চাকমা ভাষার বর্ণমালা ও ব্যকরণ

Jumjournal
Last updated Feb 2nd, 2021

2669

featured image

পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী হিসেবে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বম, চাক, খিয়াং, খুমী, পাংখাে, লুসাই, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো সবারই রয়েছে নিজস্ব ভাষা। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে বলা হয় ভিন্ন ভাষাভাষীর অঞ্চল।

অবশ্য চাকমা এবং তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার আদি মূল এক ও অভিন্ন। সময়ের কালপ্রবাহে তঞ্চঙ্গ্যা আলাদা জাতি হিসেবে গঠিত হওয়ায় তার ভাষার দিকটিও আলাদা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

‘চাকমাদের নিজস্ব ভাষা ও সাহিত্য আছে। দু’শ বছর আগেও চাকমা লিপিতে চাকমা ভাষায় সাহিত্য রচিত হত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলা এবং ইংরেজীতে লেখাপড়া করেন বলেন চাকমা ভাষা ও সাহিত্য তাদের জীবনে অপরিহার্য নয়।

আর এজন্যই এর প্রতি একশ্রেণীর শিক্ষিত লােকদের রয়েছে অনীহা। চাকমা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নে এখন যে উদ্যম তরুণদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা শুরু হয়েছে মাত্র দু’দশক ধরে। চাকমাদের প্রাচীন লােকসাহিত্য, গাঁথা, উপাখ্যান, পালা, উবগীত, ধাঁধাঁ, প্রবাদ ইত্যাদির সাহিত্যিক ও সামাজিক মূল্য অপরিসীম। – নন্দলাল শর্মা

‘নৃতাত্ত্বিক বিচারে চাকমারা মঙ্গোলীয়। চাকমা লিপি পূর্ব ভারতীয় খমের (KHMER) লিপি হতে উদ্ভূত। কিন্তু চাকমা ভাষা ভারতীয় আর্য ভাষার শ্রেণীভূক্ত। গবেষকদের কাছে এটা একটা রহস্যময় ব্যাপার বটে। চাকমাদের নিজস্ব লিপি কোন সময়ই বেশী প্রচলিত ছিল না।

ভাষা তত্ত্ববিদ ড. গ্ৰীয়ারসনের মতে দক্ষিণ পূর্ব এশীয় খমের লিপি থেকে চাকমা লিপির উৎপত্তি। খমের লিপি তামিল লিপি থেকে আগত বলে মনে করা হয়।

প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক তাদের লিপি কি চম্পকনগর থেকে এনেছে না বিজিত দেশ আরাকানের সাপ্রেই কুলে বসতি স্থাপন করতে গিয়ে সেখানে গ্রহণ করেছে? বর্মী লিপিও খমের লিপি থেকে আগত এবং আরাকানে বর্মী লিপি প্রচলিত।

সেই হিসাবে চাকমা লিপি খমের লিপির আরাে নিকট আত্মীয়, তার অর্থ হল চাকমা। লিপি বর্মী লিপি থেকে উদ্ভূত হয়নি। কাজেই চাকমারা এই লিপি আরাকানে এসে গ্রহণ করেননি। সরাসরি চম্পকনগর থেকেই এনেছিল। চাকমা লিপিতে লিখিত আঘরটারা (চাকমাদের ধর্মগ্রন্থ) চম্পকনগর থেকে সঙ্গে আনা হয়েছিল।

চাকমা লিপিকে রক্ষা করেছিল লুরী বা রাউলী সম্প্রদায় ‘আগরটারা’ পাঠের মাধ্যমে। এ লিপি দৈনন্দিন ব্যবহার করতেন তান্ত্রিক ও বৈদ্যরা। চাকমাদের চিকিৎসা শাস্ত্র বা তালিকশাস্ত্র চাকমা লিপিতে লিখিত। তান্ত্রিকেরা চাকমা লিপিতে তাদের মন্ত্রতন্ত্র ও দেহতত্ব সম্বন্ধে লিখে রাখতেন। সােজা কথায় চাকমা লিপি খমের লিপি থেকে উদ্ভূত কিন্তু ভাষা হলাে ভারতীয় আর্য ভাষার গােষ্টীভূক্ত।’

-ভগদত্ত খীসা- চাকমা লিপি ও ভাষা,
গিরি নিঝর, ফেব্রুয়ারী ১৯৮৭, উসাই, রাঙ্গামাটি।

চাকমা বর্ণ

‘ভাষাকে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ ও ধরিয়া রাখার জন্য লিপির উদ্ভব। প্রাচীন ভারতের যতগুলি লিপি এ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে ব্রাহ্মী লিপি ও খরােষ্টী লিপির নাম উল্লেখযােগ্য। খরােষ্ঠী লিপি ফার্সির ন্যায় ডানদিক হতে বাম দিকে লিখতে হয়।

খৃষ্টপূর্ব ৩০০ সাল পর্যন্ত গান্ধার নামক অঞ্চলে ব্রাক্ষ্মী বর্ণমালা প্রচলিত ছিল। গুপ্ত রাজাদের সময় হতে এ লিপির কোন কোন বর্ণের আকৃতিতে রূপান্তর দেখা দেয় এবং খৃষ্টীয় ৬ষ্ট শতকের শেষভাগে এসে আঞ্চলিক ভিত্তিতে বিভিন্ন রূপে রূপান্তরিত হতে থাকে। চাকমারা তাদের ভাষা লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্রাক্ষ্মী লিপির অনুকরণে বর্ণমালা গ্রহণ করেছিল।

-বঙ্কিম চন্দ্র চাকমা
চাকমা সমাজ ও সংস্কৃতি, পৃ: ৬১-৬৩

বর্ণের সাথে সম্পর্ক হলাে উচ্চারণের। চাকমা ভাষার বিকাশে ধ্বনিতত্বের মাধ্যমে গবেষণার প্রয়ােজন থাকলেও তা আজো পরিলক্ষিত হচ্ছে না। চাকমারা যা উচ্চারণ করে তা বাংলার মতাে নয়।

ইদানীংকালে দেখা যাচ্ছে যে, বেশীরভাগই বাংলা ধাচে উচ্চারণ করছে এবং নিজস্বতা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দোষে। চাকমাতে অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ বর্ণগুলাের মধ্যে উচ্চারণের ক্ষেত্রে পার্থক্য খুব কম। যেমন জগদাৎ তা ও ঘঙদাত থা এর মধ্যে পার্থক্য খুব কম। আরাে উদাহারণ –
দাবা-ধাবা, তাল-থাল, জাল-ঝাল, আজা-আঝা, কাদি-খাদি, জার-ঝার ইত্যাদি। তাই দেখা যাচ্ছে যে, চাকমা কা বর্ণটি বাংলার মতাে কা নয়। বরং এটি কা ও হা এর মধ্যবর্তী একটা উচ্চারণের রূপ।

চাকমা ভাষায় বর্ণমালার সংখ্যা হলাে ৩৩টি। তার মধ্যে স্বরবর্ণ ১টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ৩২টি। চাকমা বর্ণমালাগুলাে আ-কার যুক্ত। এটি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত। এ সূত্রে আ (পিছপুজা আ) বর্ণটিকে মৌলিক বা স্বরবর্ণ বলা যায় । চাকমা বর্ণগুলাের প্রত্যেকটির নাম রয়েছে। এই নামকরণের সাথে তাদের। আকৃতির একটা যােগসূত্র রয়েছে। তবে কালের গতিতে এসকল বর্ণমালা নানান বিকৃতির শিকার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জাতির নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। যে বর্ণগুলাে সাজিয়ে ভাষার রূপটাতে বা মনের ভাবকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা যায়। কৃষ্টচন্দ্র দেওয়ান কর্তৃক মি. গ্ৰীয়ারসনকে প্রেরিত প্রথম চাকমা বর্ণমালা ১৯০৩ সালে লিংগুস্টিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া গ্রন্থে প্রকাশিত হয়।

এছাড়া সতীশ ঘােষের চাকমা জাতি বইয়েও চাকমা বর্ণ দেখা যায়। এ ব্যাপারে দীর্ঘ সময় পরে বাবু নােয়ারাম চাকমা প্রথম ১৯৫৯ সালে এ বর্ণগুলাের সংকলন লিখিতাকারে প্রকাশ করেন। তার বইয়ে ৩৯ টি বর্ণ রয়েছে। ১৯৬৯ সালে বাবু বিরাজ মােহন দেওয়ান ‘চাকমা জাতির ইতিবৃত্ত’ বইয়ে চাকমা বর্ণমালা প্রকাশ করেন।

ভারতের মিজোরাম রাজ্যের চাকমা অটোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলে চাকমা বর্ণমালার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে। জাপানে বিভিন্ন বর্ণমালার উপর যে গবেষণা হয়েছে তাতে চাকমা বর্ণমালাও স্থান পেয়েছে।

তবে এসকল বইয়ে বর্ণের নাম ও আকারে বা গঠনে হেরফের লক্ষ্যণীয়। অনেকে মনে করেন বর্ণ হলাে ৩৩ টি। কেহ কেহ ৩৬ টি বর্ণ রয়েছে বলে মনে করেন । বিভিন্ন জন তথা সচেতন মহল এ ব্যাপারে এগিয়ে এসে সমন্বিত উদ্যোগ বা পাঠোপযােগী উদ্যোগ না নেওয়ায় এসকল বর্ণমালার সর্বজন গ্রহণযােগ্য রূপ অর্জন করা সম্ভবপর হয়নি। ফলে চাকমা বর্ণমালা শেখার জন্য তেমন জোরালাে উদ্যোগ চোখে পড়ার মতাে ছিল না।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের চাকমাদের নিজস্ব ভাষার বর্ণমালা থাকলেও এগুলাে ব্যবহারের বাস্তব উদ্যোগ না থাকায় এসকল বর্ণ নানান বিকৃতির শিকার হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। বিশেষ করে সরকারী পৃষ্টপােষকতা ও সুশীল সমাজের উদ্যোগ না থাকায় এতদিন ধরে এসকল বিকৃতি ও ক্রটি লালিত পালিত হয়ে আসছিল। অথচ এগুলাে শুধরে নেয়াটা ছিল জরুরী।

আশার কথা যে, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর হতে বেসরকারী সংস্থা বা এনজিও পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে গড়ে উঠে। এদের মধ্যে অনেকে ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০০০ সালের ৫ অক্টোবর তারিখে নুঅ পহর, টংগ্যা ও তৃণমূল নামক তিনটি এনজিও যৌথ উদ্যোগে একটি কর্মশালা আয়ােজন করে।

যার মূল লক্ষ্য ছিল চাকমা বর্ণমালাগুলাের অসঙ্গতি চিহ্নিত করা এবং ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে বর্ণগুলাের নাম ও আকার বা কাঠামাে ঠিক করা। সৌভাগ্যের বিষয় যে, সেখানে চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে বাবু স্নেহ কুমার চাকমা।

চাকমা বর্ণমালা সম্পাদনা করে বই লিখেছেন এমন কয়েকজনও এতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মঙ্গল কুমার চাকমা, বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, শ্রদ্ধালংকার মহাথেরাে প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী মনি স্বপন দেওয়ান। যিনি পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হয়েছিলেন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ডা. ভগদত্ত খীসা ও ঝিমিত ঝিমিত চাকমা। যারা উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট, রাঙ্গামাটির চাকমা প্রাইমার বইটি রচনা করেছেন। এই কর্মশালায় আমি নিজে মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করি। সৌভাগ্যের বিষয় যে, সেখানে উপস্থিত প্রায় ১৫ জন বৈদ্যসহ সুশীল সমাজের সকল প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিস্তারিত ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ৩৩ টি বর্ণের নামকরণ, বাছাই ও কাঠামাে ঠিক করা হয়। পাশাপাশি বানানরীতি ও অংক সংখ্যাগুলাের বিষয়েও ঐক্যমত্য হয়।

সুধি পাঠক মহলের সুবিধার্থে আমি আবারও এখানে সেসব আলােচনার চুম্বক দিকগুলাে তুলে ধরছি। প্রথমত ছিল হরফ বা বর্ণ এর নামকরণ ও আকার নিয়ে মতভেদ।

চাকমা বর্ণমালার চুচেঙ্যা কা এর আর কয়েকটি নাম রয়েছে। সেগুলাে হলাে-চুচাঙ্যা কা, চুজেয়া কা ও চুজাঙা কা । এই বর্ণটির আকারের ক্ষেত্রে কৃষ্ট চন্দ্র/ সতীশ ঘােষ/ নােয়ারাম/ মিজোরাম/ বিরাজ মােহন/ শ্রদ্ধালংকার/ চিরজ্যোতিমঙ্গল/ সুগত চাকমার এর সাথে অমিল রয়েছে সুপ্রিয় তালুকদার ও হর কিশাের চাকমার।

গুজাঙা খা এর নাম নিয়েও রয়েছে আরও দুটি নাম। যেমন- গুজেদ্য খা ও গুজেয়্য খা । এই বর্ণটির আকারের বিষয়ে কৃষ্ট চন্দ্র/ সতীশ ঘােষ/ নােয়ারাম/ মিজোরাম/ বিরাজ মােহন/ শ্রদ্ধালংকার/ চিরজ্যোতি-মঙ্গল/ সুগত এর সাথে হর কিশাের চাকমার বর্ণের আকারে অমিল রয়েছে।

তিনডাল্যা ঘা বর্ণটির অপর দুটি নাম রয়েছে। যথা- তিনফাল্যা ঘা ও তিন ডেল্যা ঘা।

বেশী নাম রয়েছে দ্বি পদলা জা এর । এর অন্যান্য নামগুলাে হলাে দ্বিফুদো জা, দ্বিপালা জা, দ্বি ফাল্যা জা, ঠঁট মজরা জা, ঠুঁট বেঙা জা ও জারগাে জা। বর্ণটির আকারেও রয়েছে ভিন্ন প্রকৃতি। চিরজ্যোতি- মঙ্গল কুমার চাকমা এক ধরণের, সুগত/ নােয়ারাম/ সুপ্রিয়/ বিরাজ মােহন/ মিজোরাম এর আকার এক ধরণের, বীর কুমার/ শ্রদ্ধালংকার মহাথেরাের আকার একধরণের এবং হর কিশাের চাকমার বর্ণটি আরেক ধরণের।

উরাউরি ঝা এর আকার নিয়ে বেশী পার্থক্য বিদ্যমান । তাছাড়া এরও রয়েছে। অপর দুটি নাম । যথা- উরােউরি ঝা ও হুরাহুরি ঝা। এই বর্ণটির আকার বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন রকম। নােয়ারাম চাকমা ও চিরজ্যোতি- মঙ্গল কুমার চাকমার বর্ণটি এক ধরণের। আবার সুগত চাকমা, বিরাজ মােহন চাকমা ও বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যার বর্ণটি একধরণের। শ্রদ্ধালংকার মহাথেরাে, সুপ্রিয় তালুকদার, হরকিশাের চাকমা এবং মিজোরাম রাজ্যে ব্যবহৃত বর্ণটি আলাদা আলাদা ধরণের।

মজরা ছা বর্ণটি কেহ কেহ মােজৰ্জা ছা লিখে থাকেন। এই বর্ণটিতে কৃষ্ট চন্দ্র/ সতীশ/ নােয়ারাম/ মিজোরাম/ বিরাজ মােহন/ শ্রদ্ধালংকার/ চিরজ্যোতি- মঙ্গল/ সুগত চাকমা সবাই একই আকৃতির লিখলেও সুপ্রিয় তালুকদারের বর্ণটি ভিন্ন আকৃতির।

ফুদাদ্বিয়া ঠা কে কেহ কেহ ফুদোদিয়ে ঠা বলে থাকেন। এই বর্ণটিও বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন ধরণের। নােয়ারাম চাকমা, বিরাজ মােহন চাকমা ও সুপ্রিয় তালুকদার একই ধরণের আকৃতি দেখিয়েছেন। আবার শ্রদ্ধালংকার মহাথেরাে, বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও সুগত চাকমা একই আকৃতির কথা বলছেন। ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির কথা বলছেন চিরজ্যোতি- মঙ্গল কুমার চাকমা, হরকিশাের চাকমা ও কৃষ্ট চন্দ্র। জনৈক সুনেন্দু নামীয় একজন বৈদ্যও ভিন্ন আকৃতির কথা বলেছেন।

লেজভরেয়্যে ঢা নিয়ে হরকিশাের চাকমা ব্যতীত বাদবাকী সব লেখকই একই আকৃতি দেখিয়েছেন। তবে এর আরও দুটি ভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন- লেজমজরা ঢা ও লেজগুজেয়্যে ঢা।

তলমুয়া ধা কে কেহ কেহ উবর পেদা ধা লিখে থাকেন।

চেরভাল্যা ভা বর্ণটি চেরডাল্যা ভা ও চেরডাজ্যা ভা নামেও লেখা হয়। এই বর্ণটির আকৃতির ব্যাপারে সুপ্রিয় তালুকদার ব্যতীত বাদবাকী সবাই একই আকৃতির লিখেছেন ।।

বুগৎ পদলা মা এর আরও দুটি নাম রয়েছে। যথা- বুগৎফোদা মা ও বুগৎস মা। এই বর্ণটির আকৃতির ব্যাপারে সুপ্রিয় তালুকদার বাদে বাদবাকীরা সবাই একই আকৃতি ব্যবহার করেছেন।

জিল্যা যা নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। কেহ কেহ বলেন এটি যিল্যা যা আবার কেহ কেহ বলেন চিময্যা যা । তবে আকৃতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভিন্নমত রয়েছে। নােয়ারাম ও বিরাজ একই আকৃতির, বীর কুমার নিজেই একই আকৃতির, শ্রদ্ধালংকার ও সুগত চাকমা একই আকৃতির, সুপ্রিয় তালুকদার নিজের মতাে

আকৃতির, চিরজ্যোতি- মঙ্গল কুমার চাকমা নিজের মতাে আকৃতির করে লিখেছেন।

দ্বি-দায্যা রা বর্ণটিকে সবাই একই ধরণের লিখলেও শ্রদ্ধালংকার মহাথেরাে ও বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ভিন্নভাবে লিখেছেন।

পেটকাবা লা/ হ্লা বর্ণটির রয়েছে হরেক রকম নাম। যেমন- পেটকাটা লা/ হ্লা, পেটফাদা লা/ হ্লা ও পেইক ফাদা লা (শ্রদ্ধালংকার)।

চিমুজ্যা য়া বর্ণটির অপর দুটি নাম রয়েছে। একটি হলাে চিমায্যা য়া ও অপরটি হলাে চিমােজা য়া। এই বর্ণটির আকৃতি সবারই একই হলেও হর কিশাের চাকমা। ও কৃষ্ট চন্দ্র এর আকৃতি ভিন্ন ধরণের।

ডেলভাঙা ই বর্ণটি বিরাজ মােহন চাকমা, সুগত চাকমা, নােয়ারাম চাকমা, বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও শ্রদ্ধালংকার মহাথেরাে একইভাবে লিখেছেন। আবার ভিন্ন ভিন্ন ভাবে লিখেছেন সুপ্রিয় তালুকদার, চিরজ্যোতি- মঙ্গল কুমার চাকমা ও হরকিশাের এবং সতীশ চন্দ্র ঘােষ ।

চাকমা বানান রীতি

চাকমা বর্ণমালার নামকরণ ও আকার নিয়ে মতভেদ থাকার পাশাপাশি বানানরীতি নিয়েও রয়েছে নানান বিসদৃশ । যারা চাকমা বর্ণমালাগুলাে সংরক্ষণ ও বিকাশের চেষ্টা করেছেন তারা সবাই আমার মতাে বাংলা মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেছেন। তাই বাংলা রূপে চাকমা উচ্চারণকে বানান করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। যেমন চাকমা উচ্চারণে ‘তলমু” হলেও বাংলায় লেখা হচ্ছে ‘তলমুয়া’। উচ্চারণগত তারতম্যটাকে স্বীকার করে নিলেও প্রশ্ন থেকে যায় যে, এভাবে বর্ণমালার নামকরণ ও উচ্চারণে বিকৃতি স্পর্শ করবে কি-না?

আমি মনে করি বাংলায় লিখতে গেলে যতটুক সম্ভব চাকমা উচ্চারণটাকে কাছাকাছি উচ্চারণ অনুযায়ী লেখা বাঞ্ছনীয়। বানান রীতিতে আরেকটি মৌলিক প্রশ্ন হলাে চাকমা ভাষায় যুক্তাক্ষর ব্যবহার করা হবে কি-না? নােয়ারাম চাকমা তাঁর ‘পথম শিক্ষা’ তে যুক্তাক্ষর ব্যবহার করেছেন। চিরজ্যোতি- মঙ্গল চাকমার সম্পাদিত ‘চাঙমার আগপুধি’তেও যুক্তাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু অনেকে মনে করেন যে, যুক্তাক্ষর ব্যবহার করা অনুচিত হবে।

ইংরেজীতে যেমন যুক্তাক্ষর নেই, অনুরূপভাবে আমাদেরও যুক্তাক্ষর ব্যবহার পরিহার করা উচিত। কারণ যুক্তাক্ষর বানান রীতিতেও রয়েছে নানান বিঢ়ম্বনা। অনেকে একটি হরফের উপর মায্যা ও উবরতুল্যা দিয়ে একই হরফের যুক্তাক্ষর লিখে থাকেন। অনেকে দীর্ঘস্বর বােঝাতে হ-ফলা ব্যবহার করেন।

অনেক বৈদ্য রয়েছেন যারা তাদের সাংকেতিক চিহ্নকেও বর্ণ হিসেবে চালিয়ে দেন। অনেকে হরফগুলাে গােপন করেন নিজের তন্ত্র-মন্ত্র এর গােপনীয়তা রক্ষার্থে। তাই বেশীরভাগ মানুষই মনে করে যে, ভাষাটির লিখিতরূপ ব্যবহারপােযােগী ও গতিশীল রাখার জন্য যুক্তাক্ষর ব্যবহার থেকে বিরত থাকা সমীচিন হবে। কারণ শুধু চাকমা নয়, বাংলা ভাষা থেকে শুরু করে পৃথিবীর অনেক ভাষার বানান রীতিতে পরিবর্তনকে স্বাগত জানানাে হয়েছে । যেমন আগে বাংলায় অঙ্ক লেখাকে বর্তমানে অংক লেখা হচ্ছে।

চাকমা ভাষার একটা ডিকশনারী বা শব্দটারা বানানাে প্রয়ােজন। এতে গ্রহণযােগ্য বানান রীতি বিষয়ে ধারণা দেয়া যাবে । চাকমা হরফে বাংলার ঐ নেই। তাই ঐ দিয়ে আরম্ভ হওয়া শব্দটিকে চাকমা ভাষায় কিভাবে লেখা হবে তা নিয়ে অনেকে বিতর্কের অবকাশ রাখেন। তাই নি:সন্দেহে বলা যায় চাকমা ভাষার বানান রীতিতে এখনাে বিস্তর ঐক্যমত্য অর্জন করা প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।

চাকমা সংখ্যা গণণা

চাকমাদের সংখ্যা গণণাকে অনেকে ছড়া মনে করেন। চাকমা ভাষায় গণণা করা যায় মাত্র কুড়ি পর্যন্ত । যােগকে চাকমাতে এগত্তর, বিয়ােগকে ফারক, গুণকে দুনাে, ভাগকে ধুনাে এবং সমষ্টিকে লগে বলে অভিহিত করা যায় । ছড়ার মতাে করে এক হতে কুড়ি গণণাকে এভাবে লেখা যায়-

এক-ত্ব, দ্বি-ত্ব, তিগিরি, তি-ত্ব
পাজ, কদম, বৈলা, নি-তু
রাজা, মােহর, হাত, ঘাট
বাউনে, নিল, সােনার, তাত
গন্ডা, গুন্ডি, উনুচ, কুড়ি

চাকমা গণণাটিকে আমিও ছড়ার মতাে ভাবতে পছন্দ করি এ প্রসঙ্গে বলতে চাই। যে, রাধামন-ধনুপদির আদাম বা গ্রামটিকে ‘কদম কুড়ি আদাম’ বলে অভিহিত না করে গেঙখুলীরা ‘ছ কুড়ি আদাম’ বলে অভিহিত করেছেন।

আমি মনে করি যে, অনেক বাংলা শব্দ বিকৃত উচ্চারণে চাকমা ভাষায় গৃহিত হয়েছে। তাই গণণার ক্ষেত্রে আমরা সে গণণাটাকে গ্রহণ করতে পারি। কেননা বাস্তবিক জীবনে এখন চাকমারা তাই ব্যবহার করে চলেছেন। তবে বর্ণমালার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অর্থে সকল নামের ও আকারের বর্ণগুলাে আমাদের সংরক্ষণ করা দরকার। আবার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট বর্ণগুলাে ব্যবহারপােযােগী করার দিকেও মনােনিবেশ করতে হবে ।

কর্মশালায় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত বর্ণমালাসমূহ, তাদের নাম ও আকার নিম্নে দেয়া হলাে।

বর্ণ

উল্লেখ্য কর্মশালায় যেসকল বর্ণ বাদ দেয়া হয় সেগুলাে হলাে পেটকাবা/ পােটফাদা হ্লা, ডেলভাঙা ই, লেজউব এ ও বচছি উ।

চাকমা বর্ণগুলােকে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ হিসেবে ভাগ করলে স্বরবর্ণ হলাে ১টি (পিছপুজা আ) এবং ব্যঞ্জন বর্ণ হলাে ৩২টি। এদেরকে অজা পাঠ বলা হয় ।

চাকমা পাঠসমূহ

চাকমা ভাষায় বর্ণসমূহে ব্যবহৃত বিভিন্ন চিহ্নগুলােকে পাঠ বলা হয়। বৈদ্য তথা ঐতিহ্যবাহী পাঠ পদ্ধতিতে চাকমা বর্ণমালা শিক্ষণকে মােট ১২টি পাঠে ভাগ করা হয়। পাঠসমূহ হলাে-
১. অঝা পাঠ (কা, খা, গা ইত্যাদি)
২. মায্যা পাঠ (কা এর উপর মায্যা দিলে কাক ইত্যাদি)
৩. কায়ি পাঠ (কি, কী, কু, কু, কে, কাই, কাং, কা: অনুরূপে খ, গ ইত্যাদিতে)
৪. কারা পাঠ (র- ফলা। যেমন ক্রি, ক্রু, ক্রে ইত্যাদি। অনুরূপে খ, গ)
৫. কিয়া পাঠ (য- ফলা। কি, কু, ক্যে ক্যং। অনুরূপে)
৬. কু পাঠ (কো, কৌ, কোই, কোং, কোঃ । অনুরূপে খ, গ ইত্যাদি)
৭. কেত্তা পাঠ ( এর মতাে। {ক+ত}। অনুরূপে অন্য বর্ণের সাথে ত-এর যুক্তাক্ষর হবে।)
৮. কেজাম্মা পাঠ (ম-ফলা। স্ম-এর মতাে।)
৯. কেল্লা পাঠ (ল-ফলা। ক্লি, ক্লী, ক্ল, ক্লে, ক্লাই, ক্ল, ক্লং, ক্লঃ। অনুরূপে গ তে প্রয়ােগ ইত্যাদি)
১০. কেন্না পাঠ (ন-ফলা। যেমন কি, ক্লী, কু, কে, ক্লা, ক্লাই, ক্ল, । অনুরূপে খ, গ, তে প্রয়ােগ ইত্যাদি)
১১. কাপ্পা পাঠ (প্প-এর মতাে। ক্স এর মতাে ইত্যাদি)
১২. নাদা পাঠ (বিরাম চিহ্ন সমূহ) এটি বাংলা ধারাপাঠের মতাে।

দাড়ি=একচিল্যা(!), সমান্তরাল বা দ্বিচিল্যা(।।), প্রশ্নবােধক চিহ্নপূঝার(?), সমান= সং(=), হাইফেন= জড়া(-), প্রথম বন্ধনী= একবান{{-)}, দ্বিতীয় বন্ধনী= দ্বিবান{ ((-))}, তৃতীয় বন্ধনী= তিনবান(<->), ইনভারটেড কমা= উদ্ধার(//-//), যােগ= এগত্তর, বিয়ােগ= ফারক, গুণ= দুনাে, ভাগ= ধূনাে)।

স্বরবর্ণ(১টি)

=পিছপূজা আ
উবরতুল্যা দিলে অ হবে।
এ-কার দিলে এ হবে।
উবরতুল্যা ও ডেলভাঙ্গা দিলে ঐ হবে।
বান্যা দিলে ই হবে।
বাণীফুদা দিলে ঈ হবে।
একটান দিলে উ হবে।
দ্বিটান দিলে উ হবে।

মায্যা পাঠ

মায্যা পাঠ (কা এর উপর মায্যা দিলে কাক্ ইত্যাদি)। মায্যা পাঠ হলাে বাংলা হসন্তের মতাে। শব্দের যে বর্ণের উপর জোর দিতে হয় সে বর্ণের উপরে মায্যা চিহ্ন দিতে হয় । মায্যা চিহ্নটি বর্ণটির বরাবর উপরের দিকে সরল রেখার মতাে। করে দিতে হয় যেভাবে ইংরেজীতে কোন বর্ণের উপর আন্ডারলাইন করা করা হয় ঠিক সেইভাবে উল্টো করে। বৈদ্যদের পাঠক্রমে বা পুরনাে পদ্ধতিতে কেবল মাত্র ১২টি বর্ণের উপরই মায্যা চিহ্ন ব্যবহার করার বিধান রয়েছে। এসকল বর্ণগুলাে হলাে-

চুচ্যুাঙ্যা
কা
‍চিলামঙা
ঙা
দ্বিদায্যা
চা
শিলচ্যা
ঞা
জগদা
তা
ফারবান্যা
না
চিমায্যা
য়া
দ্বিদায্যা
রা
তলমুয়া
লা
পাল্যা পা
বুগৎপাদলা
মা
বাজন্যা
ওয়া

ইদানীংকালে উক্ত বারটি বর্ণ ছাড়াও অন্যান্য বর্ণেও মায্যা প্রয়ােগ করা হয় । বিশেষ করে কালের গতিতে বাংলা ও বিদেশী শব্দগুলাে চাকমা ভাষাতে প্রবেশ করার ফলে এর পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। বৈদ্যদের উচ্চারণ রীতিতে মায্যা পাঠ উচ্চারণটা বেশ শ্রুতিমধুর।

কায়ি পাঠ

(কি, কী, কু, কু, কে, কাই, কাং, কাঃ অনুরূপে খ, গ ইত্যাদিতে প্রয়ােগ হবে ।) কায়ি পাঠ হলাে বৈদ্যদের পাঠক্রমের একটি পাঠ। এখানে একটি বর্ণের সাথে। বিভিন্ন চিহ্নাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করা হয়। যেমনঃ

কা
কা
কা
কা
কা
কা
কা
কা
কা

তে
তে
তে
তে
তে
তে
তে
তে
তে

বান্যা
বানীফুদো
একটান
দ্বিটান
এ-কার
ঢেলভাঙা
উবরতুল্যা
একফুদা
দ্বিফুদা

দিলে
দিলে
দিলে
দিলে
দিলে
দিলে
দিলে
দিলে
দিলে

কি
কী
কু
কূ
কে
কাই

কাং
কাঃ

হয়।
হয়।
হয়।
হয়।
হয়।
হয়।
হয়।
হয়।
হয়।

অনুরূপভাবে খা, গা, ঘা প্রভৃতি বর্ণতে উক্তরূপে চিহ্ন প্রয়ােগ করে বর্ণের বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করা যাবে।

কারা পাঠ

র-ফলা। যেমন- ক্রা, ক্রি, ক্রী, ক্রু, ক্রে, ক্রাই, ক্র, ক্রঃ। অনুরূপে খ, গ ইত্যাদি) বৈদ্যরা রা বর্ণের ফলাকে কারা পাঠ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কারা পাঠ বাংলার র-ফলার মতাে। র-ফলাটি বর্ণের নীচ দিকে ডান থেকে বাম দিকে। অনেকটা বাংলা র-ফলার মতাে প্রয়ােগ করতে হয়।
যেমনঃ কা তে র-ফলা দিলে ফ্রা হয়।
ঠিক তেমনিভাবে।

ক্রা

এর সাথে উবরতুল্যা
বান্যা
বাণীফুদা
একটান
দ্বি-টান
এ-কার
ডেলভাঙ্গা
দ্বিফুদা

দিলে
দিলে
দিলে
দিলে
দিলে
দিলে
দিলে
দিলে

ক্র
ক্রি
ক্রী
ক্রু
ক্রূ
ক্রে
ক্রাই
ক্রঃ

হয়;
হয়;
হয়;
হয়;
হয়;
হয়;
হয়;
হয়।

অনুরূপভাবে অন্যান্য বর্ণতেও প্রয়ােগ হবে।

কিয়া পাঠ

য-ফলা। কি, কী, কু, ক্যে, ক্যই, ক্য, ক্যঃ। অনুরূপভাবে খ, গ ইত্যাদিতে।

কু পাঠ

কো, কৌ, কোই, কোং, কোঃ। অনুরূপভাবে খ, গ ইত্যাদি।

কেত্তা পাঠ

ও এর মতাে। {ক+ত}। অনুরূপভাবে অন্য বর্ণের সাথে ত-এর যুক্তাক্ষর হবে।

কেজাম্মা পাঠ

ম-ফলা । শ্ম-এর মতাে।

কেল্লা পাঠ

ল-ফলা। ক্লি, ক্লী, ক্ল, ক্ল, ক্লে, ক্লাই, ক্ল, ক্লং। অনুরূপভাবে খ, গ তে প্রয়ােগ। ইত্যাদি)

কেন্না পাঠ

ন-ফলা । কি, ক্লী, কু, কে, ক্লা, ক্লাই, ক্ল, ক্লং। অনুরূপভাবে খ,গ তে প্রয়ােগ ইত্যাদি

কাপ্পা পাঠ

প্ল-এর মতাে। ল্প ইত্যাদি

নাদা পাঠ

বিরাম চিহ্ন ও অংক সংখ্যাসমূহ।
দাড়ি= একচিল্যা(।), সমান্তরাল বা ডবল দাড়ি= দ্বিচিল্যা(।।), প্রশ্নবােধক চিহ্ন পুঝার(?)
চাকমাতে অংক সংখ্যাগুলাে রয়েছে। তবে প্রাচীনকালে চাকমারা কেবল মাত্র ১ হতে ২০ পর্যন্ত গণণা করত। এরপর তারা এক কুঁড়ি, দুই কুঁড়ি ইত্যাদি ভাবে গণণা করত।

চিহ্ন ব্যবহার করে শব্দ গঠনের অর্থ হলাে বর্ণের সাথে চিহ্ন ব্যবহারের শিক্ষা প্রদান করার মাধ্যমে শব্দ গঠনে পাঠ দান করা। যেমন আমি, কাত্তোল, মুই, বাদী ইত্যাদি।

স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সমন্বয়ে শব্দ গঠনের অর্থ হলাে উভয় প্রকার বর্ণের সমষ্ঠিতে শব্দ লেখা শেখানাে। যেমন- আজার, আলসি ইত্যাদি।

চাকমা ভাষায় যুক্ত অক্ষর নেই। তবে একই বর্ণের যুক্ত রূপ রয়েছে। একটি বর্ণের সাথে মায্যা ও উবরতুল্যা দিলে যুক্ত উচ্চারণ হয়। যেমন- ফারবান্যা না-তে ও উবরতুল্যা প্রয়ােগ করে ন্ন লেখা যায়। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, আগে মায্যা উচ্চারিত হবে এবং পরে উবরতুল্যার প্রয়ােগ অনুযায়ী উচ্চারণ হতে এছাড়া একই বর্ণে মায্যা এবং বান্যা বা বানীফুদো প্রয়ােগ করেও যুক্তাক্ষর করা যায়।

চাকমা শব্দ

চাকমা ভাষার আদি শব্দগুলাে দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। সেগুলােকে সংরক্ষণ করার জন্য একটি শব্দ কোষ সংরক্ষণ করা দরকার । চাকমাদের আদি ভাষা কোন পবিত্র অন্তর্গত ছিল সে বিষয়ে এখনাে কোন উল্লখযােগ্য তথ্য আবিস্কৃত হয়নি। তাই চাকমা শব্দগুলাের আদিরূপ দেখলে এর ৩ টি ভাগ লক্ষ্য করা যায়। যেমন, আর্য, শব্দ, অনার্য শব্দ ও বিদেশী শব্দ।

আর্য- যে সকল সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত ভাষার শব্দ চাকমা ভাষাতে প্রবেশ করেছে সেগুলাে হলাে আর্য শব্দ। যেমন-
চাকমা- আমি, পালি- অমূহে
চাকমা- গাঙ, সংস্কৃত- গঙ্গা।

অনার্য শব্দ-যে সকল আরাকানী, ত্রিপুরী (ককবরক) কিংবা কুকি চীন শব্দ চাকমা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেগুলাে অনার্য শব্দ। যেমন-
চাকমা- তাগল, আসামী- টাক্কল
চাকমা- কাল্ল্যোং, পাংখাে- কালান
চাকমা- পূন্ন্যং, লুসাই- টালাং
চাকমা- কিয়ঙ, আরাকানী- ক্যাং
চাকমা- খবং, ত্রিপুরা- গম্বং
চাকমা- হেংগ্রং, আরকানী- খেং খ্রেং

বিদেশী- যে সকল আরবী, ফার্সী, ইংরেজী ইত্যাদি শব্দ চাকমা ভাষাতে প্রবেশ করেছে সেগুলাে হলাে বিদেশী শব্দ। যেমনঃ
চাকমা- অথ (আরবী-ওয়াক্ত)
চাকমা- ফোর (ফার্সী- পাের)
চাকমা- খর’ (হিন্দী- খট্টা)
চাকমা- জীংকানি (উর্দু- জিন্দেগী)
চাকমা- অভিচ (অফিস) (ইংরেজী- অফিস)

বর্তমান সময়ে চাকমা ভাষার আরাে বিকাশ ঘটেছে বা আরাে বেশী অনার্য ভাষার সংস্পর্শে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতায়, এখানকার মানুষের আশা-আকাঙ্খায় এসব শব্দের আদান-প্রদান ঘটছে। ফলে চাকমা ভাষার শব্দগুলোকে ব্যবহারের ধরণ অনুযায়ী নিম্নোক্তভাবে ব্যক্ত করা যায়।

১ মৌলিক/ খাঁটি শব্দঃ যে সকল শব্দগুলাে কেবল মাত্র চাকমা ভাষাভাষিরা স্মরণাতীতকাল থেকে ব্যবহার করে আসছে সেগুলােই হলাে মৌলিক/খাঁটি শব্দ। যেমন- বিজক।

২. জুম্ম শব্দঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত দশভিন্ন ভাষাভাষি জুম্ম জাতিসত্ত্বা (মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি) সমূহের ভাষার শব্দ চাকমা ভাষায় সম্পূর্ণভাবে বা কিছুটা বিকৃতভাবে গৃহীত হয়েছে সেগুলােই হলাে জুম্ম শব্দ। যেমন-
মারমা কিয়ঙ, সিয়ঙ, করমমবু> করমপুক, তৈমাঙ<তেম্মাঙ ইত্যাদি ত্রিপুরা= কামা, করােই।

৩. বাংলা শব্দঃ বাংলা ভাষা থেকে যে সকল শব্দ (বাংলা ভাষাতে গৃহীত বিদেশী শব্দ বাদে অন্যান্য শব্দসমূহ) চাকমা ভাষাতে বিকৃত বা হুবহুভাবে গৃহীত হয়েছে সেগুলােকে বাংলা শব্দ বলে। যেমন- পাজ, গাজ।

৪. বিদেশী শব্দঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশে সাধারণত প্রচলিত ভাষাবাদে অন্যান্য দেশের/জাতির ভাষা থেকে যে সকল শব্দ চাকমা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সেগুলােই হলাে বিদেশী শব্দ। যেমন-

ইংরেজী= ইস্কুল
হিন্দী= রােজেই

চাকমা বাক্য

গঠন অনুযায়ী বাক্য ৩ (তিন) প্রকার। যথা-
১. সরল (উজু)- যে বাক্যে একটি কর্তা (উদ্দেশ্য) ও একটি সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে। যেমন- মুই (উদ্দেশ্য) ভাত খাং (বিধেয়)।
২. মিশ্র/ জটিল (মিজেল্যা)- একটি প্রধান বাক্যাংশ এবং এক বা একাধিক অপ্রধান বা পরনির্ভর বাক্যাংশ থাকে। যেমন- যে ইদু এইস্যে (পরনির্ভর) তে ম’ সমাঝে (প্রধান)।
৩. যৌগিক (জাগুলুক)- দুই বা ততােধিক সরল বা জটিল বাক্য মিলে একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করলে তাকে জাগুলুক বাক্য বলে। বাংলাতে ও, এবং, কিন্তু অথবা নতুবা, কিংবা ইত্যাদি।
চাকমা- ন’অলে, তুও ইত্যাদি।
যেমন- চুব গুরি শুন্ ন’ অলে যা গােই।
মুই মরিম তুও দারু ন’ হেইম।

কাজ অনুযায়ী বাক্য ৫ (পাঁচ) প্রকার।

নিম্নে উদাহরণসহ আলােচনা করা হলাে। যথা
১. বিবৃতিমুলক- যে কোন ভাষায় সিংহভাগ বাক্যই বিবৃতিমূলক। যেমন- মুই একজন ছাত্র।
২. প্রশ্নবােধক- কুদু যর?
৩. অনুজ্ঞাবাচক (আদেশ, উপদেশ, নির্দেশ, অনুরােধ)। যেমন- ঘরত যা, দোর আন খুল, হাত- ঠেং দ’।
৪. ইচ্ছা-প্রার্থনাসূচক। যেমন- কতা বাবুদাগি ভালক বজর বাজদোক। ভগবানে তরে ফিরি চোগ।
৫. বিস্ময় (আবেগ) সূচক। যেমনঃ উঃ কম্বা জুক, ওমা ঘা গরিবে। আবার প্রতিটি বাক্যের ২ টি ধরণ আছে। যেমন- হ্যাঁ বােধক ও না বােধক।
উদাহরণ- নাগারা গম পাে (হা),
মুই মদ ন’ খাং (না)।

বাংলাতে না বােধক বাক্যের ক্ষেত্রে না টি পরে বসে। কিন্তু চাকমা ও ইংরেজীর ক্ষেত্রে না আগে বসে। যেমন-
যাব না =ন’ যেম। খাব না = ন’ হেইম।

পদ

বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলে। পদ ২ (দুই) প্রকারঃ যথা- ক)। নামপদ ও খ) ক্রিয়াপদ

ক) নামপদ আবার ৪ (চার) প্রকার। যথাঃ
১. বিশেষ্য
২. বিশেষণ
৩. সর্বনাম
৪. অব্যয়।

বিশেষ্য

এটি আবার ৬(ছয়) প্রকার। যথা
১. নাম/সংজ্ঞাবাচক- এম এন লারমা, জুমকিং দেওয়ান
২. বস্তুবাচক- বদা (ডিম)।
৩. জাতিবাচক- বন্দা(মানুষ)।
৪. সমষ্টিবাচক- মালেয়্যে।
৫. ভাববাচক- যানা (যাওয়া)।
৬. গুণবাচক- দোল (সুন্দর)

বিশেষণ

সংজ্ঞাঃ যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, সংখ্যা, পরিমাণ, অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ করে তাই হলাে বিশেষণ। এটি প্রধানত ২ প্রকার। যথা-
ক. নাম বিশেষণ ও
খ. ভাব বিশেষণ।।

ক. নাম বিশেষণঃ- যে বিশেষণ পদ কোন বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের দোষ, গুণ। ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে নাম বিশেষণ বলে ।।

খ. ভাব বিশেষণঃ- যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বাদে অন্য পদকে বিশেষায়িত করে তাই হলাে ভাব বিশেষণ। এটি ৩ (তিন) প্রকার । যথা-
১. ক্রিয়াবাচক- যাদি যা।
২. বিশেষণের বিশেষণ- যাদি যাদি যা।
৩. অব্যয়ের বিশেষণ- এহেম এহেম ন গরিস।

সর্বনাম

সংজ্ঞাঃ যে পদ বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় তাই হলাে সর্বনাম গণ।

সর্বনামের নামউদাহরণ
ব্যুুুক্তিবাচকমুই/ তুই/ তে/ মর/ আমি/ তুমি/ তারা/ তারার/ আমা/ আমারে/ তারারে
প্রশ্নবাচক কুবান/ কিঙিরি/ কারে/ কার/ কান্না/ কান্না-কান্না/ হক্কে/ হক্কেনে/ কুদু/ হক্কে হক্কে/ কমলে কমলে
আত্মবাচকনিজরে/ আমনরে/ তে তারে/ আমি আমি/ আমারে/ তারা তারা/ তোমা তোমার
নির্দেশকওই/ ইয়েন/ ইবে/ উবু/ ইয়েনি/ ইবেনি/ উবোনি/ উগুন/ উবান
অনির্দেশকযিবে/ ভালুককু/ গুলেক/ ইত্তুক/ হাঙদিক/ এক্কানা
সাকুল্যাবাচকবেক্কুন= বেগে=
অলে= ন’ অলে=
#সর্বদা একবচন এবং একজাতীয় ব্যক্তি বা বস্তু
ব্যহারিকএগে-অবরে=
তারা তারা=
এগে এগে=
অন্যদিবাচকযিবে/ উহর/ ও=
সাপেক্ষযে অদসাদ=
যিয়েন অদসাদ=
যা অদসাদ=
তে ওতে/ ফলনা-দবনা=

অব্যয়

সংজ্ঞাঃ এমন কতকগুলাে পদ আছে যেগুলাে কোনরূপ পরিবর্তিত না হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয় সেগুলাে হলাে অব্যয় পদ। ইহা প্রধানতঃ তিন প্রকার। যেমন- পদান্বয়ী, সমুচ্চয়ী, অনন্বয়ী।

১. পদান্বয়ীঃ যে সব বাক্যের বিভিন্ন পদের মধ্যে অন্বয় বা সমন্ধ প্রকাশ করে। যথা-

এদক গমে গরিলেও মনত ন’ পড়ে।
ত’ লগে মুইও যেম।

২. সমুচ্চয়ীঃ যে সকল অব্যয় একাধিক পদ বা বাক্যের মধ্যে সংযােগ/বিয়ােগ সাধন করে। যেমনঃ
১. সংযােজক-ফলনা, দবনা আ কন্না আঘে ?
২. বিয়ােজক-ফলনা ন’ অলে দবনা এলেও অব।
৩. সংকোচক- এন ভালক্কানি কাম এল সেনত্ত্যে যেই ন পারংগে।
৪. নিত্য-মরিম তােও দারু ন’ খেইম।

৩. অনন্বয়ীঃ যে সকল অব্যয়ের বাক্যের সাথে বিশেষ সম্পর্ক থাকে না কিন্তু কোন বিশেষ ভাব প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়।
১. বিস্ময়বােধক- বা! কি আঝিবার কথা।
২. স্বীকৃতিবােধক- আচ্ছা দেগা যেব।
৩. অস্বীকৃতিবােধক- ন’ যেম।
৪. বিরক্তি-কি আগাত্যা।
৫. আহ্বান -ওই ম লগে গেলে আয়।
৬. প্রশ্ন- কিঙিরি গরিম?
৭. শােক- আঁ চিত পুড়ে পারা।
৮. তুলনা- ফলনা দ্যা দেগঙত্ত্যে।
৯. বাক্যালংকার- গরীব কিনে আয়।
১০. অনুকরনীয়- তেপ তেপ পানি পড়ের।
১১. উপসর্গ- অঘ্যের দেবা কালা।

চাকমা ভাষায় ব্যবহৃত কতকগুলাে অব্যয়ঃ

অহ= অন্বয় এর উচ্চারণভেদ
অহয়= ঐ
আঁ= খেদোক্তিসুচক
আচ্ছার= সত্যই অবশেষে
আদিকক্যে= অতর্কিতে
ইজু= একনাগারে/কথারমাত্রা বিশেষ
ইয়ত্যায়= এইজন্য
ইয়াে= ওহে
এ= অধিকন্তু
ওয়াই= আকস্মিক ভয়তাড়িত উচ্চ চিৎকার শব্দ
এনা/হেনা= বাকরীতি (তে এনা যেয়ে)
এব্বেরে= একেবারে
এহেম= মনােযােগ আকর্ষনের জন্য উচ্চারিত শব্দ
উবু= ঐটাও।

ক্রিয়াপদ

সংজ্ঞাঃ যে পদের দ্বারা কোন কালের কোন প্রকার ক্রিয়া ব্যাপার বােঝায়। তাকে ক্রিয়াপদ বলে। ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে শেষ পর্যন্ত এমন একটি মূল পাওয়া যায় যাকে আর ভাঙা সম্ভব হয়না। সেটিই হলাে ক্রিয়ামূল যাকে ধাতু বলা হয়। ক্রিয়াপদ প্রধানত দুই প্রকার।

১. সমাপিকা-ফাগুনও আভা ফিইজ্জ্যে।
২. অসমাপিকা- বেইন্যা পত্তে ঘুমন উদি।

সমাপিকা ক্রিয়া আবার দুই প্রকারঃ

ক. সকর্মক- যে ক্রিয়ার কর্ম আছে। যেমন- তে মরে ইক্কু বােই দিয়্যে। দুটি কর্মপদ।
খ. অকর্মক-যে ক্রিয়ার কর্ম নেই। যেমন-গুরােবু কানের।

ক্রিয়ার কাল

ক্রিয়া নিষ্পন্ন হওয়ার সময়কে কাল বলে। কাল ৩ প্রকার। যথা- অতীত কাল। (বিদি যেয়ে), বর্তমান কাল (ইক্কুন), ভবিষ্যৎ কাল (মুজুঙে)। আবার প্রত্যেকটি কাল ৪ ভাগে বিভক্ত।

চাকমা ভাষায় ক্রিয়ার কাল বচন ও পুরুষভেদে পরিবর্তন ঘটে। বাংলা ও ইংরেজী ভাষার ক্ষেত্রে সচরাচর এমনটি লক্ষ্য করা যায় না। বাংলার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র পুরুষভেদে ক্রিয়ার প্রয়ােগে পার্থক্য হয়ে থাকে। নিম্নে এসব কালসমূহ বিষয়ে আলােচনা করা হলাে।

বর্তমান কাল

সাধারন বর্তমান

সংজ্ঞাঃ যে কালে ক্রিয়াটি স্বভাবতঃ নিয়মিত, সচরাচর, নিত্য বা সর্বকালে ঘটে, তার কাল হলাে সাধারন বর্তমান কাল। যেমন- বেলান পুগেন্দি উদে। দুয়ে তিনে পাঁচ/পাঁজ হয়। রাঙাচানে বানা গব দি দি থাই। মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৮৩ সালর ১০ নভেম্বর মারা যেয়ে (ঐতিহাসিক বর্তমান)।

Changmatara Table 1
Changmatara Table 1

ঘটমান বর্তমান

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়ার কার্য এখনাে চলছে তাই হলাে ঘটমান বর্তমান কাল। তে বই পড়ে। নবী ইস্কুলত যার। জুমকিং বই পড়ে।

পুরাঘটিত বর্তমান

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়ার কার্য কিছু কাল আগে শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ফল এখনাে বর্তমান তাই হলাে পুরাঘটিত বর্তমান কাল । যেমন- এবারত মুই পরীক্ষা দিয়ােং। তারা ভালক্ষন সঙ খারা অয়ােন।

পুরাঘটিত ঘটমান বর্তমান

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়ার কার্য দ্বারা কোন কাজ কিছুকাল ধরে চলছে বুঝায় তাই হলাে পুরাঘটিত বর্তমান কাল। যেমন- দ্বি দিন ধরি এ কামান গরঙর। চিগােনতুন ধরি। তে ইদু আগেদে। পরানী গেলে বুধবারতুন ধরি জ্বরত পজ্জেদে।

অতীত কাল

সাধারন বা নিত্য অতীত কাল

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়া অতীতকালে ঘটেছে এবং যার ফল বাকী নেই সে কাল হলাে সাধারন অতীত কাল। যেমন- চানান ডুবিলােগােই।

ঘটমান অতীত

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়ার কাজ অতীত কালে হচ্ছিল/ চলছিল, সেটি হলাে ঘটমান অতীতকাল। যেমন- তারা বেকুনে মিলে কামান গরিডন। গেল্পে কেল্ল্যে যেকে বােয়ের বার সেক্কে মুই ঘন্টি উরাঙর।

বিঃদ্রঃ অতীতকালে সময় উল্লেখ থাকতে হবে।

পুরাঘটিত অতীত

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়ার কাজ অতীতে শেষ হয়ে গিয়েছে তাকে পুরাঘটিত অতীতকাল বলে। অর্থাৎ অতীতকালে দুটি কাজ সংঘটিত হলে যেটি আগে সংঘটিত হয় সেটি পুরাঘটিত অতীতকাল এবং অন্যটি সাধারন অতীতকাল। যেমন-তুই মরে ডাককোজ বিজু নিমন্ত্রনত।

পুরাঘটিত ঘটমান অতীত

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়ার কার্য দ্বারা কোন কার্য কিছুকাল ধরে চলছিল বুঝায় তাই হলাে। পুরাঘটিত বর্তমান। যেমন- মুই যেক্কে তা ইদু দেগা গরা যেয়ােঙ তে সেক্কে বই পড়ের। সেক্কে বেন্যা ৯টা নাগরী বেন্যাত্তুন ধরি কাম গত্তে গত্তে লেদা অয়ে।

ভবিষ্যতকাল

সাধারন ভবিষ্যত

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়া এখনাে ঘটেনি তবে পরে ঘটবে তার কাল হলাে সাধারন ভবিষ্যৎ কাল। যেমন মুই এযেত্তে কিল্ল্যে ঘরত যেইম। আমি আনিবুং নুঅ দিন।

ঘটমান ভবিষ্যত

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়া ভবিষ্যতে ঘটতে থাকবে অর্থাৎ কাজ আরম্ভ হয়ে চলতে থাকবে বুঝায় তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন-পিঙ্খীমীআন সেক্কেনেও সর্যর চেরকিত্তে ঘুরি ঘুরি থেব।

পুরাঘটিত ভবিষ্যত

সংজ্ঞাঃ ভবিষ্যত কালে কোন ক্রিয়ার কার্য সম্পন্ন হয়ে থাকবে বুঝালে, পুরাঘটিত ভবিষ্যত কাল বলা হয়।
যেমন- তুই এবার আগেন্দি মুই সিদু লুমিম্মুই।

পুরাঘটিত ঘটমান ভবিষ্যত

সংজ্ঞাঃ যে ক্রিয়ার কার্য দ্বারা কোন কাজ কিছুকাল ধরে চলতে থাকবে বলে বােঝায় তখন সেটি পুরাঘটিত ভবিষ্যত কাল বলা হয়। যেমন-বজরবু থুম ন’অনা। পর্যন্ত নুঅ পহরত পড়ি পড়ি থেইম। বাবা এবার আগতুন ধরি মুই কাম আন গারি গরি থেইম।

লিঙ্গ

বস্তু জগতে কেবল প্রাণীর মধ্যে লিঙ্গ ভেদ আছে। লিঙ্গ চার প্রকার। যথা-
১. পুংলিঙ্গ/মরতঃ যে শব্দে পুরুষ/মরত বুঝায়। যেমন- রাঙাচান, কালাপেদা।
২. স্ত্রী লিঙ্গ/মিলেঃ যে শব্দে স্ত্রী/মিলে বুঝায়। যেমন- রাঙাবী/ কালাবী।
৩. ক্লীব লিঙ্গঃ গাজ, বাজ, পহর, আন্দার, রােদ।
৪. উভয় লিঙ্গ ও বন্দা, মন্ত্রী, গুরাে, তুই, তে। লিঙ্গ নির্দেশের কয়েকটি উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলাে।

১. ী-কার যোগে

পুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গ
কালাকালাবী
রাঙারাঙাবী
ধনধনবী
গাবুরগাবুরী
নাগরনাগরী
পেজালপেজালী

২.পৃথক শব্দ যােগেঃ

পুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গ
নেকমোক
পোঝি
শোরশোরী

৩. পুরুষবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দযােগেঃ

পুংলিঙ্গস্ত্রীলিঙ্গ
গাবুর মরতগাবুর মিলে
মরত পোমিলে পো

চাকমা বচন

সংজ্ঞাঃ যার দ্বারা ব্যক্তি, বস্তু ইত্যাদির সংখ্যা নির্দেশ করে তাকে বচন বলে। সচরাচর বিশেষ্য ও সর্বনাম পদেরই বচনভেদ থাকে।

প্রতিটি ভাষাতেই বচন দুই প্রকার। তাই চাকমা ভাষাতেও বচন দুই প্রকার। যথাএকবচন= মরত, মিলেবু, মুই, তুই, তে, রাঙাচান, ছাগল, ফুল ইত্যাদি। বহুবচন= মানুষসুন/মানেইয়ুন, ফুলঝুন, মরতুন, লক, দাগি ইত্যাদি।

বহুবচন প্রকাশের উপায়ঃ
১. বিশেষ চিহ্ন যােগেঃ পােয়ুন, মায়ুন, তারায়ুন।
২. সমষ্টিবাচক শব্দ যােগেঃ কাবাজ্যাদাগি(দাগি)/ অমুকদাগি
৩. বিশেষণ যােগেঃ পাঁচচো আম
৪. বিশেষ্য ও বিশেষণের দ্বিরুক্তিযােগেঃ কালা কালা পিগিরে।
৫. সর্বনামের দ্বি-ত্ব দ্বারাঃ কন্না কন্না যেব?

চাকমা পদাশ্রিত নির্দেশক

শব্দ বা শব্দাংশ যে গুলাে বিশেষ্য বা বিশেষনের পরে বসে বিশেষ্য বা বিশেষণকে বিশেষভাবে নির্দেশ বা চিহ্নিত করে তাদেরকে পদাশ্রিত নির্দেশক (Article) বলে।

চাকমা ভাষায় প্রচলিত পদাশিত নির্দেশকগুলাে হলাে-
১. আন/য়ান
২. উন/য়ুন
৩. মাে/মু
৪. বাে/বু
৫. লাে/লু
৬. অত/উত্
৭. পাে/পু
৮. সাে/সু

বিঃদ্রঃ বচন ভেদে পদাশিত নির্দেশকগুলাের পরিবর্তন ঘটে।

পদান্তর

ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সচরাচর বিশেষণকে বিশেষ্যের সাথে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়।

বিশেষ্যবিশেষণ
ঝারঝারবো
আদামআদা্যো
মেঘমেঘুলো
গাবুরগাবুজ্যা
মুড়োমুড়োল্যা
ধলধলস্যা
ধুবসাদস্যা
রাজারাজার’
সাঝসাঝন্যা
ঢেঙাঢেঙ
সমারসমাজ্যা
লাগারালাগারাক
বেরেইয়েবেরাস্যা

ক্রিয়ার ধরণ

নি= যেবেনি/খেবেনি/চেবেনি/খেয়ােসনি/যেয়ােসনি/ডরনি ইত্যাদি
দে= যেবাদে/ খেবাদে/ চেবাদে
গে= থেবংগে/ যেবংগে/ চেবংগে।
নে= খেয়ােনে/ যেয়ােনে
কে= যেবাককে/ থেবাককে/ চেবাককে

ক্রিয়ার ভাব

ক্রিয়ার ভাবঃ বাক্যে ক্রিয়া সম্পাদিত হবার রীতিকে ক্রিয়ার ভাব বলে। ইহা তিন ভাগে বিভক্ত। যথা-
১. নির্দেশকভাব
২. অনুজ্ঞাভাব
৩. আপেক্ষিকভাব।

নির্দেশকভাবঃ যখন কোন ক্রিয়া দ্বারা কোন কাজ হওয়া বা না হওয়া বুঝায় কিংবা কোন প্রশ্ন বা বিস্ময়ের দ্বারা কাজটি নির্দেশিত হয়, তখন তাকে নির্দেশক ভাব বলা হয়। যেমন- স্কুলত ন’ যায় ।

বর্তমান কালের অনুজ্ঞাঃ বর্তমানকালে আদেশ, উপদেশ, অনুরােধ ও প্রার্থণা। বােঝাতে বর্তমান কালের অনুজ্ঞা হয়। যেমন- তে গরে।

ভবিষ্যতকালের অনুজ্ঞাঃ আদেশ, উপদেশ, অনুরােধ ও প্রার্থনা ইত্যাদির কার্য ভবিষ্যতে বুঝালে যে অনুজ্ঞা হয় তাই হলাে ভবিষ্যতকালে অনুজ্ঞা। যেমন- বেন্যা পত্তা ঘুমত্তুন উদিস।

আপেক্ষিকভাবঃ একটি বাক্যের অর্থাৎ যদি অন্য কোন একটি বাক্যের অপেক্ষায়। তাকে তবে যে বাক্যে অপেক্ষায় থাকে, তার ক্রিয়ার ভাবকে আপেক্ষিক ভাব বলে। যেমন- যদি গমে দালে কামগরছ, সালে জীংকানিত উন্নতি গরিবি।

নিত্যবৃত্ত অতীতঃ অতীত কালে সর্বদা অথবা নিয়মিতভাবে ঘটিত এরূপ ক্রিয়ার যে কাল হয় তাই হলাে নিত্যবৃত্ত অতীত। যেমন-

কারক

বাক্যের অর্ন্তগত ক্রিয়াপদের সাথে অন্যান্য নাম পদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে। যেমন- রাধামনদাগি কিয়ং বারান্দাত থিয়েনেই জেবথুন ভালুক্ক টেঙা নিজ হাতদি গরীব দুঃখীরে দান গরিদো। এ বাক্যটিতে রাধামন ধাগি, কিয়ং বারান্দা, জেব, টেঙা, নিজ হাতদি, গরীব-দুঃখী এসকল নাম পদ অর্থাৎ বিশেষ্য পদগুলাের প্রত্যেকটি দান গরিদো ক্রিয়াপদের সাথে কোন না কোন ভাবে সম্বন্ধে সম্বন্ধযুক্ত আছে। তাই এগুলাে প্রত্যেকটিই এক একটি কারক।

কন্না দান গরিদো?- রাধামনদাগি(কর্তৃ)
কিঙিরি দান গরিদো?- নিজ হাতদি(করন)
কারে দান গরিদো?- গরীব-দুঃখীরে(সম্প্ৰদান)
কুথুন দান গরিদো?- জেবথুন(অপাদান)
কুদু দান গরিদো?- কিয় বারান্দাত(অধিকরণ)।

কারকবিভক্তিউদাহারণ
কর্তৃশুণ্য/প্রথমানগেন্দ্র অফিত যার।
কর্মরে/দ্বিতীয়া আজুরে দাগ
করণলােই/দি/৩য়মানুষসুলােই কামআন ন’ অব
সম্প্রদানরে/চতুর্থীভান্তেরে স্যং দো
অপাদানথুন/৫মীমুই জুমথুন এজঙর
অধিকরণত/এ/৭মীডরেলে কানযাবা চুলেও ডর লাগাই
সম্বন্ধ পদর/৬ষ্ঠীজুমান নাগারার
সম্বােধনপদয়্যানরম্যা ইন্দি আয়

বিভক্তি

যে অর্থহীন বর্ণ বা পদের দ্বারা বাক্যের ক্রিয়ার সাথে বাক্যের অর্ন্তগত বিশেষ্য বা বিশেষ্যস্থানীয় পদের মধ্যে পরস্পর সম্বন্ধ নির্ধারিত হয় তাই হলাে বিভক্তি। যথা-
১. অ/শুণ্য
২. রে
৩. লােই
৪. দি
৫. থুন
৬. এ
৭. য়্যা

ঝাবাজাপ্যা/লাগালাক্যা শব্দ

সংজ্ঞাঃ একই শব্দ যখন দুবা উচ্চারিত হয়ে পৃথক পৃথক অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে দ্বিরুক্ত শব্দ বলে। ইহা তিন প্রকার। যথা-
১. শব্দাত্মক- তেপতেপ
২. পদাত্মক- খেলংদেলং
৩. ধনাত্মক- লংলং-থংথং

যুগারীতিতে শব্দাত্মক দ্বিরুক্তি গঠনঃ
১. (শব্দের আদিস্বর পরিবর্তন করে।)-চেইচাই (দেখেশুনে)
২. (শব্দের অন্তস্বর পরিবর্তন করে)- লড়ালড়ি (ধাওয়াধাওয়ি)
৩. (শব্দের আদি ব্যঞ্জন পরিবর্তন করে)- লরের চরের (নড়েচরে)
৪. (সমার্থক শব্দযােগে)- চিলেক-বিলেক
৫. (দ্বিতীয় শব্দটির আংশিক পরিবর্তন করে)- উরুম ধুরুম
৬. (বিপরীতার্থক শব্দযােগে)- গম-বাইন্যা (ভালােমন্দ)
৭. (ভিন্নার্থক শব্দযােগে)- নরম হরম (শক্ত মক্ত)
৮. (মিলনার্থক শব্দযােগে)- ফুরু ফারাহ
৯. (সহচর শব্দযােগে)- অহবা হবা

পদাত্মক দ্বিরুক্তি গঠনঃ
১. একই বিভক্তিযুক্ত অবিকৃতভাবে দুবার ব্যবহার করে। যেমন- রিপ রিপ
২. একই বিভক্তিযুক্ত এবং পদের (ধ্বনিগত) আংশিক পরিবর্তন করে। যেমন-চেগা চেকক্য।

উগােদো শব্দ

শব্দউগোদো শব্দশব্দউগোদো শব্দ
হেলাঙ হেলাঙকাদাকাত্তিনাদঙমেলঙ
পেরাক পেরাকমরা মরানিবিলিসচসচ্যা
পতপত্যামেরামেরাউপ্পোস উপ্পোসসচসরম
হগনাসাত্যা অমরঙ কমরঙপোজপাজ সোজ সোজ
ডজামারাসিবানালদকধদকডরমর
আগাত্যাজুতজুজুকঝাঝাকগুচ্ছ্যোয়ে মুচ্ছ্যোয়ে

একই শব্দের বিভিন্ন দিক

চাকমাবাংলাচাকমা বাংলা
পেইকপাখীপেইক্কুরেপাখিটিরে
পেইক্কুপাখিটিপেগরেপাখীরে
পেক্কুনপাখীগুলোপেইক্কুনরেপাখীগুলোরে

প্রায় সমােচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ

মালা= নারকেলের কঠিন অংশের একাংশ
মাহ্লা = বড় শুকর বিশেষ
পেক= কাদা
পেইক= পাখী
শরা= মালা বিশেষ
ছড়া= ঝর্ণা বিশেষ
সরা= খুলে ফেলা,জট খােলা, মীমাংসা করা
চড়া= গােপন, চড়ানাে।

টেককাবা কথা

হাত গাের= যে পরেইয়্যেরে দিয়ে পলেও হারায় দিবার ন চায়।
পুনগাের/শিলপুনা= যে এক্কান জাগাতুন হারায় উদিবার/চাত্তেবার ন চায়।
ফাততুয়াে= যে কাম করচ ছাড়া/উদিস ছাড়া বেড়ায়।
বাড়ামু= যে কদা লারচার গরে।
চিগিদে= যে ইয়েন গিনেই উবােন গিনেই (খানা জিনিস)।
সুদুরাে= যে ইয়েন গিনেই উবােন গিনেই(অন্যান্য)।
বাত্তো পেইক= যে কধা বােই-ই।
লাদি খেয়ে কাত্তোল= যে ইন্দিউন্দি।
তুগােন বাজ/বাঁশ= যে দো কিত্তিদি তাল দে/আলায়।
লাঙের বাঝ/বাঁশ= যিন্দি বােয়ের সিন্দি আলায়।
উরােস পুন= যে এক্কান জাগাত বেশ বােই থেই ন’ পারে।
লারিচারে বারেঙ= যারে যেক্কে পায় কামত বাজে দি পারে।
নিলােজ= মু’অত মাল্লে লাজ নেই পুনত মাল্লে লাজ নেই।
আক্কল= আগে আগে যে যায়।
উমউম= জুরাে নয় গরমও নয়।
নমাত্যা= যে কম কধা কয়।
রানী= যে মিলেবুর নেক মােজো।
চোগ’কায়= মুজুঙে।
অনুকরণ করার ইচ্ছা= বেঙানা।
অনেকের মধ্যে একজন= ঝাকবাজা
ইত্যাদি।

বাগধারা

১. অ ভ ন বুঝানা।
২. উন্দুর’তেম্মাঙ গরানা।
৩. কুমােরাে তােন ইজে।
৪. কুরাে মুঅত ইজে।
৫. দাড়ভাঙা কাঙারা।
৬. দভাকাদি।
৭. নাগকুরেন্দি মাজি যেই ন পারানা।
৮. নলা কেজ খেইয়ে কুগুর।
৯. ঘিলা দাদ’ মানুষ।
১০. এহরা কুদো গর।
১১. শাগ খানা, গুলােও খানা।
১২. বড় গাঙ’ চায় পারা রাঙা খাদিও ধয় পারা।
১৩. সাতযুগ পেজা।
১৪. ঋবত তলে করােল।
১৫. কেম মাদালােই ঘু বাজে দেনা।
১৬. বাঘে মােঝে আহল।
১৭. অধক ভাঙি পরানা।
১৮. তলা লাঘত পানা।
১৯. বাজার কলা ছরা।
২০. ধরি আন্যা অগলক।
২১. লুরিথুন পু মাগানা।
২২. তুগুন বাজ।
২৩. মেলােমাজ।
২৪. অজাবান্দর।
২৫. গাজখুন অলা পােজ্যে পারা।
২৬. ফাদা ধুদি সে ।
২৭. আদ্দানন বিগুন চেত।
২৮. মু গদিয়ে বেঙ মরে।
২৯. লুরাে শুগাের চালত উদে।

দাগ’ কধা

১. অত্যা ভাত পায় গাদে গাদে খায়।
২. অকপাল্যা যিন্দি যায়’ মরা শামুককু উদি যায় ।

১. আ গল্ল্যে তাগারা দেগে।
২. আজেলে তগাই আ পেলে ন আনে।
৩. আদিক চেদনে ইজে মাদাত গু।
৪. আগে আগে খায় তা লাগত কিয়ে ন পায়।
৫. আমন’ আন্দাজ পাগলে বুঝে।
৬. আত্তে চিনে ত্রি; মাত্তে চিনে মরদ।
৭. আঘা এলে রাজারেও ডর নেই।
৮. আত্তে আস্তে নলা; গাদে গাদে গলা।

১. ইকু আঙারা লােই উলত ফালত; দিবে আঙারালােই হােল, তিননুয়া আঙারালােই ধুন্দ খানা য়ােল।

১. উগুরে উগুরে ব যায়; কলগ মাদি থান ন পায়।
২. উন্দুর’ নাগতুন শাজ নিগিলানা।

১. এক দুববা বাঁশ একদক্যে নয়।
২. এইদ এলে গাজ তগানা।
৩. এক মাজাত কি ন থায়।
৪. একদিনে ঝর কাল ন যায়।
৫. এরা খেইয়ে বাঘ ধরে চিত খেয়ে বাঘ লাগত পান।
৬. এক ঘাটত পানি খেয়ােনি; এক চাবত জুম খেয়ােনি।
৭. এক মাের্কের ঝাদি ভাত;দিমােক্কের লাদি বাত;তিন মােরে কবালত হাত

১. ও প দুধে ভাদে খা; পুন চুলচুলি মারেলে এইদ হেদাত যা।

১. কুগুর জলেলে কামর খেই পায় গুরো জলেলে লাজ খেই পায়।
২. কাই কুদুম গু বাজ দূর’কুদুম ফুল বাজ।
৩. কানা খুমত পানি ঢালানা।
৪. কথা নয় কধি ম মােককো পেদুলি।
৫. কন ঝাড়ত কোন বাঘ আগে তুই এজ কই ন পারছ।
৬. কুগুর পেদত কিয়ে পেল ঘি ।
৭. কবাল্যার কবাল; অকবাল্যের চেদবাল।
৮. কুয়াে কুরি মত্তোনি পানি খেবার চানা।
৯. কানেদে গুরােয় দুধ খেই পাইনি ন কানেদে গুরােয় খেই পায়দে।
১০. কমরে চুরিয়ে পেট গালে।
১১. কধা কোই ন জানিলে আধা।

১. খাং খাং মানজোর কিয়ে নেই, ধাং ধাং মানজোর জাগা নেই ।
২. খেই চেলে না কই পারে থিদা মিধা, গলে চেলে না কই পারে তামা না শিসা।
৩. খানাত যােক আগে কইজ্জেত যােক পরে।
৪. ক্ষেত, বাপ-মাততুনও জেত।

১. গুইয়াে কবাল সুরােত বান্দর কবাল তারেঙত।
২. গাজ মাধাত গুই হুরাে ভাত খেই যা তুই।
৩. গিরােজুন চুর দাদ।
৪. গুই বু ললে দুরবু ল; দুরবু ললে দুরবু ল।
৫. গম মাইনজ্যা লগে বেড়েলে পাদি কুন বাদা পাই, বান্যা মাইনজ্যা লগে বেড়েলে লাদি বাদা পাই।
৬. পুরাে জলেলে লাজ পায়; কুগুর জলেলে কামড় খায়।
৭. গরু নজত মেনা; পাের নজত ফেনা।

১. ঘর উন্দুরে বেড় কামরেলে কোন বেড়ে তান ন মানে।
২. ঘর বেড়েলে কধা পায়; আদাম বেড়েলে হধা খায়।
৩. ঘাট পুরে হাদ’ মাজ।
৪. ঘর তুলি চাল ন সিলেজ।

১. চাল তাঙেলে কালে ধরে।
২. চিগোন বারেঙয়ো লরে চরে।
৩. চাল ফারক অলে বাপও পর।

১. ছাগল চিগোন বিজে ডাঙর মানুজ চিগোন কধা ডাঙর।
২. ছাগল মুত্যা ন ধরিলে আগদে ধরি ন পাই।
৩. ছড়া ইজে মাজ দেগিলে খেই পাইদে।

১. জ্ঞানীরে বুঝাইদে আকারে ইঙ্গারে; অজ্ঞানরে বুঝাইদে ভুগে চাবরে।
২. জানিলে সাত ভাগ; ন জানিলে গা ভাগকুয়ো আরায়।
৩. জাস্যা ভাত ন খেলে সাত দিন উবোজ তা পরে।
৪. জুনি পুগে মানে নিন্দেই; ঘিরে নিন্দেই সিদোলে; সোনারে নিন্দেই পিদোলে।
৫. জাদে জাত থোগায়; কাঙারা গাত থোগায়।

১. ঝুব সেরে কারোল বুড়ো।
২. জাদি কামত বাগত আগে; ঘু হাজাদে তিন পহর লাগে।

১. তাল যেই যায় ভুলুগ নাজ দেনা।
২. তা জিনিসসানি বাঘ কেশ; আমন জিনিসসানি কুগুর কেশ।
৩. তিন শিরে যাত্তুন; বুদদ্ধি লোজ তাত্তুন।

১. থোন নজত ঝুলে; মানুজ নজত উলে।

১. টেঙা দিজ ন মাগিজ।
২. টেঙা কি গাজত ধরেদে।

১. টেঙত তানিলে মাধাত নেই মাধাত দিলে ঠেঙত নেই।

১. দাগ কধা ফেলা ন যায়।
২. দাঁত থাককে কি মাড়িলােই চিবানা।
৩. দাঁড়িয়ে দুড়িয়ে মরত; শিঙে শাঙে বলদ।

১. ঢিঙি স্বৰ্গত গেলেও বারা বানে।

১. ধুজ খেলে উজ বারে।
২. ধান নেই খের ঝারা ঝারি।
৩. ধনে কুলেলে মনে কুলােয় মনে ন কুলেলে ধনে ন কুলােই।
৪. ধনীরে ধনে ন কুলােয়; মানীরে মানে ন কুলােয়।
৫. ধেলে লাজ না পেলে লাজ?

১. নরম নরম পেলে হারও খান ঢর ঢর পেলে কাইও ন’ জান।
২. ন’ খাং ন’ খাং ভদেয়্যে মা এক পিলে ভাদে কুলােং না।
৩. নিত্য কাপ্পে গাচ্ছাে পরে।
৪. নিজ এরা নদিলে পর এরা ন’ পায়।
৫. নেই ধনে ধন পায় চিবি চিবি চায়।
৬. নাবিদ দেলে নক কুনি বাড়ে।
৭. নাক চিবিলে দুধ নিগিলে।
৮. নরম নরম পেলে হারও খায়; ডর ডর পেলে কাইও ন যায়।
৯. নুন ন’ দিলে ঘিও মাদি; বিদেজত গেলে রাজা জিও বেং
১০. নিজ পুরে দাগানা বাড়ি আদত লে লােই; পরিয়ে পোরে ডাগানা কলা আদত লোই।
১১. ন তেলে সােনা বাজি গেলেও ধরি ন পায়।
১২. নাধা মাইনজোর ধ ডাঙর; হেঙেদা মানজোর র ধাঙর।
১৩. নেই মােক দারানে কান মােক ভালা; সবাই ন’ পাদে রাজা ঝি ভালা।
১৪. নেই কাবুজ্যা কাপড় পায় উড়ি পিনি চায়।
১৫. ন জিন্যা কুগুরর গাঙগাঙি বেজ।
১৬. নিজে ন পায় জাগা; কুত্তোই পুজে বাগা।

১. পাগলে নাজে বেকুবে চায়।
২. পেত্তো ফিরিঙর ধরি ন পেলে সাধু সাধু।
৩. পেত্তো পিরিঙয় অলেও ভাগ গরি খানা।
৪. পােজি যােক গলি যােক তাে ভাজি ন যােক।
৫. পুনত গু থেনেই মাধাত পানি ধালানা।
৬. পিরে জাগাত লাঘে ভাঙা থেঙান গাদত পরে।
৮. পথ ভালা বেঙা যা; ভাত ভালা চুদো খা।
৯. পাদা এলে রাজারেও ডর নেই।
১০. পােই-পােই বাজেলাক হােল; পুজসে বিগুননু ম ভাগত পােল।
১১. পেক্কো ঝরে পথ কাজর; ন মাত্তে মানজোর মন কাজর।
১২. পিরে ঠেঙান গাদত পরে।

১. ফাকফাকক্যে জাল মারে বশশি শিপদ গরি আনে; নিমমাে জাল মারে দুলােত বরে আনে।

১. বাঘ্য মনত যিয়েন নেই শিয়েল মনত সিয়েন।
২. বেল্য ফেলাই সাত আল বেন্যা এক আলও নেই।
৩. বােই ন’ জানিলে লরি পায় কই ন জানিলে মরি পায়।
৪. বুগ ফাদোক মু ন’ ফাদোক।
৫. বাঘ স’ বাঘ অয়; পেগ স’ পেগ অয়।
৬. বাপ চৌধুরী পুত কাত সে দেজত ন মিলে ভাত।
৭. বান্দর গলাত আল সরা।
৮. বড় মরত আমক ভালা, সবাই ন’ পাদে রাজা ঝি ভালা।
৯, ভুগেদে কুগুরে ন’ কামাড়ায়।
১০. বৃক্ষ নেই দেজত এরেন্ডা প্রধান।
১১. বাঘতুন শিয়াল্যা তিন দিন জেত।
১২. বড়গাঙও চায় পারা; রাঙা হাদিও ধই পারা।
১৩. বারিজে ঢেবা বিশ্বেজ নেই।
১৪. বানন্যা ভুদি চালাভরা; ভাগ গলল্য কড়া কড়া।

১. ভুই নাদা আগে ফাদে; মানুষ নাদা আগে মাদে।
২. ভাগ্যত্যারা যায় ধনেদী অভাগ্যত্যার যায় জনেদি।
৩. ভাত ভালা চুদো খা; পথ ভালা বেঙা যা।
৪. ভাঙা টেঙান গাদত পরে।
৫. ভাত ন’ খাদে আগোল পাগল; ভাততুন খেলে গাভীন ছাগল।
৬. ভাস্য লুঙি ন ধসসো; সাস্যা মিলে ন’ লয়ো।

১. মিদে মুই বিদে তুলে।
২. মা ছা ঝি ছা।
৩. মোক আজায় ভোজ আরানা ভোজও আজায় মোক আরানা।
৪. মুঅত পরোক পেট ন’ ভরোক।
৫. মুঅ ফাঙ বড় ফাঙ।
৬. মরা সুগুনিবো তিন পাক খায়।
৭. মুজুঙেদি সূঁচ পলেও পেদে লয়; ‍পিজেদি উলু পলেও ‍ফিরি ন চায়।
৮. মনত থেলে গুণ গরে; ভাঙি কলে রণ গরে।
৯. মোককো মলে সুখকান গেল; দাতুতন গেলে ভুগকান গেল।
১০. মুধাত তলে উগুনে খেবাক পারা।

১. যা মনত কালি তা মনত শালি।
২. যা কিয়েই তার গা।
৩. যে কালত যে কাল উরিঙে চুমে বাঘ গাল।
৪. যে পেইক্কো উরিব বা’ত থাক্ক্যে ফুরফুরায়।
৫. যে পাধাত খাই সে পাধাত আগি দেনা।
৬. যারে দেগে সাততো মুড়ো ফাড়ি দেগে; যারে ন দেগে কায় থেলেও নদেগে।
৭. যে বুঝে ন’বঝরে বুঝে; যে ন’বুঝে বব্বই বঝরেও ন’বুঝে।
৮. যার নুন খায় তার গুন পায়।
৯. যাসস্যে ভাত ন খেলে; তিন পহর সং উবােজ থেই পায়।
১০. যে কুগুরর লেজ বেঙা চুমােত ভরেলেও উজু ন অয়।
১১. যার বাপে ন দেগে থাদ আলু; তার পাে ঘােড়া সেদরে কয়ছে মু আলু।
১২. যা বিপদে তার ঘা।
১৩. যে নত উদে; সে ন পানি ইজে পরে।
১৪. যে কুরােয় বদা পারে; তা পুনে তে কোই পারে।
১৫. যে ফুল নিন্দে; সে ফুল পিন্দে।

১. লাভে লাে বয় অনালাভে তুলােও ন’ বয়।
২. লাদা হােক পাদা হােক ভাদ’ দক্যা নয়; পরেয়ে মারে মা দাগিলেও নিজ মাবু দক্যা ন অয়।

১. সেদাম নেই ভেদাম মােন উগুরে তিন আদাম।
২. সােনা থেলে মনা কি দুখ; ভাততুন থেলে কবা কি দুগ।
৩. সেদাম নেই আ গাঙত যেনেই ভিজে ভিজে থা।
৪. সেদাম নেই এক্কানা মিধে গুলি ভাত খানা।
৫. সাত বেজা কেলেও বাপর নাঙ।
৬. সময় থাককে আদ; ঝুল থাককে গাদ।
৭. সুলুক ন’ মুরােদি যায়; বেসুলুক ন’ দজ্জ্যাদিও ন যায়।
৮. সেদাম নেই করাকড়ি; হুলে সেদে লােরালুরি।
৯. সােনা তােলাই বারবার; মানুষ তলাই একবার।
১০. সময় থাক্কে আদ ঝুল থাককে গাদ।
১১. সময়র এক ফুড় অসময়র দশ ফুড়।

১. হাসপুরাে শিয়েন অলে ঝাদি কাবা খায়; মুনিশ্বর শিয়েন অলে মা-বাবর অর্ধেক বয়স পায়।
২. হেম মাধাদি গু বাজে দেনা।
৩. হাদে ন খেনেই চামেজে খানা।
৪. হুল পুড়ি খেবার নুন নেই।
৫. হারায়দে মাসসাে ডাঙর।

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা