মণিপুরী ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস: একটি অন্তর্গত পর্যালোচনা
1852
মণিপুর ও মণিপুরী
মণিপুরী জাতিসত্তার আদিভূমি ভারতের মণিপুর। মণিপুর একটি নৈসর্গিক শোভাঋদ্ধ রাজ্য। মণিপুরের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ভাষার মানুষ এসে এখানে বসতি গড়েছে।
ভৌগোলিকভাবে তারা সবাই মণিপুরী পরিচয় লাভ করলেও সাংস্কৃতিক ও জাতিগতভাবে ‘মণিপুরী’ হিসেবে বিকশিত হয়েছে কেবল মেইতেই ও বিষ্ণুপ্রিয়ারা।
ধর্ম, দর্শন, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, পোশাক-আশাক, আচারকৃত্য, ঘরবসতি, উৎপাদনরীতি সবকিছু নিয়ে এ দুই নৃতাত্ত্বিক বর্গ তাদের ভিন্ন দুই ভাষা নিয়েই মণিপুরী হিসেবে ঐক্য গড়ে তুলেছে।
ভাষার ভিন্নতাই যে জাতিগত ঐক্যের বাধা নয়, তার প্রধান উদাহরণ সম্ভবত মণিপুরীরা।
সেখানে ইতিহাসের নানা বাঁক, ঘাত-প্রতিঘাত রয়েছে, ধর্মভাবনায় প্রতিবিপ্লবের ধারা চলেছে, আগন্তুক বৈষ্ণবধর্মের বিপরীতে রিভাইভেলিস্টদের আদি প্রাকৃত ধর্ম নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা আছে, কিন্তু সত্য যে, মণিপুরী সংস্কৃতি ও শিল্পকলা তার যে বিশাল লীলা, পালা, নৃত্য, বাদ্য, গীতিকাব্য, রস নিয়ে বিশ্বমাঝারে অভিপ্রকাশিত, প্রতিষ্ঠিত, তার দার্শনিক ভিত্তি বৈষ্ণবিজম।
তবে এ বৈষ্ণবিজম মণিপুরের মাটিতে মণিপুরী চিন্তক ও সাধারণের কৃত্য-আচার চর্চার নিজস্বতার মধ্য দিয়ে স্বাতন্ত্র্য লাভ করেছে। সেটার রূপ-কাঠামো এখন অন্যরকম, নতুন, বিনির্মিত।
অনন্য সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও আন্তঃকোন্দল, বর্মি ও নাগাদের আক্রমণ, ধর্মীয়জটিলতা সব মিলিয়ে এটি ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে সংঘাতময় রাজ্যে পরিণত হয়।
সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অনেক মণিপুরী মেইতেই রাজা পামহৈবার অত্যাচার ও রাজনৈতিক নানা কোন্দলে জর্জরিত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেয় ভারতেরই আসাম-ত্রিপুরার বিভিন্ন অঞ্চলে, মিয়ানমারে এবং বাংলাদেশে।
পরে অষ্টাদশ শতকে বর্মিবাহিনীর আক্রমণে দ্বিতীয় দফায় মণিপুরীরা, বিশেষ করে মোইরাং গোত্রের লোকজন মণিপুর ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটে এসে তারা পাহাড় জঙ্গল কেটে আবাদ করে নিজেদের বসতি নিশ্চিত করে এবং নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে শান্তি-পূর্ণভাবে বসবাস করতে শুরু করে।
উত্তরগাঁও, মাঝেরগাঁও, ছনগাঁও, কোনাগাও ও তেতইগাঁও-এই পাঁচটি গ্রাম নিয়ে গঠিত ভানুবিল মৌজায় সর্ববৃহৎ অভিবাসন ঘটে মণিপুরীদের। ৭৫২টি পরিবার অন্তর্ভুক্ত ছিল এ মৌজায়।
কৃষি হয়ে ওঠে তাদের প্রধান জীবিকা। কিন্তু মণিপুরীরা এখানেও শান্তিতে থাকতে পারে না, ক্রমশ শিকার হতে থাকে নিষ্ঠুর শোষকবর্গের, চিনে নেয় শত্রুর মূল মুখ।
ঔপনিবেশিক শাসক ব্রিটিশদেরকে সরাসরি নয়, তারা পেয়েছিল ব্রিটিশেরই পোষ্য জমিদার আলী আমজাদ খাঁ ও তার নায়েব রাসবিহারী দাশকে।
গত শতাব্দীর প্রথম দশক। আলী আমজাদ খাঁ তৎকালীন লংলার পৃথ্বিমপাশার জমিদার। জমিদার আর নায়েব দুজনে মিলে কৃষকদের উপর চালায় নির্মম অন্যায়, জুলুম, শোষণ।
রাসবিহারী রসিদ না কেটেই প্রজাদের খাজনা আদায় করত। গোটা বিশ্বেই পুঁজিবাদের বিরোধ, সংঘর্ষ, সাম্রাজ্যবাদের চূড়ান্ত রূপ প্রকটিত, অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের অভ্যুদয়, আশা-হতাশার দোলাচলে বিশ্বের শোষিতশ্রেণির বিপ্লবচিন্তা কম্পমান।
ভানুবিলের সফল কৃষক-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে সিলেট জেলা প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। জমিজমার উপর কৃষকদের স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। রচিত হয় নতুন শাসনতন্ত্র।
কৃষক-প্রজাদের সেই বিদ্রোহ ও বিপ্লবের অভিজ্ঞতা ও চেতনা পরবর্তীতে মণিপুরী সংস্কৃতির নানান শাখায় সুশোভিত হয়েছে পুষ্পে পুষ্পে।
এ নিয়ে মূলত গণনাট্যধারায় প্রযোজিত হয়েছে নানান পালা। এখনো সৃষ্টি হচ্ছে অনেক সাহিত্যকর্ম।
মণিপুরী ভাষা ও সাহিত্য
বাংলাদেশের মণিপুরী জাতিসত্তা ভাষার দিক দিয়ে দুভাগে অন্তর্বিভক্ত। বিষ্ণুপ্রিয়া ও মেইতেই।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা ইন্দো-এরিয়ান ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। ড.কালীপ্রসাদ সিংহ প্রমুখ গবেষক এ ভাষাকে মাগধী-প্রাকৃত ভাষার সীমানায় সূচিত করেছেন।
তবে হালের অনেক গবেষক একে শৌরসেনী প্রাকৃত হিসেবে উল্লেখ করে গবেষণা চালাচ্ছেন। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় লিঙ্গ আর বচনভেদে ক্রিয়াপদেরও হেরফের হয়। যেমন:
লিঙ্গভেদে ভিন্নতা
থৈবা যাচ্ছে। [থৈবা যারগা]
থৈবী যাচ্ছে। [থৈবী যেইরিগা]
বচনভেদে ভিন্নতা
আমি যাচ্ছি। [মি যাউরিগা]
আমরা যাচ্ছি। [আমি যারাংগা]
নঞর্থকতা তৈরিতে সাধারণত ক্রিয়াপদের আগে ‘না’ বসে।
যেমন: আমি যাব না। [মি না যিমগা]
উচ্চারণের শুদ্ধতায় বলতে গেলে এ ভাষায় শ্বাসাঘাতের ধ্বনি খুবই কম।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা তার সমাজের নানা অনুষঙ্গের সাথে মিলে মুখোমুখি হয়েছে প্রবল আঘাত ও নিপীড়নের। এদিক দিয়ে বলতে গেলে সবচেয়ে নিপীড়িত ও পোড় খাওয়া ভাষা এটি।
গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে অন্তিম পর্যন্ত সুদীর্ঘ প্রায় পঞ্চাশ বছরের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ ভাষাটি ভারতে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
হাজারো ছাত্র-তরুণের কারাবরণ ও ভাষাবীরাঙ্গনা সুদেষ্ণা সিংহের আত্মাহুতির (১৬ মার্চ ১৯৯৬) মধ্য দিয়ে ভাষাটি আসাম ও ত্রিপুরার বিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়।
এরপরও তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে অহেতুক অযৌক্তিক সব অভিযোগ ও মামলার।
অনেক দিনের আইনি লড়াইয়ের পর গত ২০০৭ সালের ৮ মার্চ ভারতের সুপ্রিমকোর্টে প্রদত্ত রায়ের মধ্য দিয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা মণিপুরী ভাষা (বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী) হিসেবে পরিচয়ের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করল।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্যের প্রধান এলাকা আসাম ও ত্রিপুরা। সেখানে প্রায় তিন লাখ মণিপুরী আছে। এবং অসংখ্য সাহিত্যিকও।
তুলনায় বাংলাদেশে নানা রাজনৈতিক জৈবনিক অস্থিরতার কারণে সাহিত্যের ধারাটা তেমন বেগবান নয়।
প্রথাগতভাবে যদি মণিপুরী সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করি, তাহলে পর্যায়গুলো হবে: প্রাচীন, প্রাক-আধুনিক এবং আধুনিক সাহিত্য।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কাব্যসাহিত্যের এ যাবৎ পাওয়া প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে বলা হয় বরণ ডাহানির এলা [বৃষ্টি ডাকার গান] ও মাদই সরালেলর এলা [মাদই সরালেলের গান]।
কৃষিসমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট এ গানগুলো মণিপুরে বৈষ্ণবধর্ম প্রবেশেরও আগের সময়ের। প্রথম প্রকারের গানগুলোতে একটি কিংবদন্তীর গল্পকে অবলম্বন করে অনাবৃষ্টির রাজ্যে বৃষ্টি নামানোর কৃত্য প্রকাশ পেয়েছে।
দেবতা পাহাংপার আশীর্বাণীতে সেই রাজ্যে বর্ষণ শুরু হয়। এ গীতিপালায় অলংকারের প্রয়োগে কবিতার বীজ লুকিয়ে থাকে। যেমন :
‘মেয়েরা ভাসছে আনন্দে তারা জানালো যে আহ্বান
সুদীঘল কেশে ফুলেল কর্ণে হোক আজ নাচগান।’
আর মাদই-সরালেলের গানে মণিপুরীদের আদিদেবতা সরালেল ও মাদই-য়ের একটা সামাজিক বিশ্বাসগত দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া যায়।
একটি জাতিসত্তার আন্তঃধর্মীয় সংঘাতের পরিচয়ও সেখানে কিছুটা ফুটে উঠেছে। ভাষা, শব্দ, বাক্যগঠন সবকিছুতেই পাওয়া গেছে প্রাচীনতার নমুনা।
মাদই ও সরালেল বা ইন্দ্রের ইহ-দৈবিক সম্পর্ক, তার সংকট ও নানা ভাবাবেগে মাদইয়ের আর্তি নিয়ে রচিত হয়েছে মাদই- সরালেলের গান।
আপাঙর য়ারি বা বোকার গল্প নামে এক ধরনের লোকগল্প প্রচলিত আছে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের মধ্যে।
তবে অষ্টাদশ শতকে মণিপুররাজ গরীব নেওয়াজের আমলে মণিপুরে বাঙালি হিন্দু ধর্ম, কালানুক্রমে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটে।
তখন থেকে সংস্কৃত নানা পুরাণ, ধর্মগ্রন্থ ও বৈষ্ণব পদকর্তাদের রচনাকে নিজস্ব ভাষায় রূপান্তরিত করে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা ধর্মমূলক সাহিত্যচর্চার ধারাটি বেগবান করে তোলে।
প্রাক-আধুনিক পর্ব বলা যায় গত শতকের ত্রিশের দশক থেকে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত কালকে।
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে আসামে প্রকাশিত হয় পত্রিকা জাগরণ আর একই সময় গঠিত হয় মণিপুরী সমাজের প্রধান সংগঠন নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি মহাসভা।
একটা জাতিগত অস্তিত্বের সম্মানের আকাক্সক্ষা মাথাচাড়া দেয় মণিপুরীদের মাঝে। মহেন্দ্রকুমার সিংহ লেখেন মণিপুরের প্রাচীন ইতিহাস।
আর গোকুলানন্দ গীতিস্বামী সমাজ সংস্কারমূলক নানা গান, গীতিপালা লিখে সেগুলোর পরিবেশনা নিয়ে ঘুরতে থাকেন গ্রামে গ্রামে। তাঁকে বলা হয়ে থাকে চারণকবি।
সমাজ রাজনীতি বিষয়ে তার জ্ঞান ও মতাদর্শ ছিল খুব স্বচ্ছ ও শক্তিশালী।
তিনি গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গানে গানে তার অবস্থান স্পষ্ট করেন, একটা রেনেসাঁসের প্রতিবেশ তৈরির প্রয়াসী হন।
তার একটি গানের বাংলা তর্জমা এমন:
অজ্ঞানআঁধারে আর ঘুমাবে কদিন
ওঠো সবে, জ্বালাও হে জ্ঞানের পিদিম।
আবার –
কালে কালে কালের কথা না শুনলে চলবে না
বনে যদি আগুন ধরে কাঁচা পাকা বাছবে না।
একটি অনগ্রসর কৌম সমাজের জন্য তার এসব আধুনিক বাণী কাজ করেছে শাণিত অস্ত্রের মতো।
আধুনিক যুগের শুরু ধরতে হবে ষাটের দশকের একেবারে শুরু থেকে। ফাগু [১৯৬০], পাঞ্চজন্য আর্জ্জুনী [১৯৭০], প্রতিশ্রুতি [১৯৭৪] ইত্যাদি পত্রিকা প্রকাশিত হয় নতুন নতুন লেখক ও চিন্তা নিয়ে।
আর কবিতায় পথিকৃৎ হিসেবে আবির্ভূত হন ব্রজেন্দ্রকুমার সিংহ। যিনি ধনঞ্জয় রাজকুমার ছদ্মনামেই পরবর্তীতে বেশি পরিচিতি লাভ করেন।
নতুন চিন্তা, নতুন কাব্যবীক্ষা, বৈশ্বিক চেতনার সাথে জাতিগত ঐতিহ্য ও অনুষঙ্গের শৈল্পিক সংশ্লেষ, বিশাল কাব্যহৃদয়, তীক্ষ্ণ ও অপরিমেয় কাব্যশক্তি নিয়ে এ-কবি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কাব্যসাহিত্যকে বিশ্বমানের করে তোলেন।
তাঁর কবিতায় সামষ্টিক ও ব্যক্তিক বেদনা মিলে মিশে এক চোরাগুপ্তা রূপ নিয়ে নিল, যা খুলে দিল আধুনিক কবিতার প্রকরণ। লিখলেন :
‘আমরা যেদিন জলের কাছে গিয়েছিলাম, জল ছিল ঘুমে। ঘুম ভাঙাতে মায়া হলো বলে স্নান করিনি। আমাদের ওষ্ঠলগ্ন অক্ষরদেরও স্নান দেইনি আমরা। দুঃখটাকে পারলাম না জলাঞ্জলি দিতে…’
(বলে দাও)
এমনই সরল অথচ অর্থময় এক প্রান্তিক অনুভূতির প্রকাশ তাঁর কবিতায় পাওয়া যায়।
আবার ‘পথ’ কবিতায় এক নির্মোহ দার্শনিকতায় তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন এবং আহ্বান করেন:
পথকে মালা পরিয়ে দাও
ওই পথের গর্ভ থেকে আমাদের জন্ম হয়েছিল।
এই কবি তাঁর এক ব্যক্তিক কিন্তু পরোক্ষে হয়ত জাতিগত কোনো অভিমান থেকে শ্লেষাত্মক বলেন:
“মানুষের বারান্দায় এসে
ঘুমানো কুকুর
আমার সম্মানে গড়া স্মৃতিসৌধটিকে
আজন্ম তোমার নামে লিখে দিয়ে যাব
দুঃখ করো না।“
(একটি কুকুরের প্রতি)
তাঁর প্রায় সমকালেই আবির্ভূত হন সেনারূপ সিংহ, মদনমোহন মুখোপাধ্যায়, জগৎমোহন সিংহ প্রমুখ কবি।
সেনারূপ সিংহের আনৌপী একটি অনবদ্য কাব্যগ্রন্থ। তাঁর কবিতার ছন্দ, গীতলতা পাঠকের জন্য একটি দারুণ পাঠঅভিজ্ঞতা।
মদনমোহন মুখোপাধ্যায়ের কাব্যাবেগের শক্তি যে কোন পাঠককে স্পর্শ করবে। কথাসাহিত্যে ত্রিপুরার প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিমল সিংহের নাম উল্লেখযোগ্য।
বাংলায় লেখা হলেও তার ইঙেললেইর মেয়ের বিয়ে গল্পটি মণিপুরী সমাজের নৃতাত্ত্বিক সাহিত্যিক ভাষ্য হিসেবে যথেষ্ট আলোচিত হয়েছে।
পরের দশক থেকে আরো গতিশীল ও বহুমাত্রিক হয়ে ওঠে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্য।
প্রকাশিত হতে থাকে ত্রিপুরা চে [১৯৭৯ থেকে আজ পর্যন্ত], এবাকা [১৯৮০], নুয়া এলা [১৯৮২ থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিত] প্রভৃতি পত্রিকা।
বর্তমানে লোকতাক, পঞ্চশ্রী, কাকেই, সরালেল, আমার পৌ, চেতনা প্রভৃতি অসংখ্য ছোট কাগজ ও পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে।
প্রকাশিত হচ্ছেন অনেক লেখক, নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে এর পরের প্রজন্মে এক ঝাঁক তরুণ সাহিত্যিক ভাঙাগড়ার ব্রত নিয়ে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের সাহিত্যিক কণ্ঠস্বরকে পাথেয় করে মাঠে নামেন কলম হাতে।
চাম্পালাল সিংহ, মথুরা সিংহ, দিলস্ লক্ষ্মীন্দ্র সিংহ, সমরজিৎ সিংহ, বিশ্বজিৎ সিংহ, রঞ্জিত সিংহ প্রমুখ কবি ভাষার নতুনত্বে, চিন্তার অভিনবত্বে এবং জাতিগত রাজনৈতিক বীক্ষায় গড়ে তোলেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কাব্যসাহিত্যের সৌধ।
গত শতাব্দীর আশির দশকের কবি রঞ্জিত সিংহের জন্ম ভারতের আসামে। অনন্য রূপকল্প ও শান্ত সমাহিত বয়ানধরণ তাঁর কবিতাকে চেনা উপলব্ধি থেকে অন্য এক জীবনবোধের দিকে নিয়ে যায়।
রাজনীতিস্পর্শী এক গভীর হাহাকার তাঁর কবিতায় যেন লুকিয়ে থাকে। যেমন একটি কবিতায় পাই :
“শীতসকালের রোদের টুকরোগুলোও
নিয়ে গেল তারা
আকাশছোঁয়া দালানের এক কোণে
তিন-চার বছরের একজন ‘নাগরিক’ ও
থুত্থুরে বুড়ো ‘বুদ্ধিজীবী’টির জন্য
সাজিয়ে রাখলো।“
(জীবনের গল্প)
সমরজিৎ সিংহ বাংলা সাহিত্যেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। ডিটাচমেন্ট তৈরির কাব্যকলা [গ্রন্থ: ঈশ্বর মাঙছে মেইথঙে] ও মার্কসিস্ট ভিউ বিশ্বজিৎ সিংহের কবিতাকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে।
রঞ্জিত সিংহ রূপকল্প [কাব্যগ্রন্থ: মোর ইমার ঠার মোর প্রেমর কবিতা] ও মথুরা সিংহ পরিমিত হিউমারের দক্ষতায় [কাব্যগ্রন্থ: ইমা] কোনো কোনো কবিতাকে ভাস্বর করে রেখেছেন।
সমান্তরালে বাংলাদেশে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কাব্যসাহিত্যের কথা বলতে গেলে আসবে গত শতাব্দীর সত্তুরের দশকের কথা।
ত্রিশের দশকে ভানুবিলের কৃষক-আন্দোলন এবং পরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণসহ মণিপুরীরা রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগ্রামে অংশীদার ছিল।
আর সাহিত্য বা শিল্পকলার চর্চাটা ওইভাবে বেগবান হতে পারেনি। তবে রাসলীলা, নটপালা, বাসকসহ নানা কাব্যগীতাশ্রয়ী পালার মধ্য দিয়ে ক্ল্যাসিক্যাল সাহিত্যচর্চার কৃত্যমূলক ধারাটি সক্রিয় ছিল বেশ।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্যচর্চা সুস্পষ্টত শুরু হয় বলা যায়।
প্রকাশিত হয় খংচেল [১৯৭৩], ইমার ঠার [১৯৭৯], মিঙাল [১৯৮১], সত্যম [১৯৮১] ইত্যাদি সাহিত্য-সংস্কৃতির পত্রিকা।
কবিতায় আসেন রণজিত সিংহ, গোপীচাঁদ সিংহ প্রমুখ।
রণজিত সিংহ তাঁর ‘জেগে ওঠা’ কবিতায় আশংকা প্রকাশ করছেন এইভাবে:
‘যেভাবে নদীর পার ভাঙে
সেভাবেই ভাঙছে সমাজ, স্বপ্ন, পুরোনো নিয়ম
ভেঙে যাচ্ছি আমরা সবাই…’
সুখময় সিংহ প্রেমের আর্তির মধ্য দিয়ে এক পরাজিত মানুষের বেদনাকে তুলে ধরেন তার ‘তোর নিংশিঙে’ কবিতায়। শূন্য দশকের কবি শুভাশিস সিনহা।
প্রকাশ পেয়েছে ‘সেনাতম্বীর আমুনিগৎত সেম্পাকহান পড়িল অদিন’ [২০০৩] ও ‘নুয়া করে চিনুরি মেয়েক’ [২০০৫] কাব্যগ্রন্থ। লেখেন:
যে ভাষায় কথা বলি, সেটাই কেবল ভাষা নয়
অক্ষরে অক্ষরে ফুটে ওঠে যে ভাষাটি, তার চেয়ে
আরেকটি ভাষা থাকে ভেতরে ভেতরে-ভাঙাচোরা
প্রকাশ্যে যায় না আনা শৃঙ্খলার দুনিয়ার ভয়ে…
(নুয়া করে চিনুরি মেয়েক / অক্ষর নতুন করে চিনি)
নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্যচর্চা বেশ গতিশীল হয়ে ওঠে। প্রকাশিত হতে থাকে পৌরি [১৯৮৯], জাগরণ [১৯৯১], যেবাকা যেদিন [১৯৯১], ইথাক [১৯৯৪] প্রভৃতি সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক জার্নাল ও পত্রিকা।
বর্তমান শতকের প্রথম থেকে আরও অনেক তরুণ কবি ও সম্পাদক ব্রতী হয়েছেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তুলতে। সংগ্রাম সিংহ সাংবাদিকতায় এক উজ্জ্বল নাম।
তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় বাংলাদেশে তথ্য ও নিউজভিত্তিক পত্রিকা ইথাক বের করেন। বর্তমানে সুশীলকুমার সিংহ বের করছেন বাংলাদেশে প্রথম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মাসিক পত্রিকা পৌরি।
সাহিত্য, সমালোচনা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, খবরাখবর প্রভৃতি নিয়ে পৌরি মণিপুরী ভাষাসমাজে বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
নিয়মিত না হলেও সুমন সিংহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন লেখা নিয়ে বের করেছেন গাওরাপার বেশ কয়েকটি সংখ্যা।
অঞ্জন সিংহের সম্পাদনায় বের হচ্ছে দ্বিমাসিক সাহিত্যপত্রিকা কুমেই। আধুনিক লিটল ম্যাগ হিসেবে কুমেই উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখছে।
শুভাশিস সিনহার সম্পাদনায় অনিয়মিতভাবে বের হচ্ছে মণিপুরী থিয়েটারর পত্রিকা। মণিপুরী ছাড়াও বাংলাদেশের অপরাপর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাহিত্য, রাজনীতি, আন্দোলন বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা বের হচ্ছে এই পত্রিকায়।
কথাসাহিত্যে, বিশেষ করে ছোটগল্পে অমরেন্দ্র সিংহ, ব্রজেন্দ্রকুমার সিংহ ( গল্পগ্রন্থ: সিকাডেইনী), বিমল সিংহ, অনুকূল সিংহ (গল্পগ্রন্থ: বসন্তর খল্লিক), স্মৃতিকুমার সিংহ (গল্পগ্রন্থ : স্মৃতিকুমারর ছোট গল্প ১ম খ-, সাড়ে তিন হাত হপন, না-মরিল হজক বিসারেয়া), জ্যোতিপ্রকাশ সিংহ (গল্পগ্রন্থ : বানা পানির সালে), গীতা মুখার্জী প্রমুখ লেখক একটি প্রান্তিক জনপদের জীবন, সংকট, বিপর্যয়কে নানান মিথ ও সমকালীন ঘটনার মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন।
অনুকূল সিংহের আলো নয়, আঁধার গল্পে এলাকায় প্রথম ট্রেন চলাচলের আনন্দে আত্মহারা এক বৃদ্ধের ট্রেনচাপা পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে উন্নয়ন-এর স্ববিরোধী ভূমিকাটিকে চিনে নেয়া যায়।
স্মৃতিকুমার সিংহের মেস্তরী ধ্বজোর মরণ গল্পটি ধ্বজো নামের এক গ্রাম্য কাঠমিস্ত্রীর নিজের হাতে বানানো পুরনো ঘর ভেঙে ফেলার কষ্টযন্ত্রণার কাহিনীর মধ্য দিয়ে ঐতিহ্য-বিলুপ্তির সুরটিকে আবেদনময় ভাষায় সূচিত করেছে।
আবার বরণ ডাহেকুরি গল্পে মণিপুরী সমাজের এক লোকগানের ভেতর থেকে নাগীতা মুখার্জীর ছোট ছোট সাংকেতিক গল্প সহজ-সরল হলেও ভাবনাজাগানো এবং উপভোগ্য।
রাজনীতিক, সমাজ-সংগ্রামী অকালপ্রয়াত বিমল সিংহের গল্পের ডিটেইল্স, নৃতাত্ত্বিক ক্যানভাস অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি।
গল্পকার সুরেন্দ্র কুমার সিংহের জন্ম মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের ঘোড়ামারা গ্রামে। ১৯৭৫ সালে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত ‘খংচেল’ পত্রিকায় তার প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয়।
পরে অনিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা ‘সত্যম’-এ ছাপা হয় বেশ কয়েকটি গল্প। সুরেন্দ্র কুমার সিংহের গল্পভাষা কোমল, পরিমিত; তবুও তীক্ষ্ণ ব্যঞ্জনাধর্মী।
বিষয়ের দিক থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অবশ্যই ইতিহাস ও দেশকালের ধারক। প্রান্তিক নারীজীবনের অনবদ্য রূপকার তিনি।
তাঁর মাটির সংসার, কিষাণপুরের মায়া প্রভৃতি গল্পে গ্রামীণ জীবন, নারীচরিত্রের অন্তরমহল, সম্পর্কের জটিলতা প্রভৃতি বিষয়ের নিমাণশৈলী গল্পকার হিসেবে তাকে উঁচু আসন দেবে।
শুভাশিস সিনহার গল্পে উত্তর-আধুনিকতার স্মারক পাওয়া যায়। তার মানু কিদিয়া লেহাউশপাৎ লাল্লাম ইতারাতা গল্পটিতে মণিপুরীদের লেরিক ধিকরানি বা পুঁথিপাঠের ধরণকে কাজে লাগিয়ে এক ধরণের অভিনব বয়ানভঙ্গি তৈরির প্রয়াস পাওয়া যায়।
একজন পরাজিত মানুষের আত্মহত্যায় যাওয়ার সেই যাত্রাপথের বর্ণনা নিয়েই পুরো গল্পটি।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কথাসাহিত্যের কনিষ্ঠতম সদস্য গল্পকার অঞ্জন সিংহের জন্ম মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার তিলকপুর গ্রামে।
লেখালেখি, সাহিত্যসংগঠন, থিয়েটার নানাকিছুর সাথে জড়িত। কুমেই নামের একটি সাহিত্য-সংগঠন চালানোর পাশাপাশি সেখান থেকে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার দ্বিমাসিক ছোটকাগজ কুমেই সম্পাদনা করছেন।
বাম ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত অঞ্জনের গল্পে মার্কসীয় চেতনা থেকে প্রান্তিকতার সংকট ও যন্ত্রণাগুলো কখনো রূপকে কখনো খানিকটা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনের শহীদ বীর তরুণী সুদেষ্ণা সিংহকে নিয়ে প্রতীকীভাবে লেখা তার ‘বেদী’ গল্পটিতে গল্প বলার এক চমৎকার রীতি প্রকাশিত হয়েছে।
ভাষা বিষয়ক গবেষক হিসেবে প্রথমেই বলা যায় ড. কালীপ্রসাদ সিংহের নাম। তিনিই প্রথম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা নিয়ে মেথডোলজিক্যালি গবেষণা করেছেন।
পরবর্তীতে, সম্প্রতি মঙ্গল বাবু সিংহ, দিল্স্ লক্ষ্মীন্দ্র সিংহ প্রমুখ অপেক্ষাকৃত তরুণ গবেষকেরা ভাষা গবেষণার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মত নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তাঁদের রচনার মধ্য দিয়ে।
এছাড়া সাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধসাহিত্যে বরুণ কুমার সিংহ, ব্রজেন্দ্রকুমার সিংহ প্রমুখ প্রথম সারিতে থাকবেন। বাংলাদেশে প্রবন্ধ ও গবেষণাধর্মী রচনায় সবচেয়ে সক্রিয় আছেন রণজিত সিংহ।
তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের মণিপুরী সমাজ, নিংশিঙ নিরলে প্রভৃতি গ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও রাজকান্ত সিংহ, রসমোহন সিংহ, চন্দ্রকুমার সিংহ, শ্যামাকান্ত সিংহ, রামকান্ত সিংহ, সুকুমার সিংহ বিমল, উত্তম কুমার সিংহ, সুশীল কুমার সিংহ, অসীম কুমার সিংহ, হেমন্তকুমার সিংহ প্রমূখ নবীন-প্রবীণ লেখক বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী-দু’ভাষায় উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ লিখেছেন।
নাট্যকার হিসেবে শুরুতেই আসবে ইন্দ্রকুমার সিংহের নাম। কিছুটা কমেডি ধাঁচের মেইকেই, জরাসন্ধ, সেন্সাস নাটকগুলোতে সমাজের নানান অসঙ্গতি, বৈষম্য এবং মানুষের চারিত্রিক স্খলনগুলোকে স্পষ্টভাবে উন্মোচন করা হয়েছে।
ব্রজেন্দ্রকুমার সিংহ, অশ্বিনী কুমার সিংহ, নন্দেশ্বর সিংহ, রণজিত সিংহ, শুভাশিস সিংহ প্রমুখ লেখক মানোত্তীর্ণ নাটক লিখেছেন এবং সেগুলো নিয়ে থিয়েটারচর্চার ধারাও বেগবান করেছেন।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় উপন্যাস লেখা হয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। সেগুলোও যথাযথ উপন্যাসের অনেক উপাদান-বঞ্চিত বলা যায়।
উপন্যাস রচনার সামগ্রিক সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত সৃষ্টি না হওয়ার প্রতিবন্ধকতা এর জন্য দায়ী।
তবে প্রভাস কান্তি সিংহ, জ্যোতিপ্রকাশ সিংহ, সমরজিৎ সিংহ প্রমুখ লেখকেরা উপন্যাস লিখেছেন। সেখানে রাষ্ট্র ও জাতিগত বিষয়আশয় ও সংকটের নানামাত্রিক চিত্র আঁকার চেষ্টা আছে।
অনুবাদসাহিত্যে ধনঞ্জয় রাজকুমারের নাম অগ্রগণ্য। সোফোক্লিস, কালিদাস রবীন্দ্রনাথের রচনা ছাড়াও সারা বিশ্বের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ নিয়ে দুই খন্ডে প্রকাশিত তাঁর অনুবাদকল্প যেকোনো ভাষার শ্রেষ্ঠ অনুবাদসাহিত্যের মধ্যে স্থান করে নেবে। দিলস্ লক্ষ্মীন্দ্র সিংহও অনুবাদকর্মে ব্যাপৃত আছেন।
তবে দু’দেশেরই নাট্যসাহিত্যে পথিকৃৎ হিসেবে থাকবেন চারণ কবি গোকুলানন্দ গীতিস্বামী। মাতৃমঙ্গল কাব্য, সমাজ-সংস্কার সহ স্বরচিত বিভিন্ন জাগরনী নাট্যপালা নিয়ে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে যে নাট্যআন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, কালের বিচারে তার মূল্য অপরিসীম।
বর্তমানে মণিপুরী থিয়েটার নামের নাট্যদলটি দেশে-বিদেশে মণিপুরী নাট্যচর্চার ধারা অক্ষুণ্ন রেখেছে।
এছাড়া অনুবাদসাহিত্যেও অনেক লেখক এগিয়ে আসছেন মাতৃভাষাকে বৈশ্বিকতার স্পর্শে ঋদ্ধ করতে।
মেইতেই মণিপুরী ভাষাকে মঙ্গোলীয় মহাজাতির তিব্বত ব্রহ্মশাখার কুকিচীন ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলে মত প্রকাশ করেছেন স্যার গ্রিয়ারসন ও ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সহ অনেক ভাষাবিদ।
মেইতেই মণিপুরী ভাষার নিজস্ব লিপি রয়েছে। কথিত যে মণিপুররাজ পাখংবা খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে এই লিপির উদ্ভাবন করেন।
প্রথমে এ লিপির সংখ্যা ১৮ থাকলেও পরবর্তীতে রাজা খাগেম্বার উদ্যোগে আরও ৯টি লিপি অন্তর্ভুক্ত হয়।
মেইতেই মণিপুরী লিপির বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য হল এর প্রতিটি বর্ণের নামকরণ দেহের এক একটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নামানুসারে করা হয়েছে। যেমন বাংলা ক এর মণিপুরী সমার্থক বর্ণের নাম হল কোক, যার অর্থ মাথা।
১৮শ শতকের প্রথমার্ধে মেইতেই মণিপুরী ভাষাভাষীরা বাংলা লিপি গ্রহণ করে। মণিপুররাজ গরীব নেওয়াজের আমলে হিন্দু ধর্ম মণিপুরে রাজানুকূল্যেই প্রসার লাভ করে।
তখন বাঙালি হিন্দু প্রচারকদের দ্বারা বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও বাংলা লিপি মণিপুরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মেইতেই লিপির প্রচলন একেবারেই কমে আসে। শতাধিক মেইতেই ভাষার গ্রন্থ পুড়িয়ে দেয়া হয়। সে এক করুণ অধ্যায়।
মেইতেই মণিপুরী সাহিত্যের উৎসভূমি ও মূল চর্চাকেন্দ্র ভারতের মণিপুর রাজ্য। সেখানেই মূলত মণিপুরী সাহিত্যের বৈচিত্র্যপূর্ণ সম্ভার গড়ে উঠেছে।
মেইতেই মণিপুরী সাহিত্যের ইতিহাসকে ৩ টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রাচীন যুগ: খ্রিস্টপূর্ব কাল থেকে ১০৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত; মধ্যযুগ: ১০৭৪ খ্রি. থেকে ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, (মধ্যযুগকেও দুভাগে ভাগ করা হয়েছে: ১০৭৪ থেকে ১৭০৯ খ্রি, পর্যন্ত ১ম পর্যায় এবং ১৭০৯ থেকে ১৮২৫ খ্রি. পর্যন্ত ২য় পর্যায়); আধুনিক যুগ ১৮২৬ খ্রি. থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত।
সূর্যদেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত বিশেষ এক ধরণের গীতিকবিতা ‘ঔগী’ মেইতেই মণিপুরী ভাষার প্রথম মৌখিক রীতির সাহিত্য হিসেবে পরিচিত।
বৈদিক স্তোত্রের মতোই অনেকটা এর গঠনশৈলী। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় রচিত রাজকীয় ঘটনাপঞ্জি, জীবনাখ্যান, রাজ-ইতিহাস মণিপুরী সাহিত্যের বিপুল আয়তন গড়ে তুলেছে।
চৈথারোল কুম্বাবা, নুমিৎকাপা, পৈরিতোন খুনতোকপা, পান্থোইবি খোংগুল প্র্রভৃতি রচনা মেইতেই মণিপুরী সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শন।
বাঙালি হিন্দু ধর্ম প্রচারকদের আশ্রয়ে হিন্দু ধর্মের যে প্রভাব মণিপুরীদের মধ্যে পড়ে এবং পরবর্তীতে শান্তদাস গোস্বামী প্রমুখ বৈষ্ণব সহজিয়া মতের অনুসারীদের প্রচারণায় যে নবধর্মীয় সাংস্কৃতিক বলয় মণিপুরে তৈরি হয়, তার প্রভাবে বাংলা সাহিত্যের ধর্মভিত্তিক নানান পদ, পাঁচালির সাথে মণিপুরীদের একটা পরিচয় গড়ে ওঠে।
একটা বিশাল পরিবর্তন আসে মেইতেই সাহিত্যেও। বাংলা লিপিতে সাহিত্য রচিত হতে থাকে।
মেইতেই ভাষার প্রেমের কিংবদন্তী খাম্বা থৈবীর কাহিনী খুবই জনপ্রিয় একটি আখ্যানে পরিণত হয়েছে।
এই আখ্যান নিয়ে অনেক লেখক পরবর্তীতে নাটক ও অন্যান্য সাহিত্য রচনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে ৩৯০০০ পদ সম্বলিত হিজম অঙাংহল রচিত ‘খাম্বা থৈবী শৈরেং’ আধুনিক মহাকাব্য হিসেবে এক চমৎকার সৃষ্টি।
নিজস্ব সাহিত্য ছাড়াও মেইতেই মণিপুরী ভাষায় অনূদিত হয়েছে হোমার, টলস্টয়, গোর্কি, চেখভ, শেক্সপীয়ার সহ মহান ক্লাসিক লেখকের রচনা।
এছাড়া মেঘদূত রামায়ণ মহাভারত সহ অনেক মহাকাব্য এ ভাষায় অনূদিত হয়ে বিশ্বসাহিত্যের ভাষিক সম্পদে পরিণত হয়েছে।
সমকালীন সাহিত্যের ধারায় অগ্রগণ্য নাম এলঅংবম নীলকান্ত। ভারতের সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কবি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও বহুমাত্রিককক্ষিতা লিখেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম মৃত্যুর পরে তিনি একটি কবিতা লিখেছিলেন যা নানান ভাষায় ভারতে এবং বাংলাদেশেও প্রকাশিত হয়ে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
মণিপুরী নাট্যধারায় রতন থিয়াম, কানাইলাল হিসনামের নাম বিশ্ববিদিত। মণিপুরের এই দুই বিখ্যাত নাট্যকার ও নির্দেশক মূলতঃ পুরাণের কাহিনীকে নতুন প্রেক্ষাপটে সমকালীন ভাবনায় নাট্যরূপ দিয়ে থাকেন।
রতন থিয়ামের চক্রব্যূহ, ঋতুসংহার, কানাইলালের কর্ণ, ডাকঘর প্রকৃতি নাটক পুরাণ ও চিরন্তনী সাহিত্য বিনির্মাণের এক দুঃসাহসী মঞ্চ-ইতিহাস।
বাংলাদেশে মেইতেই মণিপুরী সাহিত্যের চর্চা কয়েক দশকের। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত মণিপুরী সাহিত্য সংসদ এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
সত্তরের দশকে কয়েকজন মেইতেই ভাষাভাষী সাহিত্যনিষ্ঠ তরুণ মাতৃভাষায় লেখালেখি শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নবকিশোর শর্মা, স্বর্গীয় প্রফেসর সোনামণি সিংহ, থোকচোম মণিহার প্রমুখ।
মণিপুরী সাহিত্য সংসদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ‘দ্বীপান্বিতা’ পত্রিকা ছিল মেইতেই সাহিত্যপ্রকাশের প্রধান মাধ্যম।
পরবর্তীতে জাতিচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মেইতেই সাহিত্যকর্মীরা একের পর এক প্রকাশ করতে থাকে মৈরা, মতম, থাজ, খোল্লাউ, অনৌবা মঙাল, মণিপুরী দর্পণ, ইপোম, শজিবু ইচেল, ঐগ্রী প্রভৃতি পত্রিকা।
বাংলাদেশে এ যাবৎ মেইতেই মণিপুরী ভাষায় কুড়িটির বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মণিপুরী সাহিত্য সংসদ, ঈনাৎ পাবলিকেশন, হামোম পাবলিকেশন প্রভৃতি প্রকাশনা এ গ্রন্থগুলো প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে প্রকাশিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম :
কাব্য
মঙ মপৈ মরক্তা – শেরাম নিরঞ্জন
থরাইগি নুংশিরে – সনাতন হামোম
রাখলগী নাচোম – হামোম প্রমোদ
ইন্নাফি – খোইরোম ইন্দ্রজিৎ
মঙলানগী আতিয়াদা নুমিৎ থোকপা- এ কে শেরাম
গল্প
নোঙ্গৌবী – এ কে শেরাম
প্রবন্ধ
মচু নাইবা মঙ – খোইরোম ইন্দ্রজিৎ
ফরংজাই রাখাল – শেরাম নিরঞ্জন
কবিতা সংকলন
বাংলাদেশকী মণিপুরী শৈরেং সম্পাদনা -এ কে শেরাম
এক বসন্তের ভালোবাসা অনুবাদ ও সম্পাদনা – মতুম অপু।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি জার্নালধর্মী প্রকাশিত হয়েছে।
মেইতেই ও বিষ্ণুপ্রিয়া – দু’ভাষাতেই বাংলাদেশে কবিতায় যতটুকু কাজ হয়েছে, তার তুলনায় কথাসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন খুবই সামান্য বলা যায়।
গত শতকের ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলাদেশে মেইতেই মণিপুরী সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন এ.কে. শেরাম, কারাম নীলবাবু, খোইরোম ইন্দ্রজিৎ, কন্থৌজম সুবোধ সিংহ, শেরাম শরৎ প্রমুখ। পরবর্তীতে সনাতন হামোম, এন শ্যামল, অহৈবম রনজিৎ কুমার সিংহ প্রমুখ লেখক নিজেদেরকে সাহিত্যচর্চায় যুক্ত করেন।
নব্বই দশকে বাংলা সাহিত্যের মতো মেইতেই মণিপুরী সাহিত্যে ভাষাভঙ্গি, আঙ্গিক, বিষয় সব দিক থেকে একটা পরিবর্তন আসে। জীবনের জটিলতা, জাতিতাত্ত্বিক সংকট ও আর্তির কথা ফুটে ওঠে কবিতায়।
অনেকটা প্রতীকী ভাবে। হামোম প্রমোদ ও শেরাম নিরঞ্জন এ সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি। অন্যান্য কবিদের মধ্যে সামব্রম শংকর, মতুম অপু প্রমুখ কবিদের নাম করা যায়।
গত শতকের শেষ দিকে এবং নতুন শতকের শুরুতে আরও নতুন কাব্যিক ইশারা নিয়ে হাজির হন থোঙাম সঞ্জয়, কন্থৌজম সুরঞ্জিত, শ্যামল সিংহ, শেরাম রিপন প্রমুখ কবি।
তারা চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের মেইতেই মণিপুরী সাহিত্যকে ভারতের বিশালায়তন মণিপুরী সাহিত্যের সমান্তরালে সমৃদ্ধ ও বেগবান করে তুলতে।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার মতো মেইতেই মণিপুরী কবিতায়ও প্রকাশ পায় আধুনিক বিচ্ছিন্ন মানুষের অভ্যন্তরে গুমড়ে মরা গোষ্ঠীচেতনার সংকট। নিজস্ব প্রতীকে তার পরিচয় পাওয়া যায়।
যেমন- এ কে শেরামের ‘অন্ধকার’ কবিতায় অন্ধকারকে ভয় পাওয়া আতংক প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সেই অন্ধকার
‘দৃষ্টিভঙ্গির পেঁচানো অন্ধকার
কৌশলের অন্ধকার
চেতনা ও মননের অন্ধকার…’
আবার তিনি কবিতার অন্তিমে বলছেন-
‘তুচ্ছ কচুরিপানাও এই অন্ধকারে
ফোঁস করে ওঠা যেনো ভীতির দেবতা: লাই।’
মণিপুরী একটি লোকবিশ্বাসের প্রকাশ রয়েছে শেষ শব্দে।
সনাতন হামোমের কবিতায় নারীর সৌন্দর্য, প্রকৃতি, ঈপ্সিত বাসনার একটি যৌথ সংশ্লেষ থাকে, কিন্তু সবশেষে সেই ব্যক্তিক পরাজয়েরই ইশারা। একট নির্লিপ্ত সুর আছে তার কবিতায়।
নির্জনে বেজে ওঠা বেদনার সঙ্গীত। রাসপূর্ণিমার মেলায় কোনো এক অভিমানী চোখ তার ‘অজান্তে দিয়েছে কন্ঠে বুনোস্বভাবের এই গান!’ (তুমি)
হামোম প্রমোদ এক অভিনব পুতুলের সৎকারের তার বেদনার কথা শোনান তাঁর কবিতায়। কবিতাটির নাম ‘ছোটবোন ও তার পুতুল’।
প্রিয় সেই কাপড়ের পুতুলের প্রতি কবির আর্তি : ‘কেন সে তাকেই শোনায় ‘কেবল নানা ভ্রমাত্মক ভাবনার উদ্রেককারী’ সান্দ্র, কুহকী ভাষা।’
মানবিক সভ্যতার নিষ্ঠুরতার এক প্রতীকী প্রতিবাদের উপাখ্যান কবিতায় যেন ফাঁদতে চেয়েছেন কবি। সেই পুতুল কী যেন বলে উঠতে চায়, কিন্তু মৃদঙ্গ আর শঙ্খধ্বনির ঝাঁঝের ভেতর তার সেই ভাষা হারিয়ে যায়।
শূন্যের দশকের কবি কন্থৌজম সুরঞ্জিত তার কবিতায় আধুনিক ব্যক্তিমনের জটিলর কুঠুরিতে ঢুকে নিজের জাতিগত অস্তিত্বের রূপটিকে চিনে নিতে চেয়েছেন।
বাংলাদেশে বৃহত্তর মণিপুরী জাতিসত্তার মধ্যে পাঙন নামের ক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায়ও রয়েছে, যাদের ভাষা মেইতেই, কিন্তু ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ায় মণিপুরী সংস্কৃতির চর্চা যাদের মধ্যে তেমন নেই বললেই চলে।
তবু কিছু সাংস্কৃতিক অভিক্ষেপ ও ভাষাগত ঐক্যের (মেইতেই ভাষার সাথে) কারণে তারাও মণিপুরী জনসস্কৃতির খানিকটা ধারণ করেন অবশ্যই, যা তাদের পোশাক-অলংকারে বোঝা যায়।
পাঙনদের মধ্যে সাহিত্যচর্চার খুব ধারা বাংলাদেশে এখনও স্পষ্ট নয়। সাংগঠনিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে সম্প্রতি শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে।
এখন সাহিত্য ক্ষেত্রেও তাদের নড়া-চড়া শুরু হয়েছে। পাঙনদের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক তৎপরতার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা যায়, সাজ্জাদুল হক স্বপনের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘অনৌবা খোংদাং’ বা নবযাত্রা।
১৯৯০ সালে এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সাল থেকে সাজ্জাদের সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ‘প্রত্যয়’ পত্রিকাটি।
এছাড়াও মোঃ আব্দুল মজিদ, খুরশেদ আলী প্রমুখ লেখক নিজেদের সংকট ও সম্ভাবনার দিকগুলো নিয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখে চলেছেন।
যদিও সেভাবে পূর্ণাঙ্গ কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। তবু মণিপুরী জাতিসত্তার ধর্মীয় ভিন্নতা নিয়ে ক্ষুদ্র এই বর্গটি নিজেদের ভেতরকার টানাপোড়েনের বিষয় নিয়ে হালে চেষ্টা করছে নতুন সাহিত্য জন্ম দেবার।
মণিপুরী রাইটার্স ফোরাম থেকে তারা একটি বৃহৎ গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগও নিয়েছে ইতোমধ্যে। অদূর ভবিষ্যতে পাঙন সম্প্রদায়ের ভেতর থেকে তাদের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পরচিয়গত জটিলতার অন্তর্গত উপলব্ধিসমূহ নতুন সাহিত্যের ইশারা প্রকাশ করবে নিশ্চয়।
(বাঙলাদেশ লেখক শিবির আয়োজিত “ভাষা ও সাহিত্য সম্মেলন ২০১২” এ উপস্থাপিত প্রবন্ধ ।)
লেখকঃ শুভাশিস সিনহা
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।