চাক রূপকথাঃ এক বুড়ো আর বুড়ি
996
অনেক অনেক দিনের আগের কথা। এক গ্রামে বুড়ো আর বুড়ি বাস করতো। তারা দু’জনেই স্বামী-স্ত্রী। তাদের ছিল একটি মাত্র সন্তান। তারা গরীব হলেও কোনমতে তাদের দিন কেটে যেতো। জুম ছিল তাদের প্রধান জীবিকার মাধ্যম।
একদিন জুমের কাজ করতে গিয়ে বুড়োর সাথে হঠাৎ দেখা হলো একদল বানরের। জুমের কাজে সাহার্য্য করার জন্য বানরেরা বুড়োর কাছে আগ্রহ প্রকাশ করলো। বুড়ো একটু মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো তারা যখন নিজের ইচ্ছায় আগ্রহ দেখাচ্ছে, ঠিক আছে আসতে দিই।
তখন বুড়ো বলে দিলো তোদের যখন ইচ্ছা হচ্ছে, আমাকে সাহার্য্য করার জন্য, ঠিক আছে আগামী কাল থেকে এসো। বুড়োর অনুমতি পেয়ে বানরেরা ভীষণ খুশী হয়ে চলে গেলো।
এবার বুড়ো ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলো, এতগুলো বানরকে খাওয়াই কিভাবে? চিন্তা করতে করতে হঠাৎ বুদ্ধি এসে গেলো, বানরদের আসার পথে একটা ফাঁদ পেতে রাখার জন্য বুড়ো যখন তখন জুম থেকে গিয়ে একটা ফাঁদ পেতে রাখল।
পরের দিন বানরেরা যখন দলে দলে আসলো, দুর্ভাগ্যবশত সবার পেছনের বানরটি পরে গেলো বুড়োর পেতে রাখা ফাঁদে৷ অন্যরা সবাই কাজে লেগে গেলো।
এভাবে কাজ করতে করতে যখন দুপুরের খাওয়ার সময় এসে গেলো, তখন বুড়ো বানরদেরকে বলে গেলো নাতিরা তোমরা কাজ করো, আমি বাড়ীতে গিয়ে বুড়িকে দেখি কি রান্না করছে। এই বলে বুড়ো সেখান থেকে বিদায় নেয়। তারপর ফাঁদে গিয়ে দেখে বানর একটা ফাঁদে পরে আছে৷
বুড়ো বানরকে দেখে মহা খুশী, কারণ তার মাংস দিয়ে অন্য বানরদেরকে খাওয়াতে পারবে এই বলে বুড়ো বানরকে টুকরো টুকরো করে বাড়ীতে নিয়ে বুড়িকে দেয় রান্না করার জন্য।
দুপুরের খাওয়ার সময় এসে গেলো, বানরেরাও একে একে সবাই বুড়োর বাড়ীতে এসে গেলো। যথাসময়ে তারা খেতে বসলো।
খাওয়ার অর্ধেক হতে না হতেই মাংসের টুকরো দেখে এক বানরের সন্দেহ এসে গেলো, এটা নিশ্চয় তাদের মাংস। তারপর তারা খোজাখুঁজি করে দেখলো কে নেই।
দেখতে দেখতে বের করলো, সত্যি তাদের একজন বানর নেই। তারপর বুড়োর প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা সবাই একত্রিত হয়ে প্রতিজ্ঞা করলো–এ প্রতিশোধ অবশ্যই তাদের নিতে হবে।
কিন্তু বুড়ো জানতে পারলো তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার কথা৷ তাই বানরেরা চলে যাওয়ার সাথে সাথে বুড়ো বুড়ি পরামর্শ করলো, বানরেরা আসার আগে, বুড়ো তার গায়ে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস মালিশ করে মৃত্যুর ছলনা দিয়ে থাকবে৷ তারপর যখন তারা চলে যাবে তখন পেছন থেকে হঠাৎ বুড়ো আক্রমন চালিয়ে বানরকে তাড়িয়ে দেবে।
পরদিন দেখা গেলো সত্যি বুড়ার প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বানরেরা দলবদ্ধভাবে এগিয়ে আসছে। বুড়ো তাদের দেখে তাড়াতাড়ি তার পরিকল্পনা অনুযায়ী মৃত্যুর ছলনা দিয়ে রইল।
তারপর কিছুক্ষণ পর বানরেরা এসে দেখে বুড়োর মৃত্যু হয়েছে এবং তার দেহ থেকে পঁচার দুর্গন্ধ বেরিয়ে যাচ্ছে।
ফলে বুড়োকে আর মারার প্রয়োজন মনে না করে তারা ফিরে যেতে লাগলো। এরি মধ্যে বুড়ো পিছন দিক থেকে হঠাৎ আক্রমন করে ধাওয়া করে।
তারপর বানরেরা যে যেদিকে পারে প্রান রক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু ধরা পড়লো এক খোঁড়া বুড়ো বানর৷ বুড়ো তাকে মারার জন্য উদ্ধত হইলে বানর বুড়োর কাছে প্রাণ ভিক্ষা চায় এবং বিনিময়ে তাদের কাছে শিশু পালক হিসেবে আজীবন থাকবে বলে কথা দেয়। বুড়োও সহানুভূতির সহিত বিবেচনা করে বানরের প্রাণ রক্ষা করে দেয়।
এইভাবে কেটে যায় দিনের পর দিন। একদিন বুড়ো, বুড়ি কাজে যায় তাদের শিশু সন্তানকে রেখে।
এই সুযোগে বানর তাদের সন্তানকে কেটে টুকরো টুকরো করে রান্না করে দেয় এবং দোলনার মধ্যে একটা পাথরের টুকরো কাপড় মুড়িয়ে রেখে দেয়৷
বুড়ো বুড়ি জুমের কাজ থেকে ফিরে এসে মাংস দিয়ে দিব্যি আরামে খাওয়া শেষ করে বুড়ি বানরকে তার সন্তানের কথা জিজ্ঞাসা করলো, ছেলেটা কোথায়?
বানর তার উত্তরে বললো খোকা দোলনায় ঘুমাচ্ছে৷ কিন্তু এতক্ষন কেন ঘুমাবে, তাই বুড়ি দোলনা থেকে তুলে আনার জন্য বললে, বানর কাপড় মোড়ানো পাথরকে এনে বুড়ির কপালে ছুড়ে মারে এবং বুড়ি সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়।
এইভাবে বানর তাদের প্রতিশোধ নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
মংড়ী চাক; (বিদ্যালয় বার্ষিকী , ১৯৮৯-৯০ মোনঘর আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়, রাঙামাত্য)
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।