ত্রিপুরা লোককাহিনী: বনের এক বিচারক

Jumjournal
Last updated Mar 26th, 2020

888

featured image

এক বনে এক বুনোশূকর পরিবার নিয়ে বাস করত। প্রতিদিন খাবার সংগ্রহের জন্য সে বনে যেত।

একদিন সে খাবারের খোঁজে বনের ভিতর ঘুরছিল। সে দেখল ঝোপের ধারে ছোট একটা বাঘের বাচ্চা কাঁদছে।

শুকরটি চারদিকে তাকাল। কিন্তু মা-বাঘকে কোথাও খুঁজে পেল না। সে ভাবল মা-বাঘটাকে হয়তো শিকারিরা গুলি করে মেরে ফেলেছে।

বুনোশূকর ভাবল, সে বাঘের বাচ্চাটাকে ফেলে রেখে গেলে ওটা মরে যাবে। বাঘের বাচ্চাটার জন্য বুনোশূকরের মায়া হল। সে ওকে বাড়ি নিয়ে গেল।

বাঘের বাচ্চাটা বুনোশূকরের আদর-যত্নে বড় হতে লাগল। সে ছোট ছোট শূকরছানাদের সঙ্গে মিশে গেল।

তারা একসঙ্গে খায়-দায়, একসঙ্গে ঘুমায়। এভাবে কিছুদিনের মধ্যে বাঘের ছানা শূকর পরিবারের একজন হয়ে উঠল।

একদিন মা-শূকরটি মরে গেল। এর মধ্যে বাঘের ছানা আর শূকরছানারা বড় হয়ে যুবকে পরিণত হয়ে গেছে।

নিজেদের বাচিয়ে রাখার মতো শক্ত-সামর্থ হয়ে গেছে। তারা এখন স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবে সে সক্ষমতাও অর্জন করেছে।

কিন্তু তারপরও সকলে একসঙ্গে এক পরিবারেই বাস করতে লাগল।

এদিকে বাঘের নজর পড়ল শূকরের উপর। শূকরের তেলতেলে শরীর দেখে তার লোভ হল। বাঘের স্বভাব হল মাংসের প্রতি লোভ।

বাঘটি শূকর খাওয়ার জন্য ফন্দি-ফিঁকির করতে লাগল। একদিন বাঘটি একটি শূকরকে বলল, দেখ ভাই, গতরাতে স্বপ্নে দেখলাম আমি তোমাকে খাচ্ছি।

স্বপ্ন তো মিথ্যা হতে পারে না। তাই আমি ঠিক করেছি তোমাকে খাব।

শূকরটি বলল, এটা ছিল একটা নিছক স্বপ্ন। স্বপ্নকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। স্বপ্ন কখনোই সত্যি হতে পারে না।

তারা এ বিষয়ে কিছুক্ষণ যুক্তি-তর্ক করল। কিন্তু বাঘ কিছুতেই একমত হতে পারল না। সে শূকরটিকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল।

সে শূকরটিকে জিজ্ঞেস করল তার কোনো শেষ ইচ্ছে আছে কিনা। বাঘটি বলল,তোমাকে হত্যা করে খাওয়ার আগে আমি তোমার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে চাই।

শূকরটি বুঝে গেল বাঘের হাত থেকে প্রাণ বাঁচানো কঠিন। শূকরটি বলল,’তুমি আমাকে এভাবে হত্যা করলে অন্য শূকররা তোমাকে দোষী করবে।

তার চেয়ে বরং আমাকে হত্যা করার আগে আরো তিনটে প্রাণীকে জিজ্ঞেস করা যাক তোমার যুক্তি-তর্ক সঠিক কিনা।’ বাঘটি এ প্রস্তাবে রাজি হল। শূকর আর বাঘ একটা বানরের কাছে গেল।

বানরকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে বানর বলল, “যেহেতু বাঘ স্বপ্নে দেখেছে তাই সে শূকরকে খাবে।’ এ কথা শুনে বাঘ খুব খুশি হল।

এরপর তারা গেল একটা মুরগির কাছে। সব শুনে মুরগিও বাঘের পক্ষে মত দিল।

সব শেষে তারা গেল বাদুড়ের কাছে। সব শুনে বাদুড় বলল, এটা খুবই জঠিল বিষয়। ন্যায় বিচারের জন্য তোমাদের রাজার কাছে যাওয়া উচিত।

আমিও তোমাদের সঙ্গে দরবারে যাব। বিচারের সময় আমিও সাক্ষী থাকব।

বাদুড়ের পরামর্শ মতো বাঘ ও শূকর রাজার কাছে গেল এবং সব ঘটনা খুলে বলল।

শূকর রাজাকে বলল, আমার একজন সাক্ষী আছে। সে খুব শিগগিরই আসবে।’ রাজা সিংহাসনে বসেছিলেন, দরবারে ছিল আরো গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

রাজা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। তারপর বললেন, আমরা তোমার সাক্ষীর জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করব?

এর কিছুক্ষণ পরই বাদুড় লাফিয়ে পড়ল রাজার সামনে। ছাদ থেকে মেঝেতে পড়েই সে আনন্দে নাচতে লাগল। রাজা বাদুড়কে সংযত হতে বললেন।

বাদুড় তার আচরণের জন্য রাজার কাছে ক্ষমা চাইল। সে বলল, মহারাজ আমি প্রাসাদের ছাদের নিচে ঘুমিয়ে ছিলাম।

সে সময় স্বপ্ন দেখলাম আমি রাজকন্যাকে বিয়ে করছি। জেগে ওঠে আমি এত খুশি হলাম যে নিজেকে সামলাতে পারলাম না।

আমি চাই এই স্বপ্ন পূরণের জন্য আপনি রাজকুমারীকে আমার কাছে বিয়ে দেবেন।

একথা শুনে রাজা খুব ক্ষেপে গেলেন। তিনি বললেন, কারো উচিত নয় স্বপ্নে বিশ্বাস করা। স্বপ্ন আর বাস্তব এক নয়।

রাজার কথা শুনে বাদুড় বলল, যদি তাই হয়, তবে বাঘ কীভাবে স্বপ্নে শূকরকে খেতে দেখেছে বলে বাস্তবে শূকরকে খেতে চাইতে পারে?

রাজা বাদুড়ের যুক্তি মেনে শূকরের পক্ষে রায় দিলেন। বাঘের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে শূকর দৌড়ে পালাল।

এরপর থেকে বাঘ আর শূকর আলাদা বসবাস করতে লাগল।

লেখক : আবু রেজা

তথ্যসূত্র : ত্রিপুরা আদিবাসী লোককাহিনী

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা