মারমা রূপকথা: সুহওয়েন্না সামাহ
1119
অনেক অনেক দিন আগের কথা। ব্রাইম্মা পুরাহু দেশে মেঘাওয়াদী নদীর এপারে ও ওপারে দুই কূলে পৃথক দু’টি গ্রাম ছিল। প্রতিটি গ্রামে প্রায় পাঁচ শত মৎস্যজীবী জেলে পরিবার খুবই সুখেশান্তিতে বসবাস করত।
এই দুই গ্রামের মোড়ল “রোওয়াসুগ্রী”-দের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুসুলভ আচরণ ছিল বলে তাঁদের মধ্যে কখনো কোন ঝগড়া-বিবাদ ছিল না। তবুও অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের মধ্যে এ সুসম্পর্ক আরো সুদৃঢ় ও মজবুত করার লক্ষ্যে দুই গ্রাম প্রধানের ঔরসজাত সন্তানদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ করার অঙ্গীকারে প্রতিশ্রুত হলেন।
যেমন কথা তেমন কাজ। পাত্র-পাত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করে হঠাৎ একদিন মহাসমারোহে ধুম-ধামের মধ্য দিয়ে এপারের মোড়লের পুত্র ধুকুল্লা ও ওপারের মোড়লের কন্যা প্যারিষ্কার বিয়ে হয়ে গেলো।
বিবাহ হবার পরও তাদের মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখা গেলনা। অর্থাৎ একই গৃহে একত্রে বসবাস করা সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে দাম্পত্য-জীবনের কোন লক্ষণ নেই।
ধুকুল্লা ও প্যারিক্কা উভয়ই মাছ-মাংশ খান না, পশু-পাখী-মাছ শিকারেও যান না, কেউ এনে দিলেও তা স্পর্শ করেন না, বিক্রয়ও করেন না।
একদিন উভয় অভিভাবক তাদের এহেন অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা মানবকুলে মানুষ হয়ে জন্মেছে। কিন্তু তোমরা না চাও সাংসারিক হতে, না চাও পশু-পাখী-মাছ শিকার করতে, এমন অবস্থা আমাদেরকে খুবই পীড়া দিচ্ছে।
এখন তোমরা কি করবে তা নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নাও।” প্রত্যুত্তরে অভিভাবকদের নিকট এই মর্মে অনুমোদন চাইলেন যে, “আপনারা যদি অনুমোদন দেন তাহলে আমরা দুজনেই আজ প্রজ্যা গ্রহণ করবো। আমাদের মধ্যে কারোর মৈথুনের অভিরুচি নেই।
আপনাদের অনুমোদন পেলে আমরা আজই বনবাসে বের হবো। সন্ন্যাস জীবন-যাপন করবো।” “বেশ, তাহলে তোমরা দু’জনই এক সাথে যাও,” এই বলে তাদের অভিভাবকদ্বয় ধুকুল্লা ও প্যারিক্কাকে বিদায় দিলেন।
ধুকুল্লা ও প্যারিক্কা দু’পক্ষের মা-বাবাকে প্রণাম করে মেঘাওয়াদী নদীর উজানের গ্রাম থেকে কয়েক যোজন দূরবর্তী হেমায়েন্দা বন-জঙ্গলের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন।
পরিশেষে যেখানে মেঘাওয়াদী নদী হেমায়েন্দা বনে প্রবেশে করেছে, সেখানে মেঘাসেমাধা ঝর্নার অভিমুখে কিছুটা সমতল ও উচুস্থানে একখানা পর্ণকুটির তাঁদের নজরে আসে এবং এই পর্ণকুটিরে প্রবেশ করে ধুকুল্লা শ্ৰমণ ব্যবহার্য উপকরণগুলো দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলেন এগুলো সব ওয়িসোহ্কা দেবীর নির্দেশে এখানে রাখা হয়েছে।
এই পর্ণকুটির সেন্দাজেদৃওয়াইনও তারই অভিলাষে নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। ধুকুল্লা আর বিলম্ব না করে তার গায়ে পরিহিত কাপড়গুলো খুলে সন্ন্যাসী কাপড় ধারণ করলেন।
মাথার চুল চেঁচে ফেললেন। একই সাথে এই সন্ন্যাসী কাপড় সইখক-ওয়াই পরিধান করে প্যারিকাকেও প্রব্রজ্যা দিলেন। এভাবে দিনের পর দিন উভয়ই সেখানে একত্রে মৈত্রী চিন্তা-ভাবনা ধ্যানে নিমগ্ন হলেন।
তাঁদের এই ধ্যানী মৈত্রী ভাবনার প্রভাবে হেমাওয়েন্দা বনের সেন্দাজেওয়াই আশ্রমের পার্শ্ববর্তী সকল হিংস্র পশু-পাখী-জীবজন্তুও পরস্পরের প্রতি সহানুভাবাপন্ন হলো।
একে অন্যকে আক্রমণ বা ভক্ষণ পরিহার করলো, বিরত থাকলো। প্যারিক্কা বনের ফলমূল, পানীয় ও খাদ্য-সামগ্রী সংগ্রহ করেন, সেন্দাজেওয়াইন আশ্রমের পার্শ্বস্থ প্রাঙ্গন সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন।
ধুকুল্লা ও প্যারিক্কা উভয়েই একই সংগে বনের ফলমূল সংগ্রহ করে খেতেন। খাবার শেষে আশ্রমের অভ্যন্তরে নিজ নিজ ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে যেতেন। মাঝে মাঝে বনদেবী ওয়িসোহকা তার অলৌকিক শক্তিতে এসে অদৃশ্য থেকে তাঁদের বিভিন্ন উপায়ে সেবা-যত্ন ও সাহায্য করতেন।
একদিন চাওয়ালা মহাশদেব মানব কুলে পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন—-ধুকুল্লা ও প্যারিক্কার একটা মহাবিপদ ঘটবে, এঁরা অন্ধ হয়ে যাবেন। অতএব, তাদের রক্ষণার্থে একজন পুত্র সন্তান জন্মদান করা নিতান্ত আবশ্যক।
চাক্রাওয়ালা মহাকাশ দেবের এই ঐশ্বরিক ইচ্ছার ঠিক দশমাস দশদিন পর সন্ন্যাসিনী প্যারিক্কার এক পুত্র সন্তান জন্ম হলো। পাহাড়-পর্বত বন-জঙ্গল দেখাশুনাকারী নাই কিন্নরীগণ প্যারিক্কা-পুত্রের ধাত্রীকর্ম ও সেবা-যত্ন করতে লাগলেন এবং প্যারিক্কা-পুত্রের নাম রাখা হলো সুহ্ওয়েন্না সামাহ্।
ধুকুল্লা ও প্যারিক্কা দুজনে তাঁদের পুত্র সুহওয়েন্না সামাহ্-কে ঘুম পাড়িয়ে যখন ফলমূল সংগ্রহের জন্য আশ্রম ছেড়ে বনে চলে যেতেন, তখন তংনাই কিন্নরীগণ সুহ্ওয়েন্না সামাহ্ নামের শিশুটিকে নিয়ে প্রতিদিন গিরি-কন্দরাদিতে চন্দন সুগন্ধে স্নান করাতো, পর্বত শিখরে নিয়ে গিয়ে নানা ফুলের সমারোহে সেজে-গুজে দিতো। এইভাবে পরিচর্চা প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে সুহওয়েন্না সামাহ্ – এর ষোল বছর বয়স পূর্ণ হলো।
একদিন ধুকুল্লা ও প্যারিক্কা তাঁদের পুত্রকে আশ্রমে রেখে বনের ফলমূল খুঁজতে বের হলেন। ঐ দিন যখন ফলমূল সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় আশ্রমের দিকে ফিরছিলেন, এমন সময় আশ্রম হতে অনতিদূরে পৌঁছতে না পৌঁছতে আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখা দিলো।
তারা একটা গাছের নীচে কোন মতে আশ্রয় নিলেন। ঐ গাছের গুড়ির মধ্যে এক বিষাক্ত সাপও ছিল। ধুকুল্লা ও প্যারিষ্কার ক্লান্ত শরীর হতে ঝড়ে পরা ঘাম বৃষ্টির জলের সাথে সেই সাপের নাকে এসে ঢুকে গেলে মানুষের ঘামের অম্ল ও লোনা স্বাদে সাপটি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং সে তার বিষাক্ত নিঃশ্বাস ছুঁড়ে দিলো।
এতে ধুকুল্লা ও প্যারিষ্কার দুজনেরই চোখ জোড়া অন্ধ হয়ে গেলো। আশ্রমে ফেরার রাস্তাটিও হারিয়ে ফেললেন এভাবে। উল্লেখ্য, কোন এক পূর্বজন্মে ধুকুল্লা ও প্যারিক্কা ছিলেন বৈদ্য ও বৈদ্যানী। সে সময়ে একবার কৃপণ কিন্তু ধনী একজন রোগীর চোখ দুটি অন্ধ হয়ে যেতে বসেছিলো।
কিন্তু এই বৈদ্যের চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠে। কৃপণ এই মহাজন বৈদ্যের চিকিৎসার পারিশ্রমিক দিতে রাজি হলেন না। ফলে পত্নীর পরামর্শে বৈদ্য ঐ রোগীর চোখে এমন ঔষধ দিলেন যে তার দু’টি চোখই চিরতরে অন্ধ হয়ে যায়।
সেই পাপের ফলেই পূর্বজন্মের বৈদ্য ও বৈদ্যানী এ’জন্মের ধুকুল্লা ও প্যারিক্কা- কে অন্ধ হতে হলো। এ দিকে ধুকুল্লা ও প্যারিষ্কার পুত্র সুহ্ওয়েন্না সামাহ্ খুবই চিন্তিত হয়ে একা একা উচ্চারণ করলেন, “প্রতিদিন তো আমার মা-বাবা এই সময়ে ফিরে আসে, কিন্তু আজ এখনো ফিরে এলোনা।
নিশ্চয় কোন বিপদে আছে। তাই তাঁর মা-বাবা সে দিন যে পথে পা বাড়িয়েছিলেন। সেদিকে খোঁজ নিতে বের হলেন। ধুকুল্লা ও প্যারিক্কা তার পুত্র আগমনের শব্দ পেয়ে এ বলে সাড়া দিলেন, “সামনে এগিয়ে এসাে না, এ পথে বিপদ আছে। এ পথে গিয়ে আমাদের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে”।
সুহ্ওয়েন্না সামাহ্ তার মা-বাবার এ হেন বিপদ দেখে শঙ্কিত ও ক্ষুদ্ধ না হয়ে নীরবে। নিঃশব্দে কিছুক্ষণ কাঁদলেন এবং পরে স্মিত হেঁসে মা-বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আপনারা কোন চিন্তা করবেন না। আমি আপনাদের সারা জীবন দেখা-শুনা করবো।”
সুহ্ওয়েন্না সামাহ্ তার মা-বাবাকে এই আশ্বাস দিয়ে আশ্রমের দিকে নিয়ে গেলেন এবং তার মা-বাবার আবাস স্থানের চারিপার্শ্বে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় স্থানে বেড়া দিয়ে দিলেন যেন তাদের যেখানে প্রয়োজন সেখানে এই বেড়া ধরে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
পরের দিন হতে সুহওয়েন্না সামাহ্ তার মাবাবাকে আশ্রমে রেখে নিজেই বনের ফলমূল সংগ্রহের জন্য বের হতে লাগলেন। প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগে প্রথমে মা-বাবার সেবাযত করতেন, তারপর মেঘাসেমাধা ঝর্ণার পানি নিয়ে আনতেন, খাওয়ার জন্য বনের নানা ফলমূল পরিবেশন করতেন।
পাহাড়-পর্বত বন-জঙ্গলের নাই কিন্নরীগণও ফলমূল সংগ্রহের ব্যাপারে সুইওয়েন্না সামাহকে সহযোগিতা করতো, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে আশ্রমে ব্যবহারের জন্য কলসীতে করে পানি নিয়ে আনতো, গরম পানি দিয়ে মাবাবাকে তাদের ইচ্ছে মাফিক স্নান করাত, নয়তো হাত-পা-মুখ ধুইয়ে দিত, গায়ে পিঠে ব্যথাবেদনা উপশমের জন্য কখনো কখনো সেঁক দেয়ার ব্যবস্থা করে দিত, মালিশ করে দিত।
মাবাবার জন্য নানাবিধ আরাম-আয়েস স্বাচ্ছন্দ্যবোধের ব্যবস্থা করে মা-বাবার উচ্ছিষ্ট ও অবশিষ্ট ফলমূল কিছু খেয়ে সুহ্ওয়েন্না সামাহ্ পরের দিনের জন্য কিছু খাবার রেখে দিতেন।
এভাবেই মাবাবার প্রতি সুহওয়েন্না সামাহ্ প্রতিদিন সেবা-যত্ন শুশ্রুষা করতে থাকেন। অন্ধ মা-বাবা তখন থেকেই এভাবে সব ব্যাপারে পুত্র সুহ্ওয়েন্না সামাহ-র উপর নির্ভরশীল হতে থাকেন। কি পানি তুলে আনা, কি ফল যোগাড় করা সমস্ত কাজই সুহ্ওয়েন্না সামাহ্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।
একদিন সুহওয়েন্না সামাহ্ আশ্রমের জন্য পানি আনতে মেঘাসেমাধা ঝর্ণার দিকে অগ্রসর হলেন। কলসীটি রাখলেন দু’টি হরিণের পিঠে। সেদিন ঐ বনে কেশারই নগরীর রাজা “প্লিয়েক্ষাহ্” হরিণ শিকারের সন্ধানে ঘুরছিলেন।
এই রাজা হরিণের মাংস খেতে খুব পছন্দ করতেন ও ধনুবিদ্যায় অত্যন্ত চৌকস ছিলেন। বনের মধ্যে সেদিন হঠাৎ দু’টি হরিণ ও এক বালককে আসতে দেখে রাজা মনে মনে ভাবলেন, “এ কোন কিম্ভুতকিমাকার আশ্চর্যজনক জন্তু হবে।
এতদিন এ অঞ্চলে ঘুরছি, কিন্তু কোনদিন তো এখানে কোন মানুষ দেখিনি। এর সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে। তবে এর আগে একটা বিষাক্ত তীর মেরে একে দুর্বল করে দিতে হবে।”
কেশারই রাজের বিষাক্ত তীর সুহ্ওয়েন্না সামাহ্-কে মৃত্যু মুখে নিয়ে গেলো। তীরবিদ্ধ সুহ্ওয়েন্না সামাহও তার আশেপার্শ্বে চারিদিকে তাকিয়ে আক্রমণকারীর খোঁজ নিতে চেষ্টা করলেন।
কিন্তু বৃথা চেষ্টায় একা একা একথা উচ্চারণ করলেন, “আমার কোন শত্রু নেই, আমাকে মেরে কারও কোন লাভ হবে না। তবুও আমাকে অযথা তীর ছুঁড়লেন, যিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে তীর ছুঁড়েছেন আমি তাঁর পরিচয় পেতে ইচ্ছুক।
দয়া করে লুকিয়ে না থেকে আমার সামনে আসুন।”এই মিষ্টিভাষী ভদ্র সম্ভাষনে “প্লিয়েক্ষা”, কেশারই রাজ খুবই লজ্জা অনুভব করলেন। তবুও তিনি শেষ পর্যন্ত সুহওয়েন্না সামাহ্-এর কাছে গেলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানতে পারলেন যে, অন্ধ সন্ন্যাসসন্ন্যাসিনীর মা-বাবাকে দেখা-শুনার দায়িত্বরত একমাত্র সুহওয়েন্না সামাহ্-এর ব্যক্তিগত কথা।
রাজা “প্লিয়েক্ষাহ্” একথা শুনে অত্যন্ত দুঃখবোধ প্রকাশ করে মৃত্যু মুখযাত্রী সুহ্ওয়েন্না সামাহ্কে এআশ্বাস দিলেন, “তোমার অবর্তমানে আমি তোমার মতো ভালোবাসায় ভক্তি শ্রদ্ধা গড়ে আজীবন তোমার পিতা-মাতার সেবা-যত্ন করবো।”
এইভাবে রাজা সুহ্ওয়েন্না সামাহ্-র নিকটসত্য প্রতিজ্ঞা করে সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীকে নিজের পাপের কথা আশ্রমে গিয়ে শুনালেন এবং মাবাবাকে মৃত্যুর মুখযাত্রী পুত্রের কাছে নিয়ে আনলেন।
এদিকে ওয়িত্ব সুন্দ্রি নামের এক স্বর্গীয় দেবী সেদিন মানবকুলের কথা ভাবতে গিয়ে সুহওয়েন্না সামাহ্-এর ঐ করুণ অবস্থা দেখতে পেলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করলেন, আকাশ দেবী হয়ে তিনি সুহ্ওয়েন্না সামাহ্-কে আশ্রমে নিয়ে আনার ব্যবস্থা করবেন।
ওয়িত্ সুন্দ্রি এ আশ্রমে এসে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, “আমি যদি এ মানবকুলের বোধিসত্ত্ব সুহওয়েন্না সামাহ্-কে । সত্যি ভালোবেসে থাকি তাহলে সে যেন আরোগ্য লাভ করে; আর যদি সুহওয়েন্না সামাহ্-ও সত্যি সত্যি বধিসত্ত্ব হয়ে থাকে তাহলে তার গায়ের বিষাক্ত তীরের তেজ যেন নষ্ট হয়ে যায়।”
কিছুক্ষণ পর সুহ্ওয়েন্না সামাহ্ ঐ স্বর্গীয় আকাশ দেবী ওয়েহ সুন্দ্রি-এর অলৌকিক প্রতিজ্ঞা শক্তিতে নড়ে চড়ে উঠলেন এবং জানালেন যে বিষের প্রকোপে মুছা গিয়েছিলেন। তাছাড়া তার ধ্যানরত মা-বাবাকে সেবা-যত্ন করেন বলেই তাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করেছে সকল দেবকুল।
মৃত্যু মুখযাত্রী সুহওয়েন্না সামাহ্-এর এহেন কথা শুনে ঘাতক কশারঈক্ নগরীর রাজা প্রিয়েক্ষাহ্ বিস্মিত হয়ে গেলেন। সুহ্ওয়েন্না সামাহ্ সম্পর্ণ সুস্থ হয়ে রাজাকে অনেক ধর্ম কথা শুনালেন।
রাজা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে উপোসথ পালন করলেন, প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকলেন, হিংসা দ্বেষ পরিত্যাগ করলেন। দানে-ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে পরবর্তীতে রাজা স্বর্গলাভ নিশ্চিত করলেন এবং বোধিসত্ত্ব সুহওয়েন্না সামাহ্-ও এভাবেই সন্ন্যাসী-সন্ন্যাস মা-বাবাকে সেবা-যত্ন করে বুদ্ধত্ব লাভের কুশল-কর্মাদি অর্জন করতে থাকলেন।
তাই মারমা বয়োজ্যেষ্ঠ, পন্ডিতজন ও ধর্মগুরু পুরোহিতগণের মুখে এনীতিবাক্য শুনা যায় যে, পিতা-মাতার প্রতি সেবা-যত ইহলোক-পরলোক প্রতিটি জন্ম-জন্মান্তরে এর সুফল সদর | প্রসারী এবং এটি সুমহান পবিত্র কুশল-কর্মও বটে।
লেখকঃ মং ক্য শশায়ে নু
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।