মণিপুরী সাহিত্য: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
1277
মণিপুরী সাহিত্য: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
মণিপুরী সাহিত্য খুবই প্রাচীন। অনেকের মতে খ্রিষ্টীয় প্রথম শতক থেকেই মণিপুরী সাহিত্যের পথচলা শুরু।
বলা হয়, ৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মণিপুরের রাজা পাখংবা যখন সিংহাসনে আরোহন করেন তখন দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত হয়েছিলো ‘ঔগ্রী হংগেল’।
এই ঔগ্রী হংগেল হলো এক ধরনের গীতিকবিতা। এটিকেই মণিপুরী সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন বলে বিবেচনা করা হয়।
তবে প্রথম লিখিত সাহিত্য হিসেবে যে গ্রন্থের কথা উল্লেখ করা হয় তাহলে তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত বলে বিবেচিত ‘পোইরৈতোন খুনথোকপা’।
এই গ্রন্থে প্রথম শতাব্দীতে মণিপুরে রাজত্বকারী রাজা পাখংবার সময়কালে আগত একটি জনগোষ্ঠীর প্রধান ‘পোইরৈতোন’-এর মণিপুরে আগমন ও বসতি স্থাপনের কাহিনী বিবৃত হয়েছে।
পণ্ডিতেরা মণিপুরী সাহিত্য চর্চার ধারাকে ৪টি কালানুক্রমিক ধারায় বিভাজন করে থাকেন। প্রাচীন যুগ- ১০৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, প্রাচীন মধ্যযুগ- ১০৭৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৭০৯ খ্রিষ্টাব্দ, নবীন মধ্যযুগ- ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দ এবং ১৮২৬ থেকে পরবর্তী সমকালকে মণিপুরী সাহিত্যের আধুনিক কাল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রাচীনকালের কিছু উল্লেখযোগ্য সাহিত্যসৃষ্টি হলো নুমিৎ কাপ্পা, পান্থোইবী খোংগুল, চৈথারোল কুম্বাবা, লাইশ্রফম, নাউথিংখোং ফম্বাল কাবা, নিংথৌরোল শৈরেং, সানা লমওক, লোইম্বায়ু শিনয়েন প্রভৃতি।
মধ্যযুগে এসে মণিপুরী সাহিত্যের ভাণ্ডারে আরো যুক্ত হয় অনেক দ্যুতিময় সৃষ্টির সম্ভার। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- হিজন হিরাও, চাদা লাইহুই, খোংজোংনী নোঙ্গরোন, চায়নারোল, চোথে থাংওয়াই পাখংবা, নোংশামৈ, সমসোক ঙম্বা, চিংথংখোম্বা গঙ্গা চৎপা, খাহিঙম্বা ইত্যাদি।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এসে মণিপুরী সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটে। বিংশ শতাব্দীতে এসে এই সাহিত্য পরিপুষ্ট হয়ে ওঠে বাংলা ও ইংরেজী সাহিত্যের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ পেয়ে।
আধুনিকতার এই উন্মেষকালের প্রধান কবি-সাহিত্যিকেরা হলেন লমাবম কমল, খ্বাইরাকপম চাউবা, হিজামা অঙাংহল, হওয়াইবম দরেন্দ্রজিৎ, অশাংবম মীনকেতন, রাজকুমার শীতলজিৎ প্রমুখ।
এ-সময়কালের আলোচিত উপন্যাস ‘মাধবী’, খ্বাইরাকপম চাউবার কাব্যগ্রন্থ ‘থায়নগী লৈরাং’, ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘লবঙ্গলতা’, রাজকুমার শীতলজিৎ-এর ছোটগল্প সংকলন ‘লৈকোন্নুংদা’এবং হিজম অঙাংহল-এর খণ্ডকাব্য ‘শীংঙেন ইন্দু’, নাটক ‘ইবেম্মা’ প্রভৃতি।
এছাড়া ঊনচল্লিশ হাজার পদ সম্বলিত থাম্বা-থোইবীর চিরন্তন -প্রেমের মহাকাব্য হিজম অঙালহল-এর ‘খাম্বা-থোইবী শৈরেং’ মণিপুরী সাহিত্যের গর্বিত ঐতিহ্য।
তাদের সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে মণিপুরী সাহিত্যের সৃজনশীল প্রান্তরে এগিয়ে আসেন সমরেন্দ, নীলকান্ত, এম কে বিনোদিনী, জি সি তোংব্রা, এলাংবম রজনীকান্ত, হিজম গুনো, খুমেন্থেম প্রকাশ, শ্ৰীবীরেন, কুঞ্জমোহন, খৈরুদ্দীন প্রমুখ।
১৯৭২ সালে মণিপুরী ভাষা ভারতের সাহিত্য একাডেমীর স্বীকৃতি লাভ করে এবং এর কবি-সাহিত্যিকদের একাডেমী এওয়ার্ড প্রদান। এছাড়াও সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ভারত সরকার প্রদত্ত মর্যাদাবান উপাধি ‘পদশ্রী’তে ভূষিত হয়েছেন মণিপুরী ভাষার অনেক কবি ও সাহিত্যিক।
নিজের ভাষায় সাহিত্য চর্চাই শুধু নয়, অনুবাদের ক্ষেত্রেও মণিপুরী সাহিত্য অনেক এগিয়ে।
ইতোমধ্যে মণিপুরী ভাষায় অনূদিত হয়েছে রামায়ণ, মহাভারত-এর মতো কালজয়ী সাহিত্যকর্ম; মেঘদূত, ইলিয়াড, ওডেসীর মতো ক্লাসিক সাহিত্য; ঋগ্বেদ, বিভিন্ন পুরাণ, শ্রীমদ্ভবতগীতা, উজ্জ্বল নীলমণি, ভক্তি রসামৃত, মনু সংহিতা, বাইবেলসহ বিভিন্ন ধর্মের বিখ্যাত গ্রন্থাবলী; কালিদাস, ভাস, ভবভূতি, বানভট্টসহ প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্যিকবৃন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপীয়ার, টলস্টয়, হোমার, বার্নাড শ’, সোফোক্লিস, বঙ্কিম, শরৎসহ বিশ্বসাহিত্যের মহৎ রূপকারদের অনন্য সব সাহিত্যকর্ম।
বঙ্কিমচন্দ্রের সকল উপন্যাস এবং শরৎচন্দ্রের প্রায় সমগ্র রচনাবলীই অনূদিত হয়েছে মণিপুরী ভাষায়।
মণিপুরী সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অনেক সৃষ্টিকর্মও আজ অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়।
বাংলাদেশে মণিপুরী বসতিস্থাপনের সময়কালের ব্যাপ্তি কয়েক শতাব্দীর হলেও মণিপুরী সাহিত্য চর্চার ইতিহাস মাত্র কয়েক দশকের।
১৯৭৫ সালে গঠিত হয় এদেশের প্রথম মণিপুরী সাহিত্য সংগঠন ‘পূজারী সাহিত্য সংসদ’, যা মাত্র বছর দেড়েকের ব্যবধানে ‘বাংলাদেশ মণিপুরী সাহিত্য সংসদ’ নাম ধারণ করে। ১৯৭৫ সালের ১৬ ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় মণিপুরী ও বাংলা ভাষায় দ্বিভাষিক সাহিত্য সংকলন ‘দীপান্বিতা’।
এটিই বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রথম মণিপুরী সাহিত্য সংকলন ৷ দীপান্বিতা, পরে ‘মৈরা’ নাম গ্রহণ করে এখনও তার প্রকাশনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে।
এ-পর্যন্ত মৈরা-র ৪৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। দীপান্বিতা প্রকাশের আগে অবশ্য কেউ কেউ ব্যক্তিগত প্রয়াসে মণিপুরী সাহিত্যচর্চায় ব্রতী হয়েছিলেন বলে জানা যায়।
তাদের মধ্যে থোংখাতাবম নবকিশোর শর্মা, থোকচোম সোনামনি সিংহ ও থোকচোম মনিহার শোণীর নাম উল্লেখ্য। পরবর্তীতে দীপান্বিতা বা মৈরার আলোয় আলোকিত হয়ে প্রকাশিত হয় আরো অনেক মণিপুরী সাহিত্য সংকলন।
এগুলোর মধ্যে শজিবু ইপোম, মতম থাজ, অনৌবা মঙাল, ময়োল, থরো-থম্বাল-থারিকথ্রা, তাম্না, খোল্লাউ, য়াকাইওয়া, মণিপুরী দর্পণ, প্রয়াস, লৈচল, ঔগ্রী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ইতিহাসের এক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশের নানা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বসতিস্থাপন করেছিলো মণিপুরীরা।
তারপর থেকেই তারা নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নিজেদের ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা ও বিকাশের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।
তবু অনিবার্য আর্থ-সামাজিক তথা পারিপার্শ্বিক চাপে এবং সতেজ প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাংলাদেশের মণিপুরীরা নিজস্ব ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশে স্বভাবতই পিছিয়ে রয়েছে।
ফলে, পরিত্যক্ত বা অপরিচর্যিত ফুলের বাগান থেকে যেমন সুন্দর ফুলের আশা করা যায় না তেমনি বাংলাদেশী মণিপুরীদের অনাবাদী ভূমি থেকে সাহিত্যের ফসল আশা করা নিরর্থক।
তবু, একটা পর্যায়ে এসে জন্ম নেয় বাংলাদেশ মণিপুরী সাহিত্য সংসদ এবং প্রকাশিত হয় মণিপুরী সাহিত্য সংকলন ‘দীপান্বিতা’। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায় একজন ফরাসী লেখকের উক্তি- ‘Art is a permanent revolution.’
গত তিন যুগ ধরে বাংলাদেশ মণিপুরী সাহিত্য সংসদ তাদের মুখপত্র দীপান্বিতা/মৈরা-র মাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশ করে গেছে মণিপুরী ভাষায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ও গবেষণাধর্মী রচনা।
আর এইসব লেখায় বাংলার শ্যামল প্রকৃতি, নবজীবন ও দেশাত্মবোধ প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলাদেশে মণিপুরী সাহিত্যচর্চা সূচনাসময়ে যখন ‘দীপান্বিতা’ সংকলন কেন্দ্রিক সাহিত্যসৃষ্টি চলছিলো সেসময়কার অনেকের লেখায় আমরা ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন লক্ষ করেছি।
তৌরেম রবিন সেরকমই এক কবি । তার কবিতার কিয়দংশ বাংলা অনুবাদে এখানে তুলে ধরা হলো-
‘বর্তনশীল তাবৎ পৃথিবীর মৌসুমী আবহাওয়ায়
বাংলাদেশের মণিপুরী সমাজকে
বিবর্তনে বাণী বিলিয়ে দেয়।
পৃথিবীর যত অনাচার আর মিথ্যার বিরুদ্ধে
তুমি সোচ্চার, আর গেয়ে যাক
স্বরাজের গান-ভবিষ্যত বংশধররা।’
১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের মণিপুরী সাহিত্যের প্রথম গ্রন্থ এ কে শেরামের কাব্যগ্রন্থ ‘বসন্ত কুন্নিপালগী লৈরাং’ (আটাশ বসন্তের ফুল)।
বাংলাদেশে মণিপুরী সাহিত্যের ইতিহাসে এটি এক বিশাল মাইলফলক। পরবর্তীতে প্রকাশিত হয় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ মিলিয়ে বেশ ক’টি গ্রন্থ।
এর মধ্যে এ কে শেরামের ৯টি, শেরাম নিরঞ্জনের ৫টি, খোইরোম ইন্দ্রজিতের ২টি, সনাতন হামোমের ৩টি, হামোম প্রমোদের ১টি, ইমোদম রবিনের ২টি, মুতুম অপুর ৩টি এবং মাইন্নাম রাজেশের ১টি গ্রন্থ রয়েছে।
এ-যাবত প্রকাশিত মণিপুরী গ্রন্থের সংখ্যা ২৬টি। এগুলোর মধ্যে কবিতার বই ১৮টি, গল্প ১টি, প্রবন্ধ ৪টি এবং অন্যান্য ৩টি।
তাছাড়া যাদের কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত না হলেও নিরলস চর্চার মাধ্যমে যারা ইতোমধ্যে একটা নিজস্ব চারিত্র্য অর্জনে সমর্থ হয়েছেন, তারা হলেন- শান্ত খুমন, খোইরোম কামিনীকুমার, কারাম নীলবাবু, শেরাম শরৎ, এল পদ্মামনি, এন শ্যামল, এন যোগেশ্বর অপু, নামব্রম শংকর, কন্থেীজম সুরঞ্জিত, পারি চিংথাম, থোঙাম সঞ্জয় প্রমুখ।
এ–যাবত প্রকাশিত মণিপুরী ভাষায় রচিত মণিপুরী সাহিত্যের গ্রন্থগুলোর তালিকা নীচে সন্নিবেশিত হলো :
১. বসন্ত কুনিপালগী লৈরাং (মণিপুরী কবিতা, ১৯৮২)-এ কে শেরাম (দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০১১)
২. কলৈ ঈয়েক ঈপী (মণিপরী লিপি শিক্ষার বই, ১৯৮৪)-এ কে শেরাম
৩. বাংলাদেশের মণিপুরী কবিতা (নির্বাচিত মণিপুরী কবিতা বাংলা অনুবাদসহ, ১৯৯০)-সম্পাদক : এ কে শেরাম (২য় বর্ধিত সংস্করণ ২০১১)
৪. মঙ মপৈ মরক্তা (মণিপুরী কবিতা, ১৯৯৫)-শেরাম নিরঞ্জন
৫. ওয়াখলগী নাচোম (মণিপুরী কবিতা, ২০০০)-হামোম প্রমোদ
৬. মণিপুরী শক্তাক খুদম (মণিপুরী প্রবন্ধ সংকলন,
তে এদম (মণিপুরী প্রবন্ধ সংকলন, ১৯৯৯)-সম্পাদক : এ কে শেরাম
৭.লৈনম ওয়াদ্রিবী লৈরাং (মণিপুরী কবিতা, ২০০০)-সনাতন হামোম
৮. এক বসন্তের ভালবাসা (মণিপুরী ও বাংলা কবিতার সংকলন, ২০০১)-সম্পাদক : মুতুম অপু সিংহ
৯. নোঙ্গৌবী (মণিপুরী ছোটগল্প, ২০০১)-এ কে শেরাম
১০. ইচেল ইরাওখোল (মণিপুরী কবিতার সংকলন, ২০০০)-সম্পাদক শেরাম নিরঞ্জন/ এন যোগেশ্বর অপু/ নামব্রম শংকর
১১. থওয়াইগী নুংশিরৈ (মণিপুরী কবিতা, ২০০৩)-সনাতন হামোম
১২. মচু নাইবা মঙ (মণিপুরী প্রবন্ধ, ২০০৩)-খোইরোম ইন্দ্রজিত
১৩. অতোপ্পগী পিরাং (মণিপুরী কবিতা, ২০০৪)-শেরাম নিরঞ্জন
১৪. লৈরাংগী লৈরোং (মণিপুরী কবিতা, ২০০৪)-মুতুম অপু
১৫. ইন্নফি (মণিপুরী কবিতা, ২০০৫)-খোইরোম ইন্দ্রজিত
১৬. মোংফম থম্মোয়গী নুংশিবা (মণিপুরী কবিতা, ২০০৫)-মাইস্নাম রাজেশ
১৭. নাতৈ চাদ্ৰবা পৃথিবী (মণিপুরী কবিতা, ২০০৫)-শেরাম নিরঞ্জন
১৮. মঙ মরক্তা (মণিপুরী কবিতা, ২০০৬)-সনাতন হামোম
১৯. মঙলানগী আতিয়াদা নুমিৎ থোকপা (মণিপুরী কবিতা, ২০০৭)-এ কে শেরাম
২০. ওয়াখলগী মঙাল (মণিপুরী কবিতা, ২০০৭)-ইমোদম রবিন
২১. ফরংজাই ওয়াখল (মণিপুরী প্রবন্ধ, ২০০৭)-শেরাম নিরঞ্জন
২২. মণিপুরী নাচোম (সংকলন, ২০০৮)-সম্পাদক : এ কে শেরাম, শেরাম নিরঞ্জন, নাম শংকর (৪র্থ সংস্করণ ২০১২)
২৩. অঙকপা মালেম (মণিপুরী কবিতা, ২০০৯)-ইমোদম রবিন
২৪. অতোপ্পা লৈরাং (মণিপুরী প্রবন্ধ, ২০১০)-এ কে শেরাম
২৫. লৈরাংগী লৈরাং – ২ (মণিপুরী কবিতা, ২০১০)-মুতুম অপু
২৬. মণিপুরী (মৈতৈ) ময়েক মপী (মণিপুরী লিপি শিক্ষার বই, ২০১২)- এ কে শেরাম
এছাড়া বাংলাদেশের মণিপুরী লেখকেরা দ্বিতীয় মাতভাষা বাংলায় ও সাহিত্য চর্চা করে থাকেন। ইতোমধ্যে তাদের বাংলায় লিখা বেশ কিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে। এ রকম গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি।
এর মধ্যে এ কে শেরামের ৭টি সনাতন হামোমের ২টি, শেরাম নিরঞ্জনের ১টি, হামোম প্রমোদের ১টি, অরুণ কুমার শর্মার ১টি, থোঙাম ধীরেনের ১টি, লক্ষীকান্ত সিংহের ১টি, মিলাউ সিংহের ১টি, অনিল কিষণ সিংহের ১টি ও থোঙাম সঞ্জয়ের ১টি।
বাংলাদেশে মণিপুরীদের বসবাসকালের ব্যাপ্তি প্রায় তিন শতাব্দীর। আর এই দীর্ঘকাল বসবাসের কারণে বাংলাদেশের মণিপুরীরা আজ চিন্তায়-চেতনায় ও মন-মানসে পরিপূর্ণভাবে বাংলাদেশী।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে কিছু সংখ্যক নবীন সাহিত্যকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় মণিপুরী সাহিত্যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়-সূচিত হয় এক রেঁনেসা-কাল।
মণিপুরী ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির গৌরবময় দীর্ঘ ইতিহাসকে সযত্নে লালনের অঙ্গীকার পরিলক্ষিত হয় তাদের লেখার স্টাইলে, টেকনিকে।
অদম্য উৎসাহ আর উদ্দীপনার সাথে এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্রে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারা সুসংহত করার নিরন্তর প্রচেষ্টা, সর্বোপরি মণিপুরী ভাষা ও সাহিত্যকে সীমিত পরিসরে হলেও পরিচিতি দেয়ার প্রত্যয়ী এক প্রয়াস আমরা লক্ষ করি।
আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে মণিপুরী সাহিত্য চর্চার এই ধারা ক্রমশ বেগবান হবে এবং একদিন আপন বৈশিষ্ট্য নিয়েই মণিপুরী সাহিত্যের সংযোজন বাংলাদেশের জাতীয় মূলধারার সাহিত্যের ঐতিহ্যকেও দেবে এক বর্ণিল বৈভব।
লেখকঃ খোইরোম ইন্দ্রজিত : কবি ও লেখক; সভাপতি, বাংলাদেশ মণিপুরী সাহিত্য সংসদ, কমলগঞ্জ শাখা।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।