মারমা লোককথা: রোসাঙ রাজা ও এক শিল্পীর কাহিনী

Jumjournal
Last updated Dec 8th, 2020

711

featured image

অনেকদিন আগে রোসাঙ রাজ্যে এক রাজা রাজত্ব করতেন।মন্ত্রী-সান্ত্রী উজিরনাজির- কবি শিল্পীতে গমগম করত তাঁর রাজসভা। রাজার ছিল অপূর্ব সুন্দরী এক রাণী।

রাণীর ভালবাসা ও সেবাযত্নে মুগ্ধ রাজা একদিন রাজসভাতে ঘোষণা করলেন যে, যে শিল্পী তাঁর রাণীকে না দেখেই রাণীর অনুরূপ একটি ছবি এঁকে দিতে পারবে, তাকে দেওয়া হবে সাতরাজার ধন একটি মানিক।

অল্প সময়ের মধ্যেই রাজার সেই ঘঘাষণা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। অনেক শিল্পী রাজবাড়ীতে এসে নিজ নিজ কৃতিত্ব জাহির করতে চাইল।

শুরু হল ছবি আঁকা। সেই ছবি আঁকাতে অংশ গ্রহণ করেছিল রোসাঙ। রাজ্যের এক শিল্পীও।

ছবি আঁকা ছাড়াও তিনি কবিতা লিখতে ও গান করতে পারতেন। মন্ত্র-তন্ত্র জপ-তপের মাধ্যমে অনেক অসাধ্য সাধন করতেন।

যাহোক ছবি আঁকা শেষ হলে রাজ্য এবং রোসাঙরাজ্যের শিল্পীর ছবিটাকেই রাণীর হুবহু ছবি বলে নির্বাচিত করলেন।

ছবিটি দেখা মাত্রই রাজা আনন্দ ও বিষ্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়লেন। কী অপরূপ ছবি।

কাঁচা হলুদের মতন গায়ের রঙ, রঙা ডালিমের মতন ওষ্ঠ ও অধর, কাজলকালো দীর্ঘ চুল, জোছড়া জাম্বুরা শোভিত বক্ষ, আলতা-রাঙা চরণ-যুগল সবই রানীরই মতো।

হঠাৎ রাজার মনে হল সবইতো ঠিক আছে, দেখিতো রাণীর বাঁ পায়ের হাঁটুর একটু উপরে যে একটা জন্মদাগ আছে সেটা আছে কিনা।

কিন্তু অবাক কান্ড। ছবিতে সেই দাগটাও দেখা গেল।

দাগটা দেখেই রাজা রেগে লাল হয়ে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রীকে আদেশ দিলেন – এই লম্পট শিল্পীকে বধ্যভূমিতে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করুণ।

আমার রাণীর সঙ্গে অবেধ সম্পর্ক। মন্ত্রী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বললেন ‘ছি-ছি, একি বলছেন মহারাজ?

আমার এমন সতী-লক্ষ্মী রাণীমার মুখে এমন মিথ্যা কলঙ্কের কালি লেপন করবেন না।” রাজা- ‘আপনি কী করে জানেন যে, রাণী সতী-লক্ষ্মী ?

তখন শিল্পী ভদ্রলোক রাজাকে করজোড়ে বলতে লাগলেন ‘মহারাজ আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু ঠিক নয়। আমি—” রাজা চুপ কর লম্পট, আমি তোর কোন কথাই শুনতে চাই না।’

তখন মন্ত্রী বললেন ঃ-মহারাজ এই শিল্পীততা নেহাৎ শিল্পীই নন, তিনি তন্ত্র মন্ত্রে পারদর্শী দিব্যদৃষ্টি সম্পন্ন এক মহানুভব ব্যক্তি।

তিনি সুপন্ডিত, বিচক্ষণ এবং একজন বিশিষ্ট কবিও বটেন। আমি তাঁকে অনেকদিন আগে থেকেই চিনি মহারাজ।

তখন রোসাঙ রাজ বললেন আপনি ভুল করছেন মন্ত্রী মশাই।

রাণীর সঙ্গে যদি অবৈধ সম্পর্ক নাই থাকে, তাহলে এ বেটা রাণীর কাপড়ের ভেতরের বাঁ পায়ের হাঁটুর উপরের জন্মদাগটাও কী করে ছবিতে আঁকেত পারল?

তখন মন্ত্রী বললেন –“মহারাজ, এই শিল্পীর দিব্য দৃষ্টি শক্তি আছে। সুতরাং নিশ্চয়ই তিনি ঐ দিব্যদৃষ্টি বলে রাণীমার জন্ম দাগটা দেখতে পেয়েছিলেন।

বোসাঙ রাজ আরো ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, আমি বিশ্বাস করি না। আমি ওর মৃত্যুদন্ডই চাই।’

মন্ত্রী বললেন, মৃত্যুদন্ড দেবার আগে দয়া করে আরো কিছুটা সময় চিন্তা ভাবনা করুন মহারাজ। হঠাৎ ঝোঁকের মাথায় এত বড় একটা পাপ কাম করবেন না।

পরোপকারী জ্ঞানী,গুনী ব্যক্তিকে অকারণে শাস্তি দিলে পরে অনুতাপের আগুনে দগ্ধ হতে হবে। কিন্তু তবুও রাজা তাঁর জেদ ছাড়লেন না।

তখন মন্ত্রী বললেন মহারাজ আপনার আদেশ অমান্য করার সাহস আমার নেই। সুতরাং আপনার আদেশ অবশ্যই আমি পালন করব।

কিন্তু তার আগে আমার ছোট্ট একটি অনুরোধ যদি রাখেন তাহলে বড়ই কৃতজ্ঞ থাকব।” রাজা বললেন ঠিক আছে বলুন, আপনি কী বলতে চান।

মন্ত্রী বললেন মহারাজ আমি এখন আপনাকে কয়েকটি গল্প বলব।

গল্পগুলো শোনার পরও যদি আপনার মনে হয় যে, শিল্পীকে হত্যা করা উচিত তাহলে কালবিলম্ব না করে আমি তাঁর হত্যার ব্যবস্থা করব।

তাই মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত শিল্পীকে কারাগারে রাখার ব্যবস্থা করুন মহারাজ।তখন মহারাজপাইক পেয়াদা ডেকেশিল্পীকে কারাগারে পাঠিয়ে দিলেন।

শিল্পীকে পাঠিয়ে দেওয়ার পর মন্ত্রী বললেন মহারাজ আপনার অনুমতি পেলে আমি আমার গল্পগুলো শুরু করতে পারি।” রাজা অনুমতি দিলেন। মন্ত্রীও গল্প বলা শুরু করলেন।

প্রথম গল্প – রাজপুত্র ও চিল একদেশে এক রাজপুত্র ছিল। তার ছিল একটি পোয্য চিল পাখী। রাজপুত্র যেখানে যেত, চিল পাখীও সেখানে।

রাজপুত্র তাকে অনেক আদর যত্নে লালন পালন করত। রাজপুত্রের প্রধান শখ বনে বনে ঘুরে পশু-পাখী শিকার করা।

একদিন সে শিকারের উদ্দেশ্যে বনের দিকে রওনা হল, আর তার মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলল তার নিত্যদিনের সুখ-দুঃখের সাথী প্রিয় চিল পাখীটি।

চৈত্র মাস। সূর্যের কড়া রোদ। অনেকদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ফুটি-ফাটা হয়ে গেছে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। চাতকের বুক ফাটা আর্তনাদ।

শিকারের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত রাজপুত্রের রঙ তেষ্টা পেল। হন্যে হয়ে সে ছুটতে লাগল জলের খোঁজে।

চিলটিও উড়তে থাকল তার মাথার উপর দিয়ে। অনেক ঘোরাবির পর হঠাৎ বনের দুই টিলার মাঝখানে একটি ছোট্ট মৃতপ্রায় ঝর্ণা দেখতে পেল।

এক দু’ফোটা করে খুব আস্তে আস্তে জল পড়ছে।

রাজপুত্র তখন একটি গাছের বড় একটি পাতাকে চোঙের মতো বানিয়ে তাতে সেই ফোঁটা ফোঁটা জল সংগ্রহ করতে লাগল।

অনেকক্ষণ পর গলাটা কোন প্রকারে ভেজানোর মত সামান্য জল জমল।

রাজপুত্র যেই না সেই জল মুখে দিতে গেল, অমনি সেই চিল পাখীটা উড়ে নীচে নেমে এল এবং পাখার ঝাপটা দিয়ে রাজকুমারের হাতের জলটা ফেলে দিল।

রাজপুত্র আবারো জল ধরা শুরু করল এবং এক সময় সেই জল মুখে দিতে গেল। কিন্তু চিল পাখীটা আবারো ঝাপটা মেরে গেল।

কিন্তু চিল পাখীটা আবারো ঝাপটা মেরে সেই জল ফেলে দিল।তৃতীয়বারেও চিলটা একই কান্ড করে বসল।তখন তৃষ্ণার্ত রাজপুত্র রেগে আগুন হল।

সে তৎক্ষণাৎ খোপ থেকে খপ করে তলোয়ারটা বের করল ফেলল এবং প্রিয় চিলটিকে কেঁটে ফেললো। প্রিয় চিলটিকে ঝোঁকের মাথায় কেটে ফেলার পর রাজপুত্রের মনে বেশ দুঃখ হল।

অনেকদিনের সখু-দুঃখের সাথী চিলটিকে এভাবে মেরে ফেলা ঠিক হয়নি বলে তার মনে হল। চিলটা হয়তো বা তাকে কোন বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যেই জলটা খেতে দেয়নি।

সে আরো ভাবল – “চিলটা উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় নিশ্চয়ই খারাপ কিছু দেখেছিল, নইলে তৃষ্ণার জল ফেলে দিয়ে সে আমার ক্ষতি করবে কেন? এসব সাতপাঁচ ভেবে রাজপুত্র পাথর বেয়ে পাহাড়ের উপরে উঠতে লাগল।

এক সময় উপরে উঠে সে যা দেখল তা তার স্বপ্নেররা অগোচর ছিল। একটি বিরাট সাপ সেই মৃতপ্রায় ঝর্ণাটির নগণ্য জলে মুখ রেখে লালা (বিষ) ঝরছে।

সেই বিষ যুক্ত জলই নীচে এক দুফোটা করে পড়ছে, যা, সে এতক্ষণ খাওয়ার জন্যে সংগ্রহ করছিল।

রাজপুত্র এবার নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পাল যে, চিলটি উপর দিয়ে উড়ে চলার সময় সাপটির বিষ ঝরানোর দৃশ্য নিশ্চয়ই দেখেছিল এবং তাই সে তাকে (রাজপুত্র) আসন্ন মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচোতৈই জলটা ফেলেদিয়েছিল।

সুতরাং প্রকৃত বন্ধুর মতোই কাজ করেছিল চিলটি। রাজপুত্রের কান্না পেয়ে গেল বন্ধু চিলটির জন্যে। অনুতাপের আগুনে। তাই সারাটা জীবন তাকে দগ্ধ হতে হল।

গল্পটি শেষ করে মন্ত্রী রোসাঙরাজকে বললেন – মহারাজ, এই কারণেই বলছি যে, ঝোঁকের মাথায় ভুল বুঝে ঐ শিল্পীকে হত্যা করবেন না।

চিল পাখীর মতোই কিন্তু তিনি নিরপরাধ। রাজা বললেন- বৃথা সময় নষ্ট না করে আপনার অন্যগল্প শুরু করুন। মন্ত্রী বললেন – যা হুকুম মহারাজ।

 দ্বিতীয় গল্প – মহাত্মা নেউল এক পাড়ায় বাস করত এক বৃদ্ধ জুমিয়া দম্পতি। বুড়ো বয়সে অনেক পূজো, মানত, মাদুলি-র ফলে তাদের এক ছেলে জন্মায়।

বুড়ো-বুড়ির ভাঙাঘরে চাঁদের আলো, অন্ধের যষ্ঠী। সাতরাজার ধন মনে করে তারা আদর করে খাওয়ায়, ঘুম পাড়ানী গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়।

ক্রমে ক্রমে ছেলেটির গুটিগুটি পায়ে চালর মতো অবস্থা হল। মুখে আধো-আধো কথা। এদিকে বুড়ো বুড়িকে প্রতিদিন জুমের কাজে বেরুতে হয়।

ছেলেকে বাড়ীতে দেখভাল করার জন্যে তারা তাই একটি নেউলকে রাখল।

একদিন তারা জুমে যাবার প্রাক্কালে নেউলটিকে ডেকে বলল আমাদের বাচ্চাটাকে সর্বদা চোখে চোখে রাখবে।

দুপুরে কোন সাপ এসে খাওয়ার জন্যে তোমার কাছে জল চাইতে পারে। কিন্তু খবরদার, অনুনয়-বিনয় করলেও জল দেবে না। নেউল বলল – ঠিক আছে তা-ই হবে।

জুমিয়া দম্পতি তখন ঘরের সামনের উঠানে একটি গামলাতে কিছু জল রেখে নেউলকে বলল তুমি এই জল দিয়ে বাচ্চার সঙ্গে খেলা করো।

নেউল বলে, আচ্ছা। তারপর ওরা দু’জন জুমে চলে গেল। হাসি-ঠাট্টা, প্রবাদ-প্রবচন এবং গান গাইতে গাইতে তারা জুমের আগাছা পরিস্কার করছিল।

হঠাৎবুড়ি হাতের টাক্কালটি ছেড়ে দিয়ে মাটিতে বসে পড়ল। বুড়োকে ডেকে বলল-“আমার বুকের ভেতরটাতে কেমন করছে।শীগগির বাড়ী চলো। আমাদের সোনামণির নিশ্চয়ই কোন বিপদ হয়েছে। বৃদ্ধ বলল-‘তাহলে চলো, বাড়ী চলে যাই।

এদিকে বুড়ো-বুড়ির জুমে চলে যাবর পর এক গোখরো সাপ তার সাপিনীকে বলল-চল, ঐ জুমিয়াদের বাড়ী গিয়ে কিছু জল খেয়ে আসি।

তখন সাপিনী বলল,তুমি যেওনা তুমি বড্ড রাগী। ওরা যদি জল না দেয় তাহলে তুমি রাগের মাতায় যে ফোঁস করে উঠবেই তা আমি জানি।

তার চেয়ে বরং আমিই আগে গিয়ে দেখি। তখন গোখরো সাপ বলল-ঠিক আছে তা-ই হোক তুমিও যাও।

সাপিনী গিয়ে নেউলকে বলল- নেউল ভাই, তোমার ঐ গামলা থেকে আমাকে একটু জল খেতে দাও না গো। তেষ্টায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

নেউল আতঙ্কিত হয়ে বাধা দিয়ে বলল-না-না, জল দেওয়া যাবেনা। মনিবের নিষেধ।

সাপিনী বলল মনিবতো বাড়ীতে নেই দেখছি। সুতরাং মনিব টের পারে না। নেউল বলল তাহলেও জল দেওয়া যাবে না।

সাপকে কখনো বিশ্বাস নেই। তারা উপকারীকেও ছোবল মারতে দ্বিধা করে না।

সাপিনী বলল- বিশ্বাস করো ভাই, আমি কক্ষনো দংশন করবো না। দয়া করে আমাকে একটু জল খেতে দাও। তোমার অশেষ পুণ্য হবে। সাপিনীর কাকুতি মিনতিতে নেউল কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ল।

সে তখন সাপিনীকে বলল তাহলে তিন সত্য উচ্চারণ করো শপথ করে বলো যে কখনো দংশন করবে না। সাপিনী তিন সত্য উচ্চারণের মাধ্যমে শপথ করল এবং জল খেয়ে গেল।

তারপর গোখরো সাপটি জল খেতে এল। নেউল রাজী হল না। শেষ পর্যন্ত অনেক কাকুতি মিনতির পর নেউল পূর্বের মত দংশন না করার শপথ করিয়ে সাপটিকে জল খেতে দলি।

তখন বুড়ো বুড়িরবাচ্চাটিও গামলার জলে হাতের আঙ্গুল দিয়ে থপথপ শব্দ করে খেলছিল।

সাপটি যখন একমনে জল খাচ্ছিল, তখন বাচ্চার হাত গিয়ে সাপের গায়ে পড়ল এবং জল খাওয়ার বিঘ্ন ঘটায় রেগে গিয়ে সে ছেলেটিকে দংশন করে বসল।

দারুণ বিষের জ্বালায় বাচ্চাটি ঢলে পড়ল। তখন নেউলটি উপায়ান্তর

দেখে দৌড়ে বনে প্রবেশ করল ঔষধের খোঁজে। যে ভাবেই হোক, ছেলেটিকে বাঁচাতেই হবে। নেউল সর্পাঘাতে মৃত্যুর ঔষধ জানে।

বনে গিয়ে সে খুব তাড়াতাড়ি ঔষধ (লতাপাতা) সংগ্রহ করে সেগুলোকে মুখে নিয়ে উধ্বশ্বাসে বাড়ীর দিকে ছুটল।

এদিকে বুড়োবুড়ি বাড়ী এসে ছেলে মরে গেছে দেখে লাঠি নিয়ে নেউলকে খুঁজতে লাগল। হঠাৎ বুড়ো দেখল যে, নেউল আসছে।

নেউলটি যেই কাছে এলে সঙ্গে সঙ্গে বুড়ো লাঠি দিয়ে তাকে মেরে ফেলল। কর্তব্যে অবহেলার প্রতিশোধ, ছেলের মৃত্যুর প্রতিশেধ নিল বুড়ো।

নেউলের মৃত্যুর পর হঠাৎ বুড়ো-বুড়ি দেখে যে, তার মুখেব মধ্যে কিছু লতা-পাতা রয়েছে। তখন তারা ভাবল যে, ওগুরলো নিশ্চয়ই সর্পাঘাতের ঔষধ।

সঙ্গে সঙ্গে সেই লতাপাতা নিয়ে বাচ্চার মুখে দিতেই বাচ্চা বেঁচে উঠল।

মরা পুত্র হারাধন ফিরে পেয়ে বুড়ো-বুড়ি খুশি হল ঠিকই, কিন্তু যার কল্যাণে ছেলে বাঁচল তাকে এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার কারণে তারা দুঃখের দাহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে দগ্ধ হল।

গল্প শেষে মন্ত্রী রোসাঙ রাজকে বললেন-মহারাজ, এই কারণেই বলছি যে, ঝোঁকের মাথায় ভুল বুঝে ঐ মহান শিল্পীকে হত্যা করবেন না।

রাজা বললেন- বৃথা সময় নষ্ট না করে আপনার অন্য গল্প শুরু করুন। মন্ত্রী বললেন- যো কুম মহারাজ।

তৃতীয় গল্পঃময়না ও অমৃত ফল অনেকদিন আগের কথা। তখন ভুলুয়া রাজ্যে এক রাজা রাজত্ব করতেন।

তাঁর ছিল একটি ময়না পাখী। সেটি অনেক মনোরম কথা বলে সবাইকে মুগ্ধ করত।

ভুলুয়ারাজ তাই ময়নাটিকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন এবং যত্ন করতেন। একদিন ময়নাটি ভুলয়ারাজকে বলল মহারাজ, উত্তর দেশে এক সরোবরের তীরে নাকি অমৃতফলের গাছ আছে।

আমি সেই অমৃতফল খেতে যেতে চাই। আপনি যদি অনুমতি করেন, তবেই যেতে পারি।”

রাজা বললেন-তুমি আমার পরম প্রিয়। তোমার আনন্দেই আমার আনন্দ। তাই তোমার কোন ইচ্ছাকেই আমি অপূর্ণ থাকেত দেব না। তুমি স্বাচ্ছন্দে অমৃতফল খেতে যেতে পার।

রাজার আদেশ পেয়ে ময়না মহানন্দে ডানা মেলে উড়ে চলল।

অনেক দেশ, দেশান্তর পার হয়ে একদিন এসে পৌঁছালো অভীষ্ট স্থানে।

বিভিন্ন রকম ফুলের রঙ ভারা ও সৌরভে, পাখীর কলকাকলিতে, ভ্রমরের গুঞ্জরণে সে যেন এক স্বপ্নের দেশ। চারদিকে অজস্র অমৃতফলের বৃক্ষ ফলে ফুলে সুশোভিত। ময়নার মনে খুশিব জোয়ার।

মেয়ে ছিল না। একদিন কি একটা কারণে তাদের মধ্যে সারাদিন ধরে ঝগড়া চলল। শেষে সন্ধ্যা হল।

তবুও ঝগড়া বন্ধ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। তখন বুড়ো অসহ্য হয়ে ঝগড়ায় ছেদ টেনে দিয়ে নীরবে বাড়ী থেকে বেরিয়ে পথে নামল।

ভাবস, নদীর ধারে কিছুক্ষণ কাটিয়ে তনু মন শান্ত করবে।

বুড়ো চলে যাবার কিছুক্ষণ পর বুড়িও পথে নামল। অপমানে তার আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগল। কিন্তু কীবাবে আত্মহত্যা করবে তা শিতর করতে পারছিল না।

হাঁটতে হাঁটতে বুড়ি রাজার দ্বারা ঘোষিত সেই বিষবৃক্ষের পাশে এসে থমকে দাঁড়াল। ভবল-এই গাছটির ফল খেয়েই আজ মরব।

আত্মহত্যার এমন সহজ উপায় পেয়ে বুড়ি আর দেরকিরল না। গাছ থেকে একটি ফল ছিড়ে নিমিষেই মুখে পুরল। কিন্তু মুখে দিয়েই বুড়ি তাজ্জব হল।

ফলটির যেমনি মনমাতানো ঘ্রাণ, তেমনি অপরূপ মিষ্টিস্বাদ। আকাশে তখন পূর্ণিমার চাঁদ। জ্যোত্রা ধারায় চারদিকে অপরূপ সৌন্দর্য্যের জোয়ার।

ফলটা খেয়ে শেষ করার পর বুড়ি হঠাৎ নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। তার দলাপাকানো ভাঁজ করা শরীরটা আর নেই।

শরীর এখন যোড়শীর মতো পূর্ণযৌবন হয়ে পড়েছে।

অতীতের নিজ দেহ সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ায় বিষবৃক্ষের ফলগুলোর মধ্যে কোন ঐশ্বরিক গুণ আছে বলে বুড়ির মনে হল।

সঙ্গে সঙ্গে বুড়িআত্মহত্যার কথা ভুলে গিয়ে বাড়ীর দিকে পা বাড়াল।

এদিকে নদীর ধার তেকে ঘন্টা দেড়েক পর বুড়ো বাড়ি ফিরে এসে বুড়িকে দেখতে না পেয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ল।

বুড়িকে মাত্রাতিরিক্ত মন্দ কথা বলে ফেলেছে বলে অনুতপ্ত হল এবং অর্ধাঙ্গিনীর খোঁজে পথে নামল।

কিছুদূর যাবার পর বুড়ো পথে এক এক পূর্ণযৌবন যোড়শীকে দেখে থমকে দাঁড়াল। তার মনে হল, এমন একটি যুবতীকে কখনো কোথায় যেন দেখেছে।

অপলক চোখে বুড়োকে তাকিয়ে থাকতে দেখে যুবতী বলল “কি গো ঠাকুরদা, আমার দিকে এমন হ্যাংলার মতো তাকিয়ে আছো কেন?

পাকা চুলের বুড়িকে বুঝি আর ভাল লাগছে না? বিয়ে করবে নাকি আর একটা? বুড়ো বলল – আরে না-না, তুমি কিছু মনে করো না বোন।

তোমাকে দেখে অনেকদিন আগেকার একটি পরিচিত মেয়ের কথা আমার মনে পড়েছিল। যাগে সেকথা। তুমি কি পথে কোন বুড়িকে দেখেছো ?

যুবতী বলল হ্যা, একটা বুড়িকে আমি রাজার বিষগাছটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এসেছি। তখন বুড়ো বলল- সর্বনাশহয়ে গেছে তাহলে। আহারে ঝগড়া করেছি বলে বুড়ি বোধ হয় বিষফল খেয়ে এতক্ষণে আত্মহত্যা করে ফেলেছে।

আমি যাই বোন, গিয়ে দেখি। বুড়িদি মরে গিয়ে থাকে, তাহলে আমিও আজ বিষফল খেয়ে মরব।

এই বলে বুড়ো যেতে উদ্যত হত যুবতী বুড়োর একটি হাত টেনে ধরে খ-খল করে হেসে উঠে বলল -আর কষ্ট করতে হবে -গো আমার বুড়ো স্বামী।

আমিই তোমার সেই বুড়ি।’ বুড়ো বলল –এমন দুঃসময়েও

তুমি আমার সঙ্গে রসিকতা করতে পারছ বোন? – বুড়ি বলল – না গো না, আমি মোটেই রসিকতা করছি না।

তবুও বিশ্বাস না করায় বুড়ি বুড়োকে সব খুলে বলল।

বুড়ো আনন্দে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরল, তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে ক্ষমা চাইল।

তখন বুড়ি বলল আমি যখন যুবতী হয়েছি, তখন তোমাকেও যুবক বানাব। তারপর তারা ছুটে গেল সেই বিষবৃক্ষের নিচে।

ফল খেয়ে বুড়ো ও যুবক হয়ে গেল। এবার তারা সব দুঃখকষ্ট ভুলে বাড়ি ফিরে এল।

পরদিন সকালে সেই বিষবৃক্ষের কয়েকটি ফল নিয়ে বুড়ো-বুড়ি রোসাঙ রাজের দরবারে গিয়ে বলল ‘মহারাজ, আপনি যে গাছটিকে বিষবৃক্ষ বলে প্রচার করেছেন, সেটা কিন্তু একটা অমৃত ফলের বৃক্ষ।

আপনি যদি আমাদেরকে সাজা দেন তাও আমরা মাতা পেতে নেবো। তবুও সত্য গোপন করব না। আমরা আপনার আদেশ অমান্য করে ঐ গাছটির ফল খেয়ে বৃদ্ধ অবস্থা থেকে যুবক যুবতীতে পরিণত হয়েছি।

তাই বলছি মহারাজ, ওটা অমৃত ফলের বৃক্ষ বিষবৃক্ষ নয়। আমরা তাই ঐ গাছ থেকে কয়েকটি ফল নিয়ে এসিছি।

বিশ্বাস না হলে আপনি একটি ফল খেয়ে পরীক্ষা করতে পারনে। এবিলে ফলগুলো তারা রাজার হাতে দিল।

রাজা বললেন “তোমরাও দেখছি আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করছ। ঠিক আছে, আমি পরীক্ষা করব। যদি তোমাদের কথা মিথ্যা হয়, তাহলে আমরা হাসিমুখে সেই মৃত্যুদন্ড মাথা পেতে নেব।

তখন রাজা লোক পাঠিয়ে একটা থরথুরে বুড়োকে রাজবাড়ীতে আনালেন এবং বিষবৃক্ষের একটি ফল খেতে দিলেন।

কিন্তু ফলটি খাওয়া মাত্রই ঐ থরথুরে বুড়ো যুবক হয়ে গেল। রাজসভায় উপস্থিত সবাই ব্যপরটা দেখে অবাক হল।

সবাই বুঝতে পারল যে, বুড়ো বুড়িব কথাই ঠিক।

সঙ্গে সঙ্গে ভুলুয়ারাজের মনে পড়ে গেল তাঁর সেই প্রিয় ময়না পাখীটিকে, যাকে তিনি ভুল বুঝে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলেন।

তাই রাজা ময়নাটির শশাকে সভার মাঝেই চোখের জলে বক্ষ ভাসাতে লাগলেন। রাজ্য ছেড়ে বনবাসী হয়ে যেতে চাইলেন।

তারপর উপস্থিত পাত্র-মিত্রেরা তাঁকে বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দিয়ে স্বাভাবিক করে তুললেন ঙবগ বিষবৃক্ষকে অমৃত বৃক্ষবলে প্রমান করায় রাজা ঐ বুড়ো বুড়িকে (বর্তমানে যুবক-যুবতী) পুরস্কার স্বরূপ অনেক ধন রত্ন উপহার দিলেন। রোসাঙ ঃ- বর্তমান মায়ানমার (বার্মা) রাষ্ট্রের আরাকান অঞ্চল।

রোসাঙরাজের মন্ত্রী অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী শিল্পীটাকে না মারার জন্যে রোসাঙ রাজকে পর পর উক্ত তিনটি গল্প শোনালেন।

কিন্তু তবুও রাজার সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন হল না। তিনি আবারে মন্ত্রীকে বললেন আমি কোন কথাই শুনতে চাইনা।

আজই ঐ শয়তানটাকে কেটে তার রক্ত এনে আমাকে দেখাতে হবে। মন্ত্রী বললেন – আপনার আদেশ আমি অবশ্যই পালন করব।

কিন্তু ঐ শিল্পীকে হত্যা করার জন্যে একদিন আপনাকে অনেক চোখের জল ফেলতে হবে।

চিলকে কেটে রাজপুত্র, নেউলকে মেরে জুমিয়া লোকটি এবং ময়ানাকে কেটে ভুলুয়ার রাজা যেমনি কষ্ট পেয়েছেন, তেমনি অবস্থা একদিন আপনাররা হবে, সেদিন কেঁদেও কূল পাবেন না মহারাজ।

রেসাঙ রাজ বললেন সেটা পরে দেখা যাবে। এখন যান লম্পটটাকে কেটে তার রক্ত নিয়ে আসুন। তখন মন্ত্রী চলে গেলেন এবং কয়েকঘন্টা পর একটি পাত্রে করে রক্ত নিয়ে এলেন।

রোসাঙ রাজ খুশী হলেন। . কয়েকটি বছর কেটে গেল। একদিন অবসর বিনোদনের জন্যে রোসাঙ রাজ পাত্র মিত্র সহ প্রমোদ উদ্যোনে গেলেন।

চারদিকে ফুল পাখী ভ্রমর প্রজাপতিতে মিলে যেন এক মহাসমারোহ।

রাজা একটি ছাতিম গাছের তলায় বসে এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন।

হঠাৎ একটি পদ্মফুলের উপরে তাঁর দৃষ্টি পড়ল। বিনা বাতাসে ফুলটি নড়ছিল।

এক দৃশ্য রাজার মনে বেশ বিষ্ময়ের সৃষ্টি করল। তিনি তখন পাত্রমিত্রদের একে একে ডাকলেন এবং তাদের কাছ থেকে বিনা বাতাসের পদ্মফুলের নড়ার কারণটা জানতে চাইলেন।

কিন্তু কেউ কোন সদুত্তর দিতে পারল না। শেষ পর্যন্ত রাজা মন্ত্রীকে ডাকলেন।

মন্ত্রী রাজাকে নমস্কার করে বললেন “মহারাজ আপনার এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো মাত্র একটি লোকই আপনার রাজ্যে ছিল।” রাজা বললেন তিনি কে?’ এখন কোথায় আছেন?

মন্ত্রী বললেন- তিনি সেই শিল্পী, যাকে আপনি প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেছিলেন। মহারাজা, তিনি তো শুধু নেহাৎ একজন শিল্পীই ছিলেন না, বিদ্ধান এবং বিচক্ষণও ছিলেন।”

রোসাঙ রাজতখন দুঃখপ্রকাশ করে বললেন রাগের মাথায় তাঁর মৃত্যুদন্ড দিয়ে আমি সত্যিই ভীষণ অন্যায় করে ফেলেছি।

এখন কীভাবে যে সেই মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত করব বুঝতে পারছিনা।মন্ত্রী বললেন না মহারাজ, আপনি কোন পাপ করেন নি।

পাপ কিংবা অন্যায় বলতে যা বোঝায় তা করেছি আমি।আপনার কথার মাথামুন্ডু কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। স্পষ্ট করে বলুন।

মন্ত্রী এবার হাত জোড় করে বললেন আমাকে ক্ষমা করুন মহারাজ। রাজা আপনি না তাকে কেটে তার রক্ত এনে আমাকে দেখালেন?মন্ত্রী – মিথ্যা বলে ছিলাম মহারাজ।

এমন প্রতিভাবান বিদ্ধানও সৎলোকটিকে হত্যা করতে আমার বিবেকই আমাকে বাধা দিয়েছিল।

তাই অমি ঐ শিল্পীকে আমাদের পাশের রাজ্যে গিয়ে আত্মগোপন করে থাকতে বলেছিলাম।

এবং একটি কুকুর মেরে তার রক্ত এনে আপনাকে দেখিয়ে ছিলাম। রাজা ‘আপনি সত্যিই মহৎ ব্যক্তি। আমার রাজ্য আপনার মত বিবেকবান মন্ত্রীর জন্যে গর্ব করতে পারে।

আচ্ছা, আপনি ঐ শিল্পীকে একাবার কি আমার কাছে আনতে পারেন?

মন্ত্রী বললেন ‘পারব মহারাজা। রাজা তাহলে তাঁকে রাজ অতিথির মতো হাতির পিঠে চড়িয়ে রাজ্য বাজিয়ে রাজধানীতে আনার ব্যবস্থা করুন।

যথা আজ্ঞা’ বলে মন্ত্রী মহানন্দে বেরিয়ে পড়লেন।

শিল্পীকে কয়েকঘন্টা পর রোসাঙ রাজের আদেশ মতো মহাধুম ধাম করে রাজধানীতে আনা হল।

রাজা তাঁকে যথোচিত সম্মান জানালেন এবং বিনা বাতাসে পদ্মফুলের নড়ার কারণটা জানতে চাইলেন।

তখন শিল্পী রাজাকে বললেন “মহারাজ আমার মনে হয় যে, ফুলের ভেতরে একটি ভ্রমর নড়া-চড়া করছে। তা কী করে সম্ভব?’-রাজা বললেন।

শিল্পী বললেন ফুলের মধু খেতে আসা ভ্রমরদের মধ্যে কোন একটি হয়তো ফুলের ভেতরে আটকা পড়েছে।

রাজা জিজ্ঞেস করলেন ‘আটকা পড়বে কেন?’তখন শিল্পী বললেন মধুখাওয়ার জন্যে ভ্রমরেরা ফুলের ভেতরে ঢোকে।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন সূর্য ওঠে তখন সূর্যের তাপে ফুলের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এই কারণেই হয়তো কোন একটি ভ্রমর ফুলের ভেতরে আটকা পড়েছে এবং এখন বেরিয়ে আসার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।

আর এই কারণেই ফুলটি নড়ছে। এমন উত্তর শুনে সবাই ধন্য ধন্য করতে লাগল।

রোসাঙরাজও সিংহাসন থেকে নেমে এসে শিল্পীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন শিল্পী তুমি ধন্য, সার্থক তোমার জীবন।

আমি ভুল বুঝে তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। শিল্পী তখন শুধু মুচকি হেসে তাঁর নীরব সম্মতি জানালেন।

তথ্যসূত্র: ত্রিপুরার আদিবাসী লোককথা

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা