আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি কি প্রকৃতিকে সংরক্ষণের পথে নেতৃত্ব দিতে পারবে?
1718
পৃথিবীকে দেওয়া অগ্রাধিকার
স্বাভাবিক বিলুপ্তির হারের চেয়ে প্রায় হাজারগুণে প্রজাতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এটি মানব ইতিহাসের যে কোনো যুগের তুলনায় অত্যন্ত বেশি। বাস্তুসংস্থান (ecosystem) – যেটির উপর সমস্ত জীবন নির্ভর করে বিশ্বজুড়ে এগুলোর দিন দিন অবনতি হচ্ছে।
প্রাণী থেকে পোকামাকড় আর গাছপালা, এবং আদিবাসী সংস্কৃতির দ্রুত হারিয়ে যাওয়া মোকাবেলা না করে জৈব-বৈচিত্র্য ক্ষতির সমাধান সাফল্যের সাথে করা যাবে না। দুটিই একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।
আদিবাসীরা হাজারো বছর যাবৎ জৈব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে আসছে। তারা হাজার হাজার ফসলের জাত, পশুর প্রজাতি এবং অনন্য প্রাকৃতিক ভূচিত্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ কৃষি জৈব-বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছে।
এই চর্চাগুলি আজও তাদের অনেক অঞ্চলে অব্যাহত রয়েছে, নতুন জাতের ফসল এবং গবাদি পশুপাল তৈরি করে যা প্রায়শই আধুনিক সমতুল্যের তুলনায় আরও বেশি প্রাণবন্ত।
সুতরাং এটি বিস্ময়কর যে প্রকৃতির সমৃদ্ধ বৈচিত্র্য আদিবাসীদের ভূমিতে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।
এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে বিশ্বের ৩৭০ মিলিয়ন থেকে ৫০০ মিলিয়ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী জৈব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বৃহৎ আকারে গবেষণা দ্বারা এর সত্যতা পাওয়া যায়। বেশ কিছু গবেষণা থেকে জানা যায়, জীব-বৈচিত্র্য এবং টেকসই সম্পদ ব্যবহার এবং এর নিয়ন্ত্রণ সেই সাথে শিকার, বন থেকে শস্য আহরণ, মাছ ধরা, ফসল চাষ এবং পাস্তোরেলিজম (pastoralism), যা এক ধরনের পশু পালন – এসবের জন্য গতানুগতিক পরিবেশগত জ্ঞান খুবই ফলপ্রসু ।
প্রকৃতির সাথে সম্প্রীতিতে বসবাস করা আদিবাসীদের মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসের একটি অপরিহার্য অংশ।
একটি দৃঢ় কণ্ঠস্বর
তবুও বিশ্বজুড়ে আধুনিকীকরণ, বাণিজ্যিক উন্নয়নের চাপ, স্থল ও সম্পদের সুরক্ষার অধিকারের অভাব, অভিবাসন এবং সাংস্কৃতিক শিক্ষার অভাবের ফলে দেশজ বা আদিবাসী সংস্কৃতি ও অনুশীলনগুলি হ্রাস পাচ্ছে।
ফলস্বরূপ, অনেকে তাদের অনন্য সংস্কৃতি, জ্ঞান ব্যবস্থা এবং নিজ পরিচিতিকে বিলুপ্ত হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করছেন।
অথচ এটা সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে আজকের পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের মূল চাবিকাঠি আছে একমাত্র আদিবাসীদের হাতেই এবং তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জীব-বৈচিত্র্যের ৮০% আদিবাসীদের ভূমিতে অবস্থিত, যেখানে সমস্ত ভূমির কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ ঐতিহ্যগতভাবে আদিবাসীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। স্পষ্টতই, এই সংস্কৃতিগুলি রক্ষা করা দরকার।
জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বৃহত্তর কর্মপন্থার অপরিহার্য অংশ হিসেবে একে রাখতেই হবে। জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের নতুন লক্ষ্যের উদাহরণ হতে পারে আদিবাসী সংস্কৃতিকে রক্ষা করা।
তবুও বেশিরভাগ জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কৌশল এবং লক্ষ্যগুলিতে আদিবাসীদের ভূমিকা স্বীকৃত নয়।
ঐতিহ্যবাহী জৈব-সাংস্কৃতিক অঞ্চল
দৃষ্টিভঙ্গির আমুল পরিবর্তন প্রয়োজন। ২০০৫ সালে IIED এ, যে টেকসই উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট আমি কাজ করি সেই এবং সেখানের সহযোগীরা এই দ্বৈত বিলুপ্তির সংকট মোকাবেলায় জৈবসংস্কৃতির ঐতিহ্যের একটি সংজ্ঞা গড়ে তুলেছিল।
পেরু, পানামা, কেনিয়া, ভারত এবং চীনের ১১ টি আদিবাসী গোষ্ঠীর সাথে আমাদের গবেষণায় আদিবাসী জ্ঞান, জীব-বৈচিত্র্য, ভূদৄশ্য, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ এবং প্রথাগত আইনগুলির মধ্যে একাধিক আন্তঃসংযোগ এবং আন্তঃনির্ভরতা প্রকাশ পেয়েছে।
এগুলি আদিবাসী ভাষার পাশাপাশি জৈবসংস্কৃতির ঐতিহ্যের মূল উপাদান গঠন করে।
এগিয়ে যাওয়ার পথ
আদিবাসী সংস্কৃতি সংরক্ষণে কাজ না করে বিভিন্ন বৈচিত্রের সমৃদ্ধ প্রকৃতি বাঁচানোর প্রচেষ্টা অর্জন করা যায় না।
আদিবাসীদের ভূখন্ডের অধিকার, প্রাকৃতিক সম্পদ, ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি এবং সুরক্ষা দিতে হবে সরকারের।
এবং আদিবাসীদের অবশ্যই জৈব-বৈচিত্র্য বাঁচানোর প্রয়াসের প্রতিটি স্তরে পুরোপুরি এবং কার্যকরভাবে জড়িত থাকতে হবে।
এই বছরের জন্য এটি বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ হবে যখন নতুন বৈশ্বিক জীব বৈচিত্র্যের লক্ষ্যগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এটি কেবল প্রকৃতি ও মানবজাতির সম্প্রীতির সাথে জীবনযাপনের চাবিকাঠি নয়, জাতিসংঘের ২০৩০ এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে দরিদ্র ও প্রান্তিক আদিবাসীদের প্রতি সহায়তা বাড়ানোর জন্যও এটি জরুরী।
ক্রিস্টিনা সোয়েদারস্কা (Krystyna Swiderska) কোভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকালচারাল হেরিটেজের একজন পিএইচডি প্রার্থী। এই নিবন্ধটির একটি সংস্করণ মূলত The Conversation UK-তে প্রকাশিত হয় এবং এটি বিশেষ ব্যবস্থায় পুনরায় মুদ্রণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ ঢাকা ট্রিবিউন
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।