengal Printing Company, Ltd.
- (1870) Wild Races of South-Eastern India. London: W. H. Allen & Co.
- (1885) A Fly on the Wheel or How I Helped to Govern India. London: W. H. Allen & Co.
- (1912) A Fly on the Wheel or How I Helped to Govern India. [Second edition]. London: Constable & Company Ltd.
Ralte, Lalhruaitluanga
- (2013) Thangliana [Biography of T. H. Lewin, in Mizo]. Aizawl, Mizoram: Synod Press.
Tripura, Naba Bikram Kishore
- (2014) The Legend of Captain T. H. Lewin. In পার্বত্য চট্টগ্রাম: বনপাহাড়ের সাত-সতের, সম্পা. নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
Tripura, Prashanta
- (1992) The Colonial Foundation of Pahari Ethnicity. Journal of Social Studies, No. 58, Centre for Social Studies, Dhaka. [Reprinted in Between Ashes and Hope: Chittagong Hill Tracts in the Blind Spot of Bangladeshi Nationalism, ed. Naeem Moyaiemen, Dhaka: Drishtipat Writers’ Collective, 2010]
- (2013) From jumia to Jumma: Shifting Cultivation and Shifting Identities in Bangladesh’s Chittagong Hill Tracts. In Himal Southasian, Vol. 26, No. 2
Whitehead, John
- (1992) Thangliena: The Life of T H Lewin, Amongst Wild Tribes of India’s North East Frontier. Kiscadal
লেখক : প্রশান্ত ত্রিপুরা। স্বতন্ত্র গবেষক ও লেখক (সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি)
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।