তঞ্চঙ্গ্যা জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

Jumjournal
Last updated May 9th, 2021

3397

featured image

অদ্যাবধি পৃথক তঞ্চঙ্গ্যার ইতিহাস রচনা করা হয়নি। তঞ্চঙ্গ্যাদের উৎপত্তি, বিকাশ এবং বর্তমান সম্পর্কে কোন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি।

কেবলমাত্র চাকমা জাতির ইতিহাস গ্রন্থে তঞ্চঙ্গ্যাদের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত পাওয়া যায়। তাও অনুমান নির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে চাকমা জাতির একটি শাখা হিসেবে তঞ্চঙ্গ্যাদের পরিচিতি প্রদান করা হয়েছে মাত্র।

চাকমারাও তঞ্চঙ্গ্যাদেরকে চাকমার একটি শাখা বলে স্বীকার করে। এমনকি আসল বা মূল চাকমাও বলে থাকে।

কিন্তু আশ্চার্য‌ের বিষয় এই যে, চাকমাদের যে গোজা গুষ্টি আছে সেই সব গোজা গুষ্টির সাথে তঞ্চঙ্গ্যাদের বারটি গোজা বা সকল গুষ্টির নামের সাথে কোন মিল নেই।

চাকমা জাতির ইতিহাস রচয়িতাগণ তাঁদের রচিত ইতিহাসে এমনকি আধুনিক চাকমা লেখকগণ তাঁদের চাকমাজাতি বিষয়ক রচনায় তঞ্চঙ্গ্যাদের গোজা গুষ্টি বা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানাদির নাম চাকমাদের গোজা গুষ্টি বা আচার অনুষ্ঠান বলে উল্লেখ করেননা।

যদি চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা একই জাতিভুক্ত বলে স্বীকার করা হয় – তবে তঞ্চঙ্গ্যাদের গোজা গুষ্টি বা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানাদিও চাকমাদের নিজস্ব বলে স্বীকার করার দুর্বলতা থাকবে কেন?

হিন্দুগণ বৌদ্ধধর্মকে হিন্দুধর্ম বা সনাতন ধর্ম বলে দাবী করেন, তাই তথাগত বুদ্ধকে হিন্দুদের অবতার (দশম অবতার) রূপে পূজা করেন।

চাকমা জাতির উত্থান পতন, জয় পরাজয়, আশা আকাঙ্খা, সুখ দুঃখ, ব্যথা বেদনা, অভিযান অগ্রগতি বা সমবৃদ্ধির বিবরণীর সাথে তঞ্চঙ্গ্যাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি।

কেবলমাত্র ইতিহাসের শো’কেসে তঞ্চঙ্গ্যাদের পুতুল বানিয়ে আবদ্ধ করেই রাখা হয়েছে।

তঞ্চঙ্গ্যা জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
তঞ্চঙ্গ্যা নারী ও পুরুষ এক সাথে মিলে জুমে কাজ করছে। ছবিঃ সংগৃহীত

তঞ্চঙ্গ্যা জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে চাকমা ইতিহাস গ্রন্থে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে তঞ্চঙ্গ্যাগণকে চাকমা জাতির একটি শাখা বলে ধরে নিতে কষ্ট হয়।

শ্রী সতীশ চন্দ্র ঘোষ প্রণীত “চাকমা জাতি”, শ্রী মাধব চন্দ্র চাকমা রচিত শ্রী শ্রী রাজনামা, শ্রী বিরাজ মোহন দেওয়ান কর্তৃক লিখিত “চাকমা জাতির ইতিবৃত্ত” এবং চাকমা জাতি সম্পর্কীয় অন্যান্য ইতিহাস গ্রন্থে তঞ্চঙ্গ্যাদের উৎপত্তি প্রসঙ্গে একই ধারা অনুসরণ করা হয়েছে।

মূলতঃ একই সূত্রকে কিঞ্চিৎ রদবদল করে তঞ্চঙ্গ্যাদের উৎপত্তির ইতিবৃত্ত সাজানো হয়েছে।

সতীশ চন্দ্র ঘোষ রচিত “চাকমা জাতি” গ্রন্থে দৈংনাক বা তঞ্চঙ্গ্যার উৎপত্তির কাহিনী নিম্নরূপঃ “৬১৫ মঘাব্দে (১৩৩৩-৩৪ খৃঃ অঃ) আরাকানাধিপতি মেংগদি সমীপে লামুন ছুগ্রীনামা জনৈক দূত আসিয়া সংবাদ দিলেন, উচ্চব্রহ্মের চাকমা রাজা নানা উপদ্রব আরম্ভ করিয়াছেন।

এই সংবাদে তিনি প্রধানমন্ত্রী (কারেংগ্রী) রাজাংগ্যা ছাংগ্রাইর অধীনে দশসহস্র সৈন্য দিয়া চাকমা রাজার বিরুদ্ধে পাঠাইলেন। পরে রিজার্ভ হইতে আরও বিশ সহস্র সৈন্য তাহার সাহায্যার্থে দিলেন।

কিন্তু ছাংগ্রাই আরও সৈন্য সংগ্রহ করে করিয়া তং থংজার শাসনকর্তা হিংজচুর অধীনে দশ হাজার এবং তংশুর শাসনকর্তা রেমাচুর সঙ্গে দশ হাজার সৈন্য দিয়া মংদ্রুমের পথে ……শাসনকর্তা ছাদোয়ং এর তত্ত্বাবধানে দশ হাজার সৈন্য দিয়া দালার ছারংকামার পথে, দালাকের শাসনকর্তা ক্যচুংঙের সহিত দশ হাজার সৈন্য দিয়া দালার পথে, …… নামক শাসনকর্তাকে দশ হাজার সৈন্য দিয়া রুচ্চারুইর পথে, মাইয়ং এর শাসনকর্তা থেচুকে দশ হাজার এবং চিংথোজার শাসনকর্তা লাচুই-এর অধীনে দশ হাজার সৈন্য দিয়া ছালোক্যার জল পথে প্রেরণ করেন।

মন্ত্রী নিজে বিশ হাজার রিজার্ভ সৈন্য, পঞ্চাশ হাজার অপরাপর সৈনিক এবং বিশ হাজার বাঙ্গালী কুলী সমভিব্যাহারে চানীর পথে যাত্রা করিলেন। এইরূপ প্রত্যেকেই যথাস্থানে প্রস্তুত হইয়া রহিলেন।

এতদ্ভিন্ন বলিয়া দেওয়া হইয়াছিল, তং থংজার শাসনকর্তা নিকট পেঁগো রাজ্য থাকিবে। পেগুরাজ বাধা দিতে চাহিলে তোমরা বলিবে, “আমরা যুদ্ধ করিতে আসি নাই।“

মঘরাজ মিত্রতা স্থাপনের নিমিত্ত এক পরমা সুন্দরী রমণী উপহার লইয়া আমাদিগকে পাঠাইয়াছেন। পরে তোমার স্ত্রী লোকটিকে সুসজ্জিত করিয়া দেখাইও।

দালার পথযাত্রী ক্যুচুংকেও এইরূপে শ্যামরাজাকে বশীভূত করিবার নিমিত্ত উপদেশ দেওয়া হইল। বলা বাহুল্য তাঁহাদের সঙ্গে এক  একটি সুন্দরী রমণীও দিয়াছিলেন।

অনন্ডর মন্ত্রী প্রবর ইহাও জানাইয়া দিলেন যে, তিনি স্বয়ং চাকমা রাজার রাজধানী (উচ্চব্রহ্মে) মইচাগিরি আক্রমণ করিবেন, সুতরাং উচ্চ ও নিম্নব্রহ্মের সকলে সাবধানে থাকিবে। যখন যাহা ঘটে, যেন অবিলম্বে তাঁহার কাছে সংবাদ প্রেরিত হয়।

মন্ত্রী ছাংরাই তংদাপ্রু নগরে উপস্থিত হইয়া চান্দাই নামক জনৈক শাসনকর্তাকে একখানি পত্রসহ চাকমা রাজার দরবারে দূতরূপে পাঠাইলেন।

পত্রে উল্লেখিত হইল, মঘরাজা এক পরমাসুন্দরী যুবতীর সহিত তাঁহাকে প্রেরণ করিয়াছেন। চান্দাই নিজমুখেও এতাদৃশ বিবরণী বেশ সাজাইয়া গুছাইয়া বলিলেন।

চাকমা রাজা ইহাতে বিশেষ পরিতুষ্ট হইয়া চান্দাইকে যথোচিত পুরস্কৃত করিলেন এবং  প্রধানমন্ত্রীর নিমিত্ত একটি হস্তী, একখানি সুবর্ণ যাঁতি, দুইটি ঘোড়া, সুবর্ণ নির্মিত রেকাব ও জিন এবং একটি সোনার থোকদান পারিতোষিক লইয়া স্বীয় মন্ত্রী ব্রাচমীকে পাঠাইলেন। ব্রাচমী আসিতেছে শুনিয়া ছাংগ্রাই সৈন্য বাহিনী পোচন্দাও পাহাড়ে লুকাইয়া রাখিলেন। নিজে মাত্র কয়েকজন লোক লইয়া রহিলেন।

ব্রাচমী আসিয়া উপস্থিত হইলে তাঁহাকে এক সুন্দরী রমণী প্রদর্শিত হইল। অনন্তর এই যুবতীকে লইয়া যাইতে লোকজন পাঠাইবার নিমিত্ত পত্র দিয়া ব্রাচমীকে বিদায় করিলেন।

ব্রাচমী প্রত্যাবৃত হইয়া রাজার কাছে সুন্দরীর অলৌকিক রূপলাবণ্য বর্ণনা এবং ছাংগ্রাই-এর (কূটনীতি প্রসূত) পরিচয়ানুসারে যুবতীকে মঘরাজ মেংগদির সহোদরা বলিয়া জ্ঞাপন করিলেন।

পরিচয় শুনিয়া চাকমা রাজা আরও আহ্লাদিত হন এবং সবিশেষ আড়ম্বর সহকারে রাজাসহোদরাকে আনয়নের জন্যে অনেক লোক পাঠাইলেন।

মন্ত্রী এই রমণীর সহিত একশত হস্তী ও চাকমা রাজাকে উপটৌকন প্রদান করিতে ঢাকার শাসনকর্তা রেয়ংকে দশ হাজার সৈন্য সঙ্গে প্রেরণ করিলেন।

কিন্তু রেয়ংকে গোপনে বলিয়া দিলেন, চাকমা রাজা নৃত্যগীতাদি অতিশয় ভালোবাসেন, মদ্যসেবীর অপরদিকে দৃষ্টি থাকে না, সুতরাং সুযোগ পাইলেই আপনি সুবিধা করিয়া লইবেন।

পরে কাঁইচার শাসনকর্তা ওয়ান্টবোর সঙ্গে দশ সহস্র সৈন্য দিয়া পশ্চাদিক হইতে আক্রমণের নিমিত্ত পাঠাইলেন।

এদিকে রজনী সমাগমে চাকমা রাজা ইয়ংজ অনল লুব্দ পতঙ্গ প্রায় প্রমোদ নিকেতনে নৃত্য গীতাদিতে প্রমত্ত আছেন, এমন সময়ে রেয়ং যুবতীকে আনিয়া তদীয় করে সমর্পণ করিলেন।

রাজা অতিশয় আনন্দের সহিত যুবতীকে পার্শ্ববর্তী আসনে উপবেশন করাইয়া পুনরায় আমোদ প্রমোদে নিমগ্ন হইলেন। রাত্রি প্রায় বারটার সময় রেয়ং চতুর্দিকে আক্রমণ করেন।

ওয়ান্টবা ও পশ্চাদভাগের জঙ্গল পথে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ছাংগ্রাই এইরূপে দলে দলে ক্রমশ অপর সমুদয় সৈন্য পাঠাইয়া পরিশেষে দলবল সহ স্বয়ং যোগদান করিলেন।

এখানে তাহদিগকে কোন যুদ্ধ ক্লেশ পাইতে হয় নাই। অতি সহজেই চাকমা রাজ ইয়াংজ এবং মধ্যম পুত্র চোফু ও কনিষ্ঠ পুত্র চৌতুকে বন্দি করিয়া মইচাগিরির পর্বতাকীর্ণ নগর মধ্যবর্তী রাজ প্রাসাদ অবরোধ করেন।

সেখানেও বিনাক্লেশে যুবরাজ চজুং, রাণী তিনজন, দুইজন রাজকন্য এবং দাসদাসীগণকে বন্দি করিলেন। অতঃপর মন্ত্রী প্রবর ছাংগ্রাই ৬৯৫ মঘাব্দের (বাংলা ৭৪০ সাল) ২রা মাঘ চাকমা রাজা এবং তদীয় তিন রাণী, তিন পুত্র, দুই কন্যা ও দাসদাসীদিগের সহি রেয়ংকে মঘরাজ মেংগদি সমীপে পাঠাইয়া দেন।

এইরূপে চাকমা রাজ্য অতি সহজেই মঘরাজার করতলগত হইল। অবশেষে ১৩ই মাঘ বিজিত রাজ্য হইতে পঞ্চাশটি হস্তী, কুড়িটি গয়াল, অপরিমিত স্বর্ণ-রৌপ্য এবং দশ সহস্র চাকমা প্রজা লইয়া প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বরাজ্যে প্রত্যাবর্তন করিলেন।

মন্ত্রী বর রাজাংগ্রা ছাংগ্রাইর কর্মদক্ষতায় অতিশয় পরিতুষ্ট হইয়া আরাকানাধিপতি মেংগদি তাঁহাকে “মাহাউছা ওয়ান্না” অর্থাৎ মহাপ্রজ্ঞা খেতাব ও একখানি স্বর্ণমণ্ডিত পাল্কী উপহার প্রদান করেন এবং হস্তীর উপর চড়িয়া যাতায়াতের অনুমোদন করিলেন।

ইহা ছাড়া তাঁহার পুত্র অংজাউর সঙ্গে  চাকমা রাজার কনিষ্ঠ কন্যার বিবাহ দিলেন। জ্যোষ্ঠা কন্যা চমিখাঁকে মেংগদি নিজেই  রাখিয়া দেন।

অনন্তর চাকমা রাজা ইয়ংজকে আরাকানের অন্তঃপাতী কামুছা নামক স্থানের কাফ্যা জাতির আধিপত্য অর্পণ করেন।

তাঁহার জৈষ্ঠপুত্র চজুং ও মধ্যমপুত্র চোফুর হস্তে যথাক্রমে কিউদেজা ও মিঃ রাজ্যের শাসন কর্তৃত্ত্ব দেওয়া হয় এবং কনিষ্ঠপুত্র চৌতুকে কাংজা নামক স্থানের জলকর তহলশীলদার দিয়া নিকটে রাখেন।

অপর দশ সহস্র চাকমা প্রজাকে এংখ্যং এবং ইয়ংখ্যং নামক স্থানে বাস করিবার অনুমতি দেওয়া হইল। সঙ্গে সঙ্গে তাহদের পূর্বতন উপাধি পরিবর্তন করিয়া দৈংনাক আখ্যা প্রদান করিলেন।

Traditional attire of Tanchangya
স্বজাতীয় পোষাকে তঞ্চঙ্গ্যারা, ছবিঃ বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা জাতীয় ঘিলা খেলা গোল্ডকাপ টুর্ণামেন্টের ফেসবুক পেজ

এতাদৃশী অধীনতায় জীবন যাপন রাজপুত্রত্রয়ের ক্রমেই অসহনীয় বোধ হইতে লাগিল।

৭০৫ মঘাব্দে (১৩৪৪ খৃঃ অঃ) মেংগদি লিম্ব্রু যাত্রা করিলে তাঁহারা তিন ভ্রাতাই একত্রযোগে পোচন্দাও পার হইয়া উচ্চব্রহ্মে পলাইয়া গেলেন।

মঘরাজ ইহা শুনিয়াও কোন উচ্চ বাক্য করিলেন না। অনন্তর জ্যৈষ্ঠভ্রাতা চজুং (সূর্য্যজিত) ভূতপূর্বাবশিষ্ঠ প্রজাগণকে লইয়া মংজাপ্রু নামক স্থানে রাজত্ত্ব আরম্ভ করেন।

মধ্যম ভ্রাতা চৌফ্রু (চন্দ্রজিত) ক্যজম রাজার  নিকট হইতে “মংরেনা” খেতাব এবং প্রুম রাজ্যের আধিপত্য প্রাপ্ত হইলেন।

কনিষ্ঠ চৌতু (শত্রুজিৎ) চাখাম নামক রাজার অধীনে থাকিয়া ক্রমে ৭২৪ মাঘিতে (১৩৬২-৬৩ খৃঃ অঃ) “তারদ্যা” উপাধি ও আমায়ু দেশের শাসনভার লাভ করেন। (চাকমা জাতি – সতীশ ঘোষ পৃঃ ২০-৩৩)।

চাকমা জাতির ইতিহাসে দৈংনাকদের (তৈনটংগ্যা বা তঞ্চঙ্গ্যা) উৎপত্তির কাহিনী ইহাই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, আরাকানাধিপতি কর্তৃক ধৃত চাকমা রাজা অরুনযুগের (ইয়ংজ) যে দশ সহস্র প্রজাকে এংখ্যাং এবং ইয়ংখ্যাং নামক স্থানে বাস করিবার অনুমতি দেওয়া হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে তাদের পূর্বতন উপাধি পরিবর্তিত করে দৈংনাক বা দৈননাক আখ্যা প্রদান করা হয় তাঁরা আদৌ চাকমা ছিল কিনা প্রশ্ন থেকে যায়।

আরাকানী ভাষায় দৈংনাক অর্থে যোদ্ধাকে বোঝায়। সেই প্রজাগণ নিশ্চই যোদ্ধা ছিল কিংবা যোদ্ধা হিসেবে গণ্য ছিল।

কোন রাজার সৈন্য দলে স্বজাতীয় যোদ্ধা ব্যতীত বিভিন্ন জাতি গোত্রীয় লোক থাকে। অতএব সেই দৈংনাকেরা কোন জাতি বা গোত্রীয় ছিল নিশ্চিত করে বলা যায় না।

অপরপক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম আদিবাসী চাকদের উৎপত্তির ইতিহাসও প্রায় তদনুরূপ। দৈংনাকদের উৎপত্তির প্রচলিত ইতিহাসের সাথে চাক উৎপত্তি কাহিনীর তেমন কোন পার্থক্য নেই। নিচের অংশটি সেটি পরিস্কার হওয়া যাবে।

“আরাকান রাজা মাং ভিলুর পুত্র রাজা মাংথির (মেংগদি?) শাসনামলে চাক রাজার নাম ছিল য়েংচো।

তাঁর রাজধানীর নাম মিছাগিরি। মন্ত্রী কোরেংগ্রী লামুর শাসনাকর্তা পরামর্শক্রমে এক অদ্ভুত উপায়ে মিছাগিরি আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।

তিনি চারজন সেনাপতির নেতৃত্বে প্রত্যেকের সঙ্গে এক একজন সুন্দরী যুবতীসহ সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন পথে মিছাগিরি পাঠালেন। এক দূত মারফৎ য়েংচোর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হল যে রাজা মাংথি নিজ ভগ্নী ব্রাহমীকে উপহার দিতে চান।

প্রস্তাবে খুশি হয়ে রাজা য়েংচো আরাকানী দূত সাংতাংকে প্রচুর অর্থ আর একটি হাতি উপহার দেন এবং বলেন যে, ৬৯৫ মঘীর তাপোথায় মাসের ১২ তারিখ (১৩৩৩ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী ১২ তারিখ) তিনি ব্রাহমীকে গ্রহণ করবেন।

নির্দিষ্ট দিনে ১০,০০০ হাজার সৈন্যসহ রেঅং নামক আরাকানী সেনাপতি ব্রাহমীকে মিছাগিরি নিয়ে আসে। ব্রাহমীর রূপ দেখে য়েংচো মুগ্ধ হন।

এদিকে মূল আরাকানী হঠাৎ রাত্রিতে রাজ প্রাসাদ আক্রমণ করে এবং তাঁর দুই পুত্র ও দুই কন্যার সাথে য়েংচো বন্দি হন।

একমাত্র জ্যৈষ্ঠ পুত্র চোচুং তাঁর অনুগত সৈন্যদের নিয়ে সুদূর ব্রহ্মদেশে পালিয়ে যান। আরাকান রাজ মাংথি রাজা য়েংচোকে ক্যখকা রাজ্যের শাসনভার, রাজকুমার চৌপ্রুকে মিঙ রাজ্যের শাসনভার, রাজকুমার চৌতুংকে কঙ রাজ্যের শাসনভার দেন এবং রাজকুমারী চোমে খানকে নিজে বিয়ে করেন।

পরে চৌপ্রু বার্মায় পালিয়ে যান। চাকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠে এবং তাদেরকে পূর্ববর্তী স্থান থেকে উঠিয়ে এঙ নদী, রো নদী প্রভৃতির তীরে বসবাস করার ব্যবস্থা হয়।

এভাবে সুবিখ্যাত চাকরাজ্য ১৩৩৪ খৃষ্টাব্দের দিকে ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীকালে কনিষ্ঠ রাজ পুত্র আনুমানিক ১৩৬৪ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পালিয়ে আসেন।

অন্যান্য চাকরা তাকে অনুসরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে লামা মহকুমায় পৌঁছে। অনেকে তাঁর খোঁজ না পেয়ে আরাকানে ফিরে যায়।“ (মংমং চাক, চাক উপজাতি পরিচিতি; সাময়িকী গিরি নির্ঝর ১ম সংখ্যা, উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি)। এই হল চাক জাতির ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

চাক জাতির এই কাহিনীর সাথে সতীশ ঘোষের চাকমা জাতি ইতিহাসে বর্ণীত দৈংনাকদের উৎপত্তির কাহিনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নামগুলি বা স্থান সমূহের বানানে এবং খুঁটিনাটি বিষয়ে যৎকিঞ্চিৎ পার্থক্য ব্যতীত উভয় কাহিনীই অবিকল এক।

সতীশ ঘোষের চাকমা রাজ ইয়ংজ চাক ইতিহাসে য়েংচো, চাকমা রাজধানী মইচাগিরি চাক ইতিহাসে মিছাগিরি। ব্রহ্মদেশীয় মন্ত্রী ব্রাচমীকে চাক ইতিহাসে রাজকুমারী ব্রাহমী এবং চাকমা রাজা মারেক্য জয় ১৪১৮ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পালিয়ে আসার তারিখটি চাকদের কাহিনীতে আনুমানিক ১৩৬৪ খৃঃ অঃ ধরা হয়েছে।

রাঙ্গামাটি উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের একজন প্রাক্তন পরিচালক বিশিষ্ট প্রবন্ধকার ও গবেষক বাবু অশোক কুমার  দেওয়ান তাঁর চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার গ্রন্থে (প্রথম সংস্করণ) প্রদত্ত মন্তব্য খুবই প্রনিধানযোগ্য।

তাঁর মন্তব্য এইঃ “তাহলে দেখা যায় এই যাবৎকাল পর্যন্ত প্রচলিত চাকমা জাতির ইতিহাসের অধ্যায়টি চাক জাতিও নিজের বলে দাবী করেছে।

এই কাহিনী কি চাকরা আমাদের কাছ থেকে চুরি করেছে? না আমরাই তাঁদের কাহিনীকে আমাদের বলে চালিয়ে দিচ্ছ? সন্দেহ নেই যে, চাকরাও এই কাহিনী দেংগ্যাওয়াদি বা অনুরূপ কোন পুঁথি থেকে সংগ্রহ করেছে।

অতএব আমাদের নির্ণয় করা দরকার দেংগ্যাওয়াদি কাহিনীকার সাক জাতির নাম আসলে কাদের কাহিনী বিবৃত করেছেন।“ (চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার – পৃষ্ঠা ৬৪, ৬৫, প্রথম সংস্করণ)।

Phayre এর History of Burma গ্রন্থটির উল্লেখ করে তিনি তাঁর ইতিহাস বিচার গ্রন্থে মন্তব্য করেনঃ “উপরের বর্ণিত বিবরণে তথকথিত চাকমা রাজা ইয়ংজ বা অরুনযুগের পতন কাহিনী বড় করুন।

এতবড় শক্তিধর রাজা এবং একটি সমৃদ্ধ জাতির এই পরিণতি তাও আবার ছলনার মাধ্যমে; যার সঙ্গে কিনা আরাকান রাজ্য দুই লক্ষ সৈন্য দিয়েও সম্মুখ যুদ্ধে মুখোমুখি হতে সাহস পাননি অত্যন্ত দুঃখাবহ সন্দেহ নেই।

চাকমা জাতির ইতিবৃত্তকারগণ একারণে এঘটনাকে বেশ ফলাও করে বর্ণনা করেছেন। লক্ষণীয় যে, দেঙ্গ্যাওয়াদির কাহিনীকার এই ঘটনাড় সঙ্গে আগেরগুলির ন্যায় অতি প্রাকৃত ঘটনার বিবরণ যোগ করে এটিকে কল্প কথায় পর্যবসিত করেননি।

কিছু অতিরঞ্জন এবং অলঙ্কারের আতিশয্য সত্ত্বেও এই ঘটনার বিবরণ আগেরগুলির তুলনায় অনেক বাস্তবসম্মত কিন্তু এতবড় একটি মহীরুহের পতন যা প্রচণ্ড শব্দে চারিপাশের বনভূমিকে প্রকম্পিত করে তোলার কথা, অথচ আশ্চার্য্যের বিষয় ফেইরীর, ব্রহ্ম ইতিহাসে এই ঘটনার কোন ছায়া মাত্র পড়েনি।”

Ornaments basket of Tanchangya
তঞ্চঙ্গ্যাদের ফা-কালাং (অলংকার রাখার ঝুড়ি) ও আদি অলংকার, ছবিঃ তঞ্চঙ্গ্যা পরিচিতি – বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা

সেই সময়ের আরাকান ইতিহাস ফেইরী এইভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “Arakan became subordinate to Pugan monarchy when Letyamegnan was placed on the throne of his ancestors. He fixed his capital at Parin. The country enjoyed rest for a long period, and there is nothing in the annals worthy of remark until after the centure of Pugan by the Mougals. In the early part of the fourteenth century mention is made of invasion by the Shans which apparently refers to attacks by kings of Myinsaing and Panya. (Phayre – History of Burma; p-76)

আরাকান ইতিহাসে মেংগদির  রাজত্ত্বকাল ১২৭৯ খৃঃ অঃ থেকে ১৩৮৫ খৃঃ পর্যন্ত (অবিশ্বাস্যভাবে দীর্ঘ ১০৬ বৎসর)।

এই মেংগদির সময়েই উপরে দেঙ্গ্যাওয়াদির বর্ণীত ১৩৩৩ খৃষ্টাব্দের মইচাগিরির পতনের ঘটনা।

কিন্তু ফেইরীর ব্রহ্ম ইতিহাসে আরাকান রাজ মেংগদি কর্তৃক সাকরাজ্য জয়ের কোন বিবরণ নেই বরং  Myinsaing  এর শান জাতি কর্তৃক উল্টো আক্রমণেরই উল্লেখ আছে।

দুটি পুস্তকে এই দু’ধরণের সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিপরীতধর্মী বক্তব্য ধাঁধাঁর সৃষ্টি হয়।“

বিভিন্ন সূত্র পর্যালোচনা করে এই কাহিনী চাকদেরই দাবী করা সহজ বলে শ্রী দেওয়ান মন্তব্য করেন, “বর্তমানে চাক জাতি নানা কিছুর বিচারে উচ্চব্রহ্মের কাদু জনগোষ্ঠীর একটি শাখা বলে অনুমিত হয়।

সে কারণে চাকদের পক্ষেই সাক পরিচয় দেওয়া অধিকতর যুক্তিযুক্ত এবং যদিও ইয়াংজ কাহিনীর যথার্থতা সম্বন্ধে গভীর সন্দেহ আছে তবুও সে কাহিনী তাদেরই দাবী করা সহজ।“ (প্রাগুক্ত – পৃঃ ৬৭)

দৈংনাক বা তঞ্চঙ্গ্যাদের উৎপত্তির কাহিনী অনুসন্ধানকালে আরাকান এবং  উচ্চব্রহ্মেই দৃষ্টি নিবদ্ধ থেকে যায়।

চাকমা জাতির ইতিহাসবেত্তাগণের সুদীর্ঘকালের ব্যাপক গবেষণার ফলশ্রুতিতে আরাকান বা ব্রহ্ম ইতিহাসের অতলগর্ভে দৈংনাক বা তঞ্চঙ্গ্যাদের প্রতিসন্ধির সম্ভাব্যতা সমধিক বলে প্রতীয়মান হয়।

এই প্রসঙ্গে Sir Arther Phayre তাঁর ১৮৪১ খৃঃ অব্দে প্রকাশিত “An account of  Arakan” নামক নিবন্ধে দৈংনাকদের কথা উল্লেখ করেন। তাঁর নিবন্ধে তিনি দৈংনাকদের যে বিবরণ দিয়েছেন তা সংক্ষিপ্ত হলেও খুবই প্রণিধানযোগ্য।

তাঁর বর্ণনা নিম্নরূপঃ “The remaining hill tribes are the  Doingnak and the Murung. They both inhabit the upper course of the Mayariver. The language of the first is a corrupt Bengali. They call themselves kheim-ba-nago. Of their descent I could learn nothing, probably they may be offspring of Bengalees carried into the hills as slaves, where their physical appearance has been modified by change of climate. In religion they are Buddhists.” (Lt. Phayre – An account of Arakan, Journal of  the Asiatic society of Bengal 1841)

দৈংনাকরা বর্তমানে আরাকানের রাসিডং, ভুসিডং, মংদু, ক্যাকতও কতিপয় জায়গায় বাস করে। উচ্চব্রহ্মেও তাঁরা বসবাস করছে বলে জানা যায়।

১৯২১ সালে বর্মার আদমশুমারিতে তাঁদের সংখ্যা ৪৯১৫ জন ধরা হয়েছিল। দীর্ঘ চুয়াত্তর বছরে তাঁদের সংখ্যা কত হবে তা অনুমান করা কঠিন নয়।

শ্রী আশোক কুমার দেওয়ান তাঁর চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার গ্রন্থে ফেইরীর উপরোক্ত বিবৃতিতে নিম্নলিখিত মন্তব্য করেছেন – “চাকমাদের একটি দল দৈংনাকেরা সুদীর্ঘকাল পূর্ব থেকে আরাকানে বসবাস করে আসছে।

দীর্ঘদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তাঁদের কথা আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।

তাঁদের কথা নূতন করে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় Sir Ather Phayre তাঁর ১৮৪১ সালে প্রকাশিত An account of Arakan নামক নিবন্ধে। ফেইরী বলেছেন যে, দৈংনাকরা নিজেদের “থেইম বানগো” বলে পরিচয় দেয়। এই “থেইমবানগো” কথাটির অর্থ কী?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আরাকানী ভাষায় বা প্রতিবেশী কোন উপজাতীয় ভাষায় শব্দটির কোন অর্থ হয় না। সুতরাং আমাদের কেবল অনুমানের উপর নির্ভর করতে হয়।

অনুমান হয় যে ফেইরীর আলাপ করার সময় তারা আসলে নিজেদের চম্পকনগরের লোক বলে পরিচয় দিয়েছিল।

ফেইরী সেই সময় ছিলেন লেফটেনেন্ট পদমর্যাদার একজন তরুণ অফিসার। সেই তরুণ বয়সে তিনি আরাকানী ভাষা আয়ত্ত্ব করেছিলেন বলে মনে হয় না।

সম্ভবতঃ কোন আরাকানী দোভাষীর মাধ্যমেই তাঁদের কথাবার্তা চলেছিল। আরাকানী ভাষায় শব্দের শেষে হলন্ড ব্যঞ্জন উচ্চারিত হয় না।

অতএব চম্পকনগর শব্দটির উচ্চারণ আরাকানী দোভাষীর উচ্চারণে “চেইম্বপানগো” হওয়াই স্বাভাবিক। সম্ভবতঃ এই চেইম্বপানগো শব্দটিকে শোনার ভুলে হোক বা নোট করার ভুলে হোক ফেইরী “থেইমবানগো” লিখেছেন।

এটি নিছক অনুমান। এই অনুমান ছাড়া দৈংনাকরা নিজেদের থেইমবানগো হিসেবে পরিচয় দেওয়া আর কী অর্থ হতে পারে আমরা ভেবে পাই না।

দৈংনাকদের মধ্যে বরাবরই চম্পকনগরের বিজয়গিরির রাজ্যাভিযান সম্পর্কিত জনশ্রুতি প্রচলিত এই ধারণার কারণ এই যে আরাকানবাসী দৈননাকদেরই প্রত্যাগত অংশ তংটঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের প্রতিটি লোকই আজ পর্য্যন্ত সেই একই বিশ্বাসে গভীরভাবে বিশ্বাসী।

দৈননাকদের সঙ্গে এই অঞ্চলে জনগণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে কম করে হলেও প্রায় ৩০০ বছর। ইতিপূর্বে আলোচনা অনুযায়ী রাধামোহন ধনপুদি উপাখ্যানসহ চম্পকনগরের বিজয়গিরির গোটা কাহিনী যদি ঊনবিংশ শতাব্দী বা তারও কিছু পূর্বে রচিত বলে অনুমিত হয়, তবে দৈননাকদের মধ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে ফেইরীর আমলে সেটি প্রচলিত হওয়ার কথা নয়।

সুতরাং রাজা বিজয়গিরির নেতৃত্বে চম্পকনগর থেকে দক্ষিণাভিমুখে যুদ্ধাভিযানে আসার পর তাঁরা আর পূর্বস্থানে ফিরে না গিয়ে এ অঞ্চলেই বসতি স্থাপন করেছিল।

দৈননাকসহ চাকমা তঞ্চঙ্গ্যাদের মধ্যে সে বিশ্বাসের মূলে অবশ্যই একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে।” (প্রাগুক্ত) চাকমা রাজা অরুনযুগ বা ইয়ংজ এর আরাকান রাজা মেংগদির হাতে পরাজয়বরণ ও দশ সহস্র চাকমা প্রজাসহ স্বপরিবারে বন্দী হওয়ার ঘটনা সত্য কিংবা মিথ্যা যাই হোক না কেন আরাকান বা উচ্চব্রহ্মে দৈংনাক নামধেয় একটি পৃথক জাতি বা জনগোষ্ঠী থাকার কথা কদাপি মিথ্যা নহে।

দৈংনাক শব্দটি আরাকানী বলে সবাই একমত। ইহার অর্থ হল যোদ্ধা। যোদ্ধা বলে কোন জাতি থাকতে পারেনা।

কোন জাতি বা রাজার সৈন্যকে বা সৈন্যদলকে যোদ্ধা বলা যায় মাত্র জাতি বলা যায় না। সেই সৈন্যদলে সেই জাতি বা রাজার স্বজাতীয় সৈন্য ব্যতীত অন্য কোন জাতির লোক থাকা অসম্ভব নহে।

ব্রিটিশের সৈন্যদলে গুর্খা, অহমিয়া, বাঙ্গালি প্রভৃতি জাতির লোক যেমন রয়েছে।

Tanchangya traditional dress (For women)
স্বকীয় পোষাক ও অলংকারে তঞ্চঙ্গ্যা কিশোরী, ছবিঃ তঞ্চঙ্গ্যা পরিচিতি – বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা

ফেইরী বলেছেন দৈংনাকেরা বৌদ্ধ এবং তাঁরা মায়া নদীর (মায়ু) উর্দ্ধভাগে বসবাস করেন।

তাঁদের ভাষা বিকৃত বাংলা। তাঁদের ভাষা বিকৃত বাংলা বিধায় তিনি অনুমান করেন যে, তাঁরা দাসরূপে আনীত বাঙ্গালিদের উত্তর পুরুষ হওয়া সম্ভব।

সেখানে দীর্ঘদিন বসবাসের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনে দৈহিক গঠন, আকৃতি ও চেহারার পরিবর্তন হয়েছে।

ফেইরীর এই অনুমান সঠিক নহে। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কোন জনগোষ্ঠীর শারীরিক গঠন, আকৃতি ও চেহারার আমুল পরিবর্তন কোনদিন সম্ভব হতে পারে না।

মঙ্গোলীয় উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর লোকের সঙ্গে একই জলবায়ুতে পাশাপাশি শতশত বৎসর বাস করেও কোন বাঙ্গালির (অমঙ্গোলীয়) দৈহিক গঠন, আকৃতি ও চেহারার পরিবর্তন হয়ে মঙ্গোলীয় উপজাতীয়তে রূপান্তরিত হয়েছে বলে কোন দৃষ্টান্ত এযাবৎ দেখা যায়নি।

বৈবাহিক কারণে রক্তের সংমিশ্রণ ব্যতীত দৈহিক গঠন, আকৃতি ও চেহারার পরিবর্তন সম্ভব নহে।

কাজেই ফেইরীর এই সিন্ধান্ত আমরা বাতিল করতে পারি এবং বলতে পারি দৈংনাকরা নৃতাত্ত্বিক বিচারে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার লোক বিধায় প্রাচীন Tai বা Shan দের গোত্রীয়।

আরাকান ও উচ্চব্রহ্মে অপরাপর মঙ্গোলীয় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জাতিগোষ্ঠীর দৈংনাকরা অন্যতম তা প্রাচীন আরাকান ইতিহাসে পাওয়া যায়। যথাঃ “প্রাচীন আরাকান রাজ্য ছিল মোঙ্গল, তিব্বত ব্রহ্ম জনগোষ্ঠী ও মুরুং, খুমী, চাক, সিন, সেন্দুজ, ম্রো, খ্যাং, ডইনাক, মারুমিউ প্রভৃতি কিরাত উপজাতি অধ্যুষিত দেশ।”

দ্রষ্টব্যঃ (প্রাচীন আরাকান রোয়াইঙ্গা হিন্দু বড়ুয়া বৌদ্ধ অধিবাসীঃ আবদুল হক চৌধুরী। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। প্রথম প্রকাশ; ১৪০০ সাল, জানুয়ারী ১৯৯৪ পৃষ্ঠা ৩)। পুস্তকে বর্ণীত ডৈনাকই দৈংনাক।

অপরপক্ষে চাক বলতে চাকমা কিংবা চাক কাকে বুঝানো হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে চাকমা এবং দৈংনাকদের একসঙ্গে ইতিহাসে উল্লেখ দেখা যায়। ধর্ম এবং ভাষার সাদৃশ্য থাকাতে উভয় জাতিসত্ত্বার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও মৈত্রী থাকার কথা ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে।

আরাকানবাসীদের সঙ্গেও দৈংনাকদের কোনরূপ দ্বন্দ ও সংঘাত ছিল না। অন্ততঃ ইতিহাসে কোন দ্বন্দের উল্লেখ নেই। সেইজন্য অদ্যাবধি আরাকানে ও উচ্চব্রহ্মে দৈংনাকগণ শান্তিতে বসবাস করছে।

আরাকানীদের সঙ্গে চাকমাদের সুদীর্ঘকাল ধরে, দ্বন্দ ও সংঘাত ছিল। এই দ্বন্দ ও সংঘাতের পরিণতি এমন হয়েছিল যে আরাকানীদের (মগদের) অত্যাচার বেড়ে যায় এবং চাকমাগণ আরাকানে থাকতে পারেনি।

তাঁরা আরাকান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। স্বদেশভূমি চম্পকনগর ফিরে যাবার জন্য তখন শ্লোগান রচিত হয় তা উদ্ধৃত করা হল।

চল বাব ভেই যে যে যে

চম্পকনগরত ফিরি যে।।

এলে মৈসাং লালস নেই

ন এলে মৈসাং কেলেশ নেই।।

ঘরত থেলে মগে পায়

ঝাড়ৎ গেলে বাঘে খায়।।

মগে ন পেলে বাঘে পায়

বাঘে ন পেলে মগে পায়।

অর্থাৎ

চল বাপ ভাই চল যাই

চম্পকনগরে ফিরে যাই।

আসলে মৈসাং লালসা নাই

না আসলে মৈসাং ক্লেশ নাই।

ঘরে থাকলে মগে পায়

ঝাড়ে (জংগলে) গেলে বাঘে খায়।

মগে না পেলে বাঘে পায়

বাঘে না পেলে মগে পায়।

এতে বোঝা যায়, চাকমাদের অবস্থা কি নিদারুণ কষ্টকর হয়েছিল তখন। চাকমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় এবং উভয়ের ভাষা প্রায় একই হবার কারণে দৈংনাকরাও আরাকানীদের হাতে নিগৃহীত হতে পারে অনুমান করলে ভুল হবে না।

কারণ চাকমাদের সঙ্গে দৈংনাকদের একাংশ ও আরাকান ত্যাগ করে বলে ইতিহাসে দেখা যায়।

চাকমা ইতিহাসের তথ্য অনুসারে মৈসাং রাজার পুত্র মারেক্যা ও তৈনসুরেশ্বরীর নেতৃত্বে চাকমারা ১৪১৮ খৃষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময় গভীর অরণ্যের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের আলীকদম নামক স্থানে পালিয়ে আসতে সমর্থ হন এবং তথায় তৎকালীন চট্টগ্রাম অঞ্চলের শাসনকর্তা মোঃ জালাল উদ্দীনদের অনুমতিক্রমে ১২ খানি গ্রামে সমন্বয়ে একটি ক্ষুদ্র চাকমা রাজ্য গঠন করেন।

উক্ত ১২ খানি গ্রামকে বলা হতো “বার তালুক”। তখন তৈন সুরেশ্বরী নামানুসারে মাতামুহরীর একটি উপনদীর নাম তৈনসুরেশ্বরী রাখা হয়।

শ্রী আশোক কুমার দেওয়ান চাকমা ইতিহাসে উল্লিখিত মৈসা কিংবা মারেক্যা আসলে চাকমা রাজা কিনা এবং আরাকান থেকে চাকমা প্রজাদের নিয়ে পলায়নের ইতিহাস বিভ্রান্তি মূলক বলে তাঁর “চাকমা জাতির ইতিহাস বিচার” গ্রন্থে (পৃঃ ৭৪, ৭৫, ৭৬) উল্লেখ করেছেন।

চাকমাদের রাজা বা দলপতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য যাই থাক না কেন চাকমাগণ মগদের অত্যাচারে নিপীড়িত ও নিগৃহীত হয়ে আরাকান যে ত্যাগ করেছিল তা ঐতিহাসিক সত্য।

তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে হয়ত একই জাতিভুক্ত এই বিশ্বাসে দৈংনাকদের তাঁদের সঙ্গে আরাকান ত্যাগ করে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে আলীকদমের তৈনসুরেশ্বরী নদী অববাহিকায় বার তালুকে বিভক্ত হয়ে বসবাস করতে থাকে।

দৈংনাকরা যে বৌদ্ধ তা History of Burma রচয়িতা তৎকালীন আরাকান বিভাগের কমিশনার ফেইরী উল্লেখ করেছেন। তাঁদের  সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্ম শাস্ত্র ত্রিপিটক ছিল।

চাকমাগণও বৌদ্ধ। শত অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হলেও তাঁরা আরাকান ত্যাগের সময় বৌদ্ধ ধর্মকে ত্যাগ করেনি।

তাঁদের পরবর্তী ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে তাঁরা আরাকান ত্যাগ করার প্রাক্কালে ধর্ম‌শাস্ত্র সঙ্গে বহন করেছিল। কিন্তু মূল ত্রিপিটক দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অথবা তাঁদের কাছে না থাকাতে তাঁরা মূল ত্রিপিটক সঙ্গে নিতে পারেনি।

দৈনন্দিন কাজে বা মৃত্যু, বিবাহ প্রভৃতি সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারোপযোগী প্রয়োজনীয় সূত্র মূল ত্রিপিটক হতে লিপিবদ্ধ (Copy) করে নেয়।

ঐ সূত্রগুলির প্রত্যকটি এক একটি তারা এবং সম্মিলিত নাম আগরতারা। এযাবৎ মোট আটাশটি তারার সন্ধান পাওয়া গেছে।

শত্রুতা ও সংঘর্ষের কারণে আরাকানীদের (আরাকানীরাও প্রথম থেকে বৌদ্ধ) কাছে অবস্থিত ত্রিপিটক হতে সূত্র অনুলিপি করা কোন চাকমার পক্ষে তখন সম্ভব ছিল বলে মনে হয় না।

লক্ষণীয় যে, যেসব দৈংনাক আরাকান ত্যাগ করে  আলীকদম বা তৈনছড়িতে চলে যায় তাঁদের কোন আগরতারা ছিল না – বরঞ্চ মূল ত্রিপিটক ছিল  বলে ধারণা করা যায়।

নতুবা তারাও সংকলিত সূত্র বা আগরতারা কিংবা অন্য কোন নামধেয় ধর্মশাস্ত্র সঙ্গে বহন করত। কাজেই ইহা অনুমান করা ভুল হবে না যে চাকমাগণ দৈংনাকদের কাছে অবস্থিত ত্রিপিটক থেকেই আগরতারা লিপিবদ্ধ করে থাকতে পারে তবে ইহা নিছক অনুমান মাত্র।

কথিত আছে চাকমাগণ চট্টগ্রাম, রাঙ্গুনিয়া ও রাঙ্গামাটি অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করলে আলীকদম ও আরাকানের বহু দৈংনাক স্বজাতীয় বোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে চাকমাদের সান্নিধ্যে বসবাস করার উদ্দেশ্য তত্র অঞ্চলে চলে আসে।

আলীকদম থেকে কিছু দৈংনাক হ্নাক্ষ্যংছড়ি, লামা ও বর্তমান কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে। অদ্যাবধি সেই সব জায়গায় তাঁরা বসবাস করছে।

উত্তরদিকে আসার পথে বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, হোয়াকক্ষ্যং, রাজবিলা, শুকবিলাস, বাঙ্গালহালিয়া, নারানগ্রী, কাপ্তাই উপত্যকা অঞ্চল, নোয়াপতং, রাইংখ্যাং উপত্যকা সম্পূর্ণ অঞ্চল, হোয়াগ্গা, বড়াদম, ঘাগড়া, রইস্যাবিলি এসব অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে।

চাকমা রাজা ধরম বক্স খাঁর আমলে জনৈক ফাপ্রু নামক ব্যক্তিকে দলনেতা করে একজোড়া হাতি ও বহু স্বর্ণালঙ্কারাদি উপটৌকন দিয়ে চারিহাজার দৈংনাক এতদঅঞ্চলে (স্থায়ী) বসবাসের নিমিত্ত রাজা ধরম বক্স খাঁর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে।

রাজা ধরম বক্স খাঁ তাঁদেরকে এতদঅঞ্চলে বসবাসের অনুমতি দেন কিন্তু স্বজাতি চাকমা হিসেবে স্বীকৃতি দেননি বলে জনশ্রুতি আছে।

তখন সমতল জমিতে কৃষি পদ্ধতি সবেমাত্র আরম্ভ হয়। অধিকাংশ প্রজারাই জুমচাষের উপর নির্ভরশীল ছিল। দৈংনাকগণও জুমচাষী ছিল।

চাকমা রাজ সরকারের জুম তৌজিতে তাঁদেরকে চাকমা উল্লেখ না করে তৈনটংগ্যা (অধিকাংশ আলীকদমের তৈনছড়ি থেকে আগত বলে) নামে উল্লেখ বা তৌজিভুজ করা হল। তৈনটংগ্যা শব্দটি ক্রমে ক্রমে “তঞ্চঙ্গ্যা” এই লিখিত রুপ লাভ করে।

Tanchangya Aalam 1
তঞ্চঙ্গ্যা আলাম (ডিজাইন ক্লথ), ছবিঃ তঞ্চঙ্গ্যা পরিচিতি – বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা

চাকমা রাজা ধরম বক্স খাঁ দৈংনাক বা তঞ্চঙ্গ্যা দিকগকে স্বজাতি চাকমা হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও অবহেলা করেছিলেন বলে মনে হয় না।

কেননা, চাকমা হেডম্যানের সমমর্যাদা সূচক হেডম্যান পদে কতিপয় তঞ্চঙ্গ্যাকেও নিযুক্ত করা হয়।

বর্তমানে ১০০ হোয়াগ্গা মৌজা, ১০৮ মানিকছড়ি মৌজা, ১২০ ছাক্রাছড়ি মৌজা, ১৩০ বারুদগোল্লা মৌজা, ১৩১ বল্লালছড়া মৌজা, ৩৩৩ ঘিলাছড়ি মৌজা, ১১৭ কৌশল্যাঘোনা মৌজা, বান্দরবানের তম্রু মৌজাগুলির হেডম্যান সকলেই তঞ্চঙ্গ্যা।

উল্লেখ্য যে, চাকমা রাজা ব্যরিষ্টার দেবাশীষ রায়ের আমলে চাকমা অধ্যুষিত ১১৭ কৌশল্যাঘোনা মৌজার চাকমা হেডম্যান লাল মোহন তালুকদার মারা গেলে ঐ মৌজাবাসী শ্রী যতীন তঞ্চঙ্গ্যাকে হেডম্যান পদে নিযুক্ত করা হয়।

চাকমা হেডম্যানদের যে মর্যাদা রাজ দরবারে প্রদান করা হয়, তঞ্চঙ্গ্যা হেডম্যানদেরকেও সেই মর্যাদা প্রদান পূর্বকাল থেকেই চলে আসছে।

দৈংনাকগণ এতদঅঞ্চলে আগমণের কিয়ৎকাল পরে রাজা ধরম বক্স খাঁ বসবাসের সুবিধার জন্য চট্টগ্রাম শহরে একটি পাকা দালান তৈরি করিয়ে রাজাকে উপহার প্রদান করে।

ঐ দালান লালকুঠি নামে বিখ্যাত এবং কমিশনার বাহাদুরের বাসভবনরূপে ব্যবহৃত হয়। রাজা নিজের খাস মৌজা ১১৬ রাঙ্গামাটি, ৫৯ বন্দুক ভাঙ্গাতে ও দৈংনাকদের বসবাসের অনুমতি প্রদান করেন। ১১৬ রাঙ্গামাটি মৌজায় অদ্যাবধি বহু তঞ্চঙ্গ্যার বসবাস দেখা দেয়।

বর্তমান গ্রন্থের রচয়িতা সরকারী পুর্নবাসন বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট ওয়েলফেয়ার অফিসার চাকুরী করার সময় বন্দুক ভাঙ্গা মৌজায় বেশ কয়েক পরিবার চাকমার সন্ধান লাভ করেন যারা নিজেদের তঞ্চঙ্গ্যা বলে তাঁর কাছে উল্লেখ করেন।

ঐ মৌজার খারেক্যং এলাকায় এখনো তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া নামে একটি স্থানের নাম আছে। উক্ত মৌজা স্বনামধন্য ও বিখ্যাত ব্যক্তি প্রয়াত ধর্ম মোহন কার্বারী চেয়ারম্যান (তিনি দীর্ঘদিন ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন) নিজেকে ধন্যা গোজার (তঞ্চঙ্গ্যার অন্যতম গোজা) তভাদাঘির লোক বলে প্রকাশ করতেন।

অর্থাৎ তাঁর পূর্বপুরুষ ঐ গোজার লোক (তঞ্চঙ্গ্যা) ছিলেন। তাঁর একমাত্র পুত্র শ্রী সাধন মানিক কার্বারী সমাজের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত। অন্যতম প্রবীণ ও বিখ্যাত ব্যক্তি শ্রী মিয়াচান তালুকদারও নিজেকে তঞ্চঙ্গ্যা বলে উল্লেখ করতেন।

বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী শ্রী রমেশ চন্দ্র চাকমা ও সিলেট জেলার মৎস্য কর্মকর্তা শ্রী চন্দ্র কুমার চাকমা তাঁদের পূর্বপুরুষ তঞ্চঙ্গ্যা ছিলেন বলে প্রকাশ করে থাকেন।

এতদঅঞ্চলে তঞ্চঙ্গ্যাদের আগমণ ও বিকাশের ইতিবৃত্ত যাই হোক না কেন সুদীর্ঘকাল নিজেদের স্বতন্ত্র সত্ত্বার অনুভূতিতে ক্রমে ক্রমে তঞ্চঙ্গ্যাদের নিজস্ব কৃষ্টি, সাংস্কৃতির জন্মলাভ ঘটেছে যা এতদঅঞ্চলের অপরাপর জনগোষ্ঠীর কৃষ্টির, সংস্কৃতি থেকে সহজে আলাদা মনে হয়।

তঞ্চঙ্গ্যাদের ইতিহাস কোন রাজবংশ বা দলনেতার ইতিহাস নয়। তাঁদের ইতিহাস, তাঁদের সাধারণ জনমানুষেরই ইতিহাস।

ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁদের অভিযান অগ্রগতি কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির খতিয়ান নহে তা সমগ্র তঞ্চঙ্গ্যা জাতির অভিযান অগ্রগতি ও সাফল্যের খতিয়ান।


লেখক : বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা

তথ্যসূত্র :  তঞ্চঙ্গ্যা পরিচিতি , তঞ্চঙ্গ্যা মহা সম্মেলন ১৯৯৫ ইং

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা