ত্রিপুরা রূপকথা: নির্বোধের কাহিনী

Jumjournal
Last updated Apr 30th, 2020

876

featured image

বহুদিন আগেকার কথা। পিলেহা নামে একজন নয়নমণি গ্রামে বাস করতো।

তার স্ত্রীর নাম খেলাংতি। তাদের দশ বছরের বিবাহে কোন সন্তান আসেনি। এটাই তাদের দুঃখ । পিলেহা নির্বোধ ছিল।

গ্রামবাসীরা মাঝে মাঝে তাকে ঠাট্টা-তামাসা করে বলতো, বন্ধ্যা স্ত্রীকে নিয়ে দশ বছরেও কোন সন্তান পাওনি। লোকের কথা শুনে খুব কষ্ট হত ওর মনে।

স্ত্রী স্বামীর তুলনায় বুদ্ধিমতি। স্বামীকে নির্বোধ জেনে সান্ত্বনা দেয়। বিভিন্ন কায়দা কৌশলে ভুলিয়ে রাখে।

ওগো, আমি যে বন্ধ্যা এটা ঠিক নয়। আমার গর্ভে শীঘ্রই সন্তান আসবে যদি তুমি গােমতী নদী মাতার কাছে মহিষ বলিদানের মানত কর।

স্ত্রীর কথামত গোমতী নদীতে একজোড়া মহিষ বলিদানের মানত করে পিলেহা বলল, মা গোমতী নদী, লোকে আমাকে বলে নির্বোধ।

তাই তুমি আমার মত সাতটি নির্বোধ আমাকে দান কর। আমি অবশ্যই এক জোড়া মহিষ বলিদান দেব।

গোমতী নদী মাতা খুশী হয়ে সাত পুত্রের জন্য আশীর্বাদ করলেন। ‘ সে রাতে স্বপ্নযোগে তাদের সন্তান পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয় ।

ওরা খুব আনন্দিত যে, অতি শীঘ্রই ওদের সন্তান আসছে। সত্যিই ওদের প্রথম সন্তান আসল ছেলে।

সন্তান প্রসবের সময় ভোর রাত্রি ছিল। সেই হিসাবে পুত্রের নাম আইচুরায় রাখা হলো (আইচুরায় অর্থ ভোর রাত্রি)। এর পর আরো ছয় পুত্র যথাক্রমে খিসাওরায়, তাওখিরায়, নোওগুরায়, খিচারায়, বাথাওরায় ও থাইথাওয়ায় জন্ম নিল । গোমতী নদী তাদের ইচ্ছা পূরণ করলেন।

কিন্তু খেলাংতির মনের আশা পূরণ হলো না। সে একটি মেয়ে সন্তানের জন্য প্রার্থনা করতে লাগল।

প্রত্যহ মোমবাতি ও ফুল পূজা করতে লাগল । দীর্ঘদিন পূজা করেই চলল। একটি দিনও বাদ নেই।

পূজার সময় এই বলে প্রার্থনা করতো যে, সৃষ্টিকর্তা, তুমি আমার প্রতি সদয় হয়ে মোমবাতির ন্যায় জ্ঞানের আলো ও ফুলের ন্যায় সুন্দর একটি কন্যা সন্তান দান কর ।

অতএব ওর দীর্ঘদিনের সাধনা সৃষ্টিকর্তা পূরণ করলেন। অল্প দিনের মধ্যেই কন্যা সন্তান প্রসব করল ।

মায়ের যেমন চাওয়া তেমনি পাওয়া গেল ফুলের মত সুন্দর মেয়ে শিশু।

তাই তার নাম রাখা হলো খুঁলাইতি (এর অর্থ ফুলের পাপড়ি)। ওদের আনন্দ আর ধরেনা । অতি আনন্দে ওদের সাত পুত্রের জন্য মানতের কথা ভুলে গেল।

তাদের সাত পুত্র এক কন্যা দিনে দিনে বাড়তে লাগল। কিন্তু সাত পুত্র নির্বোধ ও এক কন্যা বুদ্ধিমতি।

ওরা দুজনে আলাপ করতে লাগল। কন্যা কেন সুবুদ্ধিমতি হয়ে জন্মাল তা তার স্বামীকে খুলে বলল।

এভাবে স্বামীও স্ত্রীকে সাত পুত্র নির্বোধ হওয়ার কারণ খুলে বলল। এর জন্য স্ত্রী খুব দুঃখ পেল। তবে সাত পুত্র সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান ছিল।

ওরা সাত ভাই এক বোন এখন সবাই পূর্ণ যুবক-যুবতী হয়ে উঠল।

খুঁলাইতি যেমন নাম তেমনিই ফুলের মত সুন্দর ও বুদ্ধিতে মোমবাতির আলোর মত উজ্জ্বল।

সাত ভাই ওকে খুব স্নেহ-আদর-যত্ন করতো। ওকে কোলে নিয়ে চুমো দিত।

ছোট বোন এত সুন্দরী বলে বড় ভাইয়েরা সবাই ওকে বিবাহ করতে মনস্থ করল। কিন্তু নিজে ব্যতীত অন্য কেউই কিছু জানত না।

এখনো বড় ভাইয়েরা আদর করে বলে কোলে টেনে নেয়। গালে চুমো দেয়। খুঁলাইতি এখন পূর্ণ যুবতী হয়েছে।

লজ্জা, সংকোচ, দ্বিধা আরো অনেক কিছু আছে ওর। ছোট বোন হিসেবে ওর সাড়া দিতে খারাপ লাগে।

বুদ্ধিমতি হিসেবে ওর অনেক চিন্তা, কিভাবে ভাইদের আদরের অভিনয় থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

একদিন বড় ভাই ওকে কাছে টেনে নিয়ে গালে চুমো দিল এবং স্তন দুটি চেপে ধরল। মর্দন করে শেষ পরিণতি পর্যন্ত গমনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে বোন বুদ্ধি করে বলল, দাদা, এ সমস্ত কর্মকান্ড নির্জন স্থান ছাড়া সম্ভব নয়।

তাই চল আমরা নির্জন স্থানে লুকাই। বনের কথায় ছেড়ে দিল। ছাড়া পেয়ে খুঁলাইতি মায়ের কাছে চলে গেল। বড় ভাই বোকা বনে চুপ করে রইল।

মায়ের সাথে খুঁলাইতি পরামর্শ করে বড় ভাইদের বিবাহের বন্দোবস্ত করতে লাগল। ওদের সবার জন্য বিবাহের প্রস্তাব করা হলো।

কিন্তু কেউই রাজী হলো না। ছোট বোন বড় ভাইকে বলল, দাদা, তোর জন্য এত সুন্দর যুবতী ঠিক করেছি তুই রাজী হলি না।

বড় ভাই চট করে বলে উঠল, হ্যাঁ, তোর মত সুন্দর নয় বলে রাজী হইনি। তোকে বিবাহ করতে চেয়েছিলাম।

তাই তো তোকে প্রেম করেছি। সেদিন তুই আমাকে ফাঁকি দিয়েছিস, আর আজ অন্যজনের সাথে মিলিয়ে দিতে ফন্দি করছিস।

ছোট বোন জানতো, দাদা আবাল-তাবোল বলবে। তবুও সাহস করে বলতে গিয়ে অনেক লজ্জা পেল।

এ সমস্ত কথা মনে চেপে রাখাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল তার। বলতেও পারছে পাছে সামাজিকভাবে অনেক কিছু রটে যাবে।

 পিলেহার পরিবার আর্থিকভাবে খুব সচ্ছল ছিল। কিন্তু মানসিকভাবে অশান্তি বিরাজ করছিল।

এভাবে চলতে চলতে কিছুদিন পর কয়েকজন রাজ পেয়াদা তাদের উঠানে হাজির হলো। সাত পুত্রের ভয়ের সীমা নেই।

সবাই কাঁপতে লাগল। রাজ পেয়াদা বলল, রাজার হুকুম, পিলেহাকে রাজার নিকট যেতে হবে। পিলেহা যেতে নারাজ হলে তাকে বন্দি করে নিয়ে গেল। সাত পুত্র খুব করে কাঁদলো।

কিন্তু খুঁলাইতি চিন্তা করল, বাবা নির্বোধ হলেও কখনো অপরাধ করে না। করতেও পারে , কোন অপরাধের জন্য তাকে বন্দি করা হলো?

মা বাবার কোন অপরাধ নেই। যদি হয় তাহলে আমি চিরদিন রাজ কুমারের কাছে বন্দি থাকব আর কি ?

নিশ্চিত সুসংবাদ পাবার আশায় ফুর্তিতে কাটাতে লাগল। বড় ভাইয়েরা ওকে দেখে বকছিল, তুই আদর পেয়ে খুব পাজি হচ্ছিস । জানিস বাবার অবস্থা কি হবে ?

দু’দিন পর বাবা হাসি মুখে ফিরে এলো গ্রামবাসীরা সকলে হাজির ।

কি অবস্থা জানতে চাইলে পিলেহা আনন্দের সাথে বলতে লাগল যে, তার মেয়ে খুঁলাইতির সাথে রাজ কুমার চন্দনের বিবাহ হবে।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ আয়োজন হবে। আমার পক্ষ থেকে কোন কিছুই করতে হবে না।

দিন-তারিখ মত হাতী চড়ে চন্দন কুমার খুঁলাইতিকে নিয়ে যাবে । এই সংবাদে পিতামাতা গ্রামবাসী সকলেই আনন্দিত হলো।

কিন্তু সাত পুত্রের মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো আর কি ?

সুতরাং সাতদিন পর রাজ কুমার সৈন্য সামন্ত নিয়ে হাতী চড়ে খুঁলাইতিকে নিতে আসল।

সাতদিন সাতরাত পর্যন্ত মহাসমারোহে বিবাহ উৎসব উদ্যাপনের মাধ্যমে রাজকুমারের সাথে খুঁলাইতির বিবাহ হয়ে গলে ।

খুঁলাইতি এখন ভাইদের কু-আচরণ থেকে মুক্তি পেয়ে মহাখুশী। আর চন্দন কুমার আজ রাজপুত্র, কাল হয়তো সিংহাসনে আরোহণ করবে।

তখন সে অবশ্যই রাণী হব। এ সব ভেবে আনন্দ আর ধরে না। বাবার পারিবারিক অবস্থাও খুবই ভাল।

তবে হ্যাঁ ওরা এখন কেমন আছে, একটু চিন্তা হলো ওর। ভাবতে ভাবতে স্থির করল, বাপের বাড়ী একবার ঘুরে আসবে। তাই বিদায় নিয়ে বাপের বাড়ী চলে এলো।

বাড়ীতে এসে দেখতে পেল, মানসিক কারণে তাদের শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল না। তবে তাকে কাছে পেয়ে সকলের মুখে হাসি ফুটল।

ছোট বোন বড় ভাইদের জিজ্ঞাসা করল, কি জন্য তোদের এত স্বাস্থ্য খারাপ হয়েছে। সাত ভাই বোনকে বিবাহ করতে চেয়েছিল।

তাকে না পাওয়ায় আর অন্য মেয়ে, বোনের মত সুন্দরী না হওয়ায় কাউকেও বিবাহ করতে পারেনি। সাত ভাইয়ের একই উক্তি শুনে বোনের লজ্জা হচ্ছিল। তবুও সাহস করে ভাইদের ভুল ভাঙ্গাবার জন্য বুঝাতে লাগল —–

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের বুদ্ধি, জ্ঞান, বিবেক, প্রজ্ঞা, বাশক্তি ইত্যাদি আছে। আছে সমাজ, আরো আছে নিয়ম-নীতি।

কাজেই সামাজিক নীতিতে একই মায়ের সন্তান ভাই-বোনদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক চলে না। সামাজিক নীতিতে আপন ভাই-বোন ও মামাভাগ্রের সম্পর্ক বৈবাহিক সূত্রে অবৈধ।

তোমরা সেই ভুল চিন্তা থেকে মুক্ত থাক। আর কোন দিন সেরূপ ভুল চিন্তা করো না।

ওরা এখন নিজের ভুল বুঝতে পারল। আর একই বোনকে সাত ভাই বিবাহ করতে চেয়েছিল এট্য পরস্পরের মধ্যে জানাজানি হওয়াতে সবাই লজ্জা বোধ করল।

ছোট বোন ভাইদের পরামর্শ দিল ঃ মাঝে মাঝে এ পাড়া থেকে ও পাড়া এবং হাট, বাজারে যেতে হবে, যাতে যোগাযোগ বাড়ে, লোকের সাথে পরিচয় হয় এবং বুদ্ধিমানের মত জীবন যাপন করতে পারে। কারণ অন্যান্য পাড়ায় অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে। সেখানে পছন্দ মত বিবাহ করতে পারবে। বোনের কথায় সবাই স্থির করল, বাজারে যাবে।

 পরদিন সকালে বোন খানা প্রস্তুত করে দিল। ওরা সব প্রস্তুত হয়ে ভেলায় চড়ে রওনা হট পালাক্রমে ভেলা বেয়েই চলছে।

চলতে চলতে দুপুর হল। বড় খিদে লেগেছে, খেয়ে নিতে হবে। এমন সময় ছোট বোন ঘাটে গোসল করতে এলো।

মেয়েটিকে দেখে সাত ভাই বলে উঠল, মেয়েটি ঠিক আমাদের ছোট বোনের মত।

এজন্যেই তো বোন বলেছিল, অন্যের পাড়ায় সুন্দরী মেয়ে আছে।

তখন বড় ভাই সাহস করে ডাকল, বোন, দয়া করে এদিকে এসো বড় ভাইদের দেখে ছোট বোন অবাক হয়ে বলে, তোরা এখনো যাসনি ? ব্যাপার কি ? ওরা বলল, যাচ্ছিতো।

তবে খিদে পেয়েছে। কিছু খেয়ে যাবো তোমার ঘরে দুপুরের খানা খেয়ে যেতে চাই। অসুবিধা হবে নাতো?

ওরা আরো বলল, চিন্তা করো না, তোমার মতো আমাদেরও বোন আছে। আমরা খুঁলাইতির বড় ভাই। তোমার কোন অসুবিধা করব না।

ছোট বোন রাগান্বিত স্বরে বলল, তোদের মাথা খারাপ হয়েছে কি ? আমিই তো খুঁলাইতি।

ওদের অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি বাবাকে খবর দিল। বাবা এসে দেখল, ওরা ঐ স্থান ছেড়ে যেতে পারছে না।

পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখল, ভেলা আটকানো আছে। তখন তার চিন্তা আসল, গোমতী নদীতে মহিষ বলিদানের কথাঃ এখন যদি পুনঃমানত না করি তাহলে বাজারে যেতে পারবে না এবং পারলেও হয়তো জীবিত নাও আসতে পারে।

গোমতী নদী মাতা খুব শক্তিশালী। জলে ডুবে প্রাণে মারা যেতে পারে।

আগে মস্করার ছলে আমার মত সাত নির্বোধ সন্তান চেয়েছিলাম, সে রকমই দিয়েছিল।

এই সাত পুত্রের ওপর তার চোখ পড়েছে। একদিন হয় একদিন কিছু করবে।

অতএব, মা গোমতী নদী, আমি পুনরায় মানত করছি, তুমি আমার ছেলেদের বাজারে যেতে বাধা দিও না। আমি নিশ্চয় এক জোড়া মহিষ বলিদান দেব।

মানত শেষ করে পিতা-সহ সাত পুত্র একই সাথে হেঁইয়ো হেঁইয়ো করে জোড়ে টান দিলে রশি ছিড়ে ভেলা ভেসে চলল।

এবার গোমতী নদী খুশী হয়েছে মনে করে ওরা বাজারে রওনা হল। বাবা ও মেয়ে ঘরে ফিরে এলো। আর এই সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে আলাপ করতে লাগল।

মেয়ে বাবার বোকামি বুঝতে পেরে বলল, বাবা, তুমি যা বুঝেছ তা ঠিক নয়। নদীতে মহিষ বলিদানের মানত করেছ তা ভাল কথা।

তার জন্য যদি সন্তান পেয়ে থাক অবশ্যই মানত পূরণ করতে হবে। কিন্তু ভেলা ভেসে চলছে না, তার জন্য মানতের কোন দরকার নেই।

ভেলা অবশ্যই রশিতে বাধা ছিল। রশি না খুলে ভেলা কখনো ভেসে চলত না। মেয়ের কথায় বাবাও নিজের ভুল বুঝতে পারল ।

ওদিকে সাত পুত্র যেতে যেতে এক জায়গায় ধারাল দা পড়ে গেল। স

বাই খুব চিন্তিত। বড় ভাই বলল, যে জায়গায় দা পড়ে গিয়েছিল সে জায়গায় অর্থাৎ ভেলার মধ্যে কিছু অংশ কেটে চিহ্ন রাখ ।

পরে নিজের ঘাটে এলে ডুব দিয়ে দা-টি খোঁজা যাবে । বুদ্ধিমান হিসেবে বড় ভাই এরূপ পরামর্শ দিল । পরামর্শ মতে ছোট ভাইয়েরা স্টেলাতে চিহ্ন রেখে দিল ।

তারপর মাইল দেড়েক গেলে দেখতে পেল, একটা গাছের ডালে মৌচাক ঝুলছে। বলাবলি হল, কে গাছে চড়বে।

কনিষ্ঠ ভাই রাজী হল গাছে চড়তে। সে সংগে সংগে গাছে ওঠে গেল। কিন্তু মৌচাক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারল না।

তা দেখে বড় ভাইয়েরা বলল, ডাল কেটে দে। ডাল কেটে দিল। কিন্তু গাছের আঁকানিতে সেও গাছের ডালের সাথে নীচে পানিতে পড়ে গেল।

ডালে চাপা পড়ে পায়খানা বেরুচ্ছিল। বড় ভাইয়েরা মধু মনে করে সবাই খেয়েছিল। কিন্তু ছোট ভাই ভেসে উঠে দেখতে পেল, ভাইয়েরা পায়খানা খাচ্ছে।

বাধা দিয়ে বলে, তোরা আর খাসনে। ওটা আমার পায়খানা । মধু তো এখনো পানির তলে পড়ে রয়েছে।

তখন ভাইয়েরা বলে উঠল, ছিঃ ছিঃ ছিঃ, আর খাসনে ওটাতে পায়খানা । এজন্যেই তো একটু গন্ধ লাগছে। সর্বশেষে মধু পানির সাথে মিশে গিয়ে আর পাওয়া গেল না।

সেখান থেকে আবার রওনা হল । এক জায়গায় এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবে, তাই ছায়া। দেখে জিরাচ্ছিল।

কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর রওনা হবে এমন সময় স্বচ্ছ পানিতে পাকা দুমুরের ফল দেখতে পেল। বড় ভাই বলল, এখন সময় নেই।

ফিরার পথে ডুব দিয়ে নেব যেন বাড়ীর সকলে খেতে পারে। আবার রওনা হল। আসলে ডালের ওপর ডুমুর ফল ধরেছে, এই ধারণা তাদের নেই।

ওরা যেমন করেই হউক বাজারে পৌছাল। আর কি কি কেনা হবে সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রথম ব্যবসা হিসেবে সাদা জিনিস ক্রয় করবে।

যেমন লবণ, চিনি, দুধ, চুন ইত্যাদি। কথা মত কেনা হল । কিন্তু দুঃখের বিষয়, দুধ পাওয়া গেল না।

বেশ কয়েক বস্তা চিনি, লবণ ভেলায় বোঝাই করা হল। কলসীতে করে চুন আনা হল।

একদিন পর বাড়ী ফিরছিল। ফিরার পথে ডুমুরের কথা মনে পড়ল এবং সেই জায়গায় ডুমুর ফলের খোঁজ করলে ডুমুর ফলের সন্ধান পেলনা।

আসলে বৃষ্টির কারণে পানি গোলা হওয়ায় ডুমুর ফল দেখা যাচ্ছিলনা । ওরা মনে করল, কে এসে নিয়ে গেছে। তাই তারা খুঁজাখুঁজি না করে সোজা বাড়ীতে চলে আসল।

ঘাটে পৌঁছালে একজন গ্রামে খবর দিতে গেল যেন ওদের মালামাল তুলতে আসে। আর অনন্যরা পড়ে যাওয়া দায়ের খোজে চিহ্ন অনুসারে ডুব দিতে লাগল।

গভীর জলে বারংবার ডুব দিয়েও হারানো দায়ের সন্ধান পেল না। ওদের কান্ড দেখে গ্রামের লোকেরা অবাক ।

ওদের বাবাকেও খবর দেয়া হল। বাবা এসে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখল, লবণ ও চিনি কোথায় হারিয়ে গেছে।

সে বুঝতে পারেনি যে, লবণ ও চিনি পানিতে গলে যায়। শেষে গোমতী নদীর ওপর তার ভুল ধারণা জাগল।

বলল, ছেলেদের প্রাণে ক্ষতি করেনি, কিন্তু লবণ ও চিনি রেখে দিয়েছে। যাই হউক, প্রাণে যে বেঁচে আছে এটাই যথেষ্ট।

এই কথা শুনে গ্রামের লোকেরা যে যার ঘরে চলে গেল। – সেই দিন রাত্রে পিলেহা তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সবাইকে নিয়ে সাত পুত্রের বাজারে যাবার বিষয়ে আলাপ আলোচনা করল।

আলোচনায় সাত পুত্রের বাজারে যাবার পথে অনেক বোকামি কান্ড জেনে ছোট বোন খুব লজ্জিত ও দুঃখিত হল।

বাবা ও বড় ভাইদের নির্বোধের জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে আনার জন্য কয়েকটি সুবুদ্ধির গল্প বলল।

সর্বশেষে দেখল, ওদের সুবুদ্ধিতার অগ্রগতি নেই, তারা সেভাবেই রইল। নির্বোধ ব্যক্তির জীবনে কখনো  উন্নতি হয় না। নির্বোধ নির্বোধই থেকে যায়।

লেখক: সত্যহা পানজি

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা