মারমা রূপকথা: সাদা টিয়ে পাখির গল্প
983
অনেক দিন আগের কথা। বারনসীতে এক গ্রামে কংজাই ও দুমা দম্পতি বাস করত।
তাদের জীবনে সময় মত একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিল। তারা জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
তখনকার দিনে বছরে একবার জুম চাষ করলে আরেক বছর না করেও খাওয়া যেত। কিন্তু কংজাই তা নয় প্রতি বছর জুম চাষ করত।
ফলে তাদের পরিবারে খাবারের কোন অসুবিধা নেই। এভাবে তারা সুখে জীবন কাটাত হঠাৎ একদিন কংজাই অসুস্থ হয়ে পড়ল।
তখন দুমা গ্রামের বৈদ্য ডেকে চিকিৎসা করাল। কিন্তু তাতে কোন ফল হলোনা। রোগের অবস্থা দিন দিন বাড়তে লাগল।
দুমা মেয়ে মানুষ, কি আর করা যায়। কংজাই’-এর মৃত্যু হল। দুমা দুঃখে কাঁদতে লাগল। দুমা তার মেয়েকে ঘরে রেখে নিজ স্বামীর কাজ করতে লাগল।
দুমা জুম কাটল, সেখানে সকলের মত ধান লাগাল। পরিচর্যা করল। ফসল তুলল। এভাবে দুমা অতি কষ্টে জীবন নির্বাহ করল।
এদিকে তার মেয়েও দিন দিন বড় হতে লাগল। মেয়েকে দিয়ে কাজ করানিার উপযুক্ত বয়স না হলেও তাকে দিয়ে ঘরের টুকটাক কাজ করাত।
একদিন দুমা মেয়েকে উঠানে রোদে দেয়া ধান পাহারায় বসাল। দুমার মেয়ের নাম মেছে।
মেছছা একজন পিতৃহীন মেয়ে হিসাবে মায়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করত। মেছছা উঠানে ধান পাহারাতে থাকল।
হঠাৎ এমন সময় এক ঝাক সাদা টিয়ে এসে পড়ল তার উঠানে।
টিয়ে দলপতি মেছোকে বলল, স্নেহের ছোট বোন, আমরা খাবার সন্ধানের জন্য এ দেশে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছি।
কিন্তু কোনখানে খাবার পাওয়া গেল না। আমরা এখন খুবই ক্ষুধার্ত। আমাদেরকে কিছু খাবার দাও, ছোট বোন।
মেছো বলল, এই ধান আমার ধান নয়, মায়ের। মায়ের কথা ছাড়া আমি কাউকে এতটুও দিতে পারবোনা ভাই।
দলপতি আবারও অনুরোধ করল, সামান্য কিছু হলেও ধার দাও। আমরা পরে পরিশোধ করতে রাজি আছি।
খাবার না জুটলে আমাদের অবস্থা খুবই মারাত্মক হবে। টিয়ের কথা মত মেছো তাদেরকে এতটুকু খাবার জন্য বললে তারা ঝাঁকে ঝাঁকে সবাই উঠানে পড়ল।
ফলে উঠানের সব ধান তারা খেয়ে ফেলল। মেঘোর মা সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে ধানের কথা জিজ্ঞাসা করলে মেছো সব কথা খুলে বলল।
দুমা রাগে মেছোকে মারধর করতে লাগল। মারার সাথে সাথে বলতে লাগল, না খাং বইংরো, না লাংরোগগা পিলয়।
মারতে মারতে নিজেরও কান্না আসল। সে রাগে মেছোকে রাত্রে খাবার না দিয়ে রাখল। সকালে মেছোকে টিয়ের দেশে
পাঠানোর জন্য ব্যবস্থা করল। ভোরে দুমা ভাত রান্না করে কলাপাতায় কিছু ভাত বেঁধে মেছোকে দিয়ে পাঠাল ঐ টিয়ের দেশে।
মেছো ভাত নিয়ে বের হল ঐ সাদা টিয়েদের দেশের সন্ধানে। পথে যেতে যেতে লোকেদের জিজ্ঞাসা করল, ওরে আমার কাকা, সাদা টিয়েদের দেশ কতদূর আছে?
পথে লোকেরা বলল, ঐ সাদা টিয়েদের দেশ তো আরও অনেক দূর আছে। তুমি এই রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যাও।
পথে লোকেদের জিজ্ঞাসা করো। পথে যেতে যেতে তার ক্ষুধা লাগল। পথে এক বাড়ীতে উঠে সে খাবার খেয়ে নিল।
সেখানে তার কথা ও আচার-আচরণ দেখে সবার মায়া হল। মেছোকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কোথায় যাও মা। মেছো বলল তার সম্পূর্ণ ঘটনা।
লোকেরা তাকে সাহায্য করল। সে এভাবে পথে লোকের সাহায্যে কোন মতে পৌছে গেল টিয়েদের দেশে। সেখানে পৌছে এক বাড়ীতে উঠল।
সে গোসল সেরে এল। সন্ধ্যার খাবার খেয়ে নিল। সকল টিয়েকে ডেকে তার ঋণ পরিশোধের জন্য অনুরোধ করল।
টিয়েদের সকলে তার কথায় রাজি হয়ে গেল। সকালে তারা মেছোকে বলল, ওরে আমার স্নেহের ছোট বোন, আমাদের কোন ধান নেই। যা হোক আমরা ঐ ধানের পরিমাণ কিছু জিনিস তোমাকে দিতে পারি।
মেছো তাদের কথায় রাজি হল। টিয়েরা তাকে একটি শর্ত দিল।
শর্ত হলো, সাত স্তর মশারী টাঙিয়ে একটি ডিম পাড়া মোরগ জবাই করিও, বিনি ভাত এক ডেকচী রান্না করে মশারীর ভিতরে খুলিও।
মেছো টিয়েদের দেশত্যাগ করে নিজ দেশে রওনা হলো।
সে টিয়েদের শর্ত মত কাজ করল। ঐ মশারীর ভিতরে মা ও মেছো যখন ঢুকলো, সেখানে সোনা আর সোনা দেখতে পেল।
মেছোর সোনা পাওয়ার কথা গ্রামের লোকেরা শুনলে তারা মেছোকে সোনা পাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগল।
গ্রামের লোকেরাও মেছোর মত করে ঐ সাদা টিয়েদের দেশে গমণ করল।গ্রামের এক লোক সেখানে গিয়ে তার বিভিন্ন অবস্থার কথা বলতে লাগল।
টিয়েরা তার অবস্থা বুঝেছে ভালভাবে। তাই সাদা টিয়েরা একটি বুদ্ধি করল। ঐ সাদা টিয়েরা মেছোকে পূর্বে যে রকম করেছিল, সেইভাবে তাকেও বলল।
সকালে ফেরার সময় মেছোর মত একটি শর্ত দিল। লোকটিও আনন্দে নিজ গ্রামে রওনা হলো।
নিজ বাড়ীতে পৌছানোর পর ঐ শর্ত মত কাজ করল। কিন্তু দেখা গেল সেখানে সাপ আর সাপ।
লেখক: হ্লা থোয়াই চিং মারমা
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।