মারমা জনগোষ্ঠীর বিবাহ (মেয়াপোই/মাঙলা হং পোই/লাক থাই মাঙলা পোই)
2773
বিবাহের সংজ্ঞা: মারমা সমাজে বিবাহ একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। মারমা সমাজে স্বীকৃত বিবাহের পূর্বশর্ত হচ্ছে ‘চুং-মাং-লে’ বা ‘গংউ নাইট’ অনুষ্ঠান। এই সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহিত মারমা দম্পতি একত্রে বসবাস ও জৈবিক মিলনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের অধিকার লাভ করে।
এই সামাজিক রীতি অনুসরণ ব্যতীত মারমা সমাজে নর-নারীর জৈবিক মিলন, একত্রে বসবাস ও সন্তান জন্মদান সমাজসিদ্ধ নয় বিধায় অবৈধ বলে গণ্য হয়।
সমাজসিদ্ধ বিবাহের ক্ষেত্রে মারমা সমাজে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান লক্ষ্য করা গেলেও ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে ‘লা থেক পেই’ বা ‘লাক্ ছং পোই’ এ দুটি সামাজিক অনুষ্ঠানের কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই।
বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা :
বিবাহ রীতিঃ পাত্রপক্ষের প্রস্তাব ও কনেপক্ষের সম্মতি এ দুটি বিষয় মারমা সমাজের নিয়মিত/সামাজিক বিবাহের প্রথম পর্ব। সচরাচর পাত্রপক্ষের উদ্যোগে এ পর্ব শুরু হয়।
এ পর্বে সাধারণতঃ পরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি অথবা নিকট বা দূরসম্পৰ্কীয় কোনো আত্মীয় বিয়ের প্রস্তাব বাহক বা মাধ্যম হিসেবে সামাজিকভাবে বিবাহ বন্ধনের জন্য নৈতিক দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি এক পক্ষের প্রস্তাব অপরপক্ষের নিকট পৌছে দেন। পাত্রীপক্ষের অভিভাবকের ‘হ্যা’ সূচক সম্মতি পাওয়া গেলে পাত্রের পিতা-মাতা কিংবা বন্ধু-বান্ধব অথবা গুরুজনেরা বেজোড় সংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে প্রথাগতভাবে ব্যবহার্য উপকরণসহ (যেমনঃ- ১ বোতল মদ, ২৫টি সুপারী, ১ বিড়া পান, বিন্নি ভাত, মিষ্টি, চিনি, আঁখ, ১ জোড়া নারিকেল ইত্যাদি) পাত্রীপক্ষের বাড়ীতে যান।
তারা পাত্রীপক্ষের বাড়ীতে গিয়ে এক বোতল মদ (মারমা ভাষায় যাকে “হ্নাকফ অইং’ বলা হয়ে থাকে) পাত্রীর মা-বাবাকে প্রদান করে বিয়ের প্রস্তাবে তাদের মতামত গ্রহণ করেন । পাত্রীর মা-বাবার সম্মতির পর মেয়ের মতামত নেয়া হয়।
মেয়ের সম্মতি পাওয়া গেলে পাত্রপক্ষের দেয়া মদের বোতল পাত্রীপক্ষ গ্রহণ করে অনুরূপ আর এক বোতল মদ পাত্রীর পরিবার থেকে পাত্রপক্ষকে দেয়া হয়। এসময় উভয়পক্ষের হাসি-ঠাট্টায় মদপানসহ বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়। অধুনা এসব রীতি কদাচিৎ অনুসৃত হয়।
পাত্র-পাত্রী কোন্ রাশির জাতক-জাতিকা এবং তাদের বিয়ের লগ্ন ইত্যাদি দেখার জন্য জ্যোতিষ শাস্ত্র জ্ঞান সম্পন্ন একজন গণককে (মারমা ভাষায় বিদ্বারা) ডাকা হয়। উপস্থিত সকলের সম্মুখে জাতক-জাতিকার রাশিফল, বিয়ের দিনক্ষণ ও তারিখ বিশ্লেষণ করে দেখা হয়। এক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর জন্মবারও বিশেষ প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
সবকিছু শুভ লক্ষণযুক্ত হলে পাত্রী পাত্রপক্ষের গুরুজনদের প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ করে। এসময় পাত্রপক্ষ একটি থকিং (থামী), রূপা বা স্বর্ণের একটি আংটি দিয়ে পাত্রীকে আশীর্বাদ করেন।
মারমা সমাজে বিবাহ অনুষ্ঠানের দুদিন পূর্বে পাত্রের বাবা বা অভিভাবক নিজ বাড়ীতে গৃহ দেবতার উদ্দেশ্যে ‘চুং-মাং-লে’ পূজার আয়োজন করে। উক্ত পূজায় দেবতার উদ্দেশ্যে একটি শূকর ও পাঁচটি মুরগী বলি দেয়া হয়।
অতীতে বিবাহের দিন, তারিখ ধার্য হবার পর পাত্রপক্ষ থেকে পাত্রীপক্ষের বাড়িতে একটি মোরগসহ বিয়ের নিমন্ত্রণ পাঠানো হতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা বা তাম্রমুদ্রা পাঠানোর রেওয়াজও লক্ষ্য করা যায়।
(বান্দরবান পার্বত্য জেলা সদরের ৩২৪নং চেমী মৌজার অন্তর্গত কাউ পাড়া নিবাসী কোনো মারমা পরিবারের মেয়েকে যদি ভিন্ন পাড়ার কোনো মারমা যুবক বিয়ে করতে আগ্রহী হয়, তবে বরপক্ষের তরফ হতে কনের বাড়ীতে একটি শুকর, এক আড়ি চাউল, এক কেজি হলুদ, এক কেজি লবণ, এক কেজি মরিচ ও বার বোতল মদ উপঢৌকন পাঠাতে হয়। (সূত্রঃ- পুলু প্রু হেডম্যান)।
বিয়ের নির্ধারিত দিনে পাত্রের বাড়ীর প্রবেশ দ্বারে কলা গাছের দু’টি কচি চারা বসিয়ে তার পাশে ‘রিজাংও’ (সালা সুতো দিয়ে পেচানো দু’টো পানি পূর্ণ কলস) এবং ‘সিফাইকও’ (বিন্নি চাউল থেকে তৈরী পানীয়) রাখা হয়।
বউ আনতে যাবার দিনে একটি সেদ্ধ মোরগ, চিরে (মদ তৈরির হবার পূর্বে ভাত, পানি ও মুলির সংমিশ্রণ) এক বোতল, মদ এক বোতল, একটি গৃবিং (মারমা মেয়েদের নিম্নাংশের পরিধেয় কাপড়) একটি বেদাই-আংগি (উর্ধাঙ্গের পোশাক), একটি রাংগাই-আংপি (বক্ষবন্ধনী কাপড়), ১ জোড়া কাখ্যাং (পায়ের থারু) একটি পূবং (মাথার বন্ধনী কাপড়) নিয়ে পাত্রের মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধবসহ (আবার কোনো কারণে পাত্রের মা-বাবা না থাকলে একজন মুরুব্বী যিনি প্রথমা স্ত্রীর সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে দাম্পত্য জীবন-যাপন করছেন তার নেতৃত্বে) বাদ্য-বাজনা সহকারে কনের পিত্রালয়ে যান।
গ্রামাঞ্চলের বিয়েতে বরপক্ষকে কনে নিয়ে ফিরে যাবার পথে কনের সমবয়সী ও বন্ধুবান্ধবীরা বাঁশ ফেলে পথরোধ করে। এ সময় তাদের দাবী অনুসারে মদ ও নগদ অর্থ উপহার দিয়ে কনে নিয়ে যাওয়ার আনন্দ উপভোগের রেওয়াজ আছে।
বিবাহের মূল অনুষ্ঠানটি ‘উবদিদাই’ বা ‘মূতে ছুরা/আখা ছরা’ (বিবাহের মন্ত্র জানা ব্যক্তি) দ্বারা বরের বাড়ীতে পরিচালিত হয়। তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে মন্ত্রপূত জলপূর্ণ পাত্রে এক গুচ্ছ জামের কচি পাতা ডুবিয়ে তা দিয়ে বর ও কনের মাথায় পাঁচ-সাতবার পবিত্র জল ছিটিয়ে দেন।
বিয়ের অনুষ্ঠানের মূল পর্বে কনের ডানহাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের সাথে বরের বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলটি যুক্ত করে তাতে পবিত্র জল ছিটিয়ে দেয়া হয়। এ অনুষ্ঠানকে মারমা ভাষায় ‘লা থেক পোই’ বলে।
মারমা সামাজিক রীতি অনুসারে ‘লাক্ থেক পোই’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহকে সমাজসিদ্ধ করা হয়। বিবাহ অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী ‘উবদিদাই’ বা ‘মৃতে ছরা/আখা ছরা’ এমন একজন ব্যক্তিকে হতে হয়, যিনি বিপত্নীক বা বিচ্ছেদ প্রাপ্ত নন (মারমা ভাষায় একে ‘আগ্লোইং থোওয়াক্’ বলা হয়)।
বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে আশীর্বাদের সময় মৃতে ছরা/আখা ছড়া’ তার হাতে থাকা একটি তলোয়ার- এর মধ্যে পাঁচ প্যাচে পেঁচানো সুতার কুন্ডলী জড়িয়ে রেখে সেখান থেকে আশীর্বাদ প্রদানকারীদের দেন।
এই কুন্ডলী থেকে প্রথমে বরের হাতে সুতার কুন্ডলী এমনভাবে পরিয়ে দেয়া হয় যাতে তলোয়ার এবং হাতের মাঝে কোনো ব্যবধান না থাকে। এরপর বর নিজে অপর একটি সুতার কুন্ডলী তলোয়ার থেকে ব্যবধান রেখে কনের মনিবন্ধে পরিয়ে দেয়।
কনে বরকে প্রণাম করে তা গ্রহণ করে। নবদম্পতিকে আশীর্বাদের জন্য আগত অতিথিকে ‘মৃতে ছরা এক আঙ্গুল পরিমাণ মদ (জুংখাই) পরিবেশন করেন। একটি মোরগ বধ করে আস্ত সিদ্ধ করার পর ‘মৃতে ছরা/আখা ছরা’ সেই মোরগের জিহ্বার অংশ (মারমা ভাষায় ‘চাইংগা’) টেনে প্রথমে বর ও কনের মা-বাবাকে এরপর ক্রমাম্বয়ে উপস্থিত সকলকে দেখান।
‘চাইংগা’ যদি বাম দিকে হেলে থাকে তাহলে মনে করা হয় যে, বর যদি কনের আত্মীয়স্বজনদের সাথে মিলেমিশে জীবিকা নির্বাহ করে, তাহলে সর্বাধিক উন্নতি করে এবং ডান দিকে হেলে থাকলে মনে করা হয় এর উল্টো ফল হয়।
এরপর সিদ্ধ মোরগটিকে প্রয়োজনীয় উপকরণ মিশিয়ে খাওয়ার উপযোগী করে বর-কনের জন্য একটি পাত্রে পরিবেশন করা হয়। বর ও কনে একত্রে এক পাত্রে খাওয়ার এই অনুষ্ঠানকে ‘লাক্ হুং চা-চ’ বলা হয়।
মারমা সমাজসিদ্ধ বিবাহে ‘লাক্ ছং চা-চ’ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা অপরিহার্য। এরপর থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী রূপে সমাজের স্বীকৃতি লাভ করে। বিয়ের এই সামাজিক আনুষ্ঠানিকতাকে ‘মেয়াপোই’ বা মাগুলা ছং পোই’ বলে।
বিবাহ অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ভিক্ষু দ্বারা পঞ্চশীল গ্রহণ এবং মঙ্গল সূত্র পাঠসহ পিত্ত দান ইত্যাদি ধর্মীয় আচার পালনের রীতিও বর্তমান মারমা সমাজে প্রসার লাভ করেছে। এ ধরণের অনুষ্ঠানাদিতে মদ পরিবেশন, চাইংগা, চুংমাংলে এসব আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করা হয়। এসবের পরিবর্তে ফুল, খৈ, মিষ্টান্নজাতীয় দ্রব্যাদি দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।
অনিয়মিত বা পলায়ন বিবাহঃ পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অগোচরে বিবাহযোগ ছেলে-মেয়ে উভয়ের মনোমিলনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলে, মারমা সমাজে প্রচলিত সাধারণ রীতি অনুসারে পাত্রপক্ষের অভিভাবক বা অভিভাবক পর্যায়ের কোনো আত্মীয় পাত্রীর বাড়িতে গিয়ে পাত্রীর অভিভাবকের কাছে বিষয়টি জানিয়ে তাদের মতামত বা সম্মতি গ্রহণের চেষ্টা করেন।
