সাধক কবি শিবচরণ চাকমার জীবন কথা

Jumjournal
Last updated Dec 14th, 2020

995

featured image

কবি শিবচরণ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে এক কিংবদন্তি চরিত্র। তিনি চাকমা সাহিত্যের আদি কবি ও সাধক।

এই জনপ্রিয় সাধক কবি কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর উপনদী শিলকের তীরে ‘উয়ারা ওযাহ্’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর জন্মকাল সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও বাংলা ১১৮৪ এবং ইংরেজি ১৭৪০-৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বলে অনুমান করা যায়। তাঁর পিতার নাম ধূংবী ও মাতার নাম ধর্মবী চাকমা।

পিতামাতার দুইসন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ। শৈশব কালেই তাঁর পিতার মৃত্যু হয়।

সে সময় পরিবারে গুরু দায়িত্ব নিতে হয় জ্যোষ্ঠ ভাই কালিচরণকে।

শৈশবকাল থেকেই শিবচরণ ছিলেন সংসারের প্রতি উদাসীন ভাবুক প্রকৃতির। সেই সময় পৃথিবী নিয়ে তিনি নানা কিছু ভাবতেন।

পৃথিবীতে কেন এমন হয়,কারা করেন এসব ভাবতেন। শিবচরণের বিদ্যাশিক্ষার হাতেখড়ি হয় তাঁর মাতুল সম্পর্কীয় হরমণির কাছে।

তিনি অল্প সময়ের মধ্যে হরমণির কাছ থেকে অনেক কিছু শিখে ফেলেন। শিবচরণের বিদ্যাশিক্ষার ব্যাপারে তাঁর মা ও জ্যোষ্ঠ ভাই উৎসাহ যোগাতেন।

শিবচরণ যখন কৈশোরে পদার্পণ করেন তখন তাঁর মধ্যে সংসার বিমুখতা প্রবল হয়ে উঠে।

তখন তিনি গভীর অরণ্যে নির্জন স্থানে গিয়ে ধ্যান করতেন।শিবচরণের এই সংসার বিমুখতা দেখে তাঁর মা তাকে সংসার বন্ধনে আবদ্ধ করতে চেষ্টা করতেন।

জনশ্রুতি আছে যে, একদিন তাঁর মা বেইন(তাঁত) বুনার সময় শিবচরণকে সংসারী হতে বলেন।

তখন শিবচরণ তাঁর মাকে বলেন, মা আমাকে যদি ধরতে পার, ধরতে পারলে তোমার জয় হবে।

তখন তাঁর মা তাঁকে ধরতে গেলে দেখেন যে শিবচরণ অদৃশ্য হয়ে গেছেন। তাঁর অদৃশ্য হওয়া দেখে তাঁর মা খুব আশ্চর্য হয়ে যান।

তাঁর মা বেইন বুনা বন্ধ করে কুত্তি( মাটির তৈরি জলপাত্র) থেকে জলপান করতে গেলে দেখেন যে সেই কুত্তির ছোট নলের মধ্যে শিবচরণ পুতুলের মত বসে আছেন।

তখন তাঁর মা আরও আশ্চর্য হয়ে যান।তখন তাঁর মা বলেন যে তিনি আর কোনদিন তাঁকে সংসারী হতে বলবেন না।তখন শিবচরণ ওখান থেকে বের হয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসেন।

শিবচরণ পরবর্তীকালে আধ্যাত্বিক সাধনার দ্বারা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হন।

এককালে শুল্ক প্রদানের বিষয়ে বিরোধের জের ধরে তৎকালীন ব্রিটিশদের সঙ্গে চাকমা রাজা শুকদেব রায় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে শুকদেব রায়ের সেনাপতি রুনু খাঁর সাথে ব্রিটিশদের সাথে বেশ কয়েকবার যুদ্ধ হয়।

তখন চাকমারা শিলক নদীর তীর পরিত্যাগ করে বাপ দাদার বাস্তুভিটা ছেড়ে মাতামুহুরি নদীর তৈনছড়ির তীরে চলে যেতে বাধ্য হয়। সেই সাথে শিবচরণের পরিবারও তৈনছড়ির তীরে চলে আসেন।

তৈনছড়িতে এসে তাঁর ভাবশিষ্য চিত্তঙ্যা ওরফে চিধংকে সঙ্গী হিসাবে পান।এতে তাঁর সাধনা আরও বেড়ে যায়।

তিনি দিনরাত যেকোন সময় ধ্যানের জন্য বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যাওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি মর্ত্যলোক থেকে অন্তর্ধান করেন।আর কোনদিন ফিরে আসেননি।

অন্তর্ধানের আগে এক সন্ধ্যায় বন্ধুদের ডেকে তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘গোজেন লামা’ অর্থাৎ ‘ ইশ্বর নামা ‘ পড়ে শোনান এবং কাব্যটি তাদের হাতে তুলে দেন এবং অদৃশ্য হয়ে যান। তাঁর রচিত গোজেন লামা এতদ্ অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়।

সূত্রঃ বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি, রাঙ্গামাটি।
প্রথম প্রকাশ এপ্রিল ২০১৪ইং।

কৃতজ্ঞতায়ঃ ইন্টুমণি তালুকদার
প্রকাশক,রেগা প্রকাশনী এবং গোজেন লামা বইটির প্রকাশক।

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা