
একদা এক গ্রামে বাস করত একটি বিড়াল আর একটি মুরগি।
তারা একে অপরের বন্ধু ছিল। একদিন বিড়াল মুরগির বাড়িতে গেল। বিড়াল বলল, আজ তুমি কোথায় ঘুমাবে? আজ রাতে আমি তোমার জন্য কিছু সবজি এনে দিতে চাই।
একথা শুনে মুরগি কিছুটা অবাক হল। মুরগি বলল, আমি আমার ঝুড়িতে ঘুমাব। সে রাতে মুরগিটা ঘুমাল মাচায়। মুরগিটা ঘুমিয়ে আছে।
এমন সময় বিড়াল এসে ঝুড়িতে হানা দিল। কিন্তু বিড়াল ঝুড়িতে মুরগিটাকে পেল না। ব্যর্থ হয়ে সে ফিরে গেল।
পরদিন বিড়াল আবার মুরগির কাছে গেল। তাকে জিজ্ঞেস করল, গত রাতে তুমি কোথায় ছিলে? তোমাকে ঝুড়িতে খুঁজে না পেয়ে সবজিগুলো ফিরিয়ে নিতে হল। আজ রাতে কোথায় ঘুমাবে?
মুরগি বলল, আমি আজ মাচায় ঘুমাব?
কিন্তু সে রাত মুরগি ঝুড়িতে কাটাল। রাতে বিড়াল মুরগির খোঁজে মাচায় হানা দিল। কিন্তু সে রাতেও মুরগিকে না পেয়ে বিড়াল ফিরে গেল।
এভাবে মুরগিটা অনেক দিন বিড়ালটাকে এড়িয়ে চলল। অবশেষে একদিন বিড়ালটা মুরগির চালাকি ধরে ফেলল।
মুরগি বলে এক জায়গার কথা, আর রাতে থাকে আরেক জায়গায়। সুযোগ বুঝে এক রাতে বিড়াল মুরগিটাকে ধরে খেয়ে ফেলল।
মৃত্যুর আগে মুরগিটা একটা ডিম পেড়েছিল। ডিমের ভিতরে থাকা মুরগিছানা শপথ করল, যে বিড়ালটা তার মাকে হত্যা করেছে তার ওপর সে প্রতিশোধ নেবে।
একুশ দিন পর ডিম ফুটে মুরগির ছানা বেরিয়ে এলো। এরপর সে মাতৃহত্যার প্রতিশোধের চিন্তা শুরু করল। তার ইচ্ছে বিড়ালটাকে হত্যা করা।
এভাবে একদিন মুরগিছানার দেখা হল একটা কুকুরের সঙ্গে। কুকুর বলল, মুরগিছানা, তুমি কোথায় যাচ্ছ?
মুরগিছানা জবাব দিল, আমি সেই বিড়ালের খোজে যাচ্ছি যে আমার মাকে হত্যা করেছে। আমি মাতৃহত্যার প্রতিশোধ নেব, বিড়ালটাকে হত্যা করব- এই শপথ নিয়েছি।
এ প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।
ককুর বলল, তুমি খুব ছোট। আর তুমি একা মাতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে পারবে না। একটু দাড়াও, আমি তোমার সঙ্গে আসছি।
মরগিছানা আর কুকুর দুইজন মিলে এবার বিড়ালের খোঁজে বের হল। পথে তারা একটি ছোট নদী পার হল।
নদী পার হওয়ার সময় একটি শিং, মাছ বেরিয়ে এলো। তাদের জিজ্ঞেস করল, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?
মুরগিছানা জবাব দিল, আমরা সেই বিড়ালটার খোঁজে বের হয়েছি, যে আমার মাকে হত্যা করেছে।
শিং মাছ বলল, আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব, তোমাদের সাহায্য করব।
এরপর তারা তিনজন একসঙ্গে চলল। পথে দেখা হল একটি বড়শির সঙ্গে। বড়শি জিজ্ঞেস করল, তোমরা সবাই কোথায় যাচ্ছ?
মুরগিছানা উত্তর দিল, আমরা সেই বিড়ালের খোঁজে বের হয়েছি, যে আমার মাকে হত্যা করেছে।
বড়শি বলল, আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব,তোমাদের সাহায্য করব। এ পথে তাদের চার জনের সেঙ্গ দেখা হল বাঁশের চটার তৈরি এক ধরনের ছুরির সঙ্গে, যা দিয়ে যে কোনো জিনিস কাটা যায় অনায়াসে।
সব কথা শুনে সেও চলল ওদের সঙ্গে।
প্রথমে তারা পাঁচজন পৌছল বিড়ালের বাড়িতে। মুরগিছানা দরজায় কড়া নাড়ল। বিড়াল বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কোথা থেকে এসেছ? এখানে তোমরা কী চাও?
মুরগিছানা বলল, মায়ের কাছে শুনেছি তুমি আমার মায়ের বন্ধু। তাই আমি বন্ধু-বান্ধব নিয়ে তোমার এখানে কয়েকটা দিন বেড়াতে এসেছি।
বিড়াল বলল, তোমরা এসে খুব ভালো করেছে। এটা খুবই আনন্দের ব্যাপার! ভিতরে এসে বস, বিশ্রাম নাও। এখানে যত দিন ইচ্ছে তোমরা থাকতে পারো।
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে মুরগিছানা বলল, অনেক ধন্যবাদ বিড়াল আন্টি! আমরা এখন ঘুমাতে চাই। আমাদের বিছানা দেখিয়ে দাও।তারপর ওরা ঘুমাতে গেল।
কিছুক্ষণ পর যখন বিড়াল ঘুমিয়ে গেল তখন ওরা সকলে ওঠে পড়ল । বিড়ালটাকে কীভাবে ফাঁদে ফেলা যায় সেই কৌশল নিয়ে ওরা আলোচনা করল।
পরিকল্পনা মতো তারা প্রত্যেকেই নিজেকে লুকিয়ে ফেলল। এরপর মুরগিছানা একটা ডিম পাড়ল। ডিমটাকে আগুনের কাছে লুকিয়ে রাখল।
কুকুরটি বাইরে বেরিয়ে গিয়ে দরজার ওপাশে লুকিয়ে রইল। শিংমাছ লুকাল একটা পানিভর্তি পাত্রে। বড়শি নিজেকে দরজার ওপর ঝুলিয়ে রাখল।
আর বাঁশের তৈরি ছুরি নিজেকে বাঁশের বেড়ায় গুজে রাখল।
রাতে মেহমানদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য বিড়াল এলো। বাতি জ্বালানোর জন্য বিড়াল গেল আগুনের কাছে।
বিড়াল আগুনের কাছে যাওয়া মাত্রই ডিম বিস্ফোরিত হল। ডিমের ভিতরের সবকিছু বিড়ালের চোখেমুখে ছড়িয়ে পড়ল। বিড়াল হাত দিয়ে মুখ মুছল।
মুখের আঠাল পদার্থ লেগে গেল বিড়ালের হাতে। বিড়াল হাতটা মুছতে গেল বাঁশের বেড়ায়। বাঁশের বেড়ায় লুকিয়ে থাকা বাঁশের তৈরি ছুরিতে বিড়ালের হাতটা কেটে গেল।
বিড়াল ব্যথায় ককিয়ে ওঠল, দৌড়ে হাত ডুবাল পানিভর্তি পাত্রে। পানির পাত্রে ছিল শিংমাছ। সে দিল বিড়ালের হাতে কাঁটা ফুটিয়ে। বিড়াল আবারও ব্যথায় কেঁদে উঠল।
বিড়াল যেই দরজা দিয়ে বের হতে গেল তখনই তার চোখের পাতায় বিঁধে গেল বড়শি।
অনেক কষ্টে সে বড়শি ছাড়িয়ে নিল। আর যখনই বিড়ালটা ঘরের বাইরে বের হল কুকুর। তাকে আক্রমণ করল। বিড়ালটাকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল।
যে বিড়ালটি মুরগিছানার মাকে হত্যা করেছিল, তার ওপর প্রতিশোধ নিয়ে পাঁচ বন্ধু খুশি মনে ফিরে গেল।
লেখক : আবু রেজা
তথ্যসূত্র : ত্রিপুরা আদিবাসী লোককাহিনী