সামাজিক রীতিতে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রীপক্ষকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবার সময় যে সব জিনিসপত্র (যেমনঃ-১ বোতল মদ, ২৫টি সুপারী, ১ বিড়া পান, বিন্নি ভাত, মিষ্টি, চিনি, আঁখ, ১ জোড়া নারিকেল ইত্যাদি) নিয়ে যাবার নিয়ম রয়েছে সম্মতি গ্রহণের সময়ও তেমনি সেগুলো সঙ্গে নেওয়া হয়।
পাত্রীপক্ষের দাবী-দাওয়া সম্পর্কেও পাত্রপক্ষ অবহিত হবার চেষ্টা করেন। বিয়েতে পাত্রীপক্ষ সম্মত হলে তাদের স্বাধী-দাওয়া (যদি থাকে) জানিয়ে দেন। এরপর পাত্রপক্ষকে জানানো হয়, যেন নির্ধারিত দিনে (সাধারণতঃ ৩-৭দিন পর) নবদম্পতি আক্কাইদ (নায়র) সম্পাদনে আসে।
সেই নির্ধারিত দিনে বরপক্ষের কয়েকজন অভিভাবক এবং পাড়ার কিছু তরুণ-তরুণী নিয়ে নবদম্পতি কনের বাপের বাড়িতে যায়। আকাইদ উপলক্ষে কনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাড়িতে প্রথাসিদ্ধ নানা উপাচার (যেমনঃ- ১ বোতল মদ, ২৫টি সুপারী, ১ বিড়া পান, বিন্নি ভাত, মিষ্টি, চিনি, আঁখি, ১ জোড়া নারিকেল ইত্যাদি) নিয়ে নবদম্পতি বেড়াতে যায় এবং আশীর্বাদ গ্রহণ করে।
বিবাহের যোগ্যতা : মারমা সমাজে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো যোগ্যতার মাপকাঠি নেই। মারমা সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা অনুসারে বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীকে (১) সাবালক বা প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হয়, (২) শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হয়, (৩) শারীরিক অসামর্থ্য যেমনঃ- কানা, বোবা, খোঁড়া নর-নারী অবশ্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে যদি বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী উভয়ের সম্মতি থাকে।
মারমা সমাজে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার জন্য নির্দিষ্ট বয়সসীমার বাধ্যবাধকতাও নেই। সাবালকত্ব অর্জনের মাপকাঠি সমাজের অনুমান বা ধারণার ওপর সচরাচর নির্ভরশীল। গ্রামাঞ্চলের অর্ধ শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সমাজে কম বয়সে বিবাহের প্রবণতা বেশী।
গ্রামাঞ্চলে এ ধরণের বাল্য বিবাহকে সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত করা কিংবা বারণ করা বা বাধা প্রদান করতে দেখা যায় না, যদিও এ দেশে প্রচলিত সাবালকত্ব আইন ১৮৭৫, অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০, বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, বাংলাদেশের সকল ধর্মীয় সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর উপর সমানভাবে প্রযোজ্য।
এ সকল আইনে অপরিণত বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১৯২৯ সনের বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনের ২(ক) ও ২(খ) ধারায় শিশু ও বালক বলতে যার বয়স পুরুষ হলে ২১ বছরের কম এবং নারী হলে ১৮ বছরের কম।
মারমা জনগোষ্ঠীর গ্রামীণ সমাজে প্রচলিত কম বয়সের বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে দেশের বিদ্যমান আদালতে যদি কোনো কারণে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় এবং যদি প্রমাণিত হয় যে বিবাহিত পক্ষগণ নাবালক, তাহলে মারমা সামাজিক প্রথামতে নাবালকের বিবাহ কার্য সমাজসিদ্ধ হলেও তার কোনো প্রকার আইনগত বৈধতা থাকবে না, বরঞ্চ তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
মারমা সমাজে বিবাহের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সম্পর্ক :
মারমা সমাজে নিম্নে বর্ণিত বৈবাহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ বলে গণ্য হয়ঃ-
(ক) একই গোত্রের যে কোনো আত্মীয়ের মধ্যে তিন পুরুষ অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত;
(খ) যে কোনো ধরণের প্রথম চাচাতো/খালাতো ভাই বোনের (First Cousin) মধ্যে ;
(গ) মামা-ভাগ্নীর মধ্যে;
(ঘ) পিসি-ভাইপোর মধ্যে;
(ঙ) স্ত্রীর আপন বড় বোনের সাথে;
(চ) কাকা-ভাইঝির মধ্যে;
(ছ) মাসী-ভাগিনার মধ্যে;
(জ) বিমাতার সঙ্গে;
(ঝ) একই পিতার ঔরসে ভিন্ন ভিন্ন মাতার গর্ভজাত ছেলেমেয়েদের মধ্যে;
(ঞ) ভ্রাতৃস্পুত্রের স্ত্রীর সঙ্গে;
(ট) ভাগিনার স্ত্রীর সঙ্গে;
(ঠ) মামী সম্পৰ্কীয় আত্মীয়ার সঙ্গে;
(ড)কাকী সম্পৰ্কীয় আত্মীয়ার সঙ্গে;
(ঢ)তালতো ভাইয়ের সাথে আপন কন্যা।
বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের কতিপয় অনুসরণীয়/পালনীয় রীতিনীতি:
(ক) সাধারণভাবে একজন মারমা পুরুষ একজন মারমা মহিলাকে বিবাহ করে।
(খ) পাত্র-পাত্রীকে বিবাহ নিষিদ্ধ সম্পর্কের আওতা বহির্ভূত হতে হয়।
(গ) পাত্র-পাত্রীকে রক্ত সম্পর্কজনিত বিধি নিষেধ মেনে বিয়ে করতে হয়।
(ঘ) পাত্র-পাত্রীকে সাবালকত্ব অর্জন করতে হয়।
(ঙ) পাত্র-পাত্রীকে জোড়া বন্ধন (লা থেক পোই) অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হয়।
বিবাহের প্রকারভেদঃ মারমা সমাজে সচরাচর দুই ধরণের বিবাহের অস্তিত্ব রয়েছেঃ(ক) সামাজিক/নিয়মিত বিবাহ এবং (খ) পলায়ন/অনিয়মিত বিবাহ। আধুনিক ও শিক্ষিত সমাজে কোর্ট ম্যারেজ ও মিশ্র বিবাহের কিছু প্রবণতা ইদানীং দেখা গেলেও সামাজিক রীতি ও প্রথা অনুসারে সমাজসিদ্ধ করা ব্যতিরেকে মারমা সমাজ তা অনুমোদন করে না।
রক্ত সম্পৰ্কীয় নিষিদ্ধ বিবাহের ক্ষেত্রে এ জাতীয় দম্পতিকে সমাজচ্যুত করা হয়। নিষিদ্ধ বা অননুমোদিত বিবাহ স্বীকৃত বিবাহ হিসেবে মারমা সমাজে গণ্য হয় না। অবশ্য বিধবা বিবাহের প্রচলন মারমা সমাজে রয়েছে।
সামাজিক নিয়মিত বিবাহ (ক্রইগো রোহ): পিতা-মাতা কিংবা অভিভাবক সামাজিক রীতি বা নিয়ম অনুসারে এ বিবাহের সম্বন্ধ ধার্য করে থাকেন অথবা পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে পছন্দের মাধ্যমে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
মারমা সমাজে বরকে ‘লাংশ্যা’ ও কনেকে ‘খাম্রাশ্যা’ বলা হয়। সামাজিক/নিয়মিত বিবাহ অনুষ্ঠানে কয়েকটি ধাপ লক্ষণীয়। যেমনঃ- পাত্রপক্ষের প্রস্তাব, পাত্রীপক্ষের সম্মতি, বিবাহ অনুষ্ঠান।
বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা পর্বে ‘চুং-মাং-লে’ বা ‘গহউ-নাইউ’, ‘লাক-থেক-পাই’, ‘লা ছং পোই’ এ সকল সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা অপরিহার্য। তবে তাদের প্যালেঙসা দলের লোকদের মধ্যে চুং-মাং-লে অপরিহার্য নয়।
ঘরজামাই (সামা চিক): পাত্রকে ঘরজামাই তুলে মেয়ে বিয়ে দেয় রীতিও মারমা সমাজে ধার্য বিবাহ হিসেবে স্বীকৃত। তবে এ ধরণের বিবাহ আড়ম্বরপূর্ণ হয় না এবং পাত্রের কাছে পাত্রীর পিতার কোনো কিছু দাবী থাকে না।
পাত্রীর বাড়িতে ঘরজামাই ওঠার পর সামাজিক নিয়মে পাত্র-পাত্রীর বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। সাধারণত পুত্র সন্তানের অনুপস্থিতি কিংবা সংসারে কাজ-কর্মের প্রয়োজনে ঘরজামাই তোলা হয়।
সামাজিক/নিয়মিত বিবাহের আইনগত ফলাফল: সমাজে প্রচলিত রীতি অনুসারে আচার-অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে বিবাহিত একজন যুবক (পুরুষ) এবং একজন যুবতী (মহিলা) উভয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে, যা মারমা বিবাহ প্রথা অনুযায়ী সমাজসিদ্ধ। বিবাহিত দম্পতির দৈহিক মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম লাভ করে, সে বৈধ সন্তান ও পিতা-মাতার উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য হয়।
স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তাদের একজনের উপর অপরজনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। একজনের ভাল-মন্দ দেখার দায়িত্ব অপরজনের উপর বর্তায়। স্ত্রী তার স্বামীর নিকট ভরনপোষণ, সামাজিক মর্যাদা ও স্বামীর পারিবারিক পদবীর অধিকারী হয়।
পলায়ন/অনিয়মিত বিবাহ (ব্রিরো/অহ্খো নিজাই-চ): মারমা সমাজে পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সম্মতি ব্যতিরেকে সামাজিকভাবে প্রচলিত নিয়মের বাইরে প্রেমঘটিত কারণে যুবক-যুবতী ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে পরস্পরের মননমিলনে নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী রূপে গ্রহণ করাকে ‘পলায়ন/অনিয়মিত বিবাহ’ (ব্রিরো/অহ্খো নিজাই-চ) বলে। মারমী সমাজে ‘পলায়ন/অনিয়মিত’ বিবাহের প্রচলন বিদ্যমান। এরূপ বিবাহ তিন প্রকারে সম্পন্ন হতে দেখা যায়ঃ-
একজন যুবক এবং একজন যুবতী গোপনে পরস্পরকে ভালবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার ইচ্ছা পোষণ করতেই পারে। সামাজিক মর্যাদা, অর্থনৈতিক অবস্থা, নিষিদ্ধ পর্যায়ের সম্পর্ক ইত্যাদির কারণে তাদের পরিবারের কোনো একপক্ষ বা উভয়পক্ষ সেই ভালবাসা ও বিয়ের বিরোধিতা করতে পারে।
এমনও হতে পারে, যুবকের পিতা-মা অন্যত্র তাদের ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজছে অথবা মেয়ের বিয়ে দেবার জন্য পাত্রী পক্ষ অন্যত্র পাত্র ঠিক করেছে। এমতাবস্থায়, ভালবাসার মর্যাদা রক্ষার্থে পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অজ্ঞাতে তারা পরস্পরের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে আত্বীয় বা পরিচিত ব্যক্তির বাড়ীতে আশ্রয় নেয়।
এ ঘটনা উভয়পক্ষের পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলে সাধারণত ছেলের অভিভাবক মেয়েপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়।
ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ সম্পর্কীয় আত্মীয় পর্যায়ের না হলে অথবা মেয়ের পিতা-মাতার দাবী-দাওয়া ছেলের পক্ষ মানতে রাজী হলে সমাজের দাবী পূরণ করা সাপেক্ষে পলাতক যুগলের বিয়ে হওয়াকে সমাজ অনুমোদন করে।
কিন্তু সব পলায়নের ঘটনা যে বিবাহের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে তা নয়। মারমা সমাজে পাত্র-পাত্রী উভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাবার সময় কোনো ভাবে যদি মেয়েপক্ষের কারো কাছে মেয়েটি ধরা পড়ে, তাহলে যুবতী কেড়ে নিয়ে তার বাবা-মার বাড়িতে ফিরিয়ে দেবার অধিকার সমাজে স্বীকৃত।
তবে মনোমিলনে পালিয়ে যাওয়া যুবতী কোনো ভাবে যদি যুবকের বাড়ীর আঙিনায় পৌঁছে যায়, তাহলে যুবতী সেই বাড়ীর বউ হিসেবে সমাজের কাছে স্বীকৃতি লাভ করে। সেক্ষেত্রে যুবক-যুবতী উভয়কে বিবাহসিদ্ধ গোত্র সম্পর্কীয় হতে হয়।
এ ধরণের পলাতক যুবক-যুবতীর মধ্যে পরে বিয়ে হোক বা না হোক মারমা সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী গোপনে পালিয়ে গিয়ে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অপরাধে সামাজিক বিচারে উভয়ের সাজা হয়।
সাজা হিসেবে যুবককে দিতে হয় একটি শূকর, কিছু নগদ টাকা ও এক বোতল মদ, আর যুবতীকে দিতে হয় একটা মোরগ, কিছু নগদ টাকা ও এক বোতল মদ। পলাতক যুবক-যুবতী সাবালক হলে এবং বিবাহ নিষিদ্ধ নিকটাত্মীয় না হলে বৌদ্ধ ভিক্ষুর নিকট মঙ্গল সূত্র শ্রবণ করে শুদ্ধ হবার পর তাদেরকে সমাজে গ্রহণ করা হয়।
পরে সামাজিক আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘মেয়াপোই’ বা ‘মাঙলা ছং পপাই’/ লাকথাইমাঙলাপোই অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়।
কোর্ট ম্যারেজ: কোর্ট ম্যারেজ মূলতঃ আদালতের কোনো প্রকার আদেশ নয়। আধুনিক মারমা সমাজে ইদানীং পরিবারের অসম্মতিতে বিবাহে ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রী উভয়ে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অথবা নোটারী পাবলিক এর সম্মুখে নিজেদেরকে আইনতঃ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে শপথ পূর্বক ঘোষণা প্রদানের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখা যায়।
এক্ষেত্রে বলা চলে প্রাচীনকালের মনোমিলনে পলায়ন বিবাহের আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে কোর্ট ম্যারেজ, যদিও এটি নিছক একটি শপথনামা মাত্র। তাই এ বিবাহ অলক্ষনীয়ও নয়।
তবে বিবাহিত পাত্র-পাত্রী এক্ষেত্রে সাবালক হলেও বিবাহ নিষিদ্ধ সম্পৰ্কীয় নিকটাত্মীয় হলে সম্পাদিত কোর্ট ম্যারেজ সমাজে বৈধ হয় না। সর্বোপরি এ ধরণের কোর্ট ম্যারেজ প্রথাসিদ্ধ নয়, তা অসামাজিক বিবাহ।
ব্যাখ্যা: মূলতঃ কোর্টে কোনো বিবাহ হয় না। পরস্পরের প্রতি প্রণয়াসক্ত পাত্র-পাত্রীকে স্বেচ্ছায় কোর্টে আসার পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়। পরে কোর্টে এসে উভয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে এই প্রকার Love Marriage এর সমর্থনে একটি শপথ সম্বলিত বিবৃতি Affidavit দেয় এবং এভাবে বিবাহের সমর্থনে একটি দলিল সৃষ্টি করে। কার্যতঃ এই প্রকার শপথ সম্বলিত বিবৃতি অর্থাৎ এফিডেবিটের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।
“অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসবর্ণে প্রণয়ঘটিত বিবাহগুলো উভয়পক্ষের অভিভাবকদের অসম্মতিতে হয়ে থাকে। এরূপ বিবাহিত দম্পতিকে বিবাহের অব্যবহিত পরেই কোর্টে গিয়ে তাদের বিবাহের সমর্থনে একটি দলিল সৃষ্টি করতে হয়, যাতে যে কোনো পক্ষের অভিভাবকের উদ্যোগে থানায় অথবা কোর্টে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হলে এই দলিল তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সহায়ক হয়”। (সূত্রঃ- হিন্দু আইনের ভাষ্যঃ গাজী শামছুর রহমান)
পরস্পরের প্রতি প্রণয়াসক্ত হয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক মারমা যুবক-যুবতী কোর্টে আসার আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না। কোর্টে এসে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আমরা পরস্পরকে বিবাহ করলাম” এ মর্মে বিবৃতি (হলফনামা) সম্পাদন করে দেয়।
অর্থাৎ তারা কোর্টেই একে অপরকে বিয়ের ঘোষণা দেয় মাত্র। কোটে আসার আগে বিয়ে করেনি। আগেই বলা হয়েছে যে, কোর্টে কোনো বিয়ে হয় না। পূর্বে সম্পন্ন হওয়া বিয়ের ঘোষণা কোটে এসে দেয়া যায় মাত্র।
সুতরাং, যুবক-যুবতী উভয়ে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ে হয়েছে বলে যা বুঝাতে চায়, তা মোটেই সমাজসিদ্ধ বিয়ে নয়। মারমা সমাজসিদ্ধ বিবাহের পূর্ব শর্ত হচ্ছে ‘মেয়াপোই’/মাওলা ছং পোই/লাকথাই মালাপোই অনুষ্ঠান সম্পাদন করা।
মিশ্র বিবাহ (অরহ্ ইংথং): পার্বত্য জেলাসমূহে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠী ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে উভয়পক্ষের সম্মতিতে ‘মেয়াপোই’ বা ‘মাঙলা ছং পোই/লাকথাই মালাপোই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হলে তা মারমা সমাজের স্বীকৃতি লাভ করে।
এরূপ বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়ে যে জনগোষ্ঠী হতে মারমা সমাজে এসেছে সেই পিতৃকুলের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, মর্যাদা, পদবী তার লোপ পায় এবং স্ত্রী হিসেবে মারমা স্বামীর ধর্মীয় বিশ্বাস, বর্ণ, গোত্র, মর্যাদা, পদবী ধারণ করে।
অনুরূপভাবে মারমা সমাজের কোননা মহিলার সাথে অন্য জনগোষ্ঠীর পুরুষের বিবাহ হলে এবং ধর্মান্তরিত হয়ে অন্য জনগোষ্ঠীভূক্ত হলে সেই বিবাহিত মহিলা মারমা সমাজের উত্তরাধিকার সহ পদবী হারায়।
উদাহরণ: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মং সার্কেলের প্রয়াত চীফ মংপ্রু সাইন চৌধুরী, চাকমা রাজার কন্যা নীহার বালা রায়-কে বিবাহ করার পর নীহার বালা পরবর্তীতে নীহার দেবী মংরাণীর মর্যাদা ভোগ করেন এবং স্বামীর মৃত্যুর পর মং রাণী হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
অনুরূপ বান্দরবান পার্বত্য জেলার বোমাং সার্কেলের প্রয়াত চীফ মং শৈ প্রু চৌধুরীর এক স্ত্রী রাণী আনুচিং (প্রকৃত নাম অনুত্তরা দেওয়ান) চাকমা জনগোষ্ঠীভূক্ত মহিলা ছিলেন। বোমাং চীফের জীবদ্দশায় তিনি বোমাং রাণীর মর্যাদা ভোগ করেন।
পলায়ন/অনিয়মিত বিবাহের (পালিয়ে গিয়ে গোপনে বিয়ে করা) আইনগত ফলাফল:
মারমা সমাজে পলায়নের পর প্রেমিক-প্রেমিকাকে সামাজিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা এভাবে পলায়নের কারণে সামাজিক বিচারে জোর করে অপহরণ করা অভিযোগে যুবককে অপরাধী সাব্যস্ত করা না হলে এবং প্রেমিকার পিতা-মাতা সেই পাত্রের সাথে তার বিয়ে দিতে রাজি হলেও পলাতক অবস্থায় উভয়ের বিবাহ বহির্ভূতভাবে দৈহিক মিলনের অপরাধের জন্য সাজাভোগ করতে হয়, যেমনঃ- শূকর, মোরগ, মদ ও নগদ টাকা।
জরিমানা প্রদান সাপেক্ষে প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে বিয়ে হলে সেটা সমাজ কর্তৃক অনুমোদিত বলে গণ্য হয়। সমাজ কর্তৃক অনুমোদিত হলে যুবক-যুবতীর বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক মিলনের দ্বারা জন্মগ্রহণকারী সেই সন্তানও বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হয় এবং পিতা-মাতার উত্তরাধিকারী হয়ে পূর্ণ সামাজিক মর্যাদা ভোগ করে।
প্রেমিক বা প্রেমিকার পিতা-মাতার অসম্মতির কারণে প্রেমিক যুগলের বিয়ে না হয়ে যদি পলাতক অবস্থায় উভয়ের দৈহিক মিলনের কারণে প্রেমিকা গর্ভবতী হয়, তাহলে ভূমিষ্ট সেই সন্তান অবৈধ সন্তান হিসেবে পা হয়।
তবে সন্তান যার ঔরসে জন্মলাভ করেছে/করে সেই পিতার উত্তরাধিকারী হয় এবং পিতার পারিবারিক মর্যাদার অধিকারী হয়, যদিসামাজিক আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে, সন্তান পিতার অধিকারে থাকে, অন্যথায় হয় না।
দেশের প্রচলিত আইনে আদালতে মামলা ও সাজা হওয়ার আশঙ্কা: প্রেমিক-প্রেমিকার বিয়েতে তাদের অভিভাবকের সম্মতি না থাকলে পলায়নের খবর জানাজানি হবার পর প্রেমিকার পিতা ঐ প্রেমিকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর আওতায় মামলা দায়ের করতে পারে।
আদালতে এ ধরণের মামলার ফলে প্রেমিক গ্রেপ্তার ও বিচারে সাজা পায়। আর প্রেমিকা যদি নাবালিকা হয় অথবা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে অপহরণ ও দৈহিক মিলনে বাধ্য করা হয়েছে বলে সে আদালতে জবানবন্দি দেয়, তাহলে প্রেমিকের ১৪ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে।
নিষিদ্ধ বা অননুমোদিত বিবাহ (ফ্রই অ্যাই): মারমা সমাজে রক্ত সম্পৰ্কীয় নিকটাত্মীয় পাত্র-পাত্রীর মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। এ ধরণের বিবাহ নিষিদ্ধ নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিবাহ হলে তা নিষিদ্ধ বা অননুমোদিত বিবাহ বলে গণ্য হয়।
এ ধরণের নিষিদ্ধ বা অনুমোদিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ দম্পতিকে সামাজিক আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয় এবং সামাজিক আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ ধরণের বিবাহকে নিষিদ্ধ বা অনুমোদিত ঘোষণা করা হয়। নিষিদ্ধ বা অনুমোদিত বিবাহের নিম্নোক্ত প্রকারের উল্লেখ রয়েছেঃ-
(ক) সমাজ অননুদিত গোত্র বিয়ে
(খ) নিষিদ্ধ সম্পর্ক (মৃফ্রইক্ অ্যাইঁ) বিয়ে
পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে বিবাহ করার জন্য বাড়ী হতে পালিয়ে যায় বা আদালতে গিয়ে বিবাহের শপথনামা সম্পন্ন করে সমাজ স্বীকৃত উপায়ে ‘চুং-মাং-লে’ বা ‘গহুউ-নাইউ’ অনুষ্ঠান সম্পাদন করতে পারে নাই বা করে নাই, কিন্তু দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করলেও নিষিদ্ধ বা অন্য কোনো কারণে সে ধরণের বিবাহগুলো নিষিদ্ধ বা অনুমোদিত বিবাহ হিসেবে গণ্য হয়।
নিষিদ্ধ বা অনুমোদিত বিবাহের আইনগত ফলাফলঃ নিষিদ্ধ সম্পর্কের আত্মীয়ের সাথে অথবা গোপনে বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী রূপে বসবাস ইত্যাদি সামাজিক অপরাধ হিসেবে গণ্য। মারমা সামাজিক প্রথামতে নিষিদ্ধ সম্পর্কের আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের অপরাধে বিবাহ বিচ্ছেদ অপরিহার্য এবং সামাজিক প্রথা অনুসারে শাস্তিস্বরূপ শূকর জরিমানা দিতে হয়।
অন্যদিকে গোপনে বিয়ে করে সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়া স্বামীস্ত্রী রূপে বসবাস করার অপরাধের শাস্তি হচ্ছে অর্থদন্ড। ক্ষেত্রবিশেষে ঐ দম্পতিকে সমাজচ্যুত কিংবা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
মারমা সমাজ নিষিদ্ধ সম্পর্কের আত্মীয়ের বিয়ে স্বীকার করে না বিধায় যুবক-যুবতী তাদের বিয়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে না। এর ফলে তাদের মধ্যে কোনো সময় বিরোধ দেখা দিলে বা একে অপরের সাথে স্বামী/স্ত্রীর সম্পর্ক অস্বীকার করলে, তারা পরস্পর পরস্পরের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ও বিরোধ দেখা দিলে সমাজ বা কোনো আত্মীয় তাদের সেই বিরোধ বা কলহ নিষ্পত্তিতে এগিয়ে আসবে না।
ব্যাখ্যাঃ নিষিদ্ধ সম্পর্কের আত্মীয়ের সাথে বিয়ে হওয়া সমাজে একেবারে বিরল ঘটনা নয়। অতীতে যেমন ছিল, বর্তমানেও এ ধরণের কিছু কিছু বিয়ের নজির খুঁজে পাওয়া যায়।
সামাজিক রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত বিয়ের বৈধতা বা অস্তিত্ব নিয়ে সাধারণতঃ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। তবে পালিয়ে গিয়ে ‘মেয়াপোই’/‘মাঙলা ছং পপাই’।
লাকথাই মাগুলাপোই ছাড়া ভিন্ন এলাকায় গিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস কালে স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজন বিয়ের কথা অস্বীকার করলে তখন বিয়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। সচরাচর মারমা সমাজে এমন ঘটনা ঘটে না।
বিধবা বিবাহ: মারমা সামাজিক প্রথামতে বিধবা বিবাহ অনুমোদিত। একজন বিপত্নীক যেমন বিয়ে করতে পারে, তেমনি একজন বিধবা মহিলাও বিয়ে করতে পারে। একজন বিধবা যদি তার স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তান-সন্ততিসহ স্বামীর পরিবারে বা শাশুর-শাশুড়ীর সাথে একত্রে বসবাস করে তাহলে স্বামীর সম্পত্তি থেকে উক্ত বিধবা আমৃত্যু সে ভরনপোষণ পাবার অধিকারী।
কিন্তু দ্বিতীয়বার বিয়ে করে যদি স্বামীশ্বরের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে স্বামীর সম্পত্তি থেকে ভরনপোষণ পায় না। মারমা সমাজে একজন বিধবার দ্বিতীয় বিবাহ সামাজিকভাবে প্রথাসিদ্ধ। তবে মহিলার দ্বিতীয় বিবাহ কার্যটি নিজ পিতার বা ভাইয়ের বাড়ীতে থেকে সম্পন্ন করতে হয়।
বহু বিবাহ (অ্যামা ইংথং): মারমা সমাজে বহু বিবাহ স্বীকৃত। তবে একজন বিবাহিত মামা স্বামী তার স্ত্রীর জীবদ্দশায় স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন না করে স্ত্রীর সম্মতিতে নিম্নোক্ত কারণে বহু বিবাহে আবদ্ধ হতে পারেনঃ-
কারণসমূহঃ-
(ক) সন্তানহীন দম্পতির বংশ রক্ষার তাগিদে;
(খ) স্ত্রী দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে;
(গ) স্ত্রী উন্মাদ বা অপ্রকৃতিস্থ হলে;
(ঘ) স্ত্রী শারীরিক পক্ষাঘাতগ্রস্থ হলে;
(ঙ) স্ত্রীর অনুমতি বা সম্মতি সাপেক্ষে;
(চ) স্ত্রী যদি কোনো কারণে স্বামীর অমতে অনেক বসর পিত্রালয়ে বা দেশান্তরে থাকে;
(ছ) স্ত্রী যদি ব্যাভিচারে কিংবা পরকীয়াতে লিপ্ত হয় এবং এ ধরণের অপরাধে সামাজিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়।
মন্তব্য: বহু বিবাহ বলতে প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকাবস্থায় আরও এক বা একাধিক মহিলাকে বিয়ে করা বুঝায়। প্রথম স্ত্রী মারা গেলে বা প্রথম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে সব সমাজেই দ্বিতীয়বার বিয়ে করার রীতি আছে।
বহু বিবাহের আইনগত ফলাফল: মারমা সমাজে বহু বিবাহ অনুমোদিত। তাই কোনো ব্যক্তি একাধিক মহিলাকে বিয়ে করলেও সমাজ তাতে মাথা ঘামায় না। কারণ, একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকার ফলে পরিবারে যে অশান্তির সৃষ্টি হয়, তার প্রভাব সমাজে খুব একটা পড়ে না।
