আদিবাসী ত্রিপুরা মুক্তিযোদ্ধা
958
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা জাতির আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে এই লেখাটিতে।
কোম্পানি কমান্ডার হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা
১৯৭১ সালে রামগড় ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম মহকুমা সদর এবং এই এলাকার ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য ট্রেনিং গ্রহণের ব্যাপারে যারা উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ি এবং ২ মে রামগড় মহকুমা সদর এলাকা দখল করে। দখলের পর তারা রামগড়, গুইমারা, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে আদিবাসী বহু রমণীকে জোর করে ধরে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণের পর উলঙ্গ অবস্থায় বন্দি করে রাখে।
এই অবস্থায় তারা রমণীদের ক্যাম্প সংলগ্ন ফেনী নদীতে গোসল করতে নিয়ে যেত। এ দৃশ্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম থেকে বেশ কয়েকদিনব্যাপী প্রত্যক্ষ করা গেছে।
ওপার থেকে জনতা চিৎকার করে প্রতিবাদ জানালে তাদেরকে নদীতে নামানো বন্ধ হয়। হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা রামগড় পতনের পর ২৫ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে ভারতের হরিণা ক্যাম্পে যান।
সেখানে যাওয়ার পর ৪০ জনের একটি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত করে তাকে ভারতে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অম্পিনগরে প্রেরণ করা হয়। সেখানে ২ মাস গেরিলা আক্রমণের কলাকৌশলসহ রাইফেল, এসএলআর, এসএমজি, এলএমজি, হ্যান্ড গ্রেনেড, হাই এক্সপ্লোসিভ এবং কমান্ডো ট্রেনিং গ্রহণ করেন।
রাতের অন্ধকারে তাঁদের টার্গেট প্র্যাকটিস দেয়া হয়। প্রশিক্ষণশেষে জুলাই মাসে রামগড় মহকুমার সব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একত্র করে বেশ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত করে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়।
উক্ত কোম্পানির অধিনায়ক করে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার অভ্যন্তরে, গেরিলা অপারেশন এবং পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের নির্দেশ দেয়া হয়। ১ নং সেক্টরের অধীনে হরিণা থেকে ৩০ কি. মি. দূরবর্তী সীমান্ত এলাকা ভারতের বৈষ্ণবপুরে একাত্তরের আগস্ট মাসের প্রথমদিকে সাব-সেক্টর স্থাপন করা হয়।
সেখানে অবস্থানরত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় গেরিলা আক্রমণ পরিচালনার জন্য হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরাকে কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
প্রায় সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা ছিল তাঁর অপারেশন ক্ষেত্র। ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিপুরা রাজ্যের বৈষ্ণবপুর ও বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকা রামগড় মহকুমা হয়ে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলে নিরাপদে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব কমান্ডার হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা পালন করেন।
যার ফলে, হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে যেমন হরিণা, উদয়পুর, আগরতলা, অম্পিনগর, শলিছড়ি, দেমাগ্রী ইত্যাদি ট্রেনিং সেন্টার থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ শেষে সক্রিয়ভাবে নিজ নিজ এলাকায় অপারেশন পরিচালনার জন্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম মহকুমার বৈষ্ণবপুর সাব-সেক্টর হয়ে রামগড় সীমান্ত অতিক্রম করে চট্টগ্রাম, বক্সবাজার, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ অন্যান্য অঞ্চলে গোপনভাবে ও নিরাপদে পারাপারে সক্ষম হন।
এই কাজে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা কোম্পানির গেরিলা বাহিনী ও রামগড় মহকুমার আদিবাসী হেডম্যান কার্বারীসহ আদিবাসী যুবকগণ সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলাযুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে কমান্ডার হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরার নেতৃত্বে নাকাপা, কুমারীপাড়া, পাগলাপাড়া, মানিকছড়ি, ডাইনছড়ি, যোগ্যছলা ও গাড়িটানা এলাকার গহীন অরণ্যে গোপন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।
এই গেরিলা ক্যাম্পগুলোতে ঐ এলাকার আদিবাসী হেডম্যান কারবারীসহ সকল স্তরের জনগণ খাদ্যশস্য সরবরাহ করেছিলেন। এখান থেকে পাকবাহিনীর গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করে পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ এবং গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করা হতো।
কোম্পানি কমান্ডার হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা প্রথম গেরিলা অপারেশন করেন ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখ রামগড় নাকাপা এলাকায়, তিনি বাংলাদেশ এফএফ ফোর্স গ্রুপ নম্বর ৯১-এর ১৬ জন সদস্য নিয়ে রামগড়ে পাকবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের বিভিন্ন অবস্থান রেকি করেন এবং উক্ত এলাকায় গেরিলাযুদ্ধ পরিচালনা করেন।
এখানে তিনি পাকবাহিনীর একজন সহযোগীকে আটক করেন। সেই পাক সহযোগিকে হরিণা ক্যাম্পে সোপর্দ করা হয় বিচারের জন্য। এই অপারেশনে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরার সহযোগী যোদ্ধারা হচ্ছেন রঞ্জিত দেববর্মণ, সমরকৃষ্ণ চক্রবর্তী, ধীমান কান্তি বড়ুয়া, ভুবন ত্রিপুরা, নীলা মোহন ত্রিপুরা প্রমুখ।
১৯৭১ সালের ১৩ আগস্ট পুরো এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাসহ হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা রামগড়ে পাকবাহিনীর সদর দপ্তরে আক্রমণ পরিচালনা করেন। এখানে প্রায় ১ ঘণ্টা পাকবাহিনীর অবস্থানের ওপর গুলিবর্ষণ করে পাকবাহিনীকে ভীত ও সন্ত্রস্ত করেন।
এই অপারেশনে এলএমজি, এসএলআর, এসএমজি এবং রাইফেল ব্যবহার করা হয়। এই অপারেশনে আরো ছিলো; মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা, রণজিৎ দেব বর্মণ, সমর চক্রবর্তী, ধীমান বড়য়া, ভুবন ত্রিপুরা, নীলা মোহন ত্রিপুরা প্রমুখ।
বৈষ্ণবপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের পাশ থেকে দুজন গুপ্তচরকে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ গ্রেফ্তার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করে এই দুজনকে হরিণা ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়।
১০ সেপ্টেম্বর মানিকছড়ি থানার অন্তর্গত ডাইনছডির চেম্প্রপাড়া এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ১২ জনের এক দুর্ধর্ষ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা দল নিয়ে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা সেখানে আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে ১টি এলএমজি, ১০টি এসএলআর, বেশকিছু হ্যান্ড গ্রেনেড ও গুলি এবং তার এসএমজি ব্যবহার করেন।
মানিকছড়ি রাজবাড়ি পাকবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি এবং হেডকোয়ার্টার ছিল। পাকবাহিনীর অবস্থানকে রেকী করার জন্য ২ জন যোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এগিয়ে গেলেন এবং দূর থেকে দেখলেন মারমা গ্রামে পাকবাহিনীরা পজিশন নিচ্ছে।
হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা আরো দেখলেন যে, পাকবাহিনীরা তাদের খুব কাছাকাছি ৫০ গজের মধ্যে এসে পড়েছে । তিনি এবং তাঁর সহযোদ্ধারা দেরি করে অটোমেটিক এসএমজি, এলএমজি একসাথে ওপেন করেন এবং অনবরত গুলি বর্ষণ করতে লাগলেন।
পাকবাহিনী ৫০-৬০ জনের একটি বৃহৎ বাহিনী এবং তাদের কমান্ডার ক্যাপটেন ছিল ঘোড়ায় চড়া। তাদের সাথে অস্ত্রশস্ত্র ছিল মর্টার, এলএমজি, অটোমেটিক চায়নিজ রাইফেল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ব্রাশ ফায়ারের সাথে সাথে ক্যাপ্টেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিচে পড়ে যায় এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা মরিয়া হয়ে ওপার থেকে গুলি বর্ষণ ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে।
একটি গোলা হেমা রঞ্জন ত্রিপুরার এক হাতের ব্যবধানে এসে পড়ে। তবে জায়গাটা সঁতসেঁতে ছিল বলে তা বিস্ফোরিত হয়নি। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে যান।
সেদিন প্রায় আধাঘণ্টা পাহাড়ের পাদদেশে এবং পাহাড়ের ওপর থেকে পাকবাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ করে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ১২ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে খতম করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে হিট অ্যান্ড রান গেরিলা পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। এবং এমুনিশান প্রায় শেষ হওয়ার পূর্বেই সেই স্থান ত্যাগ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ হতাহত হয়নি।
অতঃপর পাকবাহিনীরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে মারমা গ্রামে আগুন ধরিয়ে গ্রামটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে। সেখানে প্রায় ১০০ মারমা পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।
হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা আশ্রয়হীন আদিবাসীদের সেইদিন রাতেই ভারতের আশ্রয় শিবিরে নিয়ে আসেন এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। অতঃপর ১ নম্বর সেক্টর সদর দপ্তর ভারতের হরিণা ক্যাম্পে লিখিতভাবে অপারেশনের বিবরণ দাখিল করেন।
নাকাপা ব্রিজের টিলার উপর রোড ডিভিশনের একটা ছোট্ট বাংলোতে পাকবাহিনী ক্যাম্প খুলেছিল। কিছুটা দূরে গুইমারাতে পাকবাহিনীর একটা হেডকোয়ার্টার ছিল।
নাকাপা পাক আর্মি ক্যাম্পটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিপজ্জনক ছিল বিধায় হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা এই ক্যাম্পটি আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ২০ জনের একটি দল গেরিলা প্রশিক্ষণের জনারামগড়ে নাকাপা এলাকা অতিক্রম করে ভারতের বৈষ্ণবপুর সাব-সেক্টরের দিকে এগিয়ে আসার সময় পাকবাহিনী তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে তাদের ৫ জন আহত হন। হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা তাদের চিকিৎসার জন্য ভারতের বিএসএফ-এর কাছে নিয়ে যান এবং এই ঘটনার কয়েকদিন পরেই ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি গ্রুপ নিয়ে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা নাকাপা পাক আর্মি ক্যাম্প আক্রমণ করেন।
তিনি পাগলাপাড়া গোপন ক্যাম্প হয়ে অগ্রসর হন। সেখান থেকে ভারতে গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে আসা ৮-১০ জনকে সাথে নিয়ে নেন।
সেদিন সূর্য ডুবার পূর্বেই নাকাপা আর্মি ক্যাম্পের কাছে এসে ক্যাম্প লক্ষ্য করে কয়েকটি ব্রাশফায়ার করেন। পরের দিনই পাকবাহিনীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে স্থানটি ত্যাগ করে।
অক্টোবর মাসের ৭ তারিখ যোগ্যছলা এলাকাতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা একটি সম্মুখযুদ্ধ পরিচালনা করেন। এই এলাকায় গুপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
৭ তারিখ সকাল ৮টার সময় হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা ইনফরমারের মাধ্যমে জানতে পারেন প্রায় ৫০-৬০ জনের একটি বিরাট পাকবাহিনীর দল যোগ্যছলা এলাকার দিকে এগিয়ে আসছে। এই সংবাদের সঙ্গে সঙ্গে হেমা রঞ্জন ত্রিপুরা তার সঙ্গীদের নিজ নিজ অস্ত্র নিয়ে পজিশন নিতে নির্দেশ দেন এবং কে কোথায় পজিশন নিবে তা দেখিয়ে দেন।
এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা লাইট মেশিনগান, এসএমজি, এসএলআর, রাইফেল এবং হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেন। টিলা থেকে তিনি দেখছিলেন শত্রুপক্ষ লম্বা লাইন ধরে এগিয়ে আসছে, সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাশ ফায়ার করেন, প্রায় ২০ মিনিট গোলাগুলি বিনিময়ের পর ৯ জন পাকসেনা খতম হয়।
বাকিরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ হতাহত হয়নি। একাত্তরের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ক্যাপ্টেন মাহফুজের নেতৃত্বে রামগড় মহামুনি এলাকায় এক সফল গেরিলা অপারেশনে ১ জন কর্নেলসহ ১৭ জন পাকসেনাকে হত্যা করা হয়।
এই অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা মর্টার ব্যবহার করেন। হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরার নেতৃত্বাধীন কোম্পানির রামগড় এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিত ত্রিপুরা ও রাজেন্দ্র ত্রিপুরা এ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখে যোগ্যছলা থেকে ৩ কিমি দূরবর্তী গুপ্তকেন্দ্র গাড়িটানা নামক স্থানে ৪০ জনের ওপর একটি মুক্তিযোদ্ধার দল দিয়ে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা পাকবাহিনীর উপর সুপরিকল্পিতভাবে আক্রমণ প্রতিহত করেন।
সেদিন ভোর ৪টার দিকে পাকবাহিনীর গুলির শব্দ যেখান থেকে আসছিল ঠিক সেই দিকে তাক করে মুক্তিযোদ্ধারা একটানা এলএমজি চালান। কিছুক্ষণ পর ওপারের গোলাগুলির শব্দ বন্ধ হলে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুবাহিনীর দিকে অগ্রসর হন।
সেখানে যেয়ে দেখেন পাকবাহিনী সরে পড়েছে। তবে এই যুদ্ধের পর ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার হদিস পরবর্তীকালে পাওয়া যায়নি।
১৯৭১ সালের ৬ এবং ৭ ডিসেম্বর রামগড়ে পাকবাহিনীর অবস্থানে যৌথবাহিনীর পক্ষে বিমান আক্রমণ চালানো হয়। পাকবাহিনী রামগড় হেডকোয়াটার ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং ৮ ডিসেম্বর বিকাল ৪টার দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে রামগড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ানো হয়।
পুরো ৭ মাস ৬ দিন রামগড় হানাদার বাহিনীর অধিকারে ছিল। পাকবাহিনী রামগড় হেডকোয়াটার ছেড়ে যাবার পূর্বে পুরো বর্ডার এরিয়া এবং বিভিন্ন জায়গায় এন্টি পার্সোনাল মাইন পুঁতে রেখে যায়।
এগুলোর বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন রামগড়বাসী পঙ্গুত্ববরণ করেন। হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা তার সংগ্রামী সাথীদের নিয়ে পুঁতে রাখা এন্টিপার্সোনাল মাইনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করার দায়িত্ব পালন করেন এবং যুদ্ধ-উত্তর পূনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বর্তমানে তিনি রাঙামাটিতে জেলা তথ্য অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
রণ বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা
আদিবাসী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। পিতার নামঃ বরেন ত্রিপুরা। জন্ম ১৯৫১ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড়ে।
শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন রাঙামাটি জেলায়। রাঙামাটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন এবং রাঙামাটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যয়নকালে যোগ দেন ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে।
শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে ঘর ছাড়েন কিশোর রণ বিক্রম। দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আর ঘরে ফেরেন নি তিনি। ৭ মার্চের ভাষণের পর রণ বিক্রম পার্বত্য চট্টগ্রামের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সেন্টারে যোগ দেন।
২৫ মার্চের সেই ঘৃণিত হত্যাষজ্ঞের কালো রাতে তিনি পুলিশ বাহিনীর সাথে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টিতে অংশ নেন। এরপর রাঙামাটিতে পাকিস্তানিরা প্রবেশ করলে তিনি তাঁর দলের সাথে পথে পথে যুদ্ধ করতে করতে চলে যান খাগড়াছড়িতে। এখান থেকে এক গ্রুপ মাটিরাঙা হয়ে রামগড় এবং অন্য গ্রুপ মহালছড়ি হয়ে রামগড় যায়।
সে সময় মহালছড়ি ও বুড়িঘাটে পাক বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় । বুড়িঘাটের সেই যুদ্ধেই শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন।
অন্যদিকে, মহালছড়িতে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী মিজো বাহিনীর আক্রমণে শহীদ হন ক্যাপ্টেন আবদুল কাদির। এরপর পাকিস্তানিদের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় রামগড়ে।
রামগড়ের যুদ্ধ শেষে রণ বিক্রম প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে রামগড় হয়ে ভারতের সাব্রুম-এ যান। সেখান থেকে ১৯-২০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে মে মাসের প্রথমদিকে ফিরে আসেন বাংলাদেশে।
দেশে ফিরে অংশ নেন পাতাছড়ি, সোনাইপুর, যুগাছোলা, গাড়িটানাসহ বেশ কয়েকটি অপারেশনে। অপারেশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যুগাছোলা অপারেশন।
পাক বাহিনীর আক্রমণে তিনি সেদিন ১ জন সহযোদ্ধা হারিয়েছিলেন। তবে সেই অপারেশনে পাকসেনাদের ২০-২৫ জন নিহত হয়েছিল। এরপর গোলা-বারুদ আনার জন্যে পুনরায় ভারতে গেলে দেখা হয় আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান, এম এ মান্নান, এস এম ইউসুফের সঙ্গে। তারা রণ বিক্রমকে শরণার্থী শিবির থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহের জন্যে রিক্রুটিং অফিসারের দায়িত্ব দেন। এ দায়িত্ব নিয়ে তিনি শরণার্থী শিবিরগুলো ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেন কয়েকশত ছাত্র ও যুবক।
এদেরকে তিনি প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্যে নিয়ে যান অলিনগর কাম্পে। কিছুদিন পর নতুন আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে চলে আসেন গাড়িটানা ক্যাম্পে।
তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে আবার ভারতে যান। সেখানকার দেরাদুনে দেড়মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। তখন ডিসেম্বর মাসের প্রথম পর্যায়।
ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তায় পাকিস্তানিরা তখন কোণঠাসা। রণ বিক্রম তাঁর দল নিয়ে রামগড় থেকে হিয়াকু পর্যন্ত পাকবাহিনীর পেছনে অবস্থান নেন। একের পর এক অঞ্চল শত্রুমুক্ত করতে থাকে তার দল।
বিজয়ের সন্ধিক্ষণে ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর তারা মুক্ত করেন মানিকছড়ি ও গাড়িটানা, অঞ্চল। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ঘোষণার পরও তারা বিকেল পর্যন্ত পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে মুক্ত করেছিলেন মানিকছড়ি।
যুদ্ধ শেষে ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখে রাঙামাটিতে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন তিনি। রণ বিক্রমের পিতা বরেন ত্রিপুরা ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তাঁর বোনের স্বামীও এ সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেই অস্থির দিনগুলোতে। এছাড়াও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।
স্বাধীনতা-উত্তর সময় রণ বিক্রম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু খুন হলে তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারাবরণ করেন।
শিকার হন জেলখানায় অমানুষিক নির্যাতনের। জিয়ার সামরিক শাসনের সময়ে টর্চারিং সেলে চট্টগ্রামে ২১ দিন এবং ঢাকায় ২ মাস বন্দি অবস্থায় তার উপর করা হয় অকথ্য অত্যাচার।
এরপর বিশেষ ক্ষমতা আইনে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে ঢাকায় সেন্ট্রাল জেলে বন্দি থাকেন। সে সময়ে হাইকোর্টে রিট করে ২ বছর ৮ মাস আটক থাকার পর মুক্তিলাভ করেন।
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও দীর্ঘ তিন বছর নিজ এলাকায় অবস্থান করতে দেয়া হয়নি রণ বিক্রমকে। এরপর দীর্ঘদিন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর জীবিকা হিসেবে বেছে নেন ঠিকাদারি পেশা।
এখনো তিনি এই পেশায় নিয়োজিত। ৫ সন্তানের জনক রণ বিক্রম ত্রিপুরা স্বাধীনতার ৩৬ বছর পরেও পাননি স্বাধীনতার প্রকৃত আস্বাদ।
আক্ষেপের সুরে তাঁকে আজ বলতে হয় একটি মানব সন্তান জন্মানোর জন্যেও ১০ মাস সময় লাগে। আর পুরো এই দেশটা স্বাধীন হয়েছে মাত্র ৯ মাস সময়ে। তাই আমরা এর মর্যাদা বুঝতে পারছি না। যাচ্ছেতাইভাবে এর ব্যবহার করে যাচ্ছি।
কারণে-অকারণে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রহসনের খেলা চলেছে। কখনো কখনো বক্তৃতার ছলে তাঁদের নামের সাথে বসিয়েছে বিশেষণের পর বিশেষণ। অথচ খোঁজ নেয়নি তাদের পেট চলে কি না।
বছরান্তে স্বাধীনতা সম্পৃক্ত অনুষ্ঠানগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের আজ শো-পিস হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং কখনো কখনো তাঁদের গায়ে একটি গেঞ্জি পরিয়ে ডিসি-এসপিদের যৌথ সালাম দেওয়ায়।
ছি! এটা ভাবতেই লজ্জা হয় যে, স্বাধীনতা না পেলে ঐ ডিসি-এসপিরা বড়োজোর কোনো অফিসের কেরানি হতে পারত। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মহান মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন দলের ব্যানারে ব্যবহার করে।
এটা পুরোপুরি অন্যায়। কেননা, মুক্তিযোদ্ধারা কোনো দলের নয়, তারা সমস্ত দেশের, সকল জনগণের। আরও দুঃখজনক বিষয় হল- যে পতাকার জন্যে একদিন নিজামীদের রক্ত নিতে চেয়েছি, সেই নিজামীরা আমার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা নিয়ে চলাফেরা করে। সদম্ভে ঘুরে বেড়ায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের এখনো বিচার হয়। আর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় না। বরং ওরাই এখন বিচারকের আসনে। বঙ্গবন্ধুকে খুন করার মাধ্যমে তারা বৈধতা নিয়ে নেয়, যাচ্ছেতাইভাবে দেশটা শোষণ করার।
সেই শোষণের অন্যতম লক্ষণ এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতন করা। এভাবেই দেশকে করেছে মেধাহীন।
আজও তার প্রবর্তিত ধারা সগৌরবে বয়ে চলেছে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও এদেশে প্রতিনিয়ত ক্ষুন্ন করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্ত অধিকার। আমি পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদসা ছিলাম দীর্ঘদিন।
আমার ছোট ভাই পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি। অথচ আমার নিজস্ব রোজগার করা জমিতে অন্যায়ভাবে দখল নিয়ে বাড়ি করে ভাড়া দিয়েছে কতিপয় প্রভাবশালী। যেখানে আমার মতো একজন মুক্তিযোদ্ধার এই অবস্থা হতে পারে, সেখানে সাধারণ এবং অতিসাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কী অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
তবে, একটি আশার কথা ইদানীং শোনা যাচ্ছে যে, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যক্রমে দুর্নীতি বিষয়ক পাঠ সংযোজন করা হচ্ছে। এটা একটা বিপ্লব। তবে স্বাধীনতা রক্ষা করা অন্তহীন বিপ্লবের মতন।
আশা করছি, অচিরেই পাঠক্রমে আমাদের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি তা হয়, তবেই সম্ভব আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে দেশের পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন।
প্ৰীতকান্তি ত্রিপুরা
হিন্দু ধর্মাবলম্বী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এক আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রীতিকান্তি ত্রিপুরা। তাঁর পিতা সত্য বিলাস ত্রিপুরা, মাতা বনদেবী ত্রিপুরা। জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং স্থায়ী নিবাস রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সদর থানার গর্জনতলী গামে।
১৯৭১ সালে প্রীতিকান্তি রাঙামাটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত হন শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ থেকে। তাঁর মতে, এরপর আর স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
এরপর তিনি রাঙামাটি থেকে চলে যান বান্দরবনে। সেখানে গিয়ে এপ্রিলের প্রথমদিকে গঠন করেন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ।
প্রাথমিকভাবে এই পরিষদের কার্যক্রম নির্দিষ্ট হয়। কালুরঘাট ব্রিজে যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর খাবার সরবরাহের। এরপর যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে ঐ স্থানের মুক্তিযোদ্ধারা কালুরঘাট এলাকা থেকে পশ্চাদপসরণ করে চলে আসে বান্দরবানে।
এই পিছু হটায় মনোবল ভেঙে যায় প্রীতিকান্তির সংগ্রাম পরিষদের। মে মাসের প্রথমদিকে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে রুমা হয়ে চলে যান ভারতের দেমাগ্রীতে।
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেবার কালে দেখা পান স্থানীয় কয়েকজনের। তাদের সাথে দেমাগ্রী ট্রেনিং ক্যাম্পে মাসখানেক প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ৪০ জনের একটি দল দলীয় কমান্ডার আবদুল ওহাবের নেতৃত্বে বাংলাদেশে চলে আসেন।
দেশে অবস্থান নেওয়ার প্রথম পর্যায়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন সীতাকুণ্ড ওয়ারলেস টাওয়ার উড়িয়ে দেওয়ার। এ লক্ষ্যে তারা ১২ জুলাই রুমায় পৌছেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলাপ করে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তা দলের অনুকূল না হওয়ায় রওনা দেন বান্দরবানের দিকে।
পথিমধ্যে জলপথে তাদের সংঘর্ষ হয় রাজাকারদের সাথে। এদের এ্যামবুশে এই সময় সঞ্জিব চাকমাসহ ২ জন সহযোদ্ধা হারান প্রীতিকান্তি। আর তিনি নিজেকে রক্ষা করেন নদীতে ঝাপ দিয়ে।
সৌভাগ্যক্রমে নদী তীরে উঠে দেখা পান ৪ জন সহযোদ্ধার। এরপর তারা গোপনে পায়ে হেঁটে চলে যান দোপাছড়ি এলাকায়। সেখানে দল নিয়ে অবস্থান করছিলেন তৎকালীন বান্দরবান আওয়ামী লীগ নেতা মোখলেসুর রহমান।
প্রীতিকান্তি এরপর এই দলের সাথে যোগ দিয়ে অংশগ্রহণ করেন পরবর্তী বেশ কয়েকটি অপারেশনে।
অস্থির সেই সময় থেমে আসে, স্বাধীন হয় দেশ। স্বাধীনতার পর ২২ ডিসেম্বর প্রীতিকান্তি ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে তিনি ইন্টারমিডিয়েট এবং স্নাতক পাস করে প্রবেশ করেন কর্মজীবনে। বর্তমানে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে আজও বাংলাদেশের অনুন্নত দুর্দশা ব্যথিত করে মুক্তিযোদ্ধা প্রীতিকান্তি ত্রিপুরাকে। তাঁর মতে, দেশের এই করুণ অবস্থার জন্য দায়ী এদেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা।
অবিবেচক ও নীতিহীন নেতৃত্বকেও দায়ী করেন তিনি এজন্যে। তার মতে, যারাই ভার নেয় দেশ রক্ষার, তারাই শেষ পর্যন্ত ভক্ষকের ভূমিকা নেয়। এজন্যই দেশ আজ কঙ্কালসার।
মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্দশা, রাজাকারদের উন্নতাবস্থাও এই কারণে। এই দেশের জন্যে এত রক্ত, এত ত্যাগ স্বীকার করেন প্রীতিকান্তি।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।