বড়পরঙঃ মানবিক বিপর্যয়ের একটি বাস্তব চিত্র
2186
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এখন কার না ভালো লাগে। নৌকা, কান্ট্রি বোটে বা লঞ্চে চড়ে আমরা নিয়ত কর্ণফুলী নদীর উত্তর–দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সামনে এগিয়ে যাই, পেছনে ফিরে যাই, ধীরে এগিয়ে যায় আমরা গন্তব্যের পথ ধরে।
নয়নাভিরাম সুন্দর প্রকৃতির মাঝে ডুব দিলে, কখন সময় ফুরিয়ে যায়, আমরা কেউ টের পাই না।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকের দল ট্যুরিস্ট বোটে চড়ে কখনও সুবলং, কখনও বরকল, মারিশ্যা, লংগদু মনের আনন্দে ঘুরে ফিরে তাদের আপন আপন ঠিকানায় ফিরে যায় আবারও, বুকভরা স্মৃতি ধারণ করে।
আমিও কর্ণফুলী নদীর বুক ছিড়ে যতোবার যাওয়া আসা করি ততোবারই অন্যরকম আনন্দ উপভোগ করি।
করবোইনা কেন, কারণ আমাদের প্রাণের কর্ণফুলী লেকটি সারা এশিয়া মহাদেশের বৃহত্ততম এক কৃত্রিম জলাধার।
এ জলাধার আমাদের গৌরব, আমাদের অহংকার। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
তেমনিভাবে পাকিস্তান সরকার এক লক্ষ আজন্ম অধিবাসী পরিবারকে সর্বস্বহারা, তাদের জীবনের সব সম্বল, সব অবলম্বনকে কর্ণফুলীর জলে ভাসিয়ে লাভ করেছে এশিয়ার বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
কর্ণফুলী জলের সাথে মিশে আছে আজও সম্বলহারা মানুষগুলির অঝোরে ঝরা চোখের জল। কাপ্তাই-এ বাঁধ হবে, এলাকাবাসী সকলকে বাস্তুভিটা ছাড়তে হবে।
স্পষ্টভাবে সনটি মনে নেই, কিন্তু ঘটনাগুলো স্পষ্ট মনে আছে আজও, মুরুব্বীরা প্রতিদিন দল বেধে শলা-পরামর্শে মিলিত হচ্ছেন গ্রাম্য মাতব্বরের বাড়িতে।
প্রয়াত হেডম্যান বাবু পূর্ণ মোহন চাকমা আমার নানা হন, গ্রামবাসী সকলেই সকাল, দুপুর, বিকাল আর রাতে পরামর্শ চাচ্ছেন তাদের মুরুব্বী হেডম্যান আমার আজুর কাছ থেকে।
তারা কি করবেন, কোথায় যাবেন, তাদের কি হবে, এখনবা তাদের করণীয় কি?
এদিকে চলছে এলাকায় বড় বড় গাছ কাটিং। আমরা ছেলের দল কাটিং দৃশ্যগুলো মনের আনন্দের দারুণ উপভোগ করছি।
একটা বড় গাছ কর্তন হচ্ছে গু-রু-ম আওয়াজ হচ্ছে আর আমরা হাততালি দিয়ে গলাফাটা চিৎকার করে আনন্দ উল্লাসে মাতছি।
এ জমি, এ ভিটে ছেড়ে অজানার ঠিকানায় চলে যেতে হবে, এমন দুর্ভাবনায় সারাদিন নেই নাওয়া খাওয়া যেমন বুড়োদের, মুরুব্বীদের, তেমনি আমাদেরও নেই নাওয়া খাওয়া আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকার সুখ স্মৃতি উপভোগের মুহুর্ত।
গাছ কর্তনকারীরা কোথায় গাছ কাটবে আমাদের নিত্যদিনের কৌতুহল ছিল অফুরন্ত। যান্ত্রিক করাতে ৩০ সেকেন্ডের সময়ও প্রয়োজন পড়ে না একটি ২৫০-৩০০ বছরের গাছকে কেটে ফেলে দিতে।
অসহায় গাছগুলো আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে একে একে বিকট আওয়াজ তুলে মৃত্যুযন্ত্রণা কাতর শেষ গোঙ্গানী দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অপরাপর মাঝারি, ছোট গাছগুলোর গায়ের উপর।
আর তারাও এত্ত বড় দানবীয় চেহারার বৃক্ষের ভার সইতে না পেরে নীচে পিষ্ট হয়ে অস্থির যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে।