পরিবারের লোকজন বিশেষতঃ স্ত্রীরাই সেই অশান্তি ভোগ করে। প্রতিবাদ বা আপত্তি এলে তা ভুক্তভোগী স্ত্রীর কাছ থেকেই আসার কথা। তবে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ব্যতিরেকে স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করলে তার প্রথম সংসারের সকল অস্থাবর সম্পদসহ বসতভিটা প্রথমা স্ত্রীকেই দিতে হয়।
এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানেরা পিতার স্থাবর সম্পত্তি হতে ই অংশ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। অবশ্য উপরোক্ত (ঙ)নং শর্ত ব্যতীত অবশিষ্ট ৬টি কারণেও যদি দ্বিতীয়বার বিবাহে স্বামী তার স্ত্রীর অনুমতি বা সম্মতি গ্রহণ না করে তবে বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৪৯৪ ও ৪৯৫ ধারামতে তা দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
সেক্ষেত্রে সমাজে প্রচলিত বিধান অকার্যকর গণ্য হয় এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে ৭ হতে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে।
মন্তব্য: মারমা সামাজিক প্রথামতে একাধিক বিয়ে করা যায়। এই প্রথা মেনে কোনো স্ত্রী, স্বামীর বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় মামলা করলে স্বামীর শাস্তি হতে পারে।
সেই বিচার অবশ্য মারমা সমাজের প্রথাসম্মত নয়। বর্তমানে প্রচলিত কোনো প্রথা দ্বারা সমাজের বৃহত্তর অংশের ক্ষতিসাধিত হলে তা অবশ্যই সংশোধন করা যায় । মারমা সমাজের বিচার কাঠামোর বাইরে গিয়ে প্রতিকার চাওয়া এবং মারমা প্রথাগত আইন মেনে চলা এক নয়।
বিবাহের প্রমাণ: মারমা সমাজে বিয়ে নিবন্ধনের কোনো রীতি নেই। মারমা সমাজে বিবাহ একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। এমনকি বিয়ের প্রমাণ স্বরূপ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো লিখিত দলিলও তৈরি করা হয় না।
তবে বিবাহের পদ্ধতি বা রীতিনীতির বিষয়ে সামাজিক ও আইনগত বৈধতার প্রশ্নে কোনো প্রকার সমস্যার উষ্ক হলে সেক্ষত্রে বিবাহের সত্যতা বা অস্তিত্ব প্রমাণ হয় নিম্নমতেঃ-
(ক) বিয়ের অনুষ্ঠানে (ভোজে) উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তির মৌখিক সাক্ষ্য;
(খ) সমাজপতি যথাঃ- রাজা, হেডম্যান, কার্বারী বা রোয়াজা কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র;
(গ) জোড়া বন্ধন (লা থেক পোই) পরিচালনাকারী মৃতে চুরা, উবদিদাই বা বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাক্ষী;
(ঘ) বিয়ের শপথনামা (যদি থাকে);
(ঙ) সমাজ স্বীকৃতভাবে স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে একত্রে বসবাস;
(চ) স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরস্পর পরস্পরকে স্বীকৃতি প্রদান;
(ছ) স্ত্রীর গর্ভে স্বামীর ঔরসজাত সন্তানের পিতৃত্ব স্বীকার;
(জ) স্বামী-স্ত্রী উভয়ের বাবা-মায়ের স্বীকৃতি;
(ঝ) চুং-মাং-লে অথবা গংউ-নাইউ, লা থেক পোই অনুষ্ঠানের প্রামাণ্য ছবি।
উপরোক্ত উপাদানগুলো দ্বারা বিয়ের অস্তিত্ব সরাসরি প্রমাণ হয়।
বৈবাহিক কর্তব্যঃ
(ক) স্ত্রী তার স্বামীর সাথে বসবাস করে এবং স্বামীর ন্যায়সঙ্গত নির্দেশ ও পরামর্শ মেনে চলবে।
(খ) স্বামী তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করতে ও তার ভরনপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে।
(গ) উভয়ে দাম্পত্য জীবনে পারিবারিক ও সাংসারিক দায়-দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান থাকবে।
আইনসঙ্গত বিবাহে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার এবং দায়িত্বঃ
(ক) বিয়ের পর স্ত্রীর উপর স্বামীর অভিভাবকত্বেয় দায় বর্তায়।
(খ) বিয়ের পর স্ত্রীকে অবশ্যই স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী নির্ধারিত স্থানে স্বামীর সাথে বসবাস করতে হয় এবং স্বামীর সকল প্রকার ন্যায়সঙ্গত নির্দেশ অনুযায়ী চলতে হয়। অনুরূপভাবে স্বামীকেও উপযুক্ত মর্যাদায় স্ত্রীকে তার সাথে রাখতে হয় এবং পারিবারিক মর্যাদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীর ভরনপোষণ দিতে হয়।
তথ্যসূত্র
১. Majority Act, 1875.
২. Guardians and Wards Act, 1890.
৩. Child Marriage Restraint Act, 1929.
৪. নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ২০০০
তথ্যসূত্রঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইন (গ্রন্থনা ও সম্পাদনা – এডভোকেট জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, এডভোকেট প্রতিম রায়, সুগত চাকমা)।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।