গারো রূপকথা: মানুষের বন্ধু বেজি
977
এক গ্রামে বাস করত এক কৃষক ও তার বউ। এরা জুম চাষ করত বলে এদের বলা হয় জুমিয়া কৃষক।
কৃষকের বউয়ের একটি পোষা বেজি ছিল। বেজিটিকে সে আপন সন্তানের মতোই লালনপালন করত।
কিছুদিন পর তাদের একটি ছেলে হয়। আশেপাশের লোকজন ভাবে এবার হয়ত কৃষকের বউ বেজিটিকে আর আদর করবে না।
কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণ হয়। কৃষকের বউ বেজিকে বড় ছেলে এবং নবজাতকটিকে ছোট ছেলের মতো আদর যত্ন করে।
এভাবে দিন-মাস-বছর কেটে যায়। শ্রাবণ মাসের একদিনের ঘটনা। ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা-ঘাট কাদা পানিতে ভর্তি।
জুমিয়া কৃষকের বউ পানি আনতে যায়। ঘরে শিশুটিকে দেখার আর কেউ নেই। কৃষকের বউ বেজিকে বলল, আমি খাবারের পানি আনতে যাচ্ছি।
তুমি তোমার ছোট ভাইকে দেখবে। এ সময় শিশু পুত্রটি দোলনায় ঘুমাচ্ছে। বেজি দোলনার কাছে বসে এদিক ওদিক তাকায়।
হঠাৎ সে দেখে, একটি বিষধর সাপ দোলনার দিকে আসছে। অবস্থা বেগতিক দেখে বেজি ঝাপিয়ে পড়ে সাপটির ওপর।
বেজি এবং সাপের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই হয়। লড়াইয়ে সাপটি মারা যায়। তারপর বেজিটি ছুটতে ছুটতে কৃষকের বউয়ের কাছে হাজির হয়।
বেজিকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে কৃষকের বউ ভয়ে কেঁদে ওঠে। সে ধারণা করে, বেজি বোধহয় তাঁর সন্তানকে মেরে ফেলেছে।
পুত্র হত্যার কথা মনে আসতেই কৃষকের বউ বেজির মাথার ওপর পানি ভর্তি কলসি ছুড়ে মারে। সঙ্গে সঙ্গে বেজিটির মৃত্যু হয়।
কৃষকের বউ ছুটতে ছুটতে ঘরে এসে দেখে ছেলে দোলনায় খেলা করছে। পাশে রক্তাক্ত সাপের মৃতদেহ পড়ে আছে।
জুমিয়া কৃষকের বউ বুঝতে পারে ঘটনা। সে আবার ছুটে যায় ঐ বেজির কাছে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। তখন জুমিয়া কৃষকের বউয়ের সে কী কান্না!
খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। গ্রামবাসী তাকে অনেক বুঝায়। কিছুতেই কিছু হয় না।
গ্রামবাসীরা ঠিক করে তারা উৎসব করে জুমিয়া বধূর দুঃখ দূর করবে। তারা বলল, যতই দুঃখ কর বেজি আর ফিরবে না।
কিন্তু তার উপকার চিরদিন মনে রাখার জন্য আমরা উৎসবের আয়োজন করব। তারপর সকলে নদীর পাড়ে যায়।
নদী থেকে মাটি তুলে বেজির মূর্তি বানায়। সবাই সেই বেজির সামনে বসে প্রার্থনা করে। তখন গ্রামবাসী বলে, এই বেজি শুধু রক্ষাকর্তাই নয়, সে ঈশ্বরের বাণীও পৌছে দেয়।
সেই থেকে এখনও গারোরা ঘরে ঘরে বেজির মূর্তি রাখে এবং এর সামনে প্রার্থনা করে। বেজিকে পরমবন্ধু ভেবে তার প্রশংসা করে।
রূপকথাটি সঞ্জীব দ্রং কর্তৃক বর্ণিত
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।