পুরো জুড়োছড়ি এলাকা যেন আর্তনাদ করছে সাঁড়াশির নির্মম কাটার যন্ত্রণায়, আর সেসব দৃশ্যাবলী দেখে আমরা সবাই উৎসবে মাতোয়ারা তখন।
এদিকে মুরুব্বী, বড়দের চোখে মুখে রাঙ্গা কালো ভয়ার্ত ভাব। কেউই কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি তাঁদের করণীয় সম্পর্কে।
হেডম্যান আজুসহ অন্যান্য বর্ষীয়ান মুরুব্বীদের অভিমত, মরি কী বাঁচি এখানে থাকাই উত্তম হবে। কিন্তু অনেকেই মুরুব্বীদের অভিমতের সাথে সহমত পোষণ করতে নারাজ।
তাঁদের মতে এখানে থাকা মানে নির্ঘাত অপমৃত্যু, বরং চলে যাই বরপরঙ-এ। সে বরপড়ঙ কোথায়, কোন দিকে আসল গন্তব্যের পথ তখনও কারোরই জানা নেই।
সম্ভবত ১৯৫৮ সালের শেষদিকে হবে, একদিন সকাল বেলা চারদিকে হৈ হুল্লা, শোরগোল। ভয়ার্ত মানুষ ভয়ে, আতংকে ঘরের বাইরে যাওয়ার সাহস করছে না, কিন্তু সবার কৌতূহলী মন।
একজন কোনোরকম সাহস করে বেরোয়, তাঁর দেখাদেখি এভাবে সকলেই ঘরের বাইরে আসার চেষ্টা করছে, কী ঘটছে সে ঘটনা জানতে। কিছুক্ষণ পর দূরের হৈ হৈল্লা অতি কাছে এলো।
শুধু এই এই এই, ঐ ঐ ঐ শব্দ। পরক্ষণে দেখা গেল বন থেকে মোরগ-মুরগী উড়ে আসছে (কুড়ো বন্যা) শত নয়, হাজার হাজার।
সেগুলোকে ধরতে নানা বয়সী লোকজন, নারী, পুরুষ, ছেলে, যুবা দৌড়াদৌড়ি করছে, আর নানা উল্লসিত শোরগোল আক্রমণকারী লোকদের।
কেউ লাঠি দিয়ে, কেউ লম্বা বাঁশ দিয়ে, কেউবা বন্দুক দিয়ে মোরগ-মুরগি মারছে, শুধুই মারছে। যেখানে মারছে সেখানেই ফেলে যাচ্ছে, কে কোনটি, কয়টি মেরেছে তার হিসেব রাখে না শুধুই মারছে আর মোরগ-মুরগিগুলো মরা, আধামরা হয়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এভাবে ছোট, বড়, মাঝারি সাইজের হাজার হাজার মোরগ-মুরগী জীবন্ত, অর্ধমৃত অবস্থায়। কোন অলৌকিক ঘটনায় সেটি ঘটেছে, তা আগে কেউ যেমন দেখেনি, তেমনি আর আমার জীবনে দ্বিতীয়বার ঘটেনি।
মানুষ যা মেরেছে তার শতগুণ শুধু পঁচে গিয়েছেসে সব মারা বন মোরগ-মুরগীগুলো। এখন চিন্তা করি বন জঙ্গল সাবাড় করায় তাদের আবাসস্থল হঠাৎ ন্যাড়া হলে পথ হারিয়ে লোকালয়ে এসে পড়েছে, তাদেরও সম্ভবত বরপরঙই ঘটেছিল।
আমাদের বৌদ্ধ সমাজ আজকের মত সদ্ধর্মের আলোর মুখ যদি সেদিন দেখতো তারা কখনই সেসব প্রাণীদের প্রাণ সংহার কর্ম করতো না।
ধর্মের পরিশুদ্ধ জ্ঞানের অভাবজনিত কারণেই তাঁরা সেদিন বিনাদ্বিধায় সবাই অধর্ম কাজে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনা তখন পাড়াবাসীকে খুব করে নাড়া দেয়।
প্রকৃতি পূজারীরা এ ঘটনা অশুভ সংকেত ধরে নিলো এবং এদেশে থাকা আর নিরাপদ নয়, এ সিদ্ধান্ত স্থির হলো, তাই বর পড়ঙ ছেড়ে যাওয়া আর কোন পথ খোলা নেই।
পাড়াবাসী, এমনকি পরিবারও বিভক্ত হলো। একদল মাতৃভূমি ছাড়া কোথাও যাবে না, আরেক দলের মত – এদেশে থাকাটা কোনভাবেই নিরাপদ নয়।
দেশ ছেড়ে যাবার দল প্রস্তুতি নিলো, যাবে। যে বলা সেই কাজ, বিদায়ের পালা। পুরো পাড়া, পুরো জুড়াছড়ি এলাকা যেদিকে কর্ণগোচর হয় সেদিক থেকেই কান্নার বাঁধভাংগা জোয়ার, আর্তচিৎকারের কণ্ঠ, অব্যক্ত বেদনার তীব্র জ্বালায় কেউ কাউকে ছাড়া যেতে চায় না, কেউ বাঁধা দেয় যেতে, কেউবা চায় সাথে নিতে।
যাবার দল ঘর থেকে বেরোয় আবার ঢোকে। প্রত্যেকের মাথায় এক একটা কাল্লোং, বারেং যার যার গৃহস্থালী সম্পদ সবই কাল্লোং আর বারেঙের ভেতর।
অজানা গন্তব্যে যাত্রার দল কদ্দুর সামনে যায় পরশীরা কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে বিদায় দেয় আর সামনে গমনকারীরাও পেছনে এগিয়ে দেয়।
এভাবে চিরদিনের মতো, জম্মের মতো আর দেখা না পাওয়ার বিরহ ব্যথা ভরা মন নিয়ে চলছে বিদায় পর্বগুলো নানা পাড়া নানা স্থানে।
পাড়াগুলোর জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। যারা বরপরঙে যাবে না তারা কোথায় নির্দিষ্ট করবে তাদের ঠিকানা সে সিদ্ধান্ত তাদের কারোর নেই।
সবার চোখে মুখে দুঃশ্চিন্তার কালো চাপ আর স্বজন হারানোর বিরহ বেদনা। এর মধ্যে দু-একটা পরিবার গ্রামের পার্শবর্তী উঁচু টিলা জায়গায় যেখানে কাপ্তাই বাঁধের পানি উঠবে না সে উঁচু স্থানে যার যার পছন্দসই বসত ভিটের জন্যে পাহাড়ে জঙ্গল সাফ করার কাজে আস্তে আস্তে নেমে পড়লো।
তাদের দেখাদেখি অনেকেই শুরু করে দেয় বসত নির্মাণ কাজ, তবুও মনের ভেতরে সবার এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করছে। সবাই অমনযোগী হয়েই কাজ করে চলেছে।
একে তো বংশপরম্পরার আবাসস্থল ছেড়ে যাওয়ার তাগিদ, অপরদিকে অন্ধকারময় ভবিষ্যতের কিনারা কি হবে সে দুর্ভাবনায় আড়ষ্ট মানুষের মন-অন্তর।
দেখতে দেখতে এরই মধ্যে কাপ্তাই বাঁধের পানি শলক খালের দু’কূল ভরিয়েছে। ভাসন্যা বেপারীদের নৌকায় বেপারীরা নানা মালামাল বিক্রির জন্য আনছে সেগুলো খালি হচ্ছে নিচ্ছে পানির দরে কিনে নানা পণ্য।
গবাদি পশু, তামা পিতলের সরঞ্জাম থেকে শুরু করে হরেক রকমের মালামাল। যারা দেশে থাকবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তবু স্থির ছিল না তাই তারাও বিক্রি করেছে তাদের সম্বল সব।
আমরা ভাসন্যা বেপারীর বড় নৌকা দেখে হই খুশিতে আটখানা। বাবারা পণ্য বেচবে আর আমরা মোয়া মুড়ি খেয়ে মজা করবো।
কিইনা সুখের মুহুর্ত আমাদের। তখন বিপদ, দুঃসময় কি জিনিস আমরা কি জানতাম, না বুঝতাম? দেখতে দিন সপ্তাহের মধ্যেই শত শত বছরের পাড়া, ভিটেমাটি, মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তর কর্ণফুলীর ফুলে ফেঁপে ওঠা জলের গভীরে অতলে ডুবে যেতে লাগলো।
অল্প ক’দিনের মধ্যে পুরো জুড়াছড়ি এলাকা জলমগ্ন হয়ে গেলো। বড়পরঙ যাওয়া পরিবারদের পোষা প্রাণীদের তাঁদের সংগে নিতে না পারায়, বিশেষ করে পোষা বিড়াল, কুকুরগুলো এতিম হয়ে পড়ে।
সে সব প্রাণীকুল তাদের মনিব হারিয়ে, খাদ্য আশ্রয়ের অভাবে দিনরাত অবিরাম আর্তচিৎকার করে নিজেদের অসহায়ত্বের অবস্থাগুলো প্রকাশ করতে থাকে।
নিরাশ্রয় প্রানীকুলগুলো কোথায় যাবে, কোথায় মাথা গোজাবে কিছুই কূলকিনারা পায় না। এদিকে ছোটে ওদিকে ছোটে তার মনিব পরিবারের কোন সদস্যের দেখা পায় না।
সাধারণত যদি নিজে কোনো প্রাণী পোষা বা লালন না করে অপরের প্রাণীকূলের আশ্রয়ের চিন্তা করে না। তেমনি সে এতিম প্রাণীকূলও নিজের মনিব ছাড়া অন্য কারোর আশ্রয়ে থাকতে অভ্যস্ত হয় না।
ফলে সেসব প্রাণীকুল বেওয়ারিশ হিসেবে গণ্য হয় আর শুধু অনিশ্চিত পথে প্রান্তরে নানা রোগে আক্রান্ত হয়, যত্রতত্র মারা পড়ে।
জলমগ্ন হওয়া সব মানুষ পাহাড়ের খাদে খাদে শামুকের মতো এক একটি নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হয়, যে যার গৌষ্ঠী, দল বা আত্মীয়স্বজন ও পরিবার নিয়ে।
আমরা বসতি গড়লাম পুরনো ডুবে যাওয়া গ্রামের ঠিক সোজা পশ্চিম পাহাড়ে। যে গ্রামটি বর্তমানে জুড়োছড়ি এলাকায় বনযোগীছড়া নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
আমাদের গ্রামে একসাথে আগে যত সংখ্যক পরিবার ছিল তাদের মধ্য হতে কেউ অন্যত্র চলে যায় আর অন্যত্র হতেও আমাদের সাথে এসে বসতি গড়ে।
এক সময়ের বিশাল এলাকা লোকালয়ে ভর্তি ভূ-ভাগ পরিণত হল কুলকিনারাহীন সাগর সম অথৈ জলাধারে।
দিগন্ত জোড়া বিস্তৃত জুড়াছড়ি মানব ভর্তি বিশাল এলাকা, যা এক পাড়ার সাথে এক পাড়া গা ঘেঁষাঘেঁষি করে নির্মিত বসত ঘর দৃষ্টি সীমা অতিক্রম করে না পারা আজম্ম জনবসতি দেখতে দেখতে চোখের সামনে অথৈ জলের তলায় তলিয়ে গেলো, আর তৈরি হলো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ওঠা এক একটি পাড়ার, মাঝে কয়েক কিলোমিটারের দীর্ঘ ব্যবধান।
ডুবে যাওয়া ভিটে-মাটি, জমি-জমা, পাড়া-গ্রামের নিশানাগুলো কোথায় ছিল এখন কোথায় আছে সেসব স্থানগুলো চিহ্নিত করে করে সর্বস্বহারা মানুষ অনেকদিন, অনেক মাস স্মৃতিতে ভাসিয়ে রাখতে রাখতে একসময় সেসব স্মৃতিগুলোও হারিয়ে ফেলে।
আবারো মনের গভীরে, শুরু হলো নতুন জীবন বেঁচে থাকার তাগিদে দুমুঠো অন্ন যোগানের বাসনায় শুরু হয় কঠোর সংগ্রাম।
দ্রুত বদল হয় মানুষের পেশা, হাল কর্ষণ, জমির ফসল ফলানোর চিরাচরিত অভ্যেস থেকে বিচিত্র জীবনাচার।
কেউ পরিণত হল জেলে, কেউ কাঠুরিয়া, কেউ লেবার, কেউবা নৌকার মাঝি আর কেউবা ভবঘুরে।
সব পরিবার সর্বস্বহারা যেখানে, লেবার পেশায় নিয়োজিত যারা কে দেবে তাদের কাজের সংস্থান? তাই অনেক অনেক পরিবার অনাহার, অর্ধাহারে শুরু করে জীবনের গতি সঞ্চালন।
সে দুঃসহ ও কঠিন জীবনের মুখোমুখি হওয়ার দুর্ভাগ্য আমাদের পরিবারকেও সাদরে বরণ করতে হয়েছে, যা অকপটে স্বীকার করতে আমার একটুও কুন্ঠাবোধ হয় না।
জলে ভাসা পরিবারদের পুনর্বাসনে সরকার বাগান বাগিচা রচনার জন্য নানা ফলের চারা, বিশেষ করে আনারস, আম, লিচুসহ হরেক রকম জাতের ফলদ চারা বিতরণ করে।
কিন্তু অনভ্যস্তও সে সেক্টরে অনভিজ্ঞ বাস্তুহারা, ভূমিহারা পরিবারগুলো এসব চারা কি করবে? পুনর্বাসনের জন্যে যে চারা পরিবারের জন্য এনে দেয়া হয়েছে সে চারা সিংহভাগই পঁচে যায় বা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।
প্রতি পরিবারকে দেয়া হয় ৩০০-৫০০ টাকা কৃষিঋণ বাবদ। সে টাকা পরবর্তীতে সুদে আসলে বিশাল বিশাল অংকে দাঁড়ায়। সম্ভবত অনেকের ঘাঁড়ে আজও রয়েছে ঋণনাদায়ী বা খেলাফি তালিকায় অন্তর্ভুক্তি।
১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বর কী অক্টোবর মাস হবে। তখন নীচু এলাকার পাহাড়বাসী সব পরিবার উপরের পাহাড়ে ও খাদে খাদে বসতি শুরু করেছে।
এক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল চাঁদনী রাতে প্রচন্ড এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের উপড় দিয়ে।
সমতল এলাকায় বিভিন্ন জেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেল। ঘরবাড়ি, গবাদি পশুর যে কী পরিমাণ ক্ষতি হল নিমেষের মধ্যে, তা বলে শেষ হবার নয়।
পার্বত্য এলাকায় অতীতে এ ধরণের ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার ইতিহাস ছিল না বলে বয়স্কদের অভিমত। কিন্তু সে দিনের ঘূর্ণিঝড়টি সারা পার্বত্যবাসীকে হতবাক করেছে।
চোখের সামনে এক মোচড়ে বড় বড় গাছ দুমড়ে মুচড়ে নিশ্চিহ্ন করছে, আর এক স্থানের জিনিস আরেক স্থানে নিয়ে গেছে।
গভীর রাতে বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় মানুষকে হতবিহ্বল করেছে। কিসের অশুভ আলামতে এ ঘূর্ণিঝড় তা এলাকাবাসীকে আরেকটি দুঃচিন্তার কারণ হিসেবে যোগ করে দিয়েছে।
সে দিনের ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডব ও এলাকায় গাছ বাঁশ কেটে উজাড় হয়ে যাওয়া কারণকেই অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে ছুটাছুটি করতে থাকে পাড়াবাসী নানাদিকে এ বাড়ি ওবাড়িতে। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে সবাই এক বা দুই বাড়িতে জড়ো হন।
এক এক দমকা হাওয়া এক এক বার জীবন মৃত্যুর লড়াই যেন আর সবার মনে আতংকের ঝাকুনি দিয়ে যাচ্ছে।
অনেক রাত পর্যন্ত বাতাসের তান্ডব চলে। ধীরে ধীরে বাতাসের বেগ কমে এলে পাড়াবাসী না ঘুমিয়েই এবাড়ি ওবাড়ি খোঁজ খবরাদি নিতে থাকে।
পরদিন সকাল সকাল এবাড়ির লোক ওবাড়িতে, এপাড়ার লোক ওপাড়ায় ঘুরে ঘুরে ক্ষতি নিরুপণ করা শুরু করলো। সেদিনের ঘূর্ণিঝড় এলাকাবাসীর মনে আবারও একবার প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে গেল।
আরেকবার ধাক্কা দিল আমাদের দোদ্যুল্যমান অবস্থায় থাকা মানুষদের। সবার চোখে মুখে নানা অজানা ভয়ের ছাপ।
ডুবে যাওয়া জুড়াছড়ির বুকে পালতোলা নৌকা, সাম্পান, যন্ত্রচালিত বোট, স্টিমার চলা শুরু হল।
যন্ত্রচালিত বোট, স্টিমার কেউ দেখেনি তাই দূর থেকে আওয়াজ কানে বেজে এলে ছেলে বুড়ো সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে শব্দকে অনুসরণ করে নির্বাক তাকিয়ে থাকে।
যে আগে দৃষ্টিগোচর করতে সে খুব খুব কৃতিত্ব নিতো। আমাদের পুরাতন স্কুলঘরটিও পানির অতল তলায় ডুবে গেলে আমরা লেখাপড়ায় অনির্দিষ্টকালের ছুটি ভোগ করতে থাকলাম।
আমাদের আনন্দ আর খুশি সীমা নেই। নতুন পরিবেশে শুধু ঘোরাফেরা আর খেলাধূলা। বই কোথায়, লেখাপড়া কেন এসব আমাদের সবই ভুলিয়ে নতুন জগৎ উপহার দিল।
পাড়াবাসী মুরুব্বীদের পরামর্শক্রমে সবার হাতে হাত ধরাধরি করে একটি কাচাঁঘরের স্কুল তৈরি করলো আর শুরু হলে সেখানেও আবারো পড়াশুনার বিড়ম্বনা।
স্কুলটির অবস্থান নদী তীরের খুব কাছে এবং মুখে হওয়ায় পুরো শলকের চর্তুদিক পরিষ্কার দেখা যায়। প্রতিদিন যান্ত্রিক বোট আনাঘোনা শুরু করে আওয়াজ শুনে কোন ছাত্র ছাত্রী আর ক্লাসে থাকে না।
একদৌড়ে উঠোনে। স্যার ছিলেন অপর্ণা চরণ বড়ুয়া (বুড়ো মাস্টার)। এভাবে কয়েকদিন চলার পর আদেশ জারি করলেন, এখন থেকে ছোট ছোট বোট আসলে আর কেউ দেখতে বের হতে পারবে না, বড় বোট হলেই দেখতে পারবে।
স্যারের আদেশ লংঘন করার সাহস কেউ পায় না কিন্তু যখন আওয়াজ হয় কেউ আর লেখাপড়ায় মন দেয় না, সবাই বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখার জন্যে উৎসুক হয়ে ওঠে। এ অবস্থায়ও কয়েকমাস কেটে যায় স্বাভাবিক হতে।
কর্ণফুলী পেপার মিলের কাঁচা পণ্য হিসেবে জুড়াছড়ির বিভিন্ন বন এলাকা থেকে আহরিত বাঁশের চালি আর এলাকায় বন উজাড় করে কর্তিত গাছ সংগ্রহ করে গাছ এক একটি কিলোমিটার ব্যাপী লম্বা চালি সী ট্রাকে টেনে নিয়ে যাওয়াকালীন সর্বস্বহারা এলাকাবাসী নির্বাক চেয়ে চেয়ে স্মৃতিচারণ করে কখন চোখের জল ভাসে তারাও জানে না।
ঐদিকে বড়পরঙে যাওয়া পরিবারগুলো চিরদিনের জন্যে হারিয়ে গেলো জুড়াছড়ি শলক কূল থেকে। তারা কেউ দেশের পার্বত্যাঞ্চলের নানা প্রান্তে চেঙ্গী, ফেনী, কাচালং, মাইনী, শঙ্খ, মাতামুহূরী আর কেউ ভিনদেশে বসতি নিতে অজানার পথে চলমান রয়েছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “সামান্য ক্ষতি” কবিতায় মাঘের শীতের সকালে সহচরী সহকারে রাজ মহিষী স্নান পর্ব শেষে শীত নিবারণের খেলার ছলে আবেগ অহংকার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলে শত শত প্রজা সাধারণের বসতি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের
উপহাসমূলক বিনোদন লাভে লিপ্ত থাকা নির্দয়া রমণীর ন্যায় তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরীহ অসহায় পার্বত্যবাসীকে নিঃস্ব করিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে আজন্ম অধিবাসীদের দুঃখ দুর্দশা দেখে মনচিত্তে প্রফুল্লতা সঞ্চারের নির্মম ফাঁস যেন উপভোগ করে প্রাণভরে অট্টহাসি দিয়েই মন প্রাণ জুড়িয়েছে।
তফাৎ শুধু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজ মহিষীর বিচার হয়েছে আর পাকিস্তান সরকার সদর্পে নিজেকে অক্ষুন্ন রেখেছে।
এমনই জীবনযুদ্ধ একটি একটি শেষ করে আজ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময়ে এসে এসব ঘটনাবলী যাদের সেদিন হতে আজ অবধি দেখার সুযোগ হয়েছে কর্ণফুলী নদীকে, তার আগ্রাসী রুপ নিয়ে এক এক করে বসতি এলাকা, জমি, ক্ষেত,
সাজানো গোছানো এক একটি সোনার সংসার, বন-বাদাড় নিমিষেই গ্রাস করে নিচিহ্ন করার চিত্র, তাদের মন অন্তরে স্মৃতিগুলো ভাজে ভাজে জমাট বাঁধা স্মৃতির পাতা একটি একটি করে যারা দেখতে পায় তারাই জানে এবং বোঝে, কী দুঃসহ যন্ত্রণা একেক জনের মনে লুকায়িত রয়েছে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আজ এ দিনে এসে এখন আর কাউকে আবেগে যেমন তাড়ায় না, তেমনি মন অন্তরে খুশির আবহও সৃষ্টি করে না।
আজম্ম অভিশাপে অভিশপ্ত পার্বত্যবাসীর কপালে সুখ কখনো সয়নি। কখন মেলবে তাও সুদূর পরাহত।
কাপ্তাই-এর সর্বনাশের ক্ষত সারা গায়ে ভেঙে যাওয়া হাড়-গোড় জোড়া না লাগতেই সমগ্র পার্বত্যাঞ্চল আবারো নিপতিত হলো আরেক আগ্নেয়গিরির জলন্ত লাভামুখে।
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে নিরন্তর জ্বলতে থাকা লাভায় ভস্ম হতে শুরু হল পার্বত্যাঞ্চল। এ যেন আরেক মহাদশা, যে দশা কবে শেষ হবে তারও সুনির্দিষ্ট নেই, এ সবই অদৃষ্ট, কাউকে দোষারোপ করার নয়।
দেশের নানা প্রান্ত হতে আসা ট্যুরিস্ট-এর দল নতুন অদেখা কর্ণফুলীকে দেখতে পারার সাধ মিটাতে, নদী জলের বুক ছিড়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়াদৌড়ি, হৈ-হুল্লোড় করে মনের আনন্দে উপভোগে কতই না অদম্য ছুটে আসছে।
প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য দেখে মন, অন্তর, বুক ভরিয়ে নিচ্ছে, মুক্ত আলো-বাতাস, সুনীল আকাশে মেতে, নেচে, গেয়ে মনের সকল অভিলাষ পূরণ করে জীবনের জন্যে সোনালী স্মৃতি ধারণ করে তাদের মনের সৌন্দর্য ভোগের মাত্রাকে আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
যারা প্রকৃতির অপার এ সোন্দর্যকে নিয়ে কবিতা, সাহিত্য রচনা করেন, শিল্পীরা ছবি আঁকেন বা গানের শিল্পীরা গান রচনা করেন।
অনেক কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী তাদের কবিতা, সাহিত্যগুণের প্রতিভাগুলো আরও সমৃদ্ধশালী করছেন।
যেমন আঞ্চলিক গানের জনপ্রিয় শিল্পী প্রয়াত শেফালী ঘোষ ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি, লুসাই পাহাড়ত্তুন নামিয়েরে যার গৈই কর্ণফুলী’ গানটি এতই সমাদৃত হয়েছে যার মনের ভাষার ব্যাখ্যা কী বা কোনো আবেগ জড়িত আছে সে গানে, তা চিন্তার আগেই স্রোতারা শ্রুতি মধুর প্রীতি সুখ লাভ করেন।
আর আজম্ম যারা দিবা রাত্রি কাটিয়ে দিচ্ছে কর্ণফুলীর বুকে, তারা কর্ণফুলীর রুদ্ররোষে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সে ক্ষত স্থানগুলোকে পরখ করে ক্ষেতের পরিমাণ নিরুপণ করে নিচ্ছে বারংবার।
তাদের মনে এতটুকুও বিশ্বাস ভর করেনি যে, কর্ণফুলী তাদের সাথে এমনতর বৈরী আচরণ করবে, করতে পারে। আর ঐদিকে নতুন প্রজম্মের যাদের স্মৃতিতে অতীতের ছবি নেই, ইতিহাসের এমন অভিজ্ঞতা সঞ্চিত নেই, সে বর্তমান প্রজম্মের চোখে, মুখে বা মনে উচ্ছ্বল আনন্দের ঢেউ খেলবে তাইতো স্বাভাবিক।
যেকোন সুখের বা দুখের ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ না করলে যেমন সোনালী দিনের ঘটনার স্মৃতিচারণের পুলকিত শিহরণ জাগায় না, তেমনি দুঃসহ স্মৃতি দ্বারাও কারোর মনে জ্বালা ধরাতে পারে না।
এজন্য দেশের অন্য প্রান্তের ট্যুরিস্টদের সাথে স্থানীয় ছেলে সন্তানেরাও একাকার হয়ে কর্ণফুলী নদীর বুকে হেলে দুলে হেসে বেড়াবে, হাসি তামাশা, আমোদ, ফূর্তিতেই তো হেসে খেলে বেড়াবে, তা মোটেও ব্যতিক্রম বা দোষের নয় এবং নেতিবাচক দৃষ্টিতেও দেখা উচিত হবে না।
তাদের তা না করার সংগত কোন কারণই নেই, বরং তারা আরও বেশি বেশি করবে, করুক সেটা বাঞ্ছিত। জাতিগত নিয়ম বড়ই বিচিত্র আর বৈপরিত্যে ভরা।
একটি অপরটির সম্পূরক যেমন সুখের বিপরীতে দুঃখ আছে, হাসির বিপরীতে কান্না, আনন্দের বিপরীতে বেদনা।
এভাবে অমাবস্যা-পূর্ণিমা, ভয়-নির্ভয়, জয়-পরাজয়, ভাল-মন্দ, জম্ম-মৃত্যু ইত্যাদি সকল অনুষঙ্গগুলো বিরাজিত থাকায় একই রক্ত মাংসের দ্বারা গড়া মানবজাতির ভাগ্যেরও এভাবেই বৈপরিত্য ধারায় প্রবাহিত হয়ে থাকে এবং প্রজম্মের পরে আরেক প্রজম্মের আগমন হচ্ছে হবে, প্রবাহমান কর্ণফুলী নদীর জলধারা কখনও আশীর্বাদ আর কখনো অভিশাপ হয়ে পার্বত্য এলাকাবাসীর জীবন প্রবাহের সাথে একাকার হয়ে আছে।
অন্তঃহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলা সম্বলহারা ও কর্ণফুলী নদীর অতল তলে হারিয়ে যাওয়া পরিবারদের অব্যক্ত বেদনায় নির্বাক চেয়ে থাকা দুঃসহ যন্ত্রণা কাতর মুহুর্তগুলোর ঘটনা ক’জনেই বা জানতে পারে বা দেখতে পায়?
কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ হয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হলে সর্বপ্রথমই পার্বত্য এলাকার ডুবে যাওয়া গণমানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের বাতি জ্বলে উঠবে, এর পর সমগ্র পার্বত্যবাসীকে বিজলী বাতি জ্বালিয়ে দেয়ার পরই দেশের অন্য প্রান্তে কাপ্তাই বাঁধের বিদ্যুৎ জ্বলবে।
কাপ্তাই বাঁধের ফলে যে জমি জমা, ঘরবাড়ি ক্ষতি হবে তার জন্যে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, সবাইকে সুন্দরভাবে পুনবার্সন ব্যবস্থা করা হবে, এমন ছেলে ভোলানো আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে আজম্ম সহজ সরল পার্বত্যবাসীকে ভুলিয়া কাপ্তাই সার্থক, সফলভাবে বাঁধটির নির্মাণ সম্পন্ন করা হলো, বা কী সৌভাগ্য ও খুশির বিষয়।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস – কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপন্ন ২৩০ মে: ও: বিদ্যুৎ সর্বপ্রথমে চলে যায় পার্বাত্যাঞ্চলের বাইরে।
দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় পরে জুরাছড়ি এলাকাবাসী একটু একটু বিদ্যুতের আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। পার্বত্য এলাকা ৬০% বৈদ্যুতিক আলোর সুবিধার বাইরে রয়েছে।
হয়তো আর একটিমাত্র প্রজম্মই ইতিহাসের পাতায় কর্ণফুলী নদীর ইতিকথা জানতে পারবে অতঃপর প্রবল স্রোত অমোঘ টানে সব কিছুই ভাসিয়ে নিয়ে নেবে অকূল দরিয়া বঙ্গোপসাগরে।
সেই সাথে কর্ণফুলীর রুদ্র রোষানলের শিকার হয়ে যাদের কপালে বর পড়ঙ জুটেছে তাদের প্রজম্মও স্মৃতির ইতিকথা ভুলে যাবে।
তারাও কর্ণফুলীর নির্মল আলো বাতাসের স্বাদ, সুখ বুকে ধারণ করে রঙিন রঙিন স্মৃতি মন অন্তরের ফ্রেমে গেঁথে রাখবে প্রজম্মের পর প্রজম্ম।
লেখক : প্রিয় কুমার চাকমা চিজি
তথ্যসূত্র : আমার ভাষায় আমার সাহিত্য, দ্বিতীয় পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী লেখক সম্মেলন, ২০১৬ স্মারক সংকলন
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।