ত্রিপুরা রূপকথা: নিয়তির পরিহাস
825
ত্রিপুরা রাজার ঘর আলো করে জন্ম নিল সুন্দর ফুটফুটে এক রাজকুমার।
রাজা-রানীর মনে সে কী আনন্দ! রাজমহলে চলল নাচ, গান আর খাওয়া।
আনন্দ উৎসব শেষে রাজা ডেকে পাঠালেন রাজ জ্যোতিষীকে। যথাসময়ে জ্যোতিষী আসেন। রাজা রাজকুমারের ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে জানতে চান।
জ্যোতিষী গণনা করেন। তারপর রাজার দিকে তাকিয়ে বলেন, বিয়ের রাতে বাঘের থাবায় রাজকুমারের মৃত্যু হবে।
সন্তানের মৃত্যুর কথা শুনে রাজা শিউরে উঠেন। তিনি বিশাল ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা।
হাজার হাজার সৈন্য থাকতে তার একমাত্র সন্তানের মৃত্যু হবে সামান্য একটা বাঘের থাবায়! এ দুঃখে রাজা খান না। ঘুমান না।
তিনি জ্যোতিষীকে জিজ্ঞেস করেন, বাঘের কবল থেকে রাজকুমারকে বাঁচানোর কি কোনো উপায় নেই? জ্যোতিষী বলেন, উপায় একটা আছে।
একটি বিরাট দিঘির মাঝখানে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করবেন। ওখানে রাজকুমারের বিয়ের আয়োজন করবেন।
পানি অতিক্রম করে বাঘ ঐ বাড়িতে যেতে পারবে না। তাহলেই রাজকুমারকে রক্ষা করা যাবে।
রাজা সন্তানের প্রাণ রক্ষার জন্য বিরাট দিঘি কেটে ঠিক মাঝখানে একটি সুন্দর পাকা বাড়ি বানান। চারিদিকে জল, মাঝখানে পাকা বাড়িটা ভাসছে।
দেখতে একেবারে টঙ ঘরের মতো। এই বাড়িটির নাম অনুসারেই দিঘির নাম জলটুঙ্গী।
ধীরে ধীরে রাজকুমার বড় হয়। একদিন রাজকুমারের জীবনে আসে সেই বিয়ের রাত। রাজা জ্যোতিষীর ভবিষ্যতবাণী রাজকুমারকে স্মরণ করিয়ে দেন।
দীঘির চার পাড়ে রাজার সৈন্যরা অস্ত্র হাতে পাহাড়া দিচ্ছে। বিয়ের সব অনুষ্ঠান শেষ। ধীরে ধীরে রাত গভীর হয়।
বর-কনে ঘরে বসে আছে। রাজকুমার স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছে না। কেমন যেন ভয়ে ভয়ে চারিদিকে তাকায়।
রাজকুমারের এমন অবস্থা দেখে নববধূ ভয় পায়। সে জানতে চায়, কি হয়েছে? কেন এতো ভয়? কিসের ভয়?
রাজকুমার জ্যোতিষীর ভবিষ্যতবাণী নববধূকে বলে। রাজকুমারকে স্বাভাবিক করতে নববধূ অনেক চেষ্টা করে।
নববধূ বলে, দিঘির পাড়ে হাজার হাজার সৈন্য পাহাড়া দিচ্ছে। তাছাড়া চারিদিকে জল আর জল, মাঝখানে বাড়ি। বাঘের সাধ্যি নেই এখানে আসার, তুমি নিশ্চিন্তে থাক।
রাজকুমারের ভয় তাড়াতে নববধূ বলল, এসো আমরা গল্প করি। তখন দুজনে গল্প শুরু করে।
এক সময় নববধূ বলল, তুমি বাঘকে এতো ভয় পাও, আর আমি জীবনে কখনো বাঘই দেখিনি।
বাঘ কি হাতির মত বিরাট জন্তু? রাজকুমার বলল, চোখে না দেখলে বাঘ কি রকম বুঝানো যাবে না।
বন্য প্রাণীদের মধ্যে বাঘ খুবই হিংস্র। নববধু এক টুকরো কয়লা রাজকুমারের হাতে দিয়ে বলল, দেওয়ালে একটা বাঘ এঁকে দেখাও।
রাজকুমার কয়লা দিয়ে দেওয়ালে একটি বাঘ আঁকে। নববধু প্রশ্ন করে, বাঘের বুঝি চোখ থাকে না? রাজকুমার বলল, থাকবে না কেন?
আমি আঁকতে ভুলে গেছি। এই যে ঠিক এইখানটায় চোখ থাকে। তারপর রাজকুমার বাঘের চোখ অকে।
যেই চোখ আঁকা শেষ হয়। অমনি ছবিটি একটা জ্যান্ত বাঘ হয়ে রাজকুমারের ঘাড় মটকে দেয়।
রূপকথাটি জাফর আহমদ হানাফী কর্তৃক বর্ণিত
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।