প্রথাগত আইনে আদিবাসী খুমী নারীর অবস্থান
1752
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১১টি আদিবাসী জাতির মধ্যে অন্যতম সংখ্যালঘু জাতি হলেন খুমী। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের খুমী জাতির মোট জনসংখা ১,২৪১ জন।
তবে খুমীদের নিজস্ব জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে খুমী জনগোষ্ঠীর নেই জনসংখ্যা আনুমানিক এক হাজার আটশত জন। বাংলাদেশে খুমী জনগোষ্ঠী মূলত বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি উপজেলায় বাস করে।
মঙ্গোলীয় নহাজতিভুক্ত ও কুকি চীন ভাষাভাষী দলের অন্তর্ভুক্ত আদিবাসী খুমীরা মূলত প্রকৃতিপূজারী। কালক্রমে তাদের বৌদ্ধ, ক্রাসা ও ইদানিং খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী হতে দেখা গেছে। খুমী জনগোষ্ঠী প্রায় ৪৮টি গোত্রে বিভক্ত। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত খুমীদের মধ্যে ৩২টি গোত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
খুমী ভাষায় ‘খু’ শব্দের অর্থ সীমান্তবর্তী পাহাড় আর `মী’ শব্দের অর্থ মানুষ। সুতরাং খুমী শব্দের অর্থ দাঁড়ায় সীমান্তবর্তী পাহাড়ি মানুষ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে স্বল্প হলেও খুমীদের সামাজিক বন্ধন ও ঐক্য অত্যন্ত দৃঢ়।
ঐতিহ্যগতভাবে খুমীরা উঁচু পাহাড়ে বসবাসে অভ্যস্ত। জুমচাষ এবং শিকার তাদের প্রধান পেশা। প্রকৃতিনির্ভর খুমী জনগোষ্ঠীর জীবনধারা খুবই সরল পিতৃতান্ত্রিক ধারার। যে কারণে খুমী সমাজ বেশ রক্ষণশীল।
অন্যান্য আদিবাসী নারীদের মতো খুমী নারীরা অত্যন্ত পরিশ্রমী হলেও সমাজে নারী-পুরুষে বৈষম্য বিদ্যমান। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে ও পূজা-পার্বণে খুমীরা নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
শিশুর জন্ম থেকে বিয়ে এবং মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীর চেয়ে পুরুষের গুরুত্ব এবং ভূমিকা বেশি। খুমী সমাজে মাতৃকুলের বা মামা-সম্পৰ্কীয় আত্মীয়ের কদর থাকলেও তারা সকলেই পুরুষ।
জুমের ফসল তোলা, পাড়া বন্ধ, নানা দেবতার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পূজাপার্বণ ও আচার-অনুষ্ঠানে পুরুষরাই প্রধান পরিচালনাকারী ও সিদ্ধান্তদাতা। সেখানে নারীরা পুরুষের আজ্ঞা পালনকারী মাত্র।
জন্মশুদ্ধি, বিয়ের সম্বন্ধ স্থাপন, সংস্কাররীতি, কনেপণ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও পুরুষের ইচ্ছার প্রতিফলন বেশি। সমাজে বা পাড়ায় যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেন হেডম্যান কার্বারী।
নেতৃস্থানীয় সমাজপতিদের প্রায় সকলেই পুরুষ এবং সামাজিক/প্রথাগত আদালত পরিচালিত হয় পুরুষ প্রতিনিধির দ্বারা।
খুমী সমাজ নারীদের ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল। খুমীদের বাড়িঘর দোচালা, যা বাঁশের বেড়া দিয়ে দু’ভাগ করা থাকে।
সম্মুখভাগকে বলা হয় বাইরের ঘর আর ভিতরের ভাগ অন্দরমহল। প্রত্যেক খুমী পরিবারে নারীদের জন্য অন্দরমহলে একটি চুলাসহ আলাদা কক্ষ থাকে। বাইরের কেউ বিনা অনুমোতিতে অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পারেনা । প্রবেশ করলে সামাজিক রীতি অনুযায়ী তাকে জরিমানা দিতে হয়।
কোনো যুবকের বাড়িতে কোনো খুমী যুবতীর একা বেড়াতে যাওয়ার রীতি নেই। কোনো যুবকের বাড়িতে একা বেড়াতে গেলে যুবতীকে সামাজিকভাবে অপরাধী হিসাবে গণ্য করা হয় এবং তাকে শালীনতাবর্জিত মেয়ে হিসেবে গণ্য করা হয়।
তবে যেকোনো যুবক যুবতীর বাড়িতে বেড়াতে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যুবকটি ওই যুবতীর নিজ কক্ষে সারারাত গল্পগুজব করে বা আনন্দ উল্লাসে কাটিয়ে দিতে পারে।
কোনো যুবক যুবতীর কাছে বেড়াতে গেল যুবতীকে তার কয়েকজন সঙ্গী সাথীসহ মদ দিয়ে যুবকটিকে তার নিজ কক্ষে আপ্যায়ন করতে হয়। যুবকটিকেও যুবতী ও তার সঙ্গীদের আবদার মতো আপ্যায়ন করতে হয়। এই রীতিটি খুমী নারীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ও পুরুষাধিপত্যের প্রতীক।
বিয়ে
খুমী সমাজে কয়েক প্রকারের বিয়ের প্রথা রয়েছে; যেমন, নিয়মিত বা ধার্য বিবাহ, অনিয়মিত বিবাহ, বহুবিবাহ ও বিধবা বিবাহ। খুমী সমাজে ধার্য বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি নিতে হয়।
পাত্রপক্ষ নিজ গোত্রের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে একটি মোরগ, এক বোতল মদ ও একটি বল্লম নিয়ে পাত্রীপক্ষের গ্রামে যায়। রাতের বেলায় ওইসব উপঢৌকন নিয়ে গিয়ে মেয়ে ও পিতা-মাতার সম্মতি জানতে চাওয়া হয়।
মেয়ে ও মেয়ের অভিভাবকের সম্মতি পেলে মেয়ের বাবাকে বল্লমটি দিয়ে যেতে হয় প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে। তা না-হলে পাত্রপক্ষ বল্লমটি ফেরত নিয়ে যায়। বিয়ের সিদ্ধান্ত হলে কনেপণ ঠিক করা হয়।
নির্দিষ্ট দিন ধার্য করে সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের আয়োজন করা হয়। কনের বাড়িতে ‘আইয়ুলানা পাই’ অনুষ্ঠান সম্পাদনের মাধ্যমে বর-কনের পক্ষে তিন দফা ভোজের পর বিয়ে সম্পন্ন হয়।
এরপর বিবাহিত দম্পতি সমাজসিদ্ধভাবে একত্রে বসবাস করতে পারে। উল্লেখ্য, খুমী বিয়েতে পাত্রীর পক্ষ থেকেও পাত্রের জন্য মাথায় পাগড়ি ও শকর উপঢৌকন হিসেবে দেয়া হয়।
খুমী সমাজে মামা-সম্পর্কীয় আত্মীয়ের বিশেষ কদর ও গুরুত্ব আছে। বিয়েতেও কনের মামাকে সর্বপ্রথম পৃথকভাবে মুরগি রান্না করে খাওয়াতে হয়। বরপক্ষের অতিথিদের জন্য শূকরের মাংস ও কনেপক্ষের অতিথিদের জন্য মুরগির মাংস পরিবেশন করা বাধ্যতামূলক।
প্রেমঘটিত কারণে পাত্র-পাত্রী উভয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে পরস্পরকে স্বামী-স্ত্রী রূপে গ্রহণ করলে অনিয়মিত বিয়ে হয়ে থাকে। পলায়নের পর যদি মেয়ের অভিভাবক/পিতা মেয়েকে সেই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি না হয় কিংবা ছেলেপক্ষ মেয়েপক্ষের দাবি অনুযায়ী কনেপণ দিতে না-পারে, তাহলে মেয়েকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে হয়।
বয়ে হোক না হোক বিয়ে-বহির্ভূত দৈহিক মিলনের জন্য সামাজিক অপরাধ গণ্য করে যথারীতি উভয়কে জরিমানা দিতে হয়। বিয়ে না-হলেও পলাতক অবস্থায় মিলনের ফলে অতি সস্তান বৈধ হয় এবং ঔরসজাত পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়, যদি সামাজিক আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্তানটি পিতার অধিকারে থাকে।
খুমী সমাজে বিধবা বিবাহ ও পুরুষের বহুবিবাহ সচরাচর কম দেখা যায়। তবে এ ধরনের বিয়ে অনুমোদিত। কখনো কোনো মেয়ের স্বামী যদি অকালে মৃত্যুবরণ করে; তবে সেক্ষেত্রে মৃত স্বামীর ছোট ভাইয়ের সাথেও মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর বিয়ে হতে দেখা যায়। খুমীরা নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে বম, ম্রো ও খিয়াংদের সাথেও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।
খুমী সমাজে বরপক্ষের কনেপক্ষকে কনেপণ হিসেবে ১২০টি রুপার পয়সা, ১৯/২১টি (বিজোড় সংখ্যক) মোরগ-মুরগি, ১১/১৩টি বম দিতে হতো। কিন্তু বর্তমানে রুপার মুদ্রা ও বম অবৈধ হিসেবে নিষিদ্ধ করায় খুমী সমাজের বৈবাহিক প্রথাটি সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে খুমীদের সামাজিক সংগঠন খুমী কুহুং সমিতি।
বিগত ২০০৭ সালে ‘ধুমী বৈবাহিক প্রথা সংস্কারমূলক আলোচনা সভা আয়োজন করে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সর্বসম্মতিতে বল্লম ও রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে টাকায় কনেপণ দানের ব্যবস্থা করা হয়।
সংশোধিত কনেপণ প্রথায় কনের পণ ধরা হয়েছে ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা, মায়ের ভাগ (দুধের দাম) ১,০০০ (এক হাজার) টাকা, ভাইয়ের ভাগ ১,০০০ (এক হাজার) টাকা এবং বন্ধুমের পরিবর্তে ৫০০ (পাঁচশত) টাকা।
তাছাড়াও রয়েছে ১৭টি মোরগ-মুরগি। এটি ২০০৮ সালের ফেব্রয়ারি মাসে বান্দরবান সার্কেলের চিফ বোমাং রাজা অংশৈপ্র চৌধুরী সুপারিশ করার পর প্রথাগত আইন হিসেবে অনুমোদন লাভ করে।
খুমী সমাজে আন্তঃগোত্র বিয়েপ্রথা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেজন্য একজন খুমীকে নিজ গোত্রের বাইরের মেয়েকে বিয়ে করতে হয়।
বিবাহবিচ্ছেদ: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না-হলে কার্বারির উপস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে। যৌনমিলনে অক্ষমতা, পুরুষত্বহীনতা, গর্ভধারণে অক্ষমতা ইত্যাদি যুক্তিসংগত কারণে স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের বিরুদ্ধে বিচ্ছেদ দাবি করার অধিকার রাখে।
তাছাড়া সামাজিক আদালতে স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ পরকীয়া বা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে অপরজন বিবাহবিচ্ছেদ দাবি করতে পারেন। স্বামী দোষী সাব্যস্ত হলে তার শশুরকে একটি মাদি শূকর ও ৬০ টাকা জরিমানা দিতে হয়।
উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া মুরগি, শূকর ও পাগড়ি ফেরত দিতে হয়। সেক্ষেত্রে পরকীয়ায় জড়িত নারী-পুরুষকে বিয়ে করতে হয় এবং সামাজিক আদালতের সিদ্ধান্তমতে পূর্ব স্বামী বা স্ত্রীকে বিয়ের খরচের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
বিবাহবিচ্ছেদের সময় নাবালক সন্তান থাকলে তিন বছর পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকার অধিকার পায়। বিচ্ছেদের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলেও সন্তান জন্মদানের পর ৩ বছর পর্যন্ত সন্তান স্ত্রীর হেফাজতে থাকে। সেক্ষেত্রে জন্মদাতা পিতাকে ৩ বছর পর্যন্ত সন্তানের ভরণপোষণ দিতে হয়।
উত্তরাধিকার
জুমচাষ ও পশুপাখি শিকারনির্ভর খুমী জনগোষ্ঠীর উত্তরাধিকার যোগ্য সম্পত্তি বলতে আদিতে তেমন কিছু ছিল না। সাধারণত শিকারের হাতিয়ার, কাপড়-চোপড়, আসবাবপত্র,অলংকার ইত্যাদি অস্থাবর সম্পত্তি উত্তরাধিকারযোগ্য সম্পত্তি হিসাবে গণ্য , বর্তমান সময়ে সম্পত্তির ওপর মালিকানাস্বত্ব অর্জনের পর মূলত স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ভূসম্পত্তি উত্তরাধিকারযোগ্য সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
খুমী পরিবারে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যায়, তার যাবতীয় অনাদায়ী গুণ প্রদান (যদি থাকে) ও অন্যান্য দায়-দেনা মেটানোর পর অবশিষ্ট সম্পদ তার উত্তরাধিকারদের মধ্যে বিলিবণ্টন করা হয়। মৃত ব্যক্তির পুত্র/পুত্ররা খুমী সমাজে মৃত পিতার সম্পত্তির অপ্রতিরোধ্য আইনগত উত্তরাধিকারী।
ঔরসজাত পুত্র, অবৈধ পুত্র ও দত্তক পুত্র সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। পুত্রের অবর্তমানে সহোদর ভাই/ভ্রাতুস্পুত্র, তাদের অবর্তমানে পিতা, নাতি মৃতের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
খুমী উত্তরাধিকার রীতিতে কন্যাসন্তান ও স্ত্রী কখনোই পিতা বা স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। অবিবাহিতা কন্যা বিয়ে আগ পর্যন্ত পিতার কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবার অধিকারী।
স্বামীর মৃত্যুর পর মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে খুমী নারীর কোনো প্রকার আইনগত উত্তরাধিকার থাকে না। স্বামীর মৃত্যুর পর খুমী বিধবার ভরণপোষণের যাবতীয় দায়িত্ব বিধবার আপন ভাইদের ওপর বর্তায়।
স্বামীর জাতি বা আত্মীয়স্বজনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিধবা বোনের ভরণপোষণের দায়-দায়িত্ব ভাইয়েরা নিজ কাঁধে তুলে নেয়। বিধবার সন্তানেরা মায়ের ইচ্ছায় ও মামা-মাতৃকুলের সম্মতিতে নিজ হেফাজতে মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে পারে।
খুমী জনগোষ্ঠীর প্রথাগত উত্তরাধিকারের নিয়মটি নারীর প্রতি চরম বৈষম্যমূলক। পুত্রসন্তান থাকলেও খুমী নারীরা সম্পত্তির উত্তরাধিকার পায় না। পুত্রের অবর্তমানে ক্রমান্বয়ে ভাই/ভ্রাতুস্পুত্র, পিতা, নাতি, কাকা, জেঠা প্রমুখ পিতৃকুলের পুরুষ সদস্যদের সম্পত্তির অধিকার থাকে।
কোনো অবস্থাতেই নারী তার অংশীদার হয় না। স্বামীর মৃত্যুর পরও স্ত্রী স্বামীর সংসারে নয়, আপন ভাইদের হেফাজতে চলে যায়। পুত্রদের মধ্যে অবৈধপুত্র থেকে দত্তক পুত্র পর্যন্ত পিতৃসম্পত্তির অধিকার পায়, কিন্তু ঔরসজাত কন্যা পায় না।
খুমী সমাজে কোনো নারী বিয়ের আগে বা পরে অথবা পূর্বের স্বামীর সংসারে কিংবা পৈতৃক অথবা মাতৃসূত্রে কিংবা তার আত্মীয় কর্তৃক উপহার হিসেবে উপার্জিত সম্পত্তি লাভ করতে পারে।
বিবাহের পূর্বে নিজ নামে অর্জিত সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব ও অধিকার স্ত্রীর থাকে। খুমী সমাজে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী স্বামী ও পিতা-মাতার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে আইনগত অধিকার লাভ করে না।
কেবল স্বামীর জীবদ্দশায় তার সম্পত্তি অধিকারী হয়।তবে স্বামীর মৃত্যুর পর মা-বাবা ও শ্বশুর-শাশুড়ির সম্মতি সাপেক্ষে স্ত্রী তার পিতা-মাতার ঘরে ফিরে না-গিয়ে সন্তানদের সাথে আজীবন থেকে গেলে তিনি স্বামীর সম্পত্তি ভোগ করতে পারবেন।
বিয়ের পূর্বে একজন খুমী নারী পারিবারিক যে পদবি ও সামাজিক মর্যাদার অধিকারীই হোন না কেন, বিয়ের পর পরই তিনি স্বামীর পরিবারের পদবি ও মর্যাদার অধিকারী হন এবং স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবার অধিকারী হন।
সামাজিক প্রথা অনুসারে বিয়ের পর স্বামী ভরণপোষণ প্রদানে বিরত থাকলে স্ত্রী তার দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সামাজিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
স্বামী পুরুষত্বহীন অথবা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে কিংবা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হলে অথবা স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া একাধিক বিয়ে করলে স্ত্রী সামাজিক আদালতের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পাদনের অধিকারী হন।
তবে স্ত্রী তার কোনো সন্তান-সন্ততির অধিকার পান না, কারণ খুমী সমাজটা একটি গোত্রভিত্তিক পিতৃসূত্রীয় সমাজ, এখানে সন্তানরা পিতৃপরিচয়ে পরিচিতি লাভ করে।
তথ্যসূত্রঃ প্রথাগত আইনে আদিবাসী পাহাড়ী নারীর অবস্থান (এডভোকেট সুস্মিতা চাকমা)।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।