রাখাইন রূপকথা: কৃপণ ব্রাহ্মণ
995
অনেক দিন আগের কথা। তখন পাহাড় ঘেঁষে বাস করত এক কৃপণ ব্রাহ্মণ । তার ছিলনা কোন সন্তান। তার পেশা ছিল গ্রাম থেকে ভিক্ষা করে খাওয়া। ব্রাহ্মণ ছিল যেমন কৃপণ, তেমনি গরীব। অনেক কষ্টের বিনিময়ে একটি গরু বাছুর ক্রয় করলো। আদর-যত্ন করে গরু বাছুরকে লালন করতে লাগলো।
প্রকৃতিতে শীত আসছে। কৃষকের ঘরে নতুন ধান। কুয়াশার চাদর কেটে পথ চলছে লোকেরা। ব্রাহ্মণের একটি চাদর ক্রয় করার সামর্থ্য নেই।
ব্রাহ্মণ আগুনের তাপ নেওয়ার জন্য দুই হাত বাড়িয়ে দিত প্রতিদিন। পৌষ মানেই শীতের আমেজ। গাঁয়ের লোকেরা নতুন ধানের উৎসব করছে।
কৃপণ ব্রাহ্মণের সে সব কোন কিছু ভাল লাগল না। শীতকাল আসছে। শরীর কাঁপছে। কম্বল নেই বাড়িতে। কোথা থেকে পায়? কেনা যে হয়নি। ভোলা দেহে তার ফাঁকা গৃহে দ্রিা। ঘরে বাতাস প্রবেশ করছে।
দিনের পর দিন শীত তীব্র হচ্ছে। তাঁর শেষ সম্বল বলতে একটি মাত্র গরু আছে। ব্রাহ্মণের সাধ, শীত যখন আরও বেশি পড়বে, তখন শেষ সম্বল গরুটিকেবিক্রি করে একটি কম্বল ক্রয় করবে।
কম্বলটি দিয়ে খুব আরামে ঘুমাবে। ব্রাহ্মণ গরুটিকে বিক্রিকরতে চায় না। অন্য উপায়ে একটি কম্বল পাওয়া যাবে কিনা সে চেষ্টা করল।
এদিকে শীত বেড়ে গেল। ফাল্গুন মাস। শীত প্রায় শেষের দিকে তখনও আগুনের তাপ নিয়ে শীতের সাথে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে। লোকেরা লেপ দিয়ে শীতকে মোকাবেলা করছে। ব্রাহ্মণের শীত সহ্য হল না।
অবশেষে ব্রাহ্মণ নিরূপায় হয়ে তার পোষা প্রাণী শেষ সম্বল স্বরূপ এক গরু বাছুরটিকে হাটে বিক্রি করতে নিয়ে গেল।
গ্রামের লোকেরা তার কান্ড দেখে উস্কানীমূলক বাক যুদ্ধ করতে লাগল। কৃপণ ব্রাহ্মণ মনের দুঃখে গরুটিকে হাটে নিয়ে বিক্রি করে দিল এবং একটি কম্বল কিনে বাড়িতে ফিরল।
সে দিন রাত হল। কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে আছে ব্রাহ্মণ। কখন যে আসবে শীত? শীত আর সেদিন আসল না। ব্রাহ্মণের কম্বল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ল।
তার একটি মাত্র গরুও হল শেষ। শীতও হয়ে গেল শেষ। পাড়ার লোকেরা কৃপণতা দেখে ব্রাহ্মণকে উদ্দেশ্য করে বললঃ উপযুক্ত বাক্য উপযুক্ত সময়ে ব্যক্ত করতে হয় এবং উপযুক্ত কাজ উপযুক্ত সময়ে সম্পন্ন করতে হয়।
লেখকঃ ইউ কে রাখাইন
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।