­­বম রূপকথা: উসুরের গল্প (২য় পর্ব)

Jumjournal
Last updated Jan 17th, 2020

888

featured image

বাঙালীদের যেমন গোপাল ভাড়, বমদের উসুর। উসুরের আদি নিবাস নিয়ে নানান মত। তবে তার অধিকাংশ হাস্যরস শংখ নদী এবং তার দু’কূলের মানুষকে ঘিরে।

তারাছা খালের ওদিকের বমদের কাছে উসুর খুব পরিচিত নাম নয়। রাঙ্গামাটির সাজেক বা লঙ্কর ওদিকের বমদের তো নয়ই।

শংখ নদীর দু’কূলে তার অসংখ্য চিহ্ন। রুমা ও বান্দরবানের মধ্যবর্তী গ্রা-উ বাজারের কাছাকাছি তার কয়েকটি প্রমাণ পাবেন। তারাছা মুখে উসুরের কবুতরের খোপ দেখতে পাবেন।

গ্রা-উ বাজারের সামান্য উজানে উসুরের রৌদ্র শুকানো নৌকাবহর (উসুর লং) দেখবেন। পাহাড় থেকে বাঁশ নামানোর চিহ্ন, পাথরে ক্ষতচিহ্ন দেখতে পাবেন।

উসুর কর্মটি জানে না

 উসুর ঘর জামাই হইয়াছে। তেংলাম খুব সুন্দরী এবং ভাল মেয়ে তাই বছর দুই-এর জন্য ঘর জামাই হইতে বাবা-মার আপত্তি নাই। মাস যায় বছর যায়, উসুর ও তেংলাম-এর কোলে কোন সন্তান আসে নাই। শাশুড়ী নাতির মুখ দেখিবার জন্য উগ্রীব হইয়া দিন গণে।

সন্তান না আসিবার সংগত কারণ খুঁজিতে খুঁজিতে শ্বশুর একদিন আবিষ্কার করে যে, উসুর আসলে কর্মটি জানে না। শ্বশুর উদাহরণ দেখাইবার মতলবে বলিল, “বাবা উসুর, ঘরের চাল ফুটা হইয়া গিয়াছে। নূতন ছন আনিয়া চালটি ঠিক কর।”

উসুর চালে উঠিয়া আঁটি আঁটি বাঁধিয়া পুরান ছন সরাইতেছে। এমনি সময় চালের ফাঁক দিয়া দেখিতে পায় যে, তাহার শ্বশুর আর শাশুড়ী ধ্বস্তাধ্বস্তি করিতেছে।

অবলা নারীকে নীচে ফেলাইয়া পুরুষ জাতির নগ্ন আক্রমণ, কেমন কথা! অবলা নারী জাতির উপর এ হেন অত্যাচার উসুর কোনভাবে সহ্য করিবে না। এ জঘন্য অন্যায়।

অতর্কিতে নীচে নামিয়া আসিয়া এক রকম জোর করিয়া শ্বশুর-শাশুড়ীর ধ্বস্তাধ্বস্তি থামাইয়া দিল। অবলা নারীর প্রতি পুরুষ জাতির ন্যাক্কারজনক আগ্রাসন থামাইয়া নিজেকে নারী জাতির উদ্ধারকারী এবং শান্তিবাদী ঠাহর করিয়া মনে মনে পুলক অনুভব করিল।

আম পাড়িব কেমন করিয়া

উসুর বাড়ী ফিরিতেছে। তিন তিনটি বড় পাহাড় ডিঙ্গাইয়া শরীর ক্লান্ত। তাই গাছের নীচে চিৎ হইয়া জিরাইয়া নিল । উপরের দিকে তাকাইয়া দেখে জংলী আম। পাকা আমে গোটা গাছই ছাইয়া গিয়াছে। লোভ হইল।

কিন্তু আম পাড়িব কেমন করিয়া —- ভাবিতে ভাবিতে দেখিতে পাইল, এক কাঠবিড়ালী তাহার চারটি পা কার্যকরভাবে ব্যবহার করিয়া অনায়াসে এই ডাল হইতে ঐ ডালে আরোহণ করিয়া পাকা পাকা আম খাইতেছে। এইত কায়দা জানিয়া ফেলিল।

কাঠবিড়ালীর মত সেও আম পাড়িবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ঝুড়ি (বোম ভাষায় পাইপের) পিঠে ঝুলাইয়া গাছে উঠিল। এই ডাল ঐ ডাল বাহিয়া পাকা আমে ঝুড়ি ভরিল। এখন নামিবে কেমন করিয়া।

দেখে যে, কাঠবিড়ালী নামিতেছে। উল্টাভাবে নীচের দিকে করিয়া দিব্যি অনায়াসে নামিয়া পড়িল। তা-ইত, এইভাবে নামিতে হয়। যেই ভাবা সেই কাজ।

কাঠবিড়ালীর মত উল্টাভাবে মাথা নীচের দিকে করিয়া শক্ত করিয়া গাছটিকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া যেই নামিতে উদ্যত হইল অমনি ঝুড়ির আম সব পড়িয়া গেল। ঝুড়ির ওজনের টানে হাত দুইটিও পিছলাইয়া গেল।

আর উসুর মাটিতে দুরমুর করিয়া পড়িল। যেখানে মাথা ঠেকিল এক হাত মাটি গর্ত হইল।

এক বুড়ী বিধবা গর্তটি দেখিয়া কোন দয়াবান তাহার কচু লাগাইবার জন্য গর্ত করিয়া দিয়াছে ভাবিয়া যত্ন করিয়া এক গাছা কচু গর্তে ফেলিল।


লেখকঃ জির কুং সাহু

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা