icon

মারমা রূপকথা: ঠকের গল্প

Jumjournal

Last updated Feb 6th, 2020 icon 1006

অনেক অনেক দিন আগে এক গ্রামে ছিল দুই স্বামী-স্ত্রী। তাদের ছিল এক ছেলে। ছোট বেলা থেকেই ঐ ছেলে ছিল খুব দুষ্ট আর লোক ঠকানোর বুদ্ধিতে ভরা ছিল তার মাথা।

কালক্রমে সে বড় হল আর তার মা-বাবা হল বুড়ো-বুড়ি। ছেলেটার জ্বালাতনে আর উপদ্রবে গ্রামের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত। ঐগ্রামের সবাই তাকে ঠক বলে ডাকতো। এমন কোন লোক পাওয়া যাবে না, তার হাতে হেনস্থা হতে হয়নি।

এমন কি তারা মা-বাবাকেও সে বুদ্ধির জোরে বোকা বানিয়ে দিত। তবে সে যতই লোক ঠকিয়ে বেড়ায়, তার ছিল দেশ ভ্রমণের প্রবল ইচছা। নিজের ঘরবাড়ি ও গ্রামের গন্ডিবদ্ধ জায়গায় তার মন টিকতনা।

একদিন ঐ ঠকের বাবা ঠিক করল, দূর বনেগিয়ে অনেকবাঁশকাটবে আর ঐসব বাঁশ দিয়ে ভেলা বানিয়ে নদী পথে ফিরে আসবে গ্রামে। ঐবাঁশ বিক্রি করে অনেক টাকা পাওয়া যাবে।

সবকিছু ঠিকঠাক করার পর বাপ-বেটা মিলে বনে রওনা দিল। ভেলা বানিয়ে আনতে হলে অনেক বাঁশের প্রয়োজন হবে। অনেক গুলোবাঁশকাটতে হলে অনেকদিন সময় লাগবে।

তারা বেশ কয়েকদিনের খাবার-দাবার নিয়ে এসেছে। কয়েকদিন গভীর বনে থেকে বাঁশকাটল তারা, এভাবে কিছুবাঁশ জোগাড় করতে পারল।

কিন্তু তখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়নি এদিকে খাবারও ফুরিয়ে এল ফলে ঠক – এর বাবা তাকে বলল, তুমি এখন গ্রামে ফিরে যাও। আর গ্রামে গিয়ে কিছু চাল-ডাল আর তরি-তরকারী যা পাও বেশ কিছুদিনের জন্যে নিয়ে এস। আমি বনেই থেকে যাচ্ছি।

বাপের কথা মত সে বাড়ির পথ ধরল। যেতে যেতে সে ফন্দি আঁটতে লাগল মনে মনে। কি করে মা-বাবাকে বোকা বানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে দেশ ভ্রমণে যাওয়া যায়? সে তার উপায়ও বের করে নিল। সে তার বাড়িতে মায়ের কাছে ফিরে গেল। মহাকান্নাকাটি করল।

মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে বিলাপ করতে লাগল, হায়রে !আমার বুড়োবাপ বাঁশ কাটতে গিয়ে পা পিছলে খাদে পড়ে যায়। আর এতেই তার প্রাণ বায়ু বেড়িয়ে গেছে।

তার এ কথা শুনে তার মাও কান্নাকাটি করতে লাগল। কিছুদিন যাবার পর যখন বুড়ির মনের দুঃখ কিছুটা কমল, তখন ঠকটা গিয়ে বলল, মা, যা হবার তো হয়ে গেছে, যে মরে গেছে তাকে তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

যাই হোক, আমি যখন বন থেকে ফিরে আসি তখন একটাগ্রামে অবিকল আমার বাবার মত একজন লোককে দেখে এসেছি। তারও বৌমারা গেছে। কোন সন্তান-সন্ততি না থাকায় বেচারা বড়ই নিঃসঙ্গ দিন কাটাচ্ছে।

আমি বলি কি, আমি তার কাছে গিয়ে যদি বলি, তোমাকে বিয়ে করবে কিনা, তাহলে রাজি হলেও হতে পারে। এখন তুমি যদি রাজি থাক, তাহলে তো কোন কথা নেই।

তার কথা শুনে বুড়ি ক্ষেপে যাওয়ার ভাব দেখাল, তোর বাবা মারা গেছেদুই সপ্তাহও হয়নি। এর মধ্যেই তুই আমাকে আরেকটা বিয়ের কথা বলতে পারলি? তখন সে তাড়াতাড়ি বলল, না, না।

তুমি আমাকে অযথা ভুল বুঝেছ। বাবার সাথে ঐ লোকটার চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। এমনকি গলার স্বরও মিলে গেছে। তুমি অন্য কোন লোক বলে বুঝতেই পারবেনা। বুড়ি কিছুক্ষণ হেনতেন করার পর রাজি হয়ে গেল।

এবার ঠকটা খাবার দাবার নিয়ে ফিরে গেল বনে। আর বাপের কাছে পৌঁছতেই মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, বাবা, আমি মায়ের কাছে পৌঁছার পর মা নদীতে গেল গোসল করার জন্য।

কিন্তু তার ভাগ্য খারাপ, তাকে কুমিরে ধরে নিয়ে গেছে। একথা শুনে বুড়োটাও কান্নাকাটি করল কিছুক্ষণ। কি আর করা? বাপের বিরহ ব্যথা যখন কিছুটা কমল, সে গিয়ে বলল, যা হোক এখনতোবাড়ি গিয়ে আর কোন লাভ নেই।

বরং যে কাজে এসেছি, ওটা শেষ করে যাই। আর একটা কথা, আমি যখন বনে ফিরে আসছি, ঠিক তখন আমাদের গ্রামের বাইরে একজন বুড়ির সাথে আমার দেখা হয়।

ঐ বুড়িটা দেখতে ঠিক মায়ের মত। হাঁটাচলা, কথা বলার ধরণ, এমনকি গলার স্বরেও মিল আছে। তুমি তাকে অন্য কোন বুড়ি বলে বুঝতেই পারবেনা।

তাকে আমি ডেকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে রেখে এসেছি।গ্রামের লোকেরাতোতাকে আমার মা বলেই মনে করল। তারও স্বামী মারা গেছে। তুমি যদি রাজি থাক, আমি তাকে তোমার সাথে বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারি।

বুড়োটা কিছুক্ষণ মত না দেওয়ার ভান করে হেনতেন করল; তারপর ঠিকই রাজি হয়ে গেল। তারা অনেকগুলো বাঁশ দিয়ে একটা ভেলা বানাল।

আর উজান দেশ থেকে ভাটিতে অবস্থিত তাদের গ্রামের দিকে ভেলা ভাসিয়ে চলে এল। ঐঠকটা গ্রামে পৌছে তার পরিকল্পনা মতই বুড়ো-বুড়িকে গোপনে বিয়ের আসরে বসাল।

আর মা-বাবার বিয়ের আনন্দে সে বেশ বড় দেখে একটা শূকর মারল। তার মাংস বাঁশের তৈরী দন্ডে গেঁথে তা আগুনে শেকে কাবাব বানাল। কাবারের সবগুলো মাংস সে একটা মাদুর গুটিয়ে তার ভেতর ঢুকিয়ে রাখল আর মনে মনে হাসতে লাগল।

এদিকে তার মা-বাবা নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনা করেই বুঝতে পারল, তাদেরকে বোকা বানানো হয়েছে। পরস্পরকে তারা আসল স্বামী-স্ত্রী বলে বুঝতে পারল।

আসলে বুড়ো-বুড়ি দু’জনের কেউ মারা যায়নি। এটা আসলে তাদের গুণধর ছেলেরই কারসাজি। তখন তারা দুজনে দুইটা লাঠি নিয়ে ঠকটাকে পিটাবার জন্য তাড়া করল। আর তাদের এ অবস্থা দেখে সেশূকরের মাংস ভর্তি মাদুরের বান্ডিল নিয়ে পালিয়ে গেল।

এভাবেই সে নিজের গ্রাম, ঘরবাড়ি আর মা-বাবাকে ছেড়ে দেশ ভ্রমণে বের হল মনের সুখে। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় একটা গ্রামে এল সে। ঐ গ্রামের লোকজন ছিল মোটামুটি ধনী। টাকা-পয়সার তেমন কোন অভাব ছিলনা তাদের।

সে খুব সুন্দর দেখে একটা বাড়িতে ঢুকে পড়ল। ঐ বাড়ির গৃহকর্তার কাছে প্রণাম করে দাঁড়াল। তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কে? এখানে কি চাও? তখন ঠকটা বলল, আমি একজন পথিক।

পথে যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। যদি অনুমতি দেন, তাহলে আপনার বাড়িতে কিছুদিন বিশাম নিতে চাই। ঐ বাড়ির গৃহকর্তা তার কথাবার্তায় খুশি হয়ে তাকে থাকতে দিল। যখনই রান্না-বান্নার সময় হত, তখনই সে রান্না ঘরে গিয়ে শূকরের মাংস ভর্তি মাদুরের বান্ডিলে একটা থাবড়া দিয়ে বলত, বের হও।

আর এভাবে সে একটা করে শূকরের মাংস গাঁথা বাঁশের দন্ড বের করত। তা চাকরদের হাতে দিয়ে দিত রান্নার জন্য। ঐ ঘটনাটা গৃহকর্তার কানে গেল। তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কিভাবে ঐ মাদুর থেকে প্রতিদিনই একটা করে শূকরের মাংসের কাবাবযুক্ত বাঁশের দন্ড বের কর? ঠকটা বলল, ওটা আসলে অলৌকিক শক্তিধারী মাদুর।

একজন দেবতা স্বপ্নে বসে আমাকে দিয়েছিলন। প্রতিদিন এর ভিতর থেকে একটা করে শূকরের মাংস গাথা বাঁশের দন্ড বের হয়ে আসে যার ফলে মাংসের কোন অভাব হয়না আমার।

তখন লোকটি তাকে বলল, তুমি যদি আমাকে ঐ মাদুরের বান্ডিলটা বিক্রি কর তাহলে তোমাকে এক হাজার টাকা দেব। সাথে সাথে ঠকটা রাজি হয়ে গেল। আসলে ঐ মাদুরে শূকরের মাংস ফুরিয়ে গেছে।

আর এ কারণেই ঠকটা বিক্রি করতে রাজি হয়েছে। কোন সন্দেহ না করেই জিনিষটা কিনেছিল লোকটি। সেদিনই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে সরে পড়ল ঐ গ্রাম থেকে।

পরদিন দুপুর বেলা রান্নার সময় হলে, ঐ লোকটি মাদুরে একটা থাবড়া দিয়ে বলল, বের হও। কিন্তু দেখা গেল, কোন মাংস বের হল না। এভাবে বারবার পিটানোসত্ত্বেও যখন কোন মাংস পাওয়া গেল না, তখন তারা বুঝতে পারল ঠকটাতাদের ঠকিয়েছে।

তখন রেগেমেগে তাকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করল আর তাকে খুঁজে বের করার জন্য কয়েকজন মিলে বের হল। এ দিকে ঠকটা আবার ঐ গ্রাম ছেড়ে বের হয়ে অন্য একটা গ্রামে ঢুকে পড়েছে।

যেতে যেতে এক জায়গায় দেখতে পেল যে, একজন লোক একটা জমির পাশে বসে আছে। আর তার গরুটাকে লক্ষ্য করে গালাগালি করছে। গরুটা মহাপাজী। লাঙল দিয়ে কিছুক্ষণ হালচাষ করার পরই কর্দমাক্ত জমিতে শুয়ে পড়েছে, উঠার আর কোন লক্ষণ নেই।

বেত দিয়ে অনেক পিটিয়েও কোন লাভ হয়নি। ঠকটা ঐ গরুর মালিকের কাছে গেল। গিয়ে বলল, ভাই, তুমি গরুটার সারা গায়ে কাদা মাখিয়ে দিচ্ছনা কেন? তাহলে গরুটা চলতো। লোকটি তার কথা মত কাজ করল।

আর গরুটিও আবার চলতে লাগল। আসলে কাদা মাখার ফলে কাদার ভিতরের পোকা-মাকড়গুলেঅ গরুটাকে কামড়াতে শুরু করল। গরুটা চুলকানিতে বিরক্ত হয়ে উঠেচলতে লাগল, এটাই আসল কারণ। তখন লোকটি খুশি হয়ে তাকে ধন্যবাদ জানাল। কিন্তু ততক্ষণে ঠকটা আরেকটা ফন্দি এঁটেছে।

গরুর মালিককে গিয়ে বলল, ভাই আমার বড় তেষ্টা পেয়েছে। তুমি কি আমাকে একটু পানি খাওয়াতে পারবে? লোকটি উত্তর দিল, আমার কাছে তো কোন পানি নেই। বাড়ি থেকে আনা সব পানিই ফুরিয়ে গেছে।

তবে ঐ যে আমার বাড়ি দেখতে পাচ্ছ, সেখানে গিয়ে আমার বউকে বললেই তোমাকে পানি দিয়ে দেবে। এই বলে লোকটি তাকে নিজের বাড়ি দেখিয়ে দিল। ঠকটা বলল, ভাই, তোমার বউ যদি আমাকে পানি না দেয় ? লোকটি বলল, দেবে না কেন? অবশ্যই দেবে।

ঠকটাআবার বলল, তোমার বউ যদি জিজ্ঞেস করে যে, তুমি সত্যিই দিতেবলেছ কি-না, তখন তুমি হ্যা বলে দিও। ঐ লোকের স্মৃতি নিয়ে ঠকটাতার বাড়িতে গেল পানি খাওয়ার নাম করে।

কিন্তু তার বউ-কে সামনে পেয়েই ঠকটা বলল, বৌদি, তোমার স্বামী আমার কাছ থেকে একটা মহিষের বাচ্চাকিনেছে। আর তার দামটানিতে বলেছে তোমার কাছ থেকে।

বিশ্বাসহয়তো তোমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করে দেখ। এই বলে সে কাদামাখা গরুটাকে দেখিয়ে দিল। কাদা মাখার ফলে গরুটাকে মহিষের মত দেখাচ্ছে। তখন গরুর মালিকের বউটা নিজের বাড়ি থেকে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলল, ওগো, তুমি কি সত্যিই দিতে বলেছ? তখন লোকটি উত্তর দিল, হ্যা-হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও।

লোকটি মনে করেছে পানি দেওয়ার কথা বলছে তার স্ত্রী। তখন ঠকটা ঐ মেয়েটার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে পগার পার হয়ে গেল। গরুর ঐ মালিক যখন বাড়িতে এসে শুনল, ঐ লোকটা মহিষের বাচ্চা বিক্রির কথা বলে এক হাজার টাকা।

দিয়ে গেছে, সে বুঝতে পারল যে, তারা আস্ত এক ঠকের পাল্লায় পড়েছে। লোকটি রেগে গিয়ে ঠকটাকে খুঁজে বের করার জন্য বের হল। ঠকটা কিন্তু ততক্ষণে ঐ গ্রাম থেকে একটা গরু কিনে নিয়ে অন্য গ্রামে পৌঁছে গেছে।

ঐ গ্রামে পৌঁছে সে অবস্থাসম্পন্ন দেখে একটা বাড়িতে ঢুকে পড়ল। ঐ বাড়িটা ছিল একজন মহাজনের। সে মহাজনের কাছে প্রণাম করে দাঁড়াল। তখন মহাজন তাকে বলল, তুমি কে? এখানেই বা কি চাও।

সে উত্তর দিল, আমি একজন গরু ব্যবসায়ী। আমার অনেকগুলো গরু। এই গ্রামে আসার পথে পাহাড় ধ্বসে পড়ে মরে গেছে। একটি মাত্র গরুই শুধু বেঁচে আছে। এই বলে সে উঠানের একটা গাছে বাঁধা গরুটা দেখিয়ে দিল।

তারপর বলল, আজকের মত আমি আপনার বাড়িতে থাকব, যদি অনুমতি দেন। তার কথাবার্তায় খুশি হয়ে মহাজন তাকে থাকতে দিল। আর তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল।

তার গরুটা মহাজনের গোয়ালে বাধা রইল। সেদিন ঠকটা খাওয়া-দাওয়ার পর্বটা সেরে সকাল সকাল ঘুমোবার আয়োজন করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার নাক ডাকার আওয়াজ ভেসে এল।

মাঝ রাতে ঠকটা ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির ডাকে সারা দেবার ভাণ করে বিছানা ছেড়ে নামল। চুপি চুপি  গোয়ালে গিয়ে তার গরুর গোবরে বেশ কয়েকটা মুদ্রা ডুবিয়ে রেখে এল। তারপর বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। পরদিন সে সবার শেষে ঘুম থেকে উঠল।

হাত-মুখ ধুয়ে সে খাওয়া-দাওয়া সারল। মহাজনের কাছ থেকে একটা ঝুড়ি চেয়ে নিয়ে গোয়ালে গেল। ঐ ঝুড়িতে করে তার গরুর গোবরগুলো নিয়ে গেল নদীতে।

তার কর্মকান্ড দেখে সবাই অবাক হল। নদীতে ধুয়ে-মুছে সে মুদ্রাগুলো ঝুড়িতে করে ফিরে এল। তাকে দেখেই মহাজন বলল, তুমি গোবর থেকে মুদ্রা বের করলে কেমন করে, ভাই।

তখন সে উত্তর দিল, আসলে এই গরুটার একটা অলৌকিক শক্তি আছে। একজন ঋষির কাছ থেকে আমি এটা পেয়েছিলাম। যখনই পায়খানা করে, তার গোবরে থাকে মুদ্রা। তার একথা শুনে মহাজন গরুটা তার কাছে বিক্রির জন্য চাপাচাপি করতে লাগল।

ঠকটা দেখল, মহাজন তার ফাঁদে পা দিয়েছে। তবুও সে কিছুক্ষণ তালবাহানা করতে লাগল। কিন্তু মহাজনওনাছোড়বান্দা। কিছুক্ষণ পর সে নিতান্ত অনিচ্ছায় রাজি হয়েছে এই ভাব দেখিয়ে একহাজার টাকায় কেনা গরু পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিল।

মহাজন কিন্তু ঐ অলৌকিক গরু পেয়ে মহাখুশি। ঠকটা ততক্ষণে ঐ জায়গা ছেড়ে হাওয়া হয়ে গেছে। পরদিন ভোর বেলা মহাজন তার চাকর-বাকরদের নিয়ে চলল ঐ গরুটার গোবর পানিতে ধুয়ে মুদ্রা বের করার জন্য নদীতে।

কিন্তু কোথায় মুদ্রা ? মুদ্রার কোন নামগন্ধও নেই। এবার মহাজন বুঝল ঠকটা তাকে ঠকিয়েছে। সে রেগে গিয়ে গালাগালি করতে লাগল। আর ঠকটাকে ধরে আনতে লোকজন পাঠিয়ে দিল। সে কিন্তু তখন অন্য একটা গ্রামে হাওয়া হয়ে বেড়াচ্ছে।

এবার তার ভাগ্য ছিল খুবই খারাপ, যেতে যেতে সে ক্লান্ত হয়ে এক গাছের নিচে বসে পড়ল। তখন শূকরের মাংস বের হয় বলে যার কাছেমাদুরটা সেবিক্রি করেছিল, সেই লোকটি তাকে খুঁজতে-খুঁজতে ঐগ্রামে এসে পড়েছিল।

ঠকটাকে গাছের নিচে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়েই সে চুপি চুপি পেছন থেকে এসে এবার দেখাব মজা’ বলেই তাকে জাপটে ধরল। ঠকটা ভীষণ চমকে উঠে পালাতে গিয়েই দেখল সে ধরা পড়ে গেছে। ঐ লোকটি তাকে নিয়ে চলল রাজার কাছে।

তার জন্য ছিল আরেক মহাবিপদ। যার কাছ থেকে মহিষের বাচ্চা বিক্রির কথা বলে একহাজার টাকা নিয়ে সে পালিয়েছিল সেই কৃষকের সাথে তাদের দেখা হয়ে গেল। সুতরাং সেও বিচার পাবার জন্য তাদের সাথে চলল।

পথে তাদের আবার দেখাহয়ে গেল মহাজনের লোকজনের সাথে। এখন তারা সবাই মিলে তাকে ধরে নিয়ে চললে রাজার কাছে। বেচারা ঠকের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। কারণ কিছুক্ষণ পরপরই তার পেটে ঘুষি আর পিঠে কিল পড়ছে।

এক সময় তারা রাজ দরবারে পৌছে গেল। তারা একে একে খুলে বলল ঐ ঠকের কীর্তি-কাহিনী। যথারীতি সাক্ষ্য প্রমাণ প্রভৃতির পর তার বিচার কার্য সম্পন্ন হল। ঠিক হলো, তাকে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে সমুদ্রের ধারে তিনদিন তিনরাত অনাহারে ফেলে রাখা হবে।

তারপর সমুদ্রের পানিতে ফেলে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। এই হল তার শাস্তি। রাজার কথা মত পাইক-পেয়াদারা তার হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে সমুদ্রের ধারেনিয়ে এল। সেখানে একটা খুটির সাথে বস্তাটা বেঁধে রেখেফিরে এল রাজদরবারে।

তারপর বলল, আজকের মত আমি আপনার বাড়িতে থাকব, যদি অনুমতি দেন। তার কথাবার্তায় খুশি হয়ে মহাজন তাকে থাকতে দিল। আর তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। তার গরুটা মহাজনের গোয়ালে বাধা রইল।

সেদিন ঠকটা খাওয়া-দাওয়ার পর্বটা সেরে সকাল সকাল ঘুমোবার আয়োজন করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার নাক ডাকার আওয়াজ ভেসে এল । মাঝ রাতে ঠকটা ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির ডাকে সারা দেবার ভাণ করে বিছানা ছেড়ে নামল।

চুপি চুপি  গোয়ালে গিয়ে তার গরুর গোবরে বেশ কয়েকটা মুদ্রা ডুবিয়ে রেখে এল। তারপর বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। পরদিন সে সবার শেষে ঘুম থেকে উঠল।

হাত-মুখ ধুয়ে সে খাওয়া-দাওয়া সারল। মহাজনের কাছ থেকে একটা ঝুড়ি চেয়ে নিয়ে গোয়ালে গেল। ঐ ঝুড়িতে করে তার গরুর গোবরগুলো নিয়ে গেল নদীতে। তার কর্মকান্ড দেখে সবাই অবাক হল। নদীতে ধুয়ে-মুছে সে মুদ্রাগুলো ঝুড়িতে করে ফিরে এল।

তাকে দেখেই মহাজন বলল, তুমি গোবর  থেকে মুদ্রা বের করলে কেমন করে, ভাই। তখন সে উত্তর দিল, আসলে এই গরুটার একটা অলৌকিক শক্তি আছে।

একজন ঋষির কাছ থেকে আমি এটা পেয়েছিলাম। যখনই পায়খানা করে, তার গোবরে থাকে মুদ্রা। তার একথা শুনে মহাজন গরুটা তার কাছে বিক্রির জন্য চাপাচাপি করতে লাগল। ঠকটা দেখল, মহাজন তার ফাঁদে পা দিয়েছে।

তবুও সে কিছুক্ষণ তালবাহানা করতে লাগল। কিন্তু মহাজনওনাছোড়বান্দা। কিছুক্ষণ পর সে নিতান্ত অনিচ্ছায় রাজি হয়েছে এই ভাব দেখিয়ে একহাজার টাকায় কেনা গরু পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিল।

মহাজন কিন্তু ঐ অলৌকিক গরু পেয়ে মহাখুশি। ঠকটা ততক্ষণে ঐ জায়গা ছেড়ে হাওয়া হয়ে গেছে। পরদিন ভোর বেলা মহাজন তার চাকর-বাকরদের নিয়ে চলল ঐ গরুটার গোবরে পানিতে ধুয়ে মুদ্রা বের করার জন্য নদীতে।

কিন্তু কোথায় মুদ্রা ? মুদ্রার কোন নামগন্ধও নেই। এবার মহাজন বুঝল ঠকটা তাকে ঠকিয়েছে। সে রেগে গিয়ে গালাগালি করতে লাগল। আর ঠকটাকে ধরে আনতে লোকজন পাঠিয়ে দিল। সে কিন্তু তখন অন্য একটা গ্রামে হাওয়া হয়ে বেড়াচ্ছে।

এবার তার ভাগ্য ছিল খুবই খারাপ, যেতে যেতে সে ক্লান্ত হয়ে এক গাছের নিচে বসে পড়ল। তখন শূকরের মাংস বের হয় বলে যার কাছেমাদুরটা সেবিক্রি করেছিল, সেই লোকটি তাকে খুঁজতে-খুঁজতে ঐগ্রামে এসে পড়েছিল।

ঠকটাকে গাছের নিচে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়েই সে চুপি চুপি পেছন থেকে এসে এবার দেখাব মজা’ বলেই তাকে জাপটে ধরল। ঠকটা ভীষণ চমকে উঠে পালাতে গিয়েই দেখল সে ধরা পড়ে গেছে। ঐ লোকটি তাকে নিয়ে চলল রাজার কাছে।

তার জন্য ছিল আরেক মহাবিপদ। যার কাছ থেকে মহিষের বাচ্চা বিক্রির কথা বলে একহাজার টাকা নিয়ে সে পালিয়েছিল সেই কৃষকের সাথে তাদের দেখা হয়ে গেল।

সুতরাং সেও বিচার পাবার জন্য তাদের সাথে চলল। পথে তাদের আবার দেখাহয়ে গেল মহাজনের লোকজনের সাথে। এখন তারা সবাই মিলে তাকে ধরে নিয়ে চললে রাজার কাছে। বেচারা ঠকের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়।

কারণ কিছুক্ষণ পরপরই তার পেটে ঘুষি আর পিঠে কিল পড়ছে। এক সময় তারা রাজ দরবারে পৌছে গেল। তারা একে একে খুলে বলল ঐ ঠকের কীর্তি-কাহিনী। যথারীতি সাক্ষ্য প্রমাণ প্রভৃতির পর তার বিচার কার্য সম্পন্ন হল।

ঠিক হলো, তাকে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে সমুদ্রের ধারে তিনদিন তিনরাত অনাহারে ফেলে রাখা হবে। তারপর সমুদ্রের পানিতে ফেলে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়।

এই হল তার শাস্তি। রাজার কথা মত পাইক-পেয়াদারা তার হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে সমুদ্রের ধারেনিয়ে এল। সেখানে একটা খুটির সাথে বস্তাটা বেঁধে রেখেফিরে এল রাজদরবারে।

বাতাস করছে। তখন ঐঠকটা নদী পার করাতে পারবে কি-না জিজ্ঞেস করল তাদেরকে । মাঝিটি উত্তর দিল, আমিতো ভাত খাচ্ছি, তুমি যদিকিছুক্ষণ বস, তাহলে আমার ভাত খাওয়া হয়ে গেলেই তোমাকে পার করিয়ে দেব।

কিন্তু ঠকটা ততক্ষণে আরেকটা ফন্দি এঁটেছে। তার চোখ গেছে বুড়ো মাঝির সুন্দরী মেয়েটার উপর। তখন সে বলল, দাদু, আমার তো খুব তাড়া আছে, আপনি যদি না পারেন আপনার মেয়েইতো আমাকে পৌঁছে দিতে পারবে ওপারে।

বুড়ো মাঝি আর তার মেয়েটি রাজি হল। বুড়োটা জিজ্ঞেস করল, তা তোমার নামটা জানি কি? তখন ঠিকটা বলল, আমার নাম “জামাই”। মাঝির মেয়েটা তাকে নদীর অপর পারে পৌঁছে দেবার জন্য তার সাথে এল।

নৌকা মাঝ নদীর কাছাকাছি আসতেই ঠকটা বলল, নৌকার দাঁড় বেয়ে তুমি তো বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছ। দেখি দাঁড়টা আমাকে দাও। আমিই নৌকা চালাই।

সে ঐ মেয়েটার কাছ থেকে দাঁড়টা নিয়েই সোজা ভাটির দিকে নৗকা চালিয়ে পালাতে লাগল ঐ মেয়েটাকে নিয়ে। তার এ কান্ড দেখে মেয়েটা প্রাণপণে চিৎকার করতে লাগল।

এদিকে বুড়োটা খাওয়া-দাওয়া সেরে বাইরে এসে দেখল, ঠকটা তার মেয়েকে নিয়ে পালাচ্ছে। তখন সে নদীর পার ঘেঁষে দোঁড়াতে লাগল। সাথে আশপাশের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল, ভাইসব, আমার মেয়েকে জামাই নৌকায় নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

তোমরা আমাকে সাহায্য কর। জামাইকে ধরে আন। তার এ ধরনের কথাবার্তা শুনে আশপাশের লোকজন সবাই হাসতে লাগল। তাদের একজন বলল, তোমার মেয়েকে জামাই নিয়ে যাবে না তো কে নিয়ে যাবে?

সবাই যখন আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারল তখন ঠকটা সবার নাগালের বাইরে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে গেছে। এবার ঠকটা সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিল মেয়েটাকে। কিন্তু মেয়েটা তার উপর এতই ক্ষেপে ছিল যে, কোন কথাই বলল তার সাথে।

সে দেখল, মহাবিপাকে পড়েছে। মেয়েটা তো কোন কথাই বলছে না, কি করা যায় এখন? তখন সে বুদ্ধি করে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে আসল নৌকাটা। তারপর নৌকাটা বেঁধে রেখে বলল, তোমার যদি আমাকে পছন্দ না হয় তাহলে আমাকে ছেড়ে চলে যাও।

মেয়েটা দেখল, নির্জন জায়গা; এদিকে সন্ধ্যাওঘনিয়ে আসছে। তাই মেয়েটা আর কোথাও গেলনা। তখন ঠকটা তার ঝোলা থেকে চাল-ডাল-তরি-তরকারী বের করে রাঁধতে বসল।

হাড়ি-হাতিলও সে সাথে করে এনেছে। কিন্তু দেখল, আরেক সমস্যা। নৌকায় রান্না করার জন্য কোন উনুন নেই। আগুন জ্বালাবে কি করে? তখন ঠকটা আবার ফন্দি আঁটল, কি করে মেয়েটার রাগ কমিয়ে তাকে বিয়েতে রাজি করানো যায়?

তখন সে নৌকার উপর একটা বড় পাথর তুলে আনল। আর হাঁটু দু’টি ভঁজ করে পাথরটার পাশে রাখল। ভাঁজ করা দু’টি হাঁটু আর একটা পাথর মিলে উনুনের মত হল।

সে ঐউনুনের উপর হাঁড়িবসাল আর পানিসহ চাল দিয়ে ভাত রাঁধতে বসল। ঐউনুনের ভিতর জ্বালানী কাঠ ঢুকিয়ে আগুন জ্বালাতেই আগুনের তাপে তার দুই হাঁটুর চামড়া ঝলসে গেল। তখন সে আহ-উহ্ করে লাফিয়ে উঠল।

তার একান্ড দেখে মেয়েটা এমন হাসতে লাগল সে নদীর পানিতে পড়ে গেল। তখন সে মেয়েটাকে দুই হাত ধরে টেনে তুলল নৌকার উপর। মেয়েটা যখন কিছুটা শান্ত হল তখন সে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি এখন আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছ? মেয়েটা উত্তর দিল, হ্যাঁ।

এরপর ভোর হলে ঠকটা নৌকা চালিয়ে তার নিজের গ্রামে ফিরে এল। আর মেয়েটাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এল। ঐ ঠকের মা-বাবা কিন্তু ছেলে একটা বউ নিয়ে ফিরে এসেছে দেখে মহাখুশি। মহাধুমধামের সাথে তাদের দুই জনের বিয়ে দেয়া হল।


লেখকঃ মং সিংজ্ঞা

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।
RSS
Follow by Email
Facebook
Twitter

আরও কিছু লেখা

Leave a Reply