দৈংনাককের নব জন্ম: ভাগ্যের সন্তান তঞ্চঙ্গ্যাগণ

Jumjournal
Last updated Jul 15th, 2020

2175

featured image

পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যানুপাতে চতুর্থ স্থানের অধিকারী তঞ্চঙ্গ্যাগণ সর্বাধিক ভাগ্যবান বলে মনে করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীসমূহের শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম ও আর্থসামাজিক যে অগ্রগতি সাধন হয়েছে, জনসংখ্যায় কম হলেও তঞ্চঙ্গ্যাগণ সে অগ্রগতির মানদণ্ড অর্জন করেছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, তঞ্চঙ্গ্যাদের কতিপয় ব্যক্তিত্ব ধর্মীয় ও সাহিত্য ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিচিতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

কোন ব্যক্তি বা জাতি যখন নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে, সমগ্র বিশ্বের আলোকে নিজেকে দেখতে আরম্ভ করে তখনই তার অন্তরে জাগরণ শুরু হয়।

জাগরণের উজ্জ্বল রেখা বেয়ে সমগ্র বিশ্বের মঙ্গল উৎসব তার মাঝে সমাবিষ্ট হয়। সেই ব্যক্তি বা জাতি সার্থক হয়। পরম ভাগ্যবান।

তঞ্চঙ্গ্যার সুযোগ্য সন্তান শ্রী ফুলনাথ তঞ্চঙ্গ্যা ভিক্ষু জীবনে উপসম্পদা গ্রহণ করতঃ শীমৎ অগ্রবংশ ভিক্ষু (বর্তমানে মহাস্থবির) নামে বার্মায় (বর্তমানে মায়ানমার) বৌদ্ধ দর্শন ও ত্রিপিটকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করেন।

বার্মায় ১৯৫৪ সাল হতে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ষষ্ঠ বৌদ্ধ সংগীতি (আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ধর্ম মহাসম্মেলন) অনুষ্ঠিত হয় এবং শ্রীমৎ অগ্রবংশ স্থবির অন্যতম সংগীতিকারক (ধর্ম বিশ্লেষক) হিসেবে যোগদান করেন।

সেই সময় স্বধর্মপ্রাণ চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় তাঁকে চাকমা রাজগুরু রূপে বরণ করার জন্যে স্বদেশে আমন্ত্রণ জ্ঞাপন করেন।

তিনি বিদর্শন ও পালি ত্রিপিটকে এম. এ. ডিগ্রি গ্রহণ করে ত্রিপিটকাচার্য্য অভিষিক্ত হন।

উল্লেখ্য যে, তথাগত বুদ্ধের পরিনির্বাণের তিন মাস পরে তাঁর ধর্ম বিনয় রাজগৃহে সপ্তাপর্নী গুহায় অরহৎ মহাকাশ্যপ স্থবিরের নেতৃত্বে পাঁচশত অরহৎ কর্তৃক সংকলিত বা সংগৃহীত হয়।

ইহা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে প্রথম সংগীতি নামে অভিহিত হয়েছে। এভাবে মাঝে মাঝে সম্মেলনী বা সংগায়নের মাধ্যমে তথাগত বুদ্ধের ধর্ম ও বিনয় পরিশুদ্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হয়ে আসছে।

এযাবৎ ছয়বার এরূপ ধর্মসংগীতি বা ধর্ম সংগায়ন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এই ধর্ম মহা সম্মেলনী খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এরকম গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম মহাসম্মেলনীর অন্যতম সংগীতিকারক হিসেবে যোগদান করে শ্রীমৎ অগ্রবংশ মহাস্থবির তঞ্চঙ্গ্যাগণকে ধন্য ও গৌরবান্বিত করেছেন।

তাঁকে ঐ সম্মেলনে তৎকালীন পাকিস্তানী বৌদ্ধদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সদ্ধর্মপ্রাণ চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় সর্বাত্মক সহয়তা প্রদান করেন।

বিশ্বের ক্ষুদ্রতর বৌদ্ধ সম্প্রদায় চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা এই গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম সংগীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে সমগ্র বিশ্বে নিজেদের মর্যাদা সুমন্নত করেছে। দ্রষ্টব্য: The Chatta Snagayana Souvenir Album. পৃষ্ঠা – ৮৫।

বিংশ শতাব্দী তঞ্চঙ্গ্যাদের জন্য প্রথম সৌভাগ্য বহন করে এনেছে। তঞ্চঙ্গ্যাগণ ভাগ্যের সন্তান।

কেননা, এত ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী অতিস্বল্প সময়ে সমগ্র বিশ্বের সদ্ধর্ম পুজারীর শুভেচ্ছা ও মৈত্রী অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

রাজগুরু শ্রীমৎ অগ্রবংশ স্থবির এতদঅঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরের জন্য আত্বনিয়োগ করেন এবং অচিরেই অনেক চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা যুবক উপসম্পদা গ্রহণ করেন এবং চাকমা গ্রামে ক্যং বা বিহার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।

উল্লেখ্য যে, তৎপূর্বে চাকমা সমাজে আগরতারা অবলম্বন করে লুরীগণ বিবাহ অনুষ্ঠান, মৃতদেহের সৎকার ও অন্ত্যেষ্টী ক্রিয়া, ভাতদ্যা প্রভৃতি সামাজিক ও ধর্মীয় অনষ্ঠানাদিতে পৌরহিত্য করত।

বৌদ্ধধর্মের মূল আদর্শ অনুসারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির বিষয় লোকে একদম বিস্মৃত ছিল।

চাকমা রাণী কালিন্দী ১৮৫৬ সালে থেরবাদী বৌদ্ধধর্মের সংঘনায়ক শ্রীমৎ সারমেধ মহাস্থবিরকে রাজগুরু পদে বরণ করে এতদঅঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের পূনর্জাগরন এনেছিলেন।

পরবর্তীকালে একশত বৎসরের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্ম পরিহীন হয়ে যায়। ১৯৫৮ সালে সদ্ধর্ম প্রবর্ধক চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় শ্রীমৎ অগ্রবংশ স্থবিরকে রাজগুরু পদে বরণ করে পুনরায় এতদঅঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম পূনর্জাগরণের মহতী উদ্যোগ নেন।

১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রীমৎ অগ্রবংশ স্থবিরকে মহাস্থবির পদে বরণ করা হয়। ঐ অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত এবং নেপালের রাষ্ট্রদূত শ্রী কিস্তিনিধি কিস্তা (পরবর্তীকালে নেপালের প্রধানমন্ত্রী) সস্ত্রীক যোগদান করেন।

রাজগুরু শ্রীমৎ অগ্রবংশ মহাস্থবিরের প্রচেষ্টায় এতদঅঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের পূনর্জাগরণ কি আশ্চার্য্যজনকভাবে সম্পন্ন হয় চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় তাঁর ‘Buddhist Revival in the Chittagong Hill Tracts’ শীর্ষক সাম্প্রতিক প্রবন্ধে চিত্তাকর্ষকভাবে সুন্দর বর্ণনা প্রদান করেছেন:

“Kalindi’s reforms had far reaching effects not only on the Chakmas but also on the Marmas and Buruas. Since her time, Buddhism has gradually advanced at the expense of animist and other non-Buddhist practices. However, the number of Chakma monks and monasteries in the Chakma country were still far-smaller than in the case of the Barua and the Marma. The great change in the Buddhist practices of the Chakmas came in the 1950’s almost exactly a hundred years after Rani Kalindi and Sangharaja Saramedha. In 1958, at the invitation of the Chakma Raja Tridiv Roy, the venerable Agravamsa Thera (now Mahathera) came to Rangamati to be appointed the Chakma Raj Guru. In 1959, “The Parbatya Chattagram Bhikkhu Samiti”, was established under the Rajgurus leadership and the number of monasteries. These effects were felt even among the smaller peoples such as Mro and Khyang. The Rajguru remained in Rangamati upto 1976 and the Buddhists of Chittagong Hill Tracts recall the venerable Agravamsa’s name with much gratitude. The learned Pali scholar and exponent of the Tripitaka who studied in Burma for more than ten years has left behind a rich legacy.”

(দ্রষ্টব্য: বিংশতিতম কঠিন চীবর দান স্বরণিকা ’৯৩। রাজবন বিহার, রাজবন, রাঙ্গামাটি পৃ: ৪৬, ৪৭) রাজা দেবাশীষ রায় মহোদয়ের এই বক্তব্যে রাজগুরু শ্রীমৎ অংগ্রবংশ মহাস্থবিরের অবদানের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকৃতি এবং তাঁর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেয়ছে।

চাকমা সমাজে স্বদ্ধর্মের পূনর্জাগরণের মূলে শ্রীমৎ অগ্রবংশ মহাস্থবিরের মহান অবদানের জন্য চাকমাগণ তাঁর কাছে ঋণী একথা অকপটে স্বীকার করা হয়ে থাকে।

লক্ষণীয়; – সত্যকথা বলতে হলে ২০/২৫ বৎসর পূর্বে চাকমা সমাজে কঠিন চীবর দানের নানা বিধি বিধান জানা ছিলনা। অন্যান্য ধর্মাচরণ বিধিও খুব যে জানা ছিল তাও নয়।

পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে রাজগুরু শ্রীমৎ অগ্রবংশ মহাস্থবির (তখন স্থবির) বার্মায় শিক্ষা সমাপন করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

তখনকার চাকমা প্রধান স্বনামধন্য মেজর ত্রিদিব রায় সঙ্গে সঙ্গে তখন তাঁকে রাজগুরু পদে বরণ করে নেন।

ইহা সর্বজন স্বীকৃত সত্য যে, সর্ব প্রথম তাঁর প্রচেষ্টার ফলেই চাকমা সমাজে ধর্মের জাগরণ আসে। শীল পালন, উপসথ গ্রহণ, চীবর দান, সংঘদান ইত্যাদি বিষয়ে আমরা তাঁর কাছেই প্রথম পাঠ নিই।

তখনকার দিনে অবশ্য পূর্বে বর্ণিত তৃতীয় প্রণালী মতে পূর্বে প্রস্তুত চীবর দিয়েই কঠিন চীবর দান করা হত। কিন্তু সেই যুগে তাও কম ছিলনা।

আর এভাবে তাঁর কাছে হাতেখড়ি না নিলে পরবর্তীকালে বনভান্তের মত মহাসাধকে বুঝার মত, গ্রহণ করার মত আমাদের সামর্থ হতনা।

এযেন অনেকটা মহাসাধক মুক্ত পুরুষ বনভান্তের কল্যানময় আবির্ভাবের জন্যই আগে ভাগে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখা।

দ্রষ্টব্য: “বুদ্ধ প্রশংসিত কঠিন চীবর দান ও আধুনিক বৌদ্ধ সমাজ, শ্রী বঙ্কিম কৃষ্ণ দেওয়ান, প্রাক্তন সম্পাদক, রাজবন বিহার পরিচালনা কমিটি; বৃহতের সন্ধানে।

শ্রীলঙ্কা সরকার কর্তৃক উপহার প্রদত্ত বোধি বৃক্ষ চারা রোপণ ও শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ সাধনানন্দ ভিক্ষু (বনভান্তে) মহাস্থবির বরণোৎসব ’৮১ স্বরণিকা”) প্রবন্ধে লেখক বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার ডি.সি. অফিসের হেডক্লার্ক ছিলেন।

তিনি চাকমা উত্তরাধিকার আইন ও চাকমা প্রবাদবাক্য গ্রন্থের রচয়িতা এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক। কালিন্দী রাণীর আমলে তঞ্চঙ্গ্যাগণ ব্রিটিশদের কুকি দমন অভিযানে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছিল।

রাইংখ্যং কুতুবদিয়া অধিবাসী (তৎকালীন সুবলং বরকলের বাসিন্দা) শুভধন তঞ্চঙ্গ্যা, কুণ্ড মহাজন, হিচাধন আমু বিভিন্নভাবে ব্রিটিশদের সহায়তা করেছিলেন বলে জানা যায়।

পাকিস্তান আমলেই তঞ্চঙ্গ্যাদের শিক্ষা দীক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়নে যাত্রা শুরু হয়। চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী কাগজকল প্রতিষ্ঠিত হলে এতদ এলাকার তঞ্চঙ্গ্যাগণ অনেকেই চাকুরী এবং বাঁশ সরবরাহের ঠিকাদারী গ্রহণ করে।

এই প্রথম বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে তাদের ব্যাপক যোগাযোগ ঘটে। কাপ্তাইতে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ১৯৬০ সালে সম্পন্ন হয়।

জমিজমা, ঘরবাড়ী জলমগ্ন হলে রাইংখ্যং অঞ্চলের বহু তঞ্চঙ্গ্যা বান্দরবান, রেজা, আলীকদম, রোয়াংছড়ি, নোয়াপতং এলাকায় চলে যায়।

ঐ প্রকল্পের অধীনে শ্রী ঈশ্বর চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (তিনি তঞ্চঙ্গ্যাদের মধ্যে সর্ব প্রথম বি.এ. ডিগ্রিধারী) কানুনগো হিসেবে এবং শ্রী বীরকুমার তঞ্চঙ্গ্যা এসিস্ট্যান্ট ওয়েলফেয়ার অফিসার হিসেবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন।

পূর্বে জেলা প্রশাসক কার্যলয়ে শ্রী যোগেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা ও শ্রী রবিকুমার তঞ্চঙ্গ্যা এম.এল.এস.এস. চাকুরীতে নিযুক্ত ছিলেন।

তঞ্চঙ্গ্যা জাতির সুযোগ্য সন্তান শ্রী যতীন্দ্র প্রসাদ তঞ্চঙ্গ্যা ১৯৬৬ সালে এল. এল. বি. ডিগ্রী অর্জন করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অপর কেউ তৎপূর্বে ঐ ডিগ্রী লাভ করেছিলেন বলে জানা যায় না যদিও তৎকিয়ৎ পরবর্তীকালে চাকমা ও মারমাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এল. এল. বি. ও এল. এল. এম. ডিগ্রী অর্জন করেছেন।

শ্রী যতীন্দ্র প্রসাদ তঞ্চঙ্গ্যা ১৯৬৯ সালে ই. পি. সি. এস. পাশ করে ১৯৭০ সালে ডেপুটি ম্যজিষ্টেট পদ লাভ করেন এবং ১৯৯০ সালে মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক পদে ২রা জুলাই যোগদান করেন।

ষাট ও সত্তরের দশকের দিকে তঞ্চঙ্গ্যাদের অনেকেই সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন।

তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে কয়জন তারা হলেন – শ্রী যোগেশ চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), শ্রী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (আমিন); তিনি পরে রাঙ্গামাটি চারুকলা একাডেমীর অধ্যক্ষ হন।

তদানীন্তন জেলা প্রশাসক জনাব শফিকুল ইসলাম মহোদয় (পরবর্তী চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার) এই একাডেমী স্থাপন করে দেন।

১৯৮১ ইং ১লা জানুয়ারী বঙ্গভবনে যুব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক শ্রী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের সেরা শিল্পী (চারু) হিসেবে সম্বর্ধিত হন।

অন্যান্যদের মধ্যে শ্রী চিত্র কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড), শ্রী নতুন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), শ্রী রজনী কান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (ব্লক সুপারভাইজার), শ্রী অজিত কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও শ্রী মতি শাসনা তঞ্চঙ্গ্যা (অফিস সহকারী, জেলা প্রশাসক অফিস) এবং

শ্রী নবকুমার তঞ্চঙ্গ্যা (এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পরবর্তীতে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী), শ্রী সুভাষ তঞ্চঙ্গ্যা (ফার্মাসিস্ট), শ্রী মনোজ কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), শ্রী মোহন লাল তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), শ্রী রবি মোহন তঞ্চঙ্গ্যা (রাঙ্গামাটি পৌরসভা),

শ্রী হীরাবালা তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রী রাবন তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রী বাল্মীকি তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রী নেত্র (লত্র) তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রীমতী পুষ্প তাকুকদার (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক),

শ্রী ভুবন মোহন তঞ্চঙ্গ্যা (সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক), শ্রী অতুল তঞ্চঙ্গ্যা (ফরেস্টার), শ্রী যোগেশচন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (ফার্মাসিস্ট) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে বহু তঞ্চঙ্গ্যা পুরুষ মহিলা সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন বা করেছেন।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি তঞ্চঙ্গ্যা ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়ন সত্তরের দশক হতে ব্যাপকভাবে দেখা যায়।

প্রকৌশল, চিকিৎসা প্রভৃতি বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তঞ্চঙ্গ্যাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য।

১৯৭১ সালের মার্চ এপ্রিল মাসে যখন পাকিস্তানী সৈন্যদের নির্যাতন আরম্ভ হয় তখন চট্টগ্রাম জেলার লোক, দলে দলে ভারতের মিজোরামে আশ্রয় গ্রহণের জন্য ধাবিত হয়।

রাজবিলা, নোয়াপতং, তাছারা (বান্দরবান), রাজস্থলী, রাইংখ্যং এর দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ও দুর্ভেদ্য জংগল অতিক্রমকালে তাদেরকে ঐ এলাকার তঞ্চঙ্গ্যাগণ আহার পানীয় দিয়ে সহায়তা করে এবং নিরাপদ পথে সীমান্ত পাড় করে দেয়।

রাজস্থলীর ভাইস চেয়ারম্যান জ্ঞান বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা, নূতন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা (শিক্ষক), মুনু তঞ্চঙ্গ্যা, আরো অনেকে এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সহায়তা করেন।

ঐসব এলাকাতে এবং হোয়াগ্গা, বারঘোনিয়া অঞ্চলে পাঠান পাঞ্জাবীদের হাত থেকে বাঁচাতে বহু বাঙ্গালী পরিবারকে আশ্রয় প্রদান করা হয়।

হোয়াগ্গার অধিবাসী বর্তমানে ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী অনিল তঞ্চঙ্গ্যা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।

বান্দরবানের বালাঘাটা নিবাসী উদয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা ও লাল মোহন তঞ্চঙ্গ্যা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। বান্দরবানে অদ্যাবধি তাঁদের নাম বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।

তঞ্চঙ্গ্যাদের রাজনৈতিকভাবে পৃথক জাতিসত্ত্বা হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ হবার পর স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলাদেশ সংবিধানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯ সালের ১৯ নং আইন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ সালের ২১ নং আইন পাশ ও বলবতের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদে তঞ্চঙ্গ্যাদের প্রতিনিধিত্ত্বের জন্য যথাক্রমে দুইটি ও একটি পৃথক পৃথক আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় তঞ্চঙ্গ্যাদের উল্লেখযোগ্য বসতি না থাকায় ঐ জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদে তঞ্চঙ্গ্যাদের জন্য পৃথক আসন সংরক্ষণ করা হয়নি। ১৯৮৯ সালের ২৫শে জুন প্রথম স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১০০ নং হোয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান বিশিষ্ট সমাজকর্মী শ্রী পরিমল তালুকদার এবং ১২২ নং কুতুবদিয়া মৌজার স্বনামধন্য মেঘনাদ কার্বারীর সুযোগ্য পুত্র শ্রী রূপময় তঞ্চঙ্গ্যা (বাবুল) রাঙ্গামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন।

বান্দরবান জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদে ১৩১ নং বল্লালছড়া মৌজার প্রাক্তন হেডম্যান শ্রী সাতকমল আমু বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শ্রী প্রসন্নকান্তি তঞ্চঙ্গ্যা (দুর্জয়) সদস্য পদে নির্বাচিত হন।

উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার পরিষদ প্রবর্তনে সরকারের সহায়তা করে শ্রী পরিমল তালুকদার উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।

এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম স্বাধীন নাগরিক হিসেবে তঞ্চঙ্গ্যাগণ স্বীকৃতি লাভ করে এবং প্রশাসন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করার সুযোগ লাভ করেছে।


লেখক : বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, তঞ্চঙ্গ্যা পরিচিতি, তঞ্চঙ্গ্যা মহা সম্মেলন ১৯৯৫ ইং।

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা