ম্রো রূপকথা – উদমা ম্লা (ইঁদুর সুন্দরী)

Jumjournal
Last updated Jan 21st, 2020

1265

featured image

অনেক অনেক দিন আগের কথা।

এক ঝোপে বাস করতো এক ইঁদুর সুন্দরী।

সবাই তার রূপের ও গুণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ইঁদুর সুন্দরী একদিন বট বৃক্ষের ছায়াতলে মনের সুখে তার পরনের কাপড় পিনন বুনছিলো।

দুপুর ঘনিয়ে এলে প্রচন্ড রোদ ইঁদুর সুন্দরীর গায়ে স্পর্শ করতে লাগলো। সে রেগে সূর্যকে গালি দিলো – সূর্য, তুমি আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছো কেন? তুমি আমাকে ক্ষমতা দেখাচ্ছো? ইচ্ছে মতো আমার গায়ে তাপ দিচ্ছো? আমিও কিন্তু ইঁদুর সুন্দরী।

ইচ্ছে করলে আমি সব কিছু করতে পারি। তখন সূর্য বললো – সুন্দরী আমি এতো বড় নয়। আমার ক্ষমতাও নেই যে তোমার মতো সুন্দরীকে এতো কষ্ট দেবো। কিন্তু সুন্দরী আমার যে ভগবানের আদেশে প্রতিদিন পৃথিবীর মানুষের আলো ও তাপ দিতে হয়। আর আমার চেয়েও বড়ো ও ক্ষমতাবান ব্যাক্তি আছেন।

– কে সে জন? ইঁদুর সুন্দরী জিজ্ঞাসা করে।

– তিনি হলেন মেঘ। আমার যত দীপ্তি থাকুক না কেন মেঘ যদি আমাকে ঢেকে রাখে তাহলে আমি কখনই দীপ্তি মেলাতে পারি না। আমি তখন অসহায় হয়ে পড়ি। আমার দীপ্তি ও তাপকে মেঘের কাছে হার মানতে হয়। তখন আমার কিছু করার থাকে না।

ইঁদুর সুন্দরী মেঘের কাছে গেলো এবং প্রশ্ন করলো – মেঘ তুমি এতো শক্তি কোথায় পেলে যে সূর্যকে তোমার কাছে হার মানতে হয়েছে? মেঘ উত্তর দিল আমার তো কোন শক্তি নেই।

বাতাস যদি আমাকে ঠেলে দেয় এক সেকেন্ড দাঁড়াবার ক্ষমতা আমার নেই। তখন কোন দিকে যাবো  তাও ভেবে পাই না। আমার চেয়েও বাতাসের শক্তি অধিক।

ইঁদুর সুন্দরী আবার বাতাসের কাছে জিজ্ঞেস করলো – বাতাস তোমার এতো শক্তি কোথায় পেলে যে মেঘেরাও তোমার কাছে হার মানে। বাতাস বললো – আমার তো এত শক্তি নেই। আমার চেয়ে শক্তিমান এক ব্যাক্তি আছে।

কে সে? প্রশ্ন করলো ইঁদুর সুন্দরী। বাতাস বললো তিনি হলেন – পাহাড়। পাহাড় যদি আমার কাছে থাকে তাহলে পাহাড়ের কাছে আমাকে অবশ্যই হার মানতে হয়। পাহাড় থাকলে আমি আটকে যাই এবং অপর প্রান্তে যেতে পারি না।

ইঁদুর পাহাড়ের কাছে গিয়ে বললো – পাহাড়, এত শক্তি ও ক্ষমতা তুমি কোথায় পেলে? বাতাসকে তোমার কাছে মাথানত করতে হয়।

পাহাড় বললো – আমার ক্ষমতা কোথায়? গরুরা যখন আমার বুকে চরে তখন কোথায় আমার ক্ষমতা? আমার বুক ধর ধর করে ক্ষয়ে যেতে থাকে। তখন কেউ আমায় রক্ষা করতে আসে না। তাই গরু আমার চেয়েও শক্তি এবং ক্ষমতাবান।

ইঁদুর সুন্দরী আবার গরুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো – গরু এত শক্তি ও ক্ষমতা কোথায় পেলে? তুমি পাহাড়কে ক্ষুরে মেরে ক্ষয় করতে পারো। তোমাদের ভয়ে তো পাহাড় দিবানিশি সব সময় কাঁদে।

তখন গরু বললো – আমাদের কোনো শক্তি নেই। আমাদের চেয়ে শক্তিমান আরেকজন আছে। মালিকরা যখন দড়ি দিয়ে আমাদের গলায় বাঁধে তখন আমরা ইচ্ছে করলেও নড়তে পারি না। তাই দড়ি আমাদের চেয়েও শক্তিধর এবং ক্ষমতার অধিকারী।

ইঁদুর পুনরায় দড়ির কাছে গিয়ে জিজ্ঞস করলো – দড়ি, তোমার এতো শক্তি কেন?

তুমি তো শক্তিশালী গরুকে বেঁধে দিয়ে না খাইয়ে রাখতে পারো।

ইঁদুর সুন্দরীকে দেখে দড়ি অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে বললো – ইঁদুর সুন্দরী, আমার শক্তি কোথায়? ইঁদুর তো আমাদেরকে দাঁত দিয়ে কামড়ে ছিড়ে ফেলতে পারে। তাই ইঁদুরের আমার চেয়ে শক্তি বেশি। তাইতো আমি তোমায় দেখে ভয়ে স্তম্ভিত হয়েছি।

দড়ির কথা শুনে ইঁদুর অত্যন্ত লজ্জা পেলো আর ভাবলো, তাহলে যত দোষ সব ইঁদুরের। তার মানে আমারই।

এ ভেবে সে লেজ উঠিয়ে গর্তে তাড়াতাড়ি ঢুকে গেল।


সিংইয়ং ম্রো
ম্রো রূপকথা, লোককাহিনী ও কিংবদন্তি

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা