ম্রো রূপকথা: পুর ক্লাংওয়া সাংচিয়া (ব্যাঙ কুমার)

Jumjournal
Last updated Jul 14th, 2020

1533

featured image

অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিলেন এক রাজা । রাজার ছিল সাত মেয়ে ।

একদিন রাজা ঘোষণা করলেন যে, “কে আমার এক কানি জমি একদিনে চাষ করতে পারবে?”

রাজার কথা শুনে ব্যাঙ বললঃ “মহারাজ, আমি আপনার এক কানি জমি একদিনে চাষ করতে পারব”।

রাজা বললেন, “তুমি একটা ব্যাঙ, কিভাবে আমার এক কানি জমি একদিনে চাষ করতে পারবে?” তখন ব্যাঙ বলল, “আমি পারব কি পারব না এ ব্যাপারে আপনি কিছুই ভাববেন না।

আগে আমাকে অনুমতি দিন। আর আমাকে একদিন সময় দিবেন।” রাজা তাকে অনুমতি দিলেন।

রাজা পর দিন সকালে মাঠে গিয়ে দেখলেন যে, সত্যি তার এক কানি। জমি চাষ হয়ে গেছে।

রাজা আবার ঘোষণা করলেন যে, “আমার এক কানি জমিতে কে এক দিনের মধ্যে ধানের চারা রোপণ করতে পারবে?” তখনও ব্যাঙ বলল, “মহারাজ, আমি রোপণ করতে পারব।

আবারও আমাকে একদিন সময় দিন।” রাজা পুনরায় সময় দিলেন। পরদিন সকালে রাজা মাঠে গিয়ে দেখলেন ঠিক তা-ই হয়েছে।

এমনি করে দিন গেল, মাস গেল। ধান কাটার সময় এসে গেল।

আবার রাজা ঘোষণা করলেনঃ “আমার জমিতে একদিনের ভিতর সমস্ত ধান কে কাটতে পারবে?” ব্যাঙ আবারও বলল ঃ “মহারাজ, আমি এক দিনের ভিতর সব ধান কাটতে পারব”।

তখন রাজা বললেন, “তুমি ক্ষুদ্র একটা প্রাণী, তাও আবার ব্যাঙ। কিভাবে আমার এক কানি জমিতে এক দিনের মধ্যে সমস্ত ধান কাটতে পারবে?

যে কাজ মানুষ এ পর্যন্ত একদিনে করতে পারেনি।” তখন ব্যাঙ বলল ঃ “মহারাজ, অনুমতি দিলে আমি পারব।” মহারাজ ঃ “অনুমতি দিলাম।

কিন্তু একদিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, না হলে তোমার গর্দান যাবে।”

পরদিন ব্যাঙ সকাল থেকে ধান কাটতে শুরু করল এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে ধান কাটা শেষ করে দিল।

আবার রাজা ঘোষণা করলেনঃ “কে একদিনের মধ্যে ধান মাড়াই করতে পারবে ? তাকে আমি একশ আড়ি ধান দেব।”

তখন আবার ব্যাঙ বলল ঃ “আমি পারব মহারাজ।” রাজার অনুমতি পেয়ে একদিনের মধ্যে ব্যাঙ কাজটা শেষ করে ফেলল।

পরদিন সকালে রাজা দেখলেন যে, সব কাজ সত্যি শেষ হয়ে গেল। রাজা ব্যাঙকে একশ আড়ি ধান নিয়ে যাবার জন্য নির্দেশ দিলেন।

তখন ব্যাঙ বলল ঃ “মহারাজ, একশ আড়ি ধান রাখার জন্য গৎ আমার নেই। আপনি বরঞ্চ আমার কানে একশ আড়ি ধান ভরিয়ে দিন।

তখন রাজা ব্যাঙের কানে একশ আড়ি ধান ভরিয়ে দেওয়ার জন্য পিয়াদাকে নির্দেশ দিলেন। রাজার কথা যতো পিয়াদা ব্যাঙের কানে ধান ভরিয়ে দিল।

তখন ব্যাঙ বাড়ীতে গিয়ে তার দাদীকে বলল ঃ “দাদী, ধান রাখার জন্য খ্রং নিয়ে এসো।” ব্যাঙ মাথা নিচু করে ঠুং-এর ভিতর দুই কান থেকে ধান ঢালতে লাগল ।

তার দাদী অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল ঃ “এত ধান কোথায় পেলি?” ব্যাঙ জবাব দিল ঃ “রাজার কাছ থেকে ধান নিয়ে এসেছি।”

তার পর দিন সকালে উঠে হঠাৎ ব্যাঙ তার দাদীকে বলল ঃ “দাদী, আমার জন্য তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।”

তখন দাদী বলল ঃ “কি কাজ বাবা? তুমি যা করতে বলবে আমি তা করব।” তখন সে বলল, “দাদী, আমি রাজার ছোট মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।

এ প্রস্তাবটা তোমার রাজাকে জানিয়ে আসতে হবে।” দাদী বলল, “দেখ বাবা, ওরা হচ্ছে রাজার মেয়ে আর তুমি একটা ব্যাঙ কিভাবে ওকে তুমি বিয়ে করবে ?

তবু তুমি যখন বিয়ে করতে চাইছ, দেখি রাজা কি বলেন?”

ব্যাঙ-এর কথা শুনে রাজা রেগে বললেন, “তোমার নাতি ব্যাঙ আমার মেয়েকে বিয়ে করবে, তুমি কোন সাহস নিয়ে আমার কাছে এ কথা বলতে এসেছ ?”

এই বলে রাজা তাকে মারতে লাগলেন। বুড়ি অজ্ঞান হয়ে গেল এবং অজ্ঞান অবস্থায় রাজা প্রহরীকে ডেকে তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসতে বললেন।

জ্ঞান ফেরার পর দাদী যখন বাড়ীতে ফিরল, তখন তার নাতি জিজ্ঞাসা করল ? “কি হয়েছে দাদী ? তোমার এ অবস্থা কেন ?”

“ আমার কি হয়েছে না হয়েছে দেখ না আমার পিঠে।

আমাকে রাজা মহাশয় অপমান করেছে।” তখন তার নাতি বলল, “দাদী, ও কিছু না। তুমি গোসল করে এসো।”

 পরদিন ব্যাঙ কুমার আবার বিয়ের প্রস্তাব দেবার জন্য দাদীকে পাঠাল। দাদী আবার একই দশায় ভুগল।

রাজা তাকে মারধর করে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিল।

এভাবে ছয় বার যাবার পর যখন সপ্তমবার গেল, তখন রাজা বিরক্ত হয়ে বললেন যে, “যদি এক রাতের মধ্যে আমার রাজপ্রাসাদ থেকে তোমাদের বাড়ী পর্যন্ত সোনা দিয়ে তৈরী একটা রাস্তা আর মাঝখানে মাছ ভরা পুকুর এবং পুকুর পাড়ে চার পাশে ছায়া ঘেরা পুষ্প কানন তৈরি করতে পার, তাহলে আমার ছোট মেয়ের সাথে তোমার নাতীর বিয়ে দিতে অবশ্যই আমি রাজী আছি।”

দাদী ব্যাঙ কুমারকে রাজার কথাগুলো খুলে বলল। এই কথা শুনে ব্যাঙ কুমার খুব খুশী হলো এবং একদিন এক রাতের মধ্যে সে রাজার ইচ্ছা পূরণ করে দিল।

পরদিন সকালে রাজা উঠে দেখলেন, সোনা দিয়ে তৈরী রাস্তা, পুকুর ভরা মাছ এবং পুকুরের চারপাশে পুষ্প কানন।

রাজা যেভাবে চেয়েছিলেন ঠিক তা-ই হল। রাজা খুশী হয়ে। ছোট মেয়েকে ব্যাঙ কুমারের সংগে বিয়ে দিতে রাজী হলেন।

তখন রাজার ছোট মেয়ে মনে মনে চিন্তা করতে লাগল, বাবা যার সাথে আমাকে বিয়ে দিবে সেতো ব্যাঙ।

কিভাবে তাকে আমি স্বামীরূপে গ্রহণ করব । তবুও দুই -একদিনের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়ে গেল।

দুই তিন মাস পর রাজা তার মেয়েকে খবর পাঠালেন যে, তার জামাইকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।

তাঁর মেয়ে যেন জামাইকে নিয়ে একবার বেড়াতে আসে। | আর এদিকে ব্যাঙ কুমার রাত্রে যখন রাজ কন্যার সাথে ঘুমাতে গেল তখন তার ব্যাঙ রূপী পোশাক খুলে এক জায়গায় লুকিয়ে রাখল।

তখন তার সৌন্দর্যে ঘর ভরে গেল। রাজ কন্যা অবাক হয়ে গেল। খুশীতে তার মন ভরে গেল।

আর ভোর হতে না হতেই ব্যাঙ তার পোষাক পরিধান করে আবার ব্যাঙ রূপ ধারণ করল।

এক রাতে ব্যাঙ পোষাক খুলে এক জায়গায় লুকিয়ে রেখেছে। স্বামীর যখন গভীর ঘুম তখন স্ত্রী স্বামী ব্যাঙ-এর চামড়া পুড়িয়ে ফেলল।

তখন থেকে তার স্বামী সম্পূর্ণ রাজ পুত্র হয়ে গেল। যখন ব্যাঙ তার শ্বশুর বাড়ীতে বেড়াতে গেল, তখন শ্বশুর বাড়ীর লোকেরা তাকে চিনতে পারল না।

তারা বলাবলি করতে লাগল, কোনটা আমাদের জামাই। রাজকন্যা তখন বলে দিল ঃ “এই যে দেখো বাবা, মাঝখানেরটা হচ্ছে তোমাদের জামাই

জামাই-এর রূপ দেখে রাজা মহাশয় খুব আনন্দিত হলেন এবং রাজ্যের অর্ধেক ভান্ডার জামাই আর মেয়েকে ভাগ করে দিলেন। এরপর তারা সুখে দিন কাটাতে লাগল।

লেখক: তুমপিয় ম্রো

চিত্রায়নঃ তনময় চাকমা

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা