মারমা লোককথাঃ পাখিদের চিকিৎসক কোকিল

Jumjournal
Last updated Mar 26th, 2020

960

featured image

নদীনালা গিরি পর্বত রূপালী ঝর্ণার ধারা সবুজ বনানী প্রকৃতির লীলাভূমি। সেই সবুজ বনানী প্রকৃতির কোলে বিভিন্ন ধরনের রঙ-বেরঙের পাখী বাস করে।

বনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বহু দূর-দূরান্তে স্বাধীনভাবে মুক্ত আকাশে ঘুরে বেড়ায়।

যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াবার সুযোগ থাকলেও মাঝে মাঝে পাখীদের মধ্যেও বিরাট অশান্তি সৃষ্টি হয়।

একে অপরের মধ্যে তুমুল ঝগড়া ও মারপিট হয় – তাতে জীবন হানিও ঘটে। শক্তিশালী পাখীরা দুর্বল পাখীদের উপর সবসময় হামলা করে। তারা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারে।

 একদিন দুর্বল পাখীরা মিলিত হয়ে শক্তিশালী বয়োজ্যেষ্ঠ একপাখীর কাছে মিনতিকরে বলল যে- আপনি আমাদেরকে বাঁচান।

বড় জাতের পাখীদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট হয়ে গেছি। এভাবে যদি আমাদের উপর অত্যাচার চলতে থাকে তাহলে একদিন পৃথিবীতে ছোট আকারের পাখী বলতে কিছুই থাকবেনা।

বয়োজ্যেষ্ঠ পাখীটি বললো-তাইতো, এর প্রতিকারের ব্যবস্থা একটা করতে হবে। যাতে সবাই সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারে।

 পাখীদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান বয়োজ্যেষ্ঠ পন্ডিত – তারা মিলিত হয়ে বলল যে – সব জাতের মধ্যে রাজা বলে প্রধান একজন থাকে।

রাজা সমাজকে রক্ষা করে, শাসন করে, ভালমন্দ বিচার করে। রাজার কথা মতো সবাই নিয়ম মেনে চলে।

একমাত্র পাখীদের সমাজে ‘রাজা’ বলে প্রধান বা নেতা কিছুই নেই। রাজা ছাড়া সমাজ সুন্দর ভাবে চলতে পারে না।

সবসময় ঝগড়া মারপিট লেগেই থাকে। তাই আমাদের মধ্যে সুস্থভাবে সমাজকে পরিচালনা করার জন্য একজনকে ‘রাজা’ নির্বাচন করতে হবে।

কিন্তু কাকে রাজা বলে ঘোষণা করব?

রাজা নির্বাচন করতে হলে সম্মিলিত সভার আয়োজন করতে হবে। পন্ডিতস্মন্য পাখীরা এই কথা চিন্তা করে সকল জাতের পাখীদের নিয়ে বিরাট একটা সভার আয়োজন করা হল।

সভায় বয়োজ্যেষ্ঠ পাখীটি সলকে ডেকে বলল -কাকে রাজা রূপে নির্বাচন করা যায় তা তোমরা বিবেচনা করে ঠিক করবে।

সভা থেকে উঠে একটি পাখী বলল যে – খংব্রোক্রী (হুতুম পেঁচা) দেখতে আকারে বড়, গাম্ভীয্যপূর্ণ-সুতরাং তাকেই রাজা হিসাবে নির্বাচন করা হোক।

অপর দিকে অন্যান্য পাখীরা বাধা দিয়ে বলে যে- খংবোক্রী (হুতুমপেঁচা) কোন মতেই রাজা হবার যোগ্য নয়।

কারণ কারো সংগে সে ভালোভাবে মিশতেই জানে না। তাই তারা খংবোক্রীকে রাজা রূপে মানতে রাজী নয়।

রাজা নির্বাচন করার নামের তালিকায় খংবোক্রীর (হুতুমপেঁচা) নাম বাতিল হয়ে যাওয়ায় মনে মনে সে ভীষণ রাগ করল।

কেউ বলে ক্যাগাই (কাক)কে রাজা নিযুক্ত করলে কেমন হয়। অন্যদল বলে ক্যাগাই (কাক) রাজা না হয়ে পরামর্শদাতা বা মন্ত্রী হয়ে থাকুক। শেষ পর্যন্ত সবার সম্মতি ক্রমে ভাগ্ৰী অর্থাৎ সারস পাখীকে রাজা হিসাবে নিযুক্ত করা হল।

বুদ্ধিমান বৃদ্ধ পাখীরাও তাদের প্রস্তাব মেনে নিন। ভ্যার্থীকে সকল পাখীদের রাজা বলে তারা ঘোষণা করল।

রাজা হয়ে ভ্যাগ্রী (সারস) সকল পাখীদের ডেকে বলল যে, যে যার গোষ্ঠীকে নিয়ে মিলেমিশে একসাথে দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করবে। শক্তিশালী পাখীরাও দুর্বল পাখীদের উপর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।

যদি কেউ এই নিয়ম লঙ্ঘন করে তাহলে তাকে রাজসভায় বিচার করে শাস্তি প্রদান করা হবে। কংরং (কোকিল) পাখীকে অসুস্থ পাখীদের চিকিৎসা করার দায়িত্ব দেওয়া হল।

পাখীদের সমাজে কংরং (কোকিল হল বৈদ্য। যে রোগীকে গণনা করে দেখে চিকিৎসা করে তাকে মগ ভাষায় বলা হয় বৈদ্য। ক্যাগাইকে(কাক) পাখীদের পরামর্শদাতা ও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচন করল।

ভ্যাওয়া (হলুদ পাখী)কে দূত বা বার্তাবাহক হিসাবে নির্বাচন করল। এইভাবে বিশেষ বিশেষ পাখীকে বিশেষ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হল।

সেইদিন থেকে ভ্যাগ্রী রাজা সুশৃঙ্খলভাবে পাখীদের পরিচালনা করতে লাগল। পাখীরা ও রাজার আদেশ মেনে সুখে স্বাচ্ছন্দের চলাফেরা করতে লাগল।

এক জুমিয়া বন কেটে টিলা ভূমিতে ধান ও অন্যান্য ফসলের বীজ বুনেছিল। জুমে যখন ফসল পাকতে শুরু হল তখন লোকটি দেখল যে কারা যেন তার জুমের ফসল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

চোরকে ধরবার জন্য দিনের পর দিন তারা পাহাড়া দিল অথচ চোর আর ধরা পড়েনা। ধান ও অন্যান্য ফসলগুলি ঠিকই অনবরত চুরি হয়ে যাচ্ছে।

জুমিয়া ও তার ছেলে যুক্তি করে বলল যে আমরা এবার রাত্রিবেলা পাহাড়া দিয়ে দেখি চোরকে ধরা যায় কিনা।

জুমিয়ার ছেলেটি মাটি দিয়ে খুব শক্ত করে গুল্লি তৈরী করে রোদে শুকিয়ে নিল। তারপর গুলাইল (যা দিয়ে গুলি ছোঁড়া হয়) ও গুলি নিয়ে জুমের এক কোণায় ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পাহাড়া দিতে লাগল।

রাত্রি ঘুট ঘুটে অন্ধকার হঠাৎ কি যেন উড়ে আসার শব্দ শোনা গেল। জুমিয়া ছেলেটি গুলাইল নিয়ে মারবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

একটু পরেই দেখা গেল বিশাল আকারের পাখী একটি ক্ষেতে নেমে ফসলগুলি ছিড়ে নিচ্ছে। ছেলেটি পিছন থেকে পাখীটার দিকে তাক করে গুলি ছুড়ে দিল।

সংগে সংগে শক্ত মাটির গুলি পাখীটির গুহ্যদ্বারের ভিতর গেল ঢুকে। গুন্নিটি ঢুকে এমনভাবে আটকে গেল যে পাখীটার পেটের ভিতরেও ঢুকছে না আবার বাইরেও আসছে না।

ব্যথায় ছটফট করতে করতে কাতর হয়ে সে তার নিজের বাসায় গাছের কোটরে ফিরে এল। সেদিন থেকে সে আর গাছের কোটর থেকে বাইরে আসছে না।

 একদিকে চুরি করে ধরা পড়ার জন্য লজ্জা, অপর দিকে প্রচন্ড ব্যথায় ভিতরে ভিতরে ছটফট করছে। কাউকে কিছুই বলতে পারছে না।

এই চোর পাখীটি আর কেউ নয় – খংবোগ্রী (হুতুমপেঁচা)। রাত্রি অন্ধকারে চুপি চুপি জুমের ফসল চুরি করতে গিয়ে সে গুন্নি খেয়েছে।

পাখীদের মধ্যে সবসময় নিয়মমত নির্দিষ্ট সময়ে সভা বসে। যখন সম্মিলিতভাবে সভা বসে তখন একটি পাখী উঠে রাজাকে জানিয়ে দিল যে কয়েকদিন হল খংবোগ্রী (পেঁচা) সভায় যোগদান করছে না।

ক্যাগাই (কাক) মন্ত্রী এই কথা শুনে বলল খংবোগ্রী কি হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার। পাখীদের খবরদাতা হল ভ্যাওয়া (হলুদপাখী)। যেই বাড়ীতে অতিথি আসবে সেই বাড়ীর গাছের ডালে বসে রউপং-রউপ্যং বলে অনবরত ডেকে সে অগ্রীম খবর দিয়ে যায়। মগ ভাষায় রউপ্যাং শব্দের অর্থ হলো পৌঁছে যাবে।

অর্থাৎ অতিথি পৌঁছে যাবে। রাজা ভাগ্ৰী (সৗরস) ভাওয়াকে(হলুদ পাখী) কে খংবোগ্রীর (পেঁচার খবর নেবার জন্য পাঠাল। ভ্যাওয়া খংবোগ্রীর বাসায় গিয়ে খোঁজ করে দেখল যে সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে।

বেশ কয়েকদিন ধরে কিছুই খেতে না পাওয়ায় প্রচন্ড দুর্বল হয়ে গেছে। ব্যথায় কাতর হয়ে কথা ও বলতে পারছে না। খাওয়া রাজার কাছে খংবোগ্রীর দুরবস্থার কথা বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিল।

রাজা ক্যাগাই (কাক) মন্ত্রীকে ডেকে বলল – খংবোগ্রীকে সুস্থ করতে হবে। রাজা করংকেআদেশ দিল যে খংবোগ্রীকে চিকিৎসা করার জন্য তার বাসায় যেতে।

করংবোগ্রীর বাড়ি গিয়ে তার জ্যোতিষী বিদ্যা প্রয়োগ করে দেখল যে-খংবোগ্রীর এখন মঙ্গল দশা। অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহের দোষ লেগেছে। সুতরাং তাকে এখন খুব ঠান্ডা কোন জায়গায় রাখতে হবে।

তাকে তিন দিন তিন রাত্রি জলে ডুবে থাকতে হবে। নিরুপায় হয়ে খংবোগ্রী (পেচা) করং (কোকিল) এর কথামতো জলে নেমে পড়ল। মুখটি শুধু উপরে রেখে সমস্ত শরীর জলে ডুবিয়ে তিন দিন তিন রাত্র কাটাল।

এদিকে কংরং মন্ত্র উচ্চারণ করতে থাকে। মগ জাতির ভাষায় কং শব্দের অর্থ ভালো হয়ে যাও। তিন দিন তিন রাত্রি জলে ডুবে থাকার পর খংবোগ্রীর (পেচার) মলদ্বারে আটকে থাকা মাটির গুল্লিটিসম্পূর্ণভাবে গলে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

খংবোগ্রীও পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। খংবোগ্রী সুস্থ হলে কংরং পাখী ও তার স্ত্রী নিজ বাসায় ফিরে যায়। বাসায় গিয়ে দেখে তাদের ছােট বাচ্চা বাসা থেকে নীচে পরে মারা গেছে।

অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজেদের বাচ্চাকে হারাতে হলো—তাই কংরং পাখী মনে ভীষণ ব্যথা পেল। দুদিন পরে কংরং বৈদ্য খংবোগ্রীর কাছে চিকিৎসা করার খরচ বাবদ দাম চাইতে গেলে খংবুগ্রী (হুতুম পেঁচা) তাকে কোন দামই দিল না।

কংরং বৈদ্যের হয়েছে ভীষণ বিপদ একদিকে তার সন্তান মারা গেল অন্যদিকে রোগীকে সুস্থ করে তোলার দামও পেল না।

তখন বাধ্য হয়ে কংরং বৈদ্য (কোকিল চিকিৎসক) রাজার কাছে গিয়ে খংবোগ্রীর (পেঁচার) বিরুদ্ধে নালিশ করল।

রাজার আদেশে দূত ভাওয়া (হলুদ পাখী) খংবোগ্রীকে ডেকে নিয়ে আনল। রাজা গ্রী (সৗরস) খংবোগ্রীকে চিকিৎসা করার দাম না দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে খংবোগ্রী বিচার সভায় অস্বীকার করে বলে যে করং (কোবিল) তাকে চিকিৎসা করেনি।

সে নিজ বুদ্ধি বলে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়েছে। তাই সে কংরংকে কোন টাকা বা দাম দেবে না। খংবোগ্রীর কথা শুনে ক্যাগাই (কাক) মন্ত্রী ভীষণ রেগে যায়।

সভার মধ্য থেকে কিছু পাখী উঠে বলে – মিথ্যাবাদী খংবোগ্রীর চেহারা যেমন কুৎসিতমনও তেমন বিশ্রী।

অন্যান্য পারিষদরাও বলে সে একটা আস্ত চোর, অকৃতজ্ঞকে মেরে ফেলা উচিত। সবশেষে রাজা ভাগ্ৰী বাধা দিয়ে বলে যে, না পেঁচাকে মেরে ফেলা ঠিক হবে না।

তাকে সমাজচ্যুত করে দেব। যেহেতু সে সমাজের নিয়ম কানুন মেনে চলছে না, সুতরাং তাকে আর পাখীদের সমাজে রাখা যাবে না, সভার মধ্যে রাজা ঘোষণা করে বলল খংবোগ্রীকে (হুতুম পেঁচাকে) পাখীদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করে দিলাম।

আজ থেকে সে কোন পাখীর সঙ্গে মেলামেশা বা চলাফেরা করতে পারবে না। খংবোগ্রী রাগেও অপমানে কটমট করে একবার রাজার দিকে তাকায় আবার অন্যদিকে মন্ত্রী ও পারিষদদের দিকে তাকায়।

কিন্তু কেউ তাকে সহানুভূতি জানাল না। সবাই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তার দিকে চেয়ে আছে। অবস্থা বেগতিক দেখে খংবুগ্রী (পেচা) চুপচাপ উড়ে চলে গেল।

সেদিন থেকে সে আর কারো সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ পেল না। লজ্জা ও ভয়ে সে সারা দিন লুকিয়ে থাকতো। সন্ধ্যে বেলায় সব পাখীরা বাসায় ফিরে ঘুমাতে গেলে তখন চুপি চুপি করে খাবারের সন্ধানে বাইরে আসতো।

তখন থেকেই খংবোগ্রীর (পেঁচাদের) জীবন যাপন এই ভাবে চলেছে।

অন্যদিকে কংরং এর দুরবস্থা দেখে সবাই তার প্রতি খুব মায়া হল। কংরং (কোকি) পাখী যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারে এমন ব্যবস্থা করে দিতে হবে বলে সব পাখীরা রাজার কাছে অনুরোধ করল।

রাজা ঙাগ্ৰী (সারস) তখন ঘোষণা করে দিল যে আজ থেকে কংরং পাখীর বাসা তৈরী করতে হবে না। যে কোন পাখীর বাসায় সে আশ্রয় নিতে পারবে। যেখানে খুশী ডিম পেড়েআসতে পারবে।

যে পাখীর বাসায় কংরং ডিম পেড়ে আসবে, সেই বাসার পাখী কংরং এর ডিমগুলিকে ফুটিয়ে বাচ্চাগুলিকে লালন পালন করে তুলতে হবে। বাচ্চাগুলি বড় হয়ে স্বাবলম্বী হলে যেখানে খুশি উড়ে চলে যাবে।

রাজা কংরংকে ডেকে বলল যে তোমার কাজ হবে সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে পাখীদের সুখ-শান্তির গান শুনিয়ে যাওয়া।

কারোর কোন অসুখ হলে তাকে সুস্থ করে তুলতে হবে। শান্তি ও প্রেমের গান শুনিয়ে সবার মনে আনন্দ দেবে।

এতবড় গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিয়ে কংরং পাখী সঠিকভাবে সংসারের দিকে নজর দিতে পারবে না।

থাকার জন্য ঘরবাড়ী তৈরী করতে পারবে না। তাই সমস্ত পাবীরা কংরং পাখীর বাচ্চাদের লালন পালন করার দায়িত্ব নিতে হবে। রাজার আদেশ সব পাখীরা সানন্দে গ্রহণ করল।

সেদিন থেকে কংরং পাখীরা নিশ্চিন্তে এক দেশ থেকে অন্যদেশে ঘুরে ঘুরে শান্তি ও প্রেমের গান শুনিয়ে বেড়ায়।

মগ আদিবাসীদের ভাষায় কংরং শব্দের অর্থ হলো -ভালো হয়ে যাওয়া। পাখীটি সারাদিন কংরংকংরং বলে ডাক দিয়ে যায়।

অর্থাৎ সবাই ভালো হয়ে যাও, ভালো হয়ে যাও। কংরং (কোকিল) পাখীর আগমনের সাথে সাথেই তার মধুর সুরে সত্যিই সব পাখীরা মনে সুখ শান্তি ফিরে পায়।

সারা বছর ঝড় ঝঞ্জার বাধা বিপত্তির পর বসন্তের ঋতুতে সকল প্রাণীদের মনে কংরং গানের তালে তালে আনন্দ ও প্রেমের বন্য নেমে আসে।

সকল মানুষ তার গান শুনে দুঃখ বেদনা ভুলে গিয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়। কংরং এর ডাকে প্রকৃতিও সাড়া দিয়ে নতুন প্রাণ ফিরে পায়।

গাছে গাছে নতুন নতুন অজস্র রঙ বেরঙের ফুল ফোটে, ফুলের গন্ধে ভ্রমর ছুটে আসে। পাখীদের কূজনে ভ্রমরের গুঞ্জনে, মানুষের মনের আনন্দে ফুলে ফুলে ভরা পৃথিবীকে তখন অপূর্ব সুন্দর দেখায়।

সত্যিই কংরং পাখীর ভালো হয়ে যাবার মন্ত্র ধ্বনিতে প্রকৃতির সব কিছু ভালো হয়ে যায়। এমনি করে প্রতি বছর সে ফিরে আসে এবং সকলকে ভালো হয়ে যাওয়ার গান শুনিয়ে যায়।

সময় হলে সে কোন একটি পাখীর বাসায় ডিম পেড়ে চলে যায়।

আর সেই বাসার পাখী কংরং পাখীর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চাদেরকে স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করে। তখন থেকে আজও সেই নিয়ম চলে আসছে।

তথ্যসূত্র: ত্রিপুরার আদিবাসী লোককথা

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা