ত্রিপুরা লোককাহিনীঃ রসিক সজারু
825
এক বনে এক হাতি বাস করত। একদিন হাতি গেল ঝরনার ধারে পানি পান করতে।
ঝরনার ধারে গিয়ে হাতি দেখল পানি খুব নোংরা। সে পানি পান করতে পারল না। সে ভাবল উজানের দিকে কেউ গোসল করছে।
তাই পানি নোংরা হচ্ছে। হাতি খুব রেগে গেল। হাতি ভাবল সে উজানে যাবে, যে পানি নোংরা করছে তাকে শায়েস্তা করবে।
এই ভেবে হাতি নদীর তীর ধরে উজানের দিকে এগুতে লাগল। অনেক দূর যাওয়ার পর হাতি দেখতে পেল একটা সজারু।
সে একটা গর্তের মধ্যে গোসল করছে। দূর থেকেই হাতি সজারুকে চিৎকার করে বলল, তোমার এত সাহস! তুমি আমার পানি নোংরা করছ?
এরই মধ্যে গোসল শেষ করে সজারু গর্তের ভিতরে ঢুকে গেল। হাতির চিৎকার শুনে সজারু গর্তের ভিতর থেকে মাথা বের করল।
সজারু বলল, তুমি এসব কী বলছ? আমি তো গোসল করছিলাম। আমি তোমার পানি নোংরা করব কেন?
সজারুর জবাব শুনে হাতি খুব রেগে গেল। হাতি বলল, আমি বনের রাজা। সকলে আমার হুকুম মানে।
সবাই আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলে। তোমার কত সাহস যে তুমি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছ?
সজারু হাতির কথায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। সে বলল, তুমি বনের রাজা হতে পার, কিন্তু আমিও বনের বাদশাহ।
তুমি যেখানে পানি পান কর, সে জায়গাটা আমার সাম্রাজ্যের অধীনে। তোমার কত সাহস যে আমার সাম্রাজ্যের সীমানায় থেকে আমাকেই হুমকি দিচ্ছ?
এখনি এখান থেকে চলে যাও। নইলে তোমাকে মাটিতে পুঁতে ফেলব। একথা শুনে হাতি বিরক্ত হল। সে ভাবল তার শক্তি দেখিয়ে সজারুকে ভয় দেখাবে।
সে তার শুড় তুলে খুব জোরে চিৎকার করল। এ আওয়াজ ছিল অনেকটা বজ্রপাতের আওয়াজের মতো।
সজারু বলল, তুমি কি ভেবেছ তোমার দাঁত আর ঔড় দেখে আমি ভয় পাচ্ছি? প্রতিদিন আমি তোমার আকৃতির তিনটা পশু দিয়ে নাশতা করি। যাও এখান থেকে। নইলে আমি তোমাকে হত্যা করব।
সজারুর হুমকি শুনে হাতি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। সে কখনো সজারু দেখেনি। জীবনে এই প্রথম সে সজারুর মুখোমুখি হল।
সজারু ছিল গর্তের ভিতরে, শুধু ওর মুখটা বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল। তাই হাতি ওর আকতি সম্পর্কে ধারণা করতে পারছিল না।
সে মনে করল, নিশ্চয়ই সজারু অনেক বড় আকৃতির শক্তিশালী কোনো প্রাণী হবে।
তা সত্ত্বেও হাতি সজারুকে চ্যালেঞ্জ করল এবং তাকে গর্ত থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বলল।
বাইরে বেরিয়ে না এসে সজারু শরীর থেকে একটা কাঁটা তুলে ছুঁড়ে মারল। সজারু বলল, তোমার শরীরে যে লোম আছে তার সঙ্গে এটা।
মিলিয়ে দেখ কত গুণ বড়, আমিও তোমার থেকে ঠিক তত গুণ বড়। হাতি সজারুর কাটা পরীক্ষা করে দেখল।
হাতি ভাবল, কোনো প্রাণীর লোম যদি এত শক্ত আর এত বড় হয়, তবে তার শরীর কত বড় হতে পারে! সে না জানি কত শক্তিশালী হতে পারে!
একথা ভেবে হাতি চিন্তিত হয়ে পড়ল। সে এই কিম্ভূতকিমাকার প্রাণীর কবল থেকে নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালাল।
হাতি ভয় পেয়ে চলে যাওয়ায় সজারু হেসে কুটিকুটি! সে হাফ ছেড়ে
বাঁচল।
লেখক : আবু রেজা
তথ্যসূত্র : ত্রিপুরা আদিবাসী লোককাহিনী
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।