খাসিয়া রূপকথা: কুকুর ভক্ত মনিব
774
মানুষের মতো বনের পশুপাখিরাও একসময় মেলার আয়োজন করত। এই মেলাটি বনের মাঝখানে হতো।
বনে বসবাসকারী পশুদের বিক্রির জন্য কোনো না কোনো জিনিস মেলাতে নিয়ে আসতে হতো। মেলা পরিচালনার জন্য সবাই মিলে বাঘকে সভাপতি বানাতো।
একদিন মেলায় বিক্রির জন্য কুকুর জিনিস খুঁজতে বের হয়। অন্য পশুরা নিজেরাই জিনিস তৈরি করত এবং তা মেলায় নিয়ে যেত।
কুকুর ছিল অলস। সে কাজ পছন্দ করত না। সভাপতির দেওয়া শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সে উপায় খুঁজতে থাকে।
কুকুর ভাবে কী করে কম পরিশ্রমে মেলায় জিনিস নেওয়া যায়। কিন্তু সারা বন খুঁজেও মেলায় নেওয়ার মতো সে কোনো জিনিস পেল না।
হাঁটতে হাঁটতে কখন বেলা গড়িয়ে গেছে কুকুর টেরই পেল না। হঠাৎ তার নাকে পুঞ্জি থেকে রান্নার সুগন্ধি এসে লাগে।
কুকুর বাড়ির সামনে এসে দেখে ঐ পরিবারের সবাই রাতের খাবার খাচ্ছে।
রান্না করা হয়েছে খাসিয়া শিম। বাড়ির বউ কুকুরটিকে একটি মাটির পাত্রে খেতে দেয়। ক্ষুধার্ত কুকুর সুস্বাদু খাবার পেয়ে গোগ্রাসে সব খেয়ে নেয়।
হঠাৎ তার মনে হয় মেলার জিনিস নিয়ে ফিরতে হবে। কুকুরটি তখন বউয়ের কাছে কিছু তরকারি কিনতে চায়।
খাসিয়া বউ সুন্দর একটি পাত্রে কিছু তরকারি দিলে কুকুর খুব খুশি হয়।
পথে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। সবাই কুকুরের কথা শুনে অবাক হয়।
মেলায় এ ধরনের জিনিস প্রথম আসছে জেনে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করে। মেলায় পৌঁছে কুকুর মাটির পাত্রটি মেলার মাঝখানে বসায়।
কুকুর চিৎকার করে ডাকে আসুন আসুন। আমার উৎকৃষ্ট জিনিসটি কিনেন। অনেক পশুপাখি, জীবজন্তু তার কথা শুনে জড়ো হয়।
সবাই আগ্রহ ভরে জিনিসটি দেখতে থাকে। কুকুর খুশি হয়ে মাটির পাত্রটি খুলতে গেলে ভেঙে যায়। কুকুরের দুঃখ দেখে সবাই হাসে।
লজ্জায় তার মাথা হেট হয়ে যায়। অপমানিত হয়ে সে বাঘের কাছে আরও কিছু সময় ভিক্ষা করে।
কিন্তু সভাপতি এই আবেদন মঞ্জুর করে না। এতে কুকুর রাগ করে হমকি দেয়, একদিন সে অপমানের প্রতিশোধ নেবে। কুকুর ঠিক করে মানুষের গ্রামে চলে যাবে।
কুকুরটি আবার পুঞ্জির সেই পরিবারে যায়। খাসিয়া বউয়ের কাছে গিয়ে কুকুর বনের পশুদের অপমানের কথা শুনায়।
মনিব কুকুরকে বলে, সে অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সব ধরনের সাহায্য করবে।
ঘরে কুকুর আসার পর থেকে মনিব শিকারে বেরুলেই কিছু না কিছু পেত।
শিকারের সময়ে কুকুর শিম তরকারির গন্ধ শুঁকে পশুপাখির অবস্থান জানতে পারত।
কিন্তু শিকার না থাকলে সেদিন মাংসের জন্য খুব সমস্যা হতো। এদিকে খাসিয়া মনিব বনের শুকর ধরে পোষ মানিয়ে পুষতে শুরু করে।
একদিন মনিব ঠিক করে, এদের এভাবে বসে বসে খাওয়ানো ঠিক হচ্ছে না।
একদিন সন্ধ্যায় জুম ক্ষেত থেকে ফিরে সে কুকুর ও শুকরকে ডেকে বলে, কাল থেকে তোমাদের জুম ক্ষেতে কাজ করতে হবে।
জমি তৈরি করতে হবে। মনিবের কথা মতো কুকুর ও শুকর পরদিন সকালে জুম ক্ষেতে কাজ করতে যায়।
শুকর তার পাত দিয়ে প্রতিদিন মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে জমি তৈরি করত। কিন্তু কুকুর প্রতিদিনই ক্ষেতে এসে বসে থাকত এবং গাছতলায় ঘুমাত।
এ নিয়ে একদিন শুকর কুকুরের সঙ্গে ঝগড়া করে। শুকর বলল, আজই আমি মনিবের কাছে নালিশ করব।
এদিকে কুকুরের মাথায় এক বুদ্ধি আসে। সে জুম ক্ষেতে দৌড়াতে থাকে যাতে কাদামাটিতে পায়ের ছাপ লাগে।
বাড়ি ফিরে কুকুর দেখে মনিব তার ওপর রেগে আছে। মনিব কুকুরকে জিজ্ঞেস করে, শুকর বলছে তুমি নাকি একদিনও কাজ করনি।
কুকুর বলে, না হুজুর আমি কাজ করেছি। বিশ্বাস না হলে জমিতে গিয়ে দেখে আসেন। খাসিয়া মনিব জুম ক্ষেতে গিয়ে দেখে ক্ষেতের সবখানে কুকুরের পায়ের ছাপ।
মনিব বাড়ি ফিরে শুকরকে বলে, কুকুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের অপরাধে আজ থেকে আমাদের উচ্ছিষ্ট খাবার তোকে খেতে হবে।
এছাড়া আলাদা ঘরে থাকতে হবে। কুকুর থাকবে আমাদের সঙ্গে আর আমরা যা খাবো তা খাবে।
সেই থেকে আজ অবধি খাসিয়া পরিবারে শুকরকে বাসি-পচা খাবার দেওয়া হয়। কুকুর ঘরে থাকে। খাসিয়ারা যা খায় কুকুরকেও সে রকম খাবার খেতে দেয়।
রূপকথাটি সঞ্জীব দ্রং কর্তৃক বর্ণিত
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।