ভূমিই জীবন, ভূমিই পরিচয়, ভূমিই অস্তিত্বের প্রতীক
1137
ভূমিকা
৯ আগস্ট (২০১৯) বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ ঘোষিত ২৫তম আদিবাসী দিবস উদযাপিত হলো। এই বছর আদিবাসী দিবস উদযাপনের রজত জয়ন্তী ছিল।
কিন্তু আমরা অত ভালোভাবে দিবসটি উদযাপন করতে পারিনি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৪ সালে রেজুলেশন ৪৯/২১৪ গ্রহণ করে ৯ আগস্টকে আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং তা পালনের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানায়।
তারপর থেকে গত ২৫ বছরে বৈশ্বিক পর্যায়ে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তম্মধ্যে ২০০০ সালে জাতিসংঘে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরাম গঠন, ২০০১ সাল থেকে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোটিয়ার নিয়োগ, ২০০৫-২০১৪ সালের সময়কালকে দ্বিতীয় আদিবাসী দশক হিসেবে পালন, ২০০৭ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র গ্রহণ, ২০০৭ সালে আদিবাসী অধিকার সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কর্মব্যবস্থা প্রবর্তন, ২০১৪ সালে সাধারণ পরিষদের বিশ্ব আদিবাসী সম্মেলন আয়োজন এবং এ সম্মেলনে ঐতিহাসিক ‘আউটকাম ডকুমেন্ট’ গ্রহণ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
‘কাউকে পেছনে ফেলে রাখা নয়’ বা ‘Leave No One Behind’ শ্লোগান নিয়ে যে এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ এজেন্ডা জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে, সেখানে আদিবাসীদের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে।
তাই এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আদিবাসী জনগণ এবং আদিবাসী সংগঠনসমূহের অর্থপূর্ণ অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি।
আমরা জানি, আদিবাসীদের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার, আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-আদিবাসী জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা এবং আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করাই হলো আদিবাসী দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য।
আমাদের দেশে এই কাজগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সরকারের আন্তরিকতা অন্যতম ভূমিকার পালন করতে পারে।
জাতিসংঘের মতে, বিশ্বের ৯০টি দেশে প্রায় ৪০ কোটির অধিক আদিবাসী মানুষ বাস করে।
এই বছর জাতিসংঘ আদিবাসী দিবসের মূল সুর “Indigenous Languages” ” বা আদিবাসীদের ভাষা।
আদিবাসীদের বর্তমান বাস্তবতায় এই মূলসুর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা আদিবাসীদের বলার মাত্রা মাতৃভাষার বিপন্নতা থেকে শুরু করে ভূমি অধিকার, এমনকি বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরোলেও দেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগণ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্ছিত রয়েছে। সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারা ধাবিত হচ্ছে।
ক্রমাগতভাবে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এক সময় যেসব অঞ্চলে আদিবাসীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, সেখানে ‘পপুলেশন ট্রান্সফারের’ ফলে আদিবাসী জনগণ নিজভূমিতে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়, উত্তরবঙ্গ, গাজীপুর, মধুপুর বনাঞ্চল, পটুয়াখালী-বরগুনা, খাসিয়া অঞ্চল সর্বত্র আদিবাসীরা তাদের ঐতিহ্যগত ভূমি (Ancestral land) হারিয়েছে।
আদিবাসীদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা, এখন আত্ম-পরিচয়, মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও আদিবাসী জনগণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।
এই বছর জাতিসংঘ আদিবাসীদের মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও চর্চার উপর গুরুত্বারোপ করেছে। ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ‘আদিবাসীদের মাতৃভাষার আন্তর্জাতিক বর্ষ’, International Year of Indigenous Languages ঘোষণা করেছে এবং সদস্যরাষ্ট্রসমূহকে আদিবাসী ভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
পৃথিবীতে আনুমানিক ৬,৭০০ ভাষার মধ্যে ৪০% ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার আশংকার মধ্যে রয়েছে। এই বিপন্ন ভাষাগুলোই আদিবাসীদের ভাষা।
ইউনেস্কোর মতে, আরও অনেক আদিবাসী ভাষা হারিয়ে যাওয়ার বা বিপন্নতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের বিপন্ন ভাষাগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, পৃথিবীতে প্রায় ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ জীবিত ভাষা রয়েছে। ২০১৫ সালের এথনোলগ প্রতিবেদনে ৭,১০২ টি জীবিত ভাষার উল্লেখ আছে।
মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নৃভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশে ৪১ টি ভাষার সন্ধান পেয়েছে।
তারা বলেছে, সমীক্ষায় পাওয়া ভাষাগুলোর মধ্যে ১৪ টি ভাষা বিপন্ন। ভাষাগুলো হলোঃ খাড়িয়া, কোড়া, সৌরা, মুন্ডারি, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও পাত্র। তবে আমরা মনে করি, বাংলাদেশে আদিবাসীদের বিপন্ন ভাষার সংখ্যা আরও বেশি।
