চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম স্টাডিজ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব

Jumjournal
Last updated Dec 21st, 2020

601

featured image

দেশের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ভিত্তি প্রস্তর এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলরের উপস্থিতি এ ধরনের বিরল সৌভাগ্য জুটেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ললাটে। ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেন পূর্ব পাকিস্তানের উপ-জনশিক্ষা পরিচালক মােহাম্মদ ফেরদাউস খান।

স্থান নির্বাচনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এম এ গনিকে সভাপতি, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এলাকার ভৌগােলিক সৌন্দর্য ও প্রাচীন প্রত্ন আবহ বিবেচনা করে বর্তমান স্থানটি নির্ধারণ করে।

১৯৬৪ সালের ২৯ আগস্ট হাটহাজারী থানার ফতেপুর গ্রামের পশ্চিম পট্টির ‘মুড়া’ এলাকায় এক হাজার তিনশত ত্রিশ একর জায়গার উপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রেসিডেন্ট আইউব খান। সেদিন চট্টগ্রামের আপামর জনতার পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ২৫ লক্ষ টাকার একটি তােড়া প্রেসিডেন্টকে উপহার দেয়া হয়।

১৯৬৫ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রফেসর আজিজুর রহমান মল্লিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয় উদ্বোধন করেন গভর্নর ও চ্যান্সেলর আবদুল মােনায়েম খান।

‘ফতেপুর নামকরণের সাথে জড়িয়ে রয়েছে চট্টগ্রামে প্রথম মুসলিম বিজয়ের স্মৃতি’। পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে রয়েছে মধ্যযুগের তাত্ত্বিক মহাকবি আলাওলের স্মৃতিবাহী ‘আলাওলের দিঘি’।

দিঘির পাড়ে প্রাচীন ভাঙা মসজিদের দেয়ালে উত্তীর্ণ প্রত্ন নিদর্শন রুকনুদ্দিন বারবক শাহের মজলিশ ‘আলা রাস্তি খানে’র নাম পাওয়া গেছে। কাছাকাছি ছড়িয়ে আছে সুলতানী আমলের মসজিদ ও শিলালিপি’। ‘মগ ধাওনি’র পূর্ব পর্যন্ত মারমা অভিজাত শ্রেণির বহুসংখ্যক মানুষ ফতেপুর গ্রামের পশ্চিম দিকের পাহাড়ে বসবাস করত।

মারমা সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার সভ্যতা। নাম না জানা এক ধনাঢ্য মগ রাজা বা সর্দারের পরিত্যক্ত ভিটেতে পত্তন হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিত্তি। বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি এ চারটি বিভাগের ২০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে ২৮ নভেম্বর ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়নের সময় ফেরদাউস খানকে ড. এ. আর. মল্লিক বুঝিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। চট্টগ্রামের পূরাকীর্তি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির বহু উপাদান এখানে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তেরটি উপজাতির বর্ণিল, বর্ণাঢ্য পাহাড়ী জীবন সংস্কৃতি তাদের স্বতন্ত্র ভাষা, হস্তশিল্প, নাচগান, সমাজ নৃতত্ত্ব গবেষণার চলমান এক উর্বর ক্ষেত্র। উপরন্তু চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীণ বনাঞ্চাল, বনসম্পদ, বন্যপ্রাণী, অন্যান্য প্রাণবৈচিত্র্য গবেষণার উপযুক্ত স্থান।

বঙ্গোপসাগর নিকটে দূরত্বে অবস্থিত বিধায় সমুদ্র গবেষণার নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে এই বিশ্ববিদ্যালয়। আশা করা হয়েছিলাে এসব বিভাগ খােলার মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী দিনে উপাচার্য ড. এ. আর. মল্লিক সভাপতির ভাষণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে চট্টগ্রামবাসীর আন্তরিক সহযােগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের দেড় কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষিত একটি আকক্ষা পূরণ হলাে’।

তিনি বলেন ‘আমি আপনার অনুমতি নিয়ে এই প্রদেশের, বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের জনগণকে অভিনন্দন জানাতে চাই যে, আজকের এই শুভদিনে তাদের এই অঞ্চলে এবং চট্টগ্রামের নামানুসারেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হলাে’

উপাচার্যের উদ্বোধনী ভাষণে অন্যান্য বিষয় বা বিভাগ কাটছাট করে মাত্র চারটি ব্যতিক্রমী বিভাগের খােলার ঘােষণা দেয়া হয়। উপাচার্য তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমি বলতে উৎসাহবােধ করছি- বঙ্গোপসাগরের প্রাণ বৈচিত্র্যকে ঘিরে মেরিন বায়ােলােজি, মাইক্রোবায়ােলােজি, ডিপ সি. ফিসারি, সমুদ্রবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়গুলাে জাতীয় উন্নয়নের প্রয়ােজনে গড়ে তােলা হবে।’ তিনি আরাে বলেন- ‘ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান, পূরার্কীতি ও উপজাতি এলাকা নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলে প্রত্নতাত্তিক ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা বিভাগ খােলা যেতে পারে’

বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিভিন্ন পরামর্শ সভায় বলা হয়েছিল- এখানে অন্যান্য বিভাগের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা-সংস্কৃতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে আলাদা বিভাগ খােলার উদ্যোগ নেয়া হবে।

সভায় চট্টগ্রামের দুই শতাধিক পূরাকীর্তির স্থানকে চিহ্নিত করে সেসব স্থান সংরক্ষণ করে গবেষণার সুযােগ করে দেবার কথাও উঠেছিল। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও আদিবাসী জনগােষ্ঠীর সংস্কৃতি গবেষণার মােক্ষম সুবিধা বিবেচনা করেই এ সংক্রান্ত বিভাগ খােলার রূপরেখা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। যেহেতু চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুসংখ্যক আদিবাসীগােষ্ঠী তাদের আদি সংস্কৃতিকে ধারণ করে বসবাস করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংক্রান্ত বিভাগ খােলা হলে ছাত্র ও

শিক্ষকগণ অনায়াসে অরণ্য প্রকৃতি, আদিবাসী সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণও অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যেতে পারবেন। এ ধরনের বিভাগ খােলার বিষয়ে বিদেশী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সহযােগিতার আশ্বাসও পাওয়া গিয়েছিলাে।

কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় এ সংক্রান্ত বিভাগ খােলার সমস্ত উদ্যোগ আয়ােজন থেমে যায়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের নতুন পরিকল্পনা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম স্টাডিজ বিষয়ক বিভাগ খােলার উদ্যোগ চাপা পড়ে যায়।

১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়। এই আইনের লক্ষ্য ছিল গবেষণার নতুন ক্ষেত্র চয়ন, সুন্দর ও সত্যের অন্বেষণে আত্মনিয়ােগ, ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে লুকায়িত বৃত্তিগুলাের বিকাশ সাধন ও বৈষয়িক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আয় রােজগারের জন্য যােগ্য করে গড়ে তােলা।

বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রাথমিক সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি। বর্তমানে বাণিজ্যিক চাহিদাভিত্তিক বিভাগগুলাে রমরমা হয়ে উঠেছে। সৃজনশীল বিভাগ যেমন- ভাষাতত্ত্ব, ফোকলাের, পূরার্কীতি, আদিবাসী সংস্কৃতি গবেষণার প্রচুর উপকরণ থাকা সত্ত্বেও এ বিষয়ক কোন বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খােলা হয়নি। এ ধরনের বিভাগ খােলা হলে ছাত্র ছাত্রীরা হাতের কাছেই পূরার্কীতি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলাে নিয়ে প্রত্যক্ষ গবেষণা করতে পারবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে উপাচার্য মল্লিক যে নতুন বিভাগগুলাের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করেছিলেন তন্মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও প্রাকৃতিক বনকে কেন্দ্র করে মেরিন সায়েন্স ও বনবিদ্যা বিভাগ দু’টি গত শতাব্দীর আশির দশকের পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিশেষায়িত মেরিন সায়েন্স বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ ছাত্র ছাত্রীরা বর্তমানে সমুদ্র, সামুদ্রিক খনিজ, সামুদ্রিক প্রাণী ও এর প্রাণবৈচিত্র্য ইত্যাদি গবেষণায় কৃতিত্বের পরিচয় রেখে চলেছেন। পাশাপাশি বনবিদ্যা বিভাগ থেকে উত্তীর্ণরা বাংলাদেশের বন গবেষণা, বনসম্পদের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, বনজ সম্পদের কার্যকর ব্যবহার ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাফল্যগাঁথা নির্মাণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনাকালীন সময়ে ঘােষিত চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম স্টাডিজ বিষয়ক বিভাগ খােলা হলে এ সংক্রান্ত বহুবিধ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আমাদের অর্জিত হতাে বলে মনে করা যায়।

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম স্টাডিজ : একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যয়ন

চট্টগ্রাম হাজারাে বছরের এক প্রাচীন জনপদ। এর বয়স নির্ণয় নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। দৈনিক আজাদীর পঁয়ত্রিশ বছরপূর্তি বিশেষ সংখ্যায় হাজার বছরের চট্টগ্রাম বলা হয়েছে। ভারতীয় সভ্যতার অমূল্য স্বাক্ষর মহাভারতের বিভিন্ন শ্লোকে চট্টগ্রামের আদিনাথ, চন্দ্রনাথ, কাঞ্চননাথের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই সূত্রে যদি মহাভারত সাড়ে ছয় হাজার বছর পূর্বে রচিত হয় আর উল্লেখিত তিনটি নাম যথাযথ হয় তবে চট্টগ্রামের বয়স সাড়ে ছয় হাজার বছরও হতে পার ‘

২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রামে আয়ােজিত আন্তর্জাতিক সেমিনার হয় বিজ্ঞ পন্ডিতগণ বলেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রত্ন নির্দশন ও ঐ যুগের সূত্রের মাধ্যমে ইতিহাস রচিত হলে চট্টগ্রামেই বাঙালি জাতিগােষ্ঠীর বীজ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হবে।

প্রাচীন এ চট্টগ্রামে বয়সের ভারে যতদিন অতিবাহিত করছে ততই সমৃদ্ধির সাথে এগিয়ে চলছে আধুনিক বিশ্বের সাথে। সেই প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এ চট্টগ্রামের ৩৭টি নাম পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম বা চিটাগাং এ এসে দাঁড়িয়েছে।

‘চট্টলা এদেশের হিন্দুকে দিয়েছে সীতাকুন্ড, বাড়বকুন্ড ও আদিনাথের পুন্য তীর্থ, বৌদ্ধকে দিয়েছে মহামুনি ও চক্রশালার পবিত্র চৈত্য, মুসলমানকে দিয়েছে বদর উলিয়ার বদরপতি, বায়েজিদ বােস্তামির মাজার, শেখ ফরিদের চশমা ও হযরত মােহাম্মদের কদম মােবারক আর খ্রীষ্টানকে দিয়েছে গীর্জা আর ভজনালয়, জরাব্যাধিগ্রস্ত আধুনিক মানুষকে দিয়েছে কাপ্তাই ও কক্সবাজারের স্বাস্থ্যনিবাস।

তাদের জন্য বন্দর, প্রােতাশ্রয়, কলকারখানা ও গড়ে উঠেছে। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ও স্থাপিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম এক বিশিষ্ট সংস্কৃতির অধিকারী। এ সংস্কৃতির মেজাজ বিচিত্র, প্রকৃতি উদার ও চরিত্র প্রগতিশীল’

যিশু খ্রিস্টের জন্মের কিছুকাল আগে থেকেই উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে একটি প্রভাবশালী সংস্কৃতি ক্রমশ পূর্বদিকে বিস্তার লাভ করতে করতে একেবারে বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

এটি ‘আর্যকরণ’ নামে অভিহিত। হিন্দু ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রসারের সাথে সাথে আর্যকরণের ঢেউ চট্টগ্রামের তটরেখা স্পর্শ করে। এর ফলে মঙ্গোলীয় নৃগােষ্ঠীভূক্ত আদিবাসীরা হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়।

তিব্বতীয় বৌদ্ধ ঐতিহাসিক লামা তারানাথের গ্রন্থে এবং আরাকানের সিথাং মন্দিরের শিলালিপিতে চন্দ্ৰ উপাধিধারী দীর্ঘ এক রাজবংশের পরিচয় পাওয়া যায়। তারানাথের মতে ‘এই চন্দ্রবংশীদের রাজধানী চট্টগ্রামেই ছিল। চন্দ্রবংশীয়দের পরে পালবংশ বাংলায় প্রভূত্ব বিস্তার করে’

এ সময় আরবদের সাথে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক যােগাযােগ ঘটে। আরব ভৌগলিকদের। বিবরণের ‘সমন্দর’ স্থানটি হচ্ছে চট্টগ্রাম যা ধর্মপালের অধীন ছিল। প্রাচীন হরিকেল রাজ্যের কয়েকটি শিলালিপি চট্টগ্রামে জেলার উত্তরাংশে আবিস্কৃত হওয়ায় পন্ডিতরা মনে করেন যে চট্টগ্রামে জেলার উত্তরাংশ প্রাচীন হরিকেল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কোন অঞ্চলের প্রত্নসম্পদের উপর ভিত্তি করে সে অঞ্চলের অতীত ইতিহাস নির্ণিত হয়। চট্টগ্রামের পূরাকীর্তির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মােগল ঐতিহাসিক সিহাব উদ-দিন তালিশের বিবরণে। তালিশের সূত্রে জানা যায় ১৩৪০ খ্রিঃ সােনারগাঁও এর সুলতান ফখর উদ-দিন মুবারক শাহ চট্টগ্রামে জয় করে চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন।

এই সুলতানের রাজত্বকালে চট্টগ্রামে নির্মিত মসজিদ ও সমাধি সৌধের উল্লেখ তালিসে রয়েছে। মধ্যযুগের পুঁথি সাহিত্যের শহর চট্টগ্রামে বর্ণনায় পূরাকীর্তির উল্লেখ লক্ষ করা যায়। দৌলত উজির বাহারাম খানের লাইলী মজনু কাব্যে চট্টগ্রামে সাধু সজ্জনদের মনােরম নিবাস, পাহাড়ের চুড়ায় ‘বদর আলমের’ সমাধি সৌধের কথা উল্লেখ আছে।

বাহারাম খানের সমসাময়িক লামা তারানাথ (জন্ম ১৫৭৩) চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের এক ভিন্ন। প্রেক্ষাপটের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ‘ত্রিপুরার দক্ষিণে এবং আরাকান রাজ্যের উত্তরে এই মধ্যবর্তী এক অঞ্চলের নাম ছিল বাঙালা।

অপর অংশের নামছিল রম্ম্য (সংস্কৃতে রম্য)। ছবির পটের মত একটি দেশ। আধুনিক চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বাঙালা রাজ্য। নালন্দার অবক্ষয় শুরু হলে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সভ্যতার মুখ্য কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।

এ সময় চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম শহরের বিশাল পন্ডিত বিহারের খ্যাতি যেগুলির অবস্থান ছিল পটিয়ার হাইদগাঁও পশ্চিম পটিয়ার বড় উঠান, ও দেয়াং পাহাড়ে’। এ প্রসঙ্গে বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার রামকোটে আবিস্কৃত গৌতম বুদ্ধের স্মৃতিবাহী বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিশাল প্রত্নক্ষেত্রের উল্লেখ করা যেতে পারে।

চট্টগ্রামের ভৌগলিক, প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই জনপদ পাল, সেন, এমনকি মােগল আমলেও ভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি দ্বারা চালিত ছিল। ফলে আরাকানী-ত্রিপুরা ও ভারতীয় সংস্কৃতি এখানে সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হয়েছে।

এখানে বিভিন্ন ভাষাগােষ্ঠীর উপস্থিতি রয়েছে যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও দৃশ্যমান নয়। আরাে রয়েছে স্বতন্ত্র পরিচয়ধারী উপজাতি জনগােষ্ঠী। চট্টগ্রাম বন্দর হাজার বছর ধরে পূর্ব ও পশ্চিমের সম্মিলন ঘটিয়েছে তার বুকে।

প্রাচীন চট্টগ্রামে শাসন, কর্তৃত্ব, বাণিজ্য, লুণ্ঠন, ইত্যাদির মানসে মগ, বর্মী, আরাকানী, ত্রিপুরা পর্তুগীজসহ মােগল রাজেন্যবর্গ এ অঞ্চলে অগুণিত যুদ্ধ বিগ্রহে অংশ নিয়েছে। কখনাে তারা শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, কখনােবা পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মিশে গেছে স্থানীয় লােকদের সাথে।

বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠীর সাংস্কৃতিক সঙ্গমে যে নতুন সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেছে তার উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ক্রমবিকাশের প্রেক্ষাপট। চট্টগ্রামের ইতিহাস গৌরব উজ্জল সংঘাতময়, চিত্তাকর্ষক। এর ইতিহাস রচনা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রামের সাহিত্যের ইতিহাস রচনা। কারণ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন।

ও মধ্যযুগ, বিশেষ করে মধ্যযুগ পুরােটাই চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। মধ্যযুগের সাহিতত্যে চট্টগ্রামের অবদান বাদ দিলে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগটাও তার অন্ধকার যুগের মতাে হয়ে ওঠে। চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মতাে তার সাহিত্য ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকার হিসাবে গর্ব করতে পারে গােটা জাতি। বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণের একটি মহাযজ্ঞ চলছে। বিভিন্ন জাতি তার ঐতিহ্য নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠেছে।

চট্টগ্রাম অধ্যয়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ তার জবাবে বলা যায় ‘মানচিত্রের দিকে তাকালে প্রথম দৃষ্টিতে মনে হওয়া স্বাভাবিক এলাকাটি যেন বাংলাদেশ থেকে স্বতন্ত্র একটি এলাকা। ঠিক মানচিত্রের মতাে দু’জন চট্টগ্রামবাসীর কথােপকথন শুনলে মনে হবে বাংলা নয় অন্য কোন ভাষায় তারা কথা বলছে। যদি দুজন মানুষের সংলাপ একজন বাঙালি বুঝতে না পারে তাহলে স্পষ্ট -চটm ভাষা কতটা স্বতন্ত্র বাংলা থেকে।

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের পদকর্তাদের কয়েকজন ছিলেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের। চর্যাপদে রয়েছে, আঞ্চলিক চট্টগ্রামের অনেকগুলি শব্দ’। ‘মধ্যযুগের বাংলা সাহিতের বেশীরভাগ কবি চট্টগ্রামের, শুধু তাই নয় বেশীরভাগ পুঁথিও আবিষ্কার হয় চট্টগ্রামে থেকে’।

সুতরাং ইতিহাস, ঐতিহ্য, পূরাকীর্তি, নৃগােষ্ঠী, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের স্বরূপ বিচারে ‘চট্টগ্রাম অধ্যয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানকান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃতি অর্জনের দাবী রাখে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পুরাবৃত্ত :

‘বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর উত্তর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে দক্ষিণের মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত যে পার্বত্যভূমি তা পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে পরিচিত’১০। অসংখ্য গিরি পরিবেষ্টিত নদী-নিঝরণী বিধৌত, হ্রদ ও অরণ্যের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলানিকেতন এই পার্বত্য চট্টগ্রাম।

এর উত্তর ও উত্তর পূর্বে বার্মার আরাকান পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা অবস্থিত। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি এ অঞ্চলটি একদা অজ্ঞাত অচেনা জনপদ হিসাবে চিহ্নিত ছিল।

‘অতীতে বার্মা (মিয়ানমার) আরাকানসহ এ পার্বত্য অঞ্চলকে কিরাতভূমি নামে অভিহিত করা হত। প্রাচীন কিরাতভূমির ঐতিহাসিক ও ভৌগােলিক সংযােগে এবং কিরাত জাতির নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক সঙ্গমে তিব্বতি বর্মী পরিবারভুক্ত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ ১১টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করছে’১১

‘ভূমন্ডলের ২১°২৫’ থেকে ২৩°৪৫” উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯১.৪৫” থেকে ৯২.৫২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এর অবস্থান’১২। ভেলাম ভান সেন্দেলের বিবরণ থেকে জানা যায়, দক্ষিণপূর্ব বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস নামে পরিচিত। এ অঞ্চলটি বস্তুত ১৮০০ কিমি বিস্তৃত পশ্চিম বার্মার পর্বতমালার অংশবিশেষ।

বার্মা থেকে বিস্তৃত হয়ে অঞ্চলটি পূর্ব হিমালয়ে চীনের সাথে মিলেছে। একটি সংকীর্ণ অংশ (২৮০x৬০ কিমি) ঢাকার অধীন। উত্তরের শেষাংশ ব্যতীত এই পর্বতমালা ভারতবর্ষ ও বার্মার মধ্যে বিভক্ত’১৩। বর্তমানে এটি একটি প্রান্তিক এলাকা (Border Land) যার উত্তরে ত্রিপুরা, পূর্বে মিজোরাম দক্ষিণ আরাকান বা রাখাইন স্টেট এবং দক্ষিণ পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা অবস্থিত।

রেঙ্গুনের এক সরকারি গেজেটিয়ার-এ (১৮৭৭) পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিচিতি বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে- এটি ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব সীমানার উপরে পর্বত ও অরণ্য সংকুল বৃহদাঞ্চল যেখানে আদিবাসীয় বসতি আছে, যারা কোনরূপ কর দেয় না এবং ব্রিটিশ সরকার নির্ভর না হয়ে স্বাধীন ও উর্বরতায় আনন্দে উচ্ছল’১৪

‘ফেনী, কর্ণফুলী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী এ চারটি নদী তাদের প্রবাহিত বালুকনা, টেকণা ও মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছে চারটি উপত্যকা। এই উপত্যকাগুলাে এবং পশ্চিমের একই দিকে উঁচিয়ে ওঠা পর্বত শিখরের সঙ্গে এসেছে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য’১৫। ‘আদিকালে এ অঞ্চলে স্থায়ীভাবে কেউ বসবাস করতাে বলে মনে হয় না।

শিকারজীবী কিছু আদিম যাযাবর জনগােষ্ঠী মাঝে মাঝে পূর্বদিক থেকে এসে হানা দিয়ে কিছুদিন পর ফিরে যেতাে’১৬। ‘ব্রিটিশ ভারতে এ জেলার আয়তন ছিল ৬৭৯৬ বর্গমাইল। ১৯০১ সালে এর আয়তন স্থির হয় ৫০৯৩ বর্গমাইল। বাংলাদেশ আমলে এর আয়তন হচ্ছে ৫০৮৯ বর্গমাইল’১৭। ‘ইংরেজ অধিকারের পূর্বে এ অঞ্চল অনেকটা No man’s Land হিসাবে পরিগণিত ছিল।

পাশ্ববর্তী কোন রাষ্ট্রশক্তি কোন কালে এ অঞ্চলের উপর সার্বভৌম অধিকার স্থাপন করেনি। তবে মাইনী উপত্যকা পর্যন্ত জেলার উত্তরপ্রান্ত বরাবরই ত্রিপুরার প্রভাব বলয়ের মধ্যে অবস্থিত ছিল। ‘বস্তুত গভীর বনাকীর্ণ এই দুর্গম পার্বত্যভূমি মােগল, পাঠান, ত্রিপুরা, আরাকান প্রভৃতি রাজশক্তির কাছে অনেকটা উপেক্ষিত ছিল’১৮

১৭১৫ থেকে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অঞ্চলটি মােগল এবং ১৭৬০ সালের পর ব্রিটিশ শাসনের আওতায় কার্পাস মহল নামে পরিচিত ছিল। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে একটি জেলা স্থাপন করে। ১৮৬৮ সালে জেলা সদর স্থাপিত হয়। চন্দ্রঘােনায়।

১৮৬৯ সালে তা রাঙামাটিতে স্থানান্তরিত হয়। এর মহকুমা ছিল ৩টি- সদর, সাঙ্গু ও কক্সবাজার। ১৮৬১ সালে কক্সবাজার এবং ১৮৬৭ সালের ১৪ মার্চ সাঙ্গু মহকুমা স্থাপিত হয়। ১৯৮১ সালে বান্দরবান ও ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলা স্থাপিত হয়’১৯

১৮৬০ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত প্রশাসন থেকে যেসব নিয়ম জারি করা হয়েছিল তার সুসংহত নিয়মকাঠামাে ও নীতিনির্ধারণই হলাে ১৯০০ সালের Chittagong Hill Tracts Manual Act ২০। গভর্নর জেনারেলের পক্ষে জেলা প্রশাসন সামগ্রিক বিষয় দেখাশুনা করেন। জেলা প্রশাসকদের সাহায্য করেন তিনজন আদিবাসীয় প্রধান।

এসব প্রধানগণ আদিবাসীয় ঐতিহ্য অনুসারে রাজস্ব আদায় থেকে বিচারকার্য পর্যন্ত দেখাশুনা করেন। The Chittagong Hill Tracts Manual Act 1990 এ পার্বত্য চট্টগ্রাম বহির্ভূত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হয়। ১৯৩৩ সালে ভারত শাসন আইনেও পার্বত্য চট্টগ্রাম Excluded Area হিসেবেই বিবেচিত হয়।

১৯৬৫ সালে প্রণীত পাকিস্তানের সংবিধানেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে Excluded Area এর মর্যাদায় অক্ষণ রেখে উপর ১৯০০ সালের শাসনবিধি বলবৎ রাখা হয়’২১। ১৯৫৪ সালে এই অঞ্চলের নাগরিকগণ প্রথম ভােটাধিকার লাভ করে। ৫০৯ বর্গমাইলের এই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিনটি সার্কেল রয়েছে।

চাকমা, মং ও বােমাং সার্কেল নামীয় এসব সার্কেল নিয়ন্ত্রণ করেন তিনজন সার্কেল প্রধান। তিনটি সার্কেল ২২৫টি মৌজায় বিভক্ত। প্রতিটি মৌজা দেখাশুনা করেন একজন হেডম্যান। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় মৌজা। প্রতিটি গ্রাম দেখাশুনা করেন একজন কারবারী। জেলা প্রশাসক সার্কেল প্রধানের সঙ্গে ঐক্যমতে এসে হেডম্যানদের নিয়ােগদান করেন।

নৃগােষ্ঠীর সাংস্কৃতিক কাঠামাের ক্রমবিকাশ :

পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র নৃ-গােষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চল। ক্ষুদ্র নৃ-গােষ্ঠী সম্পর্কে বিভিন্ন নৃ-বিজ্ঞানী বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। এদের মধ্যে রির্ভাস (Rivars), পিডিংটন (Piddintion) এবং প্রফেসর ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারের সংজ্ঞাসমূহকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- আদিবাসী উপজাতিরা সমাজের এমন একটি গােষ্ঠী যাদের জীবনে জটিলতা নাই।

একই ভাষায় কথা বলে মনােভাব প্রকাশ করে। নিজেদের আইন রক্ষার জন্য নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা আছে এবং তারা একই রকম বিবাহভিত্তিক ও পেশাভিত্তিক ধর্মীয় বিধি নিষেধ মেনে চলে। তাদের মধ্যে আকৃতি ও সংস্কৃতিগত সাদৃশ্য আছে। প্রয়ােজনে গােষ্ঠীসচেতন মনােবৃত্তি নিয়ে তারা লড়াই সংগ্রাম করে।

মােট কথা আজো তাদের জীবনযাত্রার ছন্দে আদি সংস্কৃতির ছাপ দেখতে পাওয়া যায় যা স্বভাবে এ রুচিতে সহজেই বােঝা যায়। ‘যুগযুগ ধরে তারা নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারা সজীব রেখে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে বিরাজমান এবং তাদের সামাজিক কাঠামাে সম্পূর্ণ আলাদা ও আদিম। এসব জনগােষ্ঠীকেই আদিবাসী বলে অভিহিত করা হয়’ ২২

বাংলাভাষায় উপজাতি শব্দটি ব্যবহার করা হয় Tribal Group এর প্রতিশব্দ হিসাবে । Aboriginal People অথবা আদিবাসী উপজাতি তাদের বলা হচ্ছে যারা বিভিন্ন ভূখন্ডে বসতি স্থাপনকারী গােষ্ঠীর পূর্ব থেকেই অবস্থান করছিলেন। বর্তমানে আদিবাসী হলেও এদের বংশধরেরা বসতি স্থাপনকারীদের বিজয়, দখল ইত্যাদির মাধ্যমে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে।

প্রতিটি আদিবাসী গােষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি, সভ্যতা, আচার-অনুষ্ঠান যা তারা ধরে রেখেছে নিরন্তর জীবনাচরণের মাধ্যমে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সূত্রের ব্যাখ্যায় আদিবাসীদের সম্পর্কে মূলত এই ধারণাটি বর্ণনা করা হয়েছে যে- আদিবাসী হলাে তারাই, যারা একটি ভূখন্ডে অন্য যে কারাে আগেই যুগ যুগ ধরে অবস্থান করছিলাে, যাদের সামাজিক ঐতিহ্য ও প্রকাশভঙ্গিতে নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে, যাদের নিজস্ব একান্ত একটি ভাষা রয়েছে এবং রয়েছে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য যার কারণে তারা নিজেদের একটি জাতি হিসাবে পরিচয় দিতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মােট ‘আদিম অরণ্যচারী ক্ষুদ্র জাতিসত্তা/আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রায় ১৭টি নাম পাওয়া যায়’২৩। প্রকৃতপক্ষে এখানে গােষ্ঠী সংখ্যা মােট ৮টি। অন্যান্যরা তাদের উপদল অথবা নামের বিভিন্নতা বলে আমি মনে করি। যেমন- এরা হচ্ছে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, পাংখােয়া, ম্রো বা মুরং, খুমি, খিয়াং ও চাক হচ্ছে মূলদল। লুসাই, রিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা, দৈন্যাক, উসুই, বনযােগী, কুকী হচ্ছে এদের উপদল।

এই ৮টি নরগােষ্ঠীর মধ্যে ভাষা, চালচলন, আচার, আচরণের মধ্যে পারস্পরিক পার্থক্য দেখা যায়। তবে নরগােষ্ঠী হিসাবে তারা সবাই এক এবং অভিন্ন মঙ্গোলীয় মানবগােষ্ঠী। প্রায় তিন হাজার বৎসর পূর্বে এরা চীনের মূল ভূখন্ডের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মধ্য এশিয়া থেকে ইয়াংসি ও হােয়াংহাে নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল ও দক্ষিণ চীনের মধ্য দিয়ে ক্রমশ উচ্চব্রহ্ম, ব্রহ্মপুত্র বা সানগাে, ইরাবতী, সালউইন, মেকং, মেনাম নদীর অববাহিকা ধরে উত্তর পূর্ব ভারত, বার্মা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিস্তৃতি লাভ করে। পূর্ব ভারতে তারা অতীতে কিরাত জাতি নামে পরিচিত ছিলাে২৪। ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্বে এরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনপদে বসতি স্থাপন করে।

‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কাঠামাের ক্রমবিকাশ হলাে লুসাই চীন আক্রমণের ফলে ভীত মানুষের উপত্যকার সমাজ কাঠামাের কাছে নতি স্বীকার। বস্তুত উপত্যকার সমাজ কাঠামাে ছিল বাঙালি সমাজ কাঠামাে।

অতএব পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা কিভাবে বাঙালি সংস্কৃতি উৎকর্ষের কাছে নতিস্বীকার করলাে তার অনুকরণেই নৃ-গােষ্ঠীর সমাজ কাঠামাে অনুধাবন করতে হবে’২৫। ভগাং মে এর (১৯৮১) মতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ও উত্তর বর্মার সামাজিক উন্নতির পথ সমতলের কেন্দ্রমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থার কাছে বন্দকীভুক্ত।

পাহাড়ের সর্বনায়কতান্ত্রিক আদিম প্রতিবেশীদের উপর সমতলের একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার যে ছায়া পড়েছিল তার প্রভাব সম্পর্কে আমরা এখনাে অজ্ঞই আছি’২৬। নৃ-তাত্ত্বিক ব্যাস্টিয়ান (১৮৮১) উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলের সম্পর্কে বলেছেন- ‘গাঙেয় উপত্যকার সীমান্তের ওপারে যারা বাস করে তাদেরকে উচ্চ শ্রেণির ব্রাহ্মণরা সবসময়ই একটু অবজ্ঞার চোখে দেখতেন। দুর্ভাগ্যবশত পূর্ব সীমান্তের লােকদের এই বাস্তবতা মেনে নিতে হয়েছে এবং ফলত তারা ঐতিহাসিক ও অন্যান্য গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি’২৭

বর্ণিল, বর্ণাঢ্য সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী এসব আদিবাসী নৃগােষ্ঠীদের ‘বাংলাদেশেও কখনও বনায়নের নামে, কখনও সবুজ বিপ্লবের নামে উচ্ছেদ করা হয়েছে, বিতাড়িত করা হয়েছে নিজ বাসভূমি থেকে। আজো কোথাও কোথাও আদিবাসীদের অনিশ্চিত জীবন এবং বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযােগটুকু থেকে উপেক্ষিত হয়ে জীবন কাটাতে হয়।

মানবিক জীবনযাপন, সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ, মেধা ও শ্রমশক্তি নিয়ােগের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হয়’২৮। ‘এসব জাতিসমূহের প্রান্তিকতা এতােটাই স্পষ্ট যে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রবলভাবে বাঙালি জ্যাতাভিমান হাজির ও বহাল রাখে।

আর এই প্রান্তিক জাতিদেরকেই অধিপতি রাষ্ট্র আমাদের কাছে কখনাে উপজাতি, কখনাে আদিবাসী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, ট্রাইবাল, এথনিক মাইনােরিটি, ইনডিজিনাস পিপল, এবওরজিনাল, ক্ষুদ্র নৃ-গােষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক জনগােষ্ঠী এরকম নানা নামে পরিচয় করায়’। পাভেল পার্থ, “সমতল অঞ্চলের আদিবাসী জনগােষ্ঠীর ভূমি সমস্যা সমাধানে করণীয়”। জুম, ঢাকা : ২০১০ : ৬০।

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে গিরিঝর্ণাধারা পরিবেষ্ঠিত ফেনী, চেঙ্গী ও মাইনী কনফুলী, শখ ও মাতামুহুরী অববাহিকার এ অঞ্চলটি সুপ্রাচীন কালের আদিবাসীয় ঐতিহ্যমন্ডিত। সে ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার নিয়ে আজো এখানকার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সগৌরবে বিদ্যমান।

‘নানা উপজাতি অধ্যুষিত তিন পার্বত্য জেলার বিস্তীর্ণ জনপদের সিংহভাগ আজো আধুনিক জীবনচেতনা থেকে নির্বাসিতপ্রায়। প্রাক্-শিল্পযুগের সামন্তবাদী চিন্তা ও চেতনায় তাদের জীবন চালিত’২৯

১৯৪৭ পূর্ববর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য জনপদে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিমগণ বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস শুরু করলেও এখানকার আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে বৃহত্তর বাঙালি সংস্কৃতি গ্রাস করতে পারেনি।

অরণ্যচারী আদিবাসী অধ্যুষিত এই বিস্তীর্ণ জনপদের নিজস্ব জীবনধারা বাহিত সেই সংস্কৃতি চেতনাকে আজো এখানকার বৃহত্তর সমাজ পবিত্র উত্তরাধিকার হিসাবে পালন করে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

‘সভ্যতা ও আধুনিকতার সংস্পর্শে এসে বিশেষ করে থানা সদর-কেন্দ্রিক নাগরিক সভ্যতা গড়ে উঠায় আদিবাসী ও বাঙালি সংস্কৃতির মিশ্রণে যে মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছে তা এখনও কোনাে সুনির্দিষ্ট রূপ পরিগ্রহ করেনি’৩০। তাদের মৌলিক খাদ্যাভাস তেমন বদলায়নি। ভাষা, আহার্য, পানীয়, লােকবিশ্বাস ইত্যাদি বিষয়ে তারা সমভাবে প্রাচীন সংস্কৃতি ভাবনা প্রভাবিত।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের লােক বাস করে। অত্যাধুনিক বিশ্বের ঐসব মানুষগুলাে আজ পিছিয়ে পড়া, অনুন্নত শ্রেণি বা সভ্যতা বলে আখ্যায়িত। ‘তারা প্রত্যেকেই নিজদেশে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে পড়েছে, নিজ দেশেই তারা পরবাসী।

দেশ, রাষ্ট্র ও বহিরাগত সভ্য মানুষেরা ঐসব আদি বাসিন্দাদের, আজ করুণা প্রদর্শন করে। সবদেশেই এরা সহজ, সরল। দেশের মূল ভূমিজ সন্তান হওয়া সত্ত্বেও আজ তারা সর্বশান্ত, সর্বহারা। এদের ভাষা, কৃষ্টি, জীবন আজ উপদ্রুত, আক্রান্ত, বিপন্ন।

নাগরিক সভ্যতা এদের পিতৃপুরুষদের ভিটামাটি থেকে শুরু করে আচার-আচরণ, সংস্কৃতি-কৃষ্টি, ভাষা, তমুদুন সবকিছু কেড়ে নিয়েছে’৩১। ‘বিরল মানবগােষ্ঠী এই আদিবাসীদের উপজাতি, ক্ষুদ্রজাতি- যে নামেই অভিহিত করে থাকি না কেন- এরা আজ বিলুপ্তপ্রায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে আসছে এদের অস্তিত্ব। এদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে’। বাঁচাতে হবে তাদের সংস্কৃতি৩২

উপসংহার :

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিচিত্র ভৌগলিক পরিবেশ, বিস্তরণের ইতিহাস, বিচিত্র ভাষাভাষী, বাঙালি ও এগারােটি আদিবাসী নৃ-গােষ্ঠীর বলি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ সকলের রয়েছে।

এই অঞ্চলের রয়েছে বহু বিচিত্র ইতিহাস, পুরাকীর্তি, সাহিত্য, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি বিষয়াদি। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আকরগুলাে আমাদের জ্ঞানচর্চা ও মেধা বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই জনপদে ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বহু গুরুত্বপূর্ণ ও নান্দনিক উপাদান রয়েছে যা আমাদের জ্ঞানজগতের নতুন প্রপঞ্চ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবার দাবী রাখে।

কেবল স্কুল কলেজের সিলেবাসে টুকরাে টুকরাে বর্ণনার মাধ্যমে নয়, এই জনপদের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির অজস্র তথ্য ভান্ডারকে আমাদের জ্ঞানকান্ডে সংযােগ ঘটানাে দরকার। ভিন্নরূপ সংস্কৃতির বিষয় বলেই তা জানার দাম উন্মুক্ত হওয়া দরকার।

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, অরণ্য, নদী, লেক, মাছ, মিষ্টিপানি বিদ্যুৎ, পর্যটন, হস্তশিল্প, কাঠশিল্প, জাহাজশিল্প, প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র, সমুদ্র, সমুদ্র সৈকত আরাকানী, আরবীয় ও ভারতীয় জনগােষ্ঠীর সংকরায়ণে সৃষ্ট ভিন্ চেহারার মানুষ, মাগধী প্রাকত ভাষা বুলিতে মথিত ভিন্নতর সাংস্কৃতিক আবহে বিকশিত এই জনপদ।

এখানকার আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গােষ্ঠীর জীবনাচারণ, তাদের ভাষা, লােকসাহিত্য, নাচ-গান, ধর্ম, পূজা-পার্বণ, আনন্দ উৎসব, খেলাধুলা, শিকার, চাষাবাদসহ আরাে বহু বিষয়াদি আমাদের জ্ঞানকান্ডের নতুন সংযােজন। এই নতুন জ্ঞানকে নতুন বিভাগ চালুর মাধ্যমে সবার কাছে উন্মুক্ত করা হলে তা সবার কাছে আগ্রহ ও প্রয়ােজনীয়তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

১ শামসুল হােসাইন। “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস”। স্মৃতি, হায়াত হােসেন সম্পাদিত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রজত জয়ন্তী স্মরণিকা,১৯৯২,পৃ. ৩।
২ “১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম উপাচার্য ড. এ. আর মল্লিকের দেয়া ভাষণের বঙ্গানুবাদ”। স্মৃতি হায়াত হােসেন সম্পাদিত, চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয় রজত জয়ন্ত স্মরণিকা, ১৯৯২, পৃ. ৯।
৩ “১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম উপাচার্য ড. এ. আর মল্লিকের দেয়া ভাষণের বঙ্গানুবাদ”। স্মৃতি হায়াত হােসেন সম্পাদিত, চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয় রজত ও স্মরণিকা, ১৯৯২, পৃ. ১০।
৪ সােহেল মাে, ফখরুদ-দীন। “প্রাচীন চট্টগ্রামের প্রত সমপদ ইতিহাস রচয়িতা, মনীষী ও হত”, প্রসঙ্গ” দৈনিক আজাদী চট্টগ্রামে ১১ জানুয়ারী ২০১৩।
৫ মুহম্মদ এনামুল হক, অধ্যাপক শাহেদ আলী রচিত বাংলা সাহিত্যে চট্টগ্রামের অবদান: ভূমিকা “””সন।
৬ সােহেল মাে. ফখরুদ-দীন। “প্রাচীন চট্টগ্রামের প্রত্ন সমপদ, ইতিহাস রচয়িতা, মনীষী ৩ প্রসঙ্গ” দৈনিক আজাদী চট্টগ্রামে ১১ জানুয়ারী ২০১৩।
৭ সােহেল মাে. ফখরুদ-দীন। “প্রাচীন চট্টগ্রামের প্রত্ন সমপদ, ইতিহাস রচয়িতা, মনীষী ও ইতিহাস প্রসঙ্গ” দৈনিক আজাদী চট্টগ্রামে ১১ জানুয়ারী ২০১৩।
৮ বাংলা সাহিত্যে চট্টগ্রামের অবদান, ছ-১৯।
৯ ড. শফিউল আযম ডালিম। চট্টগ্রামী উপভাষায় পরিপ্রেক্ষিত চর্যাপদ, পান্ডুলিপি (একাবিংশ খন্ড) বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১০ পৃ.৬৬।
১০ সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি, ১৯৯৪, পৃ- ১।
১১ সুপ্রিয় তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, ত্যেঠা, জাক, ২০০৮।
১২ ভগাং মে, পার্বত্য চট্টগ্রামের কৌম সমাজ, অনুবাদ: স্বপ্ন ভট্টাচার্য, ১৯৯৬, পৃ-১।
১৩ ভেলাম ভান সেন্দেল, জুম্মাদের আবিষ্করণ: দক্ষিণপূর্ব বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংগঠন ও জাতিগােষ্ঠী রূপায়ণের আলেখ্য, শুভলং, বিপ্লব চাকমা সম্পাদিত, এপ্রিল ২০০২।
১৪ এডমিনিস্ট্রেশন অব দ্যা হিলট্র্যাক্টস, নর্দান আরাকান ফর দ্যা ইয়ার ১৮৭৭-৭৮, রেঙ্গুন গর্ভমেন্ট প্রেস ১৮৭৯ পৃ- ৬।
১৫ ভগাং মে, পার্বত্য চট্টগ্রামের কৌম সমাজ, অনুবাদ: স্বপ্ন ভট্টাচার্য, ১৯৯৬, পৃ-১।
১৬ অশােক কুমার দেওয়ান, চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার, ১৯৯১ পৃ- ১০।
১৭ সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি ১৯৯৪ পৃ- ৯।
১৮ অশােক কুমার দেওয়ান, চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার ১৯৯১, পৃ-৯।
১৯ আজাদ বুলবুল, পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা ভাষা পরিচিতি, ২০০০, পৃ- ৭।
২০ বি, এইচ, সােরােয়ারদী। স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা: পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বাের্ডের উপর একটি কেস স্টাডি। (অপ্রকাশিত এমফিল অভিসন্দর্ভ)। ব্যবস্থাপনা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৮; ভূমিকা।
২১ বি, এইচ, সােরােয়ারদী। স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা: পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বাের্ডের উপর একটি কেস স্টাডি। (অপ্রকাশিত এমফিল অভিসন্দর্ভ)। ব্যবস্থাপনা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৮।
২২ ধীরেন্দ্রনাথ বাস্কে। আদিবাসী সমাজ ও পালপার্বণ। কলিকাতা: লােকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি। কেন্দ্র ২০০১; পৃ. ৩।
২৩ জাফার আহমাদ হানাফী। “উপজাতীয় নন্দন সংস্কৃতি”। অঙ্কুর, নন্দলাল শর্মা সম্পাদিত, রাঙামাটি সাধারণ পাঠাগার, রাঙামাটি: ১৯৮১।
২৪ সুরেন্দ্রলাল ত্রিপুরা। “ত্রিপুরা ভাষা ও সাহিত্য”। আইতারামা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা উপজাতি কল্যাণ সংসদ, খাগড়াছড়ি: ১৯৮৫, পৃ ৩।
২৫ ভল্ফগাং মে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কৌমসমাজ (১৯৮০)। অনুবাদ: স্বপ্না ভট্টাচার্য (চক্রবর্তী), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর বেঙ্গল ষ্টাডিজ, কলিকাতা, ১৯৯৬, পৃ- ৭।
২৬ ভল্ফগাং মে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কৌমসমাজ (১৯৮০)। অনুবাদ: স্বপ্ন ভট্টাচার্য (চক্রবর্তী), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর বেঙ্গল ষ্টাডিজ, কলিকাতা, ১৯৯৬, পৃ- ৭। ঃ
২৭ দেখুন: ভল্ফগাং মে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কৌমসমাজ (১৯৮০)। অনুবাদ: স্বরা ভট্টাচার্য (চক্রবর্তী), ৪ন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর বেঙ্গল ষ্টাডিজ, কলিকাতা, ১৯৯৬, পৃ- ৬।
২৮ অং শৈ-প্রু চৌধুরী (বােমাং রাজা)। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস সংকলন ১৯৯৩, ঢাকা: ১৯৯৩।
২৯ শেখর দস্তিদার। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, অংকুর, রাঙামাটি, ১৯৮৭, পৃ-১।
৩০ গাজী গােলাম মাওলা। খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা জনগােষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি (অপ্রকাশিত এম. ফিল অভিসন্দর্ভ), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৮।
৩১ প্রমােদ মানকিন। “আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ১৯৯৩ এ প্রকাশিত সংকলনে মুদ্রিত অভিভাষণ”, ঢাকা, ১৯৯৩: ২৫।
৩২ আজাদ বুলবুল। খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা নৃ-গােষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি। ঢাকা : মিজান পাবলিশার্স, ২০১০ পৃ- ৯।

লেখক: আজাদ বুলবুল

তথ্যসুত্র : তাক্রুপ্ : বৈসুক -সাংগ্রাই-বিঝু-বিষু-বিহু-সংকলন ২০১৩

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা