icon

তঞ্চঙ্গ্যা রূপকথা: সুন্দরী কলাথোর কন্যা

Jumjournal

Last updated Apr 30th, 2020 icon 1033

রাঙাধনের বয়স দেখতে দেখতে চৌদ্দ-পনেরো বছর হয়ে গেল। তার বাবা নেই, ভাই-বোন নেই।

বিধবা মা সনামালা আরাকান থেকে রাঙাধনকে নিয়ে ভাইয়ের কাছে চলে আসে। সনামালার ভাইয়া পাহাড়ে জুম চাষ করত।

তখন পাহাড়ে বড় বড় গাছের ফাঁকে ফাঁকে প্রচুর পাহাড়ি কলার বন ছিল।

সনামালার ভাইয়েরা জঙ্গল কেটে, আগুনে পুড়িয়ে জুম ক্ষেত তৈরি করত। সনামালা ও ছেলে রাঙাধন আধাপোড়া জঙ্গল সাফ করে জুমক্ষেত তৈরি করত।

তারপর তারা ধান বুনত। অন্যান্য ফসলের বীজও বুনত। ধান পাকলে ধান ঘরে তুলত। তরকারি, লতাপাতা, সুতা ও তিল সগ্রহ করত।

রাঙাধন কোনো কোনো দিন কলাগাছ কেটে সুন্দর সুন্দর কলার থোর সগ্রহ করত।

ফাল্গুন মাসের একদিন রাঙাধন মামাদের সঙ্গে জুম কাটতে গিয়েছে। কাজ করতে করতে রাঙাধন একসময় পাহাড়ের একেবারে শেষ দিকে চলে যায়।

ওখানে কলার থোর সগ্রহের জন্যে কলা গাছ কাটতে থাকে। তিন চারটা কলাগাছ কাটার পর কলা গাছের ঝোপ থেকে একটি মেয়ের গলা শোনা যায়।

মেয়েটি বলছে, রাঙাধন কলাগাছ কেটে তুমি আমার থাকবার জায়গাটি নষ্ট করে দিলে? রাঙাধন তাকিয়ে দেখে সুন্দরী এক নারী।

তার পরনের পিননটি কলাগাছের কচি পাতার মতো সবুজ, নরম আর সুন্দর। রাঙাধন মেয়েটিকে প্রশ্ন করল, আমি তোমাকে চিনতে পারছি না।

তুমি কে? তুমি আমাকে চিনলে কী করে? মেয়েটি নরম গলায় উত্তর দিল, আমি কলাথোর কন্যা। আরাকানে আমার বাড়ি।

তোমরা এখানে আসার সময় আমার বাড়ির সামনে দিয়ে এসেছ। তুমি আমার থাকবার জায়গা নষ্ট করে দিয়েছ।

আমাকে এখন তোমার সঙ্গে ঘরে নিয়ে যাও। রাঙাধন কলাথোর কন্যাকে ঘরে নিয়ে আসে। রাঙাধনের মামারা তখন দুপুরে খাওয়ার জন্য ঘরে এসেছে।

তাদের দেখে কলাথোর কন্যা ঘরে না ঢুকে কলাগাছের ঝোপে লুকিয়ে থাকে। রাঙাধনের ছোট মামা খোলারাম কলাথোর কন্যাকে দেখে ফেলে।

সে মেয়েটিকে এক পলক দেখেই অবাক হয়। সে এখনো বিয়ে করেনি। ভাগিনা রাঙাধন কলাথোর কন্যাকে বিয়ে করেছে শুনে দুঃখ ও অভিমানে সে আর ভাত খায় না।

রাঙাধনের মা সনামালা ছোট ভাই খোলারামকে বোঝায়। খোলারাম শেষ পর্যন্ত জেদ ধরে ভাগিনা বউ কলাথোর কন্যা যদি আমাকে ভাত বেড়ে দেয় তবেই খাব।

এদিকে কলাথোর কন্যা কলাগাছের ঝোপ থেকে বের হয় না। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। আকাশে তারা ওঠে।

লোকজন দেখা যায় না। সেই মুহূর্তে কলাথোর কন্যা ঝোপ থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে।

রাঙাধনের অনুরোধে লাথোর কন্যা ভাতের থালা এনে মামা খোলারামের সামনে রাখে। তারপর সনামালার অনুরোধে খোলারাম ভাতের থালায় হাত দেয়।

সেই রীতির প্রচলন এখনও আছে। মামা তার ভাগিনা বউকে সর্বপ্রথম যেদিন দেখে, সেদিন আকাশে তারা না ওঠা পর্যন্ত ভাত খেতে পারে না।

রূপকথাটি পারমিতা তঞ্চঙ্গ্যা কর্তৃক বর্ণিত

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।
RSS
Follow by Email
Facebook
Twitter

আরও কিছু লেখা

Leave a Reply