ম্রো রূপকথা: ওয়াদুই সাঙচিয়া (ডিমের গল্প)
1109
অনেক দিন আগের কথা। এক যে ছিল বন বিড়াল আর এক মুরগি। তারা দু’বন্ধু। তাদের দুই বন্ধুর মধ্যে ছিল গলায় গলায় ভাব। কিন্তু একদিন বন বিড়াল মুরগীকে খাওয়ার জন্য ফন্দি আটলো। রাতে যখন মুরগী ঘুমাবে তখন তাকে খাবে, তাই সে মুরগীকে জিজ্ঞেস করল,
– হে বন্ধু! তুমি আজ রাতে কোথায় ঘুমাবে?
মুরগি উত্তর দিলো, – এখানে।
কিন্তু মুরগিটি বন বিড়ালের ফন্দি আগে থেকে আঁচ করতে পেরে সেখানে না ঘুমিয়ে অন্য জায়গায় ঘুমালো। রাতে বন বিড়াল সেখানে গিয়ে মুরগিকে পেলো না। পরদিন আবার জিজ্ঞেস করলো,
– মুরগি আজ তুমি কোথায় ঘুমাবে?
মরগি বললো, – ঐখানে।
সেখানেও বন বিড়াল সেই রাতে মুরগিকে পেলো না। এমনি করতে করতে একদিন মুরগিটি আর নতুন জায়গা পেলো না।
তাই সে বাচ্চাদের নিয়ে মাচাং ঘরের নিচে এক কোণায় ঘুমালো। তখন মুরগির এক বাচ্চার পেটে প্রচন্ড গ্যাস উঠলো। আর সে তার মাকে বললো, মা আমি গ্যাস ছাড়বো। মা মুরগি তাকে আওয়াজ না করে আস্তে করে গ্যাস সারার জন্য বললো।
কিন্তু গ্যাস ছাড়তে গিয়ে প্রচন্ড আওয়াজ হলো। তাতে বন বিড়াল টের পেয়ে মুরগিটিকে ধরে ফেললো। আর সাথে সাথে মুরগির পেটের ডিম মলদ্বার দিয়ে বেড়িয়ে গড়িয়ে পড়লো। তারপর ডিম গড়াতে গড়াতে পিঁপড়ার বাসায় পড়লো। ডিম দেখে পিঁপড়া জিজ্ঞেস করলো,
– হে ডিম ভাই, কোথায় যাচ্ছো?
– আমি বাবার ঝণ শোধ করতে যাচ্ছি। আর মামার বাড়িতে বিনি ভাত খাবো।
– আমিও তোমার সাথে যাবো।
– যাই, চলো।
এই বলে ডিম আবার গড়াতে লাগলো। এমন সময় শূকরের সাথে দেখা হলে শূকর জিজ্ঞেস করলো,
– হে ভাই ডিম, কোথায় যাচ্ছো?
– আমি মামার বাড়িতে বিন ভাত খেতে যাচ্ছি।
– আমিও যাব। চল। গড়াতে গড়াতে আবার ছোট পিঁপড়ার সাথে দেখা হলে পিঁপড়া জিজ্ঞাসা করলো,
– হে বন্ধু ডিম, কোথায় যাচ্ছো?
– আমি মামার বাড়ি বিনি ভাত খেতে যাচ্ছি।
এই বলে ডিম আবার গড়াতে গড়াতে টক্কের (টুখর সাপ – এক জাতীয় সরীসৃপ) সাথে দেখা হলো। সে জিজ্ঞাসা করলো,
– হে বন্ধু ডিম, কোথায় যাচ্ছো?
– মামার বাড়ি।
আমিও তোমার সাথে যাব। এমনি করে বন বিড়ালটির ঘরের সামনে তারা পৌঁছে গেল। বন বিড়ালের বাচ্চারা প্রথমে ডিমকে দেখতে পেলো। তারা তো মহাখুশি।
মা-বাবারা রাতে ঘরে ফিরলে তারা ডিমটি আগুনে পোড়াবে বলে স্থির করলো। রাতে মা-বাবা ফিরলে চুলার চারপাশে দাদা-দাদি, বাবা-মা, সবাই গোল করে বসে ডিমটিকে আগুনে পোড়াতে লাগলো।
আগুনে ফুঁ দিতে থাকলে অমনি ডিমটি ধুম করে বিকট শব্দে ফেটে গেলো। আর গরম ডিমের কুসুম বন বিড়ালদের মলদ্বারে, কানে ও নাকে ভরে গেলো।
নেকড়া কাপড় দিয়ে মুছতে গিয়ে নেকড়ার ভেতর আগে থেকে লুকিয়ে থাকা পিঁপড়াগুলো তাকে কামড় দিলো। কামড় খাওয়ার বন বিড়ালটি তখন মাচাং থেকে মাটিতে লাফ দিলো। আর সাথে সাথে শূকর আক্রমণ করলো।
আর উঠানের দিকে পালালে টুক্কর সাপ ‘টক্কে’ আওয়াজে চিৎকার করে উঠলো। বন বিড়াল ভয়ে আবার মাচাং ঘরে উঠলো। তখন কুঠার একেক করে সব বন বিড়ালের মাথায় কোপ দিলো। তাতে সব বন বিড়াল মারা গেল।
লেখকঃ সিংইয়ং ম্রো
ম্রো রূপকথা, লোককাহিনী ও কিংবদন্তি
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।