গারো উপকথা: মিকখল

Jumjournal
Last updated Aug 29th, 2020

1210

featured image

নসে বিমসে দুই বোন একদিন নদীতে মাছ ধরতে গেল।

যুবতী দুই কন্যাকে দেখে মিকখল বানরের দারুণ ভাবে মনে ধরে গেল। কিভাবে দুই বোনের মন জয় করে একত্রে দু’জনকে লাভ করা যায়

এই চিন্তাতেই সে ব্যাকুল হয়ে পড়ল। অস্থির হয়ে সে একবার গাছে উঠে আবার নদীর পাড়ে নেমে আসে – আবার উঠে, আবার নামে – কিছুতেই কোন বুদ্ধি আসে না। নাঃ, ঠিক সময়ে বুদ্ধিগুলো যে কোথায় যায়।

নদীর উজানে কোন এক গ্রামের যুবকেরা “নকফাস্থে” ( গ্রামের যুবকদের বসবাসের গৃহ ) তৈরী করবার জন্য বাঁশ কাটছিল। বাঁশ কাটা শেষ হলে একজন বলল:

“এই দেখ, আমি একটা সুন্দর ফুলকাটা চোঙা তৈরী করেছি তোমরা এমন পার নাকি?”

“দেখি, দেখি কেমন চোঙা? আমি এর চেয়েও ভাল পারি।” সবাই লেগে গেল চোঙা বানাতে, বানানো শেষ হলে দেখা গেল গেং এর তৈরী চোঙা সবার উপরে।

গেং বলল : “চল চোঙাগুলি নদীতে ভাসিয়ে দিই। ওগুলো ভাসতে ভাসতে নাম না জানা দেশে চলে যাবে, লোকে বলবে কারা এমন সুন্দর চোঙা বানিয়েছে, বড় চমৎকার তো।”

যে যার চোঙাগুলো ভাসিয়ে দিতে লাগল। এভাবে খেলাধুলা শেষে ওরা গ্রামে ফিরে এল।

মিকখল নদীর পাড়ে বসে, যখন ভাবছে এমন সময় সে চোঙাগুলো পানিতে ভেসে আসতে দেখল।

হঠাৎ তার মনে হল এগুলো দিয়েই সে নসে ও দিমসের মন জয় করতে পারে। চোঙাগুলো ভাসতে ভাসতে নসে দিশসের কাছে এলো। একজন অপরজনকে বলল:

“আইআ দিদি, চোকাগুলো ভারী সুন্দর। এসো আমরা বোনের জন্য নিই।”

“আইআ বোন, চোঙাগুলো কেমন ফুল কাটা। চল ভাইয়ের জন্য নিয়ে যাই।”

মিকখল দেখল দু’বোনই চোঙাগুলো তুলে নিচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে সে বলে উঠল, “আমাকে বিয়ে করতে চাইলে চাঙাগুলো নাও।”

গলার স্বর অনুসরণ করে তার উপরে তাকিয়ে দেখে একটা মদা বানর লোভীতুর দৃষ্টি মেলে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

“থু থু, চোঙাও নেব, বনকেও বিয়ে করব না। বোন ফেলে দাও।”

“এই ফেলে দিচ্ছি দিদি, থু থু।”

চোঙাগুলো পানিতে ভেসে গেল। বানর মুখ চুপ করে বসে রইল। দুই বোন মাছ ধরতে ধরতে দুরে চলে গেল।

বেহায়া নিলর্জ্জ মিকখল আস্তে আস্তে উঠে তাদের অনুসরণ করতে আরম্ভ করল।# হঠাৎ দিমসে একটা গাছে সালছামে পাখির বাসা দেখে বলল, ও এই দিদি! এই দেখ, সালাছামের বাসা। ছানাগুলো খুবই ভাল হবে নিশ্চয়ই,”

“সত্যিই তো! নিতে পারলে ভাই-বোন দু’টো খেলা করতে পারতো।

কেউ যদি এগুলো এনে দিত, আহা কি ভালই না হতো! যে এনে দেবে তালপাতার সেপাই হলেও আমি তাকে বিয়ে করতে রাজী।”

“আমিও রাজী।”

এই কথা শুনে মিকখল দারুণ খুশী হয় নিজের পাছায় চাপড় দিয়ে নাচতে লাগল। আমি এনে দিব, তোমরা দু’বোনই এক সঙ্গে আমাকে বিয়ে করবে তো?”

দু’বোন জবাব দিল:

“বানর হলেও তোমাকে ছামে(ভালবাসার পাত্র) বলব বিয়ে করে স্বামী মানব।”

তাদের কথা শেষ হবার আগেই মিকখল লাফ দিয়ে গাছে চড়ল।

কোন ভাবনা চিন্তা না করে আনন্দের আতিশয্যে গাছের উচু ডালে যেখানে সালছামে বাচ্চা তুলেছিল সেই ছোট গর্তের ভিতরে সজোরে হাতটা ঢুকিয়ে দিল।

বাচ্চাগুলো ধরে বার করতে গিয়ে দেখে মহাবিপদ, হাত তো বার করা যাচ্ছে না। বাচ্চাগুলো ছেড়ে দিয়ে শুধু হাতখানা বার করতে চাইল কিন্তু তাও বার করা গেল না, এখন উপায়?

মুখ তুলে নসে জিজ্ঞাসা করল:

কটা বাচ্চা, ছামে, মিকখল?

“তোমরা দু’বোন, আমি আর তোমাদের ছোট ভাই-বোন সবার জন্যই একটা করে ভাগে পড়বে।”

দিমসে বলল:

“চালকী রাখ, গুণে বল ক’টা আছে।”

“এক, দুই, তিন, পাঁচ আহা ভুলে গেলাম যে” এই বলে মিকখল বার বার গুণতে শুরু করে দিল। “ছামে আমরাও দেখি, একটা বার করে দেখাওনা”

এদিকে মিকখলের করুণ অবস্থা, বার বার চেষ্টা করেও কিছুতেই হাতটা বার করতে পারছে না। মুখে বলছে: “এই দেখাচ্ছি, একটু দাড়াও।”

উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নসে দিমসে দুই বোনের ঘাড়ে ব্যথা হয়ে গেল। দু’বোন বার বার বলতে লাগল।

“ছি! ছামে মিকখলের হাতে আটকে গেছে।”

“কই, নাতো, এই দেখ।” এই বলে সে বা হাতটা বাঁকা করে দেখালো। এদিকে টানাটানির চোটে তার হাত ফুলতে আরম্ভ করেছে।

নসে বলল:

“ছামে মিকখলের হাত আটকে গেছে, তাই সালাছের বাচ্চা আনতে পারছে না।”

বাঁ হাত দেখিয়ে মিকখল বলল:

“নাঃ আটকায়নি, এইতো”

সুর্যাস্থ পর্যন্ত অপেক্ষা করে সে বলল:

“চল বোন, যাই, ছামে মিকখল, বানর স্বামী মিকখল এর হাত আটকে গেছে। ছামে মিকখল, তুমি থাক, আমরা যাই।”

দুঃখে ও লজ্জায় মিকখল মুখ তুলে চাইতে পারল না, এতক্ষণে সে নিজের নির্বুদ্ধিতার কথা বুঝতে পেরে কাঁদতে আরম্ভ করল।

কথক: ধরণ সিং সাংমা, তুরা, গারো হিলস্

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা