পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সৃষ্টি , শাসন ও বিচার ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ
3422
পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ
১৮৬০ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নামের একটি আলাদা জেলা সৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ব্রিটিশদের শাসিত তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলারই একটি অংশ ছিল।
চাকমা রাজাগণ চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া থেকেই তাদের রাজ্যের শাসন কাজ চালাতেন।
১৮৬৮ সনে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার জেলা সদর দপ্তর রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তরিত হবার পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ রাঙ্গামাটিতে এসে প্রজাদের সাথে বসবাস করার ও শাসন কাজ পরিচালনার জন্য চাপ সৃষ্টি করার পর রাজা হরিশচন্দ্র রায় তার সদর দপ্তর রাঙ্গুনীয়া থেকে রাঙ্গামাটি স্থানান্তর করেন এবং রাঙ্গামাটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। রাজা হরিশ্চন্দ্র এর রাজত্বকাল ১৮৭৪-১৮৮৫ খ্রিঃ।
১৮৮৪ সনের আঞ্চলিক সার্কেল বিধি দ্বারা Rules for Territorial Circles in the Chittagong Hill tracts, 1884 তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাকে (১) রাজা হরিশ্চন্দ্রের সার্কেল, (২) মং রাজার সার্কেল, (৩) বোমাং সার্কেল, (৪) সদর সাব ডিভিশনাল খাসমহাল ও (৫) সাধু সাব ডিভিশনাল খাসমহাল নামে মোট ৫টি সার্কেলে ভাগ করা হয়।
উল্লিখিত আঞ্চলিক সার্কেল বিধি দ্বারা তিন রাজার তিনটি সার্কেলের (রাজ্য) সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
১৮৮৪ সনের আঞ্চলিক সার্কেল বিধির সংশোধন ও পরিবর্তন করে ১৮৯২ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাকে পূর্বের তিনটি সার্কেলে বহাল রেখে সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলসমূহ নামে আরও একটি সার্কেল গঠন করে মোট ৪টি সার্কেলে ভাগ করা হয় এবং জেলার শাসন কাজ পরিচালনার জন্য (Rules for the Administration of the Chittagong Hill tracts) নামে মোট ১৭টি বিধি সম্বলিত একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়।
উক্ত বিধিমালার ৩নং বিধি দ্বারা সমগ্র জেলাকে মোট ৩৩টি ব্লক বা তালুকে বিভক্ত করা হয় ।
৪নং বিধি দ্বারা ১ বর্গমাইল থেকে ২০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা জনবসতিগুলোতে এক একটি মৌজা গঠন করার ব্যবস্থা করা হয়।
৫নং বিধিতে প্রত্যেক তালুকে একজন দেওয়ান নিয়োগ ও তালুকসমূহকে মৌজায় বিভক্ত করা ও মৌজা হেডম্যান নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।
সেই বিধিমালার ৭নং বিধিতে তালুক-দেওয়ান ও মৌজা হেডম্যানগণের প্রশাসনিক ক্ষমতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনকে যুগোপযোগী ও গতিশীল করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ১৯০০ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন (Regulation No. I of 1900) নামে একটি আইন জারী করেন।
উক্ত রেগুলেশনের ১৮নং ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার একই বছর ১৮৯২ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিথি Rules for the Administration of the Chittagong Hill tracts সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে একই শিরোনামে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করেন, যা স্থানীয়ভাবে ‘Hill tracts Manual’ নামে পরিচিত।
উল্লিখিত বিধিমালায় সার্কেল চীফ ও মৌজা হেডম্যানকে আদিবাসীদের সামাজিক বিরোধীয় নিষ্পত্তির কিছু বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে আদিবাসী সমাজের সার্কেল চীফ ও হেডমানদের প্রশাসনিক ও বিচারিক ক্ষমতার উৎস মূলতঃ তাদের সমাজে যুগযুগ ধরে প্রচলিত প্রথাসমূহ দ্বারা আইনী স্বীকৃতি অর্জন করে।
Francis Buchanan-এর লিখিত Francis Buchanan in South-Eastern Bengal-I79৪ রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসকারী সব আদিবাসীদের মধ্যে গ্রাম হেডম্যান ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
তিনি ২১শে মার্চ, ১৭৯৮ খ্রি. তারিখে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করে ৭ই এপ্রিল নাগাদ রামু পৌঁছেছিলেন।
তিনি তার ভ্রমণ পথের পূর্ব দিকে অবস্থিত পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসীর নাম ও বিবরণ লিখেছেন।
চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফেরার পথে চট্টগ্রামের পূর্ব দিকের পাহাড়ে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিম অধিবাসী যথাঃ- মারমা, লেঙ্গা/কুঙ্গি, সাক, ম্রুং/টিপেরা, বনযুগী ইত্যাদি আদিবাসীদের সর্দার/নেতা, বা রুয়াসা দের (গ্রামপ্রধান) সাথে তিনি দেখা করে তাদের প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, ধর্ম বিশ্বাস ও তাদের জীবনধারা জেনে নিয়েছেন।
সর্বশেষ তিনি বর্তমান বোমাং রাজ পরিবারের পূর্ব পুরুষ মারমাদের প্রধান “কং হ্লা প্রু”- এর সাথে সুয়ালক নামক স্থানে দেখা করেছিলেন।
তার ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকেই উপরোক্ত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নেতাদের রুয়া-সা (গ্রাম প্রধান) নামক পদবীর নাম সর্বপ্রথম জানা যায়। ফ্রান্সিস বুকানন তাঁর উল্লিখিত গ্রন্থে রুয়া-সা (Rua-sa) বলতে মারমাদের স্থানীয় চীফ, যার বর্মী নাম য়্যু-সা, আরাকানী নাম য়্যন্স এবং বাংলায় বিকৃত শব্দ রোয়াজা বলে উল্লেখ করেছেন।
ডঃ সুনীতি ভূষণ কানুনগো তার A History of Chittagong, Volume-। গ্রন্থে তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীদের মধ্যে প্রচলিত আরাকানী প্রশাসনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদবীর উল্লেখ করেছেন। রোয়াজা এবং কার্বারী সে সব পদবীর অন্যতম। তাঁর মতে, রোয়াজা পদবীটি আরাকানী আর “কার্বারী” পারসি শব্দ।
নতুন সৃষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সুপারিনটেন্ডেন্ট ক্যাপ্টেন জে,এম, গ্রাহামের ১৮ই নভেম্বর, ১৮৬২ তারিখের এক পত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে রোয়াজা বা গ্রাম প্রধানের অস্তিত্বের কথা সর্বপ্রথম জানা যায়।
তিনি লিখেছেন, “As often happens not even the Roaja of a village is to be found, and then the only course is to apply to the head zeminder such as the Poang Raja, or Kalindi Rani to produce the person wanted while they having a thorough knowledge of their ryots and a hold over them, have no difficulty in doing”.
১৮ই অক্টোবর, ১৮৬৭ তারিখের Report on the Capitation tax revenue settlement of the Chittagong Hill tracts শিরোনামে ক্যাপ্টেন টিএইচ. লুইনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, অতীতে রাজা তথা চীফরাই গ্রাম প্রধান নিযুক্ত করতেন।
টি.এইচ লুইন তার সেই প্রতিবেদনের সাথে রাজা বা চীফকে প্রদানের জন্য সনদ ও গ্রাম-হেডমান নিয়োগ পত্রের দুটো আলাদা-আলাদা নমুনাও সংযুক্ত করেছিলেন।
ক্যাপ্টেন লুইন তার উল্লিখিত প্রতিবেদনে লিখেছেন, “Formerly the head of a village (or what we miscall a talookder) was appointed by the Chief being generally the most able man of the village was set forward by his village fellows to be their mouthpiece and through whom they paid their tribute.”
“this was what was formerly the custom.”
ক্যাপ্টেন লুইনের সনদ পত্র প্রদান ও গ্রাম হেডম্যান নিয়োগ প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে গৃহীত না হলেও ১৮৯২ ও ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিতে (Rules for the Administration of the Chittagong Hill tracts) সার্কেল চীফ ও মৌজা হেডম্যানগণকে যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রদান করা হয় এর সবগুলোই প্রস্তাবিত সনদ ও গ্রামহেডম্যান নিয়োগ পত্রে সন্নিবেশিত ক্ষমতা ও দায়িত্বসমূহেরই প্রতিফলন।
ক্যাপ্টেন লুইন তার প্রস্তাবিত সনদ ও হেডম্যান নিয়োগ পত্রে (Selections from the correspondence on the Revenue Administration of the Chittagong Hill tracts 1862-1927) আদিবাসী চীফ বা গ্রাম হেডম্যানদের উপর নতুন কোনো দায়িত্ব এবং ক্ষমতা প্রদানের সুপারিশ করেননি।
তিনি আদিবাসী প্রধান ও গ্রাম হেডম্যানদের ক্ষয়িষ্ণু ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে পূনঃপ্রতিষ্ঠাক্রমে এ অঞ্চলের আদিবাসী সমাজ ও স্থানীয় প্রশাসনে তাদের ভূমিকা ও অবস্থানের আইনী সমর্থন এবং বৈধতা দিতে চেয়েছেন মাত্র।
১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন (Regulation of 1900) ও উক্ত রেগুলেশনের ১৮নং ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৮৯২ সনের Rules for the Administration of the Chittagong Hill tracts-এর আলোকে প্রণীত একই শিরোনামের বিধিতে সার্কেল চীফ ও মৌজা হেডম্যানকে প্রদত্ত দায়িত্ব ও বিচারিক ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
সার্কেল চীফ/রাজা নিয়োগ ও অভিষেক
১৮৬০ সনে (Chittagong Hill tracts) অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম নামের আলাদা একটি জেলা সৃষ্টি করার সময় একজন চাকমা চীফ এবং (পোয়াং রাজা নামে ঐতিহাসিক দলিলাদিতে পরিচিত) একজন বোমাং চীফ তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলে বসবাসকারী ত্রিপুরা, মারমা এবং চাকমাদের নেতৃত্বেছিলেন ক্যজা সাইন নামের একজন মারমা জমিদার (Settlement folder)। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসেবে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের নেতৃত্বদানকারী ও জমিদার (Settlement Holder/কার্পাস মহাল) চাকমা রাজা ও বোমাং রাজাকে আগে থেকেই জানতেন।
কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টির প্রাক্কালে মং চীফ বলে কেউই ছিলেন না।
জুম খাজনা (রাজস্ব) আদায় ও প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ১৮৬২-৬৩ সনে এই দুইজন রাজার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের জমিদার (Settlement Holder) ক্যজা সাইনকে মং রাজা বা মং চীফ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
কালিন্দী রাণী এবং বোমাং রাজা যথাক্রমে চাকমা ও মারমা জনগোষ্ঠী প্রধান হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টি হবার অনেক আগে থেকেই চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে নিজ নিজ এলাকার আদিবাসীদের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
তারা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে পূর্ব থেকেই একাধারে রাজা এবং জমিদার (কার্পাস মহালের মালিক) হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম নতুন জেলা হবার পরও একমাত্র ক্যজা সাইনকেই উত্তরাঞ্চলের মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমাদের চীফ/রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দেবার প্রয়োজন হয়।
১৮৬২ খ্রি. থেকে ১৮৮৪ খ্রি. পর্যন্ত তৎকালীন বাংলা সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের মধ্যে দীর্ঘ ২০ বছর যাবত পত্র বিনিময়, বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শের পরই ১৮৮৪ সনের আঞ্চলিক সার্কেল বিধি Rules for Territorial Circles in the Chittagong Hill tracts গৃহীত হয় ও সেই বিধি অনুযায়ী ১৮৮৪ সনে তিন আদিবাসী রাজা/চীফের শাসনাধীন এলাকাসমূহকে তিনটি আলাদা-আলাদা সার্কেলে ভাগ করা হয়। তখন থেকেই তিনজন আদিবাসী রাজা সার্কেল চীফ হিসেবে পরিচিত হন।
রাজ প্রথার ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আদিবাসী প্রধান, সার্কেল চীফ ইত্যাদি নামে পরিচিত হলেও নিজ নি শাসনাধীন এলাকার অধিবাসীদের কাছে তারা রাজা হিসেবে পরিচিত।
সার্কেল চীফ হিসেবে তারা ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিমতে প্রশাসনিক ও বিচারিক ক্ষমতার অধিকারী। সে বিষয়ে নীচে আলোচনা করা হলো রাজা:-
রাজা: পদটি উত্তরাধিকারযোগ্য একটি পদ। চাকমা ও মং সার্কেল চীফ পদের ক্ষেত্রে বাজার জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং রাজার একাধিক স্ত্রীর বেলায় প্রথম স্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র (সামাজিক ও বৈধ বিবাহ দ্বারা জন্মগ্রহণকারী) সন্তান রাজপদ লাভ করেন।
রাজার ঔরসজাত কোনো পুত্র সন্তান না থাকলে, সেক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ কন্যার পুত্র রাজা হয়।
তবে মং সার্কেল চীফের বেলায় ঔরসজাত পুত্র-কন্যার অবর্তমানে দত্তক পুত্র-কন্যার বেলায় রাজপদ উত্তরাধিকারযোগ্য নয়।
সেক্ষেত্রে মং সার্কেল চীফের ঔরসজাত পুত্র-কন্যার অবর্তমানে তার স্ত্রী (রাণী), অতঃপর পিতৃমাতৃকুলের রক্ত সম্পৰ্কীয় কোনো যোগ্য ব্যক্তি প্রচলিত রীতি ও সমাজ স্বীকৃত প্রথা অনুসারে মং সার্কেল চীফ পদে অধিষ্ঠিত হয়।
বোমাং সার্কেলের প্রচলিত ও সমাজ স্বীকৃত প্রথা অনুযায়ী বোমাং রাজ পরিবারের পিতৃ/মাতৃকুলে যিনি সর্ব বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি তিনি বোমাং সার্কেল চীফ হন।
যদি সর্ব বয়োজ্যেষ্ঠ সেই ব্যক্তি বোমাং সার্কেলের চীফ পদ গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন না করেন, সেক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বোমাং সার্কেলের মারমা সমাজে প্রচলিত রীতি ও সমাজ স্বীকৃত সার্কেল চীফ নিয়োগ পদ্ধতি অনুযায়ী বোমাং সার্কেল চীফ পদে তাকে নিয়োগ দান করেন।
রাজ্যাভিষেক/রাজপদে অভিষিক্তকরণ: ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪৮নং বিধিতে সার্কেল চীফগণকে অপদে অভিষিক্ত করার ক্ষমতা সরকারকে দেয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যাঃ রাজার মৃত্যু বা অন্য কোনো কারণে রাজপদ শূন্য হলে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার সরকারের পক্ষে নতুন রাজাকে তরবারি উপহার দিয়ে রাজপদে অভিষিক্ত করান। অভিষেকের মাধ্যমে রাজপদে অধিষ্ঠিত হবার পর রাজার জীবনাবসান ব্যতীত অন্য কোনোভাবে রাজকে অপসারণের কোনো আইনগত বিধান পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিতে নেই।
১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির আওতায় রাজার ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ
ক. সার্কেল চীফ বা রাজা তিনি তার সার্কেলের প্রধান। সার্কেল চীফ হিসেবে তিনি জেলার ডেপুটি কমিশনারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন (বিধি নং- ৩৮)।
খ. সার্কেল চীফ হিসেবে তিনি ডেপুটি কমিশনারের পরে সাবকালেক্টর বা সরকারের খাজনা আদায়কারী (বিধি নং- ৪৩)।
গ. সার্কেল চীফ জেলার প্রশাসন সংক্রান্ত বিষয়ে ডেপুটি কমিশনারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি একটি উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করেন এবং কাউন্সিলের সুপারিশ অনুসারে তিনি ডেপুটি কমিশনারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন (বিধি নং- ৩৯)।
ঘ. তিনি মৌজা হেডম্যান নিয়োগ ও অপসারণে ডেপুটি কমিশনারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যদিও ডেপুটি কমিশনার তার পরামর্শ মেনে নিতে বাধ্য নন। তবে তার পরামর্শ সর্বোচ্চ বিবেচনার দাবী রাখে (বিধি নং- ৪৮)।
ঙ. মৌজা হেডম্যানগণ কর্তৃক খাজনা আদায় ও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ অপরাধ দমনে তাদের প্রতি আদেশ, নির্দেশ ও পরামর্শ প্রদান তার দায়িত্বের আওতাধীন (বিধি নং- ৩৮)।
চ. মৌজা হেডম্যান কর্তৃক আদায়কৃত খাজনা সরকারী কোষাগারে জমাদান নিশ্চিত করা তার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব (বিধি নং- ৩৮)।
ছ. এলাকার জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার ও স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করাও তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব (বিধি নং- ৩৮)।
জ. নিজ সার্কেলের অধীন মৌজাসমূহে ডেপুটি কমিশনারের আদেশ নির্দেশ কার্যকরীকরণ নিশ্চিত করে থাকেন (বিধি নং৩৮)।
ঝ. ডেপুটি কমিশনারের আদালতে বিচারাধীন মামলায় প্রথাগত আইন ও সামাজিক রীতিনীতির কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজনে ডেপুটি কমিশনার সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ/রাজার নিকট মতামত আহবান করলে তিনি তার ব্যাখ্যা ও মতামত দিয়ে থাকেন (বিধি নং-৪০)।
তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী প্রান্ত ক্ষমতা: ১৯৮৯ সনের তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে (১৯, ২০ ও ২১নং আইন) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের যে কোনো সভায় যোগদান ও সভার আলোচ্য বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করতে পারেন (ধারা নং- ২৬)।
মৌজা গঠন/সৃষ্টি ও হেডম্যান নিয়োগ প্রথা
মৌজা গঠন ও হেডম্যান পদ: ১৮৯২ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪নং বিধিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩৩টি তালুককে ২ থেকে ১০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে মৌজায় বিভক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়।
এই বিধি মোতাবেক মৌজা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৩৭নং বিধিতে তিনজন রাজার ৩টি সার্কেলকে মৌজায় বিভক্ত করার পুনঃ বিধান করা হয়।
সেই একই বিধিতে প্রত্যেক মৌজায় একজন করে মৌজা প্রধান (হেডম্যান) নিয়োগের বিধান রাখা হয়। তিন পার্বত্য জেলার তিনটি সার্কেল বর্তমানে ৩৯০টি মৌজায় বিভক্ত।
হেডম্যান নিয়োগ পদ্ধতি: পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪৮নং বিধিমতে সার্কেল চীফ (রাজা) এর সাথে পরামর্শ করে ডেপুটি কমিশনার মৌজা হেডম্যান নিয়োগ করেন, যদিও পরামর্শ গ্রহণ এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। তবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে তার পরামর্শ বিবেচনার দাবী রাখে।
হেডম্যান পদটি বংশানুক্রমিক নয়। তবে হেডম্যানের উপযুক্ত পুত্র হেডম্যান পদে নিয়োগ লাভের বেলায় অগ্রাধিকারের দাবী রাখেন।
হেডম্যানের ক্ষমতা ও কার্যাবলী:
ক. ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৩৮নং বিধিতে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মৌজা হেডম্যান নিষ্ঠার সাথে তার মৌজার জন্য নির্ধারিত খাজনা আদায় করেন এবং মৌজার বকেয়া খাজনার হিসাব রাখবেন।
তিনি ডেপুটি কমিশনার, মহকুমা প্রশাসক (বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার) এবং সার্কেল চীফের আদেশ মেনে চলবেন।
তিনি তার মৌজায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন এবং মৌজাস্থিত গ্রামসমূহের চাষাবাদে আয়তনের কোনো পরিবর্তন ঘটলে তৎসম্পর্কে ডেপুটি কমিশনারকে অবহিত করেন।
খ. ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪১নং বিধিমতে হেডম্যান তার মৌজায় জুম চাষ নিয়ন্ত্রণ করেন।
৪২নং বিধিমতে তার মৌজায় বসবাসকারী জুমিয়া জমির মালিকদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করেন।
তিনি পরিবার প্রধানের নাম ও সদস্য সংখ্যা, খাজনা পরিশোধকারী কিংবা খাজনা পরিশোধে অব্যাহতি প্রাপ্ত নতুন বা পুরাতন পরিবার ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত একটি জুম তৌজি (জুমিয়ার তালিকা) প্রস্তুত করে প্রত্যেক বছর ১লা জুনের আগে সার্কেল চীফ তথা রাজার কাছে দাখিল করেন, যা ১লা আগষ্টের আগে ডেপুটি কমিশনারের কাছে রাজাকে দাখিল করতে হয়।
হেডম্যানের (খাজনার) দাবীর অন্ততঃ ৫০% রাজপূণ্যাহ্’র দিন এবং অবশিষ্ট অংশ পরবর্তী বছরের ১লা জানুয়ারীর মধ্যে সার্কেল চীফের কাছে পরিশোধ করেন।
হেডম্যান যদি মনে করেন যে, কোনো প্রজা জুম খাজনা প্রদান থেকে রেহাই পাবার জন্য অন্যত্র পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাহলে তিনি সেই প্রজার সম্পত্তি আটক করতে পারেন এবং বিষয়টি সার্কেল চীফ ও ডেপুটি কমিশনারকে জানাবেন।
যদি কোনো হেডম্যান অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণে অবহেলা করেন, তাহলে সেই প্রজার অনাদায়ী বাজনার জন্য তিনি দায়ী হন। ৪৩ বিধিমতে হেডম্যান তার সংশ্লিষ্ট মৌজার রাজস্ব আদায় করেন। ৪৫ বিধিমতে তিনি ঘাস ও গর্জনখোলার খাজনা এবং ৪৫(বি) বিধিমতে গোচারণ ভূমির ট্যাক্স আদায় করেন।
মৌজার প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের দায়িত্ব: পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪১(এ)নং বিধির বিধানমতে মৌজা হেডম্যান তাঁর মৌজার প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে দায়বদ্ধ। এই উদ্দেশ্যে তিনি নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিবেন:
ক) কোনো মৌজাবাসীকে গৃহস্থলী কাজ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে মৌজার বন সম্পদ, যথাঃ- বাঁশ, কাঠ, বেত ইত্যাদি অন্য কোনো মৌজায় অপসারণ এবং নিবাসী ব্যক্তির দ্বারা অনুরূপ কোনো কিছু অপসারণের কাজে তিনি নিষেধাজ্ঞা জারী করতে পারেন।
খ) মৌজাস্থ কোনো এলাকা/এলাকা বিশেষের বনজ সম্পদ সংরক্ষণের নিমিত্তে ঐ এলাকাকে জুম চাষের আওতামুক্ত ঘোষণা করতে পারেন।
গ) যদি হেডম্যানের বিবেচনায় নবাগত কেউ জুম চাষ করলে পরবর্তী বছর মৌজাবাসীর জুম চাষে জমির সংকট দেখা দেবে বলে মনে হয় তাহলে তিনি তার মৌজায় নবাগতদের জুম চাষ নিষিদ্ধ করে দিতে পারেন।
ঘ) জুম চাষের জন্য ক্ষতিকর প্রতীয়মান হলে হেডম্যান তাঁর মৌজায় গোচারণ নিষিদ্ধ করে দিতে পারেন।
বসত বাড়ীর জন্য খাস জমি বন্দোবস্তী/দখলে রাখার অনুমতি প্রদানের ক্ষমতা: জেলা প্রশাসকের আনুষ্ঠানিক বন্দোবস্তী ব্যতিরেকে পৌর এলাকা বহির্ভূত মৌজায় মৌজা হেডম্যান তার মৌজার কোনো পাহাড়ি বাসিন্দাকে বসতবাড়ী নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ০.৩০ একর জমি ভোগ দখলে রাখার অনুমতি দিতে পারেন। তবে এসব বসতবাড়ীর জন্য দখলভুক্ত জমির হিসেব রাখার জন্য তাকে একটা আলাদা রেজিষ্টার তৈরী করে রাখতে হয় (বিধি নং- ৫০(১)।
ভূমি: সরকারী ভূমি বন্দোবস্ত, হস্তান্তর, বিভক্তি এবং পুনঃ ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মৌজা হেডম্যানের সুপারিশ প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে (৩৪(১)(ii) বিধি)।
হেডম্যান অপসারণ: পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪৮নং বিধিতে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ডেপুটি কমিশনার যে কোনো মৌজা হেডম্যানকে অযোগ্যতা ও অসদাচরণের কারণে সার্কেল চীফকে জানিয়ে হেডম্যান পদ থেকে অপসারণ করতে পারেন।
ব্যাখ্যাঃ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর গ্রাম বা পাড়া পর্যায়ের কার্বারী পদ চাকমা সমাজেও প্রচলিত রয়েছে। যদিও পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিতে কার্বারী নিয়োগের উল্লেখ নেই, তবে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে কার্বারী পদের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কার্বারীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে পার্বত্য জেলা পরিষদ অদ্যাবধি কোনো বিধি-বিধান প্রণয়ন করেনি।
সার্কেল চীফ ও হেডম্যানের বিচারিক ক্ষমতা
১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের ১৮ ধারাবলে প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪০ বিধিতে ভিন্ন কিছু উল্লেখ না থাকলে, মৌজা হেডম্যানগণ সংশ্লিষ্ট মৌজার অধিবাসী কর্তৃক আনীত বিরোধীয় সকল বিষয়ের উপর বিচারপূর্বক সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।
তারা সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের প্রচলিত সামাজিক রীতি অনুসারে আদিবাসী মোকদ্দমাসমূহের বিচার করেন।
এ ধরণের বিচারে হেডম্যান সর্বোচ্চ ২৫ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন এবং অন্যায়ভাবে সংগৃহীত বা চোরাই মালামাল ফেরত প্রদানে বাধ্য করতে পারেন।
তা ছাড়া এতদবিষয়ে জেলা প্রশাসকের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত দোষী ব্যক্তিকে আটক রাখবার আদেশ দিতে পারেন।
এই বিধিতে ভিন্ন কিছু বর্ণিত না থাকলে সার্কেল চীফ, খাস মৌজার হেডম্যান হিসেবে তাদের নিকট মীমাংসার জন্য উপস্থাপিত বিরোধীয় সকল বিষয়ের উপর বিচার পূর্বক সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারেন।
অনুরূপ আদিবাসী বিরোধসমূহ, যা হেডম্যানদের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রেরিত বা হেডম্যানগণ নিজেরাই দাখিল করেছেন সেই বিরোধগুলোও সার্কেল চীফ একইভাবে বিচার নিষ্পত্তি করেন।
সার্কেল চীফ ৫০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন এবং অবৈধভাবে লব্ধ কোনো জিনিষ/মালামাল ফেরত প্রদানে বাধ্য করতে পারেন।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর জেলা প্রশাসকের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত দোষী ব্যক্তিকে আটক রাখবার আদেশ দিতে পারেন।
আদিবাসী মামলার রায়সমূহের রিভিশন পর্যায়ে সাধারণ অধিক্ষেত্র হিসেবে জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে গণ্য হয়।
সার্কেল চীফ অথবা হেডম্যান কর্তৃক প্রদত্ত কোনো মামলার রায়ে আরোপিত শান্তি তারা কার্যকর করতে ব্যর্থ হলে আরোপিত শান্তি কার্যকর করবার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করতে পারেন।
সার্কেল চীফ অথবা হেডম্যানগণ কর্তৃক বিচার্য মোকদ্দমায় কোনো কোর্ট ফি প্রদান করতে হয় না।
এরূপ মামলায় আরোপিত ভূরিমানা সংক্ষুব্ধদের মাঝে (যদি থাকে) এবং সামাজিক প্রথা অনুসারে সমষ্টিগতভাবে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হয়।
সামাজিক রীতিসিদ্ধ হলে সমষ্টিগতভাবে বাটোয়ারাকৃত অনুরূপ জরিমানার সমপরিমাণ অংশ সার্কেল চীফ এবং হেডম্যান পাবার অধিকারী।
কিন্তু যেভাবেই হোক না কেন, কোনো নজরানা বা বিচার সম্পর্কিত বিষয়ের জন্য প্রয়োজন এই অযুহাতে অন্য কোনো কিছু আরোপ করা যায় না।
তবে শর্ত থাকে যে, সার্কেল চীফ অথবা মৌজা হেডম্যানগণ জেলা প্রশাসকের অনুমোদনক্রমে বিচার সম্পর্কিত ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিস আদায় করতে পারেন।
মন্তব্যঃ সার্কেল চীফ ও মৌজা হেডম্যানগণ কর্তৃক আদিবাসীদের সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তির এই ক্ষমতা তৎকালীন জেলা প্রশাসক এস.জেড. খানের স্মারক নং- ১২৪৩(৪০০)/সি, রাঙ্গামাটি, তারিখঃ ৫ মে ১৯৬৪ মূলে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে স্বীকার করা হয়েছে।
সময়ে সময়ে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এই বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে, সার্কেল চীফ অথবা হেডম্যানগণ নিম্নের আলোচ্য বিধি মোতাবেক তাদের নিকট বিচারের নিমিত্তে উপস্থাপিত আদিবাসী মামলা ব্যতীত অন্য কোনো ফৌজদারী বা দেওয়ানী মামলার বিষয়ে ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী হয় না।
এই বিধি অনুযায়ী সার্কেল চীফ এবং হেডম্যানগণের সকল রায়ের উপর সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের রিভিশনাল ক্ষমতা এবং সমন্বিত অধিক্ষেত্র রয়েছে।
নিম্নে নির্দিষ্টকৃত অপরাধসমূহ অত্র বিধিমতে সার্কেল চীফ ও হেডম্যানের বিচার ক্ষমতা বহির্ভূত, যথাঃ
ক) রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অধীনে কর্মরত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ অথবা গণনীতির বিরুদ্ধে অপরাধ।
খ) মারণাস্ত্রসহ সংঘটিত দাঙ্গা অথবা গুরুতর আঘাতের কারণ হতে পারে এমন দাঙ্গা।
গ) ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংঘটিত নিম্নে বর্ণিত অপরাধ যথাঃ- খুন, অপরাধমূলক নরহত্যা, ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত গুরুতর আঘাত, অবৈধ অবরোধ, ধর্ষণ, অপহরণ, মনুষ্যহরণ এবং অস্বাভাবিক অপরাধসমূহ।
ঘ) বলপূর্বক সম্পত্তি গ্রহণ, দস্যূতা, ডাকাতি, অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ, গৃহে অনধিকার প্রবেশ, অপথে গৃহে প্রবেশ (যখন ৫০ টাকার অধিক মূল্যের সম্পত্তি জড়িত থাকে)।
ঙ) জালিয়াতি।
চ) ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের ৪র্থ পরিচ্ছেদে বর্ণিত ১১ ধারা (আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ দখলে রাখা এবং বারুদ প্রস্তুত করা), ১২ ধারা (দা, বল্লম, তীর, ধনুক ইত্যাদি জেলা প্রশাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর হেফাজতে রাখা), ১৩ ধারা (বিষাক্ত মাদক হেফাজতে রাখা), ১৪ ধারা (বিদেশী স্পিরিট ও চোলাই মদ জেলা প্রশাসকের প্রদত্ত লাইসেন্স ব্যতিরেকে হেফাজতে রাখা), ১৫ ধারা (স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত স্পিরিট ও চোলাই মদ লাইসেন্স ব্যতিরেকে বিক্রয় করা) ইত্যাদি অপরাধ।
(বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন ১৯৯০ সনের ২০নং আইনের ১০(২)(খ) ধারায় নিম্নরূপ শর্তাংশ সংযোজিত হয়েছেঃ রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসমূহের আদিবাসীগণ কর্তৃক ঐতিহ্যগতভাবে প্রস্তুতকৃত মদ, উক্ত জেলাসমূহের আদিবাসীগণ কর্তৃক পান করার ক্ষেত্রে, এই উপধারার কোন কিছুই প্রযোজ্য হয় না)।
ছ) জেলা প্রশাসক কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া হয় সে সকল বা সে সব শ্রেণীর অন্যান্য অপরাধ।
১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন এর সংশোধনী (২০০৩ সনের ৩৮নং আইন) আইনের ৪(৪) ধারার বিধান নিম্নরূপঃ-
যুগ্ম জেলা জজ জেলার দেওয়ানী মোকদ্দমা সংক্রান্ত ব্যাপারে আদি অধিক্ষেত্র হিসেবে প্রচলিত আইন, প্রথা ও রীতিনীতি অনুসারে বিচার কার্যক্রম সম্পাদন করেন। তবে আদিবাসীদের মধ্যে উদ্ভূত পারিবারিক ও প্রথাগত আইনের বিষয়ে যুগ্ম জেলা জজের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান ও সার্কেল চীফের বিচারালয়ের মাধ্যমে তা নিষ্পন্ন হয়।
পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের (১৯৮৯ সনের ১৯, ২০ ও ২১নং আইন) ৬৬ ধারায় সার্কেল চীফ বা মৌজা প্রধান কর্তৃক বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বিধান নিম্নরূপঃ
ক) সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী এমন আদিবাসীদের মধ্যে কোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা পারিবারিক বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে বিরোধটি নিস্পত্তির জন্য স্থানীয় কার্বারী বা হেডম্যানের নিকট উত্থাপন করতে হয় এবং তিনি সংশ্লিষ্ট আদিবাসীগণের মধ্যে প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী বিরোধের নিস্পত্তি করেন।
খ) কার্বারীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হেডম্যান, হেডম্যানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ এবং সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আপীল করা যায় এবং কমিশনারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়।
গ) সার্কেল চীফ বা কমিশনার কোনো আপীল নিস্পত্তির পূর্বে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী হতে তৎকর্তৃক মনোনীত অন্যূন ৩ জন ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করেন।
ঘ) সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ প্রবিধান দ্বারা এই ধারায় উল্লেখিত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য-
১. বিচার পদ্ধতি
২. বিচার প্রার্থী ও আপীলকারী কর্তৃক প্রদেয় ফিস নির্ধারণ করতে পারেন।
ব্যাখ্যা: বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাকে তিন পার্বত্য জেলা রূপে প্রশাসনিকভাবে বিভক্তির পর বর্তমানে আদিবাসী সমাজের জাতীয় প্রধান হলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলাতে বোমাং চীফ, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে মং চীফ এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় চাকমা চীফ।
উল্লেখ্য যে, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলা বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত, অনুরূপভাবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চাকমা সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত, যে কারণে ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪০ বিধিমতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণকে বোমাং ও চাকমা সার্কেলে উন্নত আদিবাসী সমাজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে উদ্ভূত বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে জেলার অধিক্ষেত্রের বাইরে হওয়ায় অনেক সময় আদালতের অধিক্ষেত্রের প্রশ্নে আইনী জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়, যদিও সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ স্ব-স্ব সার্কেলের প্রধান হিসেবে সমাজের সমাজপতি।
১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন এর সংশোধনী (২০০৩ সনের ৩৮নং আইন) আইনের ৪(৪) ধারায় আদিবাসীদের মধ্যে উদ্ভূত পারিবারিক ও প্রথাগত আইনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মৌজা ও সার্কেল চীফকে বিরোধ নিস্পত্তির সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
একদিকে, ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪০ বিধিমতে সার্কেল চীফের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশানের অধিক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক।
পক্ষান্তরে, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৬৬(২) ও ৬৬(৩) ধারামতে সার্কেল চীফের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এর নিকট আপীল দায়ের ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যার কারণে সামাজিক বিরোধ চূড়ান্ত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এ অধিক্ষেত্রের প্রশ্নে আইনী দ্বন্দ্বের উদ্ভব হয়েছে, যা ন্যায় বিচারের পথে অন্তরায়।
কার্বারী আদালত: ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিতে কার্বারী নিয়োগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো কিছু উল্লেখ না থাকলেও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৬৬(১) ধারাতে কার্বারী পদের স্বীকৃতি রয়েছে।
পার্বত্য জেলাসমূহের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব, বিরোধ, সামাজিক সমস্যা, নারীঘটিত কোনো সামাজিক মোকদ্দমার উদ্ভব হলে তা নিষ্পত্তির প্রাথমিক দায়িত্ব কার্বারীর উপর বর্তায়।
সচরাচর সংশ্লিষ্ট সার্কেলের রাজা বা চীফ প্রত্যেক মৌজায় প্রত্যেক পাড়া বা গ্রামের জন্য একজন করে কার্বারী নিয়োগ করে থাকেন।
মৌজা হেডম্যানও তার প্রশাসনিক ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে মৌজার কোনো কোনো পাড়ায় কার্বারী নিয়োগ করেন, যারা রাজা বা সরকার থেকে ভাতা পান না।
ব্যাখ্যা: মৌজা হেডম্যান সাধারণতঃ গ্রাম কার্বারীদের সমন্বয়ে গঠিত সালিশী বোর্ডের মাধ্যমে উদ্ভূত বিরোধ মামলা নিষ্পত্তি করে থাকেন।
কার্বারী পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পন্ন হবার পর সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পক্ষ হেডম্যান আদালতে শরণাপন্ন হলে মৌজা হেডম্যান সাধারণতঃ গ্ৰাম্য কার্বারীদের সমন্বয়ে গঠিত সালিশী বোর্ডের মাধ্যমে বিরোধ/মামলা নিষ্পত্তি করে থাকেন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮৯ সনের পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৬৬ ধারায় কার্বারী আদালতের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমানে কার্বারীগণ সরকার হতে সম্মানী ভাতা পেয়ে থাকেন। কার্বারী আদালতের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রথমে হেডম্যান আদালতে, পরবর্তীতে সার্কেল চীফ আদালতে শরণাপন্ন হয়।
উল্লেখযোগ্য সামাজিক বিরোধ ও অপরাধসমূহঃ
১) একজনের চিহ্নিত জুমে চাষ করা;
২) একজনের জুম হতে জোর পূর্বক ফসল তুলে নেয়া;
৩) একজনের গৃহপালিত পশু পাখি চুরি করা;
৪) গৃহপালিত পশু-পাখি মালিকের অনুমতি বা সম্মতি ব্যতিরেকে দখল বা হত্যা করা;
৫) সকলের ব্যবহার্য পানির উৎস থেকে পানি প্রবাহ ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা শত্রুতাবশতঃ অসৎ উদ্দেশ্যে বাধা সৃষ্টি বা নষ্ট করা;
৬) অপরের বনজ ও ফলজ বাগানের ক্ষতিসাধন করা;
৭) সর্বসাধারণের চলাচলের পথ দখল বা তা ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা;
৮) ধর্মীয় স্থান ও শ্মশানের পবিত্রতা নষ্ট করা;
৯) কোনো প্রকার অপোড়ন অঙ্গভঙ্গি, কুৎসিত ইশারা-ইঙ্গিত বা অশালীন শব্দ প্রয়োগের দ্বারা কারো সভ্রম ও সম্মানহানি করা;
১০) নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মত্ত আচরণের দ্বারা কোনো ব্যক্তির পরিবারের বা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা;
১১) নিজ পরিবারের পোষ্যদের উপর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা;
১২) পরিবাবের বা সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে অসদাচরণ করা;
১৩) দাম্পত্য কলহ দ্বারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা;
১৪) বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে জনগণের মধ্যে (সমাজে) বিরোধ সৃষ্টি করা;
১৫) বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক মিলনে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হওয়া;
১৬) গ্রাম, পাড়া, সমাজ বা পরিবারের শান্তি ও সুস্থিতি নষ্ট করা (Public Nuisance);
১৭) পোষ্যদের ভরণ-পোষণ প্রদানে অসম্মত হওয়া/অবহেলা করা;
১৮) সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করা;
১৯) অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব কর্তব্যে অবহেলা করা;
২০) সামাজিক ও পারিবারিক শৃখলা ভঙ্গ করা;
২১) বিনা অনুমতিতে অন্যের গৃহে প্রবেশ করা;
২২) চৌর্যবৃত্তি বা অগ্নি সংযোগের দ্বারা কারোর সম্পদ হানি করা;
২৩) দুরাচারের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের মর্যাদা ক্ষুন্ন করা;
২৪) নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা;
২৫) গৃহকর্তা বা লোকজন না থাকাবস্থায় শূন্য বাড়ীতে প্রবেশ করা;
২৬) স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে এমন কোনো কাজ করা;
২৭) দত্তক সন্তানের উত্তরাধিকার কিংবা ভরণপোষণ প্রশ্নে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি করা;
২৮) উত্তরাধিকারযোগ্য বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি ভাগবন্টন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করা;
২৯) বসতভিটার সীমানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করা বা জোর পূর্বক অন্যের জমি দখল করা;
৩০) পর সম্পদ আত্মসাৎ করা;
৩১) নিষিদ্ধ সম্পর্কের কিংবা ভিন্ন ধর্ম বা সম্প্রদায়ের পুরুষ বা মহিলার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা;
৩২) ঋণ অথবা দায়-দেনা পরিশোধ না করা;
৩৩) সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন বা অমান্য করা এবং এ উদ্দেশ্যে অন্যদের উস্কানি দেওয়া;
৩৪) বেপরোয়াভাবে ও নির্বিচারে পশু-পাখি শিকার;
৩৫) মিথ্যার আশ্রয়ে কারোর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো, দুর্নাম রটানো বা বিনা কারণে বিরোধ সৃষ্টি করা;
৩৬) কারোর ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস কিংবা অনুভূতিতে আঘাত করা;
৩৭) পরকীয়ার মাধ্যমে কারো দাম্পত্য শান্তি নষ্ট করা;
৩৮) আঘাত বা ক্ষতিকর দ্রব্য প্রয়োগ দ্বারা কারো স্বাস্থ্যহানি কিংবা কারোর জীবনের ঝুঁকি সৃষ্টি করা;
৩৯) সংস্কৃতি চর্চা ও শিক্ষা গ্রহণের বেলায় বাধা সৃষ্টি করা;
৪০) অপরাধ সংঘটনে কিংবা অনৈতিক কাজে উস্কানি বা উৎসাহ দেওয়া;
৪১) নারী ও শিশুর মনে ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি করা;
৪২) কুৎসা রটনার দ্বারা কারো ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে বিপন্ন করা;
৪৩) মাছ কিংবা পশু-পাখি শিকারে বিষটোপ প্রয়োগ করা কিংবা চাষাবাদে বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার দ্বারা পরিবেশের ক্ষতিসাধন করা;
৪৪) মৌজার প্রাকৃতিক বনজ সম্পদ বিনষ্ট করা;
৪৫) উত্তরাধিকার প্রশ্নে অংশীদারগণের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করা/বিরোধে লিপ্ত হতে উস্কে দেওয়া;
৪৬) মামা কর্তৃক ভাগিনার স্ত্রীকে, ভাসুর কর্তৃক ভাইয়ের স্ত্রীকে, শ্বশুর কর্তৃক পুত্রবধূকে মারধর করা এবং স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে মারধর করা;
৪৭) অবৈধ গর্ভধারণ ও গর্ভপাত করা;
৪৮) পতিতাবৃত্তির পেশা গ্রহণ করা;
৪৯) বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে চোলাই মদ বিক্রি ও পাচার করা;
৫০) কোনো একজনের জাঁক থেকে বিনা অনুমতিতে মাছ ধরা।
তথ্যসূত্র :
১। Act XXII of 1860 Printed in Selections from the Correspondence on the Revenue Administration of the Chittagong Hill tracts (1862-1927).
২। Rules for Territorial Circles in Chittagong Hill tracts. 1884 (Printed in Selections from the Correspondence on the Revenue Administration of the Chittagong Hill tracts).
৩। Rules for the Administration of the Chittagong Hill tracts (1992).
৪। The Chittagong Hill tracts Regulation 1900 (Regulation No. 1 of 1900).
৫। Francis Buchanan in South-Eastern Bengal (1798) Edited by Williem Van Schendel. Dhaka : University Press Lid. 1992
৬। A History of Chittagong, Vol-I. Dr. Suniti Bhushan Qanungo.
৭। Selections from the Correspondence on the Revenue Administration of the Chittagong Hill tracts (1862-1927).
৮। প্রাগুক্ত।
৯। প্রাগুক্ত।
১০। প্রাগুক্ত।
১১। Rules for the Administration of the Chittagong Hill tracts, 1900.
১২। প্রাগুক্ত।
১৩। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯।
১৪। Rules for the Administration of the Chittagong Hill tracts, 1900.
১৫। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯।
১৬। Rules for the Administration of the Chittagong Hill tracts.
১৭। The Chittagong Hill tracts (Amendment) Regulation. 2003.
১৮। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯।
তথ্যসূত্রঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইন (গ্রন্থনা ও সম্পাদনা – এডভোকেট জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, এডভোকেট প্রতিম রায়, সুগত চাকমা) ।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।