জাতিসংঘ বলছে, আদিবাসী জনগণকে কখনও কখনও নিজ দেশে ভৌগোলিক কারণে, ভিন্ন ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির কারণে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ব না ও বিচ্ছিন্নতার মধ্যে বসবাস করতে হয়।
অন্যদিকে, এই আদিবাসী মানুষেরাই বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
জাতিসংঘ আরও বলছে, আদিবাসী ভাষাসমূহ হাজার বছর ধরে মৌলিক স্থানীয় সংস্কৃতি, প্রথা ও মূল্যবোধকে সমৃদ্ধ করেছে।
আদিবাসীদের মাতৃভাষা বিশ্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যেকে আরও সমৃদ্ধশালী করেছে। আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি ছাড়া পৃথিবী হতো সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে অতি দরিদ্র স্থান।
আদিবাসীদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ ও আদিবাসী দিবস উদযাপন জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকার ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন ও সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে বলে আমি মনে করি।
আমাদের জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ আদিবাসীদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
শিক্ষা নীতির ৭ নং ‘উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “জাতি, ধর্ম, গোত্র-নির্বিশেষে আর্থ-সামাজিক শ্রেণী-বৈষম্য ও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।
২৩ নং লক্ষ্যে বলা আছে, “দেশের আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো।”
জাতীয় শিক্ষা নীতির “আদিবাসী শিশু” অনুচ্ছেদে লেখা আছে, “আদিবাসী শিশুরা যাতে নিজেদের ভাষায় শিখতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য আদিবাসী শিক্ষক ও পাঠ্য পুস্তকের ব্যবস্থা করা হবে। এই কাজে, বিশেষ করে পাঠ্য পুস্তক প্রণয়নে, আদিবাসী সমাজকে সম্পৃক্ত করা হবে। আদিবাসী প্রান্তিক শিশুদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।”
আদিবাসীদের শিক্ষা বিস্তারে শিক্ষা নীতির যথাযথ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। আদিবাসী অঞ্চলের স্কুলগুলোতে অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থায় আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার।
এক.
বাংলাদেশের সংবিধানে এখনো আদিবাসী জাতিসমূহের জাতিসত্তা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি নেই।
আদিবাসী সংগঠনসমূহ বার বার বলার চেষ্টা করেছে, আদিবাসী জনগণের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার রয়েছে। এটি আদিবাসীদের মানবাধিকার। আন্তর্জাতিকভাবেও আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার স্বীকৃত।
তাই সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসী জাতিসমূহের আশা-আকাংখা ও দাবির ভিত্তিতে আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুই.
এই কবিতায় বোঝা যাবে কী হওয়ার কথা ছিল আর কোথায় কী হয়ে গেছে আমাদের জীবনে, বিশেষ করে সাধারণ আদিবাসী প্রান্তিক মানুষের জীবনে। হুমায়ূন আজাদের “কথা দিয়েছিলাম তোমাকে” কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন পড়ছি,
“কথা দিয়েছিলাম তোমাকে
রেখে যাব পুষ্ট ধান, মাখনের মত পলিমাটি
পূর্ণ চাঁদ, ভাটিয়ালী গান
উড্ডীন উজ্জ্বল মেঘ, দুধের ওলান
মধুর চাকের মত গ্রাম
জলের অনন্ত বেগ, রুই মাছ
পথ পাশে সাদা ফুল, অবনত গান
আমের হলদে বন, জলপদ্ম, দোয়েল মৌমাছি।
তোমার জন্য রেখে যাচ্ছি নষ্ট ধানের ভেতরে পোঁজ
টায়ারের পোড়া গন্ধ, পংকিল তরমুজ
দুঃস্বপ্ন আক্রান্ত রাত,.. বিবস্ত্র ভিখারী, শুকনো নদী, ..বিষ, আবর্জনা..
নোংরা বস্তি, ..বর্বর চিৎকার, ভোট, রাষ্ট্রধর্ম, ..মধ্য যুগ,.. মৌলবাদ
আততায়ীর উল্লাস, … তোমার জন্য রেখে যাচ্ছি কালরাত্রি, … অসংখ্য জল্লাদ।” ——
খুব বুঝতে পারি, এই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রযন্ত্র স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরের কাছাকাছি সময়ে এসেও আদিবাসী মানুষের, প্রান্তিক দরিদ্র বাঙালির, চা বাগানের অগণিত মানুষের, দলিত ও গ্রামীন কৃষকের, হাওর ও চরাঞ্চলের মানুষের ‘আপনভূমিতে’ এই রাষ্ট্র পরিণত হয়নি।
এখানে আকাশছুঁয়া উন্নয়নের আস্ফালনের পাশাপাশি রয়েছেপ্রবল বৈষম্যের করুণ ও নীরব হাহাকার আর আর্তনাদ।
যা হবার কথা ছিল সবার জীবনে, তা হয়নি। তবে কারও কারও জীবনে হয়েছে। বাকীদের জীবনে এমন হওয়ার লক্ষণ বা চিহ্ন দেখা যায় না।
যে প্রবণতা চলছে, তাতে গত বছর এই আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে যে প্রবন্ধ আমি পড়েছিলাম, তার খুব একটা রকমফের হয়নি। তখন প্রশ্ন রেখেছিলাম,
“স্বাধীনতার ৪৭ বছরে আমরা আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আদিবাসীসহ প্রান্তিক মানুষের ভূমি অধিকার ও মানবাধিকারের প্রশ্ন নিয়ে? সাধারণ মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের আজ কী অবস্থা? ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জীবনের অনিশ্চয়তা আজ কেমন? নাগরিক হিসেবে তাদের মানবাধিকার, মর্যাদা ও সম্মান কোন স্তরে?
কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘কথা ছিল’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘কথা ছিল, আমার আনন্দ-গানে ভরিয়ে তুলবো অলিগলি, জনপথ, অবাধ প্রান্তর/আমার ভরাট গলা ছোঁবে দিগন্তকে/ কথা ছিল, পায়রা উড়িয়ে দেবো ভোরবেলা মেঘের কিনারে/কথা ছিল উৎসবের কবিতা নিরুদ্বেগ লিখে মুছে ফেলবো সকল দুঃখ শোক/ কথা ছিল প্রত্যেককে দেখাবো অনিন্দ্য সূর্যোদয় মুক্ত মনে/ অথচ এখন, এ মুহুর্তে সূর্যাস্তের ছোপলাগা কবরের দিকে অসহায় চেয়ে থাকি/বন্দীদশা এল বুঝি পুনরায়।’
কেন আজও আদিবাসী মানুষ নিজবাসভূমে পরবাসীর জীবনযাপনে বাধ্য হয়? কেন পাহাড়ের মানুষ বলে, লাইফ ইজ স্টিল নট আওয়ার্স।
আদিবাসী পরিচয়ের অস্বীকৃতি, অপপ্রচার, ভুল ব্যাখ্যা, নৃ-গোষ্ঠী আখ্যা ও অপমান দেখে আজ দুঃখের সঙ্গে মনে হয় আদিবাসী জীবনে ঘোর বন্দী দশা চলছে এখনও।
তিন.
বৈশ্বিক পর্যায়ে আদিবাসীদের একটি ঘোষণাপত্র আছে। সেই লেটিসিয়া ঘোষণাপত্রের কয়েকটি লাইনের উদ্ধৃতি দিচ্ছি,
“All peoples are descendants of the forest. When the forest dies, we die. We are given responsibility to maintain balance within the natural world. When any part is destroyed, all balance is cast into chaos. When the last tree is gone, and the last river is dead, then people will learn that we cannot eat gold and silver. To nurture the land is our obligation to our ancestors, who passed this to us for future generations.”
আমি এই কথাগুলোর বাংলা রূপান্তরের চেষ্টা করেছি এভাবে,
‘সকল মানুষের আগমন ঘটেছে বন থেকে, ভূমি থেকে। বন মরে গেলে মানুষ মরে যায়। আমাদের উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে বিশ্বের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার, একে মমতা-ভালোবাসা দিয়ে যত্ন করার। যখন এ প্রকৃতির কোনো একটি অংশকে ধ্বংস করা হয়, তখন সকল ভারসাম্য লন্ডভন্ড হয়ে যায়। যখন বনের শেষ বৃক্ষ কেটে ফেলা হবে, যখন শেষ নদীটি শুকিয়ে যাবে, তখন মানুষ শিখবে যে সোনা ও রূপা খেয়ে জীবন বাঁচে না। সঠিক ও নির্লোভভাবে প্রকৃতিকে, বন ও ভূমিকে ব্যবহার করার ভার আমরা পেয়েছি পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে, যারা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একে রক্ষার ভার আমাদের দিয়ে গেছেন।’
অস্থির পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানুষের অপরিণামদর্শী ও সীমাহীন লোভ-নিষ্ঠুরতার কাছে আদিবাসী সমাজ আজ বিপন্ন, অসহায়। প্রকৃত বিচারে ধরিত্রীর সকল প্রাণীই আজ বিপন্ন।
চার.
আদিবাসী অধিকার মানবাধিকার ও মানব মর্যাদার অংশ। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আদিবাসী জনগণ এখন কঠিন সময় পার করছে। এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা।
সাঁওতালদের উপর হামলা, লংগদুতে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, খাসিয়াদের ভূমি দখল, মধুপুরে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা, উপকূলে রাখাইনদের উপর বিরামহীন অবিচার ও সারা দেশে আদিবাসীদের উপর অব্যাহত নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনা বলে দেয় আদিবাসীরা ভালো নেই।
সরকার বলছে, উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে দেশ। প্রকৃতপক্ষে আদিবাসী জনগণ, গরিব প্রান্তিক কৃষক, দলিত হরিজন, খেটে খাওয়া মেহনতী মানুষ, চা বাগানের শ্রমিকসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ এই কথিত উন্নয়নের জোয়ারে ডুবে যাচ্ছে। এবার জেলায় জেলায় বানভাসী মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট পেয়েছে।
পাঁচ.
কয়েকটি ঘটনা
এক কথায় বলা যায়, আদিবাসী ভূমি দখলের মহোৎসব চলছে। নন-স্টপ দখল। নতুন যন্ত্রণা শুরু হয়েছে, ইকোনমিক জোন গড়ার পরিকল্পনা আদিবাসীদের ভূমিতে ও গরিব প্রান্তিক মানুষের ভূমিতে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের অবস্থা
৬ ও ৭ নভেম্বর ২০১৬ গাইবান্ধা জেলার সাহেবগঞ্জ ও বাগদাফার্ম এলাকায় পুলিশ ও সুগার মিল কর্তৃপক্ষ মিলিতভাবে সাঁওতাল কৃষকদের উপর ভয়াবহ আক্রমণ চালায়।
পুলিশের উপস্থিতিতে চিনিকল মালিকের পক্ষের একদল লোক আদিবাসীদের বাড়িঘরে লুটতরাজ চালায়, আগুন দিয়ে সাঁওতালদের বসতভিটা ছারখার করে দেয়।
শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবার পর যাতে বাড়িঘর, বসতভিটার কোনো চিহ্ন না থাকে, তার জন্য ট্রাক্টর দিয়ে দিন রাত সেখানে হাল চাষ করানো হয়।
পুলিশের গুলিতে কম পক্ষে তিন জন আদিবাসী সাঁওতাল নিহত হন। নিহতরা হলেন শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু।
বুলেট বিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় দ্বিজেন টুডু, চরন সরেন ও বিমল কিস্কু। বাড়িঘর হারিয়ে সাঁওতালরা গীর্জা ঘরের বারান্দা ও আঙিনায় আশ্রয় নেন।
এখনও আদিবাসীরা জমি ফেরত পায়নি, উল্টো ১০টির অধিক মামলায় জর্জরিত রয়েছেন।
১,৮৪২.৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে এই সমস্যা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গোবিন্দগঞ্জ পরিদর্শন করেন এবং মিডিয়াতে বলেন, এ ঘটনায় ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘন হয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত সাঁওতালদের ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়েছে।
কিছুদিন আগে পিবিআই তদন্ত রিপোর্টে বলেছে, এ ঘটনায় পুলিশের কোনো সংশ্লিষ্টতা তারা পায়নি। এত মিডিয়া রিপোর্ট, লাইভ টিভি ভিডিও, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও এই রিপোর্ট এসেছে।
মৌলভীবাজারে খাসিয়াদের অবস্থা
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নাহার ও কাইলিন পুঞ্জির ৭০০ খাসিয়া পরিবারকে ৩০ মে ২০১৬ উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করে জেলা প্রশাসন।
ওই নোটিশে বলা হয়েছে, খাসিয়াদের ১২ জুনের মধ্যে বাড়িঘর, জায়গা জমি ছেড়ে চলে যেতে হবে, নইলে পুলিশ ফোর্স নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। পরে খাসিয়ারা সিলেটে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করে।
বিভাগীয় কমিশনার ২ আগস্ট ২০১৬ এই উচ্ছেদ নোটিশ সাময়িকভাবে স্থগিত করে। কারণ এই জমি নিয়ে ২টি স্বত্ত্ব মামলা নিস্পত্তির হয়নি।
খাসিয়া আদিবাসীরা স্মরণাতীত কাল থেকে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন পাহাড় ও বনাঞ্চলে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে প্রথাগত ভূমিতে বসবাস করে আসছে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় মুনাফা লোভী একটি গোষ্ঠী খাসিয়াদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং গাছ কেটে বন উজাড় করার ষড়যন্ত্র করে আসছে।
খাসিয়াদের নামে নানা মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য পরিবেশন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এ সবের একটিই লক্ষ্য খাসিয়াদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা।
অন্যদিকে ঝিমাই পুঞ্জিতে ৭২টি খাসিয়া পরিবার যুগ যুগ ধরে প্রথাগত (customary) ও ঐতিহ্যগত (ancestral) ভূমিতে বংশ পরম্পরায় বাড়িঘর বসতিসহ পানজুম করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
খাসিয়াদের ভূমিতে রয়েছে পূর্ব পুরুষদের পবিত্র সমাধি ক্ষেত্র বা কবরস্থান, তিনটি ধর্মীয় গির্জা ঘর, খেলার মাঠ, যুবকদের খেলার ক্লাব, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খাসিয়া মাতৃভাষা শিক্ষাকেন্দ্র, একটি প্রাথমিক স্কুল যেখানে ৭১ জন শিশু পড়াশোনা করে।
ব্রিটিশ আমলের আগে থেকে খাসিয়ারা এই ভূমিতে বাস করে আসছে, সেই সাথে ইউনিয়ন পরিষদ ট্যাক্সসহ অন্যান্য সকল নাগরিক দায়িত্ব পালন করে আসছে।
কিন্তু আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার ও প্রথাগত সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে খাসিয়াদের অজ্ঞাতসারে খাসিয়াদের অস্তিত্ব গোপন করে ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর ঝিমাই চা বাগানকে খাসিয়াদের ভূমিসহ লীজ দেয়া হয়।
সেই থেকে উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে খাসিয়ারা। চা বাগান কর্তৃপক্ষ পুঞ্জিতে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে রাস্তার মধ্যে তালাবদ্ধ করে গেট নির্মান করা হয়েছে।
এদিকে গত কয়েক বছর ধরে আমুলি ও মেঘাটিলার খাসিয়া ও গারোরা নিরাপত্তাহীনতা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। একবার নিউরাঙ্গী পুঞ্জির জুমে আক্রমণ করে একদল সন্ত্রাসী। এ নিয়ে মামলা চলছে।
এলাকায় তখন একদল লোক সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর অপচেষ্টা করেছে। এছাড়াও বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল খাসিয়া পুঞ্জিতে বসবাসরত ৫০টি পরিবার বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনের ফলে নিজস্ব জমিজমা হারাতে বসেছে।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনের পরে দেখা যায় যে, খাসিয়া ও গারোদের দখলীয় ভূমির দুই তৃতীয়াংশ অপদখলীয় (adverse possession) ভূমি বিবেচনায় ভারতের অংশ হিসেবে জরিপে দেখানো হয়।
জরিপকারীদের আদিবাসীরা আপত্তি জানালেও তারা বিষয়টি আমলে নেননি। এতে খাসিয়া পুঞ্জিতে বসবাসরত জনগণ মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখীন হতে যাচ্ছে।
পুঞ্জির বসতভিটা, কবরস্থান, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খেলার মাঠ ছাড়া জীবন জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস সকল পান-বাগান ভারতের আওতায় (আসাম) চলে যাচ্ছে।
এতে বাংলাদেশ থেকে খাসিয়া পুঞ্জির ৩০০ শতাধিক একর ভূমি ভারতের আসামের অধীনে চলে যাচ্ছে। এখন ভারত ও বাংলাদেশ সরকার খাসিয়া ও গারোদের মানবাধিকার ও জীবন জীবিকা নির্বাহের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা না করলে তারা তাদের ঐতিহ্যগত ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাবে।
টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে গারো ও আদিবাসীদের অবস্থা
স্মরণাতীত কাল থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলে ২৫ হাজারের অধিক গারো, কোচ, বর্মন ও অন্যান্য আদিবাসীরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে।
এই আদিবাসীরাই পরম মমতায় বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করেছিল। বনবিভাগ বিভিন্ন সময় বন ও পরিবেশ ধ্বংসকারী মুনাফামুখি প্রকল্প গ্রহণ করে এই প্রাকৃতিক বনকে ধ্বংস করেছে।
উডলট ও রাবার বাগানের নামে প্রাকৃতিক শাল বন উজাড় করেছে। বনের ভেতরে বিভিন্ন স্থাপনা, ন্যাশনাল পার্ক, পিকনিক স্পট, বিমান বাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে এই প্রাকৃতিক বনের সর্বনাশ করেছে।
অন্যদিকে আদিবাসীদের নানা মিথ্যা মামলায় হয়রানিসহ হত্যা করেছে। ২০০৪ সালে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আদিবাসীরা ইকো-পার্ক প্রকল্প ঠেকিয়ে দিয়েছিল। ইকো-পার্ক আন্দোলনে পিরেন স্নাল জীবন দিয়েছিলেন।
গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে ২০ ধারা জারী করে বন বিভাগ মধুপর বনে ৯,১৪৫ একর ভূমি রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে যেখানে রয়েছে আদিবাসীদের গ্রাম, বসতবাড়ি, স্কুলঘর ইত্যাদি।
জনগণকে না জানিয়ে সরকার এই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আদিবাসীরা এই খবর জেনেছে মে মাসে। সেই থেকে মধুপুরের গারো-কোচ-বর্মন ও সাধারণ জনগণ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
লংগদু সাম্প্রদায়িক আক্রমণ
২ জুন ২০১৭ রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা এবং পার্শ্ববর্তী মানিকজোড়ছড়া ও বাত্যা পাড়ায় সেটেলাররা পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়।
এ হামলায় তিনটিলায় ৯টি দোকানসহ কমপক্ষে ১২২টি ঘরবাড়ি; মানিকজোড়ছড়ায় ৬টি দোকানসহ ৮৬টি ঘরবাড়ি এবং বাত্যা পাড়ায় ৪টি দোকানসহ অন্তত ২৮টি ঘরবাড়ি- সর্বমোট ২৩৬টি বাড়ি ও দোকান সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয় এবং ৮৭টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনটিলা এলাকায় গুণমালা চাকমা নামে ৭৫ বছরের এক অশীতিপর বৃদ্ধা পালিয়ে যেতে না পারার কারণে ঘরের মধ্যে আগুনে পুড়ে নিহত হন। হামলাকারীদের মারধরের শিকার হন অনেক জুম্ম গ্রামবাসী।
সেটেলাররা ঘরবাড়ি ও দোকানের মূল্যবান জিনিষপত্র ও মালামাল, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী লুট করে নিয়ে যায় এবং শুকরগুলো মেরে ফেলে দিয়ে যায়।
পুড়ে যাওয়া তিনটিলা, মানিকজোড়ছড়া ও বাত্যা পাড়ার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার কোন সহায় সম্পত্তি রক্ষা করতে পারেনি এবং এক কাপড়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে কোন রকমে জীবন রক্ষা করেছে।
এছাড়াও প্রাথমিক থেকে কলেজ পড়–য়া ২৫৬ জন ছাত্র/ছাত্রীর পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষা সামগ্রী, পোষাক পরিচ্ছদ সম্পূর্নরুপে অগ্নিসংযোগে পুড়ে যায়।
ঘটনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ১৪ দলের একটি প্রতিনিধিদল ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল সফর করেন। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা তাদের দাবিনামা সম্বলিত স্মারকলিপি এসব মন্ত্রী ও কর্মকর্তাসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করেন।
ছয়.
বাংলাদেশে আদিবাসীদের জীবনে মূল অবলম্বন হলো ভূমি। অথচ যুগ যুগ ধরে আদিবাসীরা তাদের ভূমি হারিয়েছে।
বিভিন্ন প্রকল্পের কারণেও, যেমন বাঁধ নির্মান (কাপ্তাই বাঁধ), ন্যাশনাল পার্ক, ইকো-পার্ক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সামাজিক বনায়ন, মিলিটারী বেইস নির্মান ইত্যাদির কারণে আদিবাসীরা ব্যাপক ভূমি হারিয়েছে।
ইকো-পার্ক প্রকল্পের ফলে খাসিয়া (নিজেরা খাসি বলেন) ও গারোরা উচ্ছেদ হতে বসেছিল। পরে আদিবাসীদের আন্দোলনের ফলে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।
কিন্তু মধুপুরে আদিবাসীদের জীবন দিতে হয়েছে। এর কোনো বিচারও হয়নি। অন্যদিকে, প্রভাবশালী শক্তিমান ভূমিগ্রাসী চক্র ক্রমাগতভাবে আদিবাসীদের জমিজমা কেড়ে নিয়েছে।
জাল দলিল দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে, আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে, নানারকম মামলা দিয়ে স্বর্বশান্ত করেছে আদিবাসীদের। দেশান্তরী হওয়ার কারণেও আদিবাসীরা অনেক জমিজমা হারিয়েছে।
তাদের জমি শত্রু সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তি হয়ে গেছে। আদিবাসীরা হয়তো কখনও কখনও আইনের আশ্রয় নিয়েছে, মামলা করেছে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মামলা চালাতে গিয়ে আরও নিঃস্ব হয়েছে।
বছরের পর বছর আদিবাসীরা মামলা করে জমি ফেরত পেয়েছে, এ রকম নজির বলতে গেলে খুব একটা নেই।
এখনও জমি হারাচ্ছে আদিবাসীরা আর অসহায়ভাবে দেখছে যে তাদের পাশে দাঁড়াবার বিশেষ কেউ নেই।
শুধু ভূমিলোভী চক্র নয়, বা কখনও কখনও বিভিন্ন প্রকল্পের কারণে শুধু নয়, ‘পপুলেশন ট্রান্সফার’-এর কারণে আদিবাসীদের জায়গা-জমি অন্যের দখলে চলে গেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার চিত্র বদলে গেছে। আদিবাসীদের কাছে ভূমিই জীবন, ভূমিই অস্তিত্ব। আমরা বলি, ল্যান্ড ইজ লাইফ।
আদিবাসীদের ভূমি অধিকার সম্পর্কে কিছু বলবার আগে, সম্পদ, ভূমি, বন, প্রাণী জগত, ধরিত্রী ও অধিকার সম্পর্কে আদিবাসী মানুষের ওয়ার্ল্ডভিউ কেমন, সে বিষয়টি ভেবে দেখা অতি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বজুড়ে ভূমির সঙ্গে আদিবাসীদের সম্পর্ক যে শুধু অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক নয়, ভূমির সঙ্গে আদিবাসীদের যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রয়েছে (spiritual relationship). বিশ্বজুড়ে ভূমি আদিবাসীদের কাছে পবিত্র।
আদিবাসী সংস্কৃতিতে ভূমি হলো জননী। ধরিত্রীও জননী, মাদার আর্থ (mother earth)। আদিবাসীরা প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারে।
তারা বনকে কোনোদিন বেচাকেনার বিষয় হিসেবে দেখে না, জীবনের অংশ হিসেবে দেখে। আর আধুনিক সভ্যতা বন, সম্পদ, প্রকৃতি সবকিছু বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে দেখে।
এখানেই আদিবাসীদের সঙ্গে বর্তমান উন্নয়ন ধারার সমস্যা। এক সময় আদিবাসী জীবনে সব কিছু ছিল অলিখিত। মুখে মুখে চলে আসা ওরাল সংস্কৃতি।
আইনকানুন ছিল মুখে মুখে, প্রথাগত, ট্র্যাডিশনাল। তাদের লিটারেচারও ছিল ওরাল। আদিকালে জীবন ছিল যূথবদ্ধ। তখন বন ও ভূমির উপর ছিল মানুষের ঐতিহ্যগত স্বতঃসিদ্ধ অধিকার।
প্রথাগত সব অধিকার। তখন জনসংখ্যা কম ছিল। অবারিত ছিল বন ও ভূমিতে মানুষের বিচরণ।
আদিবাসী জীবনের সাথে মূলস্রোতের মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধন রচনায় প্রখ্যাত লেখক মহাশ্বেতা দেবী তার টেরোড্যাকটিল, পূরণ সহায় ও পিরথা উপন্যাসে আদিবাসীদের কথা এভাবে লিখেছেন, “শোষণ” শব্দ তো হো ভাষায় নেই। যাদের জীবনে শুধুই শোষণ, শুধু বঞ্চনা, সেই আদিবাসীদের কোনো ভাষাতেই কি আছে “শোষণ” শব্দের সমার্থক শব্দ? এক সময়ে বন ছিল, পাহাড় ছিল, নদী ছিল, আমরা ছিলাম। আমাদের গ্রাম ছিল, ঘর ছিল, জমি ছিল, আমরা ছিলাম।”
এ কথাগুলোর মধ্যে আদিবাসীদের দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ-বেদনা-স্বপ্ন-উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়া সব জড়িয়ে আছে।
জাতিসংঘ স্বীকার করেছে বিশ্বব্যাপী ঐতিহাসিকভাবে আদিবাসী জনগণ নানামুখী শোষণ ও বৈষম্যের কারণে তাদের আত্ম-পরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি ও মৌলিক মানবাধিকার হারাতে বসেছে।
তাই আদিবাসী অধিকার বুঝতে হলে ওদের মনস্তত্ত্বকে, ওয়ার্ল্ডভিউ ও জীবন ভাবনার বিশ্বজনীনতাকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে, গায়ের জোরে, ক্ষমতা ও শক্তির দাপটে নয়।
ওদের জীবনে বহিরাগতরা প্রবল রাষ্ট্রীয় শক্তি নিয়ে ঢুকে গেছে আর সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের মতো চলে গেছে সব জমি, বন, পাহাড়, প্রাকৃতিক সম্পদ।
অতি সংবেদনশীল, বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছাড়া আদিবাসীদের উন্নয়ন ও রক্ষা করা সম্ভব নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি – সবখানে আদিবাসী মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতার প্রতিফলন দরকার। দরকার সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ এই প্রান্তিক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য।
দেশে আদিবাসী অধিকার রক্ষার জন্য আইন ও নীতিমালা থাকা দরকার। সিডর ও সুনামির পর আমি কিছু লেখা পড়েছিলাম, বলা হয়েছে, মানুষ এখনো প্রকৃতিকে জয় করতে পারেনি।
মানুষ প্রকৃতির কাছে অসহায়। অদ্ভূত কথা, প্রকৃতিকে জয় করার, পরাস্ত করার তো কিছু নেই। মানুষ ও প্রকৃতি একাকার। একজন আরেকজনকে পরাস্ত করার ভাবনা ভুল। বরং আমরা যুক্ত একে অন্যের সঙ্গে।
মানুষ নদী, গাছ, পানি, প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত। All is connected সব কিছুর নধষধহপব রাখে প্রকৃতি। এ্যাভাটার ফিল্মে নায়িকা নায়ককে বলছে, mother earth does not take side, it only keeps the balance of the earth.
আমরা আদিবাসীরা নদীর কাছে কৃতজ্ঞ, আমরা বলি, নদী তোমাকে ধন্যবাদ, ধানকে বলি, ধান তোমাকে ধন্যবাদ। গারোরা ভাত খাওয়ার আগে ভাতের জন্যও ধন্যবাদ দিয়ে প্রার্থনা করে।
এই তো আদিবাসী জীবন ও সংস্কৃতি। বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্র ও সভ্যতার অনেক কিছু শেখার ছিল আদিবাসীদের জীবনযাপন পদ্ধতি থেকে, যারা এতকাল পাহাড় পর্বত-বন-নদী রক্ষা করেছে আজকের মানুষের জন্য।
সাত.
বর্তমান সরকার সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠনসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ১৮ অনুচ্ছেদে লেখা আছে, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, আদিবাসী ও চা বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ওপর সন্ত্রাস, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চির অবসান, তাদের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম, মানমর্যাদার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে।
আদিবাসীদের জমি, জলাধার এবং বন এলাকায় সনাতনি অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য ব্যবস্থার অবসান করা হবে।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের জন্য চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
অনগ্রসর অঞ্চলসমূহের উন্নয়নে বর্ধিত উদ্যোগ, ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী, আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
’ বলাইবাহুল্য, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেও এই ঈশতেহার বাস্তবায়ন তো দূরের কথা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী” বলে চূড়ান্তভাবে আদিবাসীদের সর্বনাশ করেছে।
আট.
১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে ভারতীয় সংবিধান মতে, শিডিউলড এরিয়াজ এন্ড শিডিউলড ট্রাইব্স কমিশন গঠিত হয়। ওই রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, “দি ফান্ডামেন্টালস অন অ্যান অ্যাপ্রোচ টু দি ট্রাইব্স” যার মূল বক্তব্য ছিল “ট্রাইবাল টাচ” বা “আদিবাসীদের প্রতি পক্ষপাত”।
এর মানে হলো, আদিবাসীদের চোখ দিয়ে, ওদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সব কিছু দেখার চেষ্টা করা।
আমাদের দীর্ঘ অবহেলা, আমাদের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি – এর প্রায়শ্চিত্ত আমাদের সকলকে করতেই হবে। জগতে একটি মানবজাতি, এবং আদিবাসীরা সে জাতির অতীব অমূল্য এক অঙ্গ।”
আদিবাসী জীবন অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ। এই সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ে শ্রমজীবী খেটে-খাওয়া মানুষ।
তারা আজো তাদের প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে চায় এবং সফল পরিবর্তনের দিকে এগুতে চায়। আদিবাসী সংস্কৃতি যাতে ধ্বংস না হয়, তার পদক্ষেপ রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
আদিবাসী বান্ধব একটি জাতীয় পলিসি দরকার। আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে ভারতে আদিবাসী কমিশন হয়েছিল ১৯৬০ সালে। তখন মুক্ত ভারতের বয়স মাত্র ১২/১৩ বছর। আর আমরা ৪৮ বছর পার করছি স্বাধীনতার। আমরা কত পিছিয়ে আছি।
ভেরিয়ার এলুইন তার আদিবাসী জগত বইয়ে লিখেছেন, ‘পাহাড় ও সমতলের ঐক্য জাতীয় স্বার্থেও যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন পাহাড় ও অরণ্যের মানুষদের স্বার্থে।
আমরা পরস্পর পরস্পরকে সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় করতে পারি। আদিবাসীদের আমরা অনেক কিছু দিতে পারি, আবার ওদেরও অনেক কিছু আছে, যা আমাদের দেবার মতো।’
শেষে একটি ভয়াবহ তথ্য দেই। দেশভাগের পর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ গারো জন্মভূমি ত্যাগ করে ভারতের মেঘালয় ও আসামে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
অন্যান্য সংখ্যাল্প জাতির মধ্যে হাজং, কোচ, বানাই, হদি, ডালু ইত্যাদি জাতির শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হন। তারা তাদের বাড়িঘর, জমি, ভিটামাটি চিরতরে হারান।
উত্তরবঙ্গের সাঁওতাল, উরাও, মুন্ডা ও অন্যান্য আদিবাসীদের অবস্থা আরো শোচনীয়। জমিজমা হারিয়ে উত্তরবঙ্গের আদিবাসীরা এখন নিজভূমে পরবাসীতে পরিণত হয়েছেন।
নিজের জমিকে আজ দিনমজুর অনেকে। উপনিবেশিক আমল থেকেই এই আদিবাসী জাতিসমূহের জীবনের ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে জোরপূর্বক দেশান্তরেরই ইতিহাস।
দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৮ বছর পরও আদিবাসী মানুষের জীবনে রাজনৈতিক নিপীড়ন, নির্যাতন, শোষণ ও অত্যাচারের অবসান হয়নি। এখনও আদিবাসী অঞ্চলের মানুষ নীরবে দেশত্যাগ করছেন।
আদিবাসীরা রাষ্ট্রে এতটাই উপেক্ষিত যে, এই দেশান্তরের ইতিহাসও জানা যায় না, এই ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয় না।
এই নিয়ে নাগরিক সমাজ ও মিডিয়া অনেকটা নীরব অথবা উদাসীন। দেশে কিছু কিছু আদিবাসীদের পরিচয় বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথবা বিলুপ্তপ্রায়।
কোনো কোনো আদিবাসী জাতি কোনরকমে টিকে আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এক সময়ের প্রভাবশালী হাজং জাতি এখন অদৃশ্যপ্রায়। অনেকেই ভারতে চলে গেছেন।
এক সময় বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় ৫০ হাজারের অধিক রাখাইন আদিবাসীর বসতি ছিল, দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে, সেখানে বর্তমানে রাখাইন জনসংখ্যা ৫০ হাজার থেকে নেমে উল্টো মাত্র ২,২০০ জন।
অনেকেই দেশান্তরিত হয়েছেন অথবা অন্যত্র চলে গেছেন নিরাপত্তার কারণে। আগামী কয়েক দশক পর এই অঞ্চলে রাখাইন অস্তিত্ব হয়তো চিরতরে হারিয়ে যাবে।
তাই আজকে আবারও ৩টি দাবি, যা বহুদিন ধরে আমরা করছি, এখানে তুলে ধরছিঃ
১. আদিবাসীদের প্রথা ও ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকারের আইনগত স্বীকৃতিসহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে
হবে।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে এবং
৩. আদিবাসীদের উচ্ছেদ, ভূমি দখল, বন দখল, গাছ কাটা ও হয়রানী-জোরদখলকারীদের দস্যুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারে রাষ্ট্র তাদের পাশে রয়েছে।
কেন আজও পাহাড়ে আদিবাসী মানুষকে হাহাকার করতে হয়? কেন তারা প্রশ্ন করে, কেন তারা বলে, এখানে জীবন আমাদের নয়, লাইফ ইজ নট আওয়ার্স।
মহাশ্বেতা দেবী লিখেছেন, ‘আদিবাসীদের সমাজব্যবস্থা, মূল্যবোধ, সংস্কৃতিচেতনা, সভ্যতা, সব মিলিয়ে যেন নানা সম্পদে শোভিত এক মহাদেশ।
আমরা, মূলস্রোতের মানুষেরা, সে মহাদেশকে জানার চেষ্টা না করেই ধ্বংস করে ফেলেছি, তা অস্বীকার করার পথ নেই। মূলস্রোতের ধাক্কায় এদের বারবার দেশান্তরী হতে হয়েছে। ফলে অনেক কিছু গেছে হারিয়ে। মূলস্রোত এই বিষয়ে যে অপরাধে অপরাধী তার ক্ষমা নেই।’
সবাইকে ধন্যবাদ।
লেখকঃ সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
এএলআরডিসহ ১৫টি সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত আলোচনাসভায়
সিরডাপ, ঢাকা, ২৭ আগস্ট ২০১৯, মূল প্রবন্ধ।
তথ্যসূত্রঃ IPNESBD
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।