তঞ্চঙ্গ্যা রূপকথা: এক বুড়ার গল্প
1320
অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে এক বুড়ো আর এক বুড়ী থাকত।
বুড়োটি ছিল ভারী বোকা। একদিন বুড়োটি মাছ ধরতে গেল।
অনেক্ষণ মাছ ধরার পর একসময় সে বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিল। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেল।
এক গাছের নীচে বিশ্রামের জন্য বসে পড়তেই একটি বক দেখতে পেল। বকটিকে ডেকে বলল, “বক ভায়া, আমার মাছের থলেটি তুমি নিয়ে আমার গিন্নিকে দিয়ে দিও।
আর বলবে, খুব তাড়াতাড়ি রান্না করতে।” এই বলে মাছের থলেটি বকটিকে দিয়ে দিল। আর বকটি মাছের থলেটি নিয়ে উড়ে চলে গেল।
বুড়োটি বাড়ী পৌঁছে গিন্নীকে বলল, “তাড়াতাড়ি খেতে দাও। ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে।” বুড়ী বলল, “খাবে কি দিয়ে শুনি ?
মাছ ধরতে গেলে অথচ মাছতো আনতে পারলে না।” বুড়ো অবাক হয়ে বলল, “সেকি! আমি বকটির হাতে মাছ পাঠিয়েছি, তুমি পাওনি?”
বুড়ী এবার। রেগে গিয়ে বলল, “মাছ পাঠাবার আর কাউকে পাওনি, শেষ পর্যন্ত বকটির হাতে দিয়ে দিলে।#
এতক্ষণে মাছগুলি সব খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে।”
একথা শুনে বুড়ো ভীষণভাবে রেগে গেল। “কি ? বকটি আমার মাছ খেয়ে ফেলেছে।
আমার সাথে চালাকি। ওকে আজ আমি উচিৎ শিক্ষা দিয়ে তবেই ছেড়ে দেব।” একথা বলে একটি মুগুর হাতে নিয়ে বকটির খোঁজে বের হল।
পথের ধারে বেশ এলাকা জুড়ে ব্যাঙের ছাতা গজিয়েছিল। বুড়োটি তা দেখে আপন মনে বলল, এইতো বকটিকে পেয়েছি।
ব্যাঙের ছাতাকে বক ভেবে সে ভীষণভাবে পিটাতে আরম্ভ করল। শেষ পর্যন্ত গুঁড়ো করে ফেলল।
তারপর সেগুলিকে থলেতে পুরে বাড়ীতে ফিরে এল। – বুড়ী ব্যাঙের ছাতাগুলি দেখে বলল, “ওহে বুড়ো, এতো বক না, এগুলি হল ব্যাঙের ছাতা।
এগুলিকে খুব আস্তে আস্তে ধরে উপড়াতে হয়, তারপর রান্না করে খাওয়া যায়।” বুড়ী ভাল কিছু ব্যাঙের ছাতা এনে দেয়ার জন্য বুড়োকে বায়না ধরল।
বুড়োটি অগত্যা আবার ব্যাঙের ছাতা আনতে বের হল। পূর্বের জায়গাটিতে পৌছে ব্যাঙের ছাতার খোঁজ করতে লাগল।
এমন সময় ব্যাঙের ছাতা ভেবে একটি মৌচাকে চিমটি দিল। অমনি ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি বুড়োকে হুল ফুটিয়ে দিতে লাগল।
বুড়ো যন্ত্রণায় দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত বাড়ী পৌছাল কিম্ভুতকিমাকার হয়ে। যন্ত্রণায় বুড়ো কান্নাকাটি করতে লাগল।
তারপর বুড়ী সযত্নে বুড়োকে ঔষধ মালিশ করে দিতে দিতে বলল, “ঐগুলি মৌমাছি। মৌচাকে আগুন দিয়ে। মৌমাছিগুলোকে তাড়িয়ে তারপর মধু পাওয়া যায়।”
পরদিন কোনভাবে সুস্থ হয়ে বুড়ো মধু সংগ্রহ করতে বের হল। পূর্বের জায়গায় পৌঁছে।
মৌচাক খুঁজতে লাগল। ঐ জায়গাটিতে একটি হরিণ দাঁড়িয়ে ছিল। বুড়োটি হরিণের পশ্চাৎদেশ। দেখে মৌচাক ভেবে বসল।
সে মশালে আগুন জ্বালিয়ে হরিণের পাছায় আগুন লাগিয়ে দিল। হরিণটি ভয়ে আর্তচিৎকার করে এক লাফে পালিয়ে গেল।
বুড়ো বাড়ী ফিরে বুড়ীকে ঘটনা খুলে বলল, বুড়ী তা শুনে বলল, “নিশ্চয় এটা হরিণ হবে। হরিণকে শিকার করে বধ করতে হয়।
জানো, হরিণের মাংস খুব সুস্বাদু।” একথা শুনে বুড়োর হরিণের গোস্ত খাওয়ার লোভ হল।
পরদিন হরিণ শিকারে বের হল। পূর্ববর্তী স্থানে পৌঁছে বুড়ো হরিণ খুঁজতে লাগল ।
ঠিক ঐ জায়গাটিতে এক সন্যাসী বসে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। বুড়ো ঐ সন্যাসীর পরনের লাল কাপড় দেখে হরিণ ভেবে আপন মনে বলল, “ব্যাটা কালকে পালিয়েছিলে, আজ কোথায় যাবে।”
এই ভেবে ঝোপকে আড়াল করে চুপি চুপি গিয়ে দিল এক কোপ। এক কোপেই সন্যাসী মারা পড়ল।
তারপর বুড়ো তাকে কাঁধে করে বয়ে বাড়ী নিয়ে গেল। বুড়ীর কাছে গিয়ে বলল, “এই নাও হরিণ।”
বুড়ী ঐ সন্যাসীর মৃতদেহ দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল, “হায়! একি করলে।
এতো সন্যাসী বাবাকে মেরে আনলে গো। কতো লোকে পূজা করে আর তুমি তাকে মেরে ফেললে।”
একথা শুনে বুড়োর মনও ব্যথিত হলো। সেও কাঁদতে লাগল। বুড়ো অনুশোচনায় পুড়তে লাগল।
পরদিন তার কৃত কর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা উদ্দেশ্যে পূজার উপকরণ নিয়ে পথে বের হল।
যেতে যেতে পূর্বের ঐ স্থানে পৌছাল । ঐখানে একটি বাঘ বসে বসে ঝিমুচ্ছিল। বুড়ো বাঘটিকে দেখে ভাবল, “এ নিশ্চয় সন্যাসী বাবা।
আমি আজ মাফ চেয়ে নেব। ভীষণ অপরাধ করে ফেলেছি।” তারপর পূজার উপকরণসমূহ বাঘের পায়ে রেখে নমস্কার করতে লাগল।
বাঘটি তাকে দেখে ভীষণভাবে রেগে হুংকার ছাড়ল। বুড়ো ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “বাবা, আমি জানি আপনি রাগ করেছেন।
তাই আপনাকে পূজা দিয়ে আজ আমি আমার অপরাধের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করছি।”
এবার বাঘটি আরও রেগে গিয়ে থাবা দিয়ে বুড়োটির ঘাড় মটকে দিল। সঙ্গে সঙ্গে বুড়োটি মরে গেল।
লেখক: রবিন তঞ্চঙ্গ্যা
চিত্রায়নঃ তনময় চাকমা
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।