মারমা রূপকথা: বাঘ ও শূকরের গল্প

Jumjournal
Last updated Jan 17th, 2020

1121

featured image

এক বনে এক বাঘ আর শূকরের মধ্যে ছিল অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব। একদিন হঠাৎ আকাশ কালো করে হু হু বাতাস বয়ে ঝড় এলো দেখে শূকর তাড়াতাড়ি বাঁশ ঝাড়ের নীচে গিয়ে বিভিন্ন লতা-পাতা দিয়ে নিজের জন্য ঘর করে ফেললো।

এমন সময় বাঘ সেখানে এসে হাজির হল। শূকর বাঘকে দেখে আসার কারণ জানতে চাইল। উত্তরে বাঘ বলল, “বন্ধু আমি এক রাত্রের জন্য তোমার ঘরে আশ্রয় চাই।”

শুনে শূকর বলল, ‘বন্ধু তা কি করে হয়, তুমিতো শক্তিশালী প্রাণী আর আমি অত্যন্ত দুর্বল প্রাণী। বন্ধু তোমাকে আমার ঘরে আশ্রয় দিতে পারব না”।

শূকরের কথা শুনে বাঘ দুই হাত জোড় করে মিনতি করে বলল, “আজ একরাতের জন্য আমাকে আশ্রয় দাও বন্ধু। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না এবং ভোর হওয়ার আগেই তোমার ঘর ছেড়ে চলে যাবো”।

শূকর বলল, “বন্ধু বাঘ! আমার ঘরে তেমন। জায়গা নেই তাছাড়া আমার একার জন্য ঘর করেছি”। বাঘ বলল,“কোন অসুবিধা হবেনা আমি তোমার দরজার পাশে ঘুমাব–বলেই বাঘ ঘুমিয়ে পড়ল। ভোর হয়ে সূর্য উঠেছে অথচ বাঘের উঠার নাম গন্ধ নেই।

শূকর মহাবিপদে পড়ল। এদিকে বাঘ দরজার সামনে ঘুমানোয় শূকর বাইরেও যেতে পারছেনা। শূকর অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর বাঘ জিজ্ঞেস করল, “কেন ডাকছ বন্ধ?” শূকর বলল, “বন্ধু! তোমার তো ভোর হওয়ার আগে চলে যাবার কথা।

কিন্তু এখনও যাচ্ছনা কেন?” বাঘ শূকরের কথা তোয়াক্কা না করে বলল, “বন্ধু শূকর! গতরাতে আমি একটা অদ্ভুতস্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নে আমি তোমাকে খাচ্ছি। আর তুমিতো জান আমাদের বাঘের মধ্যে যে কেউ স্বপ্ন দেখলে তা অবশ্যই করতে হয়”।

বাঘের কথা শুনে শূকর দুঃখ পেল। শূকর বলল, “প্রিয় বন্ধু বাঘ! কি করে হয়, তুমি তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলে। আমিতো প্রথম থেকেই তোমাকে ঘরে রাখতে চাইনি।

বাঘ সোজাসুজি বলল, “আমাদের নিয়ম আমি কোন প্রকারেই ভাঙ্গতে পারবো না। কাজেই তোমাকে অবশ্যই আমি খাবো”।

শূকর রাগে-দুঃখে রাজার কাছে গিয়ে বিচার চাইল। তখন আবার সত্য যুগ, সবাই কথা বলতে জানত। এদিকে রাজা ও বাঘের মধ্যে সন্ধি হল। বিচারে বাঘকে জিতিয়ে দিলে শূকরের অর্ধেক অংশ রাজা ও অর্ধেক অংশ বাঘ পাবে।

বিচার যথাসময়ে শুরু হল। শূকর সমস্ত ঘটনা রাজাকে শোনাল। বাঘও তাদের নিয়মও অঙ্গীকারের কথা রাজাকে বলল এবং বিশ্বাস না করলে অন্যদের জিজ্ঞেস করে দেখতে অনুরোধ করল।

সব শুনে রাজা সন্ধি অনুযায়ী বাঘের পক্ষে শূকরকে অবশ্যই সঁপে দিতে হবে বলে রায় দিল। রায় শুনে শূকর মনের দুঃখে জলভা চোখে রাজার কাছে সাত দিনের সময় প্রার্থনা করে তার পক্ষে উকিল খোঁজার জন্য বেরিয়ে গেল। এ দিকে বাঘততা মহাখুশী।

একদিন-দুইদিন-তিনদিন এভাবে ছয়দিন পার হতে চলল উকিল মিলছেলা। এতদিন না খেয়ে শূকর ঠিকমত হাঁটতে পারছে না। মনের দুঃখে কোন রকম হেলে দুলে যেতে যেতে একটা শুকনো গাছে। হেলান দিয়ে বসে পড়ল।

ঐগাছে একটা পেঁচা শিকারীর ফাঁদে পড়ে সারাশরীর গর্জন তেলেসতসেঁতে হয়ে উড়তে না পেরে নীচে পড়লে বন বিড়ালের কাছে মারা পড়ার ভয়ে ঐ গাছে কোন রকম পা দিয়ে আঁকড়ে ছিল।

শূকর হেলান দিতে গিয়ে পেঁচা মাটিতে পড়ে গেল। তাই পেঁচা রেগে মেগে শূকরকে বকা দিল। শূকর পেঁচাকে বলল, ভাই, আমি ইচ্ছে করে একাজ করিনি।

আমিও একজন দুঃখী”বলে শূকর তার দুঃখের কথা পেঁচাকেশোনাল। শূকরের কথা শুনে পেঁচাও দুঃখিত হল। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।

পেঁচা যেভাবে হোকশূকরকে সাহায্য করবে বলে প্রতিজ্ঞা করল। পেঁচা শূকরকেতাঁর শরীর চুষে ফেলতে বলল। যেই কথা সেই কাজ। পেঁচা শরীর সম্পূর্ণ পরিষ্কার হওয়ার পর বলল, “বন্ধু, তুমি কোন চিন্তা করবে না। ঠিক সময় তুমি রাজ দরবারে হাজির হবে।”বলে এক ঝাপটা দিয়ে পেঁচা উড়ে গেল।

ঐরাজ্যের রাজার একমাত্র পরম সুন্দরী কন্যা বাস করত রাজ্যের সব চেয়ে সুন্দর প্রাসাদে। পেঁচা সোজা উড়ে গিয়ে ঐ প্রাসাদের ছাদে বসল। রাতে প্রাসাদের বাতির আলোয় উড়ন্ত পোকা মাকর খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

সাত দিনের পর নির্দিষ্ট সময়ে রাজ সভার কার্য আরম্ভ হল। শুরুতে রাজা কর্তৃক বাঘ ও শূকরের ডাক পড়ল। উভয়ই দরবারে উপস্থিত হয়ে রাজাকে শ্রদ্ধা জানাল।

রাজা শূকরকে উকিল এনেছে কিনা জিজ্ঞেস করলে পেঁচাকে শূকর উকিল হিসেবে রাজার সামনে হাজির করল। বিচার পর্বের শুরুতে পেঁচা রাজাকে প্রণাম করে আর্জি পেশের প্রার্থনা করে রাজাকে বলল, “মহামান্য রাজা গতরাতে আমি আপনার কন্যার প্রাসাদের আলোতে উড়াপোকা-মাকড় ধরে এত বেশী খেয়েছি যে, আমার পক্ষে আর উড়ে যাওয়া সম্ভব ছিলনা।

তাই আমি রাতে প্রাসাদেই ঘুমিয়ে পড়ি। রাতে আমি একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম, আমি আপনার সুন্দরী কন্যাকে বিয়ে করেছি। আমাদের পক্ষীকুলের নিয়ম হচ্ছে স্বপ্নে দেখলে তা বাস্তবে রূপ দিতে হয়।

তাই আমি আপনার কন্যাকে বিয়ে করতে চাই। আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলে বাঘ ভাইকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।” বলে পেঁচা বাঘের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।

পেঁচার আব্দারের কথা রাজ কন্যার কানে যাবার সঙ্গে সঙ্গে রাজ কন্যা কেঁদে কেঁদে প্রাসাদ ফাটিয়ে ফেললে। সে কিছুতেই পেচাঁকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করবেনা। এদিকে রাজা পড়েছে মহা বিপদে।

বাঘের স্বপ্নের কথা মানতে গেলে কন্যাকে পেঁচার সঙ্গে বিয়ে দিতে হয়। আইন সমানভাবে প্রয়োগ করতে গেলে রাজার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই রাজা উভয়কে দরবার থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বলল, “স্বপ্নে দেখলে কেউ কাউকে খেতে বা বিয়ে করতে পারবেনা।” এভাবে পেঁচার বুদ্ধিতে শূকর প্রাণে বাঁচল। তাদের মধ্যে আজীবন বন্ধুত্ব হয়ে গেল।


লেখক: পুলু প্রু

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা