ত্রিপুরা লোককাহিনী: ভূতের কুকুর-ভীতি
897
একদিন এক জুমিয়া ওচাইয়ের কাছে গেল। ওচাই হল গ্রামের পুরোহিত।
জুমিয়া ওচাইয়ের কাছে একটি মন্ত্র শিখতে চাইল। প্রথমে ওচাই জুমিয়াকে মন্ত্র শেখাতে রাজি হল না।
কিন্তু নাছোড়বান্দা জুমিয়ার অনুরোধে ওচাই তাকে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দিল। ওচাই জুমিয়াকে বলল, এই মন্ত্র পড়ে তুমি সব কাজ অনায়াসে করাতে পারবে।
এক হাজার বার মন্ত্র পড়লেই একটি ভূত এসে হাজির হবে। সে তোমার সব কাজ করে দিবে। একথা শুনে জুমিয়া খুব খুশি হল।
মন্ত্রটা সে ভালোভাবে শিখে নিল। আর ওচাইকে অনেক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়িতে চলে গেল।
এর মধ্যে অনেক দিন গেল, মাস গেল। নদীতে অনেক জল গড়াল। একদিন জুমিয়া ভাবল, মন্ত্রের ক্ষমতা একবার পরীক্ষা করেই দেখা যাক।
যেই ভাবনা সেই কাজ। সে এক হাজার বার মন্ত্র পড়ে যেই শেষ করল আর অমনি একটা ভূত এসে হাজির হল।
ভূত বলল, প্রভু আজ থেকে আমি আপনার ভৃত্য। হুকুম করুন মালিক, আমি আপনার জন্য কী করতে পারি?
ভূত আরো বলল, বিন্দুমাত্র সময় ক্ষেপণ না করে আপনার সব আদেশ আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। কিন্তু একটা শর্ত আছে।
আপনি যদি আমাকে কাজ দিতে না পারেন, তবে আমি আপনার ঘাড় মটকাব।
জুমিয়া ভাবল, ভূতের আবার শর্ত! ওসব নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনা করার দরকার নেই।
সে ভূতকে এত কাজ দিবে যে ও সবসময় ব্যস্ত থাকবে। জুমিয়া ভূতকে বলল, তোমার শর্তে আমি রাজি।
এখন যাও, প্রথমে আমার জুমখেত ভালোভাবে পরিষ্কার করো।
জুমিয়া ভাবল, ওর বিশাল জুমখেত পরিষ্কার করতে হয়ত ভূতের অনেক দিন লেগে যাবে।
কিন্তু একি! কিছুক্ষণ পর ভূত জুমিয়ার সামনে এসে হাজির হল। ভূত বলল, ‘জুমখেতের কাজ শেষ। এবার কী কাজ করব?
ওকে দেখে, ওর কথা শুনে জুমিয়া হতভম্ব হয়ে গেল। জুমিয়া বলল, ‘মাঠে যাও। মাঠ থেকে সব বাশ আর গাছগুলো তুলে ফেল।
ভূত তৎক্ষণাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে জুমিয়াকে বলল, আমার কাজ শেষ। আমাকে আরেকটি কাজ দিন।
জুমিয়া বলল, আমার বাড়ি থেকে জুমখেত পর্যন্ত একটা সড়ক তৈরি করো।
ভূত এই কাজটিও নিমিষে করে ফেলল। মুহূর্তের মধ্যে আবার এসে হাজির হল। তারপর জুমিয়াকে বলল আরো কাজ দিতে।
জুমিয়া একটার পর একটা কঠিন কাজ দিতে লাগল। কিন্তু বিস্ময়কর হল ভূত সবকাজ মহুর্তের মধ্যেই শেষ করে ফেলে।
কীভাবে একটি কাজ দিয়ে ভূতকে অনেকক্ষণ ব্যস্ত রাখা যায় তা ভেবে জুমিয়া চিন্তিত হয়ে পড়ল।
অনেক ভেবে-চিন্তে সে ভূতকে বলল, এবার আমি তোমাকে খুব সহজ একটি কাজ দিব।
আমার একটি কুকুর আছে। ওর লেজ সবসময় বেঁকে থাকে।
ওর বাঁকা লেজ আমার পছন্দ নয়। তুমি কুকুরের লেজটি সোজা করে দাও। ভূত বলল, এটা খুবই সহজ কাজ। আমি এক্ষণি করে দিচ্ছি।
এবার জুমিয়া কাজের সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দিল। জুমিয়া বলল, তুমি যদি কুকুরটির লেজ সোজা করতে না পার, তাহলে আমার কুকুরটি তোমাকে কামড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। ভূত বলল, “চিন্তা করবেন না প্রভু। এরকমটি কখনোই ঘটবে না।’
ভূত অদৃশ্য হয়ে গেল। সে কুকরটি খুঁজতে লাগল। কুকুরটি খুঁজে পেয়ে সে দুই হাত দিয়ে কুকুরের লেজটি ধরে সোজা করে ফেলল।
কিন্তু যেই সে লেজটি ছেড়ে দিল অমনি আবার তা বাঁকা হয়ে গেল। তারপর ভূত দড়ি দিয়ে লেজটাকে সোজা করে বেঁধে রাখল।
কিছুদিন এ অবস্থায় রেখে দিল। তারপর যেই বাধন খুলে দিল অমনি আবার লেজটি আগের মতো বাঁকা হয়ে গেল।
ভূত তখন একটা বাঁশের চোঙ এনে লেজটি তাতে ঢুকিয়ে রাখল। কিন্তু যেই ভূত চোঙ থেকে লেজটি বের করল অমনি তা আবার আগের মতো হয়ে গেল।
কুকটির লেজ সোজা রাখতে না পেরে ভূত এবার খুব ভয় পেয়ে গেল। জুমিয়ার শর্ত তার মনে পড়ল।
সে এই কাজ করতে না পারলে কুকুরটি তাকে কামড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। তাই সে কুকুরের ভয়ে ভীত হয়ে পড়ল।
ভয়ে সে দৌড়ে পালাল। তারপর আর কখনো ফিরে আসেনি।
এরপর থেকে তারা বিশ্বাস করে, ভূত সব সময় কুকুরকে ভয় পায়।
লেখক : আবু রেজা
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।