খিয়াং
1588
খিয়াং জাতির বসতি, অঞ্চল ও জনসংখ্যা
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম হলো খিয়াং জনগোষ্ঠীর পার্বত্য জেলার রাজস্থলি, কাপ্তাই, এবং বান্দরবান জেলার বান্দরবান সদর, রুমা, থানচি ও রােয়াংছড়ি উপজেলায় খিয়াং জনগােষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। ১৯৮১ এবং ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুসারে খিয়াং জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা যথাক্রমে ৫,৪৫৩ এবং ১,৯৫০। বলাবাহুল্য, যেখানে সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার কথা, সেখানে ১৯৯১ সালের আদমশুমারিতে খিয়াং জনগােষ্ঠীর জনসংখ্যা আরাে কমে গেছে। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আদমশুমারিতে খিয়াং জনগােষ্ঠীর লােকসংখ্যা যথাযথভাবে গণনা করা হয় না। খিয়াং জনসংখ্যা তাদের নিজস্ব জরিপ অনুসারে, আনুমানিক তিন হাজার ছয়’শ এবং পরিবারের সংখ্যা আনুমানিক সাত’শ-এর অধিক।
খিয়াং জাতির ঐতিহাসিক পটভূমি
খিয়াংদের মঙ্গোলীয় জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হলেও তাদের উৎপত্তি সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট কোনাে লেখ্য দালিলিক প্রমাণ কিংবা তথ্য-উপাত্ত আজও অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। তবে পৌরাণিক কাহিনী আকারে তাদের উৎপত্তি সম্বন্ধে খিয়াংদের কাছে সুন্দর দুইটি জনশ্রুতি রয়েছে।
খিয়াং জাতির পৌরাণিক কাহিনী
এককালে খিয়াংদের রাজা ছিল, ছিল রাজ্যও। তখন এক যুদ্ধে রাজার সৈনিকের তরবারির আঘাতে নিজ গােত্রের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ প্রাণ হারালে যুদ্ধের সমরনীতির ‘সত্যপণ’ বরখেলাপ হয়। এতে খিয়াংদের ‘রাজা’ যুদ্ধে তার খয়ের আলামত খুঁজে পান। সেজন্য তিনি যুদ্ধ অসমাপ্ত রেখে কোনাে এক দেশে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় সৈন্য-সামন্তসহ রাজ্যবাসীও রাজার সঙ্গী হয় ।
কিন্তু রাজার সাথে এত বেশি লােকসংখ্যা হয়ে গেল যে, লােকসংখ্যা কমানাের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়। তাই পলায়নরত রাজা পালানাের সময় পথিমধ্যে এক সেতুতে এসে এক বুদ্ধি বের করলেন। তিনি প্রয়ােজন সংখ্যক লোকজন, পার করে সেতুর মাঝখানের অংশ কেটে ফেলেন। এভাবে রাজা খিয়াংদের একটা আংশকে অসহায় করে রেখে যান। ভাগ্যকে সহায় করে থেকে যাওয়া খিয়াংরাই বর্তমানের খিয়াং জাতির পূর্বপুরুষ বলে কাহিনী সূত্রে জানা যায়।
অন্য কাহিনীটি হলাে—বহু বছর আগে তাদের এক রাজা নিজের দেশ থেকে সৈন্য-সামন্ত এবং ছােট রাণীকে নিয়ে জাহাজে করে দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। একদিন রাজা যখন এদেশে প্রবেশ করলেন তখন দূর থেকে রাণী একটি শুকনাে পাতা দেখে রাজাকে বললেন, দেখুন মহারাজ ঐ দূরে একটি হরিণ দেখা যাচ্ছে!’ রাজা রাণীর ডাকে সাড়া দিয়ে এসে দেখেন, দূরে জঙ্গলের ধারে একটি শুকনাে গাছের ডালে পাতা দেখা যাচ্ছে।
রাজা রাণীকে বললেন, তুমি ভুল দেখেছাে। তুমি একটি শুকনাে পাতাকে হরিণ মনে করেছ। আসলে সেটা হরিণ নয়।’ রাজার কথা শুনে রাণী বললেন, না মহারাজ আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, হরিণই দেখা যাচ্ছে।’ রাজা আবার ছােট রাণীর প্রতি উত্তরে বললেন—না সেটা হরিণ নয়, একটি শুকনাে পাতাকে মনে হচ্ছে হরিণের মতাে।’ রাজা বলছেন, “শুকনাে পাতা’ আর রাণী বলছেন হরিণ। এ নিয়ে এক পর্যায়ে রাজা ও রাণীর মধ্যে তুমুল তর্কের সৃষ্টি হলাে।
অবশেষে তুমুল তর্কের পর, রাজা-রাণী দুজনেই পরস্পরের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে, রাজার কথা যদি সত্য হয়, তাহলে রাজা দেশে ফিরে যাবেন নতুবা তাকে এ গহীন বন জঙ্গলে নির্বাসিত হতে হবে। ঠিক তেমনি রাণীর কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে রাণী দেশে ফিরে যাবেন। যদি মিথ্যা হয়, তাহলে রাণীকেও এখানে নির্বাসিত হতে হবে। দুজনের মধ্যে হার-জিতের লড়াই শুরু হলাে। রাজা রাণী দুজনেই শর্ত মােতাবেক রাজি হলেন।
অবশেষে জাহাজটি যতই তীরের কাছাকাছি এলাে, ততই দুজনের মধ্যে জয়-পরাজয়ের ভাগ্য কার হবে, সেটা নিয়ে দুজনে অপেক্ষায় রইলেন। এক সময় জাহাজটি ঠিকই তীরে এসে ভিড়ল। দুজনেই এসে দেখলে, ওটি শুকনাে পাতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে রাণী হেরে গেলেন। যেমন শর্ত তেমন কাজ। রাণীকে নির্বাসিত করা হলাে । রাণী যখন নির্বাসিত হয়েছিলেন, তখন রাণী ছিলেন গর্ভবতী।
তার সাথে কিছু নারী-পুরুষ ও সৈন্য-সামন্ত রাখা হলাে’। সেজন্যই এদেশের খিয়াংদের বলা হয় ‘মু-য়ু খিয়াং’ অর্থাৎ না নেওয়ার ২ মু-য়ু একটা মারমা শব্দ। এর অর্থ নেব না। এ ব্যাপারে অন্য আর একটা কাহিনী রয়েছে। কাহিনীটি হলাে—রাজা জাহাজে করে এদেশের খিয়াংদের নিজ দেশে নিয়ে যাবার জন্য ১২টি জাহাজ নিয়ে এসেছিলেন।
১২টি জাহাজ পরিপূর্ণ হওয়ার পর অন্যরা যারা আর জাহাজে স্থান পায়নি তাদের বলা হয় মু-য়ু খিয়াং’। কেউ কেউ ১৬০০-১৭০০ শতকে খিয়াংরা এ অঞ্চলে এসেছে বলে মনে করেন।
খিয়াং জাতির ঐতিহাসিক অভিমত
দকি্ষণের টেম-চিন বা উত্তরের ওয়াইল্ড চিন নামে অভিহিত আরাকান-ইয়ােমা উপত্যকার অববাহিকায় খিয়াংদের আদি নিবাস ছিল বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মানবজাতির ক্রমবিকাশের ধারায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনায় জীবন-জীবিকা ও যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে সেখান থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন স্থানে খিয়াংরা ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিমত রয়েছে। এ-সম্পর্কে অনেক তথ্য বা মতবাদ রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি মতবাদ নিম্নে উপস্থাপন করা হলাে-
প্রথম মতবাদ হচ্ছে—খিয়াংরা আরাকানের উত্তর ও দক্ষিণের ইয়ােমা (Yoma) পর্বত হতে জীবন-জীবিকা আরম্ভ করে। বার্মার (বর্তমান মায়ানমারে) আকিয়াব, ক্যক্পু এবং সানডােওয়ে জেলার পশ্চিমে তাদের বসবাস রয়েছে বলে জানা যায় । এছাড়া মিনবু, দেয়েতমােয়া, প্রোম এবং হেনজাদা জেলার পূর্বে তাদের বসবাস রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। হডসন-এর মতে, খিয়াং, খুমী এবং ম্রোরা এদেশের আদি অধিবাসী। এরা বিভিন্ন গােত্রে বিভক্ত।
দ্বিতীয় মতবাদ হচ্ছে—বার্মার চীন হিলসের অধিবাসীদের খিয়াং বলা হয়। বার্মিজরা এদের ‘চিনস’ আর আরাকানিরা খিয়াং বলে ডাকে। কালের আবর্তে চীন হিলসের এসব জনগােষ্ঠীর মধ্যে একটা অংশ জীবন-জীবিকার তাগিদে বা গােষ্ঠীপ্রধানের অনুচর হয়ে বর্তমান পার্বত্যাঞ্চলের দিকে ধাবিত হতে থাকে। কালের আবর্তে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি পরিবর্তন হলেও মূল ভিত্তি এখনাে অটুট রয়েছে বলা যায়।
তৃতীয় জনশ্রুতি হচ্ছে—একসময় বার্মা এবং আরাকান রাজ্যের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সে-যুদ্ধে খিয়াং জনগােষ্ঠীসহ অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগােষ্ঠী নানাভাবে ক্ষতির শিকার হয়। যুদ্ধের কারণে খিয়াংরা সেই অঞ্চল ত্যাগ করে বর্তমান পার্বত্য ভূখণ্ডে দিকে অগ্রসর হয় ! সেসময় তাদের নেতা থােউ-এর নেতৃত্বে তাদের আগমন ঘটে।
চিন্দুইন (Chindwin) নদীর অববাহিকা হতে তাদের জীবনযাপন আরম্ভ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। নেকের মতে, বােমাং রাজা বার্মা হতে এ অঞ্চলে আসার সময় খিয়াংদেরও আগমন ঘটে বলে ধারণা করেন। সম্ভবত উত্তর ব্রহ্মের কাচিন পার্বত্য এলাকায় কাচিন বা কাখে্্যং জনগােষ্ঠী এ-অঞ্চলে খিয়াং জনগােষ্ঠী নামে পরিচিত হতে পারে।
খিয়াং জাতির ইংরেজদের সাথে সংঘাত
খিয়াংদের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রায় ১৯১৮ সালের শেষ দিকে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের দমন পীড়ন ও ঐতিহ্যবাহী এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ইংরেজ বাহিনীর সাথে খিয়াংদের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধে। এ যুদ্ধে সশস্ত্র ইংরেজদের বিরুদ্ধে দা, বল্লম, লাঠিকে সম্বল করে মহাবীরত্বের সাথে তারা লড়াই করে খিয়াংদের পক্ষে কয়েকজন উল্লেখযােগ নেতৃত্ব দানকারীর নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন—যথাক্রমে পাইলাপ খেয়াং, ছেইঅং খিয়াং, রুই খিয়াং, তৈলাে খিয়াং, ছেইখই খিয়াং, চেইলাে খিয়াং, রুইচা খিয়াং, ছ্যম খিয়াং ও অংচা খিয়াং প্রমুখ।
এ যুদ্ধে ছ্যম খেয়াং শহীদ হন। অপরদিকে পাঁচজন ইংরেজ সৈনিক খেয়াংদের দা, বল্লম ও লাঠির আঘাতে মারা যায় বলে জানা যায়। এখনও খিয়াংদের যে কোনাে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক অনুষ্ঠানে যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী শহীদ ছ্যম খিয়াংকে তারা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
খিয়াং দের মুক্তিযুদ্ধে খিয়াংদের ভূমিকা
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে খিয়াংরা মুক্তিবাহিনীকে নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে সহায়তা দিয়েছিল। ভৌগােলিকভাবে খিয়াং অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমানা বরাবর ও পর্বতসঙ্কুল। এই ভৌগােলিক অবস্থা মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের জন্য ছিল অনুকূল ও নিরাপদ। এসব এলাকায় খিয়াংরা মুক্তিবাহিনীর জন্য এক নিরাপদ আস্তানার ক্ষেত্র গড়ে তুলেছিল। পাশাপাশি হানাদার বাহিনীর গতিবিধি ও তাদের কৌশলগত অবস্থান সম্বন্ধে মুক্তিবাহিনীর শিবিরে পৌছে দেয়ার মতাে চরম ঝুকিপূর্ণ কাজেও অনেকে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখেন।
তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন—ধুমখি খিয়াং, থইগ্য খিয়াং, বাসু খিয়াং, সাপ্রু খিয়াং ও চেইথইউ খিয়াং। কিন্তু প্রচারবিমুখ এসব মুক্তিযােদ্ধা দেশ ও জাতীয় ইতিহাসের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি লাভ করেননি। স্বীকৃতি না পেলেও তাদের এই গৌরবময় ও দুঃসাহসী ভূমিকার জন্য তারা এখনও গর্ববােধ করেন।
খিয়াং জাতির সামাজিক সংগঠন
খিয়াং দের গােত্র
বিভিন্ন প্রাকৃতিক জড় পদার্থের নামানুসারে খিয়াংদের গােত্রের নামকরণ করা হয়, যেমন-১, হােক্চ, ২. খাংচ্, ৩. ছো চ্, ৪. পে চ্, ৫. ছে্ চ্ , ৬. মং চ্ , ৭. মংলম স, ৮, ক্ষেপ চ্, ৯. চুমচে সং, ১০. ম্র চ ইত্যাদি। তবে এই গােত্রের নামকরণে পেছনে খিয়াংদের অনেক ইতিহাসও রয়েছে। নিম্নে এসবের কয়েকটি গােত্রের নাম বর্ননা করা হলো-
মংচ
জনশ্রুতি মতে, কোনাে এক রাজা তার ছেলেকে দেখাশােনার জন্য একজন লোককে নিয়ােগ করেন। রাজার ছেলেকে লালন-পালনসহ ভালাে-মন্দ সকল বিষয় দেখাশুনার জন্য ভার তার হাতে অর্পণ করা হয়। এককথায় সে ছিল রাজার ছেলের তত্তাবধানকারী। সেই থেকে বংশানুক্রমে এ-কাজে নিয়ােজিতদের মংচ’ নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অন্য ভাষ্যমতে, খিয়াং ছেলেকে রাজা লালন-পালন করেছে বলে মংচ বলা হয়েছে।
খেপ্ চ
পূর্বে এমন অঞ্চল বা প্রদেশ ছিল, যেখানকার মানুষেরা ছিল অত্যন্ত হিংস্র প্রকৃতির। কারণে অকারণে সর্বদা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত। মাঝে মাঝে তাদের অন্যায় অত্যাচারে রাজা অতিষ্ঠ হয়ে যেতেন। রাজা চিন্তা করলেন যে, ঐ প্রদেশ বা অঞ্চলকে যদি দমন করে রাখতে না পারি তাহলে পরবর্তী সময়ে তারা রাজার বিরুদে্ব বিদ্রোহ ঘােষণা করবে।
তাই তিনি রাজ্যের মধ্যে এমন একজন নেতাকে বেছে নিলেন, যিনি ঐ অঞ্চলের লােকদের দমন করে রাখতে পারবেন। সেই সকল অঞ্চলের লােকদের দমনের জন্য যে লােককে নিয়ােজিত করা হয় তাদের গোত্রকেই বলা হয় ‘খেপ। এক কথায় প্রজার উপরে কর্তৃত্বকারী ।
মংলম স্
রাজার চলার পথ পরিষ্কারের জন্য যাদের নিযুক্ত করা হয় তাদেরকে মংলম স্ বলা হয় অর্থাৎ রাজার রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাই ছিল তাদের কাজ।
য়োং চ্
তখনকার দিনে বনে বা জঙ্গলে বানরের উৎপাত খুব বেশি ছিল। বানরের উৎপাতে রজাসহ প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে যেতেন। তাই বানরের উৎপাত থেকে রক্ষার জন্য তাদেরকে নিয়ােজিত রাখতেন।
লাইব্রে স্ অথবা লেইব্রে স্
জনশ্রুতি মতে, একজন খিয়াং রমণী একজন মারমা ব্যক্তিকে বিবাহ করে। এক সময় সেই খিয়াং রমণীর সাথে মারমা লােকটি খিয়াং সমাজে চলে এসে বসবাস করেন। এভাবে পরবর্তীকালে বংশানুক্রমে খিয়াংদের মধ্যে লাইব্রে স্ নামটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
সে চ্
বর্শাধারীদের সে চ্ বলা হয় । রাজার সৈনিকের কাজে বর্শা নিয়ে সদা নিযুক্ত ছিল বলে তাদের সে চ্ উপাধি বা গোত্রের নামকরণ করা হয়।
উল্লেখ্য যে, অন্যান্য গােত্রের নামও বিভিন্ন অর্থ জ্ঞাপন করে। সেই সকল গােত্র সম্দে্ব লেখা বা পাণ্ডুলিপি না থাকায় একসময় মুখে মুখে প্রচলিত থাকা অনেক কথা ইতােমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
গােষ্ঠী
খিয়াংরা নিজ বংশের বয়ােজ্যেষ্ঠ প্রধানের নামানুসারে গােষ্ঠীর নামকরণ করে যেমন—ক্রাং দেইপ’ গােষ্ঠী, চুং’ গােষ্ঠী, লই’ গােষ্ঠী ইত্যাদি।
খিয়াং দের পরিবারের ধরন
খিয়াংরা মূলত পিতৃসূত্রীয় এবং যৌথ পরিবার গঠন করে থাকে। তবে বর্তমানে খিয়াংরা আধুনিক জীবনধারায় যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার গড়ে থাকে।
খিয়াং ব্যক্তির জীবনচক্র
জন্ম
খিয়াং সমাজে শিশুর জন্ম নিয়ে অনেক আচার-অনুষ্ঠান করা হয়। গর্ভবতী মেয়েদের গর্ভাবস্থায় চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ দেখা নিষিদ্ধ। সন্ধ্যার পর তাদেরকে বাইরে যেতে দেয়া হয় না। গর্ভবতী মহিলাকে প্রসবকালীন চুলার পাশে থাকতে হয়। সেজন্য মাচাং ঘরের ভেতরে আলাদাভাবে গর্ভবতী মহিলাদেরকে চুলা করে দেয়া হয়।
সন্তান প্রসবের পরও শিশু সন্তানকে নিয়ে কমপক্ষে ৩০ দিন উক্ত চুলার পাশে থাকতে হয়। সাধারণত এই ৩০ দিন শিশুসন্তানকে ঘরের বাইরে নেয়া হয় না। প্রসব করানাে এবং প্রসবকালীন প্রয়ােজনীয় তত্ত্বাবধান গ্রামের দাই করে থাকে।
পুত্রসন্তান হলে ৫ দিন এবং কন্যাসন্তান হলে ৭ দিনের মধ্যে একটা অনুষ্ঠান করার রেওয়াজ আছে খিয়াং সমাজে। এই অনুষ্ঠানকে তাদের ভাষায় ‘ওপেল’ বলে । এসময় গৃহস্থ শূকর কেটে ভােজের আয়ােজন করে এবং গ্রামের প্রত্যেক পরিবারকে আমন্ত্রণ করা হয়। নিমন্ত্রিত অতিথিরা পরিবার প্রতি ১টা মােরগ ও ১ বােতল মদ উপহারস্বরূপ নিয়ে ভােজে উপস্থিত থাকে। নিমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে যাওয়া মুরগিগুলাে গলা টিপে মেরে ফেলা হয়।
তারপর গরম পানি দিয়ে সব মুরগিগুলাে পরিষ্কার করে বড় একটা ডেকচিতে সিদ্ধ করা হয়। সিদ্ধ করা গােটা মুরগি থালায় পরিবেশন করা হয়। অতপর পর্যায়ক্রমে অতিথিরা মুরগির চোয়ালের কাছে দুটি শিরাযুক্ত জিহ্বার মতাে অংশটি বের করে । সকলে জিহ্বার মতাে শিরাটি বের করে ছেলে বা মেয়ের ভবিষ্যত শুভাশুভ নির্ণয় করে থাকে। এ চোয়ালের শিরাটিতে মদ মাখিয়ে দিয়ে থালার দক্ষিণে রেখে দেয়।
যারা এ অনুষ্ঠানে পরিবেশনের দায়িত্বে থাকে, তারা থালার মুরগিগুলিকে একত্রে একটা গামলায় ছােট ছােট টুকরা করে পিষানাে আদা, মরিচ, লবণ ও হলুদ দিয়ে মাখিয়ে এগুলি পরিবেশন করে। মাখানো মুরগির মাংসকে খিয়াংরা ‘লকসুপ’ অর্থাৎ ভর্তা বলে। সেই মাংসের ভর্তা মদের সাথে সকলে খায়। পরে শূকরের মাংস দিয়ে ভােজে অংশগ্রহণ করে। সদ্য সন্তান প্রসব করা মায়েদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কিছু নিয়ম পালন করতে হয়।
প্রসূতিকে শিশু জন্মের ১ সপ্তাহ বা ৭ দিন কেবল রসুন ও লবণ দিয়ে ভাত খেতে হয়। ১ সপ্তাহের পর ছােট সাইজের মুরগির মাংস খেতে পারে। ৩০ দিন হলে গাই গরুর মাংস খেতে পারবে। ৬ মাস পর ছাগলের ও মহিষের মাংস খেতে পারবে। বিশেষ কয়েক রকমের শাকসবজি ছাড়া অন্যান্য শাকসবজি খাওয়া যাবে না। নানা ধরনের শাকসবজি খেতে পারে ২ মাস পর। এছাড়া ২ বছর পর মাশরুম (ব্যাঙের ছাতা) খাওয়া যাবে ইত্যাদি।
হৃ উহ্ পেই
কোনাে খিয়াংপরিবারে যদি কন্যা জন্মগ্রহণ করে তাহলে কয়েক মাসের মধ্যে হৃ উহ্ পেই’ অনুষ্ঠান করা হয়। হৃ উহ্ পেই’-এর বাংলা অর্থ হচ্ছে—কান ফেঁড়ানাে অনুষ্ঠানের ভােজ। পরিবারের কন্যাসন্তানকে কোনাে দক্ষ ব্যক্তি কানে ছিদ্র করে দেয়। পরিবারের পক্ষ থেকে শূকর বধ করে বিরাট ভােজের আয়ােজন করা হয়। এ সময় নিমন্ত্রিত অতিথিরা আনন্দ-ফুর্তি করে।
ওপেল
খিয়াং সমাজে ছেলে বা মেয়ে জন্মের পরপরই ‘ওপেল’ অনুষ্ঠান করা হয় । পরিবারে মেয়েসন্তান জন্মের ৫ দিনের পর এবং ছেলেসন্তান জন্মের ৭ দিন পর এ অনুষ্ঠানটি করে থাকে। এ দিনে নিমন্ত্রিত অতিথিরা একটা মুরগি, একসের চাল, এক বােতল মদ নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। যে পরিবার হতে অনুষ্ঠানাদি করা হয় তারা একটা ভােজের আয়ােজন করে।
উক্ত ভােজে মুরগি ও শূকর বধ করে নিমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে খাবার পরিবেশন করে থাকে। এসময় মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করা ২য় ছেলেমেয়ের নাম ঠিক করা আছে কিনা। যদি নাম ঠিক করা না থাকে তাহলে পাছত অতিথিরা ছেলেমেয়ের উপযুক্ত নাম ঠিক করে রাখে। এ সময় সারাদিন সকলে খাওয়া-দাওয়ার করে এবং মদ্যপায়ীরা মদপানের মাধ্যমে আনন্দ করে।
উ-খ্ পেই
খিয়াং পরিবারে ছেলে সন্তান হলে এই ‘উ-খ পেই’ উৎসব পালন করা হয়। এটি নেংটি পরানাের ভােজ। কোনাে ছেলের বয়স ১০-১৩ বছর হলে তাকে নেংটি পরিয়ে দিয়ে এ ভােজের আয়ােজন করা হয়। গ্রামের কোনাে বয়স্ক ৭ এ সময় তাকে উপস্থিত লােকদের সামনে নেংটি পরিয়ে দেয়। তখন শূকর কে ভােজের আয়ােজন করা হয়। এ সময় আত্মীয়-স্বজন ও নিমন্ত্রিত অতিথিরা ভােলে মদসহকারে খাওয়া-দাওয়া করে থাকে। এ অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত অতিথিরা যে যার সাধ্যমতাে উপহার প্রদান করে থাকে।
লাংকানহ্ পেই
কোনাে পরিবারে যদি কন্যাসন্তান বয়ােপ্রাপ্ত হয় তাহলে খিয়াং সমাজে লাকানহ্ পেই’ বা বক্ষবন্ধনী পরানাের অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। মেয়ের বয়স ১৩-১৫ বছর হলে কোনাে বয়স্ক মহিলা এ অনুষ্ঠানে তাকে বক্ষবন্ধনী কাপড় পরিয়ে দেয়। এ সময় পরিবারের পক্ষ থেকে শূকর কেটে ভােজের আয়ােজন করা হয়। আত্মীয় স্বজন ও গ্রামবাসীরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে ভােজে অংশগ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে ভােজে খাবারের সাথে সাথে অনেকে ইচ্ছামতাে মদ পান করে থাকে।
এ ভােজে নিমন্ত্রিত অতিথিরা সাধ্যমতাে মেয়েকে উপহার দিয়ে থাকে। শৈশব, কৈশাের বাবা-মার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হওয়ার পর যৌবন সন্ধিক্ষণ অর্থাৎ ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ছেলেটিকে বিয়ের উপযুক্ত বলে ধরে নেয় তখন বাবা মা তার উপর কড়া শাসন কিংবা চলাফেরার নজরদারির উপর সতর্কতা কমিয়ে সব কিছু ছেলের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে দেয়।
তখন ছেলে একান্ত নিজস্ব মতামতে তার জীবনসঙ্গীকে বেছে নিয়ে সামাজিকভাবে বা পালিয়ে বিবাহ করে। বৃদ্ধাবস্থায় পিতা-মাতারা ছেলের তত্ত্বাবধানে পালিত হয়, মৃত্যুকালে ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতি অনুযায়ী যেমন—বৌদ্ধদের আগুনে পুড়িয়ে এবং খ্রিস্টান বিশ্বাসীদের কবরস্থ করে সৎকার করা হয়। তবে সৎকারের সময় তাঁর বংশের বড় সন্তান দ্বারা তাঁর মুখাগ্নি হয়।
খিয়াং জাতির বিবাহ ব্যবস্থা
খিয়াং সমাজে সচরাচর দুই প্রকার বিবাহের অস্তিত্ব রয়েছে। যথা—ক, সামাজিক/নিয়মিত বিবাহ, খ. পলায়ন/অনিয়মিত বিবাহ। বিধবা বিবাহ ও বহু বিবাহের ক্ষেত্রে সমাজের দাবি পূরণ করতে হয়। নিষিদ্ধ বা অননুমােদিত বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীকে কঠোর দণ্ড দেয়া হয়।
খিয়াং সমাজে বিধবা বা বিপত্নীকের বিবাহ ও বহু বিবাহের ক্ষেত্রে সমাজের অনুমােদন নিতে হয়। আধুনিক ও শিক্ষিত সমাজে কোর্ট ম্যারেজ ও মিশ্র বিবাহের কিছু প্রবণতা ইদানীং দেখা গেলেও সামাজিক রীতি ও প্রথা অনুসারে সমাজসিদ্ধ করা ব্যতিরেকে খিয়াং সমাজ তা অনুমােদন করে না। রক্ত সম্পর্কীয় নিষিদ্ধ বিবাহের ক্ষেত্রে দম্পতিকে সমাজচ্যুত করা হয়। খিয়াং সমাজ নিষিদ্ধ বা অননুমােদিত বিবাহকে স্বীকৃত বিবাহ হিসেবে গণ্য করে না।
সামাজিক/নিয়মিত বিবাহ (হৃিয়েই নকস্)
খিয়াং সমাজে অভিভাবকের মত সাপেক্ষে পাত্র-পাত্রীর বিবাহ ঠিক করা হয়। পাত্র পক্ষ বা ছেলের বাবা নিজ গোত্রের গণ্যমান্য ব্যক্তির মাধ্যমে তাদের পছন্দের পাত্রীর অভিভাবকদের নিকট সরাসরি বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। প্রস্তাবে পাত্রীর অভিভাবক রাজি হলে বিবাহ সংক্রান্ত পরবর্তী আলােচনার জন্য উভয়পক্ষ দিন-তারিখ নির্ধারণ করে থাকে।
পলায়ন/অনিয়মিত বিবাহ (এ চেনেইস)
সমাজে প্রচলিত নিয়মের বাইরে প্রেমঘটিত কারণে যুবক-যুবতী উভয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী রূপে গ্রহণের মাধ্যমে কোনাে কোনাে সময় পলায়ন/অনিয়মিত বিবাহ সম্পন্ন করে থাকে। খিয়াং সমাজে এরকম পলায়ন/অনিয়মিত বিবাহের প্রচলন রয়েছে। খিয়াং সমাজে এ ধরনের বিবাহকে ‘এ চেনেইস’ নামে অভিহিত করা হয় ।
এক্ষেত্রে খিয়াং পুরুষ ও মহিলা উভয়ে পরস্পরের সম্মতিতে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। কিছুদিন পর সমাজে ফিরে এসে বিবাহের ক্ষেত্রে গােত্রগত নিষিদ্ধ সম্পর্ক না থাকলে সামাজিক আদালত বা সমাজপতির সিদ্ধান্ত অনুসারে লাকশােং’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের বিবাহকে সমাজসিদ্ধ করা হয়। তবে খিয়াং সমাজের রীতি অনুসারে পাত্র-পাত্রী পালিয়ে গিয়ে যে পাড়াতে আশ্রয় নেবে সেই পাড়াতেই তাদের বিয়ে হতে হবে।
পালিয়ে যাবার সময় পাত্র-পাত্রীর সাথে সাক্ষী হিসেবে তৃতীয় পক্ষের কেউ না থাকলে সেটাকে সমাজে ব্যভিচার হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং সামাজিক আদালতে পাত্র-পাত্রী উভয়কে শাস্তিস্বরূপ শূকর জরিমানা দিতে হয়।। পলায়ন/অনিয়মিত বিবাহের ক্ষেত্রে খিয়াং সমাজের সদস্যদের ভিন্ন জনগােষ্ঠীর পাত্রীর সাথেও বিবাহ হয়। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীর পাত্র-পাত্রীর সাথে বিবাহ হলে তা বৈধ হিসেবে গণ্য হয়।
আবার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ও একই গােত্রের বা ধর্মের মধ্যে বিবাহ হলে তা বৈধ হিসেবে গণ্য হয়। তবে ভিন্ন জনগােষ্ঠীর সাথে বিবাহ হলে সামাজিক আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে স্ত্রীকে ‘লাকশােঙ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গােত্রভুক্ত করা হয়। এ ধরনের বিবাহে স্ত্রীকে খিয়াং জনগােষ্ঠীর ধর্ম ও গােত্রের মর্যাদা ও পদবি ধারণ করতে হয় । আধুনিককালে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে খিয়াং তরুণ-তরুণীদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখা যায়।
কোর্ট ম্যারেজ মূলত আদালতের কোনাে প্রকার আদেশ নয়। আধুনিক খিয়াং সমাজে ইদানীং পরিবারের অসম্মতিতে বিবাহে ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রী উভয়ে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অথবা নােটারি পাবলিক-এর সম্মুখে নিজেদেরকে আইনত স্বামী-স্ত্রী হিসেবে শপথপূর্বক ঘােষণা প্রদানের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখা যায়।
এক্ষেত্রে বলা চলে প্রাচীনকালের পলায়ন বিবাহের আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে কোর্ট ম্যারেজ, যদিও এটি নিছক শপথনামা মাত্র। তাই এ বিবাহ অলঙ্ঘনীয় নয়। তবে বিবাহিত পাত্র-পাত্রী এ ক্ষেত্রে সাবালক হলেও নিষিদ্ধ সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় হলে সম্পাদিত কোর্ট মেরেজ সামাজিকভাবে বৈধ হবে না। সর্বোপরি এ ধরনের কোর্ট ম্যারেজ প্রথাসিদ্ধ নয়।
খিয়াং দের মৃত্যু
খিয়াং সমাজে কোনাে লােক মারা গেলে দাহ করা হয়ে থাকে। গ্রামবাসীরা মৃত লােকটির গৃহে একত্রিত হয়। পুরুষ লােক মারা গেলে প্রথমে একটি ডেকচিতে ভাত রান্না করা হয়। ছােট আকারের একটি মুরগি কেটে আগুনের উপর শিক দিয়ে পােড়ানাে হয়। রান্না করা ভাতের ডেকচিখানা মৃত দেহটির মাথার উপরে রাখা হয়। এবং শিক দিয়ে পােড়ানাে মুরগিটা সে ভাতের ডেকচিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
পায়ের এক বৃদ্ধাঙ্গুলে ছােট একটা মুরগি বাঁধা হয়। তার কারণ স্বর্গের পথে যাওয়ার সময় যেন মুরগিটা পােকামাকড় খেয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে রাখতে পারে। মৃত দেহটিকে গােসল করানাের জন্য কাঁচা হলুদ দিয়ে পানি সিদ্ধ করা হয়। সিদ্ধ করা গরম পানি ঠাণ্ডা করে মৃতদেহটিকে গােসল করানাে হয়। অতপর দেহটিকে নতুন জামা কাপড় পরানাে হয়।
মৃত লােকটিকে কফিনে করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রীকে একটা থুরুং (ঝুড়ি) দিয়ে রান্না করা ভাত এবং শিক দিয়ে পােড়ানাে ছােট মুরগি থুরুং-এর মধ্যে রেখে মৃত স্বামীর কফিনের সাথে সাথে যেতে হয়। এ সময় স্ত্রীকে চুল খোলা অবস্থায় থাকতে হয় এবং কোনাে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানাে ও বাঁধা যাবে না। ৫টি লাকড়ির স্তর সাজিয়ে চিতা তৈরি করা হয় এবং সে চিতার উপর মৃত দেহটিকে চিৎ করে শােয়ানাে হয়।
তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬টি লাকড়ির স্তর সাজিয়ে দাহ করা হয়। (ছেলে থাকলে বড় ছেলে প্রথমে চিতায় অগ্নিসংযােগ করে। আর মেয়ে হলে বড় মেয়ে সে কাজটি সম্পাদন করে।) মৃতের কোনাে ছেলেমেয়ে না থাকলে সেক্ষেত্রে নিকট আত্মীয়রা এ কাজ সম্পাদন করতে পারবে। মৃত লােকটিকে দাহ করার পরের দিন খুব ভােরে যে কোনাে একজন আত্মীয় চিতা দেখতে যায়। উদ্দেশ্য চিতায় বা ছাইয়ের মধ্যে কোনাে কিছুর লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় কিনা।
যদি ছাইয়ের মধ্যে মানুয়ের পায়ের ছাপ দেখতে পায়, তাহলে মনে করা হয় মৃত লােকটির আত্মা পুনর্জন্মে মানুষ হয়ে জন্মাবে। অন্য কোনো বন্যপ্রাণীর ছাপ দেখতে পেলে সে বন্যপ্রাণীর কুলে পুনর্জন্ম লাভ করবে বলে মা করা হয়। মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে টাকা-পয়সা দেওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে। টাকা পয়সা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তি স্বর্গের পথে যাওয়ার সময় নৌকা পার হওয়ার জন্য খরচ লাগে বলে তাদের বিশ্বাস।
মহিলা হলে ৫ দিন ও পুরুষ হলে ৬ দিন ধরে মৃত ব্যক্তির আত্মার সদ্গতি কামনা করে গ্রামবাসীদের নিয়ে ছেলে বা মেয়েরা শ্ৰাদ্ধ ক্রিয়ার জন্য ভােজের আয়ােজন করা হয়। কোনাে লােক যদি মৃত্যুর আগে ছেলে-মেয়ে, পরিবার বা পরিজনদের জানিয়ে দেয় যে, মৃত্যুর পরে গ্রামের লােকজনকে খাওয়াতে হবে এবং সমাহিত করার পর ভােজের আয়ােজন করতে হবে, তাহলে তার মৃত্যুর সাথে সাথে তারা কফিন বাক্স বানিয়ে, তাকে সমাহিত করে।
মৃত দেহটির যাতে পচন না ধরে, সেজন্য তারা তামাক পাতা কফিনের বাক্সে রাখে। অতপর এক বছর পূর্ণ হলে নয় সমাহিত স্থান থেকে মৃতদেহকে উঠিয়ে বিরাট ভােজের আয়ােজন করা হয়। সে সময় মৃতদেহ চিতায় নেওয়া হয়। তখন তার পেছনে এক বাদক দল থাকে। তারা বাদ্য বাজিয়ে সম্মানের সাথে নিয়ে যায়। এ সময় আবাল বৃদ্ধ বনিতা অংশগ্রহণ করতে পারে। শুকনাে লাকড়ির উপর মৃতদেহকে শােয়ানাে হয় এবং বৌদ্ধভিক্ষুর মন্ত্র পাঠ শেষে মৃত ব্যক্তির ছেলে বা মেয়েকে দিয়ে চিতায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
শ্মশান থেকে ফিরে আসার পর সকলকে স্নান করে ঘরে ঢুকতে হয়। ঘরের দুয়ারে একটা পাত্রে আগুন জ্বালিয়ে আগুনের ধােয়া গায়ে লাগিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে হয়। এ আগুনের ধােয়া গায়ের মধ্যে লাগানাের উদ্দেশ্য হচ্ছে মৃত লোকটির আত্ম যেন ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। সেদিন বিরাট ভােজের আয়ােজন করা হয় এবং সারারাত পালাগান অনুষ্ঠিত হয়।
এ পালাগানকে বলা হয় পাংখুং। এ পাংখুং অনুষ্ঠান মারমা শিল্পীরা পরিবেশন করে থাকে। উক্ত ভােজে কোনাে মাংস পরিবেশন করা হয় না। যে কোনাে পুঁটকি তরকারি দিয়ে রান্না করে ভােজের খাবার দেওয়া হয়।
খিয়াং দের ঐতিহ্যগত সামাজিক সংগঠন
পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য আদিবাসী জাতির মতাে খিয়াংদেরও ঐতিহ্যগত সামাজিক সংগঠন রয়েছে। সামাজিক ব্যবস্থার প্রধানকে তারা হেডম্যান/কার্বারী বলে। কার্বারী সাধারণত গ্রামের প্রধান হয়ে থাকেন। সমাজের যে কোনাে ধরনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি তিনি তার বিচারিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে থাকেন।
তারা যেমন সমাজের সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র তেমনি সমাজকল্যাণ ও পারাবাসীর বাবার কল্যাণের জন্য নিবেদিত থাকেন। প্রথাগত আইন সম্বন্ধে সম্যক ধারণা আছে, সৎ ও চরিত্রবান এমন একজন বয়ােজ্যেষ্ঠকে পাড়াবাসীরা কার্বারী হিসেবে মনোনীত করে থাকেন। উত্তরাধিকার কিংবা বংশ পরম্পরায় মনােনীত কার্বারী খিয়ংদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়।
খিয়াং দের অর্থনৈতিক সংগঠন
খিয়াং জাতির আর্থ-সামাজিক অবস্থা
পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরাপর জনগােষ্ঠীর ন্যায় খিয়াং জনগােষ্ঠীর অধিকাংশ লােকজন এখনও ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা অত্যন্ত বেশি। যার কারণে আধুনিক বিজ্ঞানমুখী কোনাে কর্মকাণ্ড তাদের কাছে অনুপস্থিত।
তারা মনে করে জাত প্রকৃতির সন্তান আর ভূমি প্রকৃতির দান। জমি, জঙ্গল, পাহাড় মানুষের বসবাস জীবিকার জন্য, দখলের জন্য নয়। খিয়াংরা কোনাে জমিতেই বছরে একবারের বেশি চাষ করতাে না। পুনরায় আগের জমিতে চাষ করার জন্য ফিরে আসতে ১০-১২ বছর সময় লাগত। তাই ভূমিতে কখনই খিয়াংরা নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠার কথা ভাবেনি।
আজ আধুনিক যুগে এসে দিন দিন দরিদ্রতা ও ভূমিহীনতা তাদের সমস্যাসমূহকে আরও প্রকট করে তুলেছে। কিন্তু বর্তমানে তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জুম ভূমির ক্রমাগত সংকোচন, বহিরাগত অনুপ্রবেশ, নিজেদের চিরায়ত ভূমি অন্যের দখলে চলে যাওয়া প্রভৃতি কারণে তাদের অর্থনৈতিক কাঠামাে শক্তিশালী হতে পারেনি। তাছাড়া শিক্ষার অভাবটাও একটা বড় কারণ। জুম ভূমির স্বল্পতার কারণে অনেকে ফলবাগান চাষে আগ্রহী হয়েছে।
তবে বাগানে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের অসুবিধা এবং পণ্য পরিবহনের জন্য যােগাযােগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় উৎপাদিত ফসলাদির ন্যায্যমূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে ভাষা ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনভিজ্ঞতা প্রভৃতি কারণে তারা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারছে না। আর এজন্যই তাদের অর্থনৈতিক ভিত দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে।
জুম চাষের পাশাপাশি খিয়াংরা পাহাড়ে বিভিন্ন ধরনের ফলবাগান, যেমন : কলা, আনারস, আম, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা ও অন্যান্য ফলমূল উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া গবাদি পশু, যেমন : শূকর, গরু, মহিষ, হাঁস, মুরগি ইত্যাদি পালন করতেও দেখা যায়।
খিয়াং জাতির প্রথাগত অধিকার ও ভূমি হারানাে
খিয়াং সমাজে তাদের বংশ পরম্পরায় যৌথ সামাজিক মালিকানার ভিত্তিতে ভূমির মালিকানা প্রথা প্রচলন রয়েছে। প্রাচীনকালে জনসংখ্যার তুলনায় পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ছিল প্রচুর। তাদের যখন ভূমির প্রয়ােজন হয়েছে তখন পাহাড়ে আগাছা জঙ্গল পরিষ্কার করে ভূমি তৈরি করে নিয়েছেকরে নিয়েছে কিংবা জলা এলাকার মাটি ভরাট করে নিজেদের প্রয়ােজন ও সুবিধামত ভূমি তৈরি করেছে। তখন তারা রাজাকে রাজস্ব দিয়ে ভােগদখল করেছে। এতে কোনাে সমস্যা হয়নি।
কিন্তু বর্তমান সময়ে খিয়াংদের প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অধিকারকে পদদলিত করে তাদের ভর উপর ক্রমাগত বহিরাগত অনুপ্রবেশ ও পুনর্বাসন, বহিরাগতদের নিকট তাদের ভূমি ইজারা প্রদান, নানা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ভূমি অধিগ্রহণের কারণে এই নিভৃত অরণ্যনির্ভর খিয়াংরা দিন দিন তাদের ঐতিহ্যগত ভূমির মালিকানা হারাচ্ছে।
বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন কাপ্তাই পাল্পউড বাগান প্রকল্পের মাধ্যমে বনায়নের জন্য ধনুছড়ি মৌজার ৩৯৫৯ একর জায়গা থেকে ৩৮৮৯ একর জায়গা ১৯৭৬ সালে অধিগ্রহণ করায় অবশিষ্ট মাত্র ৭০ একর পাহাড় ভূমি ২০০ পরিবারের জন্য বয়ে যায়, যা তাদের জীবন-জীবিকার জন্য কোনােমতেই পর্যাপ্ত নয়।
এ বনায়ন কর্মসূচির ফলে তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন জুমচাষ ও পশুপালনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং দিন দিন এরা ভূমিহীন জাতিতে পরিণত হচ্ছে। সরকারের সামাজিক বনায়নের ফলে বন বিভাগ কর্তৃক যত্রতত্র খিয়াংরা বনের উপর তাদের সনাতনী অধিকার হারাচ্ছে।
বিভিন্ন সময় খিয়াংদের হাজার হাজার একর পাহাড়ি ঢালু জমি সরকার অধিগ্রহণ করে। ফলে আজ উচ্ছেদের মুখে পতিত হয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার ১০ নং ধােয়াছড়ি ইউনিয়নের বসবাসরত খিয়াং ও রাঙ্গামাটি জেলা রাজস্থলী থানার ধুনছড়ি জনপদের খিয়াংরা। পাশাপাশি একশ্রেণীর মহাজনের সুদ ব্যবসার ফাঁদে পড়ে অনেক খিয়াং আজ তাদের সর্বস্ব হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে।
খিয়াং জাতির উত্তরাধিকার আইন ও সম্পত্তির মালিকানা
১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির ৪২ বিধি মতে, পাহাড়ে জুম চাষের জন্য জমির মালিকানা স্বত্বের প্রয়ােজন হয় না। পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসকারী খিয়াং সমাজ ব্যবস্থায় অদ্যাবধি জুম চাষ প্রধান পেশা। ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪২ বিধিমতে পাহাড়ে জুম চাষের জন্য জমির মালিকানা স্বত্বের প্রয়োজন হয় না, যার কারণে খিয়াং সমাজে স্থাবর সম্পত্তি তথা ভূমির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা স্থায়ী মালিকানা স্বত্ব অর্জনের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।
ইদানীংকালে জুম চাষের জন্য নতুন নতুন জমির অপ্রতুলতা এবং পর্যায়ক্রমে একই জমিতে বংশানুক্রমিকভাবে অবস্থানের কারণে খিয়াং জনগােষ্ঠীর মধ্যে উদ্যান কৃষির প্রতি মনােযােগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষিত সমাজে ভূ-সম্পত্তির উপর স্থায়ী মালিকানা স্বত্ব অর্জনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণার উদ্ভব হচ্ছে।
খিয়াং সমাজে সম্পত্তির মালিকের মৃত্যুর পর মৃতের সৎকার, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পাদনের পর, তার অনাদায়ী ঋণ (যদি থাকে), জীবদ্দশায় সম্পাদিত উইল বা দানমূলে দখল হস্তান্তরিত হয়েছে কিন্তু মালিকানা স্বত্ব হস্তান্তরিত হয়নি এমন ভূ-সম্পত্তির দায়-দাবি মেটানাের পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার উত্তরাধিকারীগণের অধিকার বর্তাবে। একজন সম্পত্তির মালিকের সম্পূর্ণ স্থাবর সম্পত্তি উত্তরাধিকারযােগ্য সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে না।
তিন পার্বত্য জেলার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, গ্রামের কার্বারী, পৌর চেয়ারম্যান, সার্কেল চিফ-এর নিকট হতে মতামত ও সুপারিশ গ্রহণপূর্বক ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি মতে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে সংশ্লিষ্ট জেলার দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে বিবিধ মামলা মূলে তিনি মৃত ব্যক্তির আইনগত উত্তরাধিকারীগণকে উত্তরাধিকার সনদপত্র প্রদান করেন।
পার্বত্য জেলাসমূহে বসবাসকারী খিয়াং পরিবারের কারাে মৃত্যুর পর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ব্যয়িত খরচ, তার জীবদ্দশায় অনাদায়ী ঋণ এবং জীবদ্দশায় কোনাে সম্পত্তি দান বা বিক্রি কিংবা মৃত্যুর পূর্বে সম্পাদিত উইল ইত্যাদির ঋণ পরিশােধ বা নিষ্পন্ন করার পর নিম্নোক্ত উপায়ে খিয়াং সমাজে উত্তরাধিকারযােগ্য স্থাবর সম্পত্তি ভাগ বণ্টন হয়ে থাকে—
ক. খিয়াং জনগােষ্ঠীর ‘লাইতু’ উপদলের/শাখার প্রচলিত রীতি অনুসারে মৃতব্যক্তির পুত্র ও কন্যারা সম্পত্তির আইনগত উত্তরাধিকারী হবে। মৃত পিতার নামীয় সম্পত্তি হতে পুত্রগণ ২/৩ ভাগ এবং কন্যারা ১/৩ ভাগ উত্তরাধিকারী হবে।
খ. পুত্রের অবর্তমানে কন্যাসন্তানরা মৃত পিতার সম্পূর্ণ সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়। মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হলে তার স্ত্রী, সহােদর, ভাইয়ের অবর্তমানে ভ্রাতুস্পুত্ররা মৃতের সম্পত্তির আইনগত উত্তরাধিকারী হয়।
গ. মৃত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র-সন্তানরা মৃতের সম্পত্তিতে সমান উত্তরাধিকার লাভ করে।
ঘ. দত্তক পুত্র পালক পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। দত্তক পুত্র গ্রহণের পর যদি পালক পিতার ঔরসজাত পুত্র সন্তান হয়, সেক্ষেত্রে নিজ সন্তানের ন্যায় দত্তক পুত্রও মৃতের সম্পত্তির ১/৪ অংশের উত্তরাধিকারী হয়।
ঙ. অবৈধ সন্তান এবং সমাজচ্যুত সন্তান যদি সামাজিক বিচারে স্বীকৃতি পায়, তাহলে মৃত পিতার আইনগত উত্তরাধিকারী হয়।
চ. পুত্ররা মাতার সম্পত্তিতে সমান উত্তরাধিকারী হয়। তবে পুত্ররা না থাকলে কন্যারা মাতার সম্পত্তির আইনগত উত্তরাধিকারী হয়।
ছ. দান বা উইলের মাধ্যমে পিতামাতার নিকট হতে কন্যা অথবা স্বামীর নিকট হতে স্ত্রীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
খিয়াং দের পেশার প্রকারভেদ
পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসকারী খিয়াং সমাজ ব্যবস্থায় অদ্যাবধি জুম চাষ তাদের প্রধান পেশা । ইদানীংকালে জুম চাষের নতুন জমির অপ্রতুলতা এবং পর্যায়ক্রমে একই জমিতে বংশানুক্রমিকভাবে অবস্থানের কারণে খিয়াং জনগােষ্ঠীর মধ্যে উদ্যান কৃষির প্রতি মনােযােগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাঁশ, কাঠ, কৃষি শ্রমের সমতল বাঙালিদের কাছে দৈনিক ১০০ টাকা মজুরি ভিত্তিতে খিয়াংদের তাদের শ্রম বিক্রি করতে দেখা যায়।
অনেক সময় অভাবের দিনগুলােতে তারা মহাজনের কাছ থেকে মজুরির অর্ধেক টাকা অগ্রিম নিয়ে তাদের শ্রম আগাম বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এভাবেই মহাজনরা খিয়াংদের দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তাদের নিকট কাজ করতে বাধ্য করে। এর ফলে তারা হারাচ্ছে তাদের ন্যায্য পাওনা আর অন্যদিকে তারা পারছে না স্বাধীনভাবে কাজ করতে। এভাবেই পার হয় তাদের দৈনন্দিন কর্মজীবন।
বাসস্থানের ধরন
খিয়াংরা তাদের বাসস্থানের ক্ষেত্রে সনাতনী পন্থা অবলম্বন করে থাকে। বাড়ি ঘর তৈরি করার সময় উচুঁ মাচা, খড়ের ছাউনি আর ছােট্ট করে যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়। তারা বন্য পশুদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে এ পন্থা আদিকাল থেকে অনুসরণ করে আসছে। তবে বর্তমানে এর কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়।
খিয়াং দের ধর্মীয় অবস্থা
ধর্ম ও ধর্মীয় গােষ্ঠী
খিয়াংরা একসময় মূলত প্রকৃতি পূজারি ছিল। পর্যায়ক্রমে তারা বৌদ্ধ ও খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে। তবে যতদূর জানা যায় খিয়াংরা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিল । কিন্তু কিছু মাং দুঃখ কষ্ট আর ভাগ্যকে পরিবর্তনের জন্য খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে খিয়াংদের প্রায় অর্ধেকাংশ খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী হলে গ্রামীণ সমাজে দেবতা, অপদেবতা, প্রকৃতি পূজার প্রবণতা আজো বিদ্যামান। খিয়াং সমাজের রীতিনীতি ও প্রথাগত আইন তাদের সামাজিক আচারলােকবিশ্বাস ও মূল্যবােধের উপর প্রতিষ্ঠিত।
খিয়াং সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি প্রথা, লােকবিশ্বাস ও মূল্যবােধের প্রতি সমাজের আনুগত্য ও সমর্থন রয়েছে যেমন—দেব-দেবী পূজার মন্ত্র ও পদ্ধতি, তন্ত্র-মন্ত্র, ঝাড়ফুড়, তাবিজ/মাদল প্রস্তুত বা লিখন ও ভেষজ চিকিৎসার কার্যকারিতার বিষয়ে খিয়াং সমাজের বিশ্বাস সুপ্রাচীনকালের। তাছাড়া তাদের মাঝে ধর্মীয় প্রভাবও লক্ষ করা যায় ।
অঞ্চলভেদে খিয়াংরা ভিন্ন-ভিন্ন ধর্মের অনুসারী। যেমন : বান্দরবান সদর উপজেলার ৩২৪ নম্বর চেনী মৌজায় বসবাসরত খিয়াংরা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তবে কিছু কিছু পরিবার খ্রিস্টান ধর্মেও ধর্মান্তরিত হয়েছে। এছাড়া রােয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলি থানা ও কাপ্তাই চন্দ্রঘােনা এলাকার খিয়াংরা মূলত খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী।
তবে সেসব উপজেলার কয়েকটি পাড়ায়ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী খিয়াং পরিলক্ষিত হয়। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী খিয়াংদের মধ্যে ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি ও সেভেনডে এডভেন্টিস মিশনারি অনুসারী ও অল্প কিছু সংখ্যক রােমান ক্যাথলিকও রয়েছে বলে জানা যায়।
খিয়াং ধর্মীয় উৎসব
খিয়াং সমাজের বৌদ্ধ ও খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী উভয় সম্প্রদায়ই তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী খিয়াংরা যেসব ধর্মীয় উৎসব পালন করে সেগুলাের মধ্যে অন্যতম। হলাে—সাংলান (বৈশাখী পুর্ণিমা), ওয়াছ (আষাঢ়ী পূর্ণিমা), ওয়াগ্যত (মাঘী পূর্ণিমা) ইত্যাদি। অন্যদিকে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী খিয়াংরা বড়দিন জাঁকজমকভাবে পালন করে থাকে।
বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলেও খিয়াংরা তাদের ঐতিহ্যগত সমাজ ব্যবস্থা, রীতিনীতি, সংস্কৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম খুব সুন্দর ও দক্ষভাবে বজায় রেখেছে। ধর্মের কোনাে অনুশাসন তাদের এই বিশ্বাসকে আজও স্নান করতে পারেনি।
ধর্মান্তরকরণ ও এর প্রভাব
খিয়াংরা অতীতে বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী ছিল। বর্তমানে খিয়াংদেরকে খ্রিস্টান ধর্মেও ধর্মান্তর হতে দেখা যায়। বিশেষত শিক্ষা অর্জন, আর্থিক সহায়তা লাভ, স্কুল-কলেজ-অনাথ আশ্রম স্থাপন, সর্বোপরি নিজস্ব ধ্যান-ধারণা বিশ্বাস যে তারাও ধর্মান্তরকরণ হয়েছে বলে জানা যায়।
আদিকাল থেকেই খিয়াংদের মধ্যে কিছু খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিল। এ দলে ‘লাইতু’ খিয়াংদেরকেও ধর্মান্তকরন হতে দেখা যায়। ধর্মান্তরকরণের ফলে দু-একটি এলাকায় খিয়াংদের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। তবে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণের ফলে খিয়াংদের আদি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথার উপর নানা ধরনের প্রভাব পড়েছে বলা যায়।
খিয়াং সামাজিক উৎসব
খিয়াং জনগােষ্ঠীর মধ্যে অনেক ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—রাজপুণ্যাহ, হেনেই, হৃ উহ্ পেই, ওপেল, সৈত্যবীল, বুগেলে উহ্ খ পেই, লাংকানহ্ পেই ইত্যাদি। নিম্নে এসব উৎসবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া গেল-
বিস্তারিত জানতে পড়ূন – খিয়াং আদিবাসীদের পূজা-পার্বন
খিয়াং রাজপুণ্যাহ
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী বােমাং সার্কেলের অন্তর্গত খিয়াংরা উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে রাজার খাজনা সংগ্রহ অনুষ্ঠান ‘রাজপুণ্যাহ’তে অংশগ্রহণ করে থাকে। সাধারণত প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান বান্দরবানস্থ রাজার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
হেনেই
হেনেই অনুষ্ঠানটি পাশাপাশি একাধিক পরিবারের লােকজন একজোট হয়ে উদযাপন করে থাকে। সাধারণত জুমের ধান রােপণের সময় বা জুমের ধান কাটার পরেও হেনেই অনুষ্ঠান করে। অনুষ্ঠানটি বছরে অন্তত তিন বার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটাকে নবান্ন উৎসবও বলা হয়।
গ্রামের লােকজন তাদের সুবিধামতাে একত্রিত হয়ে কোনাে ছড়া বা ঝরনাধারার কাছে গরু বা মহিষ বধ করে অনুষ্ঠানটি পালন করে থাকে। উক্ত গরু বা মহিষের মাংস রান্না করে রীতিমতাে পূজা-অর্চনা পরে পাড়ার সকলে মিলেমিশে ভােজে অংশগ্রহণ করে। এ সময় কেউ কেউ মদ পান করে আনন্দে মেতে ওঠে।
সৈত্যবীল
এটি গ্রামবাসীদের একটি খাওয়া-দাওয়ার উৎসব। গ্রামবাসী সকলে মিলে মিশে পরিমানমতাে চাল ঢেঁকিতে গুঁড়াে করে । চাউলের গুঁড়াে, নারিকেল, গুড়, আঁখ এবং ‘ অন্যান্য প্রয়ােজনীয় জিনিস একটা গামলায় বা ডেকচিতে ভালােভাবে মেশানাে হয়। এ সকল মিশানো জিনিসকেই খিয়াং ভাষায় সৈত্যবীল বলা হয়। সেই মিশ্রিত জিনিসের ডেকচি বা গামলার চারিপার্শ্বে লােকেরা বসে সে গামলা হতে খাবার নিয়ে তৃপ্তি সহকারে একসাথে খায়।
বুগেলে
জুমে ধান রােপণের পর দেবতার উদ্দেশ্যে এই বুগেলে’ অনুষ্ঠান করা হয়। যখন জুমের ধানের চারা ওঠে, তখন তারা জুমে শূকর বলি দিয়ে বুগেলে অনুষ্ঠান করে। এ পূজার উদ্দেশ্য হচ্ছে জুমের ধান, তুলা ও অন্যান্য ফসল ভালােভাবে বনাঙ্গ থেকে রক্ষা পেয়ে যেন অধিক ফলন হয়। শূকর কেটে গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ভােজে মদ ও মাংস দিয়ে খাওয়া হয়।
খিয়াং লােক-সংস্কৃতি ও সাহিত্য
খিয়াং গান ও ছড়া
খিয়াংদের ভাষায় নানা ধরনের ঐতিহ্যমণ্ডিত গান ও ছড়া রয়েছে। এর কয়েকটি উদাহরণ নিচে দেয়া হলাে—
বেলেক চ্ও খ্রহােমও
লুংখিং লুংখিয়াং নেমেই ন্ তি-এই
তেকতেলেন লা থিং পােক স্ চে
কেইবে লেক চ্লা হেউ সুই সতিং কিখিন নু
সুগ্লু সেই অং চং ফোউ বে-ই
লংবয়হ্ খ্রাওং চং হাে বে-ই
সকি খাে ওং চং চেল বে-ই।
অঙ তেউয়া বেন লু-আক হুইহ্
উই থেই তেউয়া য়োং পুমাক হুইহ্
সুসিম তেউয়া লানসু তেউয়া
লুখিং লুখিয়াং নেএে ন্ তি-এই।
অনুবাদ : জোছনার আলাের মতাে ভাই আমার, একা একা তুমি রয়েছো, কাঠঠোকরা পাখির গাছ ঠোকরানাের শব্দে মনে হচ্ছে, তুমি বনে লাকড়ি সংগ্রহ করছ, আমলকির পাতায় ধানগুলি শুকাতে দিও, এক প্রকার বড় পাখির পালকে ধানগুলি ঝেড়ে নিও আর হরিণের মতাে পায়ে ধানগুলি নেড়ে যেও। কাকের ঝকের মাঝে একটি বকের মতো, শিকারি কুকুরের মাঝে একটি বানরের মতাে নির্জন পাহাড়ের শক্রর মতাে একা একা রয়েছ তুমি।
খিয়াং ছড়া ঙুলুই ও ঙুলুউ ও
ইয়া নে বেং সেন স-ওম
সেনাইহ্ খিয়াং ঙালা কেসেন স হিয়াহ্
লুং পেক পে চলা একেপ নকা
লুং পেক পে চ-ও লুং পেক পে চ-ও
ইয়া নেকেপ নক সওম
কেপ ন-আইহ খিয়াং ঙালা কেকেপ নক স্ হিয়াহ্
থিং বাক্ ও থিং বাক্ ও
ইয়া ন-খ্রক নক সওম
খ্র ন-আই খিয়াং ঙালা ক-খ্রক নক স্ হিয়াহ্
য়োং লা ইহি্লনা
য়োং ও য়োং ও
ইয়া নি-হি্লন সওম
হি্লনাইহ্ খিয়াং ঙালা কিহিন স্ হিয়াহ
উই লা অনকা
উই ও উই ও
ইয়া ন-নক সওম
নকাইহ খিয়াং ঙালা কনক স হিয়াহ্
মহ্ নুলা মহ্ পলা সুহ্ খ্রং তে: কা দ:
মহ নুলা মহ প:ও
ইয়া সুহ্ নেতেক সওম
তে:কাই খিয়াং ঙালা কেতেক স হিয়াহ্
লেউআ হিল থেইহ্ পানচি থেইহ্ খােল
তেউ পেচে লা ইনি এ য়া দঃ।
অনুবাদ
ও টাকি ও টাকি
কেন গাল লাল?
আমার ইচ্ছাতে হয়নি লাল
দিয়েছে পাথরে চেপে।
ও পাথর ও পাথর কেন দিলে চেপে?
আমার ইচ্ছাতে হয়নি চাপা
গাছের ডাল পড়ে।
ও ডাল ও ডাল
কেন পড়লে গায়ে?
আমার ইচ্ছাতে পড়িনি আমি
বানর দিল নেড়ে।
ও বানর ও বানর
কেন গাছের ডাল নাড়লে?
আমার ইচ্ছাতে নাড়িনি ডাল,
কুকুর ঘেউ ঘেউ করলে।
ও কুকুর ও কুকুর কেন ঘেউ ঘেউ করলে?
আমার ইচ্ছেতে করিনি ঘেউ ঘেউ,
গৃহ-কৰ্তাকত্রী ঝুকিয়ে দিল বলে আমায়।
ও গৃহকর্তা ও গৃহকত্রী
কেন ঝুঁকিয়ে দিলে?
আমাদের ইচ্ছাতে ঝুঁকিয়ে দিইনি
জুমের ফল ফসলাদি
খেয়ে নষ্ট করেছে বন্যপ্রাণী তাই।
খিয়াং রূপকথা ও লােককাহিনী
অতীতে লিখিত নিজস্ব কোনাে লেখা পত্র না থাকায় খিয়াংদের লিখিত সাহিত্য খুব একটা দেখা যায় না। তবে মৌখিক রচনাশৈলী নির্ভর খিয়াংদের সাহিত্যের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। যেমন : ‘কই কাইহ্য ক্রখঃ খিয়াংদের মাঝে এক অলিখিত সাহিত্য। পৃথিবী সৃষ্টি, চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ, মানব সৃষ্টির ইতিহাস, ভূমিকম্প প্রভৃতি নিয়ে খিয়াংদের রয়েছে নানা কথা ও কাহিনী, যা এখনও তাদের লােককাহিনীর ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে।
খিয়াং পােশাক পরিচ্ছদ
খিয়াংদের নিজস্ব পােশাক ও অলংকার রয়েছে। পুরুষেরা নেংটি এবং নিজেদের হাতে সেলাই করা এক ধরনের জামা পরে। হাটবাজারে যাওয়ার সময় পুরুষেরা কোমর তাঁতে বােনা সাদা জামা এবং ধূতি পরিধান করে। এছাড়া তারা মাথায় পাগড়িও পরে । খিয়াং রমণীদেরও নিজস্ব পােশাক রয়েছে। তাদের পােশাকপরিচ্ছদ দেখতে অনেকটা রাখাইন নারীদের পােশাকের মতাে। তবে তা ভিন্ন। তাদের ব্যবহৃত নিজেদের বুননকৃত থামিকে তারা ‘প্যওন’ এবং বক্ষবন্ধনাকে ‘লাংগত বলে।
অলঙ্কার
খিয়াং রমণীরা বিভিন্ন ধরনের অলংকার পরিধান করে। তারা যেসব অলংকার ব্যবহার করে তার সবগুলোই রূপার তৈরি। নিচে খিয়াং মহিলাদের ব্যবহৃত অলংকার নাম দেওয়া হলাে : ১. খেলখালু (খাড়), ২, হাঁসুলি (গলার অলংকার বিশেষ),৩. তায়্যম (রুপার টাকার মালা), ৪. থেকেল (হাতের প্যাচানাে চুড়ি), ৫.হ্নেথেং (কানের দুল), ৬. লুতুম সুন (চুলের কাঁটা), ৭. কালসি ডাক (দু হাতের বাহুতে পরে), ৮. হেনবে জে-ই (এক প্রকার রুপার চেইন), ৯. ফেমফেলেপ (খোঁপায় ব্যবহৃত প্রজাপতি আকৃতির অলংকার) প্রভৃতি।
খিয়াং তৈজসপত্র
খিয়াংরা বনের বাঁশ ও বেত দিয়ে সুন্দর সুন্দর বাঁশের ঝুড়ি তৈরিতে দক্ষ। তারা দেহ তাদের অন্যান্য প্রয়ােজনীয় আসবাবপত্র তৈরি করে থাকে। তবে তৈজসপত্র হিসেবে মৃৎশিল্পের হাঁড়ি, বাসন-কোসন ইত্যাদির প্রচলন আছে বলে জানা যায়।
খিয়াং খাদ্যাভ্যাস
খিয়াংরা ভাতের সাথে প্রচুর পরিমাণে সবজি খেতে পছন্দ করে। বেশির ভাগ সবজি সিদ্ধ করে খায়। এছাড়া শুকনাে মাছ দিয়ে তৈরি এক প্রকার খাবার ‘নাপ্পি ও তাদের পছন্দের। বন্য প্রাণী শিকার করলে এর কিছু অংশ চুলার উপর বাঁশের তৈরি শিক দিয়ে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে তারা সেগুলাে রান্না করে খেয়ে থাকে। এছাড়া তারা নিজেরাই ঘরে মদ তৈরি করে। সাধারণত নিজেদের তৈরি মদ দিয়ে তারা অতিথি আপ্যায়ন করে।
ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা
খিয়াংদের মাঝে মল্লযুদ্ধ বা বলী খেলা প্রচলন রয়েছে। সেকালে মন্ত্রবিদ ‘পত্তবলী’র নাম এখনও খিয়াংদের মুখে মুখে ফেরে।
সংস্কার
মৃতের শবযাত্রা নবজাতক কিংবা শিশুদের দেখাতে নেই, কারণ এতে মৃত ব্যক্তির পন্যাত্রী হতে হয়। কমপূম’ মাছ কিংবা মাংস বাজার থেকে প্রকাশ্যে আনতে নেই তাতে চূংনূ নামক অপদেবতা বুড়ির কুনজর পড়ে। নিছক দায়ে পড়ে আনতে হলে এক টুকরো তেতুল টক কুনজর’ মুক্ত করে রান্না করতে হয়। নবজাতক সন্তানকে ছুঁতে হলে আগুনে হাত একটু গরম করে নিতে হয় তা না হলে শিশুর অমঙ্গল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ; এমন অনেক সংস্কার খিয়াংদের মাঝে প্রচলন আছে।
খিয়াং ভাষা ও বর্ণমালা
খিয়াংদের ভাষা সিনাে-টিবেটান পরিবারের তিব্বতি-ব্ৰহ্ম শাখার কুকি-চীন দলভুক্ত। মায়ানমারে বিভিন্ন জেলায় বসবাসরত খিয়াংদের ভাষায় অঞ্চল ভেদে উচ্চারণের ক্ষেত্রে আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে জানা যায়। খিয়াংদের নিজস্ব কোনাে বর্ণমালা নেই। একটা শব্দ দিয়ে উচ্চারণভেদে অনেক অর্থ বুঝানাে হয়। যেমন—চী’ শব্দের অর্থ দিদি (বড় বােন)। আবার চি অর্থ ছাঁকা বা লবণ বােঝায়। নিম্নে তাদের ভাষার কিছু শব্দ/বাক্য দেওয়া হলাে-
বাংলা শব্দ/বাক্য | খিয়াং শব্দ/বাক্য | বাংলা শব্দ/ বাক্য | খিয়াং শব্দ/ বাক্য |
দিদি (বড় বোন) লবণ ছাঁকা ছাটা রক্ত পায়ের গোড়ালি দিয়ে মারা আমি তুমি/ আপনি সে | চী চি চি থি থী থি কেই নাং আনি | তারা খাওয়া পান করা কেমন আছ? তোমার নাম কি? আমি ভাত খাই আমি পানি পান করি এখন ও খাইনি আমি তোমাকে ভালোবাসি | আনিহ্ এ এই স্ ও ওক স্ খত চ্ নেমেই এই? নাং মিং ইয়ম? কেই বুহ্ কে-এই কেই তুই কো ওক এ হম ঙা কেই নাঙা কিনি হি্লয়িই খহ |
আত্মীয়তা-সম্পর্কিত শব্দ
বাংলা শব্দ | খিয়াং শব্দ | বাংলা শব্দ | খিয়াং ভাষা |
মা বাবা বড় ভাই ছোট ভাই বড় বোন ছোট বোন ভাবী স্ত্রীর বড় বোন স্ত্রীর ছোট বোন ভগ্নিপতি | নু প্ তা্ বে য়ং চী বে সু ঞক্ সোং মীরি খ্রেএ-মাহ্ বে পত্ঃ | ভাসুর কাকা কাকি জেঠা জেঠি মামা মামি মাসি পিসি পিসা | ওসোং চেই প্ লেক পেক নুলেক প্ লেন নু লেন পুঃ পুঁই নু লেক চ্যাং হ্ ম্ক চাং |
খিয়াং জাতির শিক্ষা
খিয়াং জনগােষ্ঠীর শিক্ষার হার সম্পর্কে সরকারি কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এটা সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য যে,খিয়াং জনগােষ্ঠী শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। খিয়াংদের আবাসস্থল অধিকাংশই দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত এবং খিয়াং বসতিগুলাে পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
ফলে সরকারি নিয়ম অনুসারে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর প্রয়ােজনীয় শর্তগুলো পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। বিশেষ করে একটি স্কুলের সরকারি অনুমােদন পাওয়ার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪০ জন ছাত্র দরকার বা বন্দোবস্তকৃত জমি দরকার। খিয়াং বসতিগুলো দুর্গম অঞ্চলে হওয়ায় এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে খিয়াং বসতি এলাকায় কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। আর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়তো কল্পনাতীত ব্যাপার।
এছাড়া সরকারি স্কুলগুলাে দূরবর্তী অঞ্চলে হওয়ায় দুর্গম পথ পেরিয়ে কচি কচি খিয়াং ছেলেমেয়েদের পক্ষে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করা কখনােই সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে কিছুদিন স্কুলে যাওয়ার পর অধিকাংশ খিয়াং ছেলেমেয়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। আবার এতে আবার অধিকাংশ খিয়াং অত্যন্ত গরিব হওয়ায় ছেলেমেয়েরাও মা-বাবার সাথে জুম ক্ষেতে কাজ করে থাকে।
ফলে এতে ছেলেমেয়েদের অধ্যয়নের ক্ষতি হয়ে থাকে। অধিকন্তু স্কুলে পাঠদান করা হয় বাংলা ভাষায়, যা খিয়াং ছেলেমেয়েদের পক্ষে বােঝা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে খিয়াং ছেলেমেয়েরা পড়াশােনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হয়ে দাঁড়ায় স্কুল থেকে ঝরে পড়া। বলা যায়, অন্যান্য জনগােষ্ঠীর মতাে খিয়াং জনগােষ্ঠীর ছেলেমেয়েদেরও শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হচ্ছে মাতৃভাষায় শিক্ষার অভাব।
রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলাধীন খিয়াং অধ্যুষিত কুক্যাছড়ি গ্রামে অরুণ লাইব্রেস কর্তৃক সেভেন ডে এডভেন্টিস মিশনারির সহায়তায় খিয়াং ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি আশ্রম স্থাপন করা হয়। এ আশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে এ গ্রামের খিয়াং ছেলেমেয়েদের নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশােনার সুযােগ-সুবিধা সৃষ্টি হয়।
গত ২০০৭ সালে হঠাৎ করে অরুণ লাইব্রেস আত্মহত্যা করায় ঐ স্কুলটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ এলাকায় খিয়াং ছেলেমেয়েদের পড়াশােনার ক্ষেত্রও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আনঞ্চলিক বা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও এ-স্কুলটি রক্ষার জন্য আশানুরূপভাবে এগিয়ে আসেনি।
খিয়াং নারীর অবস্থা
খিয়াং সমাজে নারীদের শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। যার কারণে খিয়াং ইচ্ছানুযায়ী পাত্র বেছে নেয়ার অধিকার সমাজ স্বীকৃতি দেয়। ছেলে-মেয়ে যাই হােক বিধাতার আশীর্বাদ হিসেবে দেখা হয়। তাই তাদের সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য খুব একটা দেখা যায় না।
নারীর উপর সহিংসতা সামাজিকভাবে গর্হিত অপরাধ। এজন্য খিয়াং সমাজে কঠোর আইন আছে। যেকোনাে কাজ পুরুষের আগে প্রথমে নারীরাই উদ্বোধন করে। সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে খিয়াং নারীর এক-তৃতীয়াংশ ভাগ পাবার প্রথা রয়েছে। নারীরা সার্বিকভাবে পুরুষদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। সাধারণভাবে খিয়াংরা শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তন্মধ্যে খিয়াহ নারীরা পুরুষের তুলনায় আরাে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
খিয়াং সমাজে ‘লাকশােঙ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজসিদ্ধ নিয়মে একজন বিবাহিত স্ত্রী তার স্বামী হতে ভরণপােষণের অধিকারী হয়। একজন খিয়াং নারী বিবাহের পূর্বে বা পরে স্বামীর সংসারে কিংবা পৈতৃক অথবা মাতৃকসূত্রে কিংবা তার আত্মীয় কর্তৃক দান বা উপহার হিসেবে কিংবা স্বউপার্জিত অর্থে সম্পত্তি ক্রয় অথবা লাভ করতে পারে। বিবাহের পূর্বে অর্জিত কোনাে সম্পত্তির উপর আইনত নিরঙ্কুশ মালিকানা স্বত্ব ও অধিকার স্ত্রীর থাকে।
বিবাহের পর একজন নারী স্বামীর পরিবারের পদবি ও মর্যাদার অধিকারী হয়। স্বামী নিষ্ঠুর প্রকৃতির হলে, স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করলে, স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণের কারণে সতিনের সাথে একসঙ্গে সংসারে অবস্থান বা বসবাসে অসম্মত হলে, সেক্ষেত্রে প্রথমা স্ত্রী স্বামীর ভিটায় নিরাপদ অবস্থানে অথবা স্বামীর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের পৃথকানে থেকে স্বামীর নিকট হতে ভরণপােষণ লাভের অধিকারী হয় অথবা সামাজিক আদালতের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পিত্রালয়ে অবস্থান করে স্বামীর নিকট থেকে খােরপােষ লাভের অধিকারী হয়।
বিবাহের পর স্বামী বৈবাহিক সম্পর্ককে অগ্রাহ্য বা অব্যাহত না রাখলে অথবা ভরণপােষণ প্রদানে বিরত থাকলে স্ত্রী তার দাম্পত্য সম্পর্ক ও দাবি পুনরুদ্ধারের জন্য সমাজপতি বা কার্বারী-হেডম্যান আদালতে মামলা করার অধিকার রাখে। স্বামীর দ্বিতীয় বা একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে প্রা আপত্তি করার অধিকার রাখে।
পক্ষান্তরে স্বামী যদি পুরুষত্বহীন বা নপুংসক হলে অথবা দুরারােগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন হলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী সমাজপতি বা কার্বারী-হেডম্যান আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হ্রি কাওয়াল্ স্ আখায়লে ইআলস্’ সম্পাদনের অধিকারী হয়।
রাজনেতিক সংগঠন
স্থানীয় আর জাতীয় রাজনীতিতে খিয়াংদের প্রতিনিধিত্ব খুব কম। এজন্য শিক্ষার অভাব অনেকটা দায়ী। ১৯৮৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন (১৯৮৯ এর ১৯ নং আইন), খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন (১৯৮৯ এর ২০ নং আইন) এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন (১৯৮৯ এর ২১ নং আইন) মূলে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ৩টি স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করা হয়।
প্রত্যেক স্থানীয় পরিষদে স্থানীয় কােন কর্তৃক নির্বাচিত এজন্য আদিবাসী চেয়ারম্যান ও ৩০ জন অন্যান্য সদস্য নবী পরিষদের যাবতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সে সময় এখানকার প্রত্যেক আদিবাসীর মধ্য হতে সদস্য নির্বাচন করা হয়েছিল। তারই ফলশ্রুতিতে অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতি খিয়াংদেরও সেখানে প্রতিনিধিত্ব করার সুযােগ হয়। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা হতে চাই খিয়াং এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা হতে বাছা খিয়াং সদস্য হিসেবে মনােনীত হয়েছিলেন।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ফলে স্থানীয় সরকারের এই কাঠামাে অধিকতর শক্তিশালী করে ১৯৯৮ সালে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের মাধ্যমে অত্র পরিষদের গঠন পুনর্বিন্যাস করা হয়। সে অনুযায়ী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে খিয়াং আদিবাসীদের জন্য সদস্যদের একটি আসন বরাদ্ধ রাখা হয়। তেমনি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদেও খিয়াং জনগােষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বর্তমানে জেলা পরিষদ সমূহ জনগণের প্রত্যক্ষ ভােটের মাধ্যমে নির্বাচিত পরিষদ না হওয়ায় খিয়াং জাতির সদস্যদের কোনাে প্রতিনিধিত্ব এই পরিষদসমূহে নেই।
অপরপক্ষে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলােকে ১৯৯৮ সালে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে লুসাই, বম, পাংখাে, খুমী, চাক এবং খিয়াং জাতির জন্য একজন সদস্য রাখার বিধান আছে। তবে খিয়াং জাতির কেউ এখনও এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযােগ পায়নি। অত্যন্ত স্বল্প জনসংখ্যা হওয়ার কারণে অন্যান্য স্থানীয় সরকার পরিষদ যেমন :ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে খিয়াংদের কোনাে প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযােগ ঘটেনি।
টিকা
১. Tame Chin, Wild Chin
২. আকিয়াব (Akyab), ক্যক্পু(Kyaukpyu) এবং সানডোওয়ে (Satidotus)
৩. মিনবু (Minbu), দেয়েতমোয়া (Theyetmyo), প্রোম (Prome) এবং হেনজাদা(Henzada)
তথ্যসুত্র
১. ত্রিপুরা, সুরেন্দ্র লাল, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি, উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি, ১৯৯৪।
২. আহমেদ, মহিউদ্দিন; চাকমা, মঙ্গল কুমার; হাসান, সােওরাব; আওয়াল, খ. ম. আবদুল ইকবাল, রাশেদ (সম্পাদিত), জুম পাহাড়ের জীবন, গণ উন্নয়ন গ্রন্থাগার, ঢাকা, মে ২০০৮। 3. Gain, Philip, The Chittagong Hill Tracts, Society for Environment and Human Development (SEHD), Dhaka
4. Ishaq, Muhammad(editor), Bangladesh District Gazetteers, Chittagong Hill Tracts, Ministry of Cabinet Affairs, Establishment Division, Government of Bangladesh, Dacca, 1971
5. Mapping-Chittagong Hill Tracts Census Indicators 2001 & Trends (Bangladesh), Geographical Information System (GIS) Unit, Local Government Engineering Department (LGED), Bangladesh, 2005
৬. কামাল, মেসবাহ; ইসলাম, জাহিদুল; চাকমা, সুগত (সম্পাদিত), ডিসেম্বর ২০০৭। আদিবাসী জনগােষ্ঠী, প্রকাশনা- বাংলাদেশ এশিয়াটিক সােসাইটি, ঢাকা,
৭. খান, ড. জাফর আহমেদ, বৈচিত্রের ঐকতান, প্রকাশনা : জেলা প্রশাসন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা, এপ্রিল ২০০৪।
৮.পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতীয় উৎসব ও বিবাহ, উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি।
৯. লুইন, ক্যাপ্টেইন টি. এইচ., বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আদিম জনগােষ্ঠী।
১০. চাকমা, এডভােকেট জ্ঞানেন্দু বিকাশ; রায়, এডভােকেট প্রতিম; দে, শৈলেন (সম্পাদিত), সেপ্টেম্বর ২০০৭। খিয়াং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইন, প্রকাশনা, কপো সেবা সংঘ, আদালত সড়ক, বনরূপা, রাঙ্গামাটি